প্রণয়ের রংধনু পর্ব-৩৮+৩৯

0
679

#প্রণয়ের_রংধনু ❤️‍
#পর্ব-৩৮
#Jannatul_ferdosi_rimi (লেখিকা)
অনন্যার মুখে’ মুক্তি দিয়ে দিন ‘কথাটি শুনে খানিক্ষনের জন্যে স্তব্ধ হয়ে পরে ফারিশ, মুখস্রী তার ফ্যাকাশে, বুকে অসনীয় ব্যাথা,হয়তো কোন এক প্রিয় মানুষকে হারানোর তীব্র কষ্ট কিন্তু কেন এই কষ্ট হচ্ছে তা কী আদোও বুঝতে পারছে ফারিশ? ফারিশের ভাবনার মাঝেই, অনন্যা নিজের হাতখানা ছাড়িয়ে নিতে চাইলে ব্যার্থ হয়, ফারিশ তার হাত ছাড়ে না, আকড়ে ধরে শক্ত করে। অনন্যা প্রশ্ন করে, ‘ কী করছেন? আমার হাত ছাড়ুন।’

‘ মুক্তি না হয় দিয়ে দিবো কিন্তু আপাতত যতটুকু সময় রয়েছে সেইটুকু সময় আপনার হাত ধরতে দিন!’

ফারিশের এমন অদ্ভুদ কথা শুনে থেমে গেলো। ফারিশ আরো শক্ত করে অনন্যার হাত আকড়ে ধরলো, তাতে আখিজোড়া বুজে অনন্যা বড় বড় নি:শ্বাস ফেলতে লাগলো। ফারিশ নিচু গলায় শুধালো,

‘ নিজের প্রতিশোধপরানয়তা থেকে আপনাকে দিনের পর দিন আমি কষ্ট দিয়েছে, অপমান করেছি আপনার চরিত্রে কলঙ্কও লাগিয়েছে, অতীতের জন্যে আপনার বর্তমানকে আমি নষ্ট করেছি, যেখানে অতীতের সাথে আপনার কোন যোগসুত্রই নেই, তবে আমি জানি আপনি আমার বাড়িতে নিজেকে নির্দোশ প্রমাণ করে, চলে যেতে চেয়েছিলেন, আমি বাড়ির সকলের সামনে, এমনকি আপনার প্রেমিক অভি সাহেবরও সামনেও সবকিছু ক্লিয়ার করবো এমনকি অতীতের সমস্তকিছু প্রকাশ করবো,কেন আমি এমনটা করেছি। আপনার ইচ্ছের মর্যাদা আমি দিবো, মিস অনন্যা। আপনাকে আমি মুক্তি দিবো, তবে আপনাকে সম্পূর্নরুপে নির্দোশ প্রমাণ করে, যেন ভবিষ্যৎ এ কেউ আপনার গাঁয়ে চরিত্রহীনার অপবাদ দিতে না পারে।’

ফারিশ কথাটি বলেই, অনন্যার হাত ছেড়ে কেবিন থেকে বেড়িয়ে গেলো। ফারিশের কথা শুনে নিজের কানকেও বিশ্বাস করতে পারছে না অনন্যা! আদোও ফারিশ তাকে মুক্তি দিবে তাও সম্পূর্ন নিদোর্শ প্রমাণ করে? তাহলে মানুষটা নিজের ভুল বুঝতে পারলো অবশেষে? এখন অনন্যা তবে অতীত ও জানতে পারবে, যার কারণে তাকে এতোদিন সেই মাশুল দিতে হয়েছে, কিন্তু এতোকিছুর পরেও অনন্যার মনে একটা ‘কিন্তু’ রয়েছে। তার কাঙ্খিত মুক্তির দিশা অবশেষে সে পাচ্ছে তবুও সে কে আজ খুশি হতে পারছে না? বুকটা শূন্য শূন্য করছে যেন অজানা এক কারণে। যেই কারণের খোঁজ অনন্যার নেই। অনন্যার অজান্তেই তার আখিজোড়া বেয়ে, দুফোটা চোখের জল গড়িয়ে পরে।

_______
ইরাশের থেকে খবর পেয়ে, রেশমি খান, ইশিকা খান, এনা, ইয়ানা, খালেদ খান এবং রাশেদ খান এসে হসপিটালে পৌঁছেছে। আরশকে আইসিউতে ভর্তি করা হয়েছে। অবস্হা করুন, মাথার দিকে চ/ট টা বেশ গুরুতর। ডক্টর বলেছেন ২৪ ঘন্টা অবযার্ববেশনে রাখবেন। রেশমি খান মুখে আঁচল গুজে কেঁদে যাচ্ছেন অনাবরত এবং বারংবার হায়-হুতাশ করে বলছেন,

‘ ওই গু*ন্ডা ছেলেটা আমার ছেলেটাকে মে/রে ফেললো। এরপরেও ফারিশের কোন শাস্তি হবে না। আমার বুকটা খালি হয়ে গেলো রে! ওহ আল্লাহ! তুমি কী দেখো না কিছু?’

ইশিকা খান রেশমি খানের পাশে বসে , রাশেদ খানকে উদ্দেশ্য করে বললো, ‘ দেখলে তোমার মা*স্তান ছেলের কান্ড! নিজের ভাইয়ের এমন অবস্হা করেছে, আজ তার ভাইয়ের জীবন-মরণ অবস্হা! তোমাকে আমি বলেছিলাম ওর ছোটবেলা থেকেই বোর্ডিং স্কলে পাঠিয়ে দাও, এই ছেলে ন*ষ্ট হয়ে গেছে, তুমি শুনলে না আমার কথা, আজ যদি শুনতে তাহলে এমন অবস্হা হতো?’

ইশিকা খানের কথা শুনে রাশেদ খান ফারিশকে ফোন করে। ফারিশ অনন্যার কেবিনে বাইরে দাঁড়িয়ে ছিলো, ফোনের শব্দে তার হুশ ফিরে। সে দেখে রাশেদ খানের ফোন, সে ভেবেছিলো ধরবে না অত,:পর কী ভেবে যেন ফোনটা রিসিভ করে বললো,
‘ হ্যালো!’

‘ ফারিশ তোমার এতো সাহস হয় কী করে? আরশের এমন অবস্হা করার। ‘

‘ ভাগ্য ভালো আপনাদের কু*কুরটাকে একটুর জন্যে মে/রে ফেলেনি। ‘

ফারিশের এমন কঠোর উত্তরে রাশেদ খান ক্ষেপে গিয়ে বলে,
‘কী বললে? তুমি জানো আমি তোমার নামে কেইস করতে পারি? তোমাকে আমার ভাইয়ের ছেলেকে এটেমটু মার্ডার কেসের দায়ে হাজতে ভরে দিতে পারি?’

ফারিশ শব্দ করে হেসে ফেললো। ফারিশের হাসি শুনে রাশেদ খান বিরক্তি হয়ে বললেন, ‘ হাসছো কেন?’

‘ এতো বড় বিসনেজম্যান হয়েও এমন হাসির কথা বললে, হাসবো না? মি: রাশেদ খান আপনি হয়তো ভুলে গিয়েছেন, আপনার ভাইয়ের ছেলে ঠিক কী কী করেছে মিস অনন্যার সাথে, কিডন্যাপ করে, তাকে ধ*ষনের মতো জঘন্য কাজের চেষ্টা। সাক্ষ্যি আছে, প্রমাণ আছে এইসব মামলা ঘুড়িয়ে দেওয়া আমার ওয়ান, টুর খেল, মি: রাশেদ খান, এইটুকু বুঝা উচিৎ! আনফরচুনেটলি আমি আপনার ছেলে, এইসব মামলা ঘুড়ানো কোন ব্যাপারই না আমার কাছে। আপনার কিছু গুন হলেও আমি পেয়েছি। ‘

ফারিশের এমন তাচ্ছিল্যে সহ্য করতে না পেরে ফোনটা কেটে দেন ফারিশ খান, অত:পরগম্ভীর মুখে দাঁড়িয়ে উত্তর দিলেন,’ আজ মনে হচ্ছে ছেলেটাকে আমি মানুষ করতে পারেনি, অ*মানুষ হয়েছে একটা।’খালেদ খান নির্বাক ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে আছেন, মুখে নেই তার কোন কথা।

‘ কে মানুষ হয়েছে এবং কে অ*মানুষ হয়েছে, তা বিচার করার বোধবুদ্ধি যদি তোমার থাকতো রাশেদ, তাহলে আমার ফারিশ দাদুভাইয়ের জীবনটা আজ এতো তিক্তময় হতো না। ‘

কথাটি বলতে বলতে ইরাশের সাথে করিডোরে প্রবেশ করেন রুমা খান। রুমা খানকে দেখেই, রেশমি খান খালেদ খানের দিকে তাঁকিয়ে, কাঁদতে কাঁদতে বললেন,

‘ দেখেছো? তোমার মা এতোকিছুর পরেও নিজের জা*নুয়ার নাতির সাফাই গাইছে, যেই ছেলেকে আমরা কোলে পিঠে করে মানুষ করলাম, সেই ছেলে আজ আমাদের ছেলের জীবন কে/ড়ে নিতে উঠে পরে লেগেছে।’

‘ ভুল বললে বউমা, আমার নাতিকে তোমরা মানুষ করো নি, তোমরা বিশেষ করে তুমি শুধুমাত্র স্বার্থ খুঁজেছো, আমার ছত্রছায়ায়, আমার নাতী একা একা আজ এতোদূর অবদি এসেছে! আর অন্যের ছেলেকে তুমি কী মানুষ করবে? যেখানে তোমার নিজের ছেলেই একজন চরিত্রহীন, বদমাইশ! সে তার উপযুক্ত শাস্তি পেয়েছে। ‘

‘ মা, তুমি এইসব কি বলছো? ফারিশ যা করেছে তা ক্ষমার অযোগ্য। ‘

রাশেদ খানের কথায় রুমা খান ধমকে বললেন, ‘ চুপ করো! কী ভেবেছো আমি সব জানিনা? সব জানি আমি। ইরাশ আমাকে সব বলেছে, আজ আমার অনন্যা দিদিভাইয়ের একটুর জন্যে বড় কোন সর্বনাশ হয়নি, নাহলে কী হতো আজ?’

এনাও কাঁদতে কাঁদতে জবাব দেয়, ‘ নিজের ভাই হলেও, আজ ভাইয়ের প্রতি একজন মেয়ে হিসাবে আমার ঘৃণা হচ্ছে মা, ভাইয়া তো কম মেয়ের সর্বনাশ করেনি অথচ আমার ফ্যামেলি হয়ে কী করেছি? আজ যদি তুমি বা বাবা ভাইয়াকে শাসন করতে, তাহলে আজ এই দিন দেখতে হতো না। ফারিশ ভাই একদম ঠিক করেছে। আরশ ভাইয়াকে তার যোগ্য শাস্তি দিয়েছে। ‘

বলেই আরকদফা কেঁদে ফেলে এনা। এনার কথা শুনে রেশমি খান চুপ হয়ে যান। ইরাশের পাশে শফিক ছিলো, এনার কান্না কেন যেনো তার ভালো লাগছে না। বারংবার বলতে ইচ্ছে করছে,’ ম্যাডাম আপনি একজন রাজকুমারী। ওইযে ছোটবেলার ঠাকুমার ঝুলির সেই রাজকুমারী, কত মায়াবী! রাজকুমারীদের কাঁদলে মানায় না, আপনাকে হাসলেই ভালো লাগে। আমি তো আপনার রাজ্যের সামান্য এক সেনা মাত্র, তবুও আপনার কান্না সহ্য হয় না, বড্ড পিড়ন দেয় আপনার কান্না। ‘

এনা বাইরের দিকে চলে গেলো। শফিকও কি ভেবে যেন এনার পিছনে পিছনে গেলো। অত:পর দৌড়ে এনার সামনে দাঁড়িয়ে, নিজের পকেট থেকে রুমাল বের করে, তাতে ঝাড় দিতে দিতে বললো, ‘ ম্যাডাম এই নিন, একদম পরিষ্কার রুমাল, আজ সকালে ৮০ টাকা দিয়ে কিনেছে। একদম ঝকঝকে আপনি আপনার চোখের জলটা মুছতে পারেন। ‘

এনা কোনপ্রকার অবাক হলো না বরং রুমাল টা হাতে নিয়ে চোখ মুছে, শফিককে ফেরত দিয়ে, আবারোও করিডোরের দিকে পা বাড়ালো।

_______
অপরদিকে, জুঁইয়ের ঠিক সামনাসামনি বসে আছে অভি পায়ের উপর পা তুলে। জুঁই বিরক্ত হয়ে উঠে দাঁড়িয়ে বলে, ‘ তুমি আসলে কী চাইছো আমাকে বলবে অভি?’

‘ ফারিশ খান সম্পূর্ন এক মিথ্যে নাটক সাঁজিয়েছে অনন্যার বিরুদ্ধে, তার প্রমাণ করে দিবে, তুমি। কেইস আবারো সাঁজাবো।’

জুঁই অবাক হয়ে বলে, ‘ আর ইউ ম্যাড? আমি আমার ভালোবাসার মানুষের বিরুদ্ধে প্রমাণ দিবো? কখনোই না।’

‘ তুমি তা করতে বাধ্য জুঁই, নাহলে আমার কাছে যেই ভিডিও টা আছে, সেই ভিডিওটা যদি একবার ফারিশের হাতে পরে এবং সে যদি জানতে পারে, সমস্ত প্ল্যান তোমার, তাহলে বুঝতেই পারছো কী হবে! ‘

জুঁই মাথা নিচু করে ফেলে তার হাত-পা কাঁপছে। অভি বাঁকা হেসে বেড়িয়ে যায়।

অপরদিকে,

অনন্যাকে নিয়ে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছে ফারিশ। গাড়ি ড্রাইভ করছে সে নিরবে। অনন্যা হঠাৎ প্রশ্ন করে,

‘ আপনার হঠাৎ এমন পরিবর্তন?’

‘ মানে?’

‘ এইযে, আমাকে মুক্তি দিয়ে দিচ্ছেন। ‘

ফারিশ আনমনে বিড়বিড়িয়ে বলে উঠে, ‘ আপনাকে আকড়ে ধরার সাধ্য যে নেই মিস অনন্যা। ‘

চলবে।

#প্রণয়ের_রংধনু
#পর্ব- ৩৯
#Jannatul_ferdosi_rimi (লেখিকা)
ফারিশের কাঁধে অনন্যার মাথা ঠেকতেই, ফারিশ এক মুহুর্তের জন্যে শিউরে উঠে। গাড়ির মিররে দেখতে পায় অনন্যা ঘুমিয়ে পরেছে, এমনিতেই সারাদিন যথেষ্ট ধকল গিয়েছে মেয়েটার শরীরের উপর দিয়ে, তার মধ্যে আবার লং জার্নি, ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পরেছে। ফারিশ এক হাত দিয়ে ড্রাইভ করছে এবং অপর হাত দিয়ে পরম যত্নে অনন্যার চুলগুলো কপাল থেকে যত্নের সাথে সরিয়ে দিলো। অত:পর কি ভেবে যেন গাড়ি থামিয়ে, মুগ্ধ নয়নে অনন্যার ক্লান্তিমাখা মুখস্রীর দিকে তাঁকিয়ে ক্ষীন্ন হেসে প্রশ্ন করলো, ‘ মিস অনন্যা! আপনি যখন আমাকে ছেড়ে চলে যাবেন তখন সবথেকে বেশি কি মিস করবো জানেন?উহু,আমি বলছি, ঘুমন্ত অবস্হায় থাকা আপনার অপূর্ব মুখস্রীখানা। আচ্ছা আমি তো অনেক অন্যায় করেছি বুঝলাম কিন্তু যখন মাঝে মাঝে আপনার ঘুমন্ত মুখখানা একটু দেখতে ইচ্ছে করবে, তখন আমি আপনার জানালা টপকে আপনাকে বারান্দা থেকে জাস্ট একটু দেখে আসবো। অনুমতি দিবেন আমায়? অনুমতি না দিলেও আমি চলে যাবো, মিস অনন্যা। ফারিশ খানের এই অধিকারটুকু আপনি কেড়ে নিতে পারেন না। ‘

ফারিশ অনুভব করছে তার বুকখানা জ্বলে যাচ্ছে। ঠোটে অজস্র কাঁপুনি, হয়তো অনেক কথা জমে আছে তার বুকে কিন্তু তা প্রকাশ করার সময় বা অধিকার কোন কিছুই তার নেই। ফারিশ দীর্ঘশ্বাস ফেলে, অনন্যার মাথা হাত বুলাতে থাকে, অনন্যা ঘুমের মাঝেই, ফারিশের বাহু চেপে ধরে ঘুমাতে থাকে, ফারিশ আরেকবার হেসে, গাড়ির ইঞ্জিন স্টার্ট দেয়।

____
অপরদিকে, জুঁইয়ের বাড়ি থেকে বেড়িয়ে আসে অভি। জুঁই একপ্রকার বাধয় হয়েই বলেছে সে থানায় গিয়ে স্বাকারত্বি দিবে পুলিশের কাছে কিন্তু তবুও অভির মনে হচ্ছে জুঁই কোনপ্রকার গন্ডগোল করার প্রয়াস করতে পারে হয়তো অনন্যার কোন বড়সড় ক্ষতিও করতে পারে, অভি ভেবেছে যদি জুঁই কোনপ্রকার চালাকি করার চেষ্টা করে তাহলে সে ফারিশকে সব বলে দিবে, অভির কানে খবর এসেছে আরশকে কীভাবে মে/রে হসপিটালে পাঠিয়েছে ফারিশ, কিন্তু অনন্যার জন্যে সে নিজের ভাইয়ের এমন অবস্হা করলো কেন? অভির মনে বড় এক খটকা লাগছে, অনন্যা কি তবে খুব গুরুত্বপূর্ণ ফারিশের জন্যে। অভি কী মনে করে যেনো সেই হাসপাতালে ফোন দিয়ে খবর নিলো, সেখান থেকে জানানো হলো, ‘ মিস অনন্যার জ্ঞান ফিরার পর পরেই, মি: ফারিশ খান তাকে তার সঙ্গে নিয়ে চলে গিয়েছেন। ‘
কথাটি শুনে অভি তার ফোনটা কেটে দিলো। তার মাথা কেন যেন কাজ করছে না, ফারিশ কি শুধু তার দায়িত্ব থেকেই এতোটা করছে নাকি এর পিছনে অন্য কারণ আছে? অভি কি ভেবে যেনো ভাবলো একবার আরশ যেখানে আছে, সেখানে যাবে। যে তার ভালোবাসার মানুষের দিকে হাত বাড়িয়েছে তার পরিনতি না দেখা অবদি তার শান্তি হবেনা। অভি হসপিটালের দিকে রওনা দিলো।

অপরদিকে, আরশের অবস্হার কথা জানতে পেরে জুঁই হসপিটালে এসে রেশমি খানের হাত ধরে বলে, ‘ ফারিশ আমার ভাইয়ের এমন অবস্হা করলো! অথচ তোমরা তাকে কিচ্ছুটি বলছো না খালা? ফারিশ কিন্তু কাজটি একদমই ঠিক করেনি।’

রেশমি খান মাথা উচু করে, কান্নামাখা গলায় বললো,

‘ যেখানে আমার ছেলের দোষ, সেখানে আমরা কী করতে পারি বল? এমন একটা কাজ করার চিন্তা ও পেলো কীভাবে? আজ যদি আমরা ফারিশের নামে কেইস ফাইল করতে যাই, সবার আগে আমার ছেলেটাই ফাঁসবে, তখন আমার অসুস্হ ছেলেটাকে নিয়ে টানাটানি। ‘

পুলিশের কথা শুনে জুঁইয়ের গলা শুকিয়ে আসে, সে ধরা গলায় বলে, ‘ এখানে ফারিশের দোষ কী? ফারিশকে সেই প্রথম দিন থেকে উষ্কাচ্ছে ওই অনন্যা, তা শারীরিক ভাবে হোক বা যেই ভাবেই হোক। আজ নিজের ভাইয়ের এমন অবস্হা কী ফারিশ নিজে নিজে করেছে কাকি? আজ আমার ভাই আরশের এমন অবস্হার জন্যে শুধুমাত্র ওই অনন্যা দায়ী। ‘

রেশমি খান জুঁইয়ের কথা শুনে আরেকদফা কেঁদে কেঁদে আরশের কেবিনের সামনে চলে যায়। অন্যদিকে, অভি আরশের খবর নিয়ে চলে যাচ্ছিলো কিন্তু জুঁইয়ের কথা তার কানে আসতেই, সে তড়িৎ গতিতে ফিরে এসে, জুঁইয়ের হাত শক্ত করে ধরে ফেলে। অভিকে এমন সময় দেখে ভয়ে শিউরে উঠে জুঁই,হয়তো এমন সময়ে সে অভিকে আশা করেনি। অভি জুঁইকে হেচকা টান দিয়ে উঠিয়ে, চেচিয়ে বলতে থাকে,

‘ কোন লজ্জা আছে তোমার? এতো বড় একটা কান্ড ঘটিয়েও আবারো তুমি অনন্যার নামে বিষ ঢালছো? মাইন্ড ইট জুঁই, তুমি জানো না ভিডিও টা কিন্তু আমার কাছে আছে। আমি কিন্তু চাইলেই ফারিশ খানের কাছে এখুনি তা পৌঁছে দিতে পারি। ‘

‘ আসলে….অভি!

তাদের কথার মাঝেই, ইয়ানা হঠাৎ এসে বলে, ‘ জুঁই আপু তুমি? কখন এলে? আর তোমার সাথে উনিই বা কে? ‘

ইয়ানার সাথে এনাও ছিলো, সে ইয়ানার কানে ফিসফিস করে বললো, ‘ আসলে উনিই সেই যার সাথে অনন্যা আপুর বিয়ে হওয়ার কথা ছিলো এবং উনাদের বিয়ের দিনই ফারিশ ভাইয়া ওই কান্ডটা করে। ‘

‘ ওহ ‘ বলে অভির দিকে তাঁকায় ইয়ানা বড় বড় চোখ করে। সাদা ফরমাল শার্টে উঁচু লম্বা এক যুবক! মুখস্রী বেশ গম্ভীর! মুখে কোন দাড়ি নেই তবে ইয়ানার মতে লোকটার মুখে দাড়ি মানাবে না এমনিতেই ভালো লাগছে। জুঁই তাদের দেখে দ্রুত অভির থেকে নিজের হাতটা সরিয়ে বললো, ‘ আমাকে খালা ওইদিকে ডাকছে, আমি বরং একটু যাই। ‘

বলেই জুঁই দৌড়ে চলে গেলো। অভি রাগান্বিত হয়ে, হাত মুষ্টিবদ্ধ করে দাঁড়িয়ে রইলো। অভিকে দাঁড়াতে দেখে এনা এগিয়ে এসে বললো, ‘ আরে অভি ভাইয়া, আপনি কখন এলেন? ‘

‘ মাত্র এসেছি, আসলে যে আমার অনন্যার সাথে এতো বড় অন্যায় করতে গিয়েছিলো তার ঠিকমতো শাস্তি হয়েছে কিনা, সেইটাই দেখতে এসেছিলাম, তুমি কিন্তু ভেবে না তোমার অমানুষ ভাইয়ের খবরাখবর নিতে এসেছি। আমার ভালোবাসার মানুষের যে ক্ষতি করতে আসবে, তাকে আমি কখনোই ক্ষমা করবো না।’

অভির কথা শুনে এনা মাথা নিচু করে ফেলে, তা দেখে ইয়ানা প্রশ্ন করে, ‘ আপনার ভালোবাসা মানে?’

‘ হ্যা, অনন্যা আমার ভালোবাসা, আমার প্রেমিকা। আই লাভ হার।’

‘ তো আপনার অনন্যা যখন বিপদে পরেছিলো তখন কোথায় ছিলো আপনার ভালোবাসা, তখন কিন্তু আমার ভাইয়াই সবার আগে ছুটে গিয়েছিলো। ‘

‘ আমি কখন কী করেছি তার কৈফিয়ত আমি আপনাকে দিবো কেন মিস আহ কি নামে যেনো?’

‘ আমার নাম ইয়ানা খান। ‘

‘ ওই যাই হোক, মিস ইয়ানা খান, আপনি কী কোন ভাবে আমার সাথে আপনার ভাইয়ার কম্পেয়ার করছেন?’

ইয়ানা হয়তো কিছু বলতে চেয়েছিলো কিন্তু এনার তার হাত চেপে তাকে চুপ করিয়ে দেয়। ইয়ানাও দমে যায়। অভি আর কোনপ্রকার কথা না বলে গটগট করে বেড়িয়ে যায়।

অপরদিকে,

অনন্যাকে নিয়ে বাড়ি পৌঁছাতেই, মিষ্টি ছুটে এসে ঝাপ্টে ধরে অনন্যাকে। অত:পর কাঁদতে কাঁদতে বলে, ‘ মা, তুমি কোথায় চলে গিয়েছিলে? তুমি জানো না? মিষ্টি তোমাকে ছাড়া থাকতে পারে না।’

অনন্যার মিষ্টির কপালে অজস্র চুমু খেয়ে বলে, ‘ আমি কোথাও যাইনি মাম্মা। আমাকে তো দুষ্টু লোক ধরে নিয়ে গিয়েছিলো।’

মিষ্টি ফারিশের দিকে তাঁকিয়ে বলে, ‘ আমি জানি, তোমাকে পঁচা লোকেরা ধরে নিয়েগিয়েছিলো এবং ড্যাড তাদের সাথে ফাইট করে, মিষ্টির মাকে আবারোও মিষ্টির কাছে ফিরিয়ে এনেছে, আই লাভ ইউ ড্যাডি। ‘

মিষ্টির কথা শুনে, ফারিশ অনন্যার কোল থেকে মিষ্টিকে নিয়ে, কপালে চুমু খেয়ে বুকে টেনে নেয়। অপরদিকে রুমা খানও অনন্যাকে দেখে বুকে টেনে নিয়ে আদর করতে করতে বলে,

‘ ক্ষমা করিস রে বোন! কম অন্যায় হয়নি তোর সাথে, পারলে বুড়িটাকে ক্ষমা করে দিস। ‘

‘ ছিহ! দাদি, তুমি অন্তত এইসব বলিও না। ‘

তাদের কথার মাঝেই, ফারিশ হঠাৎ বলে, ‘ দাদি তুমি সবাইকে ডেকে পাঠাও, আমার সকলের সাথে অনেক জরুরী কথা আছে। এমনকি আমি অভি, অনন্যার বাড়ির লোকেদেরও খবর পাঠিয়েছি। তারাও চলে আসবে। ‘

ফারিশের কথা শুনে অনন্যা ভাবতে থাকে তবে কি এইবার সত্যি ফারিশ তার কথা রাখবে?

চলবে….

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে