#প্রণয়ের_রংধনু
#পর্ব-৪২
#Jannatul_ferdosi_rimi (লেখিকা)
অনন্যাকে গাড়িতে উঠতে দেখে বারান্দা থেকে ছোট্ট মিষ্টি হাত বাড়িয়ে ডাকতে থাকে, ‘ মা, মা! কোথায় যাচ্ছো তুমি? আমি তো এখানে! আমাকে রেখে কোথায় যাচ্ছো তুমি? ‘
অনন্যা মিষ্টির ডাক শুনে জানালা থেকে মুখ বাড়িয়ে, অসহায় পানে তাঁকিয়ে থাকে। তার বুকটাও কষ্টে ফেটে যাচ্ছে কিন্তু কী করবে সে? তার তো আর কোন অধিকার নেই এই বাড়িতে থেকে যাওয়ার কারণ ফারিশ আজকে তাকে নিজে থেকে মুক্তি দিয়েছে, হ্যা সে নিজেই মুক্তিটা চেয়েছে তবুও তার মনে হচ্ছে আরো কয়েকটা দিন থাকতে পারলে কি এমন দোষ হতো? মিষ্টির মা হয়ে সে তো থাকতে পারতো কয়েকটাদিন কিন্তু কঠিন বাস্তবতা হচ্ছে, সে মিষ্টির নিজের মা নয়। যদি মিষ্টি তার নিজের সন্তান হতো, তাহলে সেই অধিকারে মিষ্টিকে নিজের বুকের মধ্যে লুকিয়ে, নিয়ে যেতে পারতো। অনন্যার ভাবনার মাঝেই, ফারিশ মিষ্টির কাছে এসে, মিষ্টিকে কোলে নিয়ে বলতে থাকে,
‘ কি হয়েছে মা?’
মিষ্টি অনন্যার গাড়ির দিকে হাত দিয়ে ইশারা করে, কাঁদতে কাঁদতে বলে, ‘ বাবা! মা চলে যাচ্ছে। মিষ্টির মাকে ছেড়ে, মিষ্টি কীভাবে থাকবে বলো?’
ফারিশ মিষ্টির মাথায় হাত বুলিয়ে বলতে থাকে,
‘ না, মা! উনি তোমার মা নন। তোমার মা তো আকাশের স্টার হয়ে গিয়েছে। ‘
ফারিশের কথা শুনে নীচ থেকে শুনতে পেয়ে, আখিজোড়া বেয়ে জল গড়িয়ে পরে অনন্যার! মিষ্টি মানতে নারাজ, সে রাগ দেখিয়ে বলে, ‘ না না! মিষ্টির মা স্টার হয়ে যায়নি! মিষ্টির মা একদম ঠিক আছে। ওইযে আমার মা! মা তুমি আসো না প্লিয! ‘
মিষ্টি আবারোও অনন্যাকে হাত দেখিয়ে ইশারা করে। অনন্যা থাকতে পারলো না, সে ঠিক করে নিলো সে বের হয়ে, ছুটে বেড়িয় তার মেয়েকে বুকের মধ্যে মিশিয়ে নিবে কিন্তু তার পূর্বেই, ফারিশ ধমক দিয়ে বলে উঠে,
‘ এইসব কি হচ্ছে মা? বলছি না উনি তোমার মা নন! কতবার এক কথা বুঝাতে হবে তোমাকে? বড় হচ্ছো এইবার বুঝতে হবে তোমাকে। ভিতরে যাও বলছি এখুনি।’
ফারিশের কথা শুনে মিষ্টি কাঁদতে কাঁদতে চলে যায়। অনন্যাও ফ্যালফ্যালে নয়নে ফারিশ নামক নির্দয় ব্যাক্তির পানে তাকালো কিন্তু ফারিশ একবারও অনন্যার দিকে তাঁকালো না। সে তার দৃষ্টি সরিয়ে রেখেছে। অভি শেফা বেগমকে সাথে নিয়ে, গাড়ির মধ্যে বসিয়ে দিয়ে, অনন্যার দিকে তাকিয়ে বলে, ‘ অনন্যা কি দেখছো তুমি?’
অভির ডাকে হুস ফিরে অনন্যার। অভি গাড়ির ভিতরে ঢুকে, ফ্রন্ট সিটে বসে বলে, ‘ উই সুড গো নাও। আন্টির অবস্হা ভালো লাগছে না। আই থিংক সি নিড আ রেস্ট। ‘
অনন্যা শুধু মাথা ঝাকিয়ে, আবারোও কি মনে করে যেনো বারান্দার দিকে তাঁকালো কিন্তু ফারিশ সেখানে ছিলো না। মন- খারাপ হয়ে গেলো তৎক্ষনাৎ অনন্যার। তার মনে অজানা এক অভিমান জমা হলো ফারিশের প্রতি। গাড়ি চলতে লাগলো। গাড়ি গেটের কাছে চলে যেতেই, ফারিশ রুম থেকে এসে আবারোও বারান্দায় এসে দাঁড়ায়। সে গাড়িটাকে যতদূর দেখা যায়, ততদূর সম্ভব তাঁকিয়ে রইলো। তখনি কেউ তার পিঠে হাত রাখে, ফারিশ পিছনে ঘুড়ে, রুমা খান দাঁড়িয়ে আছেন। রুমা খান ফারিশকে কিছু বললো না। শুধু অবাক নয়নে তাঁকিয়ে রইলেন। ফারিশ তার দাদির এমন তাঁকানো দেখে, হেসে প্রশ্ন করলো, ‘ কি দেখছো দাদি?’
‘ দেখছি আমার দাদুভাই সত্যিই বিরাট বড় হয়ে গেছে।পাহাড় -কষ্ট জমিয়ে রেখে কীভাবে হাসছো দাদুভাই?’
ফারিশ কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে বারান্দার হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে বলে, ‘ কিসের কষ্ট দাদি? আজ তো আমার খুশির দিন, আমার মায়ের অপরাধীরা তাদের শাস্তি পেয়েছে। তাই আমি আজ প্রান খুলে হাসবো, হা হা হা! দাদি তুমিও হাসো, হা হা। ‘
এনাও ততক্ষনে চলে আসে। এনা ফারিশের দিকে তাকিয়ে গম্ভীর গলায় প্রশ্ন করে,
‘ তুমি কী সত্যিই হ্যাপি ভাইয়া?’
‘ আমি হ্যাপি হবো না কেন? মিস অনন্যার প্যারা থেকেও তো আজ বাঁচলাম! অনেক বকবক করতেন। জানিস? উনার বকবক খুবই বিরক্তিকর! আই জাস্ট ডোন্ট লাইক দিজ! হা হা হা। ‘
এনা বিরক্ত হয়ে বলে ফেলে, ‘ ভাইয়া আপাতত তুমি তোমার মিথ্যে হাসিটা বন্ধ করো। খুবই বিরক্ত লাগছে। ‘
ফারিশ থেমে গিয়ে, বারান্দা থেকে চলে যায়।
______________
অনন্যাদের গাড়ি হাওলাদার ভিলাতে প্রবেশ করে। গাড়ি থামানোর পর-পরেই, সর্বপ্রথম শেফা বেগম কাউকে কিছু না বলেই, গটগট পায়ে ভিতরে চলে যায়। সারারাস্তা স্বামীর কথা চিন্তা করে, তিনি কান্না করে গিয়েছেন। যাকে এতোটা ভালোবেসে এতোবছর ধরে, সংসার করে গিয়েছেন, তার অতীত এতোটা জঘন্য ভাবতেই তার ঘৃণা ধরে যাচ্ছে। সবথেকে বড় কথা, এইসব এর মাঝে তার নির্দোশ মেয়েটাকে মাঝখান থেকে এতোকিছু সহ্য করতে হলো। অনন্যা তার মায়ের মনের অবস্হা বুঝতে পেরে, নিশব্দে গাড়ি থেকে বেড়িয়ে যায়। সে বাড়ির ভিতরে প্রবেশ করতে গেলে, পিছন থেকে অভি এসে খপ করে তার হাত ধরে ফেলে। অভি তার হাত এইভাবে ধরে ফেলায়, অনন্যা প্রশ্ন করে, ‘ হাত ধরেছো কেন?’
অভি অনন্যার হাত ছেড়ে দিয়ে বলে,’ আসলে, অনেক তো হলো অনন্যা। আমি জানি আমি অনেক বড় ভুল করেছি, সেই ভুলের শাস্তিও পেয়ে গিয়েছি। এখন আমি সেই ভুল শুধরে নিতে চাই। ‘
‘ ভুল? কোনটা ভুল অভি? ভরা বিয়ের আসরে, সকলের সামনে আমার গাঁয়ে হাত তুলেছিলে তুমি। সকলের সামনে আমার সাথে পতি/তার তুলনা করেছিলে তুমি। আমাকে বিপদের মধ্যে ঠেলে দিয়ে চলে গিয়েছিলে। এইটা ভুল? ‘
অনন্যার কথা শুনে অভি মাথা নিচু করায়, অনন্যা আবারোও বলে উঠে, ‘ রাশেদ খানের মতো তুমিও সমান দোষী। আজ যদি আমিও মরে…. ‘
অনন্যার সম্পূর্ন কথা শেষ হওয়ার পূর্বেই, অভি অনন্যার হাত নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে বলে,
‘ কি বলছো তুমি? এইসব প্লিয বলো না। আমি জানি, আমি অন্যায় করেছি কিন্তু অনন্যা তুমি কি জানো? আমি তোমার জন্যে দিনের পর দিন কতটা যন্ত্রনার মধ্যে গিয়েছে, কতটা পু/ড়েছি, শুধুমাত্র আমিই জানি।’
অনন্যা তাচ্ছিল্য করে হেসে বললো,’ খুবই স্বার্থপর একজন মানুষ তুমি। ‘
‘ আমি স্বার্থপর?’
‘ তবে কি? শুধুই নিজের কষ্ট দেখলে তুমি অথচ আমাকে কতটা যন্ত্রনা দিয়েছো সেই হিসাব রেখেছো?’
‘ আমি তোমায় ভালোবাসি অনন্যা, তাই তোমায় পেতে চাইছি, আর কিছুই না। এখানে স্বার্থপরতার কি দেখলে তুমি?’
‘ আমি কোনপ্রকার তর্কে জড়াতে চাইছি না আপাতত। তুমি বিয়ের ব্যবস্হা করো, আমি তৈরি। ‘
কথাটি বলেই অনন্যা ভিতরে চলে গেলো। অভির আনন্দে ‘হুরেএ’ বলে চেচিয়ে উঠলো।
_________
অপরদিকে, মিষ্টির গা কাঁপিয়ে জ্বর এসেছে। সে সকাল থেকে কিচ্ছু খায়নি, সারাদিন কান্নাকাটি করার ফলে, অসুস্হ হয়ে পরেছে। ডক্টর নিয়ে আসা হয়েছে কিন্তু মিষ্টি কিছু না খাওয়ার ফলে, ওষুধ খাওয়ানো যাচ্ছে না, সে শুধু বার বার মা মা করে যাচ্ছে। ইরাশ, ফারিশের কাছে এসে বলে, ‘ ভাই এখন কি হবে? এইভাবে চলতে থাকলে, আমাদের মেয়েটাকে তো হসপিটালে এডমিট করতে হবে। মিষ্টির অবস্হা একটুও ভালো না।’
ফারিশ বুঝতে পারছে না সে কি করবে, তখনি রুমা খান, ফারিশের পাশে দাঁড়িয়ে বলে,’ এই সময়ে, মিষ্টির অনন্যাকে প্রয়োজন দাদুভাই। ‘
‘ কিন্তু মিস অনন্যাকে এখন নেই দাদি।’
‘ তুমি গিয়ে অনন্যাকে এখুনি নিয়ে আসবে।’
‘ কি বলছো দাদি? এতো রাতে? ‘
‘ নিজের মেয়ের জন্যে এইটুকু তোমাকে করতেই হবে।’
চলবে।।
#প্রণয়ের_রংধনু
#পর্ব-৪৩
#Jannatul_ferdosi_rimi (লেখিকা)
ওয়াশরুম থেকে ভেজা চুল নিয়ে বের হতেই, খাটে হঠাৎ ফারিশকে বসতে থাকতে দেখে থমকে যায় অনন্যা। ফারিশ খাটে বসে ছিলো, অনন্যাকে দেখেই সে তৎক্ষনাৎ উঠে দাঁড়ায়। অনন্যার ফারিশকে দেখে কেন যেন প্রচুর হৃদপৃন্ড দ্রুতগতিতে কম্পিত হতে শুরু করলো, গোলাপী ঠোট জোড়া কাঁপছে, অনন্যা বুঝতে পারছে না হঠাৎ তার এমন হচ্ছে কেন? হয়তো অনাকাঙ্ক্ষিত মুহুর্তে ফারিশের উপস্হিতি তার অস্হিরতার কারণ! অনন্যার মন বারংবার বলছে, এই হয়তো ফারিশ তাকে বলবে, ‘ মিস অনন্যা! শুনছেন? বাড়ি ফিরে চলুন! আমার ভালো লাগছে না। আপনার বকবক শুনতে হবে। বাড়িতে কেমন যেনো, শান্ত হয়ে গিয়েছে। ইউ নো আপনাকে ছাড়া বাড়ির এমন অবস্হা, আই জাস্ট ডোন্ট লাইক দিজ!’
কিন্তু অনন্যাকে হতাশ করে দিয়ে, ফারিশ নিচু সুরে শুধালো, ‘ মিস অনন্যা? কিছুটা বাধ্য হয়েই, আপনাকে বিরক্ত করতে এতো রাতে ছুটে এলাম। ‘
‘ বাধ্য হয়ে মানে? বাড়িতে সবাই ঠিক আছে তো?’
‘ না, মানে আসলে সবকিছু ঠিক নেই। আমার মিষ্টির হঠাৎ খুব করে জ্বর এসে পরেছে। মেয়েটা সারাদিন মা, মা করে যাচ্ছে। আপনি যাওয়ার পর থেকে সকাল থেকে কিচ্ছুটি মুখে দেইনি সে।’
‘ আর আপনি আমাকে এতোক্ষনে বলছেন যে, মিষ্টির জ্বর এসেছে? সত্যিই আশ্বর্য! চলুন, এখুনি চলুন। ‘
অনন্যার কথা শুনে ফারিশ দ্রুত গতিতে মাথা নাডিয়ে, অনন্যাকে সাথে নিয়ে, ঘর থেকে বের হয়।
অপরদিকে,
জুঁই ড্রইংরুমে পাইচারি করে যাচ্ছে, তার মধ্যেই অনন্যাকে নিয়ে ফারিশ প্রবেশ করে, সোজা উপরে চলে যায়। অনন্যাকে এতো রাতে হঠাৎ খান বাড়িতে দেখে, মেজাজ গরম হয়ে যায় তার! সে ভেবেছিলো এইবার হয়তো অনন্যা তার ফারিশকে ছেড়ে একেবারের জন্যে বাড়ি থেকে বেড়িয়ে গিয়েছে কিন্তু মিষ্টির বাহানায় আবারোও সে খান বাড়িতে ফিরলো! কিন্তু এখন কী করবে সে? সবকিছু অসহ্য লাগছে তার।
অনন্যা দ্রুত পায়ে, মিষ্টির রুমে ঢুকে, মিষ্টির কাছে ছুটে গিয়ে, দ্রুত মিষ্টিকে বুকের সাথে মিশিয়ে, কপালের জ্বর মাপতে লাগলো। সেখানে ইরাশ, ইয়ানা, এনা এবং রুনা খান ছিলেন। রুনা খান অনন্যাকে দেখে নিশ্চিত হলেন।
ফারিশ ও ভিতরে ঢুকলো। অনন্যার গাঁয়ের ঘ্রাণ পেয়েই, ছোট্ট মিষ্টি ক্লান্ত গলায় শুধালো, ‘ মা, তুমি এসেছো! মিষ্টি তোমাকে অনেক মিস করছিলো। ‘
ছোট্ট মিষ্টির কথা শুনে, অনন্যার আখিজোড়া বেয়ে জল গড়িয়ে পরছে। সে মিষ্টির কপালে চুমু খেয়ে বলে,
‘ আমি চলে এসেছি মা, মা তোমাকে ছেড়ে কোথাও যাচ্ছে না। কিন্তু মা, তোমাকে এইবার কিছু খেতে হবে। নাহলে ওষুধ কী করে খাবে? ওষুধ না খেলে যে, জ্বরটা কমবে না। ‘
মিষ্টি কোনপ্রকার জবাব দিলো না, শুধু অনন্যার বুকের সাথে লেপ্টে রইলো। অনন্যা ফারিশকে ইশারা করলো, যেন বিছানার পাশে থাকা স্যুপের বাটিটা তাকে দেওয়া হয়। ফারিশও স্যুপের বাটিটা অনন্যার হাতে এগিয়ে দিলো এবং অনন্যার পাশে বসে, মিষ্টিকে নিজের কোলে বসালো। অনন্যা চামচে আলতো করে, ফু দিয়ে মিষ্টিকে খাওয়াতে লাগলো। অসুস্হ মিষ্টুও কোনপ্রকার জেদ না করে, খেতে লাগলো। পাশে ডক্টর বসে ছিলেন। তিনি এমন দৃশ্য দেখে বললেন, ‘ এই তো বাচ্চাটা খাচ্ছে। আসলে ছোট বাচ্চা মানুষ তো, মাকে না পেলে, এমন খাওয়া- দাওয়া বাদ দিয়ে দেয়। ‘
ডক্টর সাহেব পুনরায় ফারিশকে উদ্দেশ্য করে বলে,
‘ তা কী ফারিশ সাহেব? বউয়ের সাথে বেশি ঝগড়া করে ফেলেছেন, তাইনা? তাই মিসেস খান, বাচ্চা- সংসার ফেলে, বাপের বাড়িতে চলে যেতে বাধ্য হয়েছে। কি মশাই! দেখলেন তো? শুধু শুধু বউয়ের সাথে ঝগড়া করে লাভ নেই। সেই বউকেই আবারো রাত দুটো বাজে বাপের বাড়ি থেকে নিয়ে আসতে হয়। আসলে নারী ছাড়া সংসার পুরোই অচল!’
ডক্টর সাহবের কথা শুনে, ইয়ানা এবং এনা মুচকি মুচকি হাসতে থাকে। অনন্যা কিছুটা অস্বস্হিতে পরে যায়। ফারিশ বিরক্ত হয়ে ভাবতে থাকে আজব ডাক্তার! তিল কে তাল বানিয়ে দিচ্ছে! ব্যাপারটা নিশ্চই হয়তো ভালো লাগছে না মিস অনন্যার। তাই সে বলে উঠলো, ‘ আপনি ভুল করছেন। উনি আমার বউ ন..’
সম্পূর্ন কথা শেষ করার পূর্বেই, রুমা খান বলে উঠলেন,
‘ ইউ আর টোটালি রাইট ডক্টর। সত্যিই নারীকে ছাড়া গোটা সংসার, পৃথিবী সবকিছুই মূল্যহীন! একজন সন্তানের যেমন বাবার প্রয়োজন, তেমনি প্রয়োজন তার মায়ের। ‘
ইরাশ হয়তো রুমা খানের কথাটি ধরতে পারলো। সত্যিই তার মনে হচ্ছে তার ভাই ফারিশ যেমন এতোদিন তার অভাব পূরণ করেছে ঠিক তেমনি আজ অনন্যা ইশিতার অভাবটা মিষ্টির জীবনে পূরণ করে দিচ্ছে। সত্যিই তার মেয়ে ভাগ্যবতী!
__________
মিষ্টিকে খায়িয়ে, ডাক্তারের দেওয়া ওষুধ খায়িয়ে দিয়েছে অনন্যা এবং মিষ্টির মাথায় বারংবার জল পট্টি দিয়ে দিচ্ছে ফারিশ। অনন্যা তাকে অনেকবার বলেছিলো, ‘ আপনি যান, আজকের রাত টা তো আমি আছিই, আমিই জল পট্টি দিয়ে দিবো।’
কিন্তু ফারিশ যায়নি। সে কখনোই অসুস্হ অবস্হায় তার মেয়েকে একা ছেড়ে থাকে না। সারা রাতই পাশে বসে কাটিয়ে দেয় সে। আজও তার ব্যাতিক্রম হয়না। সে রাত অবদি মিষ্টির পাশে বসে জলপট্টি দিতে দিতে, ভোরের দিকে চেয়ারে হেলান দিয়ে ঘুমিয়ে পরলো, কিন্তু তখনো ও অবদি অনন্যা জেগে ছিলো। সে মিষ্টির মাথায় হাত দিয়ে দেখলো জ্বর নেই। খানিকটা নিশ্চিন্ত হয়ে সে ফারিশের দিকে তাকাতেই দেখলো, হেলান দিয়ে চেয়ারে শুয়ে আছে ফারিশ কিন্তু হাতের উপর হাত ভাজ করা। যেন ঘুমানোতেও তার স্টাইল মেইনটেইন করা চাই! উস্ককষ্ক সিল্কি চুলগুলো কপালে এসে তার লেপ্টে রয়েছে। অনন্যা এগিয়ে গিয়ে, ফু দিয়ে চুলগুলো উড়িয়ে দিয়ে, ফিক করে হেসে উঠলো। সে টের পেলো, শীতে ফারিশ মৃদ্যু মৃদ্যু কাঁপছে, তাই সে গিয়ে, একটা কম্বল নিয়ে এসে, ফারিশের গাঁয়ে জড়তি দিতে দিতে বললো,
‘ জানিনা কেন কিন্তু আপনার জন্যে বড্ড মায়া লাগে মি: খারুশ থুরি ফারিশ খান। এর কারণ কী? বলতে পারেন?’
______________
অভি অনন্যার বাড়িতে এসে, শেফা বেগমের কাছে জানতে পারলো, অনন্যা বাড়িতে নেই। রাতেই সে ফারিশের সাথে খান বাড়িতে ফিরে গেছে। অনন্যার খান বাড়িতে ফিরে যাওয়াতে কিছুটা ঘাবড়ে যায় ফারিশ এবং অনন্যার নাম্বারে ফোন দিয়ে দেয় এবং সাথে সাথে অনন্যা ফোনটা রিসিভ করে বলে,
‘ হ্যালো অভি?’
‘ তুমি খান বাড়িতে হঠাৎ এতো রাতে ফিরে গেলে কেন? এভ্রিথিং ইজ ওকে?’
‘ আসলে, মিষ্টি আমাকে না পেয়ে, খাওয়া- দাওয়া বন্ধ করে দিয়েছিলো। রাতের দিকে জ্বর বাধিয়ে অবস্হা খারাপ হয়ে গিয়েছিলো। তাই চলে এসেছি।’
‘ কি বলছো? এখন কেমন আছে? ‘
‘ কিছুটা ভালো, জ্বর কমেছে। ‘
‘ তাহলে তো সমস্যাই নেই। আমি তাহলে তোমাকে নিতে আসছি, আমাদের বিয়ের শপিংটা শুরু করে দিতে হবে। হাতে মাত্র এক সপ্তাহ সময় অনন্যা। ‘
অভির এমন কথা শুনে, অনন্যা অবাক হয়ে বলে,
‘ এতো স্বার্থপরের মতো কথা কী করে বলতে পারো তুমি অভি? মিষ্টি এখনো সম্পূর্ন সুস্হ হয়নি, আমি এখন ওকে রেখে, বিয়ের শপিং করতে যাবো? তুমি বরং তোমার মাকে নিয়ে কেনাকাটা শুরু করে দাও। আমি এখন কিছুতেই যেতে পারবো না, রাখছি আমি।’
কথাটি বলেই ফোন কেটে দেয় অনন্যা। ফারিশ বারান্দা দিয়ে যাওয়ার সময়, অনন্যার কথা তার কানে আসে। তাই সে এগিয়ে পকেটে হাত রেখে বলে,
‘ মি: অভি সাহেব হয়তো আপনাকে নিয়ে বিয়ের শপিং এ যেতে যাচ্ছেন। আপনি চলে যেতে পারেন, মিষ্টি তো আপাতত ঠিকই আছে। ‘
অনন্যা গম্ভীর হয়ে বললো, ‘ আমি আপনার থেকে আপাতত কোনপ্রকার পরামর্শ চাচ্ছি না। তাছাড়া আমি ভেবেছি, মিষ্টি সুস্হ হলে, মিষ্টিকে সাথে নিয়ে, আপনার সাথে বিয়ের শপিংটা সেরে ফেলবো। তাছাড়া আমার বিয়ের সমস্ত দায়িত্ব আপনার। আমার বিয়ে ভেঙ্গে ফেলেছিলেন আপনি। এখন নিজে আমার বিয়ের সমস্ত দায়িত্ব পালন আপ্নাকেই করতে হবে, মি: খান। হাতে সময়, একদমই কম। ‘
কথাটি বলেই মুচকি হেসে চলে যায় অনন্যা। ফারিশ স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে, তাকে নিজ দায়িত্বে মিস অনন্যার বিয়ের আয়োজন করতে হবে ভেবে গলা শুকিয়ে আসছে তার, কিন্তু সে কেন মিস অনন্যার কথা শুনবে? সে কিছুতেই শুনবে না। সে কিছুতেই বিয়ের আয়োজন করতে পারবে না, দিনশেষে সেও একজন রক্ত/গড়া মানুষ। তার ভাবনার মাঝেই, জুঁই এসে…..
চলবে কী?