#প্রণয়ের_রংধনু
#পর্ব- ৩০
#Jannatul_ferdosi_rimi (লেখিকা)
অনন্যার বলা ‘ আপনার হাসি খুব সুন্দর ‘ কথাটি গিয়ে বুকে গিয়ে লাগলো ফারিশের। অনন্যার অধরের কোণে মুচকি মুচকি হাসি বিদ্যমান! সেই দৃশ্যটাও আজ বড্ড ভালো লাগলো ফারিশের কাছে।
তার নিজের কাছে নিজেকেই বড্ড অদ্ভুদ লাগছে! কি এমন হলো তার? সে অনন্যার প্রতিটি ছোট্ট ছোট্ট বিষয় অতি নিঁখুত ভাবে পর্যবেক্ষন করছে ইদানিং, শুধুমাত্র পর্যবেক্ষন করেনি বরং তাতে মুগ্ধ হয়েছে বারংবার। সে শুধু উঠে দাঁড়িয়ে, মিষ্টির মাথায় হাত বুলিয়ে, ওয়াশরুমে চলে যেতে নিলে, অনন্যা হাসি থামিয়ে হঠাৎ বললো, ‘ আপনার টাওয়াল নিতে ভুলে যাচ্ছেন। ‘
বলেই বারান্দা থেকে টাওয়াল নিয়ে, ফারিশের হাতে ধরিয়ে দিলো অনন্যা। ফারিশ ছোট্ট করে ‘ থ্যাংকস’
বলে ওয়াশরুমে চলে গেলো। ফারিশের এমন ব্যাবহারে কিছুটা চমকে উঠলো অনন্যা। তার ধারণামতে ফারিশ নামক লোকটি তাকে হুকুম করে নিজে থেকেই এইসব কাজ করার আদেশ দেয় দাম্ভিকতার সাথে, সেখানে আজ পুরো উল্টো! তাকে ধন্যবাদ জানালো বিষয়টি ঠিকমতো হজম করে উঠতে পারলো না অনন্যা। আজকাল ফারিশের আচরণ বেশ অদ্ভুদ লাগে তার কাছে, মানুষটা কেমন যেনো পরিবর্তন হয়ে যাচ্ছে। অনন্যার ভাবনার মাঝেই, মিষ্টি অনন্যার ওড়না টান দিয়ে বলে,
‘ মিষ্টি মা! আমার তো স্কুলের জন্যে লেট হয়ে যাচ্ছে। ‘
‘ ওহ হ্যা! একদম লেট হয়ে যাচ্ছে। আচ্ছা আমি এখুনি নিচে গিয়ে ব্রেকফাস্ট বানিয়ে ফেলি, ততক্ষনে তোমার খারুশ বাপিও গোসল করে চলে আসবে। ‘
মিষ্টি ‘খারুশ বাপি ‘ শব্দটি পুনরায় শুনে হেসে লুটিপুটি খেতে লাগলো। সে অনেকটা ভাবনার ভঙ্গিমায় থুত্নিতে হাত রেখে বললো, ‘ আচ্ছা মিষ্টি মা, আমি যদি তোমার মতো বাপিকে খারুশ বাপি বলে ডাকি, তবে কেমন হবে? ‘
‘ অনেক ভয়ংকর হবে। তোমার খারুশ বাপ শুনলে, মিষ্টি এবং মিষ্টির মা দুজনকেই পানিশ করবে। হা হা। এখন নীচে চলো মা। ‘
‘ উহু! আমার খেতে ইচ্ছে করছে না। আজকেও ব্রেকফাস্টে দুধ থাকবে। ‘
‘ এইসব কি কথা মা? আজকে না কম্পিটিশন? তোমাকে তো জিততে হবে তাইনা?তুমি তো দাদি সেঁজেছো তাইনা? আর আমাদের দাদি মিসেস রুনা খান কি উইক বলো? সে কত স্ট্রং এই বিষয়েও! কারণ দাদি প্রতিদিন দুধ খায়, তাই তোমাক শুধু দাদি সাঁজলেই চলবে না তার মতো স্ট্রং ও হতে হবে। আজকে কিন্তু কোন বাহানা চলবে না মা। ‘
কথাগুলো বলেই মিষ্টিকে কোলে নিয়ে নীচে চলে গেলো অনন্যা।
____________________
অভি অফিসের ব্যাগ হাতে নিয়ে, বের হতে নিচ্ছিলো তখন পিছন থেকে অভির মা ছেলেকে দেখে, রান্নাঘর থেকে বেড়িয়ে এসে বললেন, ‘ কিরে অভি? কোথায় যাচ্ছিস তুই? ‘
‘ অফিসে যাচ্ছি আর্জেন্ট অনেক কাজ পরে আছে।’
‘ আর্জেন্ট কাজ বলতে? কি এমন কাজ যে ব্রেকফাস্ট না করে বেড়িয়ে যাচ্ছো। ‘
অভি মায়ের দিকে ঘুড়ে, মায়ের কাধে হাত রেখে তীব্র কন্ঠে বলে উঠে, ‘ ক্যাস সাঁজাবো, মি: ফারিশ খান এবং জুঁইয়ের বিরুদ্ধে, সমস্ত প্রমাণ গুছিয়ে রাখা আছে। আমাকে এবং আমার অনন্যাকে যারা দিনের পর দিন দূরে সরিয়ে রেখেছে, এতো বড় অন্যায় করেছে তাদের কি আমি ছেড়ে দিবো? ওদের উপযুক্ত শাস্তি দিয়ে ছাড়বো। ‘
‘ কিন্তু অভি! এইসব করে কী আদোও লাভ হবে?’
‘ অবশ্যই হবে। দেখো, অনন্যা আমাকে যতই দূরে সরিয়ে রাখুক, আমি ওকে জেনে বুঝে কষ্ট পেতে দেখতে পারি না। ফারিশ খানের মতো জঘন্য মানুষের অত্যাচারের মধ্যে আমি আমার অনন্যাকে কিছুতেই থাকতে দিবো না। ফারিশ খানকে জেলে পাঠিয়ে, আমি আমার অনন্যাকে নিয়ে আসবো। তারপর সকলের সামনে সামাজিক মর্যাদা দিয়ে, আমার ভালোবাসার মানুষকে, আমার বউ করে ঘরে তুলবো।’
অভির মা নিষ্পলকভাবে ছেলের দিকে তাঁকালেন। তার ছেলেটা বড্ড ভালোবাসে অনন্যা কিন্তু তার ভয় হয় এতো ভালোবাসার কারণে কিছু কিছু মানুষ দিনশেষে তার ভালোবাসার মানুষকে হারিয়ে ফেলে।
অভির বেলায় তা হলে কী হবে তখন? অভির মা বললেন, ‘ তোমাকে কেমন দুশ্চিন্তগ্রস্হ লাগছে।’
‘ কেমন যেনো ভয় করছে। বারংবার শুধু বিয়ের দিনে বলা অনন্যার কথাগুলো মনে পরছে, মনে হচ্ছে…..’
‘ কি মনে হচ্ছে? ‘
অভি বিড়বিড়িয়ে বলছে, ‘ মনে হচ্ছে বিচ্ছেদ অতী নিকটে, কিন্তু বিচ্ছেদের স্বাদ যে বড় বিষাদময়! সইতে পাওয়া ক্ষমতা কই?’
____________________
অপরদিকে, অনন্যাকে মিষ্টিকে কোলে নিয়ে, টেবিলে বসিয়ে দিলো রান্নাঘরে। অত:পর টেবিলে একে একে খালেদ খান, রেশমি খান, আরশ এবং এনাও চলে আসলো। সকলেই বেশ মুগ্ধ হয়ে মিষ্টির দিকে তাঁকালো। এনা মিষ্টিকে কোলে নিয়ে বললো,
‘ আমার মিষ্টি ফুপি বুঝি আজ দাদি সেঁজেছে, বাহ! একদম পুরো দাদির মতো দেখতে লাগছে। ‘
আরশ মাঝখান থেকে বলে, ‘ পুরো জুনিয়ার দাদী লাগছে আমার চাচ্চুকে। ‘
মিষ্টি ফোঁকলা দাত দিয়ে হেসে বলে, ‘ থ্যাংক ইউ। ‘
এনা ‘ওলে সোনা ‘ বলে মিষ্টির গাল টিপে দিয়ে হেসে উঠলো। রান্নাঘর থেকে সবকিছু শুনে অনন্যাও বেশ খুশি হলো। তাদের কথাবার্তার মাঝখানে রুমা খান ও এসেই মিষ্টিকে কোলে নিয়ে বললেন, ‘ আমার মিষ্টি মাকে তো দেখি চেনাই যাচ্ছে না। এমা! কি সুন্দর লাগছে। পুরো আমার পাকনা বুড়ি। ‘
এনা হেসে বলে, ‘ নেক্সট জেনারেশনের জুনিয়র রুমা খান হতে চলেছেন তিনি। ‘
‘ তা এমন সুন্দর করে কে সাঁজিয়েছে আমার পাঁকা বুড়িটাকে? ‘
অনন্যা টেবিলে নাস্তা নিয়ে আসতেই, রুমা খানের প্রশ্নের জবাবে মিষ্টি তাকে ইশারা করে বলে, ‘ কে আবার? আমার মিষ্টি মা আমাকে সাঁজিয়েছে, যেমন খুশি, তেমন সাঁজো প্রতিযোগিতার জন্য। ‘
‘ বাহ! বাহ সত্যি অনন্যা তুমি একটা জিনিয়াস। ‘
এনাও সায় দিয়ে বললো, ‘ অনন্যা তুমি যেমন ভালো করে সাঁজিয়েছো, আমাদের বুড়ি ফার্স্ট হয়েই যাবে।’
অনন্যা হাল্কা হেসে ব্রেডে জেল লাগিয়ে, মিষ্টিকে খায়িয়ে দিতে লাগলো। রেশমি খান সবকিছু শুনে মুখ ভেংচি দিয়ে কাটলো। অপরদিকে আরশ অনন্যার দিকে রাগান্বিত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। কাটা চামচ হাতে নিয়ে শক্ত হাতে ধরে আছে। সে বিড়বিড় করে বলতে লাগলো, ‘ জাস্ট একটা চান্স! তোমার জন্যে আমার বোনকে বাড়ি থেকে বের হতে হয়েছে, আমাকে এবং আমার মাকে এতো বাজে ভাবে অপমান করা হয়েছে, আমি তো তোমাকে কিছুতেই ছাড়বো না অনন্যা। চরিত্রহীনার ট্যাগ খুব ভালোভাবে লাগিয়ে দিবো, তোমাকে। আরশ খান তার শিকার ধরতে কখনো ভুল করে না।’
‘ এমনভাবে কি দেখছিস আরশ? মনে হচ্ছে যেনো চোখ দিয়েই গিলে ফেলবি? ‘
হঠাৎ ফারিশের এমন কথা শুনে দ্রুত পিছনে ঘুড়ে তাঁকাশ আরশ। ফারিশের আস্তে করে কথাটি বলায়, আরশ ছাড়া তেমন কেউ শুনতে পায়নি। আরশ নিজের দৃষ্টি সরিয়ে, কিছু বলতে চাইলে, ফারিশ পুনরায় আরশের কানে ধীর কন্ঠে বলে উঠে,
‘ সেই প্রবাদ বাক্যটা মনে আছে আরশ? পিপীলিকার পাখা গজায় মরিবার তরে। সো বি কেয়ারফুল মাই ব্রাদার। ‘
ফারিশ আরশের কাঁধে হাত রেখে কথাটি বলেই, আরেকটি চেয়ার নিয়ে বসে পরে। আরশ শুকনো ঢুগ গিললো। সে বুঝতে পারছে না ফারিশ তাকে কি বুঝাতে চাইছে? ফারিশ কী কোনভাবে তাকে থ্রেট দিচ্ছে? আরশের ভাবনার মাঝেই, রুমা খান খালেদ খানকে প্রশ্ন করলো, ‘ তোকে এতো চিন্তিত লাগছে কেন খালেদ? কিছু হয়েছে? ‘
খালেদ খান মাথা নিচু করে বসে ছিলেন। মায়ের এমন কথা শুনে, অসহায় ভঙ্গিতে ফ্যালফ্যালে দৃষ্টিতে ফারিশের দিকে তাঁকালেন। অত:পর বললেন,
‘ ফারিশ একটা কথা বলবো বলে ভাবছিলাম, অনেক্ষন যাবৎ! রাগ করবে বলে, ঠিক বলে উঠতে পারেনি। ‘
‘ কি কথা? ‘
খালেদ খান বলার পূর্বেই,মিষ্টি ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বললো, ‘ আমার কম্পিটিশন তো এখুনি শুরু হয়ে যাবে। ‘
অনন্যাও তড়িৎ গতিতে ফারিশের হাতে ব্যাগ ধরিয়ে বললো, ‘ আপনি তাড়াতাড়ি মিষ্টিকে নিয়ে যান। লেট হলে আবার মার্কস কেটে নিতে পারে। ‘
ফারিশ দ্রুত চা শেষ করে, মিষ্টির ব্যাগ হাতে নিয়ে, মিষ্টিকে নিয়ে বাইরের দিকে চলে গেলো। তাদের পিছন পিছন দরজা অবদি এগিয়ে দিতে অনন্যাও পিছনে গেলো। এমন দৃশ্য দেখে মুচকি হেসে রুমা খান ধীর কন্ঠে বললো, ‘ বর্তমানে একটি সুন্দর ফ্যামেলির সিকিউয়্যাল চলছে। বাবা- মা এবং তাদের মিষ্টি মেয়ে। বেশ মানিয়েছে। কনটিনিউ। ‘
এতোসব কিছুর মধ্যে খালেদ খানের সেই জরুরী কথাগুলো বলা হয়ে উঠতে পারলো না অথচ কথাগুলো অত্যান্ত জরুরী। তিনি আচ করতে পারছেন আজ বাড়িতে বেশ বড় ঝামেলা হবে।
_________________
অনন্যা রান্নার মাঝে ভাবলো মরিচ গুড়ো দেওয়া প্রয়োজন। তরকারীতে ঝাল না হলে ভালো লাগে না যদিও ফারিশ ঝাল তেমন খেতে পারে না কিন্তু সামান্য পরিনান হলেও অনন্যা রান্নাতে মরিচের গুড়ো দেয় এতে তরকারী সুস্বাদু হয়। অনন্যা উপরে তাঁকিয়ে দেখলো বেশ বড় সেল্ফ মরিচের গুড়ো রাখা। অনন্যার আশে পাশে কেউ নেই যে তাকে ডেকে বলবে, ‘ শুনো ভাই? উপরের সেল্ফ অবদি আমার হাত পৌঁছোচ্ছে না, আমি খাটু মানুষ তো! একটু পেরে দিবে? রান্নায় ঝাল মিশিয়ে মি: খারুশ খানকে আজ উচিৎ শিক্ষা দিবো। ‘
কিন্তু তা বলা হলো না অনন্যার। আশে পাশে কাউকেই দেখতে পারছে না সে। তা সে নিজেই চেয়ার টেনে হাত উচু করে মরিচ গুরোর পাত্র টা নেওয়ার চেষ্টা করছে কিন্তু পারছে না। অনন্যা রান্নার চামচ হাতে নিয়ে, পাত্রটা টেনে নামানোর চেষ্টা করছে কিন্তু সে বারংবার ব্যার্থ! সে বিড়বিড়িয়ে বলে,
‘ কি মসিবতে পরলাম ভাই! এরা এতো উঁচুতে জিনিসপত্র রাখে কেন? পৃথিবীতে খাটো মানুষও আছে তা কী এরা ভুলে যায়? দূর ছাই। ‘
অনন্যা আরেকটু উচুঁ হতেই, পিছলে চেয়ার থেকে পরে যেতে নিলে, ফারিশ এসে দ্রুত অনন্যাকে কোলে তুলে নেয়। অনন্যাও ভয়ে ভয়ে ফারিশের গলা জড়িয়ে, বড় বড় নি:শ্বাস ফেলতে থাকে। ফারিশ ধমকে বলে উঠে, ‘ বাচ্চাদের মতো এইসব কী করছেন আপনি? কোন সেন্স আছে আপনার?’
‘ আসলে……’
তাদের কথার মাঝেই, মধ্য বয়স্ক মহিলা এবং মধ্য বয়ষ্ক একজন পুরুষ ঢুকে পরে। তাদের দেখেই অনন্যা এবং ফারিশ দুজনেই অবাক হয়ে যায়। ফারিশ বিড়বিড়িয়ে বলে,
‘ রাশেদ খান! ‘
চলবে কী?
#প্রণয়ের_রংধনু
#পর্ব-৩১
#Jannatul_ferdosi_rimi (লেখিকা)
ফারিশ তার বাবার সাথে তার সৎ মাকে দেখে ভ্রু কুচকে তাঁকিয়ে, অনন্যাকে নামিয়ে দিলো। অনন্যা অবাক হয়ে সেই মধ্যবয়স্ক নর-নারীর দিকে তাঁকিয়ে আছে। মধ্যবয়স্ক মহিলাটি কেমন গম্ভীর মুখে দাঁড়িয়ে আছেন, সোনালী রংয়ের কাচ করা শাড়ি পরিহিত। খোঁপা চুল, কিন্তু সাঁজের জন্যে মনে হচ্ছে কোন পূর্নবয়স্ক রমনী। অপরদিকে কালো প্যান্ট -স্যুট পরে ফরমাল ড্রেসে লাগেজ হাতে দাঁড়িয়ে আছেন রাশেদ খান! ভদ্রলোকের মাথায় চুম কম তাতেও পাঁক ধরে গেছে। মুখস্রীতে রয়েছে একপ্রকার স্নিগ্ধতা, চোখে সেই ফারিশের মতো মোটা ফ্রেমের চিরচেনা চশমা। অনন্যা লোকটিকে দেখেই চট করে বুঝে ফেললো, লোকটা আর কেউ নয় বরং ফারিশের বাবা রাশেদ খান এবং তার পাশে ভদ্র মহিলাটি রাশেদ খানের দ্বিতীয় স্ত্রী ইশিকা খান। রাশেদ খানের চুল যদি ফারিশের মতো এই বয়সে এসেও বেশি থাকতো তবে হয়তো দুজনকে একে- অপরের ভাই মনে হতো। ফারিশের ঘরে থাকা সেই ফ্রেমে দেখে অনন্যার মতে, লোকটি যুবক বয়সে একদম ফারিশের মতো দেখতে সুদর্শন ছিলো, কিন্তু এতো কিছুর পরেও একটা কিন্তু থেকে যায়। হ্যা লোকটাকে আজ সামনাসামনি দেখে কেমন যেনো পরিচিত মনে হচ্ছে। তাহলে কী লোকটির সাথে অনন্যার কোন যোগসূত্র আছে? অনন্যার ভাবনার মাঝেই, লোকটি এগিয়ে আসলো অনন্যার দিকে, অত:পর স্তম্ভিত গলায় প্রশ্ন করলো, ‘ মা! তোমাকে কেমন পরিচিত মনে হচ্ছে, তুমি কী লতিফের মেয়ে অনন্যা? ‘
অনন্যা অবাক হয়ে গেলো! ফারিশের বাবা এবং তার বাবা কী পূর্বপরিচিত? ইশিকাও কেমন অদ্ভুদ নয়নে অনন্যার পানে চেয়ে রয়েছে। তা দেখে অধরের কোণে বাঁকা হাসি ফুটে উঠলো। ফারিশের সেই অদ্ভুদ হাসির কোন মানে খুঁজে পেলো না অনন্যা। অনন্যা কোনপ্রকার জবাব দেওয়ার পূর্বেই, উপর থেকে রেশমি খান, আরশ এবং এনা ছুটে নেমে আসে। রেশমি খান এসেই, ইশিকা খানকে জড়িয়ে বলে,
‘ আরে ভাবি! ওয়াট অ্যা সারপ্রাইজ! তোমরা আসবে আগে বলো নি কেন? যদিও তোমার দেবর বলেছিলো তোমরা আসছো কিন্তু তা যে আজকেই আসবে তা তো জানতামই না। ‘
‘ খালেদ সবই জানতো কিন্তু কাউকে বলেনি কারণ আমরা সারপ্রাইজ দিতে চেয়েছিলাম। ‘ বলেই এনা এবং আরশের মাথায় হাত বুলিয়ে সামান্য হাসলেন ইশিকা খান। এনা ইশিকার হাত ধরে প্রশ্ন করলো,
‘ কিন্তু ইরাশ ভাইয়া এবং ইয়ানা আপু আসে নি?’
‘ ওরা হয়তো কাল- পরশু আসবে। আসলে ইরাশের কয়েকটা আর্জেন্ট মিটিং আছে এবং ইয়ানারও কালকে একটা এক্সাম আছে। হয়তো ওরা কালকের ফ্লাইট ধরে চলে আসবে, ডোন্ট ওয়ারি। ‘
সকলের কথাবার্তার মাঝে, রুমা খান ও চলে এলেন।
তিনি এসেই রাশেদ খানকে দেখে বললেন, ‘ আমাদের কথা মনে পরলো তবে?’
রাশেদ খান তার মাকে জড়িয়ে ধরে বললো, ‘ অনেক বছর পরে দেখলাম তোমায়, আমায় তো তোমরা ভুলেই গেলে, আরেকজনের কথা কী আর বলবো? আমি যে তার বাবা! এতো বছর পর এসেছি, তবুও কোন হেলদোল নেই। ‘
রাশেদ খান কথাটি যে ফারিশকে উদ্দেশ্য করে বলেছে তা সকলেই বুঝতে পেরেছে! রুমা খান ভয় পেয়ে যান। বাবা- ছেলের যুদ্ধ আবার শুরু না হয়ে যায় এ ভয়ে তিনি আড়ষ্ট! ফারিশ শান্ত ভঙ্গিতেই দাঁড়িয়ে থেকে, সোফায় গিয়ে বসে পায়ের উপর পা তুলে বসে থেকে জবাব দেয়, ‘যেই ঘৃণিত ব্যাক্তিকেই, আমি বাবা বলেই পরিচয় দেইনি সে কী করে এমন এক্সপেক্টশন আমার থেকে রাখে? আমি আদোও বুঝে উঠতে পারে না। ‘
ফারিশের এমন কথা শুনে রাগে ফুশে উঠলেন ইশিকা খান। তিনি তাচ্ছিল্যের সুরে বললেন,
‘ কিসব ব্যাবহার! ছিহ! নিজের বাবাকে অবদি এই ছেলে আজ পর্যন্ত সম্মানটুকু করে উঠতে পারলো না, যাই হোক মা যেমন ছেলে তো তেমন হবেই। ‘
ইশিকার এমন কথা শুনে, রাশেদ খান হাল্কা স্বরে বলে, ‘ আহ ইশিকা! তুমি আবার ওইসব কথা তুলে আনছো কেন?’
ফারিশ বসে থেকেই জবাব দেয়,
‘ আমি আমার বাড়িতে কাকে কীভাবে ট্রিট করবো, ইটস মাই অনলি মাই অপেনিয়ন মিসেস রাশেদ খান! হ্যা এই নামের ট্যাগ পাওয়ার যোগ্য আপনি কারণ আমার মায়ের সম্মান অনেক উপরে অন্তত আপনার মতো মহিলার থেকে। আজ মায়ের শিক্ষাতেই আপনি এখনো আমার বাড়িতে দাঁড়িয়ে আছেন। ‘
ইশিকা খান রেগেমেগে বললেন, ‘ দেখলে রাশেদ? তোমার ছেলে কীভাবে কন্টিনিউসলি আমাদের অপমান করে যাচ্ছে? এর জন্যেই আমি এই বাড়িতে আসতে চাইনা, কিন্তু তুমি তো তুমিই! ফ্যামেলি – ছেলে ছাড়া তো তোমার চলেই না। এতো অপমানের পরেও কীভাবে আমি এই বাড়িতে থাকতে পারি?’
ফারিশ বাঁকা হেসে বলে, ‘ তো কী? চলে যাবেন? কোথায় যাবেন ক্যানাডা? সেখানের ও ৭০℅ শেয়ার আমার! আমার জাস্ট এক কল লাগবে, আপনাদের কম্পানি টোটালি ডিস্ট্রয় করার জন্যে, সো কিপ শাট! আমার মায়ের উপরে কোন ধরণের বাজে মন্তব্য করার আগে, নিজেদের জায়গাটা ভালো করে বিবেচনা করে নিবেন। যেই ভদ্র মহিলাকে আপনি অসম্মান করছেন তার ছেলের দয়াতেই আপনারা এখনো টিকে আছেন। ‘
ফারিশের কথা শুনে ইশিকা খানসহ উপস্হিত সকলে চুপ হয়ে যায়। অপরদিকে দুশ্চিন্তাগ্রস্হ হয়ে পরে অনন্যা! ইশিকা খানের যেমন মায়ের তেমন ছেলে কথাটির অর্থ কী দাঁড়ায়? বাবা- ছেলের মধ্যে কি এমন হয়েছে অতীতে যার ফলে এতো তিক্ততা? এদিকে কোনভাবে তার বাবা লতিফ হাওলাদারও এইসবের মধ্যে কোনভাবে জড়িত, কিন্তু কীভাবে? যার ফলস্বরুপ ফারিশ আজ এমন ভয়ংকরভাবে প্রতিশোধ নিচ্ছে তার উপর, কিন্তু সেই অতীত কী করে জানবে সে? অনন্যা হয়তো কিছু বলতে চাইছিলো কিন্তু তার পূর্বেই, ফারিশ উঠে দাঁড়িয়ে বললো, ‘ মিস অনন্যা! দ্রুত ব্লাক কফি আমার ঘরে নিয়ে আসুন। ফাস্ট! ‘
বলেই উপরে চলে যায় ফারিশ। অনন্যাও আর কিছু না ভেবে রান্নাঘরে চলে যায়। এতোকিছুর মধ্যে রুমা খানের একটি বড় খটকা লাগছে, অন্যসময় তো রাশেদ এবং স্ত্রী চলে আসলে, ফারিশ বাড়ি থেকেই চলে যায়, সেখানে ফারিশ বাড়িতে আছে এবং অদ্ভুদ ভাবে অনয়সময়ের তুলনায় শান্তও আছে। রুমা খান বিড়বিড়িয়ে বললো, ‘মনে হচ্ছে বড় কোন ঝড় আসার পূর্বের অবস্হা বর্তমানে বিরাজমান।’
__________________
অভি তার অফিসে বসে বেশ কিছু ফাইল ঘাটছে এতো কিছুর পরেও তার দুশ্চিন্তা কিছুতেই কমছে না এতো কিছু করার পরেও কি আদোও তার অনন্যা তার কাছে ফিরবে! সে জানেনা তবে তার মনে হচ্ছে অনন্যা তার ভালোবাসাকে দূরে ঠেলে দিতে পারবে না। কারণ দিনশেষে অনন্যা নিজেও অভিকে ভালোবাসে। অভি ফাইলগুলো পাশে রেখে, অনন্যার ছবিখানা বের করে, গুনগুনিয়ে গাইতে থাকলো,
‘ কি জ্বালা দিয়া গেলা মোরে।
নয়নের কাজলের পরানের বন্ধুরে, না দেখিলে পরান পোড়ে, কি দু:খ দিয়ে গেলা মোরে, নয়নের কাজল পরানের বন্ধুরে……’
________________
অনন্যা ফারিশের কফি নিয়ে ঢুকতেই, দেখতে পেলো একটা ট্রাউজার পরে, গাঁয়ে টাওয়াল জড়িয়ে, ফারিশ জেল হাতে নিয়ে চুল স্পাইক করছে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে। অনন্যার চোখ কিছুক্ষনের জন্যেও সেদিকে আটকে যায়! অনন্যা খেয়াল করেছে, চশমা ছাড়া ফারিশের আখিজোড়া অদ্ভুদ সুন্দর দেখায়। কাঠ বাদামির হালকা রং রয়েছে ফারিশের আখিজোড়ার মণিতে। অনন্যা বিড়বিড়িয়ে বলতে থাকে, ‘ লোকটা খারাপ হলেও, দেখতে একদম বলিউড হিরোদের মতো! ইসস! আমিও না কিসব বলে যাচ্ছি একজন বিয়াত্তা বেডার নামে। আল্লাহ উনার বউ উপর থেকে দেখে যদি আমার ঘাড় মটকে দেয় তখন? না, বাবা! উনার দিকে ভুলেও তাঁকানো যাবে না। কি হয়েছে তোর অনন্যা?’
অনন্যার বিড়বিড় স্পষ্ট আয়নায় দেখতে পাচ্ছে ফারিশ। ফারিশ মুচকি হেসে উঠে। অনন্যা তা দেখে অবাক হয়ে বলে, ‘ আপনি আবার আজ হাসলেন?’
‘ কেন আমি হাসলে বুঝি আপনার প্রব্লেম? ‘
কিছুটা গম্ভীর ভাবেই প্রশ্ন করলো ফারিশ। অনন্যা কফি হাতে রুমে প্রবেশ করে বললো,
‘আপনাকে সবসময় ভিলেন মার্কা হাসিতে দেখা যায়, বাট এমন নরমাল হাসিতে তেমন দেখা যায় না।’
‘ আপনি বলেছিলেন আমাকে হাসলে নাকি সুন্দর লাগে, তাই সুন্দর হওয়ার প্রচেষ্টা!’
‘ আমার কথার বুঝি আপনার কাছে দাম আছে?’
ফারিশ বিড়বিড়িয়ে বললো,
‘ তা জানি না তবে যত দিন যাচ্ছে আপনার প্রয়োজনীয়তা তত গভীরভাবে অনুভব করছি মিস অনন্যা! এমন কেন হচ্ছে বলতে পারেন?’
চলবে কী?