#প্রণয়_ডোরে_বেঁধেছি
#পর্ব_১০
#নাজিয়া_শিফা ( লেখনীতে )
______________________________
শুক্রবারের বিকেলের সময়টা সূচনার ভালো কাটলেও শেষে ঐ একটা কথাতেই সব মন খারাপেরা মনে হা না দিয়েছিল। প্রণয় প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে দ্বিধা দ্বন্দে ফেলে রাখলো মেয়েটাকে। ইরার সাথে কথা বলে দেখবে কি-না ভাবতে ভাবতে ও একদিন কেটে গেল। আজ রবিবার, ভার্সিটি তে নবীন বরণ। সকালেে তাড়াতাড়ি করে উঠে সব কাজ টাজ শেষে তৈরি হয়ে দুজন বেরিয়ে পরেছে ভার্সিটির উদ্দেশ্যে। ইরাকে বাসা থেকে ভার্সিটি আসা অব্দি অনেকগুলো ছবি তুলে দিয়েছে সূচনা। অথচ ইরা এত বার বলেও সূচনাকে রাজি করাতে পারেনি তার নিজের ছবি তোলার জন্য। ইরার মনে একবারের জন্য এই খেয়াল এসেই পরে,
” মেয়েটা কী নিরামিষ! আজকালের মেয়েরা এমন নিরামিষ হয়! হয় বোধহয় নাহলে এই মেয়ের কীভাবে আছে! ”
ভার্সিটি তে এক সপ্তাহে তেমন ভালো কোনো বন্ধু না হলেও মোটামুটি কয়েকজনের সাথে পরিচয় হয়েছে। তাদের মধ্যেই একজন অরিন, মেয়েটা দুজনকে দেখেই এগিয়ে আসলো। কুশলাদি করে হাসিমুখে ই বললো,
” তোমাদের দুজনকে সুন্দর লাগছে। তোমার শাড়ির সাথে সাজের কালার কম্বিনেশনটা সুন্দর হয়েছে। ”
শেষ বাক্যটি সূচনার উদ্দেশ্যে করে মেয়েটা, তার কথা শুনে সূচনার নিজেকে ভালো করে একটু দেখে।
” তোমরা এখানেই দাঁড়িয়ে থাকবে? ”
সূচনা মেয়েটার এহেন প্রশ্নে নিজের ওপর থেকে দৃষ্টি সরিয়ে তার দিকে তাকায়। মৃদু স্বরে বলে,
” না আপু আসলে..
” আমার সাথে চলো, ভার্সিটি তে নতুন তো তোমরা। আসো কয়েকজনের সাথে পরিচয় করিয়ে দিই। ”
অরিন মেয়েটা এবার অনার্স ফাইনাল ইয়ারে পড়ে। তার সাথে পরিচয় হয়েছিল প্রথম দিনেই। ইরার কোনো একটা কাগজ নিয়ে ঝামেলা হয়েছিল। সেই বিষয়ে অরিন সাহায্য করেছিল। সেই থেকে ই পরিচয়। অরিন সূচনা ও ইরাকে নিয়ে যেয়ে তার বাকি বন্ধুদের সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়। পুরো ক্যাম্পাস ই আজকে নানান রঙে সজ্জিত। সবাই যে যার মতো ব্যস্ত, এতক্ষণ এদের মধ্যে নিজেদের ভিনগ্রহের প্রাণী মনে হলেও এখন এমন মনে হচ্ছে না। ওরা আটজন, একসাথে বসে আছে ক্যাম্পাসে। সবাই মিশুক, মন খুলে কথা বলছে, হাসছে। ঐদিকে স্টেজে একজনের পর একজন বক্তব্য রাখছেন। সূচনা প্রথম কয়েক মিনিট চুপচাপ থাকলেও আস্তে আস্তে সহজ হলো, কথা বলা শুরু করলো। এদিকে ইরা লুকিয়ে সূচনার ছবি তুলে প্রণয়কে হোয়াটসঅ্যাপে পাঠালো। বয়সে ভাই বড় হলেও সম্পর্ক টা তাদের বিড়াল ইঁদুরের। যে যখন পারবে একজন আরেকজনকে জ্বা লা বে।
।
।
ভার্সিটি তে সময় টা ভালো কাটলেও বিপত্তি বাঁধে দুপুরের পর যখন আকস্মিক বৃষ্টি শুরু হয়। কোনোরূপ খবর না দিয়ে ই বৃষ্টি শুরু হয়েছে। সেই থেকে ঝুম বৃষ্টি, থামার নাম নেই৷ ভার্সিটির প্রোগ্রাম ও এই বৃষ্টির কারণে ঠিকঠাক ভাবে হলোনা। এদিকে বাসায় যাওয়ার সুযোগ টা ও যেন হচ্ছে না। এই ঝুম বৃষ্টির মধ্যে কীভাবে যাবে! রিকশা বা অন্য কোনো যান পাওয়া ও মুশকিল। অরিনরা ও বসে আছে, তাদের মধ্যে অবশ্য বাড়ি ফেরা নিয়ে চিন্তা দেখা যাচ্ছে না। ইরা টুকটাক কথা বলছে, সূচনার কথা বলতে ইচ্ছে করছেনা। মেজাজ খারাপ লাগছে, বৃষ্টির ছাঁট শরীর ছুঁয়ে যাচ্ছে বারংবার। বাতাসে তেমন বেগ না হলে ও নীলাম্বর ঘন কালো মেঘে আচ্ছন্ন। যার দরুন সন্ধ্যা না নামতে ই সন্ধ্যা সন্ধ্যা মনে হচ্ছে। কংক্রিটের পিলারে ঠেস দিয়ে বসে চিন্তিত মেয়েটা। তপ্ত শ্বাস ফেলে সে তাকিয়ে রইলো সামনের দিকে দৃষ্টি রেখে। ভাবতে বসলো, আজকে এই অব্দি প্রণয়ের সাথে কথা হয়নি তার। প্রণয় জানে তারা ভার্সিটি তে এসেছে। কিন্তু এভাবে আঁটকে গেছে তা কী ধারণা করতে পারবে? নিতে আসবে তাদের? এমন অদ্ভুত ভাবনারা এসে মস্তিষ্কে হানা দিতেই সূচনা নিজেকে খানিক বকলো ও। উদ্ভট ভাবনা ইদানীং বেশি আসছে মনে৷
বৃষ্টি কমবে সে অপেক্ষা করতে করতে আরও দুই ঘন্টা পার হলো৷ অধৈর্য হয়ে ইরাকে বলেই ফেললো সূচনা,
” চলো বাইরে যেয়ে দেখি রিকশা বা অন্য কিছু পাই কি-না। ”
ইরার ঘোর আপত্তি, বিস্ময় নিয়ে বলে,
” কী বলছো ভাবি! এই বৃষ্টির মধ্যে তোমার মনে হয় কিছু পাওয়া যাবে? তার ওপর আমরা দুজনই মেয়ে, এত বৃষ্টির মধ্যে মানুষজন ও নেই রাস্তায়। ভাইয়া রা গা রা গি করবে। ”
ইরার বলার পর সূচনারও যেন হুঁশ হলো। নিজের মাথায় নিজেই গাট্টা মা র লো৷ কী বোকার মতো কথা বলছে!
।
।
অফিস টাইম শেষ, বৃষ্টির জন্য অফিস থেকে বের হতে পারছিল না বিধায় অফিসেই বসেছিল প্রণয়। এর মধ্যে ইরার ফোন পেয়ে বৃষ্টির মধ্যে ই সে বাইক নিয়ে ছুটে। সূচনার উদ্ভট ভাবনা কে সত্যি করে দিয়ে কাক ভেজাঁ হয়ে ভার্সিটি তে প্রবেশ করে প্রণয়। এসেই সূচনাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে,
” তোমার কাছে ফোন নেই? ”
সূচনা থতমত খেয়ে উত্তর দেয়,
” আ..আছে তো। ”
” এতক্ষণ ধরে অপেক্ষা না করে ফোন দাও নি কেন? ”
সূচনা জবাব দেয় না, প্রণয় ফের প্রশ্ন করেনা আর। হুট করে একটা ছেলে এসে এভাবে সূচনাকে প্রশ্ন করছে দেখে অরিন সহ বাকিরাও প্রশ্ন সূচক দৃষ্টি তে তাদের দিক তাকিয়ে আছে। প্রণয় লক্ষ্য করলেও কিছু বলেনা। অরিন সূচনার কানের কাছে ঝুকে মৃদু স্বরে জিজ্ঞেস করে,
” ছেলেটা কে? তোমাকে এভাবে প্রশ্ন করছে কেন? ”
অপরিচিত মেয়েটা কে সূচনার কানে এমন ফিসফিস করতে দেখে প্রণয় কান খাড়া করে শোনে অতঃপর নিজেই কণ্ঠ খানিক উচুঁ করে জবাব দেয়,
” প্রশ্ন করছি কারণ আমি তার বর, আমার বউ হয়। ”
উত্তর দিয়ে ই প্রণয় ভার্সিটি থেকে বের হয়, একটা ব্যবস্থা যদি হয়! কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত কোনো যান ই পাওয়া গেল না। পুনরায় ভার্সিটি তে ফিরে যায়, একসাথে দুজনকে নিয়ে বাইকে যাওয়া সম্ভব না। এমনিতেই বৃষ্টি তন্মধ্যে ঢাকা শহরের রাস্তা! একটু বেশি বৃষ্টি হলেই রাস্তায় হাঁটু সমান পানি হয়ে যায়। সূচনা ইতস্তত করতে করতে ই বলে,
” হোস্টেল এখান থেকে বিশ মিনিটের মতো দূরত্বে। এক কাজ করুন ইরাকে দিয়ে আসুন আগে, তারপর আমাকে নিয়ে যেয়েন। ”
প্রণয় কয়েক সেকেন্ড দাঁড়িয়ে থাকে, তারপর ইরা কে আদেশ করে,
” আয় তাড়াতাড়ি। ”
ইরাকে হোস্টেলে রেখে এসে প্রণয় ফের যায় ভার্সিটি তে। সূচনা আগের জায়গাতে ই বসেছিল। প্রণয়কে দেখামাত্র ই উঠে দাঁড়ায়। সামনে এগোতে নিলে প্রণয় হাত দিয়ে ইশারা করে আসতে নিষেধ করে। নিজেই এগিয়ে যায়, হোস্টেল থেকে ইরা ছাতা দিয়ে দিয়েছিল। প্রণয় ছাতা টা সূচনার হাতে দেয়। সূচনার আধ ভেজাঁ নীল রঙা শাড়ির আঁচল টা দিয়ে নিজের মাথা মুছতে নিলে সূচনা আড়চোখে তাকায় একবার কিন্তু কিছু বলার সাহস পায়না। সূচনা মাথায় ছাতা মেলে দিয়ে সাবধানে পা ফেলে এগিয়ে যায় বাইকের দিকে।
বৃষ্টির বেগ আগের তুলনায় কমলেও এখনও কম না। ভিজেঁ যাচ্ছে যে মেয়েটার কোনো হেলদোল নেই। প্রণয় লুকিং গ্লাসে এক পলক দেখে গম্ভীর স্বরে শোধালো,
” ভিজেঁ যাচ্ছো ছাতাঁ টা নিতে বললাম নিলেনা কেন! ”
” বাইকের ওপর বসে ছাতা কে নেয়? ”
” নিজেকে রক্ষা করতে অনেক কিছু ই নতুন করতে হয়। ”
” এটা বৃষ্টি কোনো যম না যে বেচেঁ ফিরব হ্যাঁ ব জ্র পা ত হলে আলাদা কথা, ওটাতে আমার ভীষণ ভয়। কিন্তু এমনিতে বৃষ্টি তো একটা অন্যরকম অনুভূতি, বৃষ্টি তে ভেজারঁ মধ্যে যে প্রশান্তি! উফফ! ”
” অসুস্থ হলে টের পাবে। ”
” হলে হবে। ”
সূচনা হেঁয়ালি করে ই বললো, প্রণয় আর কথা বাড়ালো না।
হোস্টেলে পোছাঁলে সূচনা বাইক থেকে নেমে দাঁড়ালো। প্রণয় লুকিং গ্লাসে তাকিয়ে চুল ঝাড়ছিল নিজের। সূচনা মৃদু স্বরে জিজ্ঞেস করে,
” এখন চলে যাবেন? ”
” না আজকে তোমার সাথে হোস্টেলেই থাকব ভাবছি। ”
সূচনা চোখমুখ শক্ত করে বললো,
” হোস্টেলে থাকবেন মানে! ”
প্রণয় লুকিং গ্লাস থেকে দৃষ্টি সরিয়ে সূচনার দিকে তাকালো৷ হেয়ো স্বরে বললো,
” হ্যাঁ, থাকব। তো!
” আপনি হোস্টেলে কেন থাকতে যাবেন! বাসায় যাবেন আপনার৷ ”
” জানোই যেহেতু তাহলে জিজ্ঞেস করছো কেন! ”
প্রণয় বিরক্তি নিয়ে বললো, সূচনা মৃদু স্বরে বলে,
” আমি জিজ্ঞেস করেছি এখনই যাবেন কিনা সেটা। ”
” তো কী করব এখানে থেকে? ”
” ঘাস কা ট বে ন ঘাস। ”
মিনমিনিয়ে বলে সূচনা, প্রণয় এক ভ্রু উঁচু করে তার দিকে তাকালে সূচনা মেকি হেসে বলে,
” যান যান, বৃষ্টি বেড়ে যাবে আবার। ”
” হ্যাঁ যাবো ই তো। যেয়ে আবার এই শার্ট নিয়ে ধস্তাধস্তি করতে হবে। ”
সূচনা কথার মানে বুঝতে না পেরে প্রশ্নসূচক দৃষ্টি নিক্ষেপ করলে প্রণয় হাত দিয়ে নিজের কাঁধের দিকে সফেদ রঙা শার্টের অংশে লাল হওয়া জায়গাটুকু দেখিয়ে দেয়। মুখ বাঁকিয়ে বলে,
” শার্টের মধ্যে আলপনা করেছো না! ”
সূচনা কথার পৃষ্ঠে নাক মুখ কুঁচকে বলে,
” ওটা আলতা। ”
” যাই হোক, ভেতরে যাও। ”
প্রণয় বলা মাত্র ই সূচনা যাচ্ছি বলে যাওয়ার জন্য অগ্রসর হয়। পেছনে থাকা প্রণয় তাকিয়ে থাকে তার দিকে। পেছন থেকেই তার মনে হয়, সূচনার পড়নের নীল শাড়ি টা যেনো তাকে প্রস্ফুটিত অপরাজিতা ফুলে প্রত্যাবর্তন করতে আড়ম্বর। মসৃণ দুহাতে সমানতালে দুলে যাচ্ছে নীল চুড়ি। হাতে লেপ্টে আছে আলতার লালিমা। অবশ্য বৃষ্টির পানিতে ধুয়েঁ হালকা হয়ে গেছে খানিক। প্রণয় হেলমেট পরতে পরতে বিড়বিড় করে বলে,
” বেশিদিন দূরে রাখা যাবে না দেখছি। ”
হোস্টেলে ফিরে ফ্রেশ হয়েই দুইজন ঘুম দিল। জ্বর ট্বর হলো না কারোরই।
।
।
তিনদিন দ্বিধায় ফেলে রেখে প্রণয় পরের দিন বিকেলে সূচনাকে কল করে টিউশনি করার ব্যাপারে কথা বলতে। ভার্সিটি থেকে ফিরে ফ্রেশ হয়ে বিছানায় আরাম করে গড়াগড়ি খাচ্ছিল সূচনা। এর মধ্যে ফোনের চিৎকার চে চা মে চি তে মেজাজ খারাপ হলো তার। বালিশের পাশ থেকে ফোনটা নিয়ে না দেখেই রিসিভ করলো। কানে লাগিয়ে কর্কশ গলায় বললো,
” অসময়ে ফোন দিয়ে বিরক্ত করে কে হ্যাঁ! ”
” আমি বিরক্ত করছি তোমায়? ”
প্রশ্ন আর প্রশ্ন যে করেছে সে কণ্ঠের মালিককে ধরতে সূচনার বেগ পেতে হলো না। ইতিউতি করে বললো,
” না না। ”
” বললে যে! ”
” অন্য কাউকে ভেবেছিলাম। ”
মিনমিনে গলায় বলে মেয়েটা, প্রণয় একপ্রকার তেতেঁ উঠে বলে,
” অন্য কেউ মানে! অন্য কেউ তোমার ফোনে কল দিবে কেন! ”
সূচনা এহেন কথায় ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যায়। থেমে থেমে বলে,
” আরে আমি আমি তো..
প্রণয় কথা শেষ করতে দেয়না। মেয়েটাকে কিছু বলতে না দিয়ে ই নিজের মতো করে বলে যায়। সূচনা শেষে চুপ করানোর জন্য জোরেসোরে ধ ম ক দিয়ে বসে যে প্রণয় তব্দ খেয়ে যায়। সেকেন্ড কয়েক চুপ করে থাকে, তারপর বিস্ময় নিয়ে বলে,
” তুমি আমাকে ধমক দিলে! ”
সূচনা ইতিউতি করতে থাকে, প্রণয় ফের বলে,
” স্বামীর সম্মান করতে হয় আর তুমি হু ম কি ধা ম কি দাও! ”
সূচনা দুঃখী দুঃখী গলায় বলে,
” দুঃখীত স্বামী, আমার ভুল হয়ে গেছে বিশ্বাস করুন এই ভুল আর জীবনে ও করবনা যদি আপনি নিজে নিজে ই সব ভেবে না নিয়ে আপনার স্ত্রী কে কথা বলতে দেন। ”
সূচনার ঠেস দিয়ে বলা কথা প্রণয়ের বেশ হজম হলো। সেই প্রসঙ্গ আর ঘাটলো না। গম্ভীর স্বরে বললো,
” বা জে কথা বন্ধ করো এবার, কাজের কথা শোনো। দুটো টিউশনি ঠিক করেছি কালকে ভার্সিটি শেষ করে তৈরি হয়ে থেকে আমি নিতে আসব। রাখি। ”
প্রণয়ের কথা শুনে সূচনা ফট করে শোয়া থেকে উঠে বসে। বিস্মায়াবিষ্ট হয়ে জিজ্ঞেস করে,
” সত্যি বলছেন আপনি? ”
কোনো জবাব আসলো না, সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছে প্রণয় সাথে সাথে ই। সূচনা তবুও ফোন টা কানে লাগিয়ে রেখে থম মে রে বসে থাকে কিছু সময়। ভাবতে থাকে, এই ছেলে চমক দিতে এত পারদর্শী কেন! পিএইচডি করেছে এর ওপর!
অবাক ভাব কা টি য়ে সূচনা পাশে শুয়ে থাকা ইরাকে ডেকে ওঠায়। ইরাকে খবর টা দিলে ইরা ও খুশি ই হয়। সে কখনো নিজের হাত খরচ নিজে চালানোর জন্য কাজ টাজ করেনি। বাবা ই দেয় যা দরকার হয়, আর এখন প্রণয় ও যখন যা দরকার হয় দেয়। সূচনার এই সিদ্ধান্ত তার পছন্দ হয়েছে। সূচনা গ্রামপ ও টিউশনি করতো, সেখানে আর ও বেশি করতো। তা দিয়েই নিজের হাত খরচের পাশাপাশি নিজের মা-কে ও কিছু টাকা দিতো। ইরার অবাক লাগে, তারই বয়সের মেয়ে সূচনা অথচ মেয়েটা সাবলম্বী!
।
।
পরের দিন ভার্সিটি থেকে ফিরে ফ্রেশ হয়ে তাড়াতাড়ি করে তৈরি হয়ে সূচনা প্রণয়কে কল করলো। প্রণয় জানালো আধ ঘন্টার মধ্যে ই চলে আসবে। অপেক্ষা করতে করতে প্রায় আধ ঘন্টা পর ই প্রণয় আসে। কল পেয়ে সূচনা দ্রুত বের হয় ইরাকে বলে। হোস্টেলের বাইরে ই দাঁড়িয়ে ছিল প্রণয়। উল্টো ঘুরে ফোনে কথা বলছিল। তার সাথে বাইক নেই আজকে। সূচনা পেছন থেকে প্রণয়ের পিঠে আঙুল দিয়ে খোঁচা দেয়। প্রথমবারে প্রণয় সাড়া দেয়না। সূচনা আবারও একই কাজ করে। কাঁধের ঐখানটায় খোঁচা খোচিঁ করে। প্রণয় ফোন কানে নিয়ে হাত দিয়ে ইশারা করে এমন টা না করতে। সূচনা শোনেনা ফের একই কাজ করতে গেলে প্রণয় তার আঙুল ধরে ফেলে। অতঃপর হাত ধরে ঘুরিয়ে তাকে নিজের সামনে দাঁড় করায়। ফোনে কথা শেষ না হওয়া অব্দি হাত ধরে ই রাখে। ফোন রেখে প্রণয় বিরক্তি তে অসহ্য রকমের শব্দ করে। শক্ত কণ্ঠে বলে,
” কী সমস্যা! বাচ্চামো করছো কেন! ”
সূচনার ও মনঃক্ষুণ্ন হয় প্রণয়ের অভিব্যক্তিতে। সে মন খারাপ টুকু গিলে বললো,
” শার্টে ময়লা ছিল, প্রথমে হাত দিয়ে ঝাড়লে ও যায়নি সেজন্য খুঁটে দেখছিলাম। ”
প্রণয় দমে যায়, অযথা রা গ দেখিয়েছে ভেবে অনুশোচনা হয়। ক্ষীণ স্বরে শোধায়,
” সরি। ”
সূচনা মাথা নাড়ায়, প্রণয় ক্ষীণ স্বরে জিজ্ঞেস করে,
” ময়লা গেল? শার্টের আর কি । ”
সূচনা মাথা উঁচিয়ে প্রণয়ের কাঁধের দিকে তাকায়। এখনো একটুখানি ময়লা রয়ে গেছে দেখে ফের হাত দিয়ে ঝেড়ে দেয়। প্রণয় অধর বাঁকিয়ে হাসে, মুখে কথা বলবে না আবার কথা শোনা হচ্ছে!
সূচনার জন্য দুইটা স্টুডেন্ট পেয়েছে প্রণয়। একটা ছেলে একটা মেয়ে, একই বাসায়, দুজন একই বিল্ডিং এ থাকে। সূচনা পড়াতে গেলে দুজন একই সময়ে একসাথে পড়িয়ে আসবে যেহেতু দুজনই একই ক্লাসের। অন্তিম আর তিথি, দুজনই ক্লাস সেভেনে পড়ছে। সূচনা দু-জনের সাথে পরিচিত হয়েছে, তাদের মায়েদের সাথে ও পরিচিত হয়েছে। আগামী কাল থেকে পড়াতে আসবে। তাদের সাথে পরিচিত হয়ে কথাবার্তা শেষ করে সেখান থেকে বের হতে হতে প্রায় সন্ধ্যা নামেবে নামবে সময়। বিকেলের শেষ ভাগে টঙের দোকান হতে দুই কাপ চা পান করে সূচনাকে নিয়ে রিকশায় চেপে ফের রওনা হয় হোস্টেলের উদ্দেশ্যে। ঢাকা শহরের ব্যস্ততম রাস্তা এই সময়টায় একটু খানি নিশ্চুপ, নীরব থাকে, কোলাহল আছে তবে পরিমাণে একটু কম। যার যার মতো করে নিজ গন্তব্য রওনা হয়েছে মানুষ। এখানে কারো কারোর দিকে তাকানোর সময় ই নেই যেন। সূচনা উৎসুক দৃষ্টি তে সবকিছু তাকিয়ে দেখছিল। প্রণয় তখন আড়চোখে তাকিয়ে দেখছিল তাকে। বিয়ের একদিন আগে ও তার এই মেয়ের ওপর রা গ উঠছিল এই ভেবে যে, মেয়ে টা বিয়েতে রাজি হলো কেন! অথচ আজকে মনে হচ্ছে রাজি না হলে এই মেয়ে হাতছাড়া হয়ে যেত। কিন্তু এই মেয়ে তো হাত ছাড়া হওয়ার মতো না, তুলে নিয়ে এসে বিয়ে করার মতন। সূচনা প্রণয়ের দিকে দৃষ্টি রাখলে দেখলো প্রণয়ের দৃষ্টি আগে থেকে তার ওপরই নিবদ্ধ। কিন্তু অন্য সময়ের থেকে কিছু টা অন্য রকম সেই চাহনি। তার অস্বস্তি হলো। ইতিউতি করে জিজ্ঞেস করলো,
” তাকিয়ে আছেন কেন? ”
প্রণয়ের টনক নড়ে ওঠে, ঘোর ভেঙে যায়, তৎক্ষনাৎ ই দৃষ্টি সরিয়ে নিয়ে বলে,
” তাকিয়ে ছিলাম না। ”
সূচনা আপত্তি করলো, বললো,
” মিথ্যা কথা, আমি দেখলাম তো। এত অবুঝ ও না। ”
” তাহলে তো তাকিয়ে আছি কেন তা বুঝে যাওয়ার কথা। ”
সূচনার কথার পৃষ্ঠে বিড়বিড় করলো প্রণয়। কয়েক সেকেন্ড চুপ থেকে সূচনা প্রণয়ের কানের কাছে এসে মৃদু স্বরে বললো,
” বুঝি বুঝি, এত সুন্দর মেয়ে পাশে বসা থাকলে অমন প্রেমময়ী দৃষ্টি তে তো তাকাবেই। ”
প্রণয় ফট করে ই তাকালো সূচনার দিকে, সূচনা এক ভ্রু উঁচু করে ফের জিজ্ঞেস করলো,
” কী ঘটনা সত্যি না? ”
প্রণয় জবাব না দিয়ে সূচনার বলার ভঙ্গিমায় স্ব শব্দে হেসে দিল। তার পাশাপাশি সূচনা ও হাসছে। অপরাহ্নের শেষ প্রহরে রিকশায় চড়ে এক জোড়া কপোত-কপোতী যেন উল্লাসে মেতেছে। লোকে দেখে ভাববে তারা প্রেমিক প্রেমিকা। অথচ তারা একে অপরের প্রণয়ের ডোরে বাঁধা পরেছে।
#চলবে