#প্রণয়_পাড়ে_সন্ধি
|পর্ব ১৪|
লাবিবা ওয়াহিদ
রাত আটটার খবর দেখছিলেন আরিফ সাহেব। দীপালি বেগম ছেলেকে সঙ্গ দিতে টিভির দিকে তো আবার পুরো ঘরে নজর বুলাচ্ছেন। অধর জোড়া বিরতিহীন নড়ছে। জিকির করছেন অল্প-স্বল্প। এমন সময়ই হঠাৎ শতাব্দ আসলো। দীপালি বেগমের মুখোমুখি সোফাতে বসল। শতাব্দ থমথমে গলায় বলল,
–“আমার কিছু বলার ছিল বাবা!”
আরিফ সাহেব শুনেও না শোনার ভান ধরে রইলেন। এক নজরে চেয়ে রইলেন টিভির পানে। ভাব-ভঙ্গি এমন, অত্যন্ত মনোযোগ দিয়ে টিভি দেখছেন। ছেলেকে বোঝাতে চাচ্ছেন বিয়ের টপিক ছাড়া কোনো কথা আরিফ সাহেব বলবে না। শতাব্দ তার ইচ্ছেমতো বেকারী খুলেছে, যখন যা ইচ্ছা তাই করেছে কিন্তু এবার আরিফ সাহেবের কথা শতাব্দ শুনতে বাধ্য।
রুমা ততক্ষণে রান্নাঘরের কাজ রত্নাকে বুঝিয়ে দিয়ে বৈঠকঘরে এসেছে। শতাব্দ আরিফ সাহেবের কাছে আসার আগে মাকে ডেকে নিয়েছে। তার এই গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তে মায়েরও উপস্থিতি জরুরি।
আরিফ সাহেব শতাব্দকে পাত্তা দিচ্ছে না দেখে শতাব্দ তৎক্ষণাৎ আরিফ সাহেবের পাশে থেকে রিমোটটা ছোঁ মেরে নিয়ে টিভি বন্ধ করে দিল। ঘটনা এতটাই দ্রুত ঘটল যে এক মুহূর্তের জন্যে আরিফ সাহেবের মস্তিষ্ক অচল হয়ে যায়। পরমুহূর্তে ছেলের পানে তাকিয়ে অস্ফুট স্বরে বলল,
–“হচ্ছে কী?”
শতাব্দ অত্যন্ত গম্ভীর গলায় বলল,
–“আমার ইম্পর্টেন্ট কথায় মনোযোগ ফেরালাম। এই রিমোট আপনি ততক্ষণ পাবেন না যতক্ষণ না আমার কথা আপনি শুনছেন!”
আরিফ সাহেব শতাব্দের ত্যাড়ামি দেখে দাঁতে দাঁত চেপে বসে রইলেন। ছেলেটা যে এত ঘাড়ত্যাড়া স্বভাবের কী করে হলো সেটাই বোঝা মুশকিল। দীপালি বেগম কী জন্মের সময়ে ছেলেটাকে ঠিক-মতোন মধু খাইয়েছিল? আজকাল এই ব্যাপারটা নিয়ে বড্ড সন্দেহ হয় তার।
এর মাঝে আনিশাও ধীরে সুস্থে হেঁটে হেঁটে বৈঠকঘরে এলো। রুমে বিশ্রাম নিতে নিতে বড্ড হাঁপিয়ে উঠেছে সে। আনিশার অন্তসত্ত্বার বয়স আট মাস। তবে এই মাসের তুলনায় পেট অস্বাভাবিক বড়ো। কারণও রয়েছে। একসঙ্গে দুজন অতিথি আসবে। আনিশাকে রুমা ধরে সোফায় বসিয়ে দিল। তবে আনিশা তার ভাই-বাবার মুখপানে চেয়ে কিছু বলার সাহস পেল না। তবে এটুকু উপলব্ধি করল, আবারও সংঘর্ষ শুরু হতে যাচ্ছে।
আরিফ সাহেব থমথমে গলায় বলল,
–“তোমার বিয়ের ব্যাপার ছাড়া আর কোনো কথা আমি শুনতে চাচ্ছি না। এখন আসতে পারো!”
–“বিয়ের ব্যাপারেই তো বলতে এসেছি। তবে আমার কন্ডিশন আছে। মেয়ে আমার পছন্দের হবে!”
উপস্থিত সকলে হুমড়ি খেয়ে পড়ল যেন শতাব্দের কথায়। গতকাল অবধি যেই ছেলে বিয়ের নামটাও শুনতে চায়নি, বাবার সাথে কয়েক দফা ঝামেলাও বাঁধিয়েছে সেই ছেলে হঠাৎ বিয়ে করতে রাজি হলো তাও কী না নিজের পছন্দের কাউকে? শতাব্দকে দ্বারা আদৌ কাউকে পছন্দ করা সম্ভব? বিষয়টা কারোই হজম হচ্ছে না।
দীপালি বেগম চোখ কপালে তুলে বলল,
–“কারে পছন্দ করছ তুমি দাদুভাই?”
শতাব্দ কিছুটা নীরব থেকে ফোঁস করে নিঃশ্বাস ফেলল। বলল,
–“নম্রকে। কোনো সমস্যা আছে?”
আরেক দফা চমকানোর পালা বোধহয় সকলের। নম্র? দীপালি বেগম যাকে মনে-প্রাণে চাইল সেই মেয়েকেই শতাব্দ পছন্দ করেছে? কতদিন পর দোয়া কবুল হওয়ায় দীপালি বেগমের চোখ-মুখ জ্বলজ্বল করে উঠল। উচ্ছ্বাসিত হয়ে রুমার উদ্দেশ্যে বলল,
–“আলহামদুলিল্লাহ! দেখছ বউমা, আমার আর আমার দাদুভাইয়ের পছন্দে কত মিল? মাবুদ আমার দোয়া কবুল করছে। ওই আরিফ, বইসা আছস ক্যান? যা, যা মিষ্টির দোকানে। এক্ষুণি মিষ্টি মুখ করাবি আমারে!”
দীপালি বেগমের কথায় শতাব্দ কিছুটা অপ্রস্তুত হলো। দাদীর এরকম আনন্দ সে একদমই আশা করেনি। এতদিন ভেবেছিল নম্রকে পছন্দ করা নিয়ে তাকে অনেক কিছুর সম্মুখীন হতে হবে। এজন্যে ভেতরে ভেতরে নিজেকে পুরোদমে তৈরিও করেছিল। কিন্তু শেষে এসে কী হলো?
আনিশা তখনো হা করে চেয়ে আছে। অস্ফুট স্বরে আওড়াল, “তুই কী সত্যি বলছিস ভাই?”
শতাব্দ এবার নার্ভাস হয়ে বলল,
–“মিথ্যে বলতে যাব কেন? পছন্দ করা কী স্বাভাবিক না? বাবা, আপনি সম্বন্ধ পাঠানোর ব্যবস্থা করুন। খুব সম্ভবত নম্রের বাড়িতে বিয়ের কথা চলছে!”
শতাব্দ আর এক মুহূর্তও বসল না। রিমোটটা বাবাকে ফেরত দিয়ে লম্বা লম্বা পা ফেলে নিজের রুমে চলে গেলেন। দীপালি বেগম তখনো আল্লাহ’র দরবারে শুকুরিয়া আদায় করছেন। আর আরিফ সাহেবের মুখটা দেখার মতোন। রিমোট ফিরে পেলেও টিভি ছাড়ার শক্তি পেলেন না। ঘোর থেকে বেরুতে দীর্ঘ সময় লাগবে।
————————–
আবারও বিনা উপলক্ষ্যে দাওয়াত প্রদান হলো। তবে এবার নম্রদের দাওয়াত; শতাব্দের বাড়িতে। তবে হ্যাঁ, এবার উপলক্ষ্য একটা রয়েছে। তবে সেটা শুধু শতাব্দদের পরিবার জানে। বিশেষ উপলক্ষ্যে আরিফ সাহেব তার একমাত্র মেয়ে জামাই রিহাবকেও দাওয়াত করেছেন। সবমিলিয়ে আজ দুই পরিবার দারুণ সময় কাটাচ্ছে। নিঝুম এবং নম্র আনিশার রুমে বসে আছে। অদ্ভুত অস্বস্তি এবং শঙ্কায় নম্রের জুবুথুবু অবস্থা। সেদিন শতাব্দের মুখে এমন হুট করে একটি অনাকাঙ্খিত বাক্য শুনবে যা নম্র স্বপ্নেও ভাবতে পারেনি। এইতো, এই ঘটনা দু’দিন আগের। দু’দিন আগে সেই লেকের পাড়ে শতাব্দ বিয়ের কথাটা বলে ফেলল।
বিস্ময়ে হতভম্ভ নম্র অবশ্য উত্তর দেওয়ার ভাষা খুঁজে পায়নি। শতাব্দ তখন বিচলিত না হয়ে বলেছে,
–“থাক, উত্তর দেওয়ার দরকার নেই। উত্তর না দিলেও কালো পোশাক নিষিদ্ধ করার জন্যে তোমাকে আমার বউ হতে হবে। হতেই হবে। ক্লিয়ার?”
নাহ! আজ দু’দিন পার হয়ে গেল। নম্র নাওয়া-খাওয়া, ঘুম সব চাঙ্গে উঠিয়ে আজও বিষয়টা পরিষ্কার করতে পারল না। শতাব্দ কী আদৌ বলেছে? নাকি ভুল শুনেছে? শতাব্দ মশকরা করেনি তো? এই ধরণের নানান প্রশ্ন দিন-রাত মস্তিষ্কে খেলে গেছে তার। দাওয়াতে আসার পর থেকে একবারও চোখের দেখা দেখেনি শতাব্দকে। নম্রকে এত এত অস্থিরতায় ডুবিয়ে মহাশয় কোথায় হাওয়া লাগিয়ে ঘুরছেন কে জানে?
–“আসব?”
নম্র মাথা তুলে তাকাল দরজার পানে। সিয়াম দাঁড়িয়ে। হাতে খাবারের প্লেট। নম্র নড়েচড়ে বসে মুখে শুকনো হাসি ফুটিয়ে বলল,
–“আরেঃ আসুন না ভাইয়া!”
সিয়াম মুচকি হেসে নম্রের দিকে এগিয়ে গেল। খাবার প্লেটটা নম্রের সামনে রাখল। নম্র অবাক হয়ে প্লেটের দিকে তাকাল। সুন্দর একটা ঘ্রাণ নাকে বিঁধছে। সিয়াম হেসে বলল,
–“মোমোটা শীঘ্রই বেকারীতে লঞ্চ করব। ট্রাই করে দেখো তো টেস্ট ঠিক আছে কী না? নিঝুম আপুও ট্রাই করো!”
নিঝুমকে বলতে দেরী, কিন্তু মোমোতে তার হাত দিতে দেরী নেই। নম্র অবশ্য রয়েসয়েই একটা মোমো হাতে নিল। দু’দিন খাওয়া-দাওয়ায় অনিয়ম হওয়ায় কিছুটা রুচিহীনতায় ভুগছে নম্র। ঠিকভাবে মোমোর রিভিউ দিতে পারবে কী না সেটা নিয়েই চিন্তা করতে করতে মোমোতে কামড় বসালো। চমৎকার ভাবে নম্রের রুচিহীনতা কেটে গেল সুস্বাদু মোমো মুখে তুলে। নম্র কিছু বলার আগেই নিঝুম খুব টেস্টি হয়েছে বলে নিজের মতামত জানালো। এতে বোধহয় সিয়াম স্বস্তি পেল। পরমুহূর্তেই নিঝুমকে ধন্যবাদ জানিয়ে নম্রের দিকে তাকাল। নম্র পুরো একটা মোমো শেষ করে বলল,
–“আমার রুচিহীন মুখে রুচি ফিরিয়ে আনলেন ভাইয়া। আপনি আসলেই রান্নার কারিগর। আমাকেও কিছু রান্না-বান্না শিখিয়ে দিয়েন!”
সিয়ামের বলতে ইচ্ছা করল, “ভাবী হয়ে এ বাড়িতে আসলে নিশ্চয়ই শেখাবো!”
কিন্তু মুখে ধন্যবাদ জানালো। নম্র বলল,
–“আজ বেকারীতে যাননি?”
–“না। দোকানে একজন পার্ট টাইমে আছে। সেই আজকে সামলাবে!”
নম্র ছোটো করে শুধু ‘ওহ’ বলল।
——————————–
খাওয়া-দাওয়ার পর্ব সেরে বড়ো’রা সবাই একসাথে বসেছে। দীপালি বেগমের পাশে বসে আছে রিহাব। এই গুরুত্বপূর্ণ কথাতে মেয়ের জামাইকেও রাখলেন আরিফ সাহেব। দুই বন্ধু কিছুক্ষণ এটা সেটা নিয়ে কথা বললেও একসময় আরিফ সাহেব নীরব রইলেন। পরিবেশ অনুকূলে এনে খুব নরম গলায় বলতে শুরু করল,
–“নোমান! আমি কিছু গুরুত্বপূর্ণ কথা বলতে চাচ্ছি, যদি তুই চাস!”
নোমান সাহেব এক গ্লাস পানি খেয়ে স্বাচ্ছন্দ্যে বলল,
–“কী যে বলিস না আরিফ! তুই আবার কথা বলতে অনুমতি কবে থেকে নিতে শুরু করলি?”
আরিফ সাহেব আলতো হেসে বলল,
–“নিলাম। এখন অনুমতিটা দিয়ে ফেল!”
নোমান সাহেব হাসতে হাসতে বললেন,
–“আচ্ছা, দিলাম নাহয় অনুমতি। কী বলবি বল!”
আরিফ সাহেব একপলক মায়ের দিকে তাকিয়ে বলল,
–“আমি যা বলতে চাই সেটা নিয়ম অনুযায়ী তোর বাড়িতে গিয়ে বলা উচিত ছিল। জানি তোদের দাওয়াত করে এনে এসব বলাটা উচিত হচ্ছে না। কিন্তু মা ব্যাপারটা নিজ মুখে বলতে চাইছে বিধায় তোকে ডেকে আনা।”
দীপালি বেগম আরিফ সাহেবের কথায় ফোড়ন কেটে জানালো তার সমস্যা। নোমান সাহেবের বাড়ি অবধি হেঁটে যাওয়ার শক্তি এখন আর পায় না। এ কারণে তার জন্যেই নোমান সাহেবদের এখানে দাওয়াত করা হয়েছে। দাওয়াত-ও খাওয়া হলো আবার শুভ কথাও বলা হলো।
নোমান সাহেব এখনো বুঝতে পারছে না যে তারা ঠিক কী বলতে চাইছে? নোমান জিজ্ঞাসু নজরে বন্ধুর দিকে তাকাল। সাবরিনাও তাকিয়েছে রুমার দিকে। রুমা চোখ দিয়ে আশ্বাস দিল। আরিফ দম ফেলে কিছু বলার আগেই দীপালি বেগম বলে ওঠে,
–“তোমার মাইয়াটারে আমার দাদুভাইয়ের জন্যে চাইতেসি।”
নোমান সাহেব এবং সাবরিনা ভীষণ চমকাল এরকম প্রস্তাব পেয়ে। নোমান সাহেব অবাক হয়ে চাইল বন্ধুর পানে। আরিফ সাহেব অধরে সুন্দর হাসি টেনে হ্যাঁ বোধক মাথা নাড়াল। নোমান সাহেব অস্ফুট স্বরে বলল,
–“শতাব্দের জন্যে নম্রকে..?”
–“কোনো আপত্তি আছে? জানি, আমার ছেলেটার ব্যবসা এত বড়ো নয়। তবে তোকে এইটুকু কথা দিতে পারি আমার বাসায় আমার আনিশার মতোই নম্র সম্মান পাবে, একদম মেয়ের মতো। জানিস তো মায়ের কতটা আদরের নম্র।”
নোমান সাহেব কিছু একটা ভাবলেন। ভেবে বললেন,
–“শতাব্দের পেশা নিয়ে আমার কোনো আপত্তি নেই। কোনো কাজ-ই ঠুনকো নয়। শতাব্দও ভালো ছেলে। তবে শতাব্দ কী আদৌ বিয়ের ব্যাপারে মানবে?”
–“মানবে না কেন? ওকে আগে রাজি করিয়েই তো তোকে জানালাম। এখন নম্রকে রাজি করিয়ে নে!”
হঠাৎ নোমান সাহেবের মুখটা শুকিয়ে গেল। বিয়ের কথা শোনার পর থেকে মেয়েটা কেমন নাওয়া-খাওয়া ছেড়ে দিয়েছে। এখন এত ভালো প্রস্তাব আসল। নম্রকে মানাবে কেমন করে? আরিফ সাহেব স্পষ্ট দুঃখের ছাপ দেখতে পেল নোমান সাহেবের মুখজুড়ে। এর মানে কী নম্রকে মানাতে পারবে না? কেন পারবে না? নম্র তো লক্ষী একটা মেয়ে। তার ছেলের মতো জেদী তো একদমই নয় সে।
–“বড়ো’রা এক জোট হয়ে কী আলোচনা করছে রে রত্না?”
রত্না এবার মিটমিট করে হাসল। সেদিন শতাব্দের মুখে সবই শুনে নিয়েছিল সে। রত্না এও জানত দ্রুত-ই নম্রকে এ-বাড়ির বউ করে আনবে। এজন্যে রুমা রত্নাকে দুইদিন নম্রদের বাড়িতে যেতে নিষেধ করে দেয়। রত্না যদি আবার এ-কথা মুখ ফসকে বলে ফেলে? এই ভয়েই এরকম সিদ্ধান্ত। অবশ্যই তাদের প্রস্তাব দিবে। তবে এই প্রস্তাবের কথাটা রত্নার মুখে শুনলে ব্যাপারটা ভালো হতো না। তাই এই পদক্ষেপ। রত্নাও বেশ খুশিতে এই নাকোচ মেনে নেয়। সমস্যা কী, দুদিন নাহয় নাই-বা গেল।
রত্না মিটমিট করে হেসে বলল,
–“তোমার আর ভাইয়ার বিয়ার কথা চলতেছে আপা।”
নিঝুম অত্যন্ত খুশি হয়ে আনন্দের ধ্বনি তুলল। আর নম্র পাথরের মতো আগের জায়গাতেই বসে। এর মানে শতাব্দ তার সাথে মশকরা করেনি? বুকের বা পাশ থেকে হঠাৎ-ই ব্যথাগুলো নেমে গেল। ব্যথার পরিবর্তে ধুকপুকানি অনুভব হলো। কেমন সুখ সুখ লাগছে তার। এমন সময়ই দরজা ঠেলে দীপালি বেগম রুমে এলো। নম্র চটপট বসা থেকে উঠে দাঁড়াল। দীপালি বেগম বিছানায় বসে নম্রকেও বসতে বলল। নম্র বসল। রত্নার মুখে সেই কথা শুনে কেমন লজ্জা অনুভব হচ্ছে তার। দীপালি বেগম নম্রের থুঁতনি ছুঁয়ে বলল,
–“সেদিন যখন আসলি তহন তোরে দেইখাই ক্যামন আপন আপন লাগছিল। মনে হইতেছিল তুই আমার শতাব্দের লেইগা-ই তৈরি। তোরে আমার শতাব্দরে ভাগ দিলে আপত্তি করবি না তো?”
কথাগুলো সুখ হয়ে নম্রের বুকে গিয়ে বিঁধল। হাত-পা কেমন অসাড় হয়ে আসছে নম্রের। কিছু গলা দিয়ে বের হচ্ছে না। দীপালি আবার বলল,
–“কীরে? চুপ কইরা গেলি ক্যান? হ্যাঁ, না কিছু তো ক। হ্যাঁ-টাই বলিস হ্যাঁ, তোরে আমার দাদুভাইও পছন্দ করছে!”
নম্র অত্যন্ত লজ্জায় চুপসে গেল। শতাব্দ তাকে পছন্দ করেছে? শতাব্দ?? স্বপ্ন দেখছে নম্র? নম্রের চোখ নিজের অজান্তেই ভিঁজে গেল। কম্পিত গলায় শুধাল,
–“আমার কোনো আপত্তি নেই দাদী!”
–“আলহামদুলিল্লাহ।”
বলেই দীপালি বেগম নম্রের কপালে চুমু খেল। অতি সুখে তৎক্ষণাৎ নম্রের চোখ বেয়ে দুই ফোঁটা জল গড়িয়ে পড়ল। রুমা দরজার সামনেজ দাঁড়িয়ে ছিলেন। নম্রের জবাব শুনে তৎক্ষণাৎ সবাইকে জানাতে চলে গেল। অনেকদিন পর আবারও বিয়ের সাজে পুরো বাড়ি জ্বলে উঠবে। বাড়ির আনাচে কানাচে খুশিরা বিচরণ করবে।
~[ক্রমশ]