প্রণয়ের রংধনু পর্ব-৪৪+৪৫

0
725

#প্রণয়ের_রংধনু
#পর্ব-৪৪
#Jannatul_ferdosi_rimi (লেখিকা)
জুঁই পিছন থেকে ফারিশকে জড়িয়ে ধরে,কাঁদতে কাঁতে বলে, ‘ ফারিশ আমি সত্যিই পারছি না, আর কত শাস্তি দিবে আমাকে বলো তো? আমি জানি, আমিও অন্যায় করেছি কিন্তু এইসব কেন করেছি আমি? শুধু তোমাকে ভালোবেসে। প্লিয ট্রাই টু আন্ডারস্ট্যান্ড! ‘
ফারিশ নিজের থেকে জুঁইকে একপ্রকার ধাক্কা দিয়ে, সরিয়ে হুংকার ছেড়ে বলে, ‘ হাও ডেয়ার টু টাচ মি? তোমার কি আদোও কোন লজ্জা নেই? এতো গাঁয়ে পরা স্বভাব কেন তোমার? দেখো আমাকে রাগিও না। নিজের ভাইকে আমি আধমরা করে হসপিটালে পাঠিয়েছি, সেখানে তোমার কি অবস্হা হতে আশা করে, তুমি বুঝতে পেরেছো?’জুঁই ফারিশের কথা শুনে, কিছুটা পিছনে চলে যায়। তাদের কথার মাঝেই, হঠাৎ অনন্যা মিষ্টিকে কোলে নিয়ে ঢুকে পরে। অনন্যাকে দেখেই জুঁই তেতিয়ে বলে উঠে, ‘ তোর কী কোন সেন্স নেই অনন্যা? দেখছিস আমি এখানে ফারিশের সাথে প্রাইভেট কথা বলছি, তুই সেখানে কোন প্রকার পারমিশন ছাড়াই ঢুকে গেলি।’
জুঁইয়ের কথা শুনে, মিষ্টি কোমরে হাত দিয়ে বলে,’ এইযে ব্যাড আন্টি মিষ্টির মা এখানে মিষ্টির জেদের জন্যে এসেছে। বিকজ মিষ্টির তার বাপির সাথে ইম্পোর্টেন্ট কথা আছে। বুঝেছো? আমার মিষ্টির মায়ের অনেক মেনার্স আছে, বকতে হলে, তুমি আমাকে বকো। ‘

জুঁই মুখ ঘুড়িয়ে ফেললো। ফারিশ কি ভেবে যেন প্রশ্ন করে উঠে, ‘ ওয়ান মিনিট! তুমি এখনো এই বাড়িতে কি করছো? তোমাকে আমি সবার সামনে বাড়ি থেকে বের করে দিলাম, তাতেও তোমার বিন্দুমাত্র কি লজ্জা হয়নি? আবারোও কী করে এই বাড়িতে পরে আছো?’

মিষ্টি মুখে হাত দিয়ে হেসে বললো, ‘ এমা! এই জুঁই আন্টির সত্যিই লজ্জা নেই। ‘

মিষ্টির কথা শুনে, অনন্যাও মুচকি হেসে ফেলে। জুঁই নিজের রাগটাকে যথাসম্ভব নিয়ন্ত্রন রেখে বলে,
‘ আমি তো আসতে চাইনি, কিন্তু খালার যা অবস্হা! ছেলেটা তার হসপিটালে, এমন অবস্হায় আমি তাকে কীভাবে ফেলে চলে যেতে পারি? তোমরা আমাকে খারাপ ভাবতে পারো কিন্তু আমি তোমাকে আই মিং তোমাদের সবাইকেই ভালোবাসি। ‘

অত:পর জুঁই মিষ্টির মাথায় হাত বুলিয়ে বলে, ‘ এমনকি আমি আমার মিষ্টি সোনাকেও অনেক ভালোবাসি। একদম নিজের সন্তানের মতো। ‘

মিষ্টি তড়িৎ গতিতে জুঁইয়ের হাত সরিয়ে দিয়ে, অনন্যার গলা জড়িয়ে বলে, ‘ আমি শুধু আমার মায়ের এবং বাবার সন্তান। তোমার মতো ব্যাড আন্টির না। তুমি আমাকে কচু ভালোবাসো, বাপি যখন থাকতো না, তখন কি আমাকে কম বকতে নাকি? ‘

মিষ্টির কথা শুনে জুঁইয়ের মুখস্রী কালো অন্ধকারে ঢেকে যায়। অনন্যার মিষ্টির হাত ধরে বলে, ‘ মা, উনি বড় না? এমনভাবে বলতে নেই। ‘

জুঁই দ্রুত বেড়িয়ে যায় সেখান থেকে। জুঁই চলে যেতেই, ফারিশ মুচকি হেসে মিষ্টিকে কোলে নিয়ে বলে,

‘ এখন কেমন লাগছে মা? ‘

‘ ভালো লাগছে বাপি। আচ্ছা শুনো, আমরা সবাই শপিং এ যাবো, তোমাকে কিন্তু আমাদের নিয়ে যেতে হবে। ‘

‘ কিন্তু কিসের শপিং?’

অনন্যা মুচকি হেসে বললো,
‘ এমা আপনি জানেন না? একটু আগেই তো বললাম আপনাকে। আমার বিয়ের…

সমপূর্ন কথা শেষ করার পূর্বেই, ফারিশ কিছুটা বিরক্ত হয়ে, মিষ্টির দিকে তাকিয়ে বলে,

‘ কিন্তু মা, এখন তুমি অসুস্হ, এই অবস্হায় তোমার শপিং এ যাওয়া ঠিক নয়। ‘

অনন্যা ফারিশের কথার বিপরীতে বললো, ‘ এই সময়ই ঠিক। এই টাইমে বাচ্চারা বাইরে ঘুডা-ফেরা করলে, মন-মাইন্ড একদম ফ্রেশ থাকবে। এই টাইপে শরীর যেমন সুস্হ থাকা দরকার, তেমনি দরকার মাইন্ড ফ্রেশ করা। তাছাড়া বাড়ির যা পরিস্হিতি। এই অবস্হায় সকলের বাইরে একটু ঘুড়াঘুড়ি করা প্রয়োজন। ইয়ানা আপু, এনা আপু এবং ইরাশ ভাইয়াও যাচ্ছে। আমি তাদের বলে এসেছি। শপিংও হবে, ঘুডাঘুড়িও হবে।

ফারিশ মুখটা শুকনো করে জবাব দেয়, ‘ তাহলে আপনারা যান, আমি ঘুডাঘুড়ি ভালো লাগে। আই জাস্ট ডোন্ট লাইক ট্রাভেলিং!’

অনন্যা বিড়বিড়িয়ে বলে, ‘ এইযে খারুশ হাজির, তার বিশ্ববিখ্যাত ডায়লগ নিয়ে। ‘

ফারিশের কথা শুনে মিষ্টি বায়নার সুরে বলে, ‘ না, বাপি তোমাকে আমাদের সঙ্গে যেতেই হবে। আজকে আমি আমার মা এবং বাপি দুজনেরই সাথে ঘুড়বো। ‘

‘ কিন্তু মা?’

রুমা খান পিছন থেকে এসে বললেন, ‘ ফারিশ দাদুভাই, তখন থেকে কিসের কিন্তু কিন্তু করে যাচ্ছো। আমার মিষ্টির আবদার তুমি পূরণ করবে আর কিচ্ছু আমি শুনতে চাইনা। ‘

________________

ফারিশ, মিষ্টি, অনন্যা, এনা, ইরাশ এবং ইয়ানা গাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে আছে। এক গাড়িতে ঠিক করা হলো ফারিশ, মিষ্টি, অনন্যা এবং ইরাশ যাবে এবং অন্য গাড়িতে ইয়ানা এবং এনা যাবে। ইরাশ বললো, ‘ তোদের সাথে আমিও আসি ওই গাড়িতে? ‘

‘ আরে ভাইয়া, তুমি মিষ্টির সাথেই বসো। তাছাড়া শফিক ভাই ও তো আছে। ‘

এনার কথা শুনে ফারিশ ভ্রু কুচকে দেখে, সাদা শার্ট পরিহিত তার ম্যানেজার শফিক ও এসে উপস্হিত! ফারিশ প্রশ্ন করে, ‘ শফিক তুমি এখানে হঠাৎ কেন?’

শফিক কিছু বলার আগেই, এনা নিজে থেকেই বলে উঠে, ‘ আসলে ভেবেছিলাম শফিক ভাই থাকলে ভালো হয়, অনেকগুলো ব্যাগ থাকবে তো, উনি আমাদের হেল্প করতে পারবেন। ‘

‘ তার জন্যে তো বডিগার্ড আছে এনা। ‘

ইরাশের কথায় শফিক কিছুটা ঘাবড়ে গিয়ে বলে,

‘ হ্যা, হ্যা। আমি তাহলে যাই। ‘

শফিকের কথা শুনে এনার মাথায় হাত! মানুষটা এতো বোকা কেন? এনা শফিককে চোখের ইশারায় দাঁড়াতে বলে এবং কিছুটা মেকি রাগ দেখিয়ে বলে,

‘ ভাইয়ার ওই কাইল্লা পোষাক পরা গার্ডদের শপিং এ একদম নেওয়া যাবে না। আশে-পাশের সাধারণ মানুষ দেখলে ঘাবড়ে যাবে। ‘

ইয়ানা তৎক্ষনাৎ মুচকি হেসে বলে, ‘ এনার কথায় যুক্তি আছে। আচ্ছা তোমার ভাইয়ার গাড়িতে যাও। ওই গাড়িতে, আমি শফিক ভাই এবং এনা আসছি। ‘

অনন্যা হয়তো কিছুটা আন্দাজ করতে পেরেছে, তাই সে নিজেও মুচকি হেসে, মিষ্টিকে কোলে করে গাড়িতে বসালো। মিষ্টিকে গাড়ি বসাতেই, মিষ্টি ইরাশের পাশে ঘেসে বললো, ‘ মা, তুমি সামনে বসো। এখানে আমি আমার চাচ্চুর সাথে বসবো। ‘

ইরাশ মিষ্টির কথা শুনে, তার গালে চুমু খেলো। ফারিশ ফ্রন্ট সিটে বসেছিলো, অনন্যাঅ গিয়ে তার পাশের সিটে বসে পরে কিন্তু সে তার সিট বেল্ট পরেনি। ফারিশ হঠাৎ মিরর গ্লাসের দিকে তাকিয়ে বলে,

‘ সিট বেল্ট টা লাগিয়ে পড়ুন। ‘

‘ আমার ইচ্ছে করছে না, আমি পারবো না। ‘

ফারিশ ক্ষেপে গিয়ে, অনন্যার কাছে গিয়ে, অনন্যার সিটে এক হাত রেখে, অন্য হাত দিয়ে সিট বেল্টটা লাগিয়ে দিয়ে, বসে পরো। ইরাশ স্মিত হেসে ফেলে। অনন্যা কিছুটা ঘাবড়ে গিয়ে, তার চুল কানের কাছে গুজে নেয়।

___________

অপরদিকে, অভি অফিসের উদ্দেশ্য রওনা হচ্ছিলো, তখনি তার নাম্বারে জুঁইয়ের ফোন আসে। অভি প্রথমে ভেবেছিলো ধরবে না কিন্তু কি ভেবে যেনো ফোনটা রিসিভ করে বললো, ‘ হ্যালো?’

‘ হ্যালো, অভি তুমি কোথায়?’

‘ আমি আসলে, অফিসের দিকে যাচ্ছিলাম ‘

‘ তুমি অফিসে যাচ্ছো? অথচ ওইদিকে অনন্যা ঘুড়তে বেড়িয়েছে ফারিশের সাথে। ‘

‘ ওয়াট? ‘

‘ হ্যা, তোমার সাথে সে বিয়ের শপিং এ যাইনি অথচ ফারিশ খানের হাত ধরা নাচতে নাচতে শপিং করতে বেড়িয়ে গেছে। ‘

‘ চুপ করো জুঁই! ‘

‘ আমি কেন চুপ করবো? তুমি নিজের বাগদত্তাকে সামলাও, এক সপ্তাহ পর তোমাদের বিয়ে অথচ সে পরপুরুষের সাথে রংঢং করে বেড়াচ্ছে। ‘

জুঁইয়ের কথা শুনে অভি রাগে ফোনটা কেটে দেয়! অনন্যা তার সাথে শপিং এ না গিয়ে, কেন ফারিশ খানের সাথে শপিং এ গেলো? এমনকি ফারিশের মেয়ের জন্যে রাতে ছুটে অবদি চলে গেলো! অনেক আজে বাজে চিন্তা অভির মাথায় ঘুড়পাক খাচ্ছে। না চাইতেও অনন্যার প্রতি তার সংদেহ বাড়ছে!

__________

অন্যদিকে রাস্তার বেশ জ্যামের জন্যে অনেক্ষন যাবৎ গাড়ি থামিয়ে বসে আছে ফারিশ। মিষ্টি ক্লান্ত হয়ে ইরাশের কোলেই ঘুমিয়ে আছে। অনন্যা গালে হাত দিয়ে জানালা দিয়ে, বাইরের দৃশ্য দেখে যাচ্ছে। হঠাৎই সেখানে মুষুলধারায় বৃষ্টি শুরু হয়। অনন্যার বৃষ্টি ছোটবেলা থেকেই পছন্দের। ডিসেম্বর মাসের বৃষ্টি তার কাছে অপ্রত্যাশিত ছিলো, সে ফারিশের দিকে তাকিয়ে বলে, ‘ এই জ্যাম এক ঘন্টার আগে ছাড়বে না। আমি একটু বরং যাই, খুব খুব বৃষ্টিতে ভিজতে ইচ্ছে করছে। ‘

ফারিশ ধমকে বলে, ‘ হোয়াট? এই টাইমে আপনি ভিজবেন? কিছুতেই না! বৃষ্টিতে ভিজলে আপনারও আবার জ্বর এসে পরবে। ‘

ফারিশের কথাকে একপ্রকার গুরুত্ব না দিয়েই, গাড়ি থেকে নেমে, পাশের ধানমণ্ডি লেকের ধারে চলে গেলো। খোলা চুলে কালো শাড়ি পরা রমনী লেকের ব্রিজে, মনপ্রান খুলে, বৃষ্টিতে ভিজে, বৃষ্টিবিলাস করছে। ফারিশও গাছের নিচে এসে দাঁড়িয়ে, অনন্যার দিকে মুগ্ধ নয়নে তাঁকিয়ে থাকে! পরম ভালোবাসা ছিলো সেই দৃষ্টিতে। হঠাৎ ফারিশ বলে উঠে, মিস, বৃষ্টিবিলাসী!’

ইরাশও ফারিশের পাশে দাঁড়িয়ে ছিলো, সে হুট করে প্রশ্ন করে, ‘ ইউ লাভ হার? তুমি কী তাকে ভালোবাসো ভাই?’

ইরাশের এমন প্রশ্নে ফারিশ থমকে গিয়ে, পুনরায় তাচ্ছিল্য করে ফারিশ বলে উঠে, ‘ আমার মতো হার্টলেস মানুষের আবার ভালোবাসা! আমি শুধু মানুষকে কষ্ট দিতে পারি, মিস অনন্যার মতো নারীকে ভালোবাসার মতো বিশুদ্ধ মন আমার নেই। আমি যে বড্ড পাষাণ মানুষ রে!’

চলবে কী?

#প্রণয়ের_রংধনু
#পর্ব-৪৫
#Jannatul_ferdosi_rimi (লেখিকা)
ফারিশ এগিয়ে গেলো তার বৃষ্টিবিলাসীর দিকে। অনন্যা দুই হাত বাড়িয়ে, ব্রিজের উপরে মনের আনন্দে বৃষ্টিকে উপভোগ করছে। ইরাশ মুচকি হেসে গাড়ির দিকে চলে যায়। ফারিশ আশে-পাশের দিকে তাকিয়ে বলে, ‘ মিস অনন্যা? শুনছেন? এইবার গাড়িতে চলুন! ভিজে আপনার অবস্হা খারাপ। একবার না বৃষ্টিতে ভিজে জ্বর বাধিয়ে ছিলেন, এখন জ্বর হলে কীভাবে চলবে? সাৃমনে আপনার বিয়ে। ‘
অনন্যা মন খারাপ করে নরম গলায় শুধালো,’ আমি ইচ্ছে করেই বৃষ্টিতে ভিজছি, যাতে আমাকে বিয়েটা করতে না হয়। বিয়ের দিন জ্বর হলে কেমন হবে মি: খান? ধরুন আমার জ্বর হয়ে, এমন অবস্হা হলো যে, আমি সোজা হসপিটালে! তখন কি আপনি খুশি হবেন?’
ফারিশ অনন্যার প্রশ্নে ভরকে গিয়ে বললো, ‘ কিসব যাতা বলছেন? আপনি অসুস্হ হয়ে, হসপিটালে ভর্তি থাকলে আমি খুশি কেন হবো?’

‘ এইযে আমার বিয়ে আটকে যাবে, তাই! কি খুশি হবেন না?’

‘ উহু, মোটেও খুশি হবো না। আপনি এবং অভি সাহেব নতুন করে পথ চলা শুরু করছেন, এতে বরং আমি খুশি হবো। ‘
অনন্যা ছলছল নয়নে প্রশ্ন করলো,
‘ আমার বিয়েতে আপনি খুশি হবেন?’
‘ অবশ্যই! আপনি আপনার ভালোবাসার মানুষকে বিয়ে করে খুশি হবেন। আপনার খুশিতে, আমার খুশি মিস অনন্যা। আপনার আনন্দ আমাকে শান্তি দেয়। ‘
শেষের কথাগুলো ফারিশ ধীরকন্ঠে বললো। ফারিশ লক্ষ্য করলো কথাগুলো বলার সময়, তার গলা কেমন যেন আটকে আসছে। নি:শ্বাসেও বোধহয় কষ্ট হচ্ছে। অনন্যা ফারিশের শার্টের কলার চেপে ধরে, কান্নার সুরে বললো,
‘ আপনি একজন হার্টলেস মানুষ! আপনার মধ্যে কোন অনুভুতি নেই। আপনি কী তা জানেন?’

দুজনেই বৃষ্টিতে ভিজে কাকভেজা হয়ে গিয়েছে। ফারিশ ঠিকই খেয়াল করছে বৃষ্টির পানির মধ্যেও, অনন্যার আখিজোড়ায় নোনাজল এসে ধরা দিচ্ছে কিন্তু তা গড়িয়ে পরার আগেই, ফারিশ আলতো হাতে মুছিয়ে দিয়ে বলে,

‘ আমি হার্টলেস কিন্তু অভি সাহেব যথেষ্ট ভালো মানুষ, আপনাকে যথেষ্ট ভালোবাসবে। অনেক ভালোবাসবে। ‘

অনন্যা তাচ্ছিল্যের হাসি দেয়। ফারিশ ফের প্রশ্ন করে,
‘ আমার কথা শুনে আপনি হাসছেন?’

‘ হাসবো না?’

‘ হাসির কথা কি আমি বলেছি?’

‘ অবশ্যই বলেছেন, নাহলে আমি অযথা হাসি না। আমার হাসির এই কারণটি আপনি খুব শীগ্রই জানতে পারবেন। আচ্ছা চলুন, আমরা এখন গাড়ির দিকে যাই। ‘

কথাটি বলে অনন্যা পা বাড়াতে নিলেই, হঠাৎ করে পা পিছলে পরে গিয়ে ‘ আহ ‘ করে চেচিয়ে উঠে। ফারিশ দ্রুত গতিতে অনন্যার কাছে গিয়ে বলে, ‘ আপনি এতো ছটফট করেন কেন? ইউ নো আই জাস্ট ডোন্ট লাইক দিজ। দেখলেন তো? পরে গেলেন! ‘

‘ আপনার ডায়লগ না মে/রে আমাকে উঠান মি: খারুশ থুরি ফারিশ খান। ‘

ফারিশ চোখ গরম করে তাঁকায়। অনন্যা উঠতে নিলে, আবারোও পায়ের ব্যাথায় বসে পরে। ফারিশ খেয়াল করে অনন্যার পা মচকে যাওয়ায় সে ঠিক মতো হাটতে পারছে না।তাই সে অনন্যাকে পাজকোলে তুলতেই, অনন্যা হাত- পা ছুটাছুটি করতে করতে বলে, ‘ কি করছেন কি? আমাকে এইভাবে কোলে নিয়েছেন কেন? কেউ দেখলে কি ভাববে? আমাকে নামান বলছি। ‘

ফারিশ অনন্যার ঠোটে আঙ্গুল দিয়ে বলে, ‘ হুসস! কোনো কথা নয়। আপনি যথেষ্ট বাদর টাইপ একজন রমনী! যা পিচ্ছিল রাস্তা, আপনি এখন বার বার পিছলে পরে যাবেন। দেখা যাবে আপনাকে নিয়ে পরে আমাকে হসপিটালে ছুটাছুটি করতে হবে। সো, নো রিস্ক!’

কথাটি বলেই, অনন্যা ফারিশকে নিয়ে গাড়ির দিকে এগিয়ে নিয়ে যায়। ততক্ষনে মিষ্টিও উঠে গিয়েছিলো, সে ইরাশের সাথে গল্প করছিলো, অনন্যাকে কোলে নিয়ে ফারিশ গাড়ির সামনে আসায়, মিষ্টি উঠে হাতে তালি বাজাতে বাজাতে বলে, ‘ ওয়াও! বাপি ,মিষ্টির মাকে কোলে নিয়েছে, জাস্ট লাইক আ মুভির হিরোর মতো!’

ইরাশ ও বড় বড় চোখ করে বলে, ‘ কিরে ভাই! তুই কি আবার মুভির ভিলেনের মতো, নায়িকাকে কোলে নিয়ে, কাজি অফিসে যাওয়ার প্ল্যান করছিস? তাহলে আমাকে নামিয়ে দে ভাই! আমি ভিলেনের চামচার পার্টে থাকতে চাইনা। ‘

ইরাশের কথা শুনে মিষ্টি হু হা করে হেসে উঠে। ফারিশ চোখ গরম করে তাকিয়ে বলে, ‘ উনি যা নাছরবান্দা মহিলা! মাঝে মাঝে মনে হয়,মিষ্টির থেকেও উনি ছোট। বৃষ্টিতে ঢ্যানঢ্যান করে ভিজতে গিয়ে, পা পিছলে পরেও গিয়েছেন। এখন ঠিকমতো হাটতেও পারছেন না।’

অনন্যা গাল ফুলিয়ে গাড়িতে বসে থাকে ফারিশের কথা শুনে। ইরাশ এবং মিষ্টি দুজনেই হেসে উঠে।

_______

অন্য গাড়িতে, এনা, ইয়ান এবং শফিক বসে ছিলো। ইয়ানা ড্রাইভারের পাশের সিটে বসেছিলো। পিছনের সিটে এনা এবং শফিক। শফিক যথেষ্ট দূরুত্ব বজিয়ে, এনার থেকে দূরে বসে আছে। যেন কাছে ঘেসলেই তার ফারিশ স্যার তার চাকরী নট করে দিবে। এনা জানালা ক্লাস খুলে, বৃষ্টিকে ছুঁইয়ে ছুঁইয়ে দেখছে। শফিক আড়চোখে এনার দিকে তাকাচ্ছে কিন্তু তৎক্ষনাৎ চোখ সরিয়ে, নিচের দিকে তাকাচ্ছে। এনা হয়তো বিষয়টি লক্ষ্য করছে তাই সে নিজে থেকেই শফিকের কাছে একটু এগিয়ে বসলো কিন্তু তাতে বরং শফিক একটু অস্বস্হিবোধ করলো এবং জানালার সাথে আরেকটু ঘেষে বসলো। এনা মুচকি হেসে, প্রশ্ন করলো, ‘ শফিক ভাই, আপনি কি অস্বস্হি বোধ করছেন? যদি করে থাকেন, সামনে বসতে পারেন। আমি কি গাড়ি থামাতে বলবো?’

শফিকের বুকটা মোচর দিয়ে উঠলো। এনা ম্যাম বৃষ্টির পানির সাথে খেলছে, দৃশ্যটি দেখতে তার খুব ইচ্ছে করছে, সামনে গেলে কীভাবে দেখবে সে? শফিক মৃদ্যু সুরে জবাব দিলো,
‘ আমার অস্বস্হি বোধ হচ্ছে না, তবে আপনার যদি ইচ্ছে হয়, তাহলে আমি সামনে চলে যাবো। ‘

‘ সত্যিই আমার ইচ্ছেই সব? আপনার ইচ্ছের দাম নেই? তবে গাড়ি থামাতে বলি?’

শফিকের আখিজোড়া ছলছল করে উঠলো। তা দেখে এনা স্মিত হেসে বললো, ‘ শফিক ভাই আপনি কী জানেন? আমি আপনাকে ঠিক কতটা পছন্দ করি? আপনি একজন চমৎকার মানুষ। পছন্দ বলতে নরমাল মানুষ হিসাবে পছন্দ, হা হা হা। ‘

বলেই খিলখিলিয়ে হেসে উঠলো এনা। শফিক মুগ্ধ নয়নে এনার দিকে তাকিয়ে আনমনে বললো, ‘ আপনার এই সুন্দর হাসির সাথে ঠিক কোন উপাধি দিবো ম্যাম? হয়তো আপনার সৌন্দর্যের বর্নণার কাছে আজ জগতের সমস্ত সুন্দরের উপাধি ফিকে হয়ে যাবে। ‘

_____________

শপিং শেষে, সকলে বাড়ি ফিরে এসেছে। মিষ্টি ক্লান্ত ছিলো বলে, তাকে কোলে নিয়েই রুমের দিকে চলে যাচ্ছিলো অনন্যা কিন্তু পিছন থেকে অভির ডাক শুনে সে থেমে যায়। অভি গাঁয়ে উকিলের কালো পোষাক কিন্তু বৃষ্টিতে কাকভেজা হয়ে আছে। নীচে ফারিশ, ইরাশ ছিলো। অভিকে দেখে মনে হচ্ছে সে খুব চিন্তিত এবং ক্লান্ত। অনন্যা অভিকে উদ্দেশ্য করে বলে,’ আমি মিষ্টিকে শুয়িয়ে দিয়ে, তারপর আসছি। ‘

অনন্যা উপরে চলে যেতেই, অভি ফারিশের মুখোমুখি হয়ে বলে, ‘ আপনি আমাকে ঠিক করে বলবেন? অনন্যার সাথে আপনার কি ঠিক কি সম্পর্ক?’৷

অভির প্রশ্ন শুনে, ফারিশ বলে উঠে, ‘ এক্সকিউজ মি!ওয়াট ইউ মিন, বাই দিজ? মিস অনন্যার সাথে, আমার সম্পর্ক ঠিক কেমন বলতে, আপনি ঠিক কী বুঝাচ্ছেন?’

অভির গলার টাইটা হাল্কা নাড়াতে নাড়াতে, উচু গলায় বলে,

‘ কেন আপনি বুঝতে পারছেন না? এইযে বাচ্চার বাহানা দিয়ে, মাঝরাতেই অনন্যার আপনাদের বাড়িতে আসা, তারপর ধানমণ্ডিতে বৃষ্টির মধ্যে আপনাদের একান্ত সময় কাটানোর দৃশ্য! সব আমি নিজে আড়ালে থেকে দেখছি মি: ফারিশ খান! এইসবের মানে কি? ঠিক কোন সম্পর্কের কারণে আপনাদের? ‘

ফারিশ অভির কলার চেপে দাতে দাত চেপে বলে, ‘ আপনি কিন্তু আবারোও মিস অনন্যার এবং আমার চরিত্র নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন। ভুলে যাবেন না, আপনি খন ফারিশ খানের বাড়িতে আছেন, জাস্ট দু সেকেন্ড লাগবে আমার, আপনাকে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করতে। ‘

ইয়ানা রান্নাঘর থেকে এমন দৃশ্য দেখে, দ্রুত বেড়িয়ে, ফারিশের থেকে অভিকে ছাড়িয়ে, ফারিশকে শান্ত করে বলে, ‘ ভাইয়া কি করছো এইসব?’

‘ কি করছি মানে? এই মানুষটা এখনো বদলায়নি, আবারো মিস অনন্যার চরিত্র নিয়ে প্রশ্ন তুলছে, ঠিক কতটা খারাপ হতে পারে একজন মানুষ!’

‘ মি: খান, জাস্ট কুল ডাউন। আমি অভি শিকদারের প্রশ্নের জবাব দিচ্ছি। ‘

কথাটি বলতে বলতে অনন্যা নীচে নেমে এসে, অভির কাছে একটা ফাইল ছুড়ে বলে, ‘ ভালো করে দেখো অভি! এতোটা খারাপ ও আমি নই যে একজন বাচ্চার অসুস্হতার বাহানা দিয়ে, এই বাড়িতে আসবো। ফাইলে মিষ্টির সব প্রস্ক্রিপশন আছে। ভালো করে চেক করে নাও এন্ড সেকেন্ডলি আমি একা মি; ফারিশ খানের সাথে যাইনি বরং সকলের সাথেই গিয়েছিলাম, যেন মিষ্টির মনটা ভালো থাকে এবং যখন জ্যামে পরেছিলো তখন আমি ইচ্ছে করেই, ধানমন্ডির লেকে যাই, বৃষ্টিতে ভিজতে যেন আমার পিছন পিছন মি: খানও সেখানে আসে এবং আমাদের ওইরকম দৃশ্য তোমার চোখে পরে ইউ নো ওয়াট?কারণ আমি জানতাম তুমি সেখানের টং এ বসে চা খাচ্ছিলে এবং আমি তোমাকে দেখেই নেমেছি, যেন তুমি এইগুলো দেখো এবং আমি দেখতে চেয়েছি এইসব দেখার পরে, তোমার রিয়াকশন ঠিক কি হয়! আমি ভেবেছিলাম, তুমি হয়তো এইবার আমাকে বিশ্বাস করবে, সবার আগে আমাকে ফোন করে, সবটা আমার থেকে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত আমার থেক শুনবে! বাট আই ওয়াজ টোটালি রং! তুমি আমার থেকে কিছু জানতে বা শুনতে চাও নি, সোজাসোজি এখানে এসে একটা তামাশা শুরু করে দিয়েছো, অভি! আমার চরিত্র নিয়ে আবারোও প্রশ্ন তুলেছো!’ বলতে বলতে অনন্যার আখিজোড়ায় জল চলে আসে।ফারিশের বুকের ভিতর হা হা করে উঠে। অভিও বুঝতে পারে সে আবারোও জুঁইয়ের কথা শুনে, সে তার অনন্যাকে অবিশ্বাস করে ফেলেছে, তাই সে দ্রুত অনন্যার হাত ধরে, মিনতির সুরে বলে, ‘ আমাকে ক্ষমা করে দাও অনন্যা। আমি জাস্ট ওই জুঁইয়ের কথা শুনে ইনফুলেন্স হয়ে গিয়েছিলাম। ‘

উপরে জুঁই দাঁড়িয়ে ছিলো। জুঁইয়ের নাম শুনতেই, ফারিশ ভয়ংকর চোখে উপরের দিকে তাঁকায়। জুঁই ভয়ে গুটিয়ে যায়। অনন্যা অভিকে হাত দিয়ে, থামিয়ে বলে, ‘ প্লিয অভি! থামো! অন্যের দোষ দিয়ে কি হবে? যেখানে নিজের ঘরই ঠিক নেই।কথায় আছে না? কিছু কিছু স্বভাব যায় রয়ে। আসলে অভি তুমি আমাকে কখনোই বিশ্বাস করতে পারবে না। আমার প্রতি তোমার অবিশ্বাস,তুমি আজীবন বয়ে বেড়াবে। ‘

অত:পর অনন্যা ফারিশের দিকে ঘুড়ে বললো, ‘ আমার তাচ্ছিল্য করে হাসির উত্তর কি আপনি পেয়েছেন মি: খান?’

চলবে।।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে