প্রণয়ের রংধনু পর্ব-৩৬+৩৭

0
687

#প্রণয়ের_রংধনু
#পর্ব- ৩৬
#Jannatul_ferdosi_rimi (লেখিকা)
আরশ অনন্যার শরীরের দিকে কুৎসিত নজরে তাঁকিয়ে অট্টহাসিতে মেতে উঠছে। অপরদিকে অনন্যা ভয়ে শিউরে গিয়ে বারংবার আল্লাহর নাম জপ করছে! এমন মুহুর্তে তাকে ভেঙ্গে পরলে চলবে না তাকে শক্ত থাকতে হবে। যেই মিথ্যে কলঙ্ক তার গাঁয়ে লেপ্টে আছে, তাকে সত্যিতে পরিণত হতে দিলে চলবে না। আরশ অনন্যার কাছে গিয়ে, অনন্যাকে বিছানায় শুয়িয়ে দিয়ে, পায়ের বাঁধন খুলে দেয়। অত:পর তার মুখটি অনন্যার দিকে এগিয়ে দিতেই, অনন্যা নিজের সর্বশক্তি ব্যাবহার করে , দ্রুত পা দিয়ে আরশের বুকে লাত্থি মারে, যার ফলে একটুর জন্যে ব্যাথায় কুকড়ে উঠে, আরশ অকথ্য ভাষায় চেঁচিয়ে উঠে, ‘ শা’লির তেজ এখনো যায়নি! আজকে তোকে পা’ড়ার মেয়ে বানিয়ে ছাড়বো! ব্লাডি গার্ল!’
কথাগুলো বলে আরশ আবারো এগিয়ে যেতে নিলে, অনন্যা সেসব কথাকে পরোয়া না করে, বাঁধা হাত দিয়েই, কোনরকমে বিছানার পাশে থাকা কাচের ছোট্ট ফুলের টবটি কোনরকমে আকড়ে ধরে, তা সোজা ছুড়ে মা/রে আরশের কপালে! আরশের কপাল বেয়ে রক্ত গড়াতে থাকে। তার দৃষ্টি হয়ে যায় অস্পষ্ট! সে ‘মাগো’ বলে ব্যাথায় কুকড়ে উঠে! সে সুযোগে বিছানা থেকে দ্রুত উঠে যায় অনন্যা, কিন্তু দরজার সামনে গিয়ে সে দাঁড়িয়ে পরে,কারণ আরশ তার ওড়না আকড়ে ধরেছে পিছন থেকে।

______________
অপরদিকে, ফারিশ এবং ইরাশ বাড়ি ফিরতেই, দেখলো ইশিকা খান এবং রেশমি খান বসে ছিলো ড্রাইনিং টেবিলে। রুমা খানের সাথে সোফায় বসে অনবরত কান্না করে যাচ্ছে মিষ্টি। মিষ্টিকে কাঁদতে দেখে ফারিশ এবং ইরাশ দ্রুত মিষ্টির কাছে এগিয়ে যায়। ফারিশ মিষ্টিকে কোলে নিয়ে বলে, ‘ কি হয়েছে আমার মিষ্টি মায়ের? সে কাঁদছে কেন?’
ইরাশ রুমা খানকে জিজ্ঞাসা করে, ‘ কি হলো দাদি? মিষ্টি কান্না করছে কেন এবং আমাদেরও বা কেন তুমি হঠাৎ ডেকে পাঠালে। ‘

র‍ুমা খান চিন্তুিত ভঙ্গিতে বলে, ‘আসলে….’

রুমা খানের কথার মাঝেই, রেশমি খান উঠে দাঁড়িয়ে বলে, ‘ মা আবার কী বলবে? তোমার সেই গুনধর সার্ভেন্ট! আজ সকালে, পালিয়ে গেছে। মেয়েটার যা চরিত্র! আগে থেকেই বলেছিলাম এই মেয়ে সুবিধার নয়! আজকে সুযোগ পেয়েছো, দেখো গে তার প্রেমিকের সাথে ভেগে গেছে! হু! ‘

রেশমি খানের কথা শুনে ফারিশ বলে উঠে, ‘ ওয়াট! পালিয়েছে মানে?’

ফারিশের বুকে লেপ্টে থাকা মিষ্টি দ্রুত প্রতিবাদ করে বলে, ‘ বাপি, বাপি! তুমি পঁচা রেশমি দাদির কথা শুনো না। আমার মা পালিয়ে যায়নি বরং আমার মাকে কেউ জোড় করে নিয়ে গেছে। ‘

ইশিকা তাচ্ছিল্যের সুরে বলে, ‘ হ্যা, ওই মেয়ে তো কুচি খুকি, ছেলেধরা এসে ধরে নিয়ে যাবে। খুব তো আরশের চরিত্র নিয়ে কথা তুলেছিলো ফারিশ! তা ওই মেয়ে এখন কই? নির্ঘাত পালিয়েছে কোন নতুন আশিক ধরে….’

ইশিকা খানের কথা শুনে ফারিশ চেঁচিয়ে বলে, ‘ জাস্ট স্টপ! আমি অন্তত আপনার কাছে মিস অনন্যার চরিত্রে সার্টিফিকেট চাইবো না। উনি যাই হোন, পালিয়ে যাওয়ার মেয়ে উনি নন। মিস অনন্যা একজন লড়াকু নারী। যুদ্ধের ময়দানে উনি যুদ্ধক্ষেত্রে ছেড়ে পালাবেন না। উনি নিজেকে এই বাড়িতে নির্দোশ প্রমাণ করতে এসেছেন আমি জানি, তা না করে উনি কিছুতেই পালাবার মেয়ে নন। ‘

রেশমি খান গলার স্বর উঁচু করে বলে, ‘ তাহলে তোমার সেই লড়াকু, মিস অনন্যা এখন কোথায় বাবা?’

ফারিশ চুপ হয়ে যেতেই, মিষ্টি কাঁদতে কাঁদতে বলে, ‘ বাপি আমি জানি, আমার মাকে কেউ ধরে নিয়ে গিয়েছে। ‘

ফারিশ দ্রুত মিষ্টির গালে হাত দিয়ে বলে, ‘ বলো মা! কে তোমার মাকে নিয়ে গেছে, তুমি কিছু জানো?’

মিষ্টি কিছুক্ষন চুপ থেকে বলে, ‘ মিষ্টির মা তো, মিষ্টির সামনেই বারান্দা দিয়ে হাঁটছিলো তখন এক কালো পোষাক পরা বডিগার্ড আংকেল এসে, মাকে ডেকে নিয়ে বাইরে চলে যায়। তারপর থেকেই মিষ্টির মাকে আর খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। ‘

মিষ্টির কথা শুনে, ফারিশ মিষ্টিকে নামিয়ে দিয়ে হাক ছেড়ে ডাকতে থাকে, ‘গার্ডস, গার্ডস! এখুনি সবাই আমার সামনে এসে হাজির হন। ‘

ফারিশের বাড়ির দাঁড়োয়ান এবং দেহরক্ষীদের সামনে দাঁড়িয়ে আছে ফারিশ। ফারিশ শান্ত পানে দাঁড়োয়ানের দিকে তাঁকিয়ে বলে, ‘ আপনি মিস অনন্যাকে কখন বের হতে দেখেছেন? ‘

‘ আসলে স্যার, তখন আমিও বাইরে ছিলাম। গ্রেরামে টাকা পাঠানোর জন্যে দোকানে গেছিলাম। ‘

ফারিশ সঙ্গে সঙ্গে ‘ ড্যাম ইট’ বলে চেচিয়ে উঠে প্রশ্ন করে,’ বাকিরা? আপনারা কোথায় ছিলেন? দিনের পর দিন বেতন দিয়ে কয়েকটা স্টুপিডদের বাড়ির সিকিউরিটির জন্যে রেখেছি আমি। ‘

সকলে মাথা নিচু করে ফেলে। ফারিশ কি মনে যেন, মিষ্টির দিকে পুনরায় ঝুঁকে বলে, ‘ আচ্ছা মা, তুমি বলেছিলে, গার্ডদের মধ্যে কেউ একজন তোমাদের মাকে নিয়ে গেছে, তুমি দেখো তো, এদের মধ্যে কেউ কিনা। ‘

ফারিশের কথা শুনে মিষ্টি সকল কালো পোষাক পরিহিত লোকদের পানে ফ্যালফ্যালে দৃষ্টিতে তাঁকিয়ে থাকে, যার অর্থ যে সেই ব্যাক্তিটি তাদের মধ্যে একজনও নয় তবে সে কে? ফারিশ হয়তো মিষ্টির চোখের ভাষা বুঝতে পারলো, সে দ্রুত উপরে গিয়ে নিজের ল্যাপটপ বের করে খুঁটিয়ে দেখতে লাগলো, কিন্তু অদ্ভুদ ব্যাপার হচ্ছে সিসিটিভির সমস্ত ফুটেজ উধাও! ফারিশ বুঝতে পারছে কোন ভিতরের লোক এইসবের মধ্যে জড়িত, সে কোনপ্রকার ক্লু রাখতে চাইনা বলে, সিটিটিভির সমস্ত রেকর্ড বড্ড গোপনে সরিয়ে ফেলেছে কিন্তু পরোক্ষনেই কি ভেবে যেন বাঁকা হেসে ফেলে ফারিশ অত:পর গম্ভীর মুখে নিজের ড্রয়ার থেকে আরেকটি ছোট্ট ল্যাপটপ বের করে।

_______________

অন্যদিকে,

অনন্যার ওড়না আকড়ে ধরায়, অনন্যা ভয়ে জড়োসড়ো হয়ে যায়! এইবার তার বাঁচার উপায় নেই কিন্তু তাকে অবাক করে দিয়ে, আরশ তার ওড়না হঠাৎ ছেড়ে দেয়, মাথা আকড়ে ধরে, মাটিতে লুটিয়ে পরে। হয়তো আ/ঘাত লাগায় সে অজ্ঞান হয়ে পরেছে। মনে মনে মহান আল্লাহর কাছে লাখ লাখ শুকরিয়া আদায় করে, দ্রুত নিজের বাঁধনও খুলে ফেলে রুম থেকে ছুটে বেড়িয়ে যায় অনন্যা। অনন্যা বেড়িয়ে দেখে জনমানবহীন নির্জন এক বাঙ্গলো তে তাকে আরশ নিয়ে এসেছিলো। দূরেও কোথাও মানুষের আনাগোনা নেই। অনন্যা বুঝতে পারছে সে শহর থেকে খানিকটা দূরে রয়েছে কিন্তু কোথায় আছে সে কিছুতেই বুঝতে পারছে না। অনন্যা দৌড়ে যায় কিন্তু আশে পাশে শেয়ালের ডাকে সে থমকে দাঁড়ায়! এ কোন জায়গায় চলে এলো সে? কীভাবে উদ্ধার করবে সে নিজেকে এইবার?

_____________
ফারিশের সামনে সেই কালো পোষাক পরিহিত গার্ডটি দাঁড়িয়ে আছে, যিনি অনন্যাকে মিথ্যে বলে বাইরে নিয়ে গিয়েছিলো। ফারিশের গোপন ক্যামেরাও চারদিকে ফিট করা ছিলো বিধায়, সেই ক্যামেরাতে লোকটি ধরা পরে এবং সে কোন ফারিশের গার্ড নয় বরং আরশের লোক, আপাতত লোকটার মুখ থেকেই এতোটুকুই জানা গেছে। লোকটাকে ফারিশের স্টোর রুমে ধরে নিয়ে আসা হয়েছে। লোকটা ভয়ে কাঁপছে কারণ ফারিশের হাতে মেশিং গান! ফারিশ সহ্য করতে পেরে, উঠে দাঁড়িয়ে লোকটার বুক বরাবর লাথি মে/রে বলে, ‘ আরশ কোথায় নিয়ে গেছে মিসেস অনন্যাকে, এখুনি বলবি? নাকি কপালে পিস্তল ঠু/কে দিবো?’

লোকটা দ্রুত ভয় পেয়ে বলে, ‘ আমাকে কিছু করবেন না। আমি বলছি….. ‘

ফারিশ সব জেনে ইরাশকে নিয়ে দ্রুত গাড়ি নিয়ে বের হয়ে যায়। ফারিশের চিন্তা হচ্ছে ওই আরশ কু*ত্তাটা মিসেস অনন্যার কোন ক্ষতি করে ফেললো কিনা! সে বিড়বিড়িয়ে বলছে, ‘ মিস অনন্যা একটু অপেক্ষাকরুন। আমি আসছি। ‘

এদিকে,অন্ধকার হয়ে আসছে চারদিকে। ভয়ে বারংবার শিউরে উঠছে অনন্যা। সে আরেকটু এগিয়ে যেতেই কেউ তার পিঠে হাত রাখে, তখনি সে অজ্ঞান হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পরে।

চলবে।।

#প্রণয়ের_রংধনু
#পর্ব-৩৭
#Jannatul_ferdosi_rimi (লেখিকা)
পিছন থেকে কেউ অনন্যার কাঁধে হাত রাখতেই, অনন্যা ভয়ে শিউরে উঠে ভাবে হয়তো তার পিছনে পিছনে আরশও চলে এসেছে এবং সেই ভয়েই সে অজ্ঞান হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পরে তৎক্ষনাৎ, কিন্তু তার ধারণা সম্পূর্ণ ভুল। একজন বয়স্ক মহিলা কাঠ জোগাড় করতে এসেছিলেন, তিনি অনন্যাট মতো যুবতীকে এমন জনশূন্য জায়গায় একা দেখে এগিয়ে এসে, তখনি অনন্যা অজ্ঞান হয়ে পরে। বয়স্ক মহিলাটি আশে- পাশে কাউকে না দেখে দিশাহারা হয়ে যান। তিনি বুঝতে পারছে না মেয়েটা কে? কোথা থেকেই বা এসেছে। মহিলাটির ভাবনার মাঝেই তিনি লক্ষ্য করলেন কয়েকজন ছেলের দল একসাথে তাদের দিকেই এগিয়ে আসছে। তিনি দ্রুত তাদের কাছে সাহায্যের জন্যে এগিয়ে গেলেন, ছেলেগুলোও দ্রুত মহিলার কথা শুনে, অনন্যাকে নিয়ে পাশের সরকারী হসপিটালে নিয়ে গেলো।

অপরদিকে, ফারিশ তার গার্ডদের নিয়ে ইরাশের সাথে সেই পুরনো বাংলোর সামনে গাড়ি থামিয়ে, দ্রুত বেড়িয়ে এলো। আরশের ফোনের লোকেশন ট্রাক করে তারা এখানে আসতে পেরেছে। ফারিশ দ্রুত দৌড়ে ভিতরে চলে গেলো। উপরের রুমে লাইট জ্বলতে দেখে ভয়ে বুক কেঁপে উঠে তার,তার মনে সংশয় হচ্ছে তার মিসেস অনন্যার কোন বড়সড় ক্ষতি করে ফেলেনি তো আরশ? ফারিশ দ্রুত রুমের সামনে গিয়ে থমকে দাঁড়ায়! ইরাশ ও এসে পরে। আরশ তার মাথায় হাত দিয়ে কোনকরম উঠে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে। অনন্যাকে দেখতে না পেয়ে, ফারিশ দ্রুত এগিয়ে, আরশের কলার উচুঁ করে বলে,

‘ অ*মানুষ কোথাকার! তোর এতো সাহস হয়ে গেলো? মিস অনন্যার দিকে শেষ অবধি তুই হাত বাড়িয়েছিস? কোথায় মিস অনন্যা? কী করেছিস তুই? বল নাহলে আজকে আমি তোকে ছাড়বোই না। ‘

আরশের উত্তরের অপেক্ষা না করে, ক্রমাগত তাকে ঘু*ষি মার/তে থাকে। অপরদিকে ইরাশ বাড়ির চারিদিকে অনন্যাকে খুঁজছে। আরশ বারংবার বলার কিছু চেষ্টা করছে কিন্তু সে পারছে না। ফারিশ পাগলের মতো তাকে লাথি – ঘু*ষি অনাবরত মে/রেই যাচ্ছে। ফারিশ আরশের কলার চেপে ধরে চিৎকার করে বলে, ‘ শেষবারের মতো বলছি আরশ! মিস অনন্যা কোথায়? উনার কোন ক্ষ/তি করেছিস তুই? কোথায় উনি?’

আরশ জোড়ে জোড়ে নি:শ্বাস ফেলতে ফেলতে বলে,

‘ ভাই বিশ্বাস করো, আমি জানিনা ওই মেয়ে কোথায়! আস্ত চালাক একটা মেয়ে, আমাকে অবধি মাথায় আঘা*ত করে চলে গেছে। ‘

আরশের কথা বিশ্বাস হলো না ফারিশের বরং সে দ্বিগুন গতিতে রেগে গিয়ে হুংকা ছেড়ে একজন দেহরক্ষীকে হকি স্টিক নিয়ে আসতে বলে। সে দ্রুত হটিস্টিক নিয়ে আসলে, আরশ কিছু বলার আগেই, ফারিশ ক্ষেপে গিয়ে হটিস্টিক দিয়ে ইচ্ছেমতো পিটানো শুরু করে। আরশের মুখ থেকে গলগল করে রক্ত গড়াতে থাকে। অবস্হা বেগতিক দেখে ইরাশ এগিয়ে এসে, ফারিশকে আটকাতে চাইলে, ফারিশ ইরাশকেও ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে ফেলে হুমকির সুরে বলতে থাকে,

‘ আজকে যে আমাকে আটকাবে আমি তাকেই খু*ন করে ফেলবো। এই শু*য়োরকে আজকে ছাড় দিতে দিতে এই অবস্হায় নিয়ে এসেছি। আজকে ও আমার মিস অনন্যার দিকে হাত বাড়িয়েছে, আজকে ওকে আমি শেষ করেই ফেলবো। ‘

আরশের অবস্হা করুনপ্রায়, ইরাশ বারংবার ফারিশকে থামানোর চেষ্টা করে যাচ্ছে কিন্তু কিছুতেই পারছে না কিন্তু হঠাৎ ফারিশের ম্যানেজার শফিক দৌড়ে এসে হাপাতে হাপাতে বলে, ‘ স্যার অনন্যা ম্যাডামের খবর পাওয়া গেছে, উনি একদম সেম আছেন কিন্তু অজ্ঞানরত অবস্হায় পাশের সরকারী হসপিতালে ভর্তি আছেন। ‘

শফিকের কথা শুনে আরশকে ছেড়ে দিয়ে হটিস্টিক ফেলে,ফারিশ দ্রুত বেড়িয়ে যায় দৌড়ে। অন্যদিকে আরশের অবস্হা করুন! রক্তা/ক্ত অবস্হায় মেঝেতে পরে আছে। ইরাশ দ্রুত আরশের কাছে বসে, হসপিটালে ফোন দিয়ে এম্বুলেন্সকে ফোন করে। সে জানে আরশ একজন জঘন্য মানুষ কিন্তু যতই হোক সে তাদের ভাই। তাই সে দ্রুততম সময়ে কিছু না ভেবে বাকিদের সাহায্যে এম্বুল্যান্স এর অপেক্ষা না করে আরশকে গাড়িতে করে নিয়ে, হসপিটালের উদ্দেশ্যে রওনা হয়।

___________

জুঁই নিজের ফোনে বার বার ফোন করে যাচ্ছে আরশকে। আরশকে সে কিছুতেই ফোনে পাচ্ছে না। জুঁইয়ের বুদ্ধিতেই আরশ অনন্যার থেকে প্রতিশোধ নিতে, অনন্যাকে কিডন্যাপ করেছিলো যেন ফারিশের জীবনে কোথাও অনন্যার ছায়া না পরে কিন্তু জুঁইয়ের এখন বড্ড চিন্তা হচ্ছে, কারণ সে জানে ফারিশের ক্ষমতা সম্পর্কে। সে যদি একবার সবকিছু জেনে যায়, তাহলে তাকে শেষ করে ফেলবে অপরদিকে তার আরশের জন্যে চিন্তা হচ্ছে। ফোনটা কেন ধরছে না সে? তার ভাবনার মাঝেই, তার বাসার কলিং বেল বেজে উঠে। সে ভয়ে ঢুগ গিলে, এক পা, দু পা করে এগিয়ে দরজা খুলতেই, তড়িৎ গতিতে অভি ভিতরে ঢুকে। অভিকে দেখে চমকে উঠে জুঁই। অভি হাল্কা তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে বলে, ‘ কি অবাক হলে বুঝি? কাকে এক্সপেক্ট করেছিলে তোমার ফারিশ খানকে? তা কবে থাইল্যান্ড থেকে এসেছো?’

জুঁই জানতো অভি তার এবং ফারিশের নামে কেস সাঁজাচ্ছে তাই সে কিছুদিনের জন্যে থাইল্যান্ডে চলে গিয়েছিলো। জুঁইকে চিন্তিত অবস্হায় দেখে, অভি ঝুঁকে বলে, ‘ পৃথিবীর যে কোনাতেই থাকো না কেন, আমি ঠিক তোমাদের শাস্তি দিবোই। ‘

অভির কথা শুনে জুঁই ঘাবড়ে গিয়েও নিজেকে সামলে নিয়ে বলে, ‘ তুমি কেন এসেছো এখানে এখন?’

অভি তার ফোনটা বের করে, একটা ভিডিও বের করে মেলে ধরে জুঁইয়ের সামনে। জুঁই স্তব্ধ হয়ে যায়। কারণ ভিডিওটি আরশ এবং জুঁইয়ের। যেখানে তারা অনন্যাকে কিডন্যাপ করার প্ল্যান করছিলো তার সিসিটিভি ফুটেজ, কিন্তু এই ভিডিও কখন বা কীভাবেই বা করলো অভি?

অভি সোফায় বসে আশে পাশে তাঁকিয়ে বলে, ‘ তোমার অনুপস্হিতে আমি তোমার রুমে একটা ক্যামেরা ফিট করে গিয়েছিলাম। যদিও আংকেল আমাকে সাহায্য না করলে, আমি পারতাম না। তিনি যথেষ্ট নীতিবান একজন মানুষ। আমি জানতাম তুমি অনন্যার বড় কোন ক্ষতি করবে। এতোটা ক্ষতি করেও তোমার শান্তি হয়নি তাইনা? ছিহ! এতো জঘন্য মেয়ে তুমি! একজন মেয়ে, আরেকজন মেয়ের সর্বনাশ করতে লজ্জা করে না?’

অভি জানতো অনন্যাকে কিডন্যাপ করা হবে কিন্তু অভি সেখানে পৌঁছানোর আগেই অনন্যা সেখান থেকে বেড়িয়ে চলে গিয়েছিলো এবং ফারিশ চলে এসেছিলো। অভি আড়ালেই ছিলো এমনকি অনন্যাকে হাসপাতালে ভর্তি করানোর জন্যে ওই বৃদ্ধ মহিলার কাছে ছেলেগুলোকে অভি নিজেই পাঠিয়েছিলো। জুঁই বুঝতে পারছে না এখন সে কী করবে।

___________________

অনন্যা হাত ধরে হসপিটালের কেবিনে বসে আছে ফারিশ। নিজের কাছে আজ নিজেকেই বড্ড অসহায় মনে হচ্ছে তার। তার প্রতিশোধপরায়ানতা তাকে আজ এই পর্যন্ত নিয়ে এসেছে। যেই মেয়েটাকে সে দিনের পর দিন অপমান, লাঞ্চনা এমনকি সবথেকে জঘন্যতম অপরাধ চরিত্রহীনার মতোও কলঙ্কও সে অনন্যার গাঁয়ে লাগিয়েছে কিন্তু এই অনন্যাই তার মেয়েকে মায়ের ভালোবাসা দিয়েছে তার দাদীকে দিয়েছে যত্ন, তাকে চিনিয়েছে ভালোলাগার এক নতুন মানে! আজ এই প্রথম কোন মেয়েকে হারানোর এতোটা ভয় পেয়েছে সে।ফারিশের শুধু মনে হচ্ছে আজকে যদি আরশ অনন্যার কোন বড় ক্ষ/তি করে ফেলতো তখন কি করতো সে? ফারিশের ভাবনার মাঝেই, অনন্যা আখিজোড়া মেলে ফারিশের দিকে তাঁকায়। অনন্যাকে তাঁকাতে দেখে ফারিশ দ্রুত অনন্যার গালে হাত রেখে বলে,

‘ মিস অনন্যা? আর ইউ ওকে? দেখুন আমি আপনার মি: ফারিশ খান। দেখুন আমি কিন্তু চলে এসেছি। আমি সত্যিই আপনার কাছে অনেক অনেক দু:খিত। আরশ নামক জা*নুয়ারটাকে নিজের ভাই বলতেও লজ্জা লাগছে আমার। আপনি কিছু বলুন মিস অনন্যা, আপনি ঠিক আছেন তো?’

অনন্যা দীর্ঘশ্বাস ফেলে ফারিশের পানে চেয়ে হাসে। ফারিশের মুখস্রীতে একরাশ অনুশোচনা। এই প্রথম ফারিশের দেখে তার মনে হচ্ছে, ফারিশ আজ অনুতপ্ত! অনন্যা শান্ত গলায় বলে, ‘ আপনি সত্যি অনুতপ্ত?’

‘ হ্যা। ‘

‘ আমার একটা কথা রাখবেন তাহলে?’

‘ আপনি যা বলবেন আমি তাই করবো। ‘

‘ তবে আমায় মুক্তি দিয়ে দিন।’

চলবে……

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে