#প্রণয়_আসক্তি
#লেখিকাঃমাহযাবীন
পর্বঃ২৩
এ এক সুন্দর সকাল! যে সকালে ঘুম হালকা হয়ে ধীরে ধীরে চোখ খুলতেই একরাশ ভালোলাগারা এসে মনে জায়গা করে নেয়।সকালের মিষ্টি রোদ্দুরেরা জানালার পর্দা ভেদ করে অন্ধকার ঘরে নিজের উপস্থিতি জানান দিয়ে এক নতুন সকালের বার্তা নিয়ে আসে।
মিয়ামির জন্যে সত্যিই এ সকাল টা এক নতুন সকাল।যে সকালে জীবনের কালো অন্ধকারাচ্ছন্ন রাতের ন্যায় দিনগুলো শেষে এক মিষ্টি রোদ্দুরের ন্যায় সুন্দর,উজ্জ্বল দিনের আরম্ভ হতে চলেছে।
আর্শের বুকের উপর চোখবুঁজে শুয়ে আছে মিয়ামি।ঠোঁটে তার মুচকি হাসি লেগে আছে।আজকের দিনটা বিশেষ তার কাছে।তাই তো এ সকাল টাও বিশেষ।
চোখবুঁজা অবস্থাতেই নিজের ডান চোখের উপর নিজের অর্ধাঙ্গের ঠোঁটের স্পর্শ পায় মিয়ামি।ঠোঁটের হাসিটি আরো প্রসস্থ হয় তার।বন্ধ চোখজোড়া পিটপিট করে মেলে আর্শের মুখ পানে তাকায় সে।ছেলেটি ঠোঁটে মৃদু হাসি নিয়ে তাকিয়ে আছে তার দিকে।
মিয়ামির দিকে তাকিয়ে নিম্ন স্বরে আর্শ বলে ওঠে,
-কি ব্যাপার?সকাল সকাল পিচ্চিটার ঠোঁটের মিষ্টি হাসি টার কারণ কি?
-ভুল প্রশ্ন!’কি’ না ‘কে’ হবে।তোমার পিচ্চিটার ঠোঁটের হাসির কারণ টা তুমিই।
মিয়ামির কথার উত্তরে ব্রু কুঁচকে আর্শ জিজ্ঞেস করে ওঠে,
-আমি আবার কি করলাম?
উত্তরে মিয়ামি কিছু না বলে নিজের ঠোঁটের হাসিটি ধরে রেখে নিজের মুখ আর্শের মুখের কাছে এগিয়ে নিয়ে গালে একটি চুমু বসিয়ে দিয়ে তড়িঘড়ি করে বলে ওঠে,
-ওঠ তো জলদি। ঘুরতে বেরোবো না?
কথাটি বলে মিয়ামি আর দেরি করে না।আর্শের উপর থেকে সরে বিছানা ত্যাগ করে সোজা ওয়াশরুমে ঢুকে যায়।এদিকে অবাক নয়নে মিয়ামির দিকে চেয়ে ছিলো আর্শ।সকাল সকাল মেয়েটার হলো টা কি!
গতকালই অফিসের বসের উপদেশ অনুযায়ী ঘুরার উদ্দেশ্যে সাজেক এসেছে আর্শ ও সাথে মিয়ামিও! সত্যিই বসের কথানুযায়ী,এখানে আসার পর থেকেই আর্শের অনেকটা ভালো লাগছে।মাথা ঝিমঝিম করা,অস্থিরতা,ক্লান্তভাব ইত্যাদি অনুভূতিগুলো কিছুটা প্রশমিত হয়েছে তার।
!!
বেলা ১১ টা বাজে কিন্তু এখনো সকাল হয়নি আর্শির।ঘুমে বিভোর হয়ে আছে সে।এদিকে কেউ একজন ‘গুড মর্নিং’ ম্যাসেজ সেন্ড করে রেখেছে তার প্রায় ২ ঘন্টার বেশি হতে চললো।ছেলেটি আর্শির ম্যাসেজের অপেক্ষা করে চলছে আর রিপ্লাই পেতে দেরি হওয়ায় সময়ের সাথে সাথে তার রাগের পরিমাণ টাও বাড়ছে।
ঘড়িতে ঘন্টার কাটা ১১ এবং মিনিটের কাটা ৬ এ স্থির হতেই ঘুম ভাঙে আর্শির।মেয়েটি ধীরে ধীরে নিজের এক চোখ খুলে তড়িঘড়ি করে নিজের মুঠোফোন খুঁজে তা হাতে নিয়ে স্ক্রিন অন করতেই বিহানের ম্যাসেজটি চোখের সামনে ভেসে ওঠে তার।এবার চোখ দুটোই খুলে দ্রুত গতিতে বিহানের ম্যাসেজের উত্তরে সেও ‘গুড মর্নিং’ লিখে ম্যাসেজ পাঠিয়ে দেয়।
প্রায় ৫ মিনিট পর বিহানের রিপ্লাই আসে,
-কি দরকার উঠার,আরো ঘুমাও।
বিহানের এমন কথার পেছনে লুকায়িত রাগটা ভালোই বুঝতে পারছে আর্শি।উত্তরে সে বলে ওঠে,
-অনেক বেশি স্যরি।টেরই পাইনি কখন এতো বেজে গেলো।
-৩৬৫ দিন এভাবেই কাটে তোমার।
-স্যরি তো।
উত্তরে কিছু না বলে একটি লাইক সেন্ড করে দেয় বিহান।আর্শি ভালোই বুঝতে পারছে বিহান বেশ রেগে আছে।এখন তার নিজেরই খারাপ লাগছে এতো দেরি কেন উঠে সে! সাথে সাথেই সিদ্ধান্ত নিয়ে নিলো কাল থেকে এলার্ম দিয়ে তবেই সে ঘুমুতে যাবে।
এখন রাগারাগির বিষয়টি এড়িয়ে যেতে আর্শি জিজ্ঞেস করে ওঠে,
-কি করেন?
-কাজে।
-খেয়ে বের হইছেন?
-না।
-সকালে না খেয়ে বেরোতে নিষেধ করছি না?
-সময় ছিলো না রান্না করার।
-এই জন্যেই বলি, বিয়ে করে ফেলেন।বউ থাকলে তো রান্না সে ই করে রাখতো।
-হ্যা খুব।ঘুমায়ে কুল পাইলে তো রানবে!
বিহানের ম্যাসেজটি পড়তেই আর্শির হৃদয়ে কেমন যেনো এক শীতল হওয়া বয়ে গেলো।মুহুর্তেই ঠোঁটে একটু হাসিও ফুটে উঠলো তার আর চোখে বিস্ময়! ছেলেটি কি এ উক্তি দ্বারা আর্শিকে নিজের বউ বললো?ঠিক বুঝে উঠতে পারছে না আর্শি।তবে যদি সত্যিই বিহান কথাটি আর্শিকে নির্দেশ করে বলে থাকে তাহলে আর্শির জন্যে এর থেকে বড় প্রাপ্তি আর কি হতে পারে?
আর্শির ম্যাসেজের রিপ্লাই টা দিয়েই ম্যাসেন্জার থেকে বেরিয়ে নিজের ফোনের স্ক্রিন অফ করে দেয় বিহান।উদ্দেশ্য এখন সে কিছু রোগ সমন্ধে খুটিনাটি আরো স্টাডি করবে।কিন্তু তা আর হলো না।বই হাতে নিতেই তার ফোনটি বেজে উঠলো। ব্রু কুঁচকে ফোন হাতে নিতেই ফোনের স্ক্রিনে ভেসে ওঠা ‘মিয়ামি’ নামটি চোখে পরলো বিহানের।দেরি না করে কলটি রিসিভ করে সে।
-আসসালামু আলাইকুম,ভাইয়া।(মিয়ামি)
-ওয়ালাইকুম আসসালাম,মিয়ামি।কেমন আছো।
-আলহামদুলিল্লাহ অনেক অনেক অনেক ভালো।
মিয়ামির কথায় হেসে ওঠে বিহান।ঠোঁটে হাসি নিয়েই বলে ওঠে,
-বাহ! এতো ভালো থাকার কারণ?
-ভাইয়া,আজ ১ মাস পূর্ণ হলো আর্শ ড্রাগস নেয়নি।প্রথম প্রথম ও অল্পতে রেগে যেতো,কেমন অস্থির অস্থির বিহেভ করতো,রাতে ঠিক মতো ঘুমাতে পারতো না ছটফট করতো।তখন মাঝে মাঝে আমি সামলে নিতাম আর মাঝে মাঝে সামলাতে ব্যর্থ হলে আপনার দেওয়া ঘুমের ঔষধ টা দিতে হতো।এভাবে বেশ কিছু দিন চলার পর ধীরে ধীরে ও একটু নিজেকে সামলে নিতে শুরু করলো।এরপর শুরু হলো ওর মাথায় ঝিমঝিম ভাব,নিস্তেজ থাকা,সেই সাথে কেমন যেনো বিহেভ করতো।এভাবেই আরো কিছু দিন চললো।এর মাঝে আমি যথাসাধ্য চেষ্টা করেছি ওকে মানসিক সহযোগিতা করতে,সাহস দিতে।এরপর গতকাল এলাম সাজেকে।এখানে আসার পর থেকে এই একমাসে প্রথম ওকে দেখে অনেকটা ফ্রেশ,ফুরফুরে মেজাজে মনে হচ্ছে। সত্যি বলতে আজ আমি অনেক খুশি। আর এর জন্যে ধন্যবাদ টা আপনার প্রাপ্য,ভাইয়া। অনেক ধন্যবাদ আমাদের গাইড করার জন্যে এবং আমাদের মনোবল বৃদ্ধি করবার জন্যে।
মিয়ামির কথায় এক প্রশান্তির হাসি ফুটে উঠলো বিহানের ঠোঁটে।সে এক প্রশান্তিময় নিঃশ্বাস নিজের মাঝে টেনে নিয়ে বলে ওঠে,
-ধন্যবাদ আমার নয় বরং তোমার প্রাপ্য।আর্শের ড্রাগস সেবন না করার দৃঢ় সংকল্প,তোমার সহযোগিতা ও আল্লাহর হুকুমেই এটি সম্ভব হয়েছে।আমি সত্যিই খুব খুশি তোমাদের জন্যে।
-ধন্যবাদ ভাইয়া।
-তবে মিয়ামি, আরেকটি বিষয় নিয়ে তোমায় একটু সতর্ক করতে চাইছি।
বিহানের কথায় মিয়ামির চোখে-মুখে চিন্তের ছাপ ফুটে ওঠে।সে চিন্তিত কন্ঠে বলে ওঠে,
-জ্বি ভাইয়া,বলুন।
-একজন ড্রাগস আসক্ত মানুষ কিছুটা সুস্থ হওয়ার পর যখন সে নেশা ছাড়া কিছুদিন থাকে, তখনই আবার নেশাগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দেয়। যাকে রিল্যাপ্স বলা হয়।তাই অবশ্যই এ বিষয়ে খেয়াল রাখবে।এতোদিন যেভাবে আগলে রেখেছো এখন প্রয়োজন হলে আরো বেশি আগলে রেখো।
-জ্বি আচ্ছা।চেষ্টায় ইন শাহ আল্লাহ কোনো কমতি থাকবে না।
!!
সাজেকে মেঘ প্রেমিরা তাদের প্রেমের টানেই যায়।আকাশে মেঘেদের ভেসে বেরানো দুচোখ ভরে একটুখানি দেখতে,একটু ছুঁয়ে দিতে আর কাছ থেকে অনেকটা অনুভব করবার জন্যেই প্রতিবছর হাজারো মেঘপ্রেমিরা ভীর জমায় এখানে।
রিসোর্টের বেলকনিতে দাঁড়িয়ে মেঘ দ্বারা সজ্জিত আকাশ পানে তাকিয়ে আকাশের সৌন্দর্য উপভোগ করছে মেঘপ্রেমি দলেরই একজন,মিয়ামি।সেই সাথে এই বিশেষ দিন টাকে কি করে আরো বিশেষ বানানো যায় সেটি ভেবে চলছে সে।
গোসল সেরে তাওয়াল দিয়ে চুল মুছতে মুছতে বেলকনিতে এসে দাঁড়ায় আর্শ।
গেঞ্জি,প্যান্ট পরিহিত এক নারীর কোমর অব্দি লম্বা চুল বাতাসে মৃদু দুলছে।আর দৃশ্যে মুগ্ধতা খুঁজে নিচ্ছে সে।কিছুটা সময় মিয়ামিকে পেছন থেকে দেখে নিয়ে ধীরে ধীরে তার দিকে অগ্রসর হয় আর্শ।এক হাত মিয়ামির পেটের কাছে নিয়ে গেঞ্জির ভেতরে প্রবেশ করিয়ে পেটের মাঝ বরাবর হাত রেখে মিয়ামিকে নিজের সাথে মিশিয়ে নেয় ছেলেটি।তার বুক ও মিয়ামির পিঠের মাঝে কোনো জায়গা অবশিষ্ট নেই।সে মিয়ামির উন্মুক্ত কাঁধে নিজের ঠোঁটের স্পর্শ এঁকে দিয়ে মৃদু স্বরে বলে ওঠে,
-কি করছে আমার বউ টা?
আর্শের স্পর্শ পেয়ে সুখানুভূতিতে চোখজোড়া বুজে নিয়েছে মিয়ামি।ছেলেটির প্রশ্নের উত্তরে সে নিম্ন স্বরে বলে ওঠে,
-আদর নিচ্ছে।
মিয়ামির উত্তরে মৃদু হেসে ওঠে আর্শ।মিয়ামির কানের নিচে তিন-চারটি চুমু বসিয়ে বলে ওঠে,
-ঘুরতে যেতে হবে না?রিসোর্টে পরে থাকলে হবে?
-উম,আজ না।আজ তুমি বাইরে যেয়ে আমার জন্য মজার মজার কিছু খাবার কিনে নিয়ে আসো।কাল আমরা এ জায়গায় ঘুরবো,ঠিক আছে?
-উহু,একা কেন থাকবা?চলো দুজনেই যাই খাবার কিনতে।
-না না না।তুমি যাও, আমার একটুও ইচ্ছে করছে না বাইরে যেতে।
মিয়ামির কথায় সম্মতি দেওয়ার ইচ্ছে না থাকা সত্ত্বেও আর জোর করলো না আর্শ।মিয়ামির কথাটিই মেনে নিলো সে।
এদিকে আর্শকে মানাতে পেরে মিয়ামি এতোক্ষণে চিন্তামুক্ত হতে পেরেছে এবং সেই সাথে ঠোঁটে আলতো হাসি ফুটে উঠেছে তার।আর্শ বাইরে গেলেই তো সে নিজের পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজগুলো করতে সক্ষম হবে।
চলবে