প্রণয়ের রংধনু পর্ব-৪৬+৪৭

0
696

#প্রণয়ের_রংধনু
#পর্ব-৪৬
#Jannatul_ferdosi_rimi (লেখিকা)
অভি দ্রুত অনন্যার হাত শক্ত করে ধরে,মাথা নুইয়ের অনুনয়ের সুরে বলতে থাকে, ‘ আমি জানি অনন্যা, আমি এইবারও না জেনে, না বুঝে খুব বড় অন্যায় করে ফেলেছি। আসলে ব্যাপারটা বিশ্বাস কিংবা অবিশ্বাসের বিষয় নয়, আসল বিষয় হলো আমি তোমাকে নিয়ে বড্ড বেশি সিকিউয়র, তাই না চাইতেও আমি তোমাকে সংদেহ করে ফেলি, আমাকে দয়া করে ক্ষমা করে দাও।’
ফারিশ ক্ষুদ্ধ নয়নে, অভির দিকে তাকিয়ে আছে, সে অনন্যার হাত ধরায় তার অসহ্য রকমের এক বিশ্রি অনুভুতি হচ্ছে! ইচ্ছে করছে প*কেটে থাকা পি*স্তল খানা অভির মাথায় ঠু*কে দিতে। ‘একজন প্রেমিক হয়ে বারংবার নিজের প্রেমিকার চরিত্রে কলঙ্ক ছিটানো আদোও জেলাসির মধ্যে পরে মি: অভি? ‘ ফারিশের কথা শুনে, অভি থমকে গেলো।ফারিশের দিকে তাকিয়ে,অনন্যা নিজের হাত ছাড়িয়ে নিলো, অভির থেকে। অনন্যা কিছুটা পিছু হটে গিয়ে, অশ্রুসিক্ত নয়নে অভির দিকে তাকিয়ে অসহায় হয়ে বললো, ‘ আমি আজ সত্যিই ব্যর্থ একজন প্রেমিকা হিসাবে, যে নিজের প্রেমিকের বিশ্বাস কিংবা সম্মানটুকু পাওয়ার যোগ্য নয়। ‘
অভি হাত বাড়িয়ে, ফের গুটিয়ে নিয়ে বললো, ‘ আমি তো ক্ষমা চাইছি তো। ‘
অনন্যা তাচ্ছিল্য করে পুনরায় হাসলো, যেন অভি খুব সুন্দর করে কৈতুক সাজিয়ে বলছে। অত:পর অনন্যা নিজের আখিজোড়ার জল মুছতে মুছতে বললো, ‘ কিন্তু অভি! সত্যিই এইটাই, আমি এতোকিছুর পরেও তোমায় বিয়ে করবো। ‘
অনন্যার কথা শুনে, ফারিশ স্তব্ধ হয়ে যায়! সে অসহায় হয়ে প্রশ্ন করে, ‘ মিস অনন্যা! আপনি এতোকিছুর পরেও এমন একজন লোককে বিয়ে করবেন? যে আপনাকে না করে সম্মান, না করে বিশ্বাস! এতো কিছু জেনেও আপনি বিয়েটা করবেন?’
‘ হ্যা, করবো। ‘
অনন্যার উত্তরে খুশিতে দিশাহারা হয়ে, অভি অনন্যার গালে হাত দিয়ে বলে, ‘ আই প্রমিসড ইউ মাই ডার্লিং! আর কখনো তোমাকে আমি হতাশ করবো না। আমি নিজের সর্বোচ্চটা দিয়ে, তোমায় ভালো রাখার চেষ্টা করবো। ‘
অনন্যা অভির হাত সরিয়ে, কঠিন গলায় বললো, ‘ তুমি আজকের মধ্যেই গাঁয়ে হলুদের আয়োজন করো অভি। কালকের মধ্যেই আমি বিয়েটা সেরে ফেলতে চাই। যদি দেরী করো, তাহলে আমাকে হারানোর জন্যে প্রস্তুত থাকো। ‘
অনন্যার কথা শুনে উপস্হিত সকলে অবাক হয়ে যায়,সবথেকে বেশি অবাক হয় ফারিশ, কি করছে অনন্যা? তবে কি কালকেই হারিয়ে ফেলবে সে তার মিস অনন্যাকে? ফারিশের মস্তিষ্ক কাজ করছে না। অভিও অবাক হয়ে প্রশ্ন করে বলে, ‘ কিন্তু এক দিনের মধ্যে এতো আয়োজন কীভাবে সম্ভব? ‘

‘ তা আমি জানিনা, আমি মাকে ফোন করে বলে দিচ্ছি। আমি রেডি হয়ে নিচ্ছি, তুমি আমায় বাসায় পৌঁছে দিবে। আমার আবার সন্ধ্যায় গাঁয়ে হলুদের জন্যে রেডি হতে হবে, তাছাড়া মি: খান আমাদের বিয়ের দায়িত্বে আছেন, আমি জানি উনি কম সময়েই সব আয়োজন করতে পারবেন। তাইনা মি: ফারিশ খান?’

ফারিশ হাত মুঠো করে দাঁড়িয়ে আছে, তার মুখে নেই কোন জবাব। ইয়ানা এগিয়ে এসে বললো, ‘ আমার ভাইয়া কেন তোমার বিয়ের আয়োজন করতে যাবে? তুমি কি জানো না ভাইয়ার কষ্ট…’
ইয়ানার সম্পূর্ন কথা শেষ হওয়ার পূর্বেই, ফারিশ বলে উঠে, ‘ হ্যা, আমি আমার কোন কষ্ট হবেনা, আমি সব ম্যানেজ করে নিবো। ‘

অনন্যা সৌজন্যমূলক হাসি দিয়ে, উপরে চলে গেলো তৈরি হতে। এতোকিছুর মাঝেও জুঁইয়ের যেন খুশির অন্ত নেই, সে খুশি কারণ অবশেষে তার এবং ফারিশের মাঝে পথের কাটা চলে যাচ্ছে। এখন ভালোই, ভালোই বিয়েটা হয়ে গেলেই, তার কোন চিন্তা নেই। অভিও বাইরে চলে যায়, গাড়ি বের করার জন্যে। ফারিশ কী ভেবে যেন নিজেও অনন্যার পিছনে পিছনে রুমে চলে আসলো, সেখানে অনন্যা মিষ্টিকে কী যেন বলছিলো, ফারিশ চলে আসায় সে থেমে যায়। ফারিশ মিষ্টিকে দেখে বলে, ‘ মা, তুমি একটু বাইরে যাও। আমার তোমার মিষ্টি মায়ের সাথে কিছু কথা আছে। ‘
মিষ্টি বাধ্য মেয়ের মতো ঘরের বাইরে চলে যেতেই, ফারিশ অনন্যার কাছে গিয়ে কিছুটা শান্ত গলায় বললো, ‘ আপনি ওই লোকটাকে একদম বিয়ে করবেন না, মিস অনন্যা। উনি আপনাকে একটুও সম্মান করে না, আপনাকে সে বিশ্বাসই করে না। এমন একটা মানুষটাকে আপনি কী করে বিয়ে করার কথা ভাবছেন?’

অনন্যা ব্যাগ গুছাতে গুছাতে বললো, ‘ যাই হোক, অন্তত সে তো আমাকে ভালোবাসে। ‘

ফারিশ দ্রুত বলে উঠে, ‘ উহু একদমই নয়। কালকে অবদিও আমার মনে হতো অভি হয়তো আপনাকে অনেক ভালোবাসে, আপনাকে অনেক সুখে রাখবে কিন্তু সে আপনাকে ভালোবাসে না, আপনি তার জেদে পরিনত হয়েছেন, যাকে সে যেকোন মূল্যে পেতে চায়। ভালোবাসলে কেউ এইভাবে বারংবার অপমান করতে পারতো না!’

‘ তবে কি আপনি আমায় ভালোবাসেন মি: ফারিশ খান?’

অনন্যার এমন প্রশ্নে থেমে গেলো ফারিশ। অনন্যা আশাভরা নয়নে ফারিশের দিকে তাকিয়ে আছে। ফারিশ ‘ আসলে.. আমি! ‘ বলতে গিয়ে থেমে গিয়ে, পুনরায় বলে উঠলো, ‘ কিন্তু আপনি কালকে বিয়ের আসরে বসলে, মিষ্টির মনের অবস্হা কেমন হবে? সে আপনাকে নিজের মায়ের আসনে বসিয়েছে, তার মনের উপর কিরুপ প্রভাব পরবে। ‘

অনন্যা মুচকি হেসে, মিষ্টিকে ডাক দিয়ে বলে, ‘ মা, তুমি কোথায়?’

মিষ্টি দ্রুত ব্যাগ গুছিয়ে, ফারিশের কাছে এসে বায়না করে বলে, ‘ বাবা, আমি আজকে নানু বাসায়, মায়ের সাথেই থাকবো। কালকে মায়ের বিয়ে। আমি সো এক্সাইটেড! আমি নিজে আমার মায়ের বিয়ে দেখবো, ব্যাপারটা কতটা ইন্টারেস্টিং!’

মিষ্টির কথা শুনে, ফারিশ যেনো আকাশ থেকে পরে। অনন্যা ফারিশের দিকে তাকিয়ে বলে, ‘ মিষ্টিকে নিয়ে অন্তত চিন্তা করবেন না, আমি ওকে ভালো করে বুঝিয়ে দিয়েছি, তাছাড়া আমার মেয়েও যথেষ্ট বুঝদার। ‘

ফারিশ অসহায় হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। অনন্যা, মিষ্টিকে কোলে নিয়ে চলে যায়। তারা চলে যেতেই, ফারিশ তার পাশে থাকা ফুলের বাস্কেট তা ছুড়ে ফেলে, টুকরো টুকরো করে ফেলে এবং সোফায় চুল খামচে বসে পরে।এনা, ইয়ানা এবং ইরাশ দ্রুত ফারিশের কাছে যায়। ইরাশ ফারিশের কাধে হাত রেখে বলে, ‘ ভাই! কি হয়েছে তোমার? তুমি ঠিক আছো তো?’

‘ আর কত যন্তনা তুমি বয়ে বেড়াবে ভাইয়া? তুমি না বললেও, আমরা বুঝতে পারি তুমি অনন্যা আপুকে কতটা ভালোবাসো। ‘

ইয়ানার কথার প্রতিউত্তরে, ফারিশ ভাঙ্গা গলায় জবাব দিলো, ‘ অথচ একজন মানুষই বুঝে উঠতে পারলো না। ‘

‘ কীভাবে বুঝবে ভাইয়া? তুমি তো একবারও অনন্যাকে আপুকে তোমার মনের কথা বলো নি। কালকে আপুর বিয়ে! তুমি তাকে আজীবনের জন্যে হারাতে চাইছো। ‘

এনার কথায় সায় দিয়ে, ইরাশও ফারিশকে বুঝানোর জন্য বলে, ‘ দেখো ভাই, আমি যেই ভুলটা করেছি, তুমি তা করো না। আমি আমার ভালোবাসার মানুষ ইশিতাকে হারিয়েছি নিজের পরিবারের জন্যে, আজ সে আমার উপর অভিমান করে, এতোটাই দূরে সরে গিয়েছে, তাকে এখন চাইলেও আমি আমার জীবনে আর ফিরে পাবো না, তুমিও সেই ভুল করো না ভাই। ভালোবাসা একবার হারিয়ে গেলে, তাকে ফিরিয়ে আনার সাধ্য কখনোই পাবে না, তুমি। ‘

_______________

গাঁয়ে হলুদের সাঁজে অনন্যা আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। সাদা কাঠ গোলাপ ফুলের সাঁজে, সাদা শাড়িতে অপরুপ সুন্দর দেখাচ্ছে। হলুদের অনুষ্টানে তার সাদা শাডি পরা নিয়ে, সকলের কৌতহূল থাকলেও, কেউ তা নিয়ে মাথা ঘামায়নি, কারণ সকলে তার সৌন্দর্যের প্রশংসায় মুখোর। তার বন্ধুরা তাকে সাঁজিয়ে, বাইরে স্টেজে চলে গেলো। অনন্যা একটু পর যাবে। মিষ্টিও বাইরে সকলের সঙ্গে আনন্দ করছে। এতোকিছুর মাঝেই, হঠাৎ ফারিশ এসে দরজা লাগিয়ে দেয়। ফারিশকে দেখে অনন্যা উঠে দাঁড়ায়। ফারিশের গাঁয়ে ফরমাল সাদা শার্ট কিন্তু উপরের দুই- তিনটে বোতাম খোলা থাকায়, তার লোমহীন বুক স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে, মাথা উষ্ককষ্ক! চোখে সেই গম্ভীর টাইপ মোটা ফ্রেমের চশমা, তাই ফারিশের আখিজোড়ায় থাকা বিচ্ছেদের গভীর এক কষ্ট স্পষ্ট টের পাচ্ছে অনন্যা। ফারিশ খুড়াতে খুড়াতে, অনন্যার গাল চেপে ধরে বলে, ‘ অপূর্ব! আপনাকে বড্ড সুন্দর লাগছে মিস অনন্যা। আমার পছন্দের সাদা শাড়িটাও পরেছেন দেখি। ‘

অনন্যা কিছুটা বিব্রত হয়ে প্রশ্ন করলো, ‘ আপনি ড্রিংক করেছেন মি: ফারিশ খান?’

ফারিশ হেসে উত্তর দেয়, ‘ করেছি একটু আকটু! সেসব কথা বাদ! আপনি কিন্তু কিছুতেই বিয়েটা করবেন না।’

‘ কেন করবো না, আমি বিয়ে? আপনি আমাকে নিষেধ করার কে?’

কিছুটা চেচিয়ে প্রশ্ন করলো অনন্যা। ফারিশ আবারোও অনন্যার গালে হাত দিয়ে চেপে বললো, ‘ হ্যা, কারণ আমার অধিকার আছে আপনার প্রতি। সেই অধিকার আপনি আমায় না দিলেও, আমি তা ফলাবো। আমি ফারিশ খান। আপোষ করতে আমি শিখি নি! ছোটবেলা থেকে কাছের মানুষদের হারাতে হারাতে এই পর্যন্ত এসেছি, জীবনের এমন পর্যায়ে এসে, আমি আপনাকে হারাতে পারবো না, মিস অনন্যা। ‘

কথাটি বলেই ছোট্ট শিশুর ন্যায় কেঁদে ফেলে ফারিশ। অনন্যার বুকটা কেঁপে উঠে, মানুষটা আজ কাঁদছে? কতটা অসহায় হলে, একজন পুরুষ কেঁদে ফেলে? অনন্যা হাটু গেড়ে, ফারিশের দিকে তাকিয়ে বললো,
‘ আপনি কাঁদছেন মি: খান? আমি কে? যার জন্যে আপনার আখিজোড়ায় আজ অশ্রু। ‘
ফারিশ মুচকি হেসে জবাব দিলো, ‘ আমার হৃদপিন্ডের প্রতিটি স্পন্দনের এক একটি সুপ্ত অনুভুতি আপনি। ‘

চলবে।।

#প্রণয়ের_রংধনু
#পর্ব-৪৭
#Jannatul_ferdosi_rimi (লেখিকা)
ফারিশ অনন্যার বুকে মাথা রেখে গভীর এক নি:শ্বাস ফেললো। অনন্যা শিউরে উঠলো। অনন্যা কম্পিত গলায় বিড়বিড়িয়ে বলতে লাগলো, ‘ কী করছেন কি মি: খান? আপনি সরে দাঁড়ান প্লিজ! কেউ এসে পরলে সমস্যা হবে?’
‘ আমি আসলে একটা হিসাব কষছি। ‘
অনন্যা কেঁপে কেঁপে বলে, ‘ কিসের হিসাব?’
‘ আমার হৃদপিন্ড আপনার নামে যতবার কম্পিত হয়, আপনার হৃদপিন্ডেও কি ঠিক ততবার কম্পিত হয় আমার নাম?’
অনন্যা থেমে যায়। ফারিশ হঠাৎ অনন্যার গালে আলতো করে চুমু খেয়েই, সরে যায়! অনন্যা এক মুহুর্তের জন্যে স্তব্ধ হয়ে ফারিশের দিকে বড় বড় নয়নে তাকিয়ে থাকে কিন্তু ফারিশ তার দিকে তাকিয়ে মুচকি মুচকি হাসছে, যেন অনন্যার এমন বিষ্ময়কর মুখস্রী তার বড্ড ভালো লাগছে। অনন্যা তোতলিয়ে বলে উঠে,
‘ আপ…নি কী করলেন এইটা?’
‘ কেন আবার করে দেখাতে হবে?’
ফারিশের এমন কথা শুনে লজ্জা পেয়ে, অনন্যা মাথা নুইয়ে ফেলে। ফারিশ মুগ্ধ গলায়, গালে হাত রেখে বলে,
‘ আপনি কি লজ্জা পাচ্ছেন মিস অনন্যা? আপনি কি জানেন? লজ্জা পেলে, আপনায় বড্ড স্নিগ্ধ লাগে! এন্ড ইউ নো ওয়াট? আই জাস্ট লাইক দিজ। হা হা ‘
বলেই উচ্চস্বরে হেসে উঠে ফারিশ। অনন্যা ফারিশকে হাত ধরে বিছানায় বসিয়ে দিয়ে বলে, ‘ চুপ! আর একটা কথাও নয়। আপনি ড্রিংক করেছেন ভালো কথা! কিন্তু এতো ওভারলোড করেছেন কেন? মিষ্টি দেখলে কি ভাব্বে হ্যা?’
ফারিশ হাত ভাজ করে গম্ভীর মুখে শুধায়, ‘ আমার কষ্ট লাগছিলো তাই ড্রিংক করেছি। ‘
অনন্যা গালে হাত রেখে প্রশ্ন করে,
‘ তা কিসের এতো কষ্ট আপনার মি: ফারিশ খান?’
‘ আপনি কি কিছুই বুঝেন না?’
‘কি বুঝবো?’
‘ আপনি অন্য কারো হয়ে গেলে যে আমার বড্ড কষ্ট লাগবে! আমার জাস্ট সহ্য হচ্ছে না এই জীবনে মায়ের পরে, আমার মেয়ের পরে, আপনাকে সবথেকে বেশি আপন মনে হয়েছে মিস অনন্যা। আপনিও যদি আমাকে ছেড়ে চলে যান, আমি বড্ড ভেঙ্গে পরবো। প্লিজ ট্রাই টু আন্ডারস্ট্যান্ড! ‘
ফারিশ অনন্যার হাত ধরে, মাথা ঠেকিয়ে বড় বড় শ্বাস ফেলে। অনন্যা ফারিশকে সামলিয়ে বলে, ‘ আপনি থাকুন, আমি এখুনি আসছি। ‘

কথাটি বলেই অনন্যা বেড়িয়ে যেতেই, লক্ষ্য করে দরজায় কেউ কড়া নাড়ছে। অনন্যা ‘ কে ‘ বলতেই, অপরপাশ থেকে ইয়ানা বলে উঠে, ‘ অনন্যা আপু, আমি ইয়ানা। ভাইয়া কি তোমার ঘরে?’

অনন্যা দ্রুত দরজা খুলতেই, ইয়ানা হুড়মুড়িয়ে ঘরে প্রবেশ করে। ইয়ানা ফারিশকে দেখে বলে, ‘ ভাইয়ার কি হয়েছে? ভাইয়া এমন করছে কেন?’
‘ তোমার ভাই ড্রিংক করে এসেছে। ‘

‘ সে কি কেন?’
‘ কারণ সে বর্তমান যুগের দেবদাস! আমি বরং লেবুর সরবত নিয়ে আসি৷ তুমি তোমার ভাইয়ের কাছে থাকো, মিষ্টিকে উনাকে এই অবস্হায় দেখে ফেললে সমস্যা হবে। তাছাড়া একটু পরেই, অনুষ্টান শুরু হবে। ‘

অনন্যা চলে যেতেই, ফারিশ ইয়ানার দিকে অসহায় নয়নে তাকিয়ে বলে, ‘ দেখলি? মিস অনন্যা ঠিক কতটা স্বার্থপর একজন মহিলা! এতোকিছুর পরেও ঢ্যান ঢ্যান করে, ওই অভি শিকদারকেই বিয়ে করবেন। যে মানুষটা উনাকে একদমই আমার কষ্টের কোন মূল্যই উনার কাছে নেই। ‘

ইয়ানা হঠাৎ ফুপিয়ে কেঁদে ফেললো। ফারিশ উঠে দাঁড়িয়ে, ইয়ানার চোখের জল মুছিয়ে, হাল্কা হেসে বললে, ‘ কিরে পাগলি? তুই আবার কাঁদছিস কেন?’
‘ তুমি অনন্যা আপুকে খুব ভালোবাসো তাইনা? আর তুমি আপুকে মিথ্যে বললে কেন? তুমি তো একটুও ড্রিংক করো নি। ‘

‘ তুই বুঝলি কি করে?’

‘ আমি তোমার বোন ভাইয়া, আমি না বুঝলে, কে বুঝবে?’

ফারিশ ফিসফিসিয়ে বললো, ‘ কিছু মনের কথা জমা ছিলো, তা বলার সময়টুকু যে আজই ছিলো। আজ যদি বাহানা দিয়ে না আসতাম, তবে যে নিজের প্রিয় মানুষটাকে বলাই হতো না, কতটা জায়গা জুড়ে আছে সে আমার অস্তিত্বে। ‘

ইয়ানা মাথা নিচু করে বিড়বিড়িয়ে বলতে লাগলো, ‘ ভাইয়া দেখো, আমি তোমার ভালোবাসাকে তোমার থেকে দূরে যেতে দিবো না। কেউ তোমার ভালোবাসাকে কেড়ে নিতে পারবে না, অন্তত অভি শিজদার তো নয়ই!’

ইয়ানার ভাবনার মাঝেই, ফারিশের ফোন বেজে উঠে। ফারিশ ফোনটা পেয়ে, কেটে দিয়ে, পকেটে রেখে, ইয়ানার দিকে তাকিয়ে বলে, ‘ আমাকে একটা ইম্পোর্টেন্ট কাজে এখুনি যেতে হবে। ‘

‘ কিন্তু কোথায় ভাইয়া?’

‘ আছে একটা অফেসিয়ালি কাজ। তুই বরং এদিকে সামলা, আমি এখুনি আসছি। ‘

‘ কিন্তু ভাইয়া?’
ইয়ানার কথা শেষ হওয়ার পূর্বেই, ফারিশ বেড়িয়ে চলে যায়। ফারিশ চলে যেতেই, লেবুর পানি নিয়ে অনন্যা ভিতরে প্রবেশ করে বলে, ‘ ইয়ানা, তোমার ভাই কোথায়?’

‘ আসলে, ভাই তো একটু বেড়িয়েছে। ‘

‘ কিন্তু এমন অবস্হায় উনি কোথায় বেড়িয়ে গেলেন?’

ইয়ানা অনন্যার হাত থেকে গ্লাস টা নিয়ে, টেবিলে রেখে বলে, ‘ ভাইয়ের নেশা কেটে গেছে, সেসব ছাড়ো! বাইরে সকলে তোমার জন্যে অপেক্ষা করছে, তুমি আমার সাথে চলো তো!’ ‘

______________

রুমা খান সোফায় বসে ছিলেন, খালেদ খান এবং রেশমি খান বাইরে থেকে এসে কেবলমাত্র বাড়িতে ঢুকেছেন, তারা হসপিটালে আরশকে দেখতে গিয়েছিলেন।রুমা খান বসা থেকেই প্রশ্ন করলেন, ‘ আরশ কেমন আছে এখন?’
খালেদ খান কিছু বলার আগেই, রেশমি খান ক্ষোভ নিয়ে উত্তর দেন, ‘ তা জেনে আপনি কি করবেন মা? আপনার নাতি বলতে তো ইরাশ এবং ফারিশ এই দুজনেই! আমার ছেলেটা ম/রে গেছে নাকি বেঁচে আছে, সেদিকে কি আপনার আদোও কোন চিন্তা আছে? আপনি তো তাকে আর একটিবারও দেখতে ছুটে যান নি হসপিটালে।’

‘ সে তার কর্মের ফল পেয়েছে এবং আমি মনে করি এইটা তার জন্যে প্রয়োজনীয় ছিলো। এই শাস্তি এইবার তাকে মানুষ হতে সাহায্য করবে, যা আমি বা তোমরা কেউই করতে পারেনি। ‘

রেশমি খান চুপ হতেই, খালেদ খান বলে উঠেন, ‘ আরশ এখন ভালো আছে মা, কেবিনে শিফট করা হয়েছে তবে অক্সিজেন চালু আছে। আর মাত্র ৭-৮ দিনের মধ্যেই ওকে রিলিজ দিবে। ‘

‘ যাক, ভালো!’

তাদের কথোপকথের মাঝেই, রাশেদ খান ক্লান্ত হয়ে বাড়িতে ফিরে, সোফায় বসলেন। রাশেদ খান সোফায় বসে, হাতের ঘড়িটা খুলতে খুলতে বললেন,

‘ ডিভোর্সের এপ্লাই করে এসেছি, আশা করি খুব তাড়াতাড়ি ওই মহিলার সাথে ডিভোর্সটা হয়ে যাবে আমার। আমার জয়ার খুনিকে আমি জাস্ট সহ্য করতে পারছি না। ‘

‘ শুধু কি তারাই দায়ী? তুমি কি নও রাশেদ?’

রুমা খানের কথা শুনে রাশেদ খান মাথা নুইয়ে বলে, ‘ আমি সবথেকে বড় অপরাধী! জানি সেই অপরাধের কোন ক্ষমা নেই। ‘

রুমা খান সুদীর্ঘশ্বাস ফেললেন।
‘ মা ! আমি শুনেছি, অনন্যার আজ গাঁয়ে হলুদ, কাল বিয়ে, তা কী সত্যি? ‘

‘ হুম, সত্যি! বাড়ির ছোটরা তো সেখানেই গিয়েছে।’

‘ কি বলছো মা! তাহলে আমার ছেলের কি হবে মা?’

‘ বাবাহ! আজকাল তুমি আবার ফারিশকে নিয়েও চিন্তা করছো? বিষয়টি সত্যিই আশ্চর্যজনক! ‘

মায়ের তাচ্ছিল্যের বিপরীতে, রাশেদ খান নিচু গলায় বললেন,

‘ আমি তো ওর বাবা, আমি জানি। আমার ছেলেটা ঠিক কতটা ভালোবেসে ফেলেছে অনন্যাকে। ওর চোখের ভাষা স্পষ্ট তা বলে দেয়।আমার ছেলেটা ছোট বেলায় তার মাকে হারিয়েছে, আমার দোষে। আমি থেকেও তার পাশে ছিলাম না। সব হারিয়ে,সে যখন তার ভালোবাসার মানুষটিকে পেলো, সে ও তাকে ফেলে চলে যাবে মা? আমার ছেলেটা তখন কি আকড়ে ধরবে মা?’

রুমা খানের আখিজোড়ায় অশ্রু টলটল করতে থাকে। তিনি তা দ্রুত মুছে, সোফায় হেলান দিয়ে, বসে পরলেন। এমন উত্তর যে তার কাছেও নেই।

________________

অপরদিকে
, হাত- পা বাঁধা অবস্হায় অন্ধকার এক রুমে বসে আছে জুঁই! সে বুঝতে পারছে না, সে এখানে কীভাবে আসলো? বাড়ি থেকে বেড়োবার সময়,পিছন থেকে কেউ তার মুখ চেপে ধরায় সে অজ্ঞান হয়ে পরে এবং জ্ঞান ফিরে আসলে, সে নিজেকে এমন জায়গায় আবিষ্কার করে। জুঁইয়ের ভাবনার মাঝেই, কেউ পিছন থেকে শীতল গলায় বলে উঠে, ‘ হ্যালো, জুঁই ডার্লিং!’

সেই কন্ঠে থমকে যায় জুঁই। তার থেকে সবথেকে বেশি অবাক হয়, সামনে থাকা হুইলচেয়ারে থাকা আরশকে দেখে। একজন নার্স তার মুখে অক্সিজেন মাস্ক দিয়ে রেখেছে। জুঁই বিড়বিড়িয়ে বলে, ‘ ফারিশ?’

চলবে কী?

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে