প্রণয় পাড়ে সন্ধি পর্ব-০৩

0
676

#প্রণয়_পাড়ে_সন্ধি
|৩য় পর্ব|
লাবিবা ওয়াহিদ

নতুন দিনে সূর্যকে স্বাগতম জানানোর জন্যে প্রকৃতি যেন উৎসুক হয়ে বসে। অল্প-স্বল্প আলো ফুটেছে ধরণীতে। দূর-দূরান্ত হতে পাখিদের কিচিরমিচির শোনা যাচ্ছে। নামাজ সেরে মসজিদ থেকে বেরিয়ে যে যার মতো বাড়ি ফিরছে মুসল্লীগণ। গ্রামের এই ভোরের পরিবেশ শীতল, সতেজ বায়ুতে আবৃত।

শতাব্দ হাই তুলতে তুলতে হাঁটছে। তার পাশেই চুপসে থাকা সিয়াম হেঁটে চলেছে। কিছু একটা বলার জন্যে তার অধর জোড়া মৃদু মৃদু নড়ছে। কিন্তু গলা দিয়ে কোনোরূপ শব্দ বেরুচ্ছে না তার। বলা বাহুল্য, সে যেই কথাটি বলতে চাচ্ছে সেটা বলতে সাহস পাচ্ছে না।

শতাব্দ ঘাড় বাঁকিয়ে সিয়ামের দিকে চাইলো। লম্বাটে, রোগা ধাচের সিয়ামকে সে কিছু সময়ের মধ্যেই পরখ করে নিল। পরক্ষণে চোখ ফিরিয়ে গাছের ডাল-পাতার ফাঁকে দিয়ে বিশাল আকাশটা দেখে নিল। সুন্দর লাগছে এই দৃশ্য। হঠাৎ সিয়ামকে চমকে দিয়ে বেশ থমথমে গলায় শতাব্দ বলল,

–“কিছু বলতে চাচ্ছ?”

সিয়াম তৎক্ষণাৎ অপ্রস্তুত জবাব দিল, “না তো!”

শতাব্দ আর ঘাটল না সিয়ামকে। সিয়ামদের বাড়ির কাছাকাছি আসতেই সিয়াম হঠাৎ দাঁড়িয়ে গেল। শতাব্দও থেমে সিয়ামের দিকে ভ্রু কুচকে তাকাল। সিয়াম হাসার চেষ্টা করে বলল,
–“আপনি বাড়ি যান ভাইয়া, আমি একটু বাজার থেকে ঘুরে আসছি!”

–“বাজারে কেন?”

সিয়াম ইতঃস্তত হয়ে বলল,
–“আপনি দুইদিন যাবৎ আমাদের বাড়িতে আছেন। ভালো-মন্দ তো খাওয়াতে পারিনি। এখন..”

সিয়াম বাকিটা বলার পূর্বেই শতাব্দ-র থেকে বেশ শক্ত ধমক খেল। যার ফলস্বরূপ, সিয়াম চুপসে গেল। এতক্ষণ ধরে এই ভয়টা-ই পাচ্ছিল সে!

শতাব্দ আবারও ধমকে উঠে বলল,
–“এই স্বভাব তোর আর গেল না সিয়াম! ভালো-মন্দ মানে কী? দুইদিন যা খেলাম তা কী বাসী, রাস্তার পচে পড়া খাবার? তোর যদি আরও ভালো-মন্দ খাওয়ানোর ইচ্ছাই থাকে তাহলে বল, আমি আজ-ই চলে যাচ্ছি! আমার অখাদ্য মুখে ভালো-মন্দ খাওয়ার রুচি নেই!”

শতাব্দ লম্বা লম্বা পা ফেলে চলে যাচ্ছে। সিয়াম ভাই, ভাই করে ডাকতে ডাকতে শতাব্দের পেছনে ছুটল। শতাব্দ যদি সত্যি চলে যায়? সে কী ওইভাবে বলেছে নাকি? তার কী ইচ্ছে করে না নিত্যদিনের চেয়ে বিশেষ কিছু শতাব্দকে খাওয়াতে? এই শতাব্দ ভাই-ও না!

বাড়ি ফিরে সিয়াম দেখে শতাব্দ ইতিমধ্যে ব্যাগ গোছানো শুরু করে দিয়েছে। শতাব্দ’র একটু রাগ’চটা, একরোখা স্বভাব আছে। যা তার চারপাশের মানুষকে বেশ ভোগান্তিতে ফেলে। এবারও ব্যতিক্রম হলো না। সিয়াম হন্তদন্ত হয়ে শতাব্দর থেকে ব্যাগ ছিনিয়ে নিয়ে বলে,
–“তোমার ভালো-মন্দ খেতে হবে না ভাই! তাও এভাবে চলে যাওয়ার নাম নিও না। আমার ঘাট হয়েছে বলাটা!”

শতাব্দ কথা না বাড়িয়ে বিছানায় লম্বা হয়ে শুয়ে মোবাইল বের করল পকেট থেকে। বন্ধ মোবাইল অন করতে করতে বলল,
–“যেদিন আমার ব্যাকারিতে তোর একটা ব্যবস্থা হবে, আমি সেদিনই তোর টাকায় কেনা বিশেষ খাবার মুখে তুলব। তার আগে নয়!”

সিয়াম ফোঁস করে নিঃশ্বাস ফেলল। মায়ের রুম থেকে গুণগুণ শোনা যাচ্ছে। নিশ্চয়ই কুরআন তিলওয়াত করছেন। কিছুদিন যাবৎ সিয়ামের মা অসুস্থ ছিল। গতকাল রাত থেকে কিছুটা সুস্থ। সুস্থ হয়ে তিনি-ই সিয়ামকে বলেছিল যেন সকাল সকাল বাজার থেজে তাজা সবজি এবং বড়ো মাছ আনতে। সিয়ামের মা নিজ হাতে ভালো ভাবে রান্না করবেন। কিন্তু শতাব্দ তো যেতেই দিচ্ছে না বাজারে। উলটো চলে যাওয়ার হুমকি দিচ্ছে৷ এমনিতেই আহত হয়ে সিয়ামের বাড়ি এসেছে সে। এভাবে অভিমানে জর্জরিত হয়ে ফিরিয়ে দিতে ইচ্ছে করছে না। সিয়াম ঠায় দাঁড়িয়ে কিছু একটা ভাবনায় মত্ত হয়ে গেল। পরমুহূর্তে কী যেন ভেবে বলল,

–“চলো, আমরা পুকুর থেকে মাছ ধরে আনি। আমাদের-ই তো নিজস্ব পুকুর আছে। এতে তো কোনো সমস্যা হবে না, তাই না?”

শতাব্দ একপলক সিয়ামের দিকে চেয়ে উঠে বসল। কপালের এক পাশে ফুলে লাল হওয়া স্থানে আঙুল বুলিয়ে বলল,
–“তা করা যেতে পারে!”

সিয়াম স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল। শতাব্দ ততক্ষণে গায়ের শার্ট বদলে টি-শার্ট এবং শর্টস পরে সিয়ামের সাথে বেরিয়ে গেল।

———————-
নম্র অধরের কাছে আঙুল নিয়ে একমনে পায়চারী করছে। চোখে-মুখে চিন্তার রেশ। দু’টো দিন অনেক ভেবে-চিন্তে শতাব্দের বাড়ির মুখে এসে দাঁড়িয়েছে সে। কিন্তু ভেতরে প্রবেশ করার সাহস পাচ্ছে না। সাহসের ব্যাপার নয় অবশ্য, শতাব্দকে কী বলবে সেটাই ভেতরে সাজিয়ে নিচ্ছে সে। কিন্তু অজানা কারণে সেসব সাজানো কথাগুলো কী রকম গুলিয়ে যাচ্ছে। কথা বলায় অপটুও হয়ে পড়ছে। শতাব্দদের বাড়ির চারপাশ ঘিরে থাকা সবুজ দেয়াল দাঁড়িয়ে। দেয়ালের একপাশে পিঠ ঠেকিয়ে দাঁড়িয়ে আছে চঞ্চল। হাতের পাঁচ আঙুল জুড়ে আছে রিং চিপস। যেগুলো মুখে পুরে খেয়ে নিচ্ছে সে। চঞ্চল নম্রের চাচাত ভাই। মূলত ‘মনপুরা’ সিনেমার “সোনাই” চরিত্রের আসল নাম থেকে অনুপ্রাণিত হয়েই চঞ্চলের মা এই নামটি রেখেছিল। তিনি এককালে বড্ড সিনেমা প্রেমিকা ছিলেন। এখনো সময় পেলে সেই পুরানো দিনের সখের স্মৃতিচারণ করতে টিভির সামনে বসে যায়। সিনেমা দেখার পরপর তিনি অনেক নাম-ই চঞ্চলকে দিয়ে ফেলেছেন। কিন্তু আকিকাতে গিয়ে “মোহাম্মদ চঞ্চল ফারুক” নামটাই তার স্থায়ী নামে ভূষিত হয়। চঞ্চল সবেমাত্র দ্বিতীয় শ্রেণী পঁড়ুয়া বাচ্চা ছেলে। বাচ্চা হলেও এই ছেলের বুঝ, কল্পনাশক্তি কিছুটা ভয়াবহ। বড্ড চালাক এবং বাদর স্বভাবের ছেলে। কথার খৈ কিংবা জুড়ি তো মুখ জুড়ে রয়েছেই।

–“ও আপু। পা তো ব্যথা করছে। ভেতরে যাবে না?” মুখে চিপস পুড়েই অস্পষ্ট গলায় নম্রকে প্রশ্ন করল চঞ্চল।

নম্র এতে কোণা চোখে গরম নজর নিক্ষেপ করল চঞ্চলের দিকে। কিন্তু চঞ্চল তোয়াক্কা করলে তো? সে যেন শুধু নম্রের উপর নজরদারি এবং চিপস খাওয়াতেই সীমাবদ্ধ। নম্রের গরম নজরে ভয় পাওয়ার সময় তার হাতে নেই। নোমান সাহেবের হুকুম এসেছে, নম্র কোথায় যাচ্ছে, কী করছে তার সমস্ত খবর চঞ্চলকে রাখতে হবে এবং পই পই করে সব জানাতে হবে নোমান সাহেবকে। তার বদলে নোমান সাহেব চঞ্চলকে উপহার দিবে। চঞ্চলের পছন্দের মধ্যেই। সেটা কী হতে পারে সেটা নম্র’র ভালো করেই জানা আছে। তবুও সে আগ বাড়িয়ে কিছু বলে না। বললে বিশেষ লাভ-ও হবে না। শুধু শুধু কী দরকার কন্ঠের শক্তি ব্যয় করার?

নম্র দাঁতে দাঁত চেপে বলল,
–“বিরক্ত লাগলে বাড়ি চলে যা। আমার পিছে ঘোরার প্রয়োজন নেই!”

চঞ্চল তৎক্ষণাৎ সটান মেরে দাঁড়িয়ে বলল,
–“আমার কোনো সমস্যা নেই। রাত অবধিও দাঁড়িয়ে থাকতে পারো। আমি বরং ওই চা ওয়ালা আঙ্কেলের সাথে গিয়ে বসি! আচ্ছা?”

বলেই চঞ্চল দুলতে দুলতে রাস্তার ওপারে থাকা টঙের ছায়াতলে গিয়ে বসে। তাকে দেখে দোকানে ধুমপান করা কিছু লোক দোকান থেকে বেরিয়ে দূরে সরে যায়। যাতে এই ধুমপানের ধোঁয়া চঞ্চলকে স্পর্শ করতে না পারে। তাদের মধ্যে দুজন মূলত নম্র’র মহল্লার সেই ভাইদের মধ্যে রয়েছে। সে জন্য-ই চঞ্চলকে চিনতে পেরে বাকিদের নিয়ে সরে এসেছে। তারা অনুতপ্ত হয়ে নিজেরাও শতাব্দকে খুঁজছে মাফ চাওয়ার জন্যে। অনিচ্ছাকৃত তারাও ভুল করে ফেলেছে। শতাব্দকে তারা চিনতে পারেনি। যখন নোমান সাহেবের মুখে সব শুনল তখনই তারা অত্যন্ত লজ্জিত হয়ে পড়ে।

নম্র চঞ্চলের দিকে একপলক চেয়ে আবারও পায়চারী শুরু করে দিল। আর টঙে বসে চঞ্চল ঈগল চোখে চেয়ে আছে নম্রের দিকে। নম্র হঠাৎ থেমে যায়। কী ভেবে সে ভেতরে চলে গেল। বুকখানা ধুকপুক করছে তার। আগেও আসা হয়েছিল শতাব্দদের বাড়ি। তবুও কিছুটা জড়তা তাকে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে রয়েছে। গেট দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করতেই দারোয়ানের চোখে পড়ল সে। দারোয়ান নম্রের দিকে গম্ভীর নজর তাক করলেও পরমুহূর্তে সৌজন্যমূলক হাসল। মুখে কিছু উচ্চারণ করল না। নম্র স্বভাবতই সালাম জানিয়ে সিঁড়ির দিকে চলে গেল।

কলিংবেল বাজাতেই মিনিটখানেকের মধ্যে দরজা খুলে দাঁড়াল রত্না। শতাব্দদের বাড়ি কাজ করে সে। রত্না নম্রকে চিনে। মাঝেমধ্যে-ই মুদির দোকানে তাদের দেখা হয়। এছাড়াও নম্রদের বাড়িতে জরুরি ডাক পড়লে কখনো কখনো রত্না অর্ধেক বেলা কাজ করে দিয়ে আসে। নম্রকে দেখে রত্না চোখ-মুখ জ্বলজ্বল করে উঠল। বয়সে রত্না নম্রের থেকেও ছোটো। রত্না অধর জড়িয়ে হেসে বলল,

–“আরেঃ, আপামণি! আপনি?”

নম্র জোরপূর্বক হেসে বলল,
–“ভেতরে আসব না। একটু প্রয়োজন ছিল!”

–“কী দরকারে?”

নম্র ইতঃস্তত হয়ে মৃদু গলায় বলল,
–“শতাব্দ ভাইয়া আছে?”

–“না। আজ তিনদিন যাবৎ বাড়ি আসে নাই। কই নাকি গেছে!” রত্নার সরল জবাব।

নম্র’র মনঃক্ষুণ্ন হলো। মুখ জুড়ে আঁধার নামিয়ে বলল,
–“ওহ। ফিরবে কবে জানো?”
–“তা জানি না। বড়ো সাহেব তো খুব রেগে আছে শতাব্দ ভাইয়ের উপর। মনে হচ্ছে যেন শতাব্দ বছরের রাগ পুষে রেখেছে মাথায়। শতাব্দ বছরের মতোই শতাব্দ ভা…”

নম্র তৎক্ষণাৎ রত্নাকে থামিয়ে দিয়ে বলল,
–“কারো পারিবারিক ব্যাপার বাহিরের মানুষদের বলা অন্যায় রত্না। কতবার বলব?”

রত্না জিভ কেটে মুখ ভার করে বলল, “মাফ করিও আপা। আর এই ভুল হবে না!”

সেদিনের মতো নম্র বেরিয়ে এলো। বেরিয়ে এসে টঙের দোকানের দিকে চাইতেই দেখল চঞ্চল চিপস, বিস্কুট এবং কোক নিয়ে যা করার করে ফেলেছে। নম্র দোকানের কাছাকাছি যেতেই চঞ্চল দাঁত বের করে হেসে বলল,
–“পঁচাশি টাকা হয়েছে। দিয়ে দাও তো আপু!”
নম্র এই অবস্থা দেখে চোখের তেজ দিয়েই চঞ্চলকে ভস্ম করে দিতে চাইল যেন। ছেলেটা এত ফাজিল কেন?

পরপর আরও দুইদিন এসে ঘুরে গেছে নম্র। যতই দিন গড়াচ্ছে, নম্র ততই যেন ধৈর্যহারা হয়ে যাচ্ছে। তার ছাত্র-ছাত্রীর পরীক্ষার তারিখ ঘনিয়ে আসছে, আর এদিকে শতাব্দকে পাচ্ছেই না। কোনো মানে হয়?

শূন্য আশা নিয়ে আজ আবারও নম্র শতাব্দদের ফ্ল্যাটের মুখে এসে দাঁড়িয়েছে। তবে আজ কিছুতেই কলিংবেল চাপার সাহস হচ্ছে না। প্রতিবার “না” শুনতে শুনতে কিছুটা ক্লান্তও হয়েছে বটে। শতাব্দ এখন অমাবস্যা রাতের চাঁদের মতো হয়ে গিয়েছে। দেখাই মিলছে না। এতদিন যাবৎ কোথায় পড়ে আছে কে জানে?

নম্র দীর্ঘশ্বাস ফেলল৷ আজ কলিংবেল না দিয়ে-ই পিছে ঘুরে সিঁড়ির দিকে যেতেই মুখোমুখি হলো শতাব্দের মায়ের। তিনি কিছুটা হন্যে হয়েই সিঁড়ি বেয়ে উঠছিলেন। তাই দুজনেই এই মুহূর্তে মুখোমুখি হয়ে কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে পড়েছে। রুমা অর্থাৎ শতাব্দের মা কোনো একটা কারণে দুশ্চিন্তায় জর্জরিত। যেন আগাম কোনো তান্ডব তিনি উপলব্ধি করছেন। ছেলেকে নিয়েই মূলত তার কপালে চিন্তার ভাজ পড়েছে। এজন্যে একপ্রকার হন্যে হয়েই সিঁড়ি বেয়ে উঠছিলেন তিনি। তবুও রুমা নিজের দুশ্চিন্তা চেপে মুচকি হেসে বলল,

–“আরেঃ, নম্র না?”

নম্র এবার বিনয়ী হাসি দিয়ে সালাম জানাল। রুমা সালামের উত্তর দিয়ে কিছুটা কুশল বিনিময় করে বলল,
–“আমার দ্বারে এসে আবার ফিরে যাচ্ছ, এটা কোনো কথা? এসো আমার সাথে। আমি সবেই ফিরলাম মল থেকে!”
–“ব্যস্ত হবেন না আন্টি। আমি অন্যদিন আসব নাহয়!”
–“কোনো কথা শুনছি না। আমার সাথে এসো। বাকি প্রয়োজনের ব্যাপার পরে বোঝা যাবে!”

নম্রকে একপ্রকার জোর করেই ফ্ল্যাটের সামনে এসে দাঁড়াল রুমা। পরপর কলিংবেল বাজাল। দরজা খুলতে বেশি সময় নিল না। নম্র প্রতিবারের মতোই রত্নাকে আশা করছে, সাথে ভয়ও পাচ্ছে। না জানি রত্না তাকে দেখে রুমা আন্টিকে কী না কী বলে ফেলে। তবে এবার নম্র’র প্রত্যাশার চাইতেও ভিন্ন ব্যাপার ঘটল। দরজা খুলল শতাব্দ।

শতাব্দকে দেখে নম্র থমকে গেছে যেন। অনেক সময় হয় না, যা আপনি প্রত্যাশা করেননি তা হঠাৎ হয়ে গেল? সেই ব্যাপারটাই নম্রকে কিছুটা নাড়িয়ে দিয়েছে। পিটপিট করে সে শতাব্দের দিকে চেয়ে রইল। শতাব্দ সবেই গোসল করে বেরিয়েছে বোধহয়। গলায় এখনো ঝুলছে গ্রে রঙের তোয়াল। কপালে লেপ্টে রয়েছে চুল। শতাব্দ এক পলক নম্রের দিকে চেয়ে নজর ফিরিয়ে নিলেও নম্র যেন খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছে শতাব্দকে। দুর্ঘটনার আগে শেষ কবে দেখেছিল তাকে সেটা নম্রের জানা নেই। তবে এটা হলফ করে বলতে পারবে, দেখেনি বছরখানেক। সেই রোগা গড়লের শতাব্দের স্বাস্থ্য কিছুটা বেড়েছে। কিংবা বলা চলে শতাব্দ নামক যুবক এখন সুঠাম-দেহী সুপুরুষে পরিণত হয়েছে।

রুমা শতাব্দকে দেখলেও এই মুহূর্তে কিছুই বলতে পারল না নম্রের জন্যে। আন্তরিকতা সহিত নম্রকে ভেতরে নিয়ে যেতে চাইলে নম্র পুণরায় ক্ষীণ কন্ঠে জানাল, “আরেকদিন আসবে!”

নম্রকে নিয়ে মায়ের এত পীড়াপীড়ি কিছুটা বিরক্ত-ই লাগল শতাব্দের। সে হঠাৎ নম্রের উদ্দেশ্যে থমথমে গলায় বলে ওঠে,
–“এভাবে দরজার মুখে এসে ফিরে যাওয়াটা শোভা পায় না। বড়োদের কথা শুনে ভেতরে আসলে বড়ো কোনো ক্ষতি হয়ে যাবে না তোমার!”

~[ক্রমশ]

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে