প্রতিফলন
© আবির খান
১. “তুমি এতো রাত করে বাসায় এসেছো তার উপর আবার কিসব খেয়ে এসেছো। লজ্জা করে না তোমার??”সালেহা বেগম তার স্বামী রফিক সাহেবকে কথাগুলো বলল। রফিক সাহেব রাগী ভাবে বলল,” ওই মা** আমি যা ইচ্ছা খামু তোর কি?? তোর টাকায় খাই??” বলেই ঠাস করে একটা থাপ্পড় দিয়ে দেয় সালেহা বেগমকে। এরপর শুরু হয় তুমুল ঝগড়া। রাত ১ টার সময় তাদের এই বিশ্রী ঝগড়া কিন্তু আড়ালে দাঁড়িয়ে একজন দেখছিলো। সে হলো আবিদ। রফিক আর সালেহা বেগমের একমাত্র সন্তান। বাবা-মার এমন ঝগড়া আর গালাগালি দেখে ৭/৮ বছরের আবিদ আড়ালে দাঁড়িয়ে থরথর করে কাঁপছিলো আর কাঁদছিলো।
২. সালেহা বেগম রফিক সাহেবকে বলল, “আমার মা’টা একটু অসুস্থ। একবার গিয়ে দেখে আসি??” রফিক সাহেব গম্ভীর হয়ে বললেন,” আরে বুড়ীতো কয়দিন পর এমনিই মরবে। আবার দেখে আসার কি আছে। দরকার নাই যাওয়ার।” পড়ার টেবিলে বসা ১৫ বছরের আবিদ কিন্তু কান খাড়া করে কথাগুলো শুনছিলো।
৩. আবিদের বাবা শুক্রবার দিন নামাজের সময় নামাজে না গিয়ে আবিদকে সাথে নিয়ে অশ্লীল সিনেমা দেখছে। ১৭ বছরের আবিদ জুম্মার নামাজ না পড়ে বাবার সাথে টিভিতে মুভি ইঞ্জয় করছে।
৪. “বাবা আমিতো এই পাবলিক ভার্সিটিতে চাঞ্চ পেলাম না। এখন কি করবো??” আবিদ তার বাবা রফিক সাহেবকে বলল। রফিক সাহেব হেসে বলল,” আরে ভাবিস না কাল টাকা দিয়া ঢুকায় দিবো নে। টাকা হলেই সব কিছু হয়।” আবিদ অনেক খুশি হয়ে গেলো।
৫. আবিদ ভার্সিটি থেকে এসে দেখে তার মা একদম মর্ডান জামা কাপড় পরে শপিং করতে যাচ্ছে বান্ধবীর সাথে।
৬. আবিদ তার বাবাকে বলল,”বাবা ২০,০০০ টাকা দেও বন্ধুদের সাথে পুল পার্টিতে যাবো।” আবিদের বাবা আবিদকে বলল,” আরে ২০,০০০ কেন, নে ৩০,০০০ টাকা রাখ। ইঞ্জয় কর।”
এসব দেখে দেখে সেই ৭/৮ বছরের আবিদ আজ অনেক বড়। সে তার বাবা-মার কাছ থেকে অনেক কিছু শিখেছে। তার বয়স এখন ৩৮ বছর। আবিদের বিয়ে হয়ে একটা মেয়ে সন্তানও হয়েছে। তার বয়স এখন ৬ বছর। আর আবিদের বাবা-মা দুইজনই এখন বৃদ্ধ। দুজনেরই স্থান হলো এখন বিছানা।
আবিদ এখন একজন ব্যবসায়ী। সেও তার বাবার মতো রাত করে খারাপ জিনিস খেয়ে বাসায় ফিরে। বউকে মার ধর করে। গালাগালি করে। তাদের ছোট্ট মেয়ে মিমি সেগুলো দেখে ও শুনে। আবিদের বৃদ্ধ বাবা-মা আজ অযত্নে কষ্ট পেয়ে প্রতিনিয়ত মৃত্যুর দিকে ধাবিত হচ্ছে। আবিদ একবারও ফিরে চায় না তার বাবা-মার দিকে। মিমি দেখছে তার বাবা তার দাদা দাদির কোনো খেয়াল রাখে না। তার মা আবার বলছে, দাদা দাদির কাছে যেতে না। তাই সেও যায় না। এভাবে মিমি বড় হতে থাকে। মিমিকে একদম মর্ডান একটা মেয়ে বানায় আবিদ আর তার স্ত্রী। মিমিকে ছোট কাল থেকেই ইংলিশ মিডিয়ামে পড়ায়। ফলে আরবি অক্ষরের প্রথম হরফ আলিফ তাই জানে না মিমি। মিমি ছোট ছোট জামা কাপড় পরে। অনেক ছেলে বন্ধুদের সাথে রুমডেট পর্যন্ত করে। সেদিকে মিমির বাবা-মা মানে আবিদ আর তার স্ত্রীর কোনো খেয়ালই নেই। এভাবেই সব ধারাবাহিক ভাবে প্রতিনিয়ত চলতে থাকে।
প্রতিফলন, আজ যে যেমনটা করবে ঠিক তেমনটাই সে ভবিষ্যতে ফিরে পাবে। এটাই সময়ের প্রতিফলন। জনাব রফিক সাহেব একজন বাবা। সে তার সন্তানকে যে শিক্ষা দিয়েছে তার সন্তানও সেই শিক্ষা গ্রহণ করে তাহাই ভবিষ্যতে প্রতিফলিত হয়েছে। এটাই নিয়ম। আমাদের বাবা-মা হলেন আমাদের প্রথম শিক্ষক। মায়ের কাছ থেকেই আমার আল্লাহ ডাকটা শিখি। সেই বাবা-মা যখন খারাপ ভাবে চলে আমরা কিন্তু আলটিমেটলি সেটাই শিখবো। যেমনঃ ঐশী। মেয়েটাকে তারা বাবা-মা যেভাবে বড় করেছিলো তার প্রতিফলনও তারা সেভাবে পেয়েছে। আজ বাচ্চারা কান্না করলেই তাদের মর্ডান বাবা-মা তাদের হাতে স্মার্ট ফোন ধরিয়ে দিচ্ছে। কই তাদের বাবা-মার সময় কি স্মার্ট ফোন ছিলো?? তারা কান্না থামায় নি?? অবশ্যই থামিয়েছে। কিন্তু আমাদের এখনকার বাবা-মারা আমাদের সামনের প্রজন্মকে ধ্বংস করে দিচ্ছে। তারা নিজেরাও চলছে বেপরোয়া ভাবে। তাদের সন্তানও তা শিখে তারাও বেপরোয়া হয়ে যাচ্ছে। তাই সন্তানের বুকে যদি একবার আল্লাহর ভয় বাবা-মা ঢুকাতে পারে এই সন্তান কোনো দিন এই বাবা-মার বৃদ্ধ বয়সে তাদের একা ছাড়বে না। কিন্তু আমরা কি করছি?? কিচ্ছু না। পরিবর্তন এর সময় এসেছে। আধুনিকতার জোয়ারে নিজেকে ভাসিয়ে নিয়ে ধ্বংস হতে দিয়েন না। তাহলে আপনি আজ যা করছেন ঠিক তাহাই প্রতিফলিত হবে আপনার সন্তানে। তাই আপনি আজ যতটা ভালো ভাবে চলবেন ঠিক সেটাই ভবিষ্যতে আপনার সন্তানের উপর প্রতিফলিত হবে। আর যারা বর্তমান বাবা-মারা আছেন তারা আপনাদের সন্তানকে ভালো কিছু শিখান। যাতে তাদের #প্রতিফলন ভবিষ্যতে ভালো হয়।
– সমাপ্ত।
© আবির খান