প্রণয়ের রংধনু পর্ব-২৩+২৪+২৫

0
683

#প্রণয়ের_রংধনু ❤️
#পর্ব- ২৩
#Jannatul_ferdosi_rimi (লেখিকা)
অভি এসে অনন্যাকে আকড়ে ধরে তৎক্ষনাৎ, যেন অনন্যা পরে না যায়। অভিকে দেখে বেশ বড়সড় ধাক্কা খায় অনন্যা। অভি অনন্যাকে ভালো করে দাঁড় করায়। অভি মায়াবী নয়নে তার স্নিগ্ধময়ী অনন্যাকে ভালো করে দেখতে থাকে। কতদিন পর দেখলো সে তাকে! কতদিনের না দেখার তৃষ্ণা আজ নিবারন হলো তার। অনন্যা উঠে দাঁড়িয়ে,অভিকে কিছু বলতে চাইলে, জুঁই তাদের মাঝখানে এসে বলে, ‘ অভি! তুমি এখানে হঠাৎ? ‘
অভি উত্তর না দিয়ে, একপলক অনন্যার দিকে তাঁকিয়ে, জুঁইয়ের উদ্দেশ্য প্রশ্ন করে, ‘ তুমি এখানে কি করছো? ফারিশ খানের সাথে তোমার কী কানেকশন?’
ততক্ষনে রেশমি খান, এনা এবং আরশও চলে আসে। রুমা খান এবং খালেদ খানও অফিসের সমস্যার কারণে, সকাল থেকে অফিসে। জুঁই আমতা আমতা করে জবাব দিলো, ‘ আসলে! তোমাকে বলা হয়নি। আমার খালা রেশমি খান সম্পর্কে ফারিশের ছোট কাকি। ওইযে আমার খালা এবং ভাই- বোন দাঁড়িয়ে আছে। ‘

বলেই রেশমি খানকে দেখিয়ে দিলো। এনা ভ্রু কুচকে তাঁকালো অভির দিকে। অত:পর জুঁইয়ের কাছে এসে ফিসফিস করে বললো, ‘ তাহলে উনি সেই অভি? যার সাথে তোর বিয়ে ঠিক হয়ে আছে? বাপরে! কি হ্যান্ডসাম!’

অভি ফের প্রশ্ন করলো, ‘ ফারিশ খান সম্পর্কে তোমার আত্বীয় হয় , তা আগে বলো নাই কেন জুঁই?’

জুঁই বুঝতে পারছে না সে কি বলবে বুঝতে পারছে না। রেশমি খান দ্রুত এগিয়ে এসে বললেন, ‘ তুমি তো অভি, তাইনা? আরে বাবা! বসো তুমি। কথা পরে হবে। আগে একটু চা খেয়ে নাও। ‘

অভি বুঝতে পারছে না কি হচ্ছে বর্তমানে! তার কাছে সবকিছু স্পষ্ট লাগছে। বর্তমানের পরিস্হিতি ঠিক মতো সামলে উঠতে পারছে না। এখানে এসে এতো ধাক্কা খাবে সে বুঝতে পারেনি। অনন্যা যে ফারিশের বাড়িতে রয়েছে তা অনেক আগে থেকেই জানতো সে কিন্তু জুঁই? সে ফারিশের আত্বীয়! তা কেন বলেনি অভিকে? অভির মনে হচ্ছে কোন একটা বড় কারণ আছে এর পিছনে। অভির মনে হচ্ছে সবাই মিলে কোন একটা কিছু লুকাতে চাইছে তার থেকে!

জুঁই গিয়ে অভির হাত ধরে সোফায় বসিয়ে, অনন্যাকে আদেশ করে বলে, ‘ অনন্যা যা তো, আমাদের সবার জন্যে ভালো করে চা নিয়ে আয় এন্ড অভির চায়ে নো সুগার! বিকজ অভির কিন্তু সুগার একদমই সহ্য হয়না। ‘

‘ উনি সুগার কম খান তবে সুগার একদমই পছন্দ নয় এমন নয়। ‘

অনন্যার কথা শুনে মেজাজ বিগড়ে যায় জুঁইয়ের। সে ভাবতে তাকে আজ অনন্যাকে সে আরো বাজেভাবে অপমান করবে! তার মনে হচ্ছে আজ ফারিশ তাকে দূরে ঠেলে দিয়েছে শুধুমাত্র অনন্যা নামক রমনীর জন্যে! সে এক বড় বাঁধা! তাই অনন্যাকে আজ তার ভালোবাসার সামনে আরো বাজেভাবে অপমান করিয়ে, শিক্ষা দিবে।অন্যদিকে অভির অধরের কোণে অজান্তেই মুচকি হাসি ফুটে উঠে। এতোদিন পেরিয়ে গিয়েছে তবুও অনন্যার প্রতিটা পছন্দ – অপছন্দকে কত ভালোভাবে মনে রেখেছে। অনন্যাকে দেখিয়ে জুঁই অভিকে উদ্দেশ্য করে বললো,’ চিনতে পারছো নিশ্চই? বর্তমানে ফারিশ খানের একমাত্র পার্সোনাল সার্ভেন্ট! ‘

মিষ্টি দ্রুত দৌড়ে এসে অনন্যাকে আকড়ে ধরে বলে, ‘ জুঁই আন্টি তুমি দেখি ভারি দুষ্টু আন্টি হয়ে যাচ্ছো। এইসব কি বলছো? আমার মা কোন সার্ভেট না।আমার মা হচ্ছে শুধুই মিষ্টির মা। ‘

অভি অবাক হয়ে যায়! বাচ্চা মেয়েটি অনন্যাকে ‘ মা’ বলে সম্মোধন করছে কেন? কে বাচ্চা মেয়েটি? অনন্যা ঝুঁকে, মিষ্টির মাথায় হাত বুলিয়ে বলে, ‘ মা! তুমি এখন উপরে চলে যাও। বড়রা কথা বলছো তো। বড়দের মধ্যে থাকতে নেই। ‘

‘ কিন্তু মা..ওই দুষ্টু আন্টি তো তোমায় কষ্ট দিচ্ছে। আমি তোমাকে রেখে গেলে, যদি আরো কষ্ট দেয়? বাপিও নেই, বাপি থাকলে এই দুষ্টু আন্টিকে বকে দিতো। ‘

‘ না, মা! আন্টি কিচ্ছু বলবে না আমাকে। তুমি না গুড গার্ল? তুমি উপরে চলে যাও। ‘

মিষ্টি কিছু না বলে, অনন্যার কথা অনুযায়ী উপরে চলে যায় কিন্তু তার কেমন যেনো ভয় করছে।

মিষ্টি চলে যেতেই, জুঁই ভেংচি কাটে। রেশমি খান জুঁইয়ের কথার মাঝখানে বলে উঠে, ‘ শুধুই কি সার্ভেন্ট? ‘

‘ উহু, ভাইয়ের রক্ষিতাও বটে। ভাইয়ের পার্সোনাল চাহিদা মেটানোর দায়িত্বও বটে রয়েছে মিসেস অনন্যার উপরে। হা হা ‘

বলেই ঘর কাঁপিয়ে হেসে উঠে আরশ। আরশের সাথে
রেশমি খান এবং জুঁইও হেসে উঠে। এনার এইসব ভালো লাগছে না। তার মনে হচ্ছে বিরাট বড় অন্যায় হচ্ছে বর্তমানে। অনন্যা হাত মুঠো করে শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে, তার দৃষ্টি অভির দিকে। অভি মাথা নিচু করে ফেলেছে। এইসব কথা শুনে তার আবারোও বিয়ের দিনের সেই ভিডিওয়ের কথা মনে পরে যাচ্ছে। অনন্যা আর সহ্য করতে না পেরে জুঁই এবং রেশমি খানকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠে, ‘ আপনারা দয়া করে চুপ করবেন? আপনারা কি মানুষ নাকি অন্যকিছু? আরশ খান না হয় একজন কা-পুরুষ কিন্তু আপনারা? আপনারা তো একজন নারী! একজন নারী হয়ে আরেকজন নারীর সম্মোন্ধে এতোটা বানোয়াট কথা কী করে কথা বলতে পারেন? আপনারা কি আদোও মানুষ ছিহ! আজ একটা কথা বলতে বাধ্য হচ্ছি হয়তো ফারিশ খান খারাপ মানুষ কিন্তু আরশ খানের মতো চরিত্রহীন নয়! সে আমাকে এখনো অব্দি বাজেভাবে স্পর্শ করেনি। তাই এইসব…… ‘

অনন্যার কথা সম্পূর্ন শেষ হওয়ার পূর্বে তাতে বাঁধা দিয়ে, অভি দ্রুত অনন্যার কাছে এসে বলে,

‘ বাহ! ভালোই তো ফারিশ খানের নামে সাফাই গাঁইছো। যতবারই আমি তোমার সম্পর্কে ভুল ভাবি, ততবারই তুমি আমাকে চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দাও, আসলে কতটা নিচু, খারাপ মেয়ে তুমি! লজ্জা করে নিজের প্রতি,যে এখনো তোমার কথা আমি ভাবি।এখনো তোমায় ভালোবাসি।বিয়ের দিনে এতো বড় কান্ড করে লজ্জা হয়নি? এতো কিছু থাকতেও শুধু আরো চাই! নিজের বাবার টাকাতে হয়না। শেষে ফারিশ খানের টাকার লোভে পরে, তার পার্মানেন্ট র/ক্ষিতা অবদি হয়ে গেলে?

অনন্যা সঙ্গে সঙ্গে সহ্য করতে না পেরে, অভির গালে ঠাটিয়ে চ/র বসিয়ে দিয়ে বলে, ‘তোমার মুখে আর যাই হোক ভালোবাসি কথাটি মানায় না! যেই ভালোবাসায় কোন বিশ্বাস নেই। সেই ভালোবাসা অর্থহীন! এতো অপমান করলে আমায়! কীভাবে পারো তুমি? এই ভুল তোমার যখন ভাঙ্গবে, আই টল্ড ইউ, তুমি অনেক কাঁদবে, অনেক পস্তাবে অভি! জাস্ট গু টু হেল, রাইট নাও।’

অভি গালে হাত দিয়ে রেগে দ্রুত বেড়িয়ে যায়! অভি চলে যেতেই, কাঁদতে থাকে অনন্যা।

________
অফিসে বসে রুমা খানের সাথে ফাইল ঘাটছিলো ফারিশ। রুমা খান ফারিশকে খানিক্টা চিন্তিত অবস্হায় দেখে বললেন, ‘ কি হয়েছে ফারিশ? সমস্যা তো সলভড হয়ে গিয়েছে তাহলে তোমাকে এতো চিন্তিত লাগছে কেন?’

ফারিশ মাথা নিচু রেখে, গলার স্বর নিচু করে বলে, ‘ জানিনা দাদি। আমার কেমন যেন ফিল হচ্ছে। মনে হচ্ছে সামথিং ইজ রঙ্গ! ‘

‘ হঠাৎ এমন লাগছে কেন?’

ফারিশ কোনপ্রকার জবাব না দিয়ে, ল্যাপটপ টা খুলে কি যেন দেখতে থাকে। অত:পর তার চোখ-মুখ শক্ত হয়ে যায়! সে দ্রুত উঠে দাঁড়ায়। রুমা খান প্রশ্ন করলেন, ‘ কি হয়েছে ফারিশ?’

ফারিশ দ্রুত গলায় বলে,’ কিচ্ছু ঠিক নেই। এভ্রিথিং ইজ রঙ্গ! আই হেভ টু গু নাও। আমি বেড়োচ্ছি। ‘

রুমা খান অবাক হয়ে যায়! তিনি আরো কিছু জিজ্ঞেস করতে চাইছিলেন কিন্তু ফারিশ দাঁড়ায় না, সে দ্রুত বেড়িয়ে পরে।

___________________________

অভি গাড়ি নিয়ে দ্রুত বেড়িয়ে যায়। গাড়ি নিয়ে ধানমন্ডি লেকের সামনে দাঁড় করিয়ে, মাথা নিচু করে বসে থাকে। এই লেকে প্রায় অনন্যা এসে বসে থাকতো যখন তার মন খারাপ থাকতো। তখন পিছন থেকে অনন্যার পছন্দের চকলেট নিয়ে এসে, অনন্যার রাগ ভাঙ্গাতো অভি। সেই চকলেট দেখে অনন্যা মুখ ঘুড়িয়ে বলতো ‘ চকলেট দিয়ে ঘুষ দিচ্ছো আমায়? কিন্তু আজ ঘুষে কোন লাভ হবেনা মি:। আমি অনেক রেগে আছি! তুমি আমায় একদম সময় দাও না। ‘

অভি তখন কানে হাত দিয়ে একদম ছোট্ট বাচ্চাদের মতো করে বলতো, ‘ আম রেইলি সরি! এমন ভুল কখনো হবেনা। এইযে কান মুলছি। ওহে নিষ্টুর প্রেয়সী দয়া করে এই অভাগা প্রেমিককে ক্ষমা করে, তার সামান্য উপহারকে ঘুষ না ভেবে, ভালোবাসা ভেবে তা গ্রহণ করুন। ‘

অভির কথা শুনে তখন ফিক করে হেঁসে ফেলতো অনন্যা। অভি সেই হাসির দিকে মুগ্ধ নয়নে তাঁকিয়ে থাকতো।

অতীতের কথা মনে পরতেই অভি দীর্ঘশ্বাস ফেলে।আজ তার প্রচন্ড কষ্ট হচ্ছে! বুকটা খাঁ খাঁ করছে। অনন্যা কেন এতো নীচ হয়ে গেলো! সে তো এই অনন্যাকে ভালোবাসে নি! অভি কি মনে করে যেনো, নিজের ফোনটা অন করলো, তখনি হোয়াটস্যাপে শেফালির দেওয়া একটি ভয়েস রেকর্ডটি পেলো। কি ভেবে যেন সে ভয়েস রেকর্ডটি শুনলো।

___________________

অপরদিকে, জুঁই আরশকে উদ্দেশ্য করে তাচ্ছিল্য করে হেসে বলে,

‘ বুঝলি আরশ? কিছু মানুষের সত্যিই লজ্জা নেই। এতো অপমান সহ্য করে কীভাবে বেঁচে আছে কে জানে? রক্ষি/তাকে তো মানুষ রক্ষিতা/ই বলবে সেইটাই স্বাভাবিক! তাইনা? ‘

আরশ সঙ্গে সঙ্গে মাথা নাড়িয়ে বলে, ‘ আইম টোটালি এগরি!’
অনন্যা ঠোট কামড়ে কাঁদতে কাঁদতে বাড়ি থেকে দৌড়ে বেড়িয়ে যায়। অনন্যা দৌড়ে গেট দিয়ে বেড়িয়ে, মেইন রোডের দিকে চলে যায় কাঁদতে কাঁদতে, সে যতই শক্ত থাকুক, একজন মেয়ে হয়ে, নিজের এতো অপমান সে কিছুতেই সহ্য করতে পারছে না। অনন্যাকে বেড়িয়ে যেতে দেখে, দাড়োয়ান দ্রুত ফারিশের দেহরক্ষীদের ফোন দিয়ে খবর দেয়! অনন্যার পিছনে পিছনে ফারিশের বডিগার্ডও যেতে থাকে। অপরদিকে ফারিশও দ্রুত গতিতে গাড়ি চালাতে থাকে। অনন্যা দৌড়ে মেইন রোডে চলে আসায়, সেখানে একটি মাঝারি ট্রাক……..[নীচের লেখাগুলো দয়া করে পড়ুন]
চলবে কী?
শব্দসংখ্যা- ১৫০০

#প্রণয়ের_রংধনু ❤️
#পর্ব- ২৪+২৫
#Jannatul_ferdosi_rimi (লেখিকা)
অনন্যার দিকে মাঝারি একটি ট্রাক তড়িৎ গতিতে ধেঁয়ে আসছে। অনন্যা আখিজোড়া ঝাপ্সা হয়ে আসছে, সে কিছু বুঝে উঠার আগেই অজ্ঞান হয়ে পরে যেতে নিলে, দ্বিগুন গতিতে দৌড়ে এসে, অনন্যাকে টেনে নিজের বাহুতে নিয়ে আসে ফলে দুজনেই রোডের অপরপ্রান্তে ছিটকে গিয়ে পরে যায়।
অপরদিকে ট্রাকটাও থেমে যায়! কারণ সামনে প্রায় ৫০জনের মতো কালো পোষাক পরিহিত ফারিশের দেহরক্ষীগণ দাঁড়িয়ে ছিলো বিধায়, ট্রাকটি কোনভাবে ব্রেক কষে যথাসময়ে। ফারিশ পরে গেলেও সে শক্তভাবে অনন্যাকে জড়িয়ে রেখেছে কিন্তু তবুও অনন্যার কপালখানি কিছুটা কেটে গিয়েছে। যদিও ফারিশের হাত- পাও খানিক্টা ছিলে গিয়েছে কিন্তু সেদিকে তার হুশ নেই, সে হাক ছেড়ে ডাকতে লাগলো, ‘ ড্রাইভার! কাম ফার্স্ট! সি নিড ট্রিটমেন্ট! ‘

ফারিশের কথা শুনে ড্রাইভার গাড়ি ঘুড়িয়ে ফেলে, ফারিশ চটজলদিতে অনন্যাকে কোলে নিয়ে, গাড়িতে উঠে পরে, বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হয়।

____________________

অপরদিকে অভি বেশ মনোযোগ সহকারে সেই কলের রেকর্ডটা শুনছে। যেখানে শেফালি এবং জুঁই ফোনে কথা বলছিলো। কল রেকর্ডে জুঁই বারংবার শেফালিকে হুমকির সুরে বলছে,

‘ তুই আমাকে চিনিস না শেফালি! আমি ঠিক কতটা খারাপ হতে পারি। ফারিশকে ভালোবেসে, ওর কথামতো নিজের বন্ধুকে অবদি সকলের সামনে চরিত্রহীনা বানিয়েছি। এমনকি মিথ্যে ভালোবাসার নাটকও করেছি অভির সাথে, যেন অভিকেও অনন্যা তার ক্রাইসিসে পাশে না পায়, সেখানে তুই এমন মুহুর্তে অভিকে সবকিছু বলে দিতে চাইছিস?’

‘ কিন্তু জুঁই! এইসব করে নির্দোশ অনন্যা বার বার দোষী হচ্ছে, ও তো সত্যিই নির্দোশ। আমাদের কাজটা করা মোটেও ঠিক হয়নি, শুধুমাত্র নিজেদের স্বার্থে, আমি বারংবার নির্দোশ অনন্যাকে ফাঁশিয়ে দিচ্ছি। ‘

শেফালির কথার বিপরীতে, খানিক্টা ধমকি দিয়ে জুঁই বলে,

‘তোকে আমি কী বলেছি? নিজেরটা ভাব ঠিক করে, আমাকে একদম জ্ঞান দিতে আসবি না। মাইন্ড ইট। ‘

কলরেকর্ডটি বন্ধ করে দিলো অভি। সে স্তব্ধ হয়ে বসে
আছে। তার কাছে পুরো বিষয়টি পরিষ্কার না হলেও সে বুঝতে পেরেছে সে বিরাট বড় ভুল করে ফেলেছে! তাকে সর্বপ্রথম শেফালির সাথে দেখা করতে হবে। তার গলা শুকিয়ে আসছে! সে ভুল নয় একপ্রকার বিরাট বড় অন্যায় করে ফেলেছে, যার আদোও হয়তো কোন ক্ষমা নেই, অভির ধারনামতে। অভি নিজের ফোনটা ভালো করে ঘেটে দেখে, শেফালির অনেকগুলো মিসডকল ঝুলে আছে। অভির হাত-পা কাঁপছে, তবুও সে নিজেকে সামলিয়ে ঠোট ভিজিয়ে, শেফালির নাম্বারে ফোন দেয়। শেফালি অভির ফোন পেয়েই, দ্রুত রিসিভ করে বলে, ‘ হ্যালো অভি! আমার তোমার সাথে কিছু..’
শেফালিকে সম্পূর্ন কথা শেষ করতে দিলো না অভি। তার পূর্বেই শান্ত গলায় শুধালো, ‘ আমি তোমার সাথে দেখা করতে চাই শেফালি। আমি সবকিছু শুরু থেকে জানতে চাই। ‘

শেফালি বুঝতে পারলো অভি সেই কল রেকর্ডটি সব শুনে ফেলেছে। শেফালি সুদীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে উঠে,

‘ কোথায় দেখা করতে হবে? ‘

‘ আমি এড্রেস টা সেন্ড করে দিয়েছি। ‘

‘ আচ্ছা। ‘ বলে ফোনটা কেটে দিলো শেফালি। সে অনেক সাহস সংচয় করে অভিকে ইতিমধ্যে অনেকটায় জানিয়ে ফেলেছে। সে জানে জুঁই জানতে পারলে হয়তো তার বড়সড় ক্ষতি করে ফেলবে কিন্তু বিবেকের কাছে আজ সে অন্তত অপরাধী নয়।

_________________

রেশমি খান পাইচারি করে যাচ্ছন। কপালে তার দুশ্চিন্তার রেশ স্পষ্ট! আরশ ভ্রু কুচকে তার মাকে
পর্যবেক্ষন করে যাচ্ছে। রেশমি খান বসছে না। তিনি শুধু একটু পর পর সদর দরজার দিকে তাঁকাচ্ছেন। এনাও দেখে বোঝা যাচ্ছে, সে নিজেও যথেষ্ট চিন্তিত! তার ধারণামতে অনন্যাকে অযথা কারণে এমন বাজেভাবে অপমান করার জন্যে, ফারিশ ভাই এসে তার মা, ভাই- বোনের অবস্হা খারাপ করে ছাড়বে! জুঁই সোফায় বসে, বিরক্ত হয়ে জিজ্ঞেস করে,’ কি করছো, খালা? এইভাবে পাইচারি করছো কেন?’

রেশমি খান গলা উঁচু করে জবাব দিলেন, ‘ কেন? তুমি জানো না? মেয়েটা অপমানিত হয়ে, আমাদের জন্যে বেড়িয়ে গিয়েছে। এইসব কিছু যদি একবার ফারিশ জানতে পারে, তাহলে কী হবে ভাবতে পারছো?’

‘ জানতে পারবে মানে? ভাইয়ের কানে বোধহয় অলরেডি চলেও গিয়েছে। ওই মেয়েটা তো ভাইয়ার বন্দিনী, সে আজকে অপমান সহ্য করতে না পেরে, কোন বাঁধাকে পরোয়া না করে বেড়িয়ে গিয়েছে। তাইতো পিছনে পিছনে ভাইয়ের বর্ডিগার্ডসরা ও গিয়েছে কিন্তু ওকে না পেলে কিন্তু ভাই আমাদেরকেই
একেবারে শেষ করে দিবে। ‘

আরশের কথা শুনে এনা সঙ্গে সঙ্গে হাত ভাজ করে বলে, ‘ এখন এইগুলো ভাবছো ভাইয়া? অথচ যখন মেয়েটাকে তারই প্রাক্তনের সামনে অকারণে হ্যারাস করেছিলে, তখন এইগুলো মনে ছিলো না? ‘

জুঁই মাথায় হাত দিয়ে বসে থাকে। কালকে ফারিশ তাকে এতো ভয়ংকর ভাবে হুমকি দিয়েছিলো আজ তাহলে কী করবে? তাদের ভাবনার মাঝেই, গাড়ির হর্নের শব্দ তাদের কানে ভেঁসে উঠে। তাদের বুঝে উঠতে বাকি নেই, ফারিশ চলে এসেছে। তাদের অবাক করে দিয়ে, ফারিশ কোলে করে অনন্যাকে নিয়ে বাড়ির ভিতর ঢুকে। পিছনে পিছনে ফারিশের ম্যানেজরও ভিতরে আসেন। তিনি কলে বলতে থাকেন, ‘ ডক্টর আপনি জলদি চলে আসুন। হ্যা প্যাসেন্ট অজ্ঞান অবস্হায়! মাথা চ/ট পেয়েছে, যার ফলে কিছুটা ব্লাডলস ও হয়ে গিয়েছে। ‘

ফারিশকে দেখে, রেশমি খান এবং আরশের ভয়ে গলা শুকিয়ে গেলেও, ফারিশ যখন অনন্যাকে কলে নিয়ে উপরে যাচ্ছিলো, তখন তড়িৎ গতিতে জুঁই ফারিশের সামনে দাঁড়িয়ে বলে, ‘ তুমি ওকে কোলে নিয়ে কোথায় যাচ্ছো? দেখো ও একটা নাটকবাজ..’

জুঁইয়ের কথা সম্পূর্ন শেষ হওয়ার পূর্বে, ফারিশ গর্জে উঠে বলে, জুঁই! তোমার সাথে হিসাব আমি পরে ক্লিয়ার করছি। আপাতত ডোন্ট ডির্স্টার্ভ মি! জাস্ট ব্লাডি ইডিয়েট গার্ল! ‘

কথাটি বলেই অনন্যাকে কোলে নিয়ে উপরে চলে যায়। জুঁই সেখানে দাঁড়িয়ে রাগে কাঁপতে থাকে।

_________________
ডক্টর এসেছেন এবং বেশ অনেক্ষন যাবত অনন্যার চে-কাপ করছেন। কপালের কা/টা অংশটি পরিষ্কার করে, ইতিমধ্যে ভালো করে ব্যান্ডিজ করে দিয়েছেন।
ছোট্ট মিষ্টি অনন্যাকে এমন অবস্হায় দেখে কেঁদে যাচ্ছে, অনন্যার হাত ধরে। ফারিশ এবং রুমা খান অনেকবার মিষ্টিকে অন্য ঘরে নিয়ে যেতে নিয়েছে, কিন্তু সে জেদ ধরে বসে আছে সে তার মাকে ছাড়া কোথাও যাবে না। আগেরবার মাকে ছেড়ে, উপরে চলে এসেছিলো তার মায়ের এমন ক্ষতি হয়েছে। তার ধারণা এখন যদি সে চলে যায়, তবে হয়তো তার মা তাকে ফের ছেড়ে চলে যাবে। তাই সে শক্তভাবে অনন্যার হাত ধরে আছে। মিষ্টিট সাথে রুমা খানও বিছানার একপাশে বসে আছেন। তার মুখস্রীতে ফুটে উঠেছে অসহায়ত্ব! আজ তার বাড়িতে, মেয়েটাকে এতো বাজে ভাবে অপমানিত হতে হলো, অথচ তিনি কিছু জানতেই পারলেন না। ফারিশ রুমের দরজায় ঠেস দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। অনন্যাকে এমনভাবে অজ্ঞান হয়ে পরে থাকতে দেখে আজ তারও ভালো লাগছে না। অসহ্য খারাপ লাগা ঘিড়ে ধরেছে তাকে কিন্তু এমন হচ্ছে কেন? ডক্টর বেশ কিছুক্ষন পরে বললো, ‘ উনার বোধহয় ফোবিয়া আছে। ফোবিয়া থেকে অজ্ঞান হয়ে গিয়েছে। মাথায় ভালোই আ/ঘাত পেয়েছে। বেশ ব্লাডলস হয়েছে। আমি ড্রেসিং করে দিয়েছি। ইঞ্জেকশনও পুশ করে দিয়েছি। ভয়ের আপাতত কোন কারণ নেই। আশা করছি রাতের মধ্যেই জ্ঞান ফিরে আসবে এবং কিছু ওষুধ প্যাসকাইব করে দিচ্ছি। খায়িয়ে দিবেন। ‘

রুমা খান দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন, ‘ আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ ডক্টর। আপনি সঠিক সময়ে এসেছেন। ‘

‘ মিসেস খান, দয়া করে আমাকে ধন্যবাদ দিয়ে লজ্জা করবেন না। ইটস মাই ডিউটি। পেশেন্ট অনেক দূর্বল, পেশেন্টকে অনেক দুধ, ডিম খাওয়াতে হবে। না খেলে বাচ্চাদের মতো জোড় করিয়ে খায়িয়ে দিতে হবে। হা হা হা। ‘

হুট করে কথাগুলো বলে হেঁসে ফেললেন ডাক্তার, যেন অনেক মজাদার কথোপকথন চলছে বর্তমানে। ডাক্তার চরিত্রে থাকা লোকটির যেন দায়িত্ব কিছুক্ষন পর পর হেঁসে একটা হাস্যরস পরিবেশ তৈরি করা। মিষ্টি কোমড়ে হাত দিয়ে বলে, ‘ মিষ্টি যখন দুধ খেতে ইচ্ছে করে না তখন বাপি জোড় করে দুধ খায়িয়ে দেয় তাহলে মিষ্টির মা দুধ খেতে না চাইলে তখন কি বাপিও মিষ্টির মাকে মিষ্টির মতো দুধ খায়িয়ে দিবে?’

ডাক্তার ফারিশের দিকে তাঁকিয়ে হেসে বললেন, ‘ প্রয়োজন পরলে তাই করতে হবে। মি: ফারিশ খান আপনার কিন্তু এখন ডিউটি ডাবল হয়ে গেলো বাচ্চার সাথে এখন বউকেও জোড় করে দুধ খায়িয়ে দিতে হবে। হা হা হা। ‘

ডাক্তারের এমন কথা শুনে ফারিশ কেঁশে উঠলো!
সে হয়তো ডাক্তারের ভুল ভাঙ্গাতে চেয়েছিলো কিন্তু রুমা খানের কথা শুনে থেমে গেলো। রুমা খান বললেন, ‘ ফারিশ তুমি দ্রুত ওষুধ আনানোর ব্যাব্সহা করো। ‘

ফারিশ ভদ্র ছেলের মতো ‘জ্বী আচ্ছা’ বললো।অত:পর হাক ছেড়ে নিজের ম্যানেজারকে ডেকে বললো, ‘ শফিক? এই শফিক? ‘

ফারিশের ম্যানেজার শফিক দ্রুত এসে বললো, ‘ জ্বী স্যার? ‘

‘ ডক্টরকে গাড়ি অবদি পৌঁছে দিয়ে আসো এবং উনার দেওয়া প্রেস্ক্রিপশন দিয়ে ওষুধগুলো নিয়ে আসবে। ‘

‘ আচ্ছা। ‘বলে শফিক, ডাক্তার সাহেবকে নিয়ে বাইরের দিকে চলে গেলো। ডাক্তার চলে যেতেই, ফারিশ গিয়ে মিষ্টিকে কোলে নিয়ে বললো, ‘ ডাক্তার বলেছে মিষ্টির মা একদম ঠিক হয়ে যাবে। এখন চলো মা কিছু খেয়ে নিবে। ‘

মিষ্টি ফারিশের কোলে থেকে ছটফট করতে করতে বললো, ‘ আমি খাবো না। ‘

‘কেন? ‘

‘আমার মিষ্টির মাকে ওই দুষ্টু আন্টি এবং দুষ্টু গ্রেনিরা মিলে অনেক কষ্ট দিয়েছে। তুমি সবাইকে গিয়ে পানিশ করে দাও বাপি। ‘

মিষ্টির কথায় সায় দিয়ে, রুমা খানও বললেন, ‘ আজকে যা হয়েছে, তা মোটেও ভালো হয়নি। আমি বুঝতে পারছি না ফারিশ। মেয়েটা আর কত কিছু সহ্য করবে? ‘

ফারিশ কোনপ্রকার উত্তর দিলোনা। সে নিষ্পলক অনন্যার দিকে তাঁকালো। মেয়েটার মুখস্রীখানা কেমন ফ্যাকাশে হয়ে গিয়েছে। সে কোনপ্রকার উত্তর না দিয়েই নীচে নেমে গেলো। নীচে নেমেই সে দেখতে পেলো, জুঁই রেশমি খান এবং আরশের সাথে কথা বলছে ফিসফিসিয়ে। এনা টেবিলে বসে ছিলো। ফারিশ দ্রুত নেমেই, পকেটে হাত গুজে জুঁইকে উদ্দেশ্য করে বললো, ‘ অভি কার অনুমতিতে আমার বাড়িতে এসেছিলো জু্ঁই?’

‘ আসলে ফারিশ, আমি আসলে সবকিছু বলবো তোমাকে। ‘

জুঁই কথাটি বলেই থামলো। ফারিশ দ্রুত এগিয়ে এসে, জুঁইয়ের হাত ধরে তাকে একপ্রকার টানতে টানতে সদর দরজা দিয়ে, বাড়ির বাইরে বাইর করে দাঁড়িয়ে, গম্ভীর সুরে বললো, ‘ তোমার মতো মেয়েদের মুখে এক্সপ্লেইনেশন শুনার কোনপ্রকার ইচ্ছে নেই। তোমাকে যেন আমার বাড়ির সীমানায় কখনোই না দেখি, নাহলে কালকে যেই থ্রেট টা দিয়েছিলাম তা কিন্তু রিয়ালিটিতে করবো। তুমি আমাকে চিনো, আই থিংক বেটার! সো কিপ ডিস্টেন্স ফ্রম মাই হাউস। জাস্ট গু টু হেল। ‘

‘ ফারিশ! ফারিশ আমার কথা তো শুনো। ‘

জুঁইয়ের কোনপ্রকার কথা শুনলো না ফারিশ। মুখের উপর দরজা বন্ধ করে দিলো। ফারিশের দাড়েয়ান জুঁইকে দেখে এগিয়ে এসে বললো, ‘ম্যাম! আপনি বেড়িয়ে যান, নাহলে আমরা বাধ্য হবো আপনাকে গার্ডস দিয়ে বের করাতে। ‘

জুঁইয়ের রাগে দু:খে আখিজোড়ায় জল চলে আসলো। এতোটা বাজেভাবে তাকে অপমানিত হতে হবে, সে ভাবেনি। আজ অনন্যা বেড রুমে এবং সে বাড়ির বাইরের বাইরে। তার সমস্ত রাগ -ক্ষোভ অনন্যার প্রতি দ্বিগুনভাবে বাড়তে রইলো। সে অপেক্ষা না করে দ্রুত বেড়িয়ে গেলো।

জুঁইকে বের করায়, রেশমি খান ফারিশের দিকে একপ্রকার তেড়ে এসে প্রশ্ন করলো, ‘ তুমি কেন আমার ভাগ্নিকে এইভাবে বের করে দিলে ফারিশ? তুমি কী ভুলে যাচ্ছো এই বাড়িতে যেমন তোমার অধিকার রয়েছে, তেমনি আমাদের ও সমান অধিকার রয়েছে। ‘

‘ ওহো! রেইলি? আপনি আজ অধিকারের কথা বলছেন? লেট মি এক্সপ্লেইন! ফার্স্ট অফ অল! এই বাড়ির ৭৫℅ আমার এবং বাকি ২৫℅ গ্রেনির। নিশ্চই আপনাদের জানা আছে? আপনার গুনধর ছেলে ব্যাবসার হাল ধরে, বাড়িটা পুরো বাড়ি নিমালে তুলে ফেলেছিলো তখন আমি আমার ব্যাবসার পয়সা দিয়ে বাংলাদেশের কম্পানি গুলো কিনেছিলাম। আপনারা আমার আশ্রয় থাকেন, আমি নয়। আজ জুঁইকে বের করে দিয়েছি, দরকার পরলে কালকে আপনাদেরকেও বের করে দিতে আমার বিন্দুমাত্র হাত কাঁপবে না। সো কিপ সাইলেন্ট! ‘

ফারিশের কথা শুনে রেশমি খান দমে যায়। ফারিশ উপরে চলে যেতে যেতে, আরশকে উদ্দেশ্য করে বলে,

‘ আজ থেকে তোমার ১০ দিনের জন্যে হাত-খরচ টোটালি বন্ধু! ‘

আরশ তৎক্ষনাৎ রেগে ফুশ করে উঠে বলে, ‘ ওয়াট হ্যাপেন্ড উইথ ইউ ভাইয়া? তুমি আমার হাত-খরচ বন্ধ করে দিলে?’

‘ একদম! এইবস ড্রামা করার আগে যদি ভাবতে, তাহলে এমন কিছুই হতো না। ‘

‘ তুমি সামান্য একজন সার্ভেন্ট এর জন্যে আমাদের এইভাবে অপমান করছো ভাইয়া? ‘

আরশের প্রশ্নের উত্তরে, ফারিশ পকেটে হাত গুজে বলে, ‘ উনাকে শুধু তোমরা অপমান করো নি বরং বার বার উনার সাথে আমার নামটাকে জড়িয়ে আমাকেও অপমান করেছো, এর জন্যে জুঁইয়ের সাথে সাথে তোমাদের প্রত্যেককে আমি বাড়ি থেকে বের করে দিতে পারি কিন্তু শুধুমাত্র গ্রেনির জন্যে থেমে গেলাম। তাছাড়া আমার মেয়ে উনাকে নিজের মা মনে করে। আমার মেয়েকে উনি নিজের মেয়ের মতো আগলে রাখছেন। ভালোবাসা দিচ্ছেন।সে হিসাবে উনার প্রতি কিছুটা হলেও আমার মনে সম্মান জন্মেছে।যতই শত্রুতা থাকুক কিন্তু আমার মেয়ের জন্যে হলেও উনার প্রতি আমার একটা রেস্পেক্ট থাকবেই। ‘

কথাটি বলেই উপরে চলে গেলো ফারিশ। অপরপাশ থেকে সবকিছুই শুনেছেন রুমা খান। তার অধরে অজান্তেই মুচকি হাসি ফুঠে উঠে। তিনি আনমনে বলে উঠলেন, ‘ আমার নাতীর মনের বরফ তবে গলছে। ‘

_______________

রাত প্রায় সাড়ে ১১টা বাজে। মিষ্টিকে অনেক বুঝিয়ে শুনিয়ে তাকে ঘুম পারিয়ে এসেছে ফারিশ। নিজের ঘরের পাশের ঘরেই ছিলো অনন্যা। ফারিশ কি মনে করে যেন, নিজের ঘরের দিকে না গিয়ে, অনন্যার রুমের দিকে পা বাড়ালো। অনন্যা এখনো অজ্ঞান হয়ে আছে, কিন্তু ডক্টর তো বলেছিলো অনন্যার জ্ঞান রাতে ফিরে আসবে। ফারিশ তখনি খেয়াল করলো অনন্যার হাত-পা নড়ছে। সে অধর নাড়িয়ে
কিছু বলতে চাইছে। ফারিশ দ্রুত অনন্যার দিকে এগিয়ে বললো, ‘ মিস অনন্যা! আপনি ঠিক আছেন? ‘

অনন্যার জ্ঞান ফিরছে কিছুটা। ফারিশ ভাবলো করিমাকে ডেকে পাঠাবে। হয়তো অনন্যার এখন করিমাকে প্রয়োজন। ফারিশ চলে যেতে নিলে, পিছন থেকে অনন্যা ফারিশের হাত আকড়ে ধরে, কম্পিত গলায় বললো, ‘ তুমি বড্ড নির্দয়! কেন বার বার ছেড়ে চলে যাও?আমার খুব ভালোবাসার প্রয়োজন। আমাকে ভালোবাসবে একটু? ‘

শব্দসংখ্যা-২০০০

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে