প্রণয় ডোরে বেঁধেছি পর্ব-১২

0
608

#প্রণয়_ডোরে_বেঁধেছি
#পর্ব_১২
#নাজিয়া_শিফা ( লেখনীতে )
___________________________________
পরের দিন সূচনার ঘুম ভাঙে বেশ বেলা করে ই৷ চোখ খুলে তাকালে চোখে আলো লাগতেই মাথা ঝিম ধরে গেল। দুই হাত দিয়ে চুল খামচে ধরতেই কপালে থাকা আধ ভেজাঁ রুমালটা হাতে লাগে। ভ্রু দ্বয়ের মাঝে তার ভাজঁ পরে। শরীর দুর্বল লাগছে ভীষণ, কোনোরকমে উঠে বসে কপাল থেকে রুমাল টা সরায়। বেডের পাশের ছোট টেবিলের ওপর মাঝারি সাইজের বাটিতে পানি দেখে সূচনা বোঝার চেষ্টা করে। মাথা খাটিয়ে এতটুকু ধারণা করে, রাতে হয়তো তার জ্বর বেড়েছিল তারপর ই জলপট্টি দিয়ে দিয়েছে কেউ। এর মধ্যেই নুরাইয়া রুমে আসলেন। সূচনার কাছে আসতে আসতে উদ্বিগ্ন গলায় জিজ্ঞেস করলেন,

” শরীর কেমন এখন? জ্বর কমেছে একটু? ”

সূচনা মাথা ওপর নিচ করে জানান দিল, কমেছে একটু। নুরাইয়া হা হুতাশ করতে লাগলেন, বললেন,

” দুপুরে কত বার করে বললাম ঔষধটা খেয়ে নিও। খাওনি। এদিকে রাতে ও এত জ্বর বাড়লো, ছেলেটা ও কাউকে ডাকেনি। একা একাই মাতব্বরি করেছে। আমায় ডেকে দিলে কী হত! ছেলেমেয়ে বড় হয়ে গেলে এমন ভাব করে যেন সব তারাই বুঝে৷ ”

সূচনার বুঝতে বাকি রইলো না সেই কেউ টা যে প্রণয়। এদিকে নুরাইয়া কে হা হুতাশ করতে দেখে সূচনা কিঞ্চিৎ হাসলো। তার জ্বর হলে তার মা ও এমন ই করতো। মায়ের কথা মনে পরায় সূচনার চোখ জোড়া ঝাপসা হয়ে এলো মুহূর্তেই। নুরাইয়ার চোখ এড়ালো না তা, বেশ নরম স্বরে জিজ্ঞেস করলেন,

” কী হয়েছে? খারাপ লাগছে? ”

সূচনা দুই দিকে মাথা নাড়িয়ে বললো,

” না খারাপ লাগছেনা, আসলে আম্মুর কথা মনে পরছিল। ”

নুরাইয়া এহেন জবাবে খানিক হাসলেন, হাসি বজায় রেখে ই বললেন,

” বোকা মেয়ে, তাই বলে কাঁদতে হবে! আপাকে কল করো, কথা বলো মন হালকা হবে। আর আমি তো আছিই। তুমি আমার ছেলের বউ তো কী হয়েছে! আমি তো তোমার মায়ের মতোই। ”

সূচনার চোখ আবারও ছলছল করে উঠলো৷ কী ছোট্ট একটা বাক্য, আমি তো আছিই। অথচ এর ভাবার্থ গভীর যদি সত্যি সত্যি থাকে। এমনভাবে বলে ভরসা দেয়ার মতো মানুষ সূচনা তার জীবনে বলতে গেলে পায় ই নি। এক মা ছাড়া তার পুরো দুনিয়ায় কেউ ছিল না, কেউ ভরসা দেয়নি, মাথায় হাত রাখেনি। সূচনা মৃদুস্বরে বলে,

” শাশুড়ী তো মা হয় না আম্মা। মানুষের মুখে এই কথা শুনে শুনে আমি অনেক ভয় পেতাম। যদি সত্যি ই অন্যদের মতো শাশুড়ী হয় আমার! কিন্তু আপনার মতো শাশুড়ী যে হয় সেই কথা তেমন কেউ বলেনি কখনো।”

নুরাইয়া আবারও হাসলেন, সূচনার কাছে বসে তার এক হাত নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে বললেন,

” মুদ্রার এপিঠ আর ওপিঠ কিন্তু এক হয়না, এক পিঠে যদি অমন দজ্জাল শাশুড়ী থাকে অন্য পিঠে আমার মতো শাশুড়ী ও থাকে। অবশ্য আমি অত ও ভালো না, এত প্রশংসা করতে হবেনা। আর শাশুড়ীর মা হবার দরকার কী! মা তো মা ই, আর শাশুড়ী তো শাশুড়ী। যে যার জায়গায় থাকবে। বুঝেছো! এবার ওঠো, বেলা হয়েছে অনেক। উঠে হাত মুখ ধুয়ে, খেয়ে ঔষধ খাও। এমনিতেই ছেলে আমার রে গে আছে দেখলাম। ”

প্রণয়ের রে গে থাকার কথা শুনে সূচনার গত কালকের কথা মনে পরে। নিজের ওপর ফের রা গ চেপে বসে। গত কাল বেশ চিন্তা ভাবনার পর বুঝতে পারে দোষটা আসলে তার ই। তার উচিত হয়নি ঐসময়ে অমন কথা বলা। বোঝার পর থেকে সে চেষ্টা করছে প্রণয়ের সাথে কথা বলার। কিন্তু নাছোরবান্দা প্রণয়, মুখ দিয়ে টু শব্দ ও করছে না যেন মৌনব্রত পালন করছে। দেখেও না দেখার ভান করে কী সুন্দর এড়িয়ে যাচ্ছে! সূচনা মূলত প্রণয়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করতেই ঔষধ না খেয়ে শুয়েছিল। ভেবেছিল হয়তো জোর করে খাওয়াবে৷ কিন্তু তেমন কিছুই হয়নি। টেবিলে ঔষধ আর পানির গ্লাস রেখে কানে ফোন ধরে গম্ভীর গলায় বলেছে,

” ঔষধ না খেয়ে অসুখ বাধানোর পরিকল্পনা যদি থাকে তাহলে যেন বাপের বাড়ি যায়। যেচে অসুখ বাধালে তার জন্য আমি অযথা টাকা নষ্ট করবো না। ”

ব্যস এতটুকু ই, সূচনার মনঃক্ষুণ্ন হয়, আ ঘা ত পায় ভীষণ। ঔষধ আর নেয় না, প্রণয় ও কোনো প্রকার জোর করেনা। সেসব ভেবে সূচনা মুখ বাঁকিয়ে বিড়বিড় করে বললো,

” লাভ টা কী হলো! আপনার ই তো রাত জেগে সেবা করতো হলো। ”


সূচনার বাকি দিন কা টে শুয়ে বসে ই। ইরা কিছু সময় তার সাথে কাটিয়ে নিজের রুমে চলে গেছে। মুগ্ধর কথা আর আজকে তোলেনি সূচনা তবে ইরাকে দেখে মনে হয়েছে কোনো বিষয়ে চিন্তিত সে। মুগ্ধর সাথে কিছু চলছে কি? সূচনা ভেবেছিল জিজ্ঞেস করবে কিন্তু করেনি আর। সন্দেহের ভিত্তিতে এসব বিষয় নিয়ে এগোনে যায় না৷ কিন্তু তাকে এতকিছু ভাবতে হয়না আর। ইরা সূচনার রুম থেকে যাওয়ার কয়েক মিনিটের মধ্যে ই আবার ফিরে আসে। নত মস্তকে নিচু কণ্ঠে বলে,

” আমার একটু কথা ছিল ভাবি। ”

সূচনা সহজ ভাবেই বলে,

” বসো, কী কথা বলো। ”

ইরা শুরুতে আমতা আমতা করে, কীভাবে বলবে, কীভাবে শুরু করবে বুঝে উঠতে পারেনা। তার এহেন অবস্থা দেখে সূচনা তাকে সহজ হতে বললো,

” ঠান্ডা হও, এত ইতস্তত করতে হবে না৷ সহজ ভাবে বলো কী হয়েছে! ”

ইরা নিজেকে স্বাভাবিক করার চেষ্টা চালায়, মৃদু স্বরে বলে,

” তোমার তো মুগ্ধর সাথে কথা হয়েছে তাই না! ও ছেলে হিসেবে কেমন? ”

সূচনার কপালে ভাজ পরে, এটা কেমন প্রশ্ন! সে কীভাবে জানবে মুগ্ধ কেমন ছেলে। সে ভ্রু কুটি করে বললো,

” আমি কীভাবে জানবো ইরা! মুগ্ধর সাথে আমার কথা হয়েছে একদিন। নিজ থেকে কথা বলেছিল, তোমায় পছন্দ করে সেটা বলতে৷ হ্যাঁ ভদ্রভাবেই কথা বলেছে কিন্তু এর দ্বারা তো বোঝা যায় না ছেলে হিসেবে কেমন। ”

” আচ্ছা। ”

” কেন জিজ্ঞেস করছো! ”

” ভাবি..আমি..

ইরা বলতে পারেনা, উসখুস করে। এবার সূচনা নিজ থেকে ই বললো,

” দেখো ইরা, এই সময়টাতে মুগ্ধর মতো হয়তো কয়েকজন ই আসবে। কেউ থাকতে আসবে কেউ বা এমনিই এমনিই। সময় নষ্ট করতে। জরুরি না যে তোমার সবার কথা চিন্তা করতে হবে, ভাবতে হবে। জরুরি এটা যে কে শেষ পর্যন্ত থাকবে। যে থাকবে তুমিও তার হয়ে ই থাকবে। মুগ্ধ অনার্স ফাইনাল ইয়ারে পড়ছে, কয়দিন পর চাকরি বাকরি পাবে, প্রতিষ্ঠিত হবে। সময়ের ব্যাপার, তোমার হাতে ও এখনো মোটামুটি ভালো সময় আছে। অন্তত অনার্স শেষ হওয়া অব্দি। সুতরাং এখন এসব চিন্তা ভাবনা বাদ দাও, তাকে ও বলবে এসব চিন্তা ভাবনা তোমার মাথায় দিয়ে মাথাটা যেন নষ্ট না করে। নিজের পড়ালেখায়, ক্যারিয়ারে মন দিতে বলো আর তোমাকেও তোমার মতো ছেড়ে দিতে। ”

ইরা প্রসন্ন হয়, তার প্রশ্নের জবাব সে পেয়ে গেছে। সূচনাকে জড়িয়ে ধরে হাসিমুখে।



বিকেলের শেষ প্রহর, ব্যালকনিতে দাঁড়িয়েছে সূচনা। আজকে অন্যদিনের তুলনায় বাতাস বেশি। জ্বর খানিক কমেছে তার। প্রণয়ের অফিস থেকে ফেরার সময় সাড়ে পাঁচটায়। এখন সময় প্রায় ছয়টা অথচ তার ফেরার খবর নেই। সূচনা কল করেছিল বার দুয়েক, কিন্তু রিসিভ করেনি কেউ। করবে কেন! কল রিসিভ করলে তো কথা বলতে হবে আর কথা তো সে বলছেনা। সেজন্য ইচ্ছে করেই রিসিভ করছেনা। সূচনার এমনই মনে হলো, কল করলো না আর।

প্রণয় সেদিন অফিস থেকে ফিরলো সাতটার সময়। এসেই ফ্রেশ হয়ে খেয়ে দেয়ে একেবারে রুমে আসলো নয়টার দিকে। সূচনা আগে ভাগে কাজ সব সেরে রুমে আসে। প্রণয় আসার পর থেকে সে বার কয়েক চেষ্টা চালিয়েছে কথা বলার। কিন্তু প্রণয় তাকে পাত্তা ই দেয়নি। যেন দেখে ও দেখেনি। সে যে সাহস করে নিজেকে মানসিক ভাবে প্রস্তুত করেছে। যেই সাজগোছ তার অপছন্দ অথচ এই ছেলের জন্য সেজেগুজে বসে আছে। ছেলেটা একবার ও খেয়াল করলো না, ভালো করে তাকালো না পর্যন্ত। এজন্য ই বলে হারিয়ে আফসোস করতে নেই। গতকাল ব্যাঘাত ঘটিয়ে আজকে নিজ থেকে যাচ্ছে! গত কালকে তার বলা ঐ কথার পর এই ছেলে যে নিজ থেকে তার ধারে কাছে ও ঘেঁষবে না সে সম্পর্কে সূচনা নিশ্চিত। কিন্তু কোনো ভাবে রা গ তো ভাঙাতে হবে! বোকামি যেহেতু করেছে এখন তো একটু বে হা য়া হতেই হবে। অবশ্য হওয়াই যায়, তার নিজের বর ই তো।
চিন্তা করতে করতে সূচনা হেসে ফেলে শব্দ করে। ব্যালকনিতে তার দিকে পিঠ করে দাঁড়িয়ে ছিল প্রণয়। হাসির শব্দে সে পেছনে তাকায়। সূচনাকে দেখা মাত্রই মুখ দিয়ে বিরক্তি সূচক শব্দ বের করে ফের সামনে ঘুরে তাকায়। সূচনা পেছনে ভেংচি কে টে বিড়বিড় করতে করতে তার পাশে যেয়ে দাঁড়ায়। প্রণয় তেমন কোনো প্রতিক্রিয়া দেখায় না। সূচনা মিনমিনে গলায় বলে,

” কী সমস্যা আপনার! চোখে পট্টি বেঁধেছেন! দেখেও না দেখার ভান করছেন কেন! ”

প্রণয় ডান দিকে ঘাড় ঘুরিয়ে একবার তাকিয়ে বলে,

” দুঃখীত আমি কাউকে দেখছি না৷ ”

” চোখের সামনে দিয়ে ঘুরঘুর করছি আর বলছেন দেখছিনা। ”

” চোখে সমস্যা হয়েছে, গুরুতর সমস্যা। চোখ তোমাকে ছাড়া বাকি সবাইকে দেখতে পাচ্ছে। শুধু তোমাকে ই দেখতে পাচ্ছে না। এমন হচ্ছে কেন বলো তো! অবশ্য ভালো হয়েছে, অন্তত কোনোভাবে তোমার সুযোগ নিতে পারবনা। ”

ঠেস দিয়ে বলা কথা সূচনার বেশ হজম হয়। বুঝতে পারে ঐ কথার জন্য ই সাহেবের এত রা গ। সূচনা অনুতপ্তের সুরে বলে,

” কালকের কথার জন্য এত রাগ। আমি বুঝতে পারিনি, মুখ ফসকে বের হয়ে গিয়েছিল। মিন করে বলিনি। ”

” মনে যে কথা থাকে মুখ ফসকে তাই বের হয়৷ কে যেন বলেছিল! ”

কথাটা সূচনা ই বলেছিল তাদের দ্বিতীয় বারের দেখায়। সূচনা সেই কথা স্মরণে রেখে বললো,

” আমিই বলেছিলাম কিন্তু আপনি যে সেদিন বলেছিলেন মেয়ে মানুষ মানে ঝামেলা৷ আমাকে সাহায্য করতে যেয়ে উল্টো বিপদে পরেছেন। আবার আমাকে বিয়ে করবেন! এসব ই তো মুখ ফসকে বেরিয়েছিল। আমার খারাপ লেগেছিল কিন্তু মিন করে বলেননি, মাফ করে দিয়েছিলাম। তাহলে আপনি করতে পারবেন না কেন! ”

প্রণয় স্মৃতিচারণ করে, মনে পরে সব ই। হ্যাঁ ঐ কথা গুলো সে মন থেকে বলেনি। সূচনা ও মাফ করে দিয়েছিল। সূচনা ও তো কালকে মন থেকে ঐসব বলেনি, তার ও তো উচিত বোঝার। প্রণয়ের রা গ ঈষৎ কমে। গলার স্বর নরম হয়, সূচনার দিকে ঘুরে বলে,

” আচ্ছা রা গ পরে গেছে। ”

” কীভাবে পরলো! ”

” এমনিই। ”

” এমনি ই কীভাবে পরে! ”

সূচনা পরপর বলে,

” মানুষের এত রা গ থাকে! যা ই বলেছি ভুল করে বলেছি তার জন্য এত রা গ দেখাতে হবে! ”

সূচনা চোখ মুখ কুঁচকে কথাগুলো বলে। প্রণয় অদৃশ্য হাতে কপাল চাপড়ায়। মানে আ গু নে ঘি ঢেলে আ গু ন না বাড়তে বলা। তবে গত কালের ন্যায় প্রণয় রে গে যায় না। সূচনার এক হাত নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে কোমল স্বরে বলে,

” দেখো, সুযোগ নেয়ার হলে আমি আর ও আগেই নিতাম। তোমার অসুস্থতা, সুস্থতা দেখতাম না। কালকে আমি কোনো সুযোগ নিচ্ছিলাম না। তুমি আমার স্ত্রী, তোমার ওপর আমার পুরো অধিকার আছে। আমি চাইলে অধিকার ফলাতে পারতাম আগেই। কিন্তু আমি চাইছিলাম আস্তে ধীরে সব হোক। আমি ধাপ এগোলে তুমি আরেক ধাপ এগোবে। কালকে এক ধাপ এগোতে চেয়েছিলাম আমি আর তুমি..

” সব নষ্ট করে দিয়েছি। ”

” হ্যাঁ। আর দোষ যে সব আমার দিচ্ছো, গত কালকে মেসেজ দিয়েছিল কে? মেসেজে কে বলেছিল ভদ্র থেকে বা জে হতে! ”

সূচনা কয়েক সেকেন্ড বোকার মতো চেয়ে থাকলো অতঃপর মনে হতেই মিনমিনে গলায় বললো,

” আমি ই বলেছিলাম৷ আবেগে বলে ফেলেছি, আসলে জ্বরের ঘোরে করেছি যা করার। ”

” এখন সব জ্বরের দোষ। ”

” সামান্য এক মেসেজে আপনি ফুসলে যাবেন! ”

” একমাত্র বউয়ের আবদার, ভদ্র থেকে বা জে হতে বলেছে না হয়ে কই যাই বলো! ”

প্রণয়ের ঠোঁটে দুষ্ট হাসি, সূচনা লজ্জা পায়। প্রণয় আসছি বলে সূচনার পাশ থেকে সরে যায়। সূচনা ডান দিকে দেয়ালের সাথে ঠেস দিয়ে দাঁড়িয়ে বাইরের দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ করে। প্রণয় যায় না, নিঃশব্দে সূচনার পাশে দাঁড়ায়। ঘাড়ে স্পর্শ পেতেই মেয়েটা ঘাড় ঘুরায়। প্রণয়কে পেছনে দেখতে পেয়ে ভূত দেখার ন্যায় চমকে ওঠে। সে ভেবেছিল প্রণয় সত্যি চলে গেছে। কিন্তু যায়নি। দুজনের মাঝে দূরত্ব একেবারেই কম খেয়াল হতেই মেয়েটা তড়িৎ গতিতে পেছনে যেতে নিলে মাথা যেয়ে বারি খায় দেয়ালের সাথে। ঈষৎ ব্যথা ও পায়, হৃদ স্পন্দন তার অস্বাভাবিক। ঘনঘন শ্বাস টানছে। চোখ জোড়া একটু ভালো করে মেলে প্রণয়কে দেখে। তার দৃষ্টি জোড়ায় কেমন মাদকতা! মেয়েটা ভয় পায়। কাঁপা কাঁপি শুরু হয়ে যায় যেন। এত ভয়, এত কাঁপুনি কিসের! প্রণয় তন্মধ্যে ঝুঁকে পড়ে তার ওপর। কম্পনরত অধর জোড়ায় ডান হাতের বুড়ো আঙুল ছোঁয়ায়। চোখ জোড়া আপনাআপনি বুঁজে আসে নাজুক মেয়েটার। কাঁপুনি বাড়ে আরও। তার অধরে থাকা পুরুষালি আঙুল এপাশ হতে ওপাশ যায় অধরে থাকা কৃত্রিম রঙ মুছে দেয়। কর্ণকুহর হয় নেশাতুর কণ্ঠ,

” তোমার ঠোঁট জোড়া ঈষৎ গোলাপি না! সেখানে এই কৃত্রিম রঙ দিতে বলেছে কে! আমার আর যেন না দেখি। ”

সূচনা মুখ খুলে কিছু বলতে পারে না। যেন ভাষা হারিয়ে মেয়েটা নিঃস্ব। প্রণয় দুই বাহুতে হাত রেখে ললাটে ঠোঁট ছোঁয়াতে ই তার শরীর স্থির হয়। সূচনা ফট করে সামনে ঘুরে যায়। প্রণয়ের দিকে পিঠ করে দাঁড়ায়। তার বুক ধুকপুক করছে এখনো। প্রণয় পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে কানের কাছে ফিসফিসিয়ে বলে,

” একটা গানের কথা মনে পরছে, গাইব! ”

সূচনা আখিঁ জোড়া বন্ধ অবস্থাতেই মাথা ওপর নিচ দুলিয়ে সম্মতি দেয়৷ সম্মতি পেতেই প্রণয় গান শুরু করে,

❝ হাওয়ায় হাওয়ায় দোলনা দোলে
সুরের ডানা মেলে…
তোমার মনের উঠান, লেপে দেবো
সাজিয়ে দেবো ফুলে…
তুমি এসো… তবু এসো, ভালোবেসে।

খেয়ালির শিশির, লুটাবে তাই
আঁচল টেনেছে মেঘে…
তোমারী জন্যে, শুধু তোমার জন্যে।

গোধূলি আকাশ লাজুক লাজুক,
সন্ধ্যা এখনও জেগে…
তোমারী জন্যে, শুধু তোমার জন্যে।

আমি সেই সুখে আজ
ফেলেছি মন আবেগ জড়ানো কূলে…
তুমি এসো… তবু এসো, ভালবেসে। ❞

গান শেষ হলেও সূচনার ঘোর কা টে না। চোখ বন্ধ করে প্রতিটা লাইন অনুভব করে। প্রণয় তার কাঁধে নিজের থুঁতনি রেখে বলে,

” লজ্জা লাগছে! ”

সূচনা মাথা দুই দিকে নাড়িয়ে বলে,

” উহুঁ। ”

” এদিকে ঘুরো দেখি। ”

সূচনার দুই বাহু ধরে নিজের দিকে ঘুরায় প্রণয়। সূচনা নত দৃষ্টি ওপরে তুলে তাকালে প্রণয় নেশাতুর কণ্ঠে জিজ্ঞেস করে,

” কালকের অর্ধেক কাজটা কী আজকে সাড়া যাবে? ”

সূচনা জবাব দেয় না, আলতোভাবে প্রণয়ের বুকে মাথা রাখে। প্রণয় বোধহয় তার জবাব পেয়ে যায়। সূচনার মাথায় চুমু খায়। ব্যালকনি হতে প্রস্থান করে, বদ্ধ ঘরে, অন্ধকারে ভারী শ্বাসে কক্ষের পাল্লা ভারি হয়। সম্পূর্ণ অচেনা হতে মন ও শরীর দুইয়েই দু’জনের কাছে দুজন চেনা রূপে ধরা দেয়।

#চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে