প্রণয়ের রংধনু পর্ব-৪৮+৪৯

0
684

#প্রণয়ের_রংধনু 🖤
#পর্ব-৪৮
#Jannatul_ferdosi_rimi (লেখিকা)
জুঁইয়ের সামনে থাকা যুবকটি বর্তমানে ভয়ংকরভাবে রেগে আছে, তাকে দেখেই মনে হচ্ছে সে যেকোন মুহুর্তে বড় কোন ক্ষতি করতে পারে জুঁইয়ের। তার হাব- ভাব দেখে ঠিক তেমনই আন্দাজ করছে জুঁই, অপরদিকে হুইলচেয়ারে থাকা আরশও যথেষ্ট ভয়ে শিউরে উঠেছে। নার্স তার অক্সিজেন মাস্ক টা ধরেই, বুঝতে পারছে আরশ ভয়ে কাঁপছে। জুঁইয়ের সামনে থাকা যুবকটি পাইচারি করে যাচ্ছে, জুঁই ভয়ে ভয়ে প্রশ্ন করে, ‘ ফারিশ তুমি আমায় এখানে কেন নিয়ে আসলে? তাও এমনভাবে কিডন্যাপ করে, আর তুমি ভাইকে হসপিটাল থেকে এইভাবে এখানে নিয়ে এসেছো কেন? ও তো অসুস্হ..’
জুঁই সম্পূর্ন কথা শেষ হওয়ার পূর্বেই, ফারিশ হুংকার ছেড়ে বলে, ‘ চুপ! একদম চুপ! অনেক বলে ফেলেছো তুমি! এইবার আমি বলবো, তুমি শুনবে।’
জুঁই থেমে যায়। ফারিশ জুঁইয়ের চেয়ারটি নিজের দিকে টেনে, গম্ভীর গলায় প্রশ্ন করে, ‘ সোজাসাপ্টা প্রশ্ন করছি, সোজাসোজি জবাব দিবে। ‘

‘ কি প্রশ্ন? ‘

‘মিস অনন্যাকে কিডন্যাপ করে, আরশকে দিয়ে রেপ করার প্ল্যান তোমার ছিলো, ইয়েস ওর নো!’

ফারিশের প্রশ্নে ভয়ে গলা শুকিয়ে আসে জুঁইয়ের। সে ভয়ে ভয়ে এক পলক আরশের দিকে তাঁকায়, আরশের দিকে তাঁকাতেই, আরশ অসহায় হয়ে, মাথা নিচু করে ফেলে। ফারিশ, আরশের দিকে তাঁকিয়ে বাঁকা হেসে বলে, ‘ আরশের দিকে তাঁকিয়ে লাভ নেই জুঁই। তোমার গুনধর ভাই, নিজের মুখেই সব স্বীকার করে নিয়েছে। ‘

জুঁই যেনো বিশাল বড় এক ধাক্কা খায়! সে কী করবে, বুঝে উঠতে পারছে না। সেদিনের ঘটনার পর, শফিকের সাহায্যে নানা তথ্য জোগার করেছিলো ফারিশ। ফারিশের কেন যেন মনে হচ্ছিলো এর পিছনে শুধু একা আরশ নেই বরং আরো অনেকেই আছে, তাই আজ রেশমি খান এবং খালেদ খান যখন হসপিটাল থেকে বেড়িয়ে যায়, তখনি ফারিশ তার দেহরক্ষীদের নিয়ে হসপিটালের ভিতরে ঢুকে, পুরো দেহরক্ষীদের দিয়ে, হসপিটাল ঘেরাও করে ফেলে, যেন কেউ আরশের কেবিনে যেতে না পারে। অত:পর ফারিশ তার দুজন দেহরক্ষীকে নিয়ে, ভিতরে প্রবেশ করে দেখে, আরশ শুয়ে আছে, মুখে অক্সিজেন মাস্ক! ফারিশকে দেখেই বেশ বড়ভাবে চমকে যায় আরশ। সে ঘেমে একাকার হয়ে যায়, সেদিনের কথা মনে পরতেই, তার হাত- পায়ের কাঁপাকাঁপি শুরু হয়ে যায়। ফারিশ সোজা গিয়ে, আরশের কাছে ঝুঁকে,শীতল গলায় প্রশ্ন করে,

‘ মিস অনন্যাকে কিডন্যাপ করে, রেপ করার আইডিটা কি শুধুমাত্র তোর ছিলো? নাকি এর পিছনে অন্য কেউ আছে?’

ফারিশের গলা স্বরটা সেসময় বেশ ভয়ংকর মনে হচ্ছিলো। আরশকে ভাবার সুযোগটাও দিলো না ফারিশ, সে তৎক্ষনাৎ আরশের অক্সিজেন মাস্কটা টেনে খুলে দিলো। আরশ জোড়ে জোড়ে নি:শ্বাস ফেলতে ফেলতে বলে উঠে, ‘ ভাইয়া কী করছো? আমার নি:শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে। ‘

ফারিশ অক্সিজেন মাস্কটা ঘুড়াতে ঘুড়াতে বলে, ‘ দেখ, তুই আমার নিজের ভাই, আমি কি চাই বল তুই কষ্ট পাস কিন্তু কি করবো বল? আমাকে তোরা এমনভাবে বাধ্য করে ফেলিস, তখন আমি নিরুপায় হয়ে যাই! ‘

ফারিশ হঠাৎ অশান্ত হয়ে, আরশের মুখের কাছে গিয়ে, দাঁতে দাঁত চেপে বলে, ‘ মিস অনন্যা আমার কাছে সবথেকে বেশি ইম্পোর্টেন্ট! উনার ক্ষতি কেউ করবে কন্টিনিউসলি,তা আমি কিছুতেই মেনে নিতে পারবো না। তুই এখুনি নামটা কি বলবি নাকি আমি?’

আরশের শ্বাস-কষ্ট হওয়া শুরু হচ্ছিলো, সে জুঁই নাম উচ্চারন করতেই, ফারিশ তার মুখ অক্সিজেন মাস্ক দিয়ে, দাঁড়িয়ে থাকে।

______
কিছুক্ষনের পূর্বের কথা শুনে জুঁই প্রতিক্রিয়াহীন ভাবে বসে থাকে, যেন কিছু বলার মুখে বর্তমানে তার নেই। ফারিশ পকেট থেকে পি*স্তল বের করে, জুঁইয়ের কপাল বরাবর ঠেকিয়ে, চিৎকার করে বলে,
‘ ইউ আর ফিনিশড! জাস্ট ফিনিশড! তোমাকে আমি অনেকবার সুযোগ দিয়েছি জুঁই কিন্তু সেই সুযোগের বার বার তুমি অসৎ ব্যাবহার করেছো, বার বার আমার মিস অনন্যার ক্ষতি করার চেষ্টা করেছো।’

জুঁই উত্তেজিত হয়ে উত্তর দেয়,
‘ হ্যা, হ্যা আমি করেছি বার বার ক্ষতি অনন্যার। কিন্তু কেন করেছে আমি এইসব তোমার জন্যে!’

‘ আমার জন্যে?’

‘ হ্যা, হ্যা! তোমার জন্যে। আমি তোমাকে ভালোবাসি ফারিশ, আমি সব তোমাকে অনেক ভালোবাসি। নিজের চোখের সামনে, ভালোবাসার মানুষ অন্য কারো হয়ে গেলে, তার তীব্র যন্ত্রনা ঠিক কতটা বেদনাদায়ক, তা তো অন্তত তুমি বুঝতে পারছো এখন? অনন্যার কাল বিয়ে হয়ে যাচ্ছে অভির সাথে। তাই তুমি অন্তত আমার মনের অবস্হাটা বুঝো ফারিশ। আমি খারাপ হতে পারি, অনেক খারাপ! হ্যা অনেক ছেলের সাথে আমি সম্পর্কেও জড়িয়েছি কিন্তু ভালো শুধু আমি তোমাকেই বেসেছি। সেই ছোটবেলা থেকে তোমার থেকে প্রত্যাক্ষ্যান পেতে পেতে, আমি একদম মন বিষিয়ে গিয়েছিলো। মাকে ছাড়া বড় হয়েছি আমি। মমতা জিনিসটা কি আমি তা উপলব্ধি করেনি কিন্তু এতোকিছুর মধ্যে আমি তো তোমাকে আকড়ে ধরে বাঁচতে চেয়েছি, তোমার জন্যে নিজের কাছের বন্ধুকেও ফাঁসিয়েছিলাম এবং যখন বুঝতে পারলাম, সেই বন্ধুই আমার থেকে তোমাকে কেড়ে নিতে চাইছে, আমি সহ্য করতে পারেনি, ফারিশ। বিশ্বাস করো! আমার একদম ঘেন্না ধরে গিয়েছিলো অনন্যার প্রতি! আমি জানি এখানে অনন্যার দোষ নেই কিন্তু কি করবো বলো? আমি তোমায় বড্ড বেশি ভালোবাসি। তুমি যতই অপমান করো, দিনশেষে আমি বেহায়ার মতো তোমার পানেই ঘুড়ে ফিরে চলে আসি। ‘

কথাগুলো বলতে বলতে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠে জুঁই! ফারিশ পি*স্তল টা ফেলে দিয়ে, এক মুহুর্তের জন্যে স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। পুরো ঘর জুড়ে পিনপিন নিরবতা! অবশেষে ফারিশ বললো, ‘ আমি তোমার মনের অবস্হা বুঝতে পারছি জুঁই, তাই আমি তোমাকে নিজ হাতে শাস্তি দিবো না। তুমি যা করেছ, তার সত্যিই ক্ষমা নেই, তাই আমি তোমাকে আইনের হাতে তুলে দিবো এবং আরশও সুস্হ হলে, তাকে আইনের আওতায় নেয়া হবে। ‘

ফারিশ কথাটা বলেই বেড়িয়ে যায়।

_________

অপরদিকে, হলুদের অনুষ্টানে অনন্যার আখিজোড়া একজন মানুষকেই বারংবার খুঁজছে কিন্তু সে কি আদোও আজ ধরা দিবে অনন্যার চোখে? অনন্যার কেমন যেনো অস্হির অস্হির লাগছে।ফারিশ হঠাৎ কোথায় গেলো?মানুষটার শরীরের অবস্হাও ভালো ছিলো না, এমন অসুস্হ শরীর নিয়ে কিসের মিটিং এ গেলো, সেইটাই ধারনা করতে পারছে না।এনা, ইয়ানার কানে ফিসফিস করে বলে, ‘ ইয়ানা আপু, লক্ষ্য করেছো? ভাইয়াকে না দেখে অনন্যা আপুর একপ্রকার অস্হিরতা কাজ করছে। ‘

ইয়ানা মাথা নাড়ায়। কিন্তু কোনপ্রকার উত্তর দেয়না। মিষ্টি ইরাশের কোলে উঠে বলে, ‘ কাকাই, বাপি কোথায়? ‘
ইরাশ স্মিত হেসে উত্তর দেয়, ‘ এইতো মামুনি! বাপি এখুনি চলে আসবে, তুমি মায়ের কাছে যাও। ‘

মিষ্টি ইরাশের কোল থেকে নেমে গিয়ে, অনন্যার কাছে গিয়ে, অনন্যার পাশে বসে। সে আজ হলুদ শাড়ি পরেছে, অনন্যা তাকে নিজ হাতে শাড়ি পরিয়ে, সাঁজিয়ে দিয়েছে। ইরাশ হাতের ঘড়ির দিকে তাঁকিয়ে, এনা এবং ইয়ানার দিকে তাকিয়ে বললো,

‘ ভাইয়া হঠাৎ কোথায় চলে গেলো রে? আমি কতবার ফোন করছি, ধরছে ও না। ‘

‘ তো কি করবে ভাই? এখানে বসে বসে নিজের ভালোবাসার মানুষ, অন্য কারো হয়ে যাবে তা দেখবে?’

কিছুটা চেচিয়ে প্রশ্ন করলো ইয়ানা। ইয়াশ হতাশ গলায় বললো, ‘ আস্তে ইয়ানা! এইখানে একটা অনুষ্টান চলছে। মানুষ শুনলে, সমস্যা হবে। ‘

অভি গিয়ে, অনন্যার পাশে বসে কিছুটা অভিমানের সুরে বললো, ‘ আজ আমাদের গাঁয়ে হলুদে, তুমি এই শাড়িটা কেন পরেছো অনন্যা? আমার পছন্দের শাড়ি টা পরলে না কেন? ‘

‘ আমার এই শাড়িটা ভালো লেগেছে, তাই পরেছি, তাতে কোন সমস্যা?’

‘ না, সমস্যা নেই কিন্তু আমার দেওয়া শড়িটা পরলে আমার ভালো লাগতো। ‘

‘ সবার ভালো লাগার দায় কী আমার?’

‘ তুমি এইভাবে রিয়েক্ট করছো কেন অনন্যা?’

‘ তোমার খারাপ লাগেছে অভি?তাহলে আমি সরি। ‘

অভি কোন কথা বাড়াল না কিন্তু সে টের পাচ্ছে,অনন্যা ভালো নেই, তার আখিজোড়া টলমলে! মায়াবী মুখস্রীখানা ভিষন বিষন্ন! বেশ অস্হির দেখাচ্ছে তাকে। অভির বড্ড মায়া হচ্ছে অনন্যার প্রতি! কিন্তু অনন্যা কেন ভালো নেই? অভির ভাবনার মাঝেই, একজন ছেলে এসে, ‘ আপনাকে একজন আপু ডাকছে। ‘

‘ আমাকে?’

‘ হ্যা, অনেক গুরুত্বপূর্ণ কথা আছে। ‘

‘ কোথায় সে?’

‘ স্টোর রুমে, আপনার জন্যে অপেক্ষা করছে। ‘

কথাটি বলেই বাচ্চা ছেলেটি চলে যায়। অভি ভাবলো যাবে না কিন্তু মেয়েটা আসলে কে তা জানতে সে চলে যায়।

_________
অনুষ্টানের ফাঁকে ফাঁকে অনন্যা ফারিশকে ফোন করে যাচ্ছে কিন্তু ফারিশের নাম্বার বন্ধ! ঘাবড়ে যায় অনন্যা। মানুষটার হঠাৎ কি হলো? অনন্যার চিন্তার মাঝেই, তার ফোনে টুং করে মেসেজ আসে,

‘ মিস অনন্যা, আপনি বিষন্ন মুখে থাকবেন না, আপনার সুন্দর মুখস্রীতে একরাশ বিষন্নতা বেশ বাজে লাগছে, আপনি প্রানখুলে হাসুন না? আপনার অধরের কোণের মিষ্টি হাসি যে আমার বড্ড প্রিয়।’

চলবে।।

#প্রণয়ের_রংধনু
#পর্ব- ৪৯
#Jannatul_ferdosi_rimi (লেখিকা)
ফারিশ ম্যাসেজ পেয়ে, অনন্যা আশে-পাশে তাঁকাচ্ছে বারংবার সে খুঁজে চলেছে ফারিশকে কিন্তু ফারিশ কোথায়? সে জানে ম্যাসেজ টা কার কিন্তু ফারিশ কেনো তার সামনে আসছে না? এনাও বুঝতে পারছে না অনন্যাকে এমন অস্হির দেখাচ্ছে কেন? তাই সে অনন্যার পাশে বসতেই, এনা অনন্যার হাত ধরে বলে,’ কি হয়েছে আপু? তোমাকে এতো চিন্তিত লাগছে কেন? ‘
‘ আমি বুঝতে পারছি না এনা। আসলে কেমন যেন অদ্ভুদ ফিল হচ্ছে। ‘
অনন্যা অত:পর মিষ্টিকে নিজের কোলে বসিয়ে নিজের ফোনটা দিয়ে, নিচু গলায় বলতে থাকে,
‘ মিষ্টি মা, তুমি তোমার বাবাকে ফোন করে জিজ্ঞাসা করো তো, সে কোথায়? এখনো আসছে না কেন?’
এনা আলতো করে হেসে বললো, ‘ কেন আপু? ভাইয়ার জন্যে বুঝি তোমার চিন্তা হচ্ছে?’
অনন্যা মাথা নুইয়ে বলে, ‘ আসলে তা না….’
এনা অনন্যার কথা শুনে, অনন্যার কাধে হাত রেখে বললো, ‘তুমি কী সত্যিই বুঝতে পারছো না? ভাইয়া তোমাকে ঠিক কতটা ভালোবাসে? ‘

অনন্যা হঠাৎ করে থমকে যায়! হয়তো সে বুঝে ফারিশের মনের অবস্হা কিন্তু তবুও সে নিজেকে দমিয়ে রেখেছে। অনন্যা এনার কথার কোনরকম প্রতিক্রিয়া না দিয়ে, পুনরায় আবারোও ফারিশের নাম্বারে ফোন করে কিন্তু বন্ধ দেখাচ্ছে। এনা অনন্যার অনস্হার দেখে বিড়বিড়িয়ে বলতে থাকে, ‘ আরে ভাইয়া, কখন আসবে তুমি? এদিকে আপুর অবস্হা তো, বেহাল!’

_________________
অভি স্টোর রুমে যেতেই,পিছন থেকে কেউ একজন স্টোর রুমের দরজা বন্ধ করে দেয়। রুমটা বাড়ির একদম শেষের দিকে। তেমন একটা যাতায়াত নেই। ঘরের পুরনো আসবাবপত্র দিয়ে গুছানো রয়েছে। পুরনো ঘড়ির পাশে লাগানো রয়েছে একটি সামান্য ডিম লাইট! সেই আলোয় স্পষ্ট ইয়ানার মুখস্রীখানা খানিকটা স্পষ্ট বুঝতে পারছে অভি। অভি ইয়ানাকে দেখে বিরক্তির সুরে বলে, ‘ সমস্যা কি আপনার? আজকে আমার গাঁয়ে হলুদ, সেই অনুষ্টান থেকে আমাকে একা নির্জন এই রুমে কেন ডেকে পাঠিয়েছেন?’

‘ মি: অভি শিকদার এখানে আপাতত কেউ নেই। দয়া করে, ফরমালিটি করবে না। আমাকে তুমি করে বলতে পারেন। যতই হোক, আমাদের একটা পুরনো সম্পর্ক তো রয়েছে। ‘

‘ অবশ্যই নেই, হয়তো ছিলো কিন্তু সেই সম্পর্কের এখন আর কোন অস্তীত্ব নেই। ‘

‘ অস্তীত্ব নেই মানে? আমাদের মধ্যে কি কোন সম্পর্কেই আদোও ছিলো না অভি? তুমি কি সেই সম্পর্ককে অস্বীকার করবে?’

ইয়ানা কিছু বলতে চাইলে, তাকে থামিয়ে, আঙ্গুল উঁচিয়ে, অভি গম্ভীর সুরে বলে, ‘ আচ্ছা তুমি কি আমাকে এই মুহুর্তে, পুরনো সেই সম্পর্কের হিসাব নিকেষ করতে এখানে ডেকে পাঠিয়েছো? সমস্যা কি তোমার? তাছাডা আমাদের মধ্যে কথা হয়েছিলো, সেই ২বছর আগেই, আমাদের মধ্যে যেই সম্পর্ক ছিলো কিংবা আমাদের মধ্যে যা যা হয়েছে, আমরা সব ভুলে যাবো। যদিও ভবিষ্যৎেও আমাদের দেখা হয়, তাহলে আমরা এমন ভাবে কথা বলবো যেন, কেউ মনে না করে, আমরা পূর্বপরিচিত! তুমিও তো এতোদিন সেই কথা অনুযায়ী নরমাল ভাবেই ছিলে, তবে আজ কি হলো?’

ইয়ানা দাঁতে দাঁত চেপে৷ নিচু গলায় বলে, ‘ আমি যথেষ্ট চেষ্টা করেছি ভুলে যাওয়ার, জীবনে ভাবতে পারেনি জীবন আমাকে এমন এক জায়গায় দাঁড় করাবে, যেখানে তোমার সাথে আবারোও আমার দেখা হয়ে যাবে অভি। তুমি কী করে ভুলতে পারো? আমরা ইন্টিমেটও হয়েছিলাম। ‘

অভি চুল খামচে, ইয়ানার বাহু চেপে বলে, ‘ হ্যা আমরা ভুল ক্রমে ফিজিকালি রিলেশনে জড়িয়েছিলাম কিন্তু সেদিনের পরেই আমরা আমাদের বন্ধুত্বকে শেষ করেছি এবং তোমাকে এইটাও বলেছিলাম বাংলাদেশে আমার প্রেমিকা আছে, যাকে আমি ভালোবাসি এবং বিয়ে করতে চাই। সে শুধুমাত্র অনন্যা। আমি ভুল করেছি তবে আমি ইচ্ছেকৃত সেদিন রাতে কিছুই করেনি ইয়ানা সেইটা তুমিও জানো। ট্রাই টু আন্ডারস্ট্যান্ড কালকে আমার বিয়ে। ‘

অভির কথা শুনে, হঠাৎ রেগে গিয়ে, ইয়ানা অভির কলার চেপে ধরে বলে, ‘ কালকে বিয়ে মানে? কিসের বিয়ে? ‘

‘ কিসের বিয়ে মানে? আমার এবং অনন্যার বিয়ে। ‘

‘ তুমি কী ভেবেছো? তুমি আমার চোখের সামনে বিয়ে করে ফেলবে অন্য কাউকে এবং তা চুপচাপ মেনে নিবো? একদমই নয়। ‘

অভি উত্তেজিত হয়ে প্রশ্ন করে, ‘ কিন্তু এতোবছরে যখন তোমার জীবনে তা কোন ইফেক্ট পড়ে নি তাহলে আজ তোমার কি হলো ইয়ানা? ‘

‘ তার এক্সপ্লেনেশন আমি তোমায় দিতে পারবো না অভি, কাল তুমি আমায় বিয়ে করবে।’

অভি যেনো বড়সড় ধাক্কা খায়, সে প্রশ্ন করে, ‘ তোমায় বিয়ে করবো মানে?’

ইয়ানা অভির কলার চেপে বলে, ‘ অবশ্যই, আমাকে কালকে বিয়ে করতে হবে, নাহলে কালকে আমাদের রাতের সেই ভিডিও টা আমি সবার সামনে এক্সপোজ করে দিবো! ‘

‘ ওয়াট? তুমি কি পাগল হয়ে গিয়েছো ইয়ানা?’

‘ হ্যা, হয়েছি আমি। আমার ভাইয়া যেই কাজটা করেছিলো, সেই সেইম কাজই আমি করবো, যদিও সেইটা ছিলো ফেইক কিন্তু আমি যা করবো তা হবে রিয়েল! অনেক তো অনন্যা আপুর ক্যারেক্টারের জাস্টিফাই দিয়ে বেড়াও, যখন তোমার আসল রুপ, সবার সামনে বের হবে, তখন কেমন হবে অভি? ‘

অভি মাথা নিচু করে ফেলে, হ্যা সে দুইবছর আগে নেশার ঘরে ইয়ানার সাথে মিলিত হয়েছিলো তবে তা ইচ্ছেকৃত নয়। সে এবং ইয়ানা একই সাথে লয়ের প্র্যাক্টিস করেছিলো কানাডাতে, ইয়ানা তার জুনিয়র ছিলো এবং তারা যথেষ্ট ভালো বন্ধু ছিলো। সে কখনোই অনন্যাকে ভুলে, ইয়ানার প্রতি দূর্বল হয়নি কিন্তু সেই এক রাতের ভুল তাকে আজ এমন মুহুর্তে বয়ে বেড়াতে হবে তা দুশস্পনেও ভাবতে পারে নি। ইয়ানা যাওয়ার পূর্বে বলে গেলো, ‘ আজকের রাতটুকুই সময় আছে, তোমার কাছে। ভাবো, ভাবো! ভালো করে ভাবো!’

_______
অপরদিকে, অনন্যা আবারোও ফোন করতে চাইলে, গাড়ির হর্নে সে থেমে যায়। সে ছাদের রেলিং এ দাঁড়িয়ে দেখে, ফারিশ তার কালো গাড়ি থেকে বের হচ্ছে, অত:পর ছাদের উদ্দেশ্য রওনা হচ্ছে। ফারিশকে আসতে দেখে, কিছুটা শান্তি পেয়ে, নিজের স্টেজে বসে পরে অনন্যা। ফারিশকে দেখেই, মিষ্টি ‘বাপি ‘ বলে ছুটে গিয়ে, ফারিশকে জড়িয়ে ধরে। মিষ্টিকে কোলে নিয়েই, ফারিশ অনন্যার কাছে আসে। ফারিশকে দেখেই, ইরাশ প্রশ্ন করে, ‘ কই ছিলে ভাই?’

‘ আমি তো ভেবেছিলাম, আপনি হয়তো আজ আর আসবেনই না। ‘

ফারিশ কোনপ্রকার জবাব না দিয়ে, হলুদের বাটি থেকে সামান্য হুলুদ অনন্যার গালে আলতো করে ছুইঁয়ে দিতেই, অনন্যা চোখ বুজে ফেললো। ফারিশ অনন্যার কানে গিয়ে আলতো সুরে বললো, ‘ মিস অনন্যা, আমার জীবনের সমস্ত বিষাদের রেশ , আপনার আকাশে প্রণয়ের রংধনু হয়ে আসুক, শুভকামনা রইলো আপনার নতুন জীবনের জন্যে। ‘

অনন্যার আখিজোড়াতে জল, ফারিশেরও আখিজোড়া ছলছল হয়ে রয়েছে। এনা, ইরাশের কাছে গিয়ে বললো, ‘ অনন্যা আপুর হাব ভাব দেখে মনে হচ্ছে, সি আলসো লাভ ভাইয়া কিন্তু কেন আপু সব কিছু সয়ে যাচ্ছে?’

ইরাশ কোনপ্রকার উত্তর দেয় না। শুধু আলতো হাসে।

______________

অন্যদিকে, সকাল থেকে অনন্যাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। বাড়ি থেকে বউ পালিয়ে গেছে এমন একটা খবর রটানো হয়েছে। ফারিশও বুঝতে পারছে না অনন্যা হঠাৎ কোথায় গেলো? অনন্যার মায়ের অবস্হাও খারাপ, কোথায় তার মেয়ে? ফারিশের কাছে খবর পাওয়া মাত্রই সে ছুটে নিজের বাড়ি থেকে বের হতে নিলেই, দেখতে পায় সদর দরজায় বধু বেশে দাঁড়ানো…..

চলবে কী?

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে