প্রণয় পাড়ে সন্ধি পর্ব-১৭+১৮

0
635

#প্রণয়_পাড়ে_সন্ধি
|পর্ব ১৭+১৮|
লাবিবা ওয়াহিদ

নম্রের বিয়েতে আরেক জনকে অত্যাধিক খুশি দেখালো। সেটা বোধহয় অর্ণা। নম্রের বিয়ে যবে থেকে ঠিক হয়েছে তবে থেকেই তার মধ্যে চাপা উত্তেজনা দেখা যেত। নম্রের চাইতেও বেশি এক্সাইটেড ছিল অর্ণা। প্রায় প্রত্যেকদিন তার টুকরো টুকরো বিয়ের প্ল্যান নম্রকে জানাত। বড্ড উল্লাস নিয়ে বলত, এটা করবে সেটা করবে। বেস্ট ফ্রেন্ডের বিয়ে মানেই না চাইতেও অসংখ্য এক্সপেক্টেশন চলে আসে। অর্ণারও এসেছে। ইমনকে নিয়েও ভেবেছে সে। ইমন এবং তার মধ্যে এখন ভালো একটা আন্ডাস্ট্যান্ডিং হয়েছে। বিয়েতে নম্রের পাশাপাশি ইমনকেও সঙ্গ দেওয়ার স্পৃহা জেগেছে তার মধ্যে।

কিন্তু সেসব পুরোনো কথা। অতিরিক্ত আশা রাখতে নেই সেটাই ফলে যায় অর্ণার সাথে। যা যা প্ল্যান করেছিল তার ৬০ শতাংশ-ই খাদে ডুবে গেল। আকস্মিক শোক সংবাদ, ধুমধাম করে বিয়ের বদলে ঘরোয়া বিয়ে। কতটুকুই বা আনন্দ করা যায়? তবুও অর্ণা হাল ছাড়তে চাইলো না। খুব করে চেয়েছিল নম্রের বিয়ের এক সপ্তাহ আগে থেকে তার সঙ্গে থাকা শুরু করবে। কিন্তু দুঃখের ব্যাপার হচ্ছে বিয়ের তারিখ-ই দেওয়া হয়ে বিয়ের এক সপ্তাহ আগে। অর্ণা জানতে পারে বিয়ের পাঁচদিনের মাথায়। তবুও এই দুঃখগুলো বুকে চেপে এক সপ্তাহের বদলে অন্তত বিয়ের তিনদিন নম্রের সাথে থাকবে। তাতেও কপাল ফুটো হলো। অর্ণার বাবা অনুমতি দেননি। শুধু অনুমতি দিয়েছেন হলুদের দিন সারাদিন থেকে রাতে বাসায় ফিরে যাবে, এবং বিয়ের দিনেও একই শর্ত। অর্ণা যেন পুরোপুরি ভেঙে গেল। প্রিয় বান্ধুবীর বিয়েতে তার সাথে অন্তত এক রাত না থাকলে চলে? সেটা অর্ণা তার বাবাকে বোঝাতে ব্যর্থ হলো। রক্ষণশীল পরিবারের মেয়ে সে। বাবার কথার অমান্যও করতে পারে না। অর্ণার বাবার পক্ষেও সম্ভব একা মেয়েকে এমন অচেনা পরিবেশে অন্তত এক রাত রাখতে। নোমান সাহেবের সাথে তার পরিচয় হয়েছে ঠিকই কিন্তু কিছু বাবা’রা সহজে কারো উপরেই ভরসা করে উঠতে পারেন না।

পার্লারে বসে অর্ণা পা দোলাতে দোলাতে এসব ভাবছে। এখন অর্ণা এবং নম্র পার্লারে অবস্থান করছে। অর্ণার সাজানো শেষ বিধায় সে আপাতত নম্রের অপেক্ষা করছে। বান্ধুবীর বিয়েতে অর্ণা খুব সুন্দর বেগুনী রঙের একটা লেগেঙ্গা পরেছে। এত গর্জিয়াস সাজ না দিলেও তার লেগেঙ্গার সাথে সাজটা সুন্দর ভাবেই মানিয়েছে। যদিওবা নম্রের বিয়েটা ঘরোয়া ভাবে হবে। কিন্তু প্রত্যেক মেয়েই যে বউ সাজার সুপ্ত ইচ্ছে লালন করে রাখে আজীবন; সেই সুপ্ত ইচ্ছেটা অপূর্ণ রাখলে যে পাপ হয়ে যাবে। এজন্যে শতাব্দ জোর গলায় জানিয়েছে নম্রের ইচ্ছেনুযায়ী যেন তার বিয়ের সাজ হয়। বিয়ের বেনারসিটাও নম্রের পছন্দেই কেনা হয়েছে। নম্রের পছন্দে অবশ্য বলাটা ভুল। জামা-কাপড় পছন্দ করাতে নম্র বরাবরই দুর্বল। ঠিকমতো পছন্দ করতে পারে না। কোনো একটা জামা অনেক ঘোরাঘুরির পরে পছন্দ হলেও দেখা যাবে বাসায় এসে সেটা আর ভালো লাগছে না। এজন্যে সাবরিনা এখন পর্যন্ত নিজেই পছন্দ করে নম্রকে জামা-কাপড় এনে দিত। এতে নম্র অভিযোগ করত না, বরং মায়ের পছন্দগুলোও তার পছন্দ হয়ে যেত। এবার বিয়েতে সাবরিনার বদলে শতাব্দ পছন্দ করে অত্যন্ত সুন্দর এক লাল টকটকে জামদানি। যা নম্রের চোখ জুড়িয়ে দেওয়ার মতো। ফ্যাশন ডিজাইনার মায়ের এমন ভালো ফ্যাশন সেন্স ছেলে থাকবে, এটা অস্বাভাবিক কিছু না। সত্যি-ই শতাব্দের ফ্যাশন সেন্স প্রশংসনীয়।

হঠাৎ অর্ণার সামনে এসে দাঁড়াল শতাব্দ এবং তইমন। তাদের দুজনকে দেখে অর্ণা চমকে যায়।

শতাব্দ একটু একরোখা স্বভাবের। তার স্বভাবে কিছুটা অস্বাভাবিকতাও মাঝেমধ্যে দেখা যায়। অদ্ভুত অদ্ভুত কাজ করে বসে। এখন এইযে, শেরওয়ানি পরিহিত নতুন বর শতাব্দ হুট করেই পার্লারে চলে এসেছে।

অর্ণাকে অবাক করে দিয়ে বলল,
–“তোমার হেল্প লাগবে শালিকা সাহেবা!”

———————–
বিয়েটা হবার কথা জুম্মার নামাজের পরপর দুপুর আড়াইটার মধ্যে। কিন্তু তিনটা বেজে গেল, এখনো কনের পার্লার থেকে ফেরার নামগন্ধ নেই। সাবরিনা ব্যস্ত হয়ে বারংবার অর্ণা এবং নম্রকে কল দিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু কারোই কল রিসিভ হচ্ছে না। ওদিকে নোমান সাহেব বারবার তাকে তাড়া দিচ্ছে। নম্র কোথায়? সেজে বাড়ি ফিরতে এত সময় লাগছে কেন তাদের? সাবরিনা দুশ্চিন্তায় তেমন কোনো উত্তর দিতে পারছে না।

এই তাড়াহুড়োর মধ্যেই হঠাৎ আরিফ সাহেব কল করলেন। কল করে জানালেন তার এখনো কিছু আত্নীয়-স্বজন আসা বাকি। এজন্যে বিয়েটা আছরের পরপরই পড়ানো হোক। এতে নোমান সাহেবের আপত্তি আছে কী না তা নিয়েই জিজ্ঞেস করল। নোমান সাহেব তখন ম্লান হেসে সম্মতি জানায়। অর্থাৎ তার কোনো সমস্যা নেই। এরপর সাবরিনা কিছুটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে। এর মাঝে নিঝুম এসে তার মাকে জানায় অর্ণা এবং নম্রের আসতে দেরী হবে। সেটা অর্ণা নম্রের ফোনে কল করে জানিয়েছে। নম্রের ফোনটা নিঝুমের কাছেই ছিল। কল ধরবে ধরবে করেও নিঝুম ধরেনি ভয়ে, যদি মা বকা দেয়? কিন্তু সেরকম কিছুই হয়নি। সাবরিনা সেসবে ধ্যান না দিয়ে আপন কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ে।

অর্ণা ইমনের পাশাপাশি সরু রাস্তা ধরে হাঁটছে। পথ ঘেঁষে থাকা ফুটপাতেই। আশেপাশের মানুষজন ঘুরে ঘুরে দুজনকে দেখছে। বিশেষ করে অর্ণাকে। সেজেগুজে, রঙিন পোশাকে বের হলে মানুষ সর্বপ্রথম মেয়েদের দিকেই আগে তাকায়। এবারও ব্যতিক্রম নয়। তবে মানুষদের মাঝে তেমন আগ্রহ প্রকাশ পাচ্ছে না। কিছু মানুষ ধরেই নিয়েছে হয়তো কোনো বিয়ের প্রোগ্রাম চলছে আশেপাশে, মেয়েটা দাওয়াত খেতেই বোধহয় যাচ্ছে। যেহেতু আজ শুক্রবার।

অর্ণা সমস্ত ব্যাপারটায় এক ফোঁটাও ধ্যান দেয়নি। সে তো পুরোদমে উপভোগ করছে ইমনের সঙ্গ। ইমনকে সামান্য ভালো লাগার থেকে যে ব্যাপারটা গভীরে চলে গেছে তা বুঝতে অর্ণা বেশি দেরী করেনি। সরল ভাবে এতদিনে সে বেশ টের পেয়ে গিয়েছে। ইমন ততক্ষণে আশেপাশের মানুষদের লক্ষ্য করছিল। অর্ণা কথা বলার প্রস্তুতি নিয়ে গলা হালকা করল। পরমুহূর্তে ইমনের উদ্দেশ্যে বলল,
–“কী মনে হয়? বিয়ের আগে শতাব্দ ভাই আমাদের কনে কে নিয়ে কোথায় গিয়েছে?”

ইমন কিছু না ভেবেই বলল,
–“আইডিয়া করতে পারছি না।”

এটুকু বলেই ইমন থেমে গেল। অর্ণা লাজুক হাসতে হাসতে বলল,
–“একটা ব্যাপার খেয়াল করেছেন?”
–“কী?”
–“আমাদের নাম ছাড়া সম্পর্কের একটা নাম হয়েছে।”
ইমন ভ্রু কুচকে বলল,
–“আমরা তো আগে থেকেই একটা সম্পর্কে আছি।”
–“এখন তো বেয়াই, বেয়াইন হয়ে গেলাম। আপনি আমার বেয়াই!”
এই পর্যায়ে এসে ইমন হালকা হাসল। নাটকীয় স্বরে বলল,
–“তাইতো। বেয়াইন সাহেবা; সালাম। বলুন আপনার জন্যে কী করতে পারি?”

অর্ণা এবার দ্বিধা ছাড়াই ইমনের হাত ধরল। ইমনের চোখে চোখ রেখে গাল জোড়া রক্তিম আভা ছড়িয়ে ক্ষীণ গলায় আওড়াল,
–“পরবর্তী মরশুমে আপনার এই বেয়াইন বেয়াইয়ের ঘরে বউ হয়ে যেতে রাজি আছে।”

ইমন বেশ চমকাল। পরমুহূর্তে হেসে বলল,
–“আমার ইচ্ছে শুনবে না?”
–“আমি তো জানি তোমার ইচ্ছে!”
অর্ণা সোজা আপনি থেকে তুমি সম্বোধনে চলে আসে। এতে ইমন তার হাসি আরও চওড়া করে অর্ণাকে হেঁচকা টানে বুকে নিয়ে বলল,
–“আমাকেও তো কিছু বলতে দিবেন ম্যাডাম! সব জেনে বসে থাকলে আমি কী করে আমার কথা বলি? আমারও তো ইচ্ছে করে প্রিয়জনকে চমকে দিতে!”

অর্ণা চোখ বুজে ইমনের বুকে মাথা রেখে বলল,
–“আচ্ছা; কিছু জানি না আমি। আপনি বলুন।”
–“ভালোবাসি!”

অর্ণা ইমনের বুক থেকে মাথা উঠিয়ে কিছু বলতেই নিবে ওমনি দেখল তার মেক আপ ইমনের পাঞ্জাবিতে লেগে গেছে। এটা দেখে অর্ণা হাসি আটকাতে পারল না। ইমন এই রোমান্টিক মোমেন্টে অর্ণার এরকম হাসি প্রত্যাশা করেনি। যার ফলস্বরূপ ভ্রু কুচকে চেয়ে আছে অর্ণার দিকে। অর্ণা তাকে হাত দিয়ে ইশারা করে বলল,
–“মেক আপ লেগে আছে।”

ইমন চমকে পাঞ্জাবিতে নজর দিল। কপাল কুচকে সেটা হাত দিয়ে ঝাড়তে ঝাড়তে বিড়বিড় করে বলল,
–“সস্তা আটা-ময়দা!”
ইমনের কথাটা অর্ণার কান অবধি পৌঁছাতেই তার হাসি থেমে বলল। চোখ রাঙিয়ে বলল,
–“কী বললে?”

———————————–
নম্র মাথায় লম্বা এক ঘোমটা টেনে দাঁড়িয়ে আছে শতাব্দের সঙ্গে। পার্লার থেকে শতাব্দ তাকে এখানে নিয়ে এসেছে। তাদের সামনে একটি ছোটো কবর। এই মুহূর্তে তারা দুজন আনিশার শ্বশুরবাড়িতে তাহাফের কবরের সামনে দাঁড়িয়ে। নম্র বিমূঢ় হয়ে চেয়ে আছে ছোটো কবরটার দিকে। অনুভূতিশূন্য হয়ে পড়েছে কয়েক মুহূর্তের জন্যে। শতাব্দ কবর জিয়ারত করে স্ব-শব্দে বলে ওঠে,
–“তাহাফ বাবা, তোমাকে নিয়েও তো আমার বিয়ে করার কথা ছিল। এই মুহূর্তে এসে স্বার্থপরের মতো কী করে তা ভুলি বলো তো? এজন্য তোমার হবু মামীকে নিয়ে সর্বপ্রথম তোমার কাছেই এলাম। দেখে বলো তো, তোমার এই হবু মামী আমাকে বিয়ে করার জন্যে পারফেক্ট কী না?”

নম্র পাতলা দোপাট্টার মধ্যে থেকে চমকে তাকাল শতাব্দের দিকে। ভেতরটা কেমন ভার ভার লাগছে তার। শতাব্দ একবারও তাকায়নি নম্রের দিকে। নম্র ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে রইলো শতাব্দের দিকে। শতাব্দ এমন কেন? সব দিকে তার খেয়াল রাখতে হবে কেন? এভাবে যে শতাব্দের প্রতি নম্রের ভালোবাসা ক্রমশ বাড়ছে সেটা কী লোকটা জানে?

শতাব্দ কিছুক্ষণ নীরব থেকে বলল,
–“এবার যাচ্ছি তাহাফ। মা-বাবাকে, মামাকে ভুলে যেও না। আমরা স্বার্থপর নই। তোমাকে সবসময় দোয়ায় রেখেছি!”

বলেই নম্রের দিকে তাকাল। অতঃপর ক্ষীণ গলায় বলল,
–“চলো!”

পিছে ফিরে দুজন অদূরে তাকাতেই দেখতে পেল দারোয়ান দুই আঙুলের সাহায্যে চোখ মুছছে। মধ্যবয়সী লোকটার অবস্থা দেখে বেশ বোঝা যাচ্ছে, শতাব্দের কথা সে শুনেছে। বেচারা খুব করে চেষ্টা করছিল অশ্রুর বাঁধ যেন না ভাঙে। কিন্তু অশ্রু’রা আজ চরম বেঈমানী করল। শতাব্দ তার দিকে এগিয়ে গিয়ে তার কাঁধে হাত রাখল। নরম সুরে বলল,
–“আজ আমার জন্যে বিশেষ একটি দিন। দোয়া করে দিনটি আরও বিশেষ করে দিন চাচা!”

মধ্যবয়সী লোকটি ঝাপসা চোখেই শতাব্দের মাথায় পরম স্নেহে হাত বুলিয়ে দিল। নম্র এগিয়ে আসতেই তার মাথাতেও স্নেহের পরশ দিল। ভাঙা গলায় বলল,
–“জীবনে অনেক সুখী হও তোমরা। আল্লাহ তোমাদের সুখের চাদরে সদা জড়ায়ে রাখুক!”

———————————
‘কবুল’ বলার সময় মুখ কাঁপছিল নম্রের। যা সে একদমই প্রত্যাশা করেনি। ভালোবাসার মানুষকে পাওয়ার জন্যে সহজ একটা বাক্য তিনবার বলার জন্যেও এভাবে এত নার্ভাস হয়ে যেতে পারে সেটা বুঝতে পারেনি। এতদিন অন্যদের এই মুহূর্তে এসে দেখলে হাস্যকর লাগত, এইটুকু ব্যাপারে ভীষণ বিরক্তও হত সে। কিন্তু নিজের বেলায় এসে হারে হারে বুঝতে পারছে এই মুহূর্তে নার্ভাসনেস। বহু কষ্টে কবুল তিনবার উচ্চারণ করে হুঁ হুঁ করে উঠল সে। বাহ্যিক দিক থেকে তাকে পরিজন থেকে দূরে যাওয়ার কষ্টে কাঁদতে বুঝালেও ব্যাপারটা তেমন না। সে কাঁদছে তার এতগুলো বছরের ভালোবাসার একটা নাম পাওয়ার জন্য, প্রিয় পুরুষটাকে নিজের করে পাওয়ার আনন্দে। এই আনন্দ তার চোখের জল হয়ে ঝড়ছে।

কিন্তু এই কান্না তার কিছু মুহূর্তে-ই দুঃখে পরিণত হলো। মা-বাবা, নিঝুমকে ছেড়ে চলে যাবার যন্ত্রণা তাকে পোড়াতে লাগল। সাবরিনা চোখে জল নিয়ে শক্ত হয়ে মেয়েকে সামলালেন। নম্র চোখে জল নিয়েই আবার কম্পিত হাতে সাইন করল কাবিননামায়।

ঠিক সন্ধ্যা নামার পরপরই নম্রকে বিদায় দেওয়া হলো। বিদায়ের সময় এত কাঁদতে পারেনি সে। এখান থেকে এখানে শ্বশুরবাড়ি। চাইলে যখন তখন মায়ের কাছে চলে আসবে এই আশ্বাস দিয়েই সকলে তাকে শান্ত করার চেষ্টা করেছে। কিন্তু কেউ এত না কাঁদলেও ছোটো নিঝুম খুব কেঁদেছে। বোন চলে গেলে রোজ দুষ্টুমি কার সাথে করবে? কাকে রাগিয়ে দিবে সে? ছোটো বোনের জন্যে শান্ত নম্র পুণরায় অশান্ত হয়ে পড়েছিল। বোনটাকে জড়িয়ে ধরে ছিল অনেকক্ষণ। এইটুকুনি মেয়েটা নম্রের প্রতি কত অগাধ ভালোবাসা পুষে রেখেছিল মনের মধ্যে। বোনদের ভালোবাসা বোধহয় এমনই হয়।

গাড়িতে বসে নম্র কাঁদছে। কান্নার দমক কমে এলেও বারবার নাক টানছে। এই শব্দটা বেশিক্ষণ নিতে পারল না শতাব্দ। ড্রাইভারের উদ্দেশ্যে বলল,
–“স্ট্যান্ডের দিকে যান তো ভাই!”

ড্রাইভার হতভম্ভ হয়ে গেল। নম্রও কান্না ভুলে শতাব্দের দিকে অবাক চোখে তাকাল। শতাব্দ আড়চোখে নম্রের মুখ পরখ করে পকেটে হাত দিল। বাবাকে কল দিয়ে জানালো, নম্রকে নিয়ে আধঘন্টা পরে ফিরবে। আরিফ সাহেব হয়তো বুঝল তার ছেলে নম্রের মন ভালো করার চেষ্টা করবে। এজন্যে বেশি কথা বাড়াল না। বাপ-ছেলে সবসময় আগে পিছে লেগে থাকলেও তারা নীরবেই দুজন দুজনকে অনেক সময় পড়তে পারে। ব্যাপারটা অদ্ভুত হলেও উপভোগ্য।

স্ট্যান্ডের দিকেই একটা টঙ রয়েছে। এখানেই এই শীতল সন্ধ্যায় নম্রকে নিয়ে চা খেতে এসেছে শতাব্দ। এলাকার কিংবা তার বাড়ির সামনের টঙে নম্রকে নিয়ে তাকে অস্বস্তিতে ফেলতে চায়নি বিধায়-ই দূরে এসেছে। নম্র দু-হাত পেচিয়ে রাতের শহর দেখছে। যদিও এত আহামরি কিছু নয় দেখার মতো। তবে শতাব্দ সঙ্গে থাকলে সবকিছুই কেমন রঙিন রঙিন লাগে। এই কৃত্রিম হলদে আলোয় আলোকিত পথ-ঘাটও বেশ ভালো লাগছে তার কাছে। হাইওয়ে রাস্তার ওপারের ডান পাশে তাকালেই শতাব্দের মাথা উঁচু করে দাঁড়ানো বেকারী দেখা যায়। বেকারী খোলা। তবে বেকারীর মধ্যে কে আছে সেটা জানে না নম্র। হবে হয়তো নতুন ছেলেটা কিংবা সিয়াম।

মুখের সামনে ধোঁয়া ওঠা চায়ের কাপ ধরতেই নম্রের ভাবনায় ছেদ ঘটল। পেশিবহুল হাতের মালিকের দিকে তাকাল সে। শতাব্দ কিঞ্চিৎ ভ্রু কুচকে চেয়ে আছে তার দিকেই। নম্র দ্রুত চায়ের কাপটা হাতে নিয়ে বলল,
–“ধন্যবাদ!”
শতাব্দ উত্তরে কিছু বলল না। নম্রের পাশে দাঁড়িয়ে চায়ে চুমুক দিল। সেই শব্দ নম্রের কান অবধি পৌঁছে যায়। নম্রও ধীরে সুস্থে চায়ে চুমুক দেয়। কিছু সময় অতিবাহিত হওয়ার পর চা যখন কাপের অর্ধেকে এসে ঠেকেছে তখনই শতাব্দের চেনা-জানা একজন এলো। কটাক্ষ করে শতাব্দের উদ্দেশ্যে বলল,
–“বিয়ে করে আসলে নাকি?”

শতাব্দ চা শেষ করে লোকটার দিকে তাকায়। স্বাভাবিক মুখে হঠাৎ অস্বাভাবিক হাসি ফুটিয়ে বলল,
–“না চাচা। হাল চাষ করে আসলাম। একটু পর ধান কাটতে যাব!”

শতাব্দের এরকম জবাবে লোকটা, সঙ্গে নম্রও অপ্রস্তুত হলো। নম্র প্রথমে বিষম খেলেও পরমুহূর্তে নিজেকে সামলে নেয়। লোকটা কথা না বাড়িয়ে চলে যায়। শতাব্দ তাকে প্রায়-ই এড়িয়ে যেত। কিন্তু আজ এমন বেফাঁস ত্যাড়া কথা বলে ফেলবে সেটা বুঝতে পারেনি।

লোকটি চলে যেতেই নম্র চা শেষ করে বলল,
–“এভাবে বললেন কেন?”
–“যারা আমার ভালো দেখতে পারে না তাদের সাথে আমি মিষ্টি কথা বলতে পারি না!”

বলেই শতাব্দ নম্রের থেকে চায়ের কাপটা নিয়ে টঙে চলে গেল। নম্র আর কিছু বলল না। শতাব্দ যখন বেকারী করতে চেয়েছে এটা জানা-জানি হওয়ার পর অনেকেই অনেক কথা বলেছে; সেটা নম্র জানে। সঙ্গে এটাও জানে শতাব্দ নিজের স্বপ্নে কিংবা ইচ্ছেতে বাইরের মানুষদের হস্তক্ষেপ একদম পছন্দ করে না। লোকটি হয়তো এগুলোর মধ্যেই কিছু একটা করেছে।

শ্বশুরবাড়িতে পা রাখার পর থেকে সকলেই যেন ব্যস্ত হয়ে পড়ে নম্রকে নিয়ে। নানান নিয়মের মাঝেই তাকে থাকতে হলো। এর মাঝে দীপালি বেগম সারাক্ষণ তার পাশেই বসে ছিল। লাল টকটকে বেনারসী শাড়িতে বঁধুরূপে সজ্জিত নম্রকে চোখ জুরিয়ে দেখেছেন। তার মনের কথাই সত্য হলো, নম্র আসলেই তার দাদুভাইয়ের জন্যে তৈরি। আহ, সুখে চোখ ভিজে উঠেছে দীপালি বেগমের।

রাতের খাওয়া নম্রকে আগেই করিয়ে দিলেন রুমা। মেয়েটা না খেয়ে ছিল অনেকক্ষণ। নম্র অস্বস্তিতে বারণ করলেও রুমা তা শুনেননি। বরং পরম আদরে খাইয়ে দিয়েছেন। শতাব্দ কিছু কাজে নম্রকে দিয়েই বাইরে চলে গেছিল। যাওয়ার সময় বলেও গিয়েছিল দ্রুত ফিরে আসবে। তবে নম্রকে শতাব্দের সাজানো ঘরটায় বসিয়ে আসার পরেও শতাব্দ ফিরেনি।

বাহারী ফুল দিয়ে সাজানো হয়েছে পুরো বিছানা। ফুলের ঘ্রাণে মৌ মৌ করছে। ঘ্রাণ নাকে এসে বিঁধতেই তার ভেতরটা কেমন শিহরণ করে উঠছে। শতাব্দের কিছু কাজিন’রা দুষ্টু কথায় মেতেছে ততক্ষণে। তাদের মাঝে আনিশা নেই। আনিশা তাকে ঘর অবধি পৌঁছে দিয়েই রুম থেকে বেরিয়ে গেছে। তোহা কাঁদছিল, তার কান্নার গলা ঘর থেকেই শোনা যাচ্ছিল।

তাদের অসংলগ্ন কথায় নম্র বেশ জড়োসড়ো হয়ে পড়ল। এমনিতেই মন-জুড়ে রাজ্যের অস্থিরতা, আর এরা সাথে ভয়ও জুড়ে দিচ্ছে। অনুভূতি মিশ্রিত ভয়। ওরা বেশিক্ষণ থাকল না। কলিংবেলের শব্দ অএয়ে হুড়োহুড়ি করে বেরিয়ে গেল। তারা আন্দাজ করতে পারছে যে শতাব্দ এসেছে। দরজা লাগিয়ে দিতে ভুলল না। তাদের এখন উদ্দেশ্য হচ্ছে শতাব্দের থেকে কিছু নিয়ে তবেই ভেতরে বউ দেখতে দিবে।

আর এদিকে অস্থিরতা, রাজ্যের লাজ নিয়ে নম্র বসে রইলো। ইচ্ছে করছে দূরে কোথাও পালিয়ে যেতে। ভেতরটা এত যুদ্ধ শুরু করল কেন হঠাৎ? নম্র হঠাৎ তার গায়ের উষ্ণতা অনুভব করল। লাজের প্রভাব এই উষ্ণতা।

দশ মিনিট পর টাকা-পয়সার ঝামেলা মিটিয়ে দরজা খুলে ভেতরে প্রবেশ করে শতাব্দ। শতাব্দকে দেখে এবার কাঁপাকাঁপি তার অস্থিরতার সাথে যুক্ত হলো। চোখ তুলে চাইলো তার প্রাণ পুরুষের দিকে। শতাব্দ পুরো কালো শেরওয়ানি পরেছে আজ। এমনিতেই শতাব্দকে কালোতে দেখলে নম্রের ভেতরটা অনুভূতির তীব্র আন্দোলনে মুখোরিত হয়ে থাকে। তার ওপর বিয়ের দিন কালো শেরওয়ানি পরে শতাব্দ যেন নম্রকে শাস্তি দিল কালো পোশাক নিষিদ্ধ করার কথাখানা বলার জন্যে। সুঠাম দেহি, লম্বাটে উজ্জ্বল শ্যাম ছেলেটা এগিয়ে এলো নম্রের দিকে। শতাব্দ যত এগিয়ে আসছে, নম্রের বুকের ওঠা-নামা ততই বাড়ছে। কোনো রকমে চোখ নামিয়ে ফেলল সে। শতাব্দ তার সম্মুখে বসল। আলতো হাতে লাল দোপাট্টা উঠিয়ে লাজে রাঙা নম্রকে দেখতে লাগল। এই কঠিন মুহূর্তে, অসম্ভব সুখে নম্রের নিজেকে মাটি ফাঁক করে লুকোতে ইচ্ছে করল। কিন্তু সেটা কী এই মুহূর্তে সম্ভব?

শতাব্দ কিছুটা সময় নিয়ে তার পেছন থেকে একটা গিফটের ব্যাগ বের করে লহু কন্ঠে আওড়াল,
–“তোমার মুখ দেখায় দামী কিছু দিতে পারলাম না। তবে আমার জন্যে তুমি-ই সেরা মূল্যবান নম্রতা। তোমার কাছে পৃথিবীর যেকোনো দামী সম্পদ-ই আমার নিকট তুচ্ছ। তবে আমার কাছে একটা দামী উপহার আছে। সেটা এখন থেকে সবসময়ই পাবে!”

নম্র মাথা তুলে তাকাল শতাব্দের দিকে। শতাব্দের এত সুন্দর কথাতে নম্র মজে গেলেও দামী উপহারটা কী তা জানার কৌতুহল হচ্ছে। শতাব্দও বোধহয় সেটা বুঝতে পারল। নম্রের হাতে উপহারটা তুলে দিয়ে বলল,
–“ভালোবাসা!”

মুহূর্তে-ই নম্রের সর্বাঙ্গ শিথিল হয়ে পড়ল। চোখ জোড়া আবেশে বন্ধ হয়ে পড়লে মাথা নিচু করে ফেলল সে। নিঃশ্বাস ঘন হয়ে আসছে। যেটা সবসময় চেয়ে এসেছে সেটাই এখন তার চোখের সামনে।

শতাব্দ থেমে বলল,
–“এটা আগামীকাল সকালে পরিও। এখন চেঞ্জ করে নাও। নিশ্চয়ই খারাপ লাগছে তোমার।”

নম্রের মনের কোণে একটু হলেও শতাব্দের মুখে তাকে বউ সাজে কেমন লাগছে তা জানার স্পৃহা জেগেছিল। কিন্তু শতাব্দের শেষ কথাগুলোয় নম্রের মনঃক্ষুণ্ণ হলো। কিন্তু যা পেয়েছে তাতে খুশি থাকার চেষ্টা করে এই ব্যাপারটুকু চেপে গিয়ে সম্মতি জানাল। আলতো পায়ে বিছানা থেকে নেমে ড্রেসিং টেবিলের সম্মুখে গিয়ে দাঁড়িয়েছে। কানের বিরাট ঝুমকাসহ বাকি অলংকার খুলে বাথরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নেয় সে। বেরিয়ে আসে খোলা চুলে। মুখমন্ডল ভেজা। সাজ সব ধুঁয়ে ফেলেছে সে। টিস্যু দিয়ে মুখশ্রী মুছতে মুছতে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে কিছু যেন ভাবতে বসে গেল। শতাব্দ ততক্ষণে তোয়াল নিয়ে বাথরুমে ঢুকেছে। কিছু সময়ের ব্যবধানে শাওয়ার ছাড়ার শব্দ পাওয়া যায়। শাওয়ারের শব্দ শুনে নম্রও ভেবে নেয় গোসল করবে। এজন্যে ব্যাগ থেকে একটা শাড়ি বের করে বিছানায় রেখে সারা ঘরে চোখ বুলিয়ে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে শাড়ির টুকটাক পিন খোলার চেষ্টা করতে থাকে।

নম্র তার কাজে এতটাই ব্যস্ত হয়ে পড়ে যে পিছে যে কখন শতাব্দ এসে দাঁড়িয়েছে তার সেদিকে খেয়াল-ই নেই। কোমড়ের সেফটিপিন খুলে যেই আয়নায় তাকিয়েছে তখনই নম্রের ভেতরটা ধ্ক করে উঠল। হাঁটু অত্যন্ত কাঁপতে শুরু করল। শতাব্দ একটা টাউজার এবং সম্পূর্ণ খালি গায়ে দাঁড়িয়ে। ভেজা চুল কপালে লেপ্টে আছে, এবং নম্রের দিকেই অদ্ভুত নজরে চেয়ে আছে। নম্র ব্যাপারটা হজম করতে পারছিল না। এজন্যে সরে আসার জন্যে এক পা এগিয়ে নেওয়া ধরতেই শতাব্দ ঝট করে নম্রকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরল। শতাব্দের খোঁচা খোঁচা দাঁড়িতে পূর্ণ থুঁতনিটা গিয়ে ঠেকলো নম্রের উম্মুক্ত কাঁধে। নিমিষেই চোখ বুজে থরথর করে কেঁপে উঠল নম্র। গায়ের সমস্ত ভার যেন শতাব্দকে দিয়ে দিল। অনুভূতির জোয়ারে দাঁড়ানোর শক্তিটুকুও বোধহয় হারিয়ে ফেলল।

শতাব্দ আয়নায় নম্রের মুখশ্রী পর্যবেক্ষণ করে অধরে বাঁকা হাসি ফুটিয়ে বলল,
–“যখন তোমাকে বউ রূপে দেখলাম, তখন মনে হয়েছিল সিদ্ধান্ত ভুল নেইনি। তোমাকে এই রূপে অন্য কারো হতে দেখলে আফসোস করতে করতে একদিন নির্ঘাত ম/রে যেতাম।”

নম্র কিছু বলার মতো অবস্থায় নেই। সে হাত দুটো বহু কষ্টে চালিয়ে শতাব্দের বাঁধন থেকে মুক্ত হতে চাইল। কিছুটা ছটফটানি লক্ষ্য করা গেল তার মধ্যে। এতে কী শতাব্দের মুখ থেমে থাকবে? হাতের বন্ধন আরও শক্ত করে সরু গলায় বলে ওঠে,
–“এত ছটফট করছ কেন? বর যেহেতু হয়েছি তোমাকে স্পর্শ করবই। এখন অবধি তো একটা কিসও করলাম না। এতেই এত কাঁপাকাঁপি, ছটফটানি? এই কলিজা নিয়ে তুমি আমাকে বিয়ে করেছ?”

নম্র আরও কেঁপে উঠল এই ধরণের অসংলগ্ন কথা শুনে। নিজেকে সামলে কম্পিত গলায় বলল,
–“ছা..ছ..ছাড়ুন! গোসল করব।”

–“দরকার নেই। গোসলের জন্যে ছাড়ব আর তুমি পালিয়ে যাবা? যদিও পালিয়ে যাবে আর কোথায়? এখন থেকে এমনিতেও চোখে শতাব্দ ছাড়া আর কাউকে দেখবে না।”

নম্র তাও বৃথা চেষ্টা করল। শতাব্দ নম্রের ঘাড়ে অধর ছুঁয়ে তাকে ঘুরিয়ে নিজের সাথে মেশালো। নম্রের মুখ পরখ করে তার কপালে অধর ছোঁয়ালো। নম্র চোখ-মুখ খিঁচে বন্ধ করে ফেলল। শতাব্দ নেশালো সুরে বলল,
–“তোমার গায়ের এই পারফিউমটা বড্ড জ্বালাতন করছে আমাকে নম্র। না চাইতেও বারংবার হারিয়ে যাচ্ছি। কালো পোশাকের মতো কী পারফিউমটাকে নিষিদ্ধ করে দিব?”

নম্র কিছু বলার জন্যে মুখ খুললেই অধরে কারো ঘনিষ্ঠ স্পর্শ পেল। বেসামাল স্পর্শ পেয়ে নম্র খামচে ধরল শতাব্দের হাত। কিছু সময় পর শতাব্দ নম্রকে ছেড়ে নম্রের কপালে কপাল ঠেকাল। নম্র ততক্ষণে ঘনঘন নিঃশ্বাস ফেলছে। একে অপরের নিঃশ্বাস শুনল বেশ কিছুক্ষণ। শতাব্দ ঘোর লাগা গলায় আওড়াল,
–“নার্ভাস?”

নম্র কোনোরকমে মাথা নাড়াল। শতাব্দ নিজেকে সামলে নম্রের গালে চুমু খেয়ে তাকে ছেড়ে দিয়ে বলল,
–“গোসলটা সেরে এসো। নয়তো মনে হচ্ছে রাতে তোমার ঘুম হবে না!”

শতাব্দ গলায় ঝুলানো তোয়াল দিয়ে মাথা মুছতে মুছতে বারান্দার দিকে চলে গেল। আর নম্র সেখানেই পাথরের মতো করে দাঁড়িয়ে রইলো। শতাব্দ হঠাৎ তাকে এভাবে ভালোবাসা দিল। যাকে আজীবন নিরামিষ ভেবে আসল, এটা কী সেই শতাব্দ? নম্র কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে কোনোরকমে আলমারিতে গিয়ে পিঠ ঠেকালো। তখনো নম্রের দেহজুড়ে অস্বাভাবিক কম্পন।

~[ক্রমশ]

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে