#প্রণয়ের_রংধনু
#পর্ব-৩২
#Jannatul_ferdosi_rimi (লেখিকা)
‘ আপনার বউকে বুঝি আপনি খুব ভালোবাসতেন?’
অনন্যার এমন অদ্ভুদ প্রশ্নে চমকে উঠলো ফারিশ। অত:পর বিছানার দিকে তাঁকাতেই সে বুঝতে পারলো হঠাৎ অনন্যার এমন প্রশ্নের কারণ! বিছানা ভর্তি মিষ্টির মায়ের ছবির ফ্রেম সাঁজানো। কি সুন্দর সুন্দর সব ছবি! মিষ্টির মা যথেষ্ট সুন্দরী ছিলো তা, তার প্রতিটি ছবি দেখলেই বুঝা যায় এবং প্রতিটি ছবিই ক্যান্ডিড ফটো, অনন্যার মতে। কারণ ছবিগুলো দেখলেই বুঝা যায় কোন প্রেমিক আড়াল থেকে তার প্রেয়সীর অজান্তেই তার ছবি তুলে নিয়েছে যত্ন করে। ছবি তুলার কথাগুলো মনে পরতেই, অনন্যার মনে পরলো রমনা পার্কের সেই দিনের কথা! অনন্যা এবং অভি সেদিন পার্কে বসে ছিলো। অনন্যা বায়না ধরেছিলো তাকে আইস্ক্রিম কিনে না দিলে সে কিছুতেই গান ধরবে না। প্রেমিক অভি তখন গাজরাখানা বেঞ্চে রেখে দিয়ে, আইস্ক্রিম নিতে চলে গেলে, অনন্যা খেয়াল করে কয়েকজন বাচ্চা মিলে কানামাছি খেলছে। তাদের দেখে অনন্যারও বড্ড শখ হলো সে নিজেও কানামাছি খেলবে, যেমন ভাবা তেমন কাজ! অনন্যা নিজেও বাচ্চা কাচ্চাদের সাথে কানামাছি খেলা শুরু করে দিয়েছিলো। অভি আইস্ক্রিম নিয়ে এসে অনন্যার এমন কান্ড দেখে মুচকি হেসে, পকেট থেকে ফোনটা বের করে, চট করে ছবি তুলে বলে,
‘ সত্যি অনন্যা! তুমি একটা বাচ্চা! আমার বাচ্চা বউ।’
অনন্যার অজান্তেই কত ছবি তুলে ফেলতো অভি। সেই ছবি দেখে অনন্যার সে কি হাসি! সে হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খেতো। তার অতীতের ভাবনার মাঝেই, ফারিশ বিছানা থেকে একটা ছবির ফ্রেম তুলে, অনন্যার দিকে ভ্রু কুচকে প্রশ্ন করে,
‘ কি ভাবছেন?’
অনন্যা সঙ্গে সঙ্গে মাথা নাড়িয়ে জবাব দেয়, ‘ উহুম! তেমন কিছু না। আপনি আপনার উইফের ছবিগুলো দেয়ালে না টাঙ্গিয়ে, বিছানায় রেখে দিয়েছেন কেন?’
ফারিশের মুখস্রীতে একরাশ বিরক্তির ছাপ দেখা গেলো। সে কোনপ্রকার জবাব না দিয়ে, ছবিগুলো কয়েকটা নিজের দুই হাতে নিয়ে, অনন্যাকে বললো,
‘ বাকি ছবিগুলো নিয়ে আপনি নিয়ে আসুন পাশের রুমে। দেখবেন ভুলেও যাতে কোন ছবি নষ্ট না হয়।’
অনন্যা সঙ্গে সঙ্গে মাথা নাড়িয়ে, মিষ্টির মায়ের ছবিগুলো হাতে তুলে নেয়। ফারিশ পাশের রুমে চলে যায়। অনন্যাও ফারিশের পিছনে পিছনে চলে যায়। ফারিশ পাশের রুমের দরজা খুলে, ছবির ফ্রেম গুলো একে – একে পরম যত্নের সাথে দেয়ালে লাগাতে থাকে। অনন্যা তার হাতে থাকা ফ্রেম গুলো নিয়ে, বিছানায় রাখতে দিলে, তার হাত ছিটকে একটা ফ্রেম পরে গিয়ে, টুকরো টুকরো হয়ে যায়। ফারিশ তৎক্ষনাৎ ঘুড়ে, অনন্যার কাছে এসে ধমক দিয়ে বললো,
‘ কি করলেন আপনি? ফ্রেমটা এইভাবে ভেঙ্গে দিলেন? আপনি কি আদোও কোন কাজ ঠিক মতো করতে পারেন না?’
‘ আসলে……’
‘ আসলে আমি কী? আমার সত্যিই বড় ভুল হয়ে গিয়েছে, আপনাকে দিকে এইসব কাজ করানো। আই জাস্ট ডোন্ট লাইক দিজ মিস অনন্যা। কাজের প্রতি অবহেলা আমার একদমই পছন্দ হয় না। ‘
‘ আসলে আমার ভুল হয়ে গিয়েছে, আমি সত্যি সরি।’
অনন্যা সঙ্গে সঙ্গে নীচে বসে কাচ গুলো তুলতে নিলে, একটা কাচ তার হাতের সাথে বিধে যায়। অনন্যার হাত থেকে র/ক্ত বের হলেও, অনন্যা চোখ বন্ধ করে সয়ে নেয়। অনন্যার হাত কেটে গেছে দেখে ফারিশ ‘ওহ শিট’ বলে দ্রুত ওষুধের বক্স নিয়ে এসে, ঝুকে বলে, ‘ আপনার তো হাত কেটে গেছে। দ্রুত কাচ বের না করলে, ইনফেকশন হবে। ‘
ফারিশ অনন্যার হাত ধরতে চাইলে, অনন্যা দ্রুত নিজের হাত সরিয়ে, নিজের আখিজোড়ার জল আড়াল করে, শান্ত গলায় বলে,
‘ আমার ভিতরে প্রতিনিয়ত যে বিচ্ছিরি ভয়ংকর রক্তখনন হচ্ছে সেই রক্তখননের ওষুধ কোথায় পাবো মি: ফারিশ খান?’
ফারিশ থমকে গেলো। অনন্যা সেই কাটা হাত নিয়েই ফ্রেমের কাচ গুলো তুলে রেখে দিয়ে বলতে থাকলো,
‘ বুঝলাম! অনেক ভালোবাসেন আপনি আপনার বউকে, তার একটা ছবির ফ্রেম ভেঙ্গে গেলে আপনার বুকে গিয়ে লাগে কিন্তু আমার সাথে এই প্রতিশোধের ইতি কবে ঘটবে, আদোও আমায় বলবেন দয়া করে?’
কথাগুলো বলে অনন্যা চলে যেতে নিলেই, পিছন থেকে খপ করে অনন্যার হাত ধরে ফারিশ হেচকা টান মারতেই, অনন্যা গিয়ে ফারিশের বুকে গিয়ে পরে। ফারিশ আখিজোড়া বন্ধ করে বললো,
‘ আইম রেইলি সরি! আমি আসলে হুট করে রেগে কথাগুলো বলে ফেলেছি।’
ফারিশের মুখে ‘ সরি ‘ শুনে আখিজোড়া বড় বড় হয়ে যায় অনন্যার। সে দ্রুত ফারিশের থেকে সরে আসতে চাইলেও, ফারিশ তার হাত ছাড়ে না বরং অনন্যার আঙ্গুল থেকে এক টানে কাচখানা বের করে ফেলে। ব্যাথায় সামান্য ‘ উহ ‘ করে উঠে অনন্যা। ফারিশ অনন্যার হাতে ব্যান্ডিজ বাঁধতে গিয়ে বলে,
‘ যা জানেন না তা নিয়ে কমেন্টস করতে যান কেন? কি কখন ধরে ভালোবাসা, বউ করে যাচ্ছেন?’
‘ তো বলবো না? আপনার বউয়ের প্রতি আপনার সে কি ভালোবাসা! ঠিক আছে বউকে ভালোবাসেন ভালো কথা! বউকে ভালোবাসবেন না তো কী পাশের বাসার ভাবিকে ভালোবাসবেন? তাই বলে আমাকে এইভাবে কথা শুনিয়ে ফেললেন? অথচ আমি ইচ্ছে করে ভেঙ্গেও দেইনি!’
ফারিশ মুচকি হেসে ফেলে। অনন্যা মুখ বেকিয়ে প্রশ্ন করে, ‘ আপনি হাসছেন কেন?’
‘ আপনি কী একটা জিনিস লক্ষ্য করেছেন মিস অনন্যা?’
ফারিশ খুবই ধীর কন্ঠে শুধালো,
‘ আপনি আমার বুকে আসলে, হার্টব্রিট কেমন ফার্স্ট হয়ে যায়, অদ্ভুদ এক শান্তি অনুভব করি! ‘
‘ কি বললেন শুনতে পেলাম না। ‘
‘ শুনতে হবেনা। আপনি এখন আসতে পারেন। ‘
ফারিশের কথা শুনে, অনন্যা দ্রুত হাত সরিয়ে, নীচে চলে গেলো। ফারিশ দীর্ঘ শ্বাস ফেললো।
________________
অপরদিকে, শেফালির বাড়িতে বসে ছিলো অভি। অভির জন্যে চায়ের কাপ নিয়ে এসে, সোফার অপর প্রান্তে বসে শেফালি প্রশ্ন করে, ‘ অভি তুমি এমন সময়ে? কোন প্রয়োজনে?’
অভি পায়ের উপর পা তুলে, গম্ভীর গলায় জবাব দেয়, ‘ আসলে তোমাকে আমার সাথে থানায় যেতে হবে।’
শেফালি সঙ্গে সঙ্গে চমকে উঠে বলে, ‘ থানায়? তুমি আমাকে জেলে পাঠাবে অভি? কিন্তু আমি তো তোমাকে সব বলে দিয়েছি। ‘
অভি সঙ্গে সঙ্গে শেফালিকে শান্ত করে বলে, ‘ কাম ডাউন শেফালি! ফারিশ খানের বিরুদ্ধে বেশ স্ট্রং একটা কেস ফাইল করছি, সেখানে তোমার জবানবন্দী খুবই প্রয়োজনীয়! আমি শুধু চাই, ফারিশ খানকে শাস্তি দিয়ে অনন্যাকে দ্রুত ওই ফারিশ খানের বন্ধীখানা থেকে বের করতে, আই থিংক তুমিও তা চাও। ‘
‘ কিন্তু ফারিশ খান অনেক চালাক! তাকে এতো সহজে জেলে পাঠানো কী সহজ হবে?’
‘ এইবার তার বিরুদ্ধে অভি শিকদার কেইস ফাইল করছে! এমন অনেক ফারিশ খানদের আমি উচিৎ শিক্ষা দিয়েছি। নিজের ভালোবাসাকে পেতে, সবটুকু দিয়ে হলেও আমি লড়ে যাবো। তুমি আমাকে হেল্প করবে তো শেফালি শেষবারের মতো?’
শেফালি মাথা নাড়িয়ে ‘ হ্যা ‘ সূচক জবাব দেয়।
অপরদিকে, অনন্যা নীচে নেমে রান্নাঘরে এসে দাঁড়িয়ে নিজের আখিজোড়ার জল মুছে যাচ্ছে তার শুধু মনে হচ্ছে সে কোনভাবে দূর্বল হয়ে যাচ্ছে কিন্তু তার সাথে এমন হচ্ছে কেন? তার তো ভুললে চলবে না তাকে নিজেকে নির্দোশ করে এই বাড়ি থেকে যত দ্রুত সম্ভব বেড়োতে হবে, এমনকি ফারিশ নামক খারাপ মানুষটাকেও মিথ্যে প্রমাণিত করতে হবে তাকে, যে তাকে বিয়ের দিনে সকলের সামনে চরিত্রহীনা করে তুলেছিলো। অনন্যা আপন মনে বলতে থাকে, ‘ বি স্ট্রং অনন্যা! কি হয়েছে তোমার? তুমি নিজের উদ্দেশ্য থেকে এইভাবে ছিটকে যাচ্ছো কেন?’
অনন্যার ভাবনার মাঝেই, মিষ্টি এসে অনন্যাকে জড়িয়ে ধরে বলে, ‘ মা! আমার খুব ক্ষিধে পেয়েছে।’
অনন্যা ঝুঁকে মিষ্টির মাথায় হাত বুলিয়ে বলতে থাকে,
‘ ঠিক আছে আমি খাবার নিয়ে, উপরের ঘরে যাচ্ছি। তুমি নিশ্চই বাপির হাতে খাবে তাইনা?’
মিষ্টি ফোকলা দাঁতে হেসে বলে, ‘ হ্যা! একদিন বাপির হাতে আরেকদিন মিষ্টির মায়ের হাতে। ফিফটি ফিফটি! হি হি। ‘
অনন্যা হেসে ফেলে। তাদের কথার মাঝেই একজন সদর দরজার সামনে দাঁড়িয়ে বলে, ‘ মিষ্টি মা! তোমার ডেড চলে এসেছে! কাম হেয়ার মাই প্রিন্সেস!’
চলবে কী?
#প্রণয়ের_রংধনু
#পর্ব-৩৩
#Jannatul_ferdosi_rimi (লেখিকা)
সদর দরজায় দাঁড়ানো সুদর্শন এক যুবক হঠাৎ নিজেকে মিষ্টির বাবা বলে নিজেকে পরিচিত করায় অনন্যা ভিষণভাবে চমকে উঠলো। লোকটার চেহারা কেমন যেনো ফারিশের বাবার সাথে মিলে যাচ্ছে কিন্তু ভদ্র লোকটির চোখে ফারিশ কিংবা ফারিশের বাবার মতো নেই কোন মোটা ফ্রেমের চশমা! বড় বড় বাদামী মনি বিশিষ্ট আখিজোড়া।ভদ্র লোক বললে ভুল হবে অনন্যার ধারণামতে মানুষটির বয়স তেমন নয়! ফারিশের থেকে কিছুটা ছোট হবে কিংবা ফারিশের সমবয়সী ছেলে হবে। যুবকটি হাটু গেড়ে বসে, মিষ্টির গাল আলতোভাবে ধরে, সর্বপ্রথমে মিষ্টির কপালে চুমু খেলো এবং অত:পর মিষ্টিকে জড়িয়ে, আখিজোড়া বন্ধ করে কান্নার সুরে বললো, ‘ মিষ্টি মা আমার! ড্যাডের কথা কী তোমার মনে পরে না? আমার যে বড্ড মনে পরে। দেখো সবকিছু ফেলে, শুধুমাত্র তোমার জন্যে ছুটে এসেছি। ‘
অনন্যার মাথার উপর দিয়ে যেনো সব যাচ্ছে। মিষ্টি কেমন যেনো যুবকটির গাঁয়ের সাথে মিশে আছে, শান্ত হয়ে। যুবকটির পিছনে পিছনে একজন মেয়েও প্রবেশ করলো। তার গাঁয়ে মডার্ণ ড্রেস। চুলগুলো কাধ অব্দি! চোখে চিকন ফ্রেমের চশমা। তাদের দেখে করিমা এগিয়ে এসে বলে,
‘ আরে ইরাশ স্যার এবং ইয়ানা আফা আপনারা আইছেন? বড় স্যারসহ, ম্যাডাম ছোড স্যার এমনকি আরশ ভাই এবং এনা আপুও বিয়ে বাড়ি গেছে। আপ্নারা আইবেন জানতাম কিন্তু আইজক্যা আইবেন, জানতাম না। ‘
অনন্যা আপনমনে বলতে লাগলো, ‘ উনারা তাহলে, ইশিকা খান এবং রাশেদ খানের ছেলে- মেয়ে অর্থাৎ মি: ফারিশ খানের সৎ ভাই- বোন কিন্তু উনার ভাই নিজের সৎ ভাইয়ের মেয়েকে ড্যাড বলতে বলছে কেন?’
অনন্যার ভাবনার মাঝেই, নীচে চলে আসে ফারিশ এবং রুমা খান। ফারিশ ইরাশকে দেখেই মুচকি হেসে বলে, ‘ ফাইনালি, চলে এসেছিস তোরা!’
ফারিশকে দেখেই ইরাশকে ছেড়ে মিষ্টি গিয়ে, ফারিশকে জড়িয়ে ধরে, প্রশ্ন করে,
‘ বাপি! ইরাশ চাচ্চু আমাকে ড্যাড বলতে বলছে কেন? তুমিই তো আমার বাবা, ড্যাড, বাপি এবং ইরাশ চাচ্চু আমার চাচ্চু। বাবার ভাই চাচ্চুই হয় তাইনা বাপি?’
মিষ্টির প্রশ্ন শুনে মাথা নিচু করে ফেলে ফারিশ। ইরাশ মুখস্রীখানা চুপ হয়ে যায়। ফারিশ শুকনো গলায় বলে,
‘ আসলে….’
ইরাশ হয়তো ফারিশের মনের অবস্হা বুঝতে পেরেছে, তাই সে এগিয়ে মিষ্টির কাছে হাটু গেড়ে বসে বলে, ‘ আমি জানি মাম্মাম! ফারিশ ভাইয়াই তোমার আসল ড্যাড, বাপি! আমি তো তোমার চাচ্চু! ইটস ওকে সোনা! তুমি বড় হও, আশা করি নিজে থেকেই সব বুঝে যাবে। ‘
ইরাশ কথাটি বলে ফারিশকে নিজের আখিজোড়া দিয়ে আস্বস্হ করে এবং ফারিশ ও শুকনো হাসি উপহার দেয়। এতোকিছুর মধ্যে ইয়ানা এসে ফারিশকে জড়িয়ে ধরে বলে, ‘ কেমন আছো ভাইয়া তুমি?’
ইয়ানা দুই হাত দিয়ে, তার দুই ভাই বোন ইরাশ এবং ইয়ানাকে জড়িয়ে ধরে বলে, ‘ এখন তোরা চলে এসেছিস, এখন কী করে খারাপ থাকতে পারি?’
অনন্যা মুগ্ধ নয়নে ভাই-বোনদের ভালোবাসা দেখছে। ইরাশ এবং ইয়ানার সাথে ফারিশ যেন অন্য এক মানুষ! তাদের বাবা- মাকে সহ্য করতে না পারলেও মানুষটা তার সৎ ভাই- বোনদের ঠিকই ভালোবাসে এমনকি ইরাশ এবং ইয়ানাও যথেষ্ট সম্মান করে ফারিশকে। রুমা খান অনন্যার পাশে দাঁড়িয়ে মুচকি হেসে বলে, ‘ কীরে বোন? অবাক হচ্ছিস নাকি? ফারিশ তার ভাই-বোনদের খুব ভালোবাসে সেই ছোট থেকে। যখন ওরা বিদেশে চলে গিয়েছিলো তখন আমার ছোট্ট ফারিশ দাদুভাইয়ের সে কি কান্না! শুধুমাত্র ছোট্ট ভাই- বোনদের দিকে তাঁকিয়ে, সে এখনো সবকিছু সহ্য করে যাচ্ছে। এদের জন্যেই এতো অন্যায় করেও রাশেদ এবং ইশিকা এখনো অবদি টিকে আছে। বলেছিলাম না? আমার দাদুভাই অনেক ভালো মানুষ রে! যতই খারাপ হওয়ার চেষ্টা করুক, দিনশেষে আমার ফারিশ দাদুভাই একজন খাটি হিরে রে!’
অনন্যা রুমা খানের দিকে ছলছল নয়নে তাঁকায়! সত্যি যত দিন যাচ্ছে তত যেন নতুন করে চিনছে ফারিশকে সে। রুমা খান হঠাৎ বলে উঠলেন,
‘ কিরে ইরাশ এবং ইয়ানা! বয়স হয়ে যাচ্ছে বলে কী এই বুড়ি দাদিকেও মনে রাখবি না?’
রুমা খানের কথা শুনে ইরাশ এবং ইয়ানা গিয়ে রুমা খানকে জড়িয়ে, নানা ধরণের কথা বলা শুরু করে।
এতোকিছুর মধ্যে মিষ্টি গিয়ে, অনন্যার হাত ধরে সকলের সামনে এনে বলে, ‘ এইযে ইরাশ চাচ্চু এবং ইয়ানা ফুপি তোমরা কী মিষ্টির মাকে ভুলে গেলে? আমার মা ও যে দাঁড়িয়ে আছে, দেখছো না?’
অনন্যার রান্নাঘরের কোণায় দাঁড়িয়ে ছিলো বলে, ইরাশ কিংবা ইয়ানা কারো চোখই সেদিকে যায়নি। ইরাশ অনন্যার দিকে কেমন অদ্ভুদ দৃষ্টিতে তাঁকিয়ে হুট করে বলতে থাকে,’ ইশিতা! ‘
অনন্যা চমকে উঠে! ফারিশও চমকে উঠলো ইরাশের কথা শুনে। ইরাশ সঙ্গে সঙ্গে ঘোর কাটিয়ে বলতে থাকে, ‘ সরি! আমার মিস্টেক! আপনার এবং ইশিতার ফেসের কিছুটা মিল রয়েছে। কিছু মনে করবেন না। আপনিই বুঝি সেই অনন্যা? আমার মেয়ে তো আপনাকে পেয়ে নিজের মায়ের অভাব একপ্রকার পূরণ করেই নিয়েছে। ভাইয়ার মুখে শুনেছি আপনিও যথেষ্ট ভালোবাসেন আমার মেয়েকে। ‘
ইরাশের মুখে ‘ আমার মেয়ে ‘ শব্দটি শুনে বেশ খটকা লাগছে অনন্যার। মনে হচ্ছে এইখানেও রহস্য! অনন্যার ধারণামতে ইশিতা মিষ্টির আসল মা এবং ফারিশের স্ত্রী! তবে এই ছেলেটির সম্পর্কে সে ভাবি হবে তবে তাকে নাম ধরে ডাকছে কেন? অনন্যা নিজের কৈতিহূলকে দমিয়ে রাখতে না পেরে বলে,
‘ আপনার ইশিতা ভাবির সাথে আমার ফেসের কিছু মিল থাকায়, মিষ্টিও আমাকে তার মায়ের সাথে গুলিয়ে ফেলেছে, যদিও মি: ফারিশ খান তার ওয়াইফের সাথে আমার কোন মিল নেই এমনটাই বলে বেড়ায়!’
অনন্যার কথা শুনে কাশতে থাকে ইরাশ! ফারিশের মাথায় হাত! করিমাও মুখ চেপে হাসতে থাকে। রুমা খান এবং ইয়ানাও মুচকি হাসতে থাকে। ইরাশ নিজেকে সামলে বলে উঠে, ‘ ইশিতা আমার ভাবি?’
‘ তো? নিজের বড় ভাইয়ের বউ ভাবি নয় তো কী? ‘
অনন্যার কথা শুনে ইরাশ ফ্যালফ্যালে নয়নে তাঁকায় ফারিশের দিকে। ফারিশ কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে পরে। অত:পর অনন্যার দিকে তাঁকিয়ে ধমকে বলে উঠে,
‘ কি কখন ধরে আপনি ওয়াইফ ওয়াউফ করে যাচ্ছে?জাস্ট শাট আপ!’
অনন্যা পাল্টা জবাব দিয়ে বলে, ‘কিসের শাট আপ?
আপনি নিজের বউকে নিয়ে কথা বলতে এতো লজ্জা পান কেন? আপনি নিজের বউকে ভালোবাসেন আমি তো জানি! এইযে আপনারা জানেন? আমার থেকে সামান্য একটা ছবির ফ্রেম পরে গিয়েছিলো বলে, কীভাবে রেগে গিয়েছিলো? উনি যথেষ্ট পসিসিভ নিজের বউকে নিয়ে। ‘
ইরাশ বড় বড় চোখ করে বলে, ‘ বউ! কিসব বলছেন উনি?’
ফারিশ দ্রুত ইরাশকে উপরে নিয়ে যেতে যেতে, করিমাকে উদ্দেশ্য করে বলে, ‘ করিমা উনাকে নিয়ে যাও। না জেনে শুনে যাতা বলে!এই ক্রেজি গার্লের জন্যে আজকে আমার ভাই হার্ট অ্যাটাক করবে।’
অনন্যা কোমড়ে হাত দিয়ে বলে, ‘ এই এই! কি বললেন! আমি ক্রেজি গার্ল?’
অনন্যা হয়তো কিছু বলতে চেয়েছিলো কিন্তু করিমাকে তাকে টেনে ঘরে নিয়ে যায়। অনন্যা রেগে বলে, ‘ তুমি আমাকে নিয়ে এলে কেন করিমা আপু? উনি আমাকে ক্রেজি গার্ল বললো! আমি কী এমন ভুল বলেছি হ্যা?’
করিমা মাথা চাপড়ে বলতে থাকে, ‘ আপনে ভুল বলেন নাই? অবিবাহিত একজন পুরুষকে আপনি বার বার বিবাহিত বানাইয়া দিতাছেন! তার মধ্যে আবার তার ভাইয়ের গার্ল ফ্রেরেন্ডকে তার বউ বানাইয়া দিতাছেন।’
‘ মানে কিসব বলে যাচ্ছো করিমা আপু? উনি কী করে অবিবাহিত হয়? তাহলে উনার মেয়ে আসলো কী করে এবং উনার বউ ইশিতা…..’
অনন্যার সম্পূর্ণ কথা শেষ করার পূর্বেই, করিমা বলে উঠে, ‘ মিষ্টি ফারিশ স্যারের না বরং ইশিতা ম্যাডাম এবং ইরাশ স্যারের মেয়ে। ‘
অনন্যা তৎক্ষনাৎ উঠে দাঁড়িয়ে বলে, ‘ কিহ!’
_______________________
অপরদিকে, ফারিশের মুখ থেকে সবকিছু শুনে হাসতে হাসতে শেষ ইরাশ। সে বিছানায় শুয়ে থেকেই বলতে থাকে, ‘ বাহ ভাই! আমার সিংগাল ভাইটার গাঁয়ে কিনা শেষে গিয়ে, বিবাহিত এর ট্যাম্প লেগে গেলো? ওয়্যাট দ্যা…’
‘ শাট আপ ইরাশ! হাসবি না একদম। মিস অনন্যা একজন ইডিয়েট টাইপ মানুষ! ভালো করে কিছু জানবে না, না জেনেই নিজের মনে মনে কাহিনী বানিয়ে ফেলে। এতো বোকা ও হয় মানুষ?আই জাস্ট ডোন্ট লাইক দিজ!’
ইরাশ হাসি থামিয়ে, হঠাৎ বলে উঠে, ‘ বাট ব্রো! আমার মনে হচ্ছে ইউ লাইক হার!’
ফারিশ তৎক্ষনাৎ চমকে বলে, ‘ কিসব বলছিস? আই ডোন্ট লাইক হার অলসো! উনি আমার এনেমির মেয়ে, তাই আমি উনাকে দিয়ে নিজের উদ্দেশ্য সফল করাতে নিয়ে এসেছি! এখন এইসব নোনসেন্স কথা বাদ দে এবং আমার সাথে আয়। ‘
ইরাশ ফারিশের কথা শুনে, উঠে ফারিশের সাথে পাশের ঘরে গিয়ে একদম অবাক হয়ে যায়। পুরো ঘর জুড়ে, ইশিতার ছবি! ইরাশ সেই ছবি ভালো করে ছুঁইয়ে দিয়ে বলে,
‘ এই ছবিগুলো তো আমি তুলেছিলাম, ইশিতার আড়ালে! তুই এখনো সামলে রেখে দিয়েছিস ভাই?’
ফারিশ মুচকি হেসে বলে, ‘ তোর পছন্দ হয়েছে ঘরটা? আমি সাঁজিয়েছে উহু! শুধু আমি না, ওই মিসেস অনন্যা ও টুকটাক হেল্প করেছে আমাকে।’
ইরাশ খুশি হয়ে ফারিশকে জড়িয়ে বলতে থাকে, ‘ থ্যাংক ইউ ভাই! থ্যাংকস ফর এভ্রিথিং। ‘
ফারিশ কিছু বলার পূর্বেই, তার ফোনে কল চলে আসে। সে একটু সাইডে গিয়ে দেখে থানা থেকে ফোন এসেছে।
চলবে কী?