প্রণয় ডোরে বেঁধেছি পর্ব-০৫

0
600

#প্রণয়_ডোরে_বেঁধেছি
#পর্ব_০৫
#নাজিয়া_শিফা( লেখনীতে )
_______________________________
দিন দুই পার হয়ে যায় দেখতে দেখতে ই। ছেলে মেয়ে উভয়ের বিয়েতে সম্মতি থাকায় বিয়েতে বিলম্ব করলেন না। একেবারে ছোট্ট পরিসরে ই আজকে সন্ধ্যায় সূচনাদের বাসায় বিয়ে টা পড়ানো হয়। সূচনাদের তরফ থেকে আত্মীয় স্বজন কেউ ই ছিলেন না। প্রণয়ের বাবা-মা, বোন, বড় মামা ও চাচা উপস্থিত ছিলেন শুধু। সূচনার বিয়ে ভেঙে গিয়েছে সেটা সবাই জানলেও কিন্তু ফের যে বিয়ে হচ্ছে সে সম্বন্ধে লোকে জানেনা। সেজন্য গ্রামের চেয়ারম্যান সাহেবকে ও আনা হয়েছিল। যেন মেয়ের বিয়ে ভেঙে গিয়েছে এই নিয়ে কোনো ক টু কথা দিশা বেগমকে না শুনতে হয়। বিয়ে পড়ানো শেষ হলে ওনারা চলে যান। বাকিরা বসার রুমে কথা বলছেন। সূচনাকে নিজের পাশে বসিয়েছেন নুরাইয়া৷ মেয়েটা নত মস্তকে বসে আছে, পড়নে তার সাদামাটা একটা শাড়ি, মুখেও কোনো সাজ নেই। বিয়ের কোনো আমেজ ই লক্ষ্য করা যায় না। প্রণয়ের ক্ষেত্রে ও তাই, বাবা এহতেশাম আহমদের পাশে বসে সে। মুখটা গম্ভীর, সম্ভবত বিরক্ত ও সে। কিন্তু প্রকাশ করতে পারছেনা। দুজনকে নীরব দেখে নুরাইয়া সূচনাকে বললেন,

” এক কাজ করো তো মা, রুমে যাও৷ একটু বিশ্রাম নাও, ব্যাগ ট্যাগ গুছিয়ে নাও। আর প্রণয়কে ও সাথে নিয়ে যাও। ”

সূচনা অবাক বা বিস্ময় তেমন প্রকাশ করলো না। স্বাভাবিক ভঙ্গিতেই উঠে অগ্রসর হলো নিজের রুমের দিকে। প্রণয়কে ও আসতে বললো।

রুমে এসে সূচনা কী করবে বুঝতে পারলো না। শেষে সিদ্ধান্ত নিলো ব্যাগটা ই গোছানো যাক! সে আলমারি থেকে একটা ব্যাগ বের করে। একে একে কাপড় ভাজঁ করে ব্যাগে ভরতে থাকে। প্রণয় খানিক বিরক্ত হয়, একজন মানুষকে বসিয়ে রেখে নিজের মতোই কাজ করে যাচ্ছে। পাত্তাই দিচ্ছে না! আশ্চর্য মেয়ে! সূচনা নিজেও উসখুস করছিল কিন্তু বলার মতো কিছু খুঁজে ও পাচ্ছে না। তার ওপর প্রণয়ের মতিগতি ও সূচনা বুঝতে পারছেনা। তার দ্বন্দ দূর করলে প্রণয়ই, বিরক্তির সুরেই বললো,

” আপনি মহা ব্যস্ত মনে হচ্ছে! রুমে আরও একজন ও উপস্থিত আছে। ”

সূচনার হাত থেমে যায় কয়েক সেকেন্ডর জন্য, একবার প্রণয়ের দিকে তাকিয়েও চোখ সরিয়ে নেয়। নিজের কাজ করতে করতে বলে,

” আমার চোখ আছে, আমি দেখতে পারছি তাকে। ”

সূচনার হেঁয়ালিপূর্ণ কথা শুনে মেজাজ খানিক চ টে গেল ছেলেটার। সে বসা থেকে উঠে যেয়ে সূচনার সামনে যেয়ে দাঁড়ায়। তার ডান হাত চে পে ধরে দাঁতে দাঁত চে পে বলে,

” আপনি তো ভারি বে য়া দ ব মেয়ে! এমনিতে তো প্রশংসা শুনলাম সবার থেকে। আসলে এমন! ”

প্রণয়ের এহেন আচরণে মেয়েটা রে গে যায় না বরং সহজ গলায় বলে,

” শুনুন প্র.. সরি বা জে ছেলে, শুনুন, আমি মোটেও ভদ্র নই। আমি ভেতরে ভেতরে আসলে প্রচন্ড বে য়া দ ব। ”

” তা তো দেখতেই পারছি। ”

” আপনার চোখের জ্যোতি স্বাভাবিক মানুষের তুলনায় অনেক বেশি সেজন্য দেখতে পারছেন। ”

” খোঁ চা? ”

” হ্যাঁ অবশ্যই। ”

” বেয়াদব মেয়ে। ”

প্রণয় রা গে ফুঁসতে ফুঁসতে বলার মতো কিছু না পেয়ে শেষে এটাই বলে৷ সূচনার হাত ছেড়ে দিয়ে ফের নিজের জায়গায় যেয়ে বসে পড়ে। প্রণয় নিজের জায়গায় বসেই আড় চোখে সূচনাকে পরখ করে। লক্ষ্য করে সে ব্যাগের মধ্যে বেশিরভাগ ই শাড়ি নিচ্ছে। মেয়েটা কী শাড়ি ই পরে বেশিরভাগ? অবশ্য পরলে খারাপ লাগে না, সুন্দর লাগে। এহেন ভাবনা মনে আসতেই অদৃশ্য হাতে নিজের গাল জোড়া চাপড়ায় প্রণয়। বিড়বিড়িয়ে বলে,

” দেখতে যতই সুন্দর হোক, স্বভাবে তো আসলে দস্যিরাণী। ”

কিন্তু তার জানার আগ্রহ টা সে দমিয়ে রাখতে পারেনা। জিজ্ঞেস করেই ফেলে,

” আপনি কী বেশিরভাগ সময় শাড়ি ই পরেন? ”

সূচনা একটু অবাক হয়, পরক্ষণেই সহজ হয়ে উত্তর দেয়,

” হ্যাঁ, শাড়ি পরতে বেশি পছন্দ করি। ”

প্রণয় মনে মনে খুশিই হয়, অনেক মেয়েরাই শাড়ি পরতে অপছন্দ করে, ঝামেলা মনে করে। অথচ এই মেয়ে নাকি শাড়ি পরতে বেশি পছন্দ করে!



সেদিন রাতে আর সূচনাকে প্রণয়দের বাসায় নেয়া হয় না। নুরাইয়া নিতে দেন না, যতই হোক উনি গ্রামের মানুষ। ওনার মতে নতুন বউ, সবে বিয়ে হয়েছে ঘন্টা কয়েক। এর মধ্যে রাত করে এত পথ যাওয়া ঠিক হবে না। তাই সূচনাকে এই বাড়িতেই রেখে যান। তবে প্রণয়কে নিয়ে যান সাথে। ছেলে এসে নিয়ে যাবে তার বউকে। তাই পরের সকালে প্রণয়কে পাঠানো হয় সূচনাকে নিয়ে যেতে। সূচনা আগে থেকে ই তৈরি হয়ে বসে ছিল। প্রণয় কে দেখে দিশা বেগম ব্যস্ত হয়ে পড়েন। আগে পেছনে যাই হয়ে থাকুক, প্রণয় এখন একমাত্র মেয়ে জামাই ওনার৷ যত্ন-আত্তি তে কোনো কমতি রাখা যায় না। তার ওপর ওনার ছেলে ও নেই। এই সুবাদে যদি ছেলের অভাব খানিক পূরণ হয়! প্রণয় ও বেশ সাদরে ই সব গ্রহণ করে। মেয়ে যেমন ই হোক শাশুড়ী তার যথেষ্ট ভালো বোঝা যায়।

বিদায় নেয়ার সময় ফরিদা ভীষণ কান্নাকাটি করলো৷ মেয়েটা ছাড়বেই না তার আপাকে। দিশা বেগম কোনোমতে নিজেকে সামলে নিলেন। বিদায় দিলেন দুজনকে৷ প্রাণভরে দোয়া ও করলেন। তার মেয়েটা যেন একটু সুখী হয়। তার মেয়ে যেন এই ছেলে আর তার পরিবারকে নিজের ভেবে আগলে রাখতে পারে।


সূচনাকে নিয়ে বের হতে হতে দেরি হয়ে যায়। বাড়ি থেকে বের হয়ে বড় রাস্তায় এসে রিকশা নেয় প্রণয়। পাশাপাশি বসতে যেয়ে প্রথমে একটু অস্বস্তি কাজ করে দু’জনেরই। কিন্তু দুজনেই অস্বস্তি একপাশে রেখে উঠে বসে। রিকশা চলতে শুরু করলে প্রণয় সতর্ক করে বলে,

” শাড়ি সামলে বসুন। ”

আগে থেকে ঠিকঠাক করে রাখলেও সূচনা আরেকবার ভালো করে পরখ করে। না সব ঠিক আছে। তার পড়নের শাড়িটা নুরাইয়াা অর্থায়নে তার শাশুড়ী দিয়েছে। লাল আর সাদার সংমিশ্রণের শাড়িটা তার পছন্দ হয়েছে। অন্য দিনের থেকে আজকে একটু গাঢ় করে কাজল দিয়েছে। চুলগুলো বেণী করে রেখো দিয়েছে এক পাশে। কাল ইরা যাওয়ার সময় বলে গেছে,

” ভাবি কাল যখন ভাইয়া নিতে আসবে তখন একটু সেজেগুজেঁ এসো। সাজলে হয়তো আরও সুন্দর লাগবে। ”

ইরার কথা প্রথমে অবশ্য ভালো লাগেনি সূচনার। তার প্রথমে মনে হয়েছিল,

” বিয়ে হতে না হতেই পরিবর্তন হতে বলছে ! ”

পরমুহূর্তে নিজেকে ই বিরক্ত লাগলো। মেয়েটা এমন কী আর বলেছে! তার একমাত্র ভাইয়ের বউ, বিয়েটা যেভাবে হলো তাতে তার কোনো শখ বা আবদার ই তো পূরণ করতে পারেনি। একটু সাজতে বলেছে, এতে আর তেমন কী!
মাথায় ঈষৎ ব্যথা অনুভব হওয়ায় সূচনার ভাবনার সুতোয় টা ন পড়ে। ঝাঁকুনি খেয়ে রিকশার ওপরের অংশের সাথে মাথায় আ ঘা ত লেগেছে। ব্যথায় আর বিরক্তি তে মুখ দিয়ে ‘ চ ‘ সূচক শব্দ বেরিয়ে আসে। তার এহেন অভিব্যক্তিতে প্রণয় আরও বিরক্তি নিয়ে বলে,

” কী! রিকশায় ও বসতে পারেন না! ভাঙা রাস্তায় ভালো করে ধরে বসতে হয়, এমন ফ্রী হয়ে বসলে তো এমন হবেই। দেখি! ”

সূচনার মেজাজ এবার তুঙ্গে, মাথা ডলতে ডলতে অন্য দিকে মুখ ঘুরিয়ে বললো,

” দেখা লাগবেনা, আমি তে কিছু ই পারিনা। সব পারুয়া সব জান্তা তো আপনিই। ”

প্রণয় অবাক ভঙ্গি তে মুখে হাত রেখে জিজ্ঞেস করে,

” সব পারুয়া আবার কী? ”

” যে সব জানে সে সবজান্তা, সে হিসেবে যে সব পারে সে সব পারুয়া ই তো! ”

প্রণয় কয়েক সেকেন্ড হা করে তাকিয়ে থাকে, অতঃপর শব্দ করে হাসতে থাকে। তার হাসি তে যেন মেয়েটা চরম পর্যায়ে বিরক্ত হয়। মুখ ঘুরিয়ে অন্য পাশে তাকিয়ে থাকে। ঐদিকে প্রণয় হাসতে হাসতে অপলক তাকিয়ে থাকে সূচনার দিকে। হুট করে একটা কথা তার কানে বাজতে থাকে,

” এই মেয়েটা আস্ত বে য়া দ ব, দস্যি রাণী আর এই মেয়েটাই তার অর্ধাঙ্গিনী! ”

#চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে