#প্রণয়_ডোরে_বেঁধেছি
#পর্ব_০২
#নাজিয়া_শিফা( লেখনীতে)
_______________________________
বিষন্ন মনে, আনমনা হয়ে জানালার ধারে বসে ছিল মেয়েটা। এর মধ্যেই কেউ এসে খবর দিল, ঢাকা থেকে লোক এসেছে৷ বিয়ে ভেঙে দেয়া সেই পরিবার হতেই তিনজন লোক এসেছে। যার সাথে বিয়ে ঠিক হয়েছিল তারই ফুপাতো ভাইয়ের জন্য ফের সম্বন্ধ নিয়ে এসেছে। আঁখি জোড়া শুঁকিয়ে যাওয়ার আগেই ফের সিক্ত হয় সূচনার। রা গে, ক্ষোভে ফে টে পড়ে মেয়েটা। নিজেকে ঠিকঠাক করে সে হন্তদন্ত হয়ে উপস্থিত হয় বসার রুমে। দুজন মহিলা আর একজন মধ্যবয়সী পুরুষ। একজনকে সূচনা চেনে, ছেলের মা সে। সূচনা সালাম দেয়, সরাসরি জিজ্ঞেস করে,
” আপনারা এখানে কেন এসেছেন? ”
সোজাসাপটা প্রশ্নে অপমানিত হওয়ার কথা থাকলেও একজন মহিলা খুবই নম্র গলায় বললেন,
” দেখো মা, আমাদের পুরো পরিবারের ই তোমাকে পছন্দ হয়েছিল। সেজন্য ই তোমাকে নিজের একমাত্র ছেলের বউ করে নিয়ে যেতে চাইছিলাম। কিন্তু ছেলেটা শেষ মুহূর্তে যেয়ে বললো, তার নাকি কার সাথে প্রেমের সম্পর্ক। তাই..সে যাই হোক, আমার ননদের ও তোমাকে খুব পছন্দ হয়েছে৷ সেজন্য চাইছিল যে তার ছেলের জন্য তোমাকে নেয়া গেলে…”
” আপনাদের মনে হয়েছে আর মুখ উঠিয়ে চলে এসেছেন! তাই না! একবার ও মাথায় কাজ করলো না যে, আপনাদের জন্য একটা মেয়ের মান সম্মানের কী হলো! ”
” আমাদের ভুল হয়েছে, ভুল শোধরানোর জন্য ই এই কথা বলছি। ”
” আপনাদের সমাধান চাইনি আন্টি, যা করেছেন তাই অনেক। এখন আপনারা আসুন। ”
মহিলা দুজন আরও কিছু কথা বললো, দিশা বেগম কোনোভাবে ই পারলেন না তাদের কড়া কথা শোনাতে। মিনমিনে গলায় কয়েকটা কথা বলছেন কিন্তু তার থেকে তাদের গলার স্বর স্পষ্ট। সূচনা যে গতিতে এসেছিল সে গতিতেই পুনরায় নিজের কক্ষে গেল। বিছানার ওপর পড়ে থাকা শপিং ব্যাগগুলো হাতে নিল, আলমারি তে থাকা পার্স হতে টাকা ও নিল। ফের বসার রুমে গেল, শপিং ব্যাগ আর টাকা গুলো টেবিলের ওপর রেখে বললো,
” এই ব্যাগগুলো তে কিছু জিনিস আছে, আপনাদের দেয়া টাকা দিয়ে কেনা। আর এই টাকা গুলো ও আপনাদের। নিয়ে যান এগুলো, আর দ্বিতীয় বার এই বাড়ি মুখো হবেন না। আপনারা বয়সে আমার অনেক বড়। আমি চাই না আপনাদের সাথে আর খারাপ আচরণ করি। ”
আর কোনো বাক্য বিনিময় হলো না, নিজেদের মধ্যে মুখ চাওয়াচাওয়ি করে ওনারা প্রস্থান করলেন। সূচনা ও আর দাঁড়ালো না, মায়ের সঙ্গে ও কথা বললো না। মেয়ের এহেন আচরণে দিশা বেগম ও টু শব্দ টি করলেন না।
।
।
দুপুরের প্রহর, আকাশে কালো মেঘেদের ঘনঘটা, দুপুর বেলাকে ও সন্ধ্যে মনে হচ্ছে যেন। কর্দমাক্ত উঠান, গত রাতে বৃষ্টি হয়েছিল যে! টিনের চালে বৃষ্টির টুংটাং শব্দ হচ্ছে এখন। সম্ভবত ঝিরিঝিরি বৃষ্টি হচ্ছে। বিষন্ন মনে জানালার ধারে বসে থাকা সূচনার বিষন্নতার পরিমাণ দ্বিগুণ হলো এমন পরিবেশে। এতক্ষণ কান্না করলেও এখন আর কাঁদছে না। চোখের দৃষ্টি ও স্বাভাবিক, সে তাকিয়ে আছে গেটের দিকে। তার রুমের জানালা হতে গেটটা বরাবর ই স্পষ্ট দেখা যায়। হঠাৎ ই গেটের বাইরে একটা অটোরিকশা এসে থামলো। সূচনা আগেই দূর থেকে সেটা লক্ষ্য করলেও ভেবেছিল অন্য কোথাও চলে যাবে। কিন্তু তাদের বাড়ির সামনেই এসে থেমেছে। বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো সে, জানালা বন্ধ করে দিল স্ব শব্দে। নিজের কাজে নিজেই অবাক হয় সে। কে এসেছে তার তো জানা নেই, এভাবে লুকালো কেন!
।
।
দিশা বেগম সবে বাইরে থেকে শুকনো কাপড় চোপড় ঘরে এনে রাখছিলেন। বৃষ্টি তে খানিক ভিজেঁ ও গেছে। তন্মধ্যে দরজায় চোখ যেতেই বিস্মিত হন তিনি। এহতেশাম আহমেদ সালাম দিলেন ওনার নজরে পড়তেই। দিশা বেগম অবাক ভাব নিয়েই সালামের জবাব দিলেন। নুরাইয়া কাছে এসে কুশলাদি করলেন। ওনাদের বসতে দেয়া হলো সোফায়। দিশা বেগম এখনো অবাক হয়ে আছেন। এহতেশাম সাহেব ওনার পুরো পরিবার সমেত তাদের বাসায় উপস্থিত হয়েছেন, ওনার ছেলে সমেত। তাতে অবাক হওয়ার ই কথা। এহতেশাম সাহেব সূচনার বিয়ে ঠিক করা হতে, ভেঙে যাওয়া পর্যন্ত সবকিছু নিয়েই কথা বললেন। বিয়ে ঠিক করার আগে এহতেশাম সাহেব ও খোঁজ খবর নিয়েছিলেন। ছেলের ব্যাপারে খারাপ কিছু পাননি, বলেছিলেন মেয়ের মত থাকলে দিতে পারেন ভাবি।
সূচনার বাবা আরহাম সাহেবের ভালো বন্ধু এহতেশাম সাহেব। বন্ধুর মৃত্যুর পর আড়ালে থেকে হলে ও বন্ধুর পরিবারকে সাহায্য করেছেন টুকটাক। নুরাইয়া ও যোগাযোগ রেখেছেন। কিন্তু অদ্ভুত ভাবে ছেলেমেয়ে গুলোর মধ্যে যোগাযোগ ছিল না। সেই প্রসঙ্গ বাদ যাক, এহতেশাম সাহেব সব কথার শেষে অনুতপ্ত হয়ে বললেন,
” ভাবি, আমি আর আরহাম তো বন্ধু ছিলাম। আমাদের আলাদা আলাদা করে দুজনেরই ছোট ব্যবসা ছিল। প্রণয় যখন হবে তখন অর্থনৈতিক দিক থেকে আমার অবস্থা খুবই খারাপ ছিল। এমনকি চিকিৎসা, নুরাইয়ার ডেলিভারি, ঔষধ এসবের জন্য যেই পরিমাণ টাকার দরকার ছিল আমার কাছে তাও ছিল না। তখন আরহাম ই সাহায্য করেছিল আমায়, শুধু তখনই না, এসবের পরেও নতুন করে ব্যবসা শুরু করতে ও টাকা দিয়েছিল আমায়। এখন যা আছে সবই ওর জন্য। আমার ওপর ওর অনেক ঋণ, যা শোধ করার মতো না। শোধ করার সুযোগ ও তেমন পাইনি। কিন্তু আমার মনে হয় একটা সুযোগ আমি এবার পেয়েছি। আপনার মেয়েকে আমি নিজের ছেলের বউ আর আমার মেয়ে হিসেবে নিতে চাই। ”
শেষোক্তি তে দিশা বেগম বজ্রাহত হলেন। অন্য দিকে বাবা আর তার বন্ধুর মধ্যে হওয়া ঘটনা গুলো শুনে হতবিহ্বল হয়ে গেছে ইরা ও প্রণয়। দুই ভাই বোন মুখ চাওয়া চাওয়ি করছে শুধু। তারা তো এসব কিছু সম্পর্কে কোনো কালেই অবগত ছিল না। শুধু আরহাম নামটা শুনেছে, বাবার বন্ধুর নাম। কিন্তু এতকিছু তো জানা ছিল না!
” ভাইজান, সূচনা এমনিতেই ভেঙে পড়েছে। এর মধ্যে..
দিশা বেগমের কথায় ঘোর কাটলো তাদের, এদিকে সূচনা নামটা শুনেই প্রণয় খানিক ভড়কালো। নামটা চেনা চেনা ঠেকঁছে তার কাছে। কোথায় শুনেছে ভাবতে ভাবতে মনে পড়ে, সেই হলদেটে ফর্সা বর্ণের, হিজাব পড়া, নাকে নোজ পিন ওয়ালা মেয়েটা! যাকে দেখতে প্রেমে পড়ার মতো সুন্দর মনে হয়েছিল! যার সাথে ট্রেনে পরিচয়, আবার ট্রেন থেকে নেমেই লাপাত্তা হয়ে গেল! আচ্ছা এই মেয়ে কী সেই মেয়ে! অজান্তেই মনে উক্ত খেয়াল এলো। প্রণয় জানেনা তার এমন ভাবার কারণ। কিন্তু তবুও তার মনে হলো।তন্মধ্যেই দিশা বেগম আবার বললেন,
” ভাইজান, ঐ ছেলের সাথে বিয়ে ভাঙার পর, তার ফুপাতো ভাইয়ের জন্য সম্বন্ধ নিয়ে এসেছিল তারা। এটাতে মেয়েটা আরও রে গে গিয়েছে। আমার সাথে ও কথা বলছেনা। এর মধ্যে আমি বিয়ের কথা আর তুলতে পারিনা। ”
এহতেশাম সাহেব হাল ছাড়লেন না, বললেন,
” আরেকবার বলে দেখুন ভাবি, নুরাইয়া ও বলবে, দুজন মিলে বলুন। আর বিয়ে তো প্রণয় করবে, দরকার হলে প্রণয় কথা বলুক। যদি খারাপ না লাগে তাহলে তো সমস্যা নেই। আমার ছেলে তো আমার ওর ওপর বিশ্বাস আছে। আপনার তো আমার আর নুরাইয়ার ওপর বিশ্বাস আছে না! ”
” বিশ্বাস আপনাদের ওপর আছে ভাইজান। ওর বাবা মা রা গেল প্রায় আট বছর। এই আট বছরে পরিবারের মানুষ ও তো তেমন খোঁজ নেয়নি যতটা আপনারা দুইজন নিয়েছেন। আপনারা এক গ্রামে থাকেন, আমরা এক গ্রামে থাকি। কত লোকে জানতো না, কিন্তু খবর ও নেয়না। আপনারা ও চাইলে ভুলে যেতে পারতেন। ভুলেননি। কিন্তু আমার আর জোর করার বা কিছু বলার মুখ নেই ভাইজান। চাইলে ভাবি কথা বলতে পারেন, প্রণয় কথা বলে দেখতে পারে। হ্যাঁ না যেটাই হোক তার সিদ্ধান্ত তেই সব হবে। ”
একটু যেন ভরসা পেলেন এহতেশাম সাহেব ও নুরাইয়া বেগম। নুরাইয়া নিজে গেলেন না, পাশে মুখ ভার করে বসে থাকা ছেলের কানে ফিসফিস করে বললেন,
” হা দা র মতো এখনো বসে আছিস কেন! যা। ”
প্রণয় খানিক অপমানিত বোধ করলো, তার ভাষ্যমতে বিয়ের আগেই এই মেয়ের জন্য মায়ের থেকে ইজ্জতের রফাদফা হয়ে যাচ্ছে। দুর্ভাগ্যবশত বিয়ে হয়ে গেলে তার পর কী হবে? ভাবতে ভাবতে প্রণয় উঠে দাঁড়ায়। ঝিরিঝিরি বৃষ্টি ইতিমধ্যে তীব্র বর্ষণে রূপ নিয়েছে। ব জ্র পা ত ও হচ্ছে, দিশা বেগম বাড়ির ছোট মেয়েটিকে ডাকলেন, তার নাম ফরিদা। বয়স সতেরো, চাপা গায়ের রঙ, রোগা-সোগা মেয়ে। এই বাড়িতেই থাকে, বর্তমানে পুরো দুনিয়ায় তার আপন বলতে তার সূচনা আপা আর দিশা আম্মা ই আছে। ফরিদা আসলো, তাকে সূচনার কথা জিজ্ঞেস করা হলে বললো,
” আপা তো রুমে আছে। ”
রুমে আছে শুনে দিশা বেগম প্রণয়কে যাওয়ার জন্য অনুমতি দিলেন। ফরিদা তাকে নিয়ে যাবে, ফরিদার পেছন পেছন য়ায় প্রণয়। ভেতরের দিকে রুমের সামনে দিয়ে ফরিদা চলে যায়। দরজা খোলা, প্রণয় লম্বা শ্বাস টা নে। সব চিন্তা, উৎকণ্ঠা আর উত্তেজনা এক পাশে রেখে সে রুমের ভেতরে পা বাড়ায়। কিন্তু পুরো রুমে চোখ বুলিয়ে কাউকে নজরে আসেনা। চলে আসবে কি না ভাবে তখনই তার চোখ যায় জানালা ভেদ করে বাইরের উঠানের দিকে। ভারি, বর্ষণে, কর্দমাক্ত উঠানে ছাই রঙা শাড়ি পড়নে একটা মেয়ে দাঁড়িয়ে। পড়নের শাড়িটা তো ভিজেঁ একাকার। মেয়েটা স্থির এক জায়গা তেই, কোনো নড়চড় নেই। হঠাৎ ব জ্র পা তের শব্দে মনোযোগ নষ্ট হয় প্রণয়ের। সচকিত হয়, ব জ্র পা ত হচ্ছে, এত বৃষ্টি হচ্ছে তার মধ্যে এই মেয়ে এমন স্বাভাবিক ভাবে কোনো নড়চড় না করে দাড়িঁয়ে আছে কীভাবে! প্রণয় গলা উঁচিয়ে একবার ডাকতে নিয়েও থেমে যায়। সে এখান থেকে ডাক দিলে ঘরে উপস্থিত মানুষগুলো ও তো শুনবে। সে ডাকে না, রুম থেকে বের হয়ে আসে, ফরিদার খোজেঁ। সৌভাগ্য বশত সে ফরিদা কে পায় পাশের ছোট রুমটাতেই। দেখে মনে হলো এই ছোট্ট রুমটাতেই ফরিদা থাকে। প্রণয় রুমে প্রবেশ করে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলে,
” শোনো মেয়ে, তোমার আপা, সে তো রুমে নেই। বাইরে উঠানে বৃষ্টি তে ভিজঁছে। তাড়াতাড়ি নিয়ে আসো যেয়ে। ”
ফরিদা মেয়েটা উক্ত বাক্য শুনতেই হাতের কাজ ফেলে এক প্রকার দৌড়ে তার রুম হতে বেরিয়ে যায়। সূচনার রুমে যেয়ে জানালা দিয়ে সূচনাকে দেখে। অতঃপর ঘর থেকে বের হতে নেয় কিন্তু থেমে যায়। তার থেমে যাওয়াতে প্রণয় অধৈর্য হয়ে বলে,
” থেমে গেলে কেন! যাও! ”
মেয়েটা ইতস্তত, ভীত স্বরে বলে,
” আ..আসলে ভাইজান বাইরে তো ঠা ডা পড়তাছে, আমার ম্যালা ভ য় লাগে। আমি যামুনা। ”
প্রথমত মেয়েটার এলোমেলো কথা, আর দ্বিতীয়ত এই সময়ে তার ভ য় কে প্রাধান্য দেয়ায় প্রণয় আরও বিরক্ত হয়। রা গা ন্বি ত কণ্ঠে বলে,
” তোমার আপার এই অবস্থা আর তুমি ভ য় নিয়ে পড়ে আছো? ”
” আপারে আমি ম্যালা ভালা পাই ভাইজান কিন্তু আমার ভ য় লাগে ভাইজান। ”
মেয়েটা আগের ন্যায়ই ভীত কণ্ঠে বলে। তার কণ্ঠে প্রণয় খানিক নরম হয়। সে কিছু বলার পূর্বেই মেয়েটা আবার বলে,
” ভাইজান আপনে যান, আপারে নিয়াহেন। এই যে এইহান দিয়া একটা বারান্দার লাহান আছে, দরজা খুইল্যা দেই, আপনে যান। ”
প্রণয় চকিতে তাকায় ফরিদার দিকে, ফের তাকায় জানালার দিকে। সে যাবে! তন্মধ্যে ই ফরিদা মেয়েটা হাতের বাম পাশে টিনের সাথে ঠেস দিয়ে রাখা কাঠের টেবিলটা সরিয়ে, সেখান দিয়ে ছোট দরজার মতো খুলে দিয়েছে। প্রণয় দোটানায় পড়ে একবার দরজার দিকে তাকায় আরেকবার জানালা দিয়ে মেয়েটাকে দেখে। ফরিদা হাতে একটা ছাতা ধরিয়ে দেয় তাকে, অতঃপর আর কিছু না ভেবে প্রণয় উঠানে কদম রাখে। এগিয়ে যায় মেয়েটার দিকে, এতক্ষণে মেয়েটার দাঁড়ানোর ভঙ্গিতে একটু পরিবর্তন লক্ষ্য করে সে। প্রণয় পেছনে যেয়ে দাড়িঁয়ে মেয়েটার নাম ধরে ডাকতে নেয়। প্রথমবারে হয় না, কেমন আ ট কে যায়। ফের চেষ্টা করে, অর্ধেক এসে বাকিটুকু আ ট কে যায়। নিজের ওপর বেশ বিরক্ত হয় প্রণয়, এক মেয়ের নাম ধরে ডাকতে এত ভ য় – ভীতি কিসের! তৃতীয় বারের ন্যায় চেষ্টা করে, এবার সফল হয়, পুরো নামটা ই নেয় কিন্তু বৃষ্টির ঝুম শব্দে সম্ভবত মেয়েটা শুনতে পায় না। প্রণয় এবার গলার স্বর আরও উঁচু করে ডাকে। এবার মেয়েটা শুনতে পায়, চকিতে পেছনে তাকায়। অতঃপর দুজনের দৃষ্টির মিলন হলে দুজনই হতবিহ্বলের ন্যায় তাকিয়ে থাকে কয়েক পল। ট্রেনে পরিচয় হয়ে ট্রেন থেকে নেমেই লাপাত্তা হয়ে যাওয়া মেয়েটা তার সামনে। যাকে দেখে প্রেমে পড়া নিয়ে প্রশ্ন জাগা সেই মেয়েটা ই তো সামনে! প্রণয়ের তো এমনি এমনি খেয়ালে এসেছিল। অথচ সত্যি সত্যি ই এমন কিছু হবে সে ভাবেনি।
” আপনি এখানে? ”
অভাবনীয় ঘটনা ঘটায় ছেলেটা ভাষা হারিয়ে ফেলেছে যেন। কিছু বলতে পারছেনা, সূচনা তার নীরবতা দেখে ফের প্রশ্ন করে,
” আপনি এখানে কী করছেন? ”
এবার মুখ খোলে প্রণয়, থেমে থেমে বলে,
” আমি..আসলে..ভেতরে চলুন। ভেতরে যেয়ে বুঝিয়ে বলি! ”
” বৃষ্টিতে ভেজাঁর শখ তাহলে ছাতা এনেছিলেন কেন! ”
প্রণয় বোঝেনা, কেমন ঘোরগ্রস্তের ন্যায় বলে,
” হু..? ”
” ছাতা নিচে পড়ে গেছে, আপনি ভিজেঁ গিয়েছেন। ”
এবার যেন হুঁশ ফেরে ছেলেটার, খেয়াল করে ছাতা তার হাতে নেই। নিচে তাকিয়ে দেখে ছাতা নিচে পড়ে আছে। তার পড়নের শুভ্র পাঞ্জাবি, পায়জামা ভিজেঁ একাকার। সে এসেছিল সূচনাকে নিতে এখন নিজেই কাক ভেজাঁ। নিজের এহেন কান্ডে সে অবাক, বিরক্ত দুটোই হলো। বুঝে উঠতে পারলো না, ছাতা হাত থেকে কখন পড়লো আবার!
” ভেতরে যান। ”
” আমি আপনাকে নিতে এসেছিলাম। ”
” আপনি যান, আমি আসছি। ”
প্রণয় শুকনো ঢোক গিললো, তর্ক সে এখন করবেনা, করার ইচ্ছে নেই। সে চট করে সূচনার ডান হাতটা নিজের হাতের মুঠোয় নিল। কোনো বাক্য বিনিময় না করেই সে হাটাঁ দিল ঘরের উদ্দেশ্যে।
পাশাপাশি, হাত ধরে হাটাঁ দিয়ে তবে কী নতুন পথচলার শুরু নাকি এখানেই শেষ!
#চলবে