#প্রণয়ের_রংধনু ✨
#পর্ব- ১৪
#Jannatul_ferdosi_rimi (লেখিকা)
অনন্যা হাত বাড়িয়ে ফারিশের দেয়ালে থেকে একজন অল্প বয়স্ক সুন্দর রমনীর ছবি পেলো। তাকে এই বাড়িতে কখনো দেখে নি অনন্যা। রমনীর কোলে চার-পাঁচ বছরের ছেলে, বাচ্চা ছেলেটা কেমন করে মায়ের আচল খামচে ধরে আছে। দূর থেকে একজন কম বয়স্ক যুবক গাঁয়ে স্যুট কোর্ট পরা। মুখস্রী খানিক্টা ফারিশের ন্যায়! তবে আখিজোড়াতে ফারিশের মতো লম্বা ফ্রেমের চশমা নেই। লোকটিকে দেখেই বুঝা যাচ্ছে সে সম্পর্কে ফারিশের বাবা হন এবং বাচ্চা ছেলেটার মুখশ্রীতেও ফারিশের মুখশ্রীর এক স্পষ্ট ছাপ বিদ্যমান!সুতরাং ধরে নেওয়া যায় ছবিতে থাকা সুন্দর ফ্যামেলি ফটোটি স্বয়ং ফারিশ এবং তার বাবা- মায়ের, কিন্তু ফারিশের বাবা কিংবা মা তারা বর্তমানে কোথায়? একটা বিষয় ভেবে অনন্যার বেশ অদ্ভুদ লাগছে, ছবিতে থাকা পরিবারটি তাকে কেমন যেন পরিচিত মনে হচ্ছে। তার বারংবার মনে হচ্ছে ছবিতে থাকা যুবক-যুবতীকে সে বোধহয় কোনদিন দেখেছে! কিন্তু কোথায় দেখেছে? আশ্চর্য ব্যাপ্যার! কিন্তু ফারিশের সাথে তার কোন পূর্ব পরিচিতি ছিলো না, তবে এমন অদ্ভুদ অনুভুতি তার হচ্ছে কেন? বাড়িতে এসে অনন্যা ফারিশের বাড়ির প্রায় সবাইকেই দেখেছে কিন্তু ফারিশের বাবা – মা কাউকেই সে এখনো অব্দি দেখি নি, কিন্তু তারা কোথায়? জানার বড্ড কৌতহূল জন্ম নিলো অনন্যার। অনন্যা আর কিছু ভাবতে পারলো না। ক্লান্তিতে ঘুমের দেশে পাড়ি জমালো।
অপরদিকে ছাদের এক কোণে দাঁড়িয়ে সিগারেটে লম্বা টান দিয়ে, চাঁদের দিকে এক পলক তাঁকিয়ে রইলো ফারিশ।কিছুক্ষন পরেই, সেই চাঁদকে একরাশ
অন্ধকারছন্ন কালো মেঘ ঢেকে দিলো আকাশকে। আকাশের ন্যায় ফারিশের জীবনেও আজ কালো একরাশ মেঘের অন্ধকারে আচ্ছাদিত হয়ে আছে, যার থেকে কোনদিনও মুক্ত নেই ফারিশের। ফারিশের আজকাল ঘুমাতে ইচ্ছে হয় না। ঘুমালে বড্ড বাজে স্বপ্ন হাতছানি দেয়। আখিজোড়া বুঝলেই, তার আখিজোড়াতে ভয়ংকর এক দৃশ্য ধরা দেয়। স্বপ্নে দেখা যায়,সে নি:শ্বাস নিতে পারছে না, চারদিকে অন্ধকার, এবং অন্ধকার! ফারিশের দম বন্ধ হয়ে আসে সেই অন্ধকারে। কোথাও নেই কোন আলোর রেশ। এক এক করে সকল আপনজন ফারিশের জীবন থেকে হারিয়ে গিয়ে, তাকে অন্ধকারে ঠেলে দিয়েছে। ফারিশ সবসময় সাহায্য চায়, তার প্রিয়জনেদের কাছ থেকে। সে এক ভরসার হাত খুঁজে বেড়ায় কিন্তু কাউকে পায় না।স্বপ্নগুলোর কথা ভেবে ফারিশ সুইমিংপুলের পাশে থাকা রকিং চেয়ারে বসে বসেই হঠাৎ ঘুমের দেশের তলিয়ে পরলো তবে আজ অন্যদিনের ন্যায় স্বপ্ন সে দেখিনি। আজ সে দেখলো সে সুন্দর এক ফুলের বাগানে একা দাঁড়িয়ে আছে, সূর্যে ঝমকালো আলোতে থাকা আকাশ নিমিষেই কালো মেঘে ঢেকে গিলো, কি ভয়ংকর অন্ধকার চারিপাশে। ফারিশের শ্বাসকষ্ট শুরু হতে লাগলো! ধরনীর বুকে বৃষ্টি এসে পতিত হলো। মুষুলধারায় বৃষ্টি হতে লাগলো চারিপাশে, ফারিশের ফের নি:শ্বাস বন্ধ হওয়ার উপক্রম,কিন্তু সাদা শাড়ি পরে, এক রমনী এসে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিলো ফারিশের দিকে। ফারিশের আখিজোড়া খুলে রমনীকে দেখার চেষ্টা করছে, তবে সে ব্যার্থ! রমনীর মুখস্রীখানা অস্পষ্ট! মুখে লম্বা করে ঘুমটা দেওয়া। ফারিশ উপায় না পেয়ে চট করে রমনীর হাত ধরে ফেললো। রমনী মুচকি হাসলো ঘুমটার আড়ালে। তৎক্ষনাৎ বৃষ্টি থেমে গিয়ে, আকাশে দেখা গেলো অদ্ভুদ সুন্দর এক রংধনু। ফারিশ মুগ্ধ হয়ে তাঁকালো সেই রংধনুর দিকে। সে রমনীর দিকে তাঁকিয়ে বললো, ‘ কে আপনি?’
রমনী উত্তর না দিয়ে, পিছনে ঘুড়ে গেলো। বাতাসে তার ঘুমটা পরে গেলো। ফারিশ তার মুখস্রী দেখতে না পেলো না, তবে দেখলো রমনীর কোমড় ছুই ছুই কালো রেশমি চুল উপচে পরছে। সে ফারিশের প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে উল্টো নিম্ন গলায় প্রশ্ন করলো,
‘ আজকের রংধনু অদ্ভুদ সুন্দর তাইনা? ‘
‘ হ্যা, সুন্দর কিন্ত মনে হচ্ছে বিশেষ এক রংধনু।’
‘ বিশেষ তো বটেই, এই রংধনু সবসময় দেখা যায় না। এই রংধনু প্রনয়ের রংধনু। আপনার জীবনে প্রনয়ের রংধনুর আগমন হতে চলেছে, মি: ফারিশ খান। তা কী আপনি জানেন?
‘কিসব হেয়ালি করছেন? প্রনয়ের রংধনু টা কী আবার? ‘
‘ ধরে নিন, যেই অন্ধকারকে বয়ে বেড়াচ্ছেন এতো বছর যাবত, সেই অন্ধকার থেকে মুক্তির এক পথ! ‘
ফারিশ সেই রমনীর উত্তরে ফের বিরক্ত হয়ে বললো,
‘আপনি আবারোও হেয়ালি করে যাচ্ছেন। আমার সাথে একদম হেয়ালি করবেন না। আই জাস্ট ডোন্ট লাইক দিজ। ‘
সেই রমনী কোনপ্রকার উত্তর দিলো না। সে ফের মুচকি হেসে ধোঁয়ার মাঝেই মিলিয়ে গেলো। ফারিশ চাইলেও তাকে আটকাতে পারলো না। তবে সেই হেয়ালিগুলো নিয়ে ভাবতে থাকলো, কে সেই রমনী?
ফারিশ সেই রমনীর পিছনে পিছনে যেতে থাকলো তাকে একটিবার দেখতে তবে সে ব্যর্থ হলো! তার ঘুম ভেঙ্গে গেলো। সে আখিজোড়া মেলে তাকিয়ে দেখলো ভোরের আলো ফুটেছে। নতুন এক দিনের আগমন হয়েছে। ফারিশ ভাবতে লাগলো তার দেখা স্বপ্নটি নিয়ে। অদ্ভুদ স্বপ্নটির পিছনে কী কোন সংকেত ছিলো? কেন দেখলো আজ সে ভিন্ন স্বপ্ন?
________________________
অনন্যা সকালে উঠে খেয়াল করলো তার জ্বর নেই, সে যথেষ্ট সুস্হ বোধ করছে। মনটাও বেশ ফুড়ফুড়ে লাগছে তার। সে দ্রুত ফারিশের রুম থেকে বের হওয়ার পূর্বেই, ফারিশের মুখোমুখি হলো। ফারিশ অনন্যাকে দেখে গম্ভীর গলায় প্রশ্ন করলো,
‘ হাও ইউ ফিল নাও? ‘
‘জ্বী! এখন ভালো লাগছে ।সুস্হ বোধ করছি। ‘
‘ এখুনি কফি বানিয়ে, আমার রুমে নিয়ে আসুন। একদম লেট করবেন না। সময়ের অপচয় ,আই জাস্ট ডোন্ট লাইক দিজ। আর হ্যা অবশ্যই ব্ল্যাক কফি বানিয়ে নিয়ে আসবেন। খেতে ভালো না লাগলে আরো ১০বার আপনাকে দিয়ে বানাবো, মাইন্ট ইট। ‘
অনন্যা কোনপ্রকার উত্তর দিলো না। ছোট্ট করে নি:শ্বাস ফেলে, রুম থেকে বেড়িয়ে গেলো। সে জানে এই লোকের সাথে কথা বাড়িয়ে লাভ নেই।ফারিশও
ওয়াশরুমে চলে যায়। অনন্যা ফারিশের রুম থেকে বেড়োতেই, রেশমি খানের মুখোমুখি হয়ে যায়। রেশমি খান অনন্যাকে উপর থেকে নীচ অব্দি পর্যবেক্ষন করে বললো, ‘ ভালোই তো সেবা যত্ন চলছে। এক ঘরে থাকছো অবিবাহিত হয়ে। তা মতলব কী? শরীর দিয়ে বুঝি আমাদের বাড়ির ছেলেকে বশ করতে চাইছো। ‘
রেশমি খানের কথাতে ঘৃণায় গা শিউরে উঠলো অনন্যার। বাড়ির মানুষগুলোর মন-মানষিকতা এতোটা বাজে? অনন্যা স্বাভাবিক ভাবেই উত্তর দিলো, ‘ শরীর দিয়ে বশ করার হলে, আপনার ছেলেকে সবার আগে করতাম, তার যা চরিত্র! একদম বশ হয়ে যেতো, কিন্তু কী আর করার বলুন?
আফসোস! আমি তেমন মেয়ে নই, আর আপনাকে ভালো করে জানিয়ে নেই, আমি এবং ফারিশ খান কালকে এক ঘরে ছিলাম না। ‘
রেশমি খান খুব ভালো করেই, তার ছেলের চরিত্র সম্পর্কে অবগত, তাই তিনি চুপ হয়ে গেলেন। অনন্যা ফের বললো,
‘আমাকে এইসব ভুল তথ্য দিয়ে অপমান করার পূর্বে দয়া করিয়া, সম্পূর্ন সঠিক তথ্য জেনে তারপর অপমান করতে আসবেন। আমি মাথা পেতে আপনার অপমান সহ্য করবো। অন্যের চরিত্র সম্পর্কে মন্তব্য করার পূর্বে, দয়া করে নিজের ছেলের চরিত্র শুধরানোর চেষ্টা করুন। আই থিংক সেইটা বেটার হবে। ‘
কথাগুলো বলেই চলে যায় অনন্যা। রেশমি খান মুখ বেকিয়ে বলে, ‘ কাজের মেয়ের এত্তো বড় সাহস! রেশমি খানের মুখে- মুখে তর্ক! এই মেয়েকে আমিও বুঝিয়ে দিবো কাজের লোকের জায়গা ঠিক কী। ‘
অনন্যা সর্বপ্রথম মিষ্টির রুমে গেলো। ঘুমন্ত নিষ্পাপ মিষ্টিকে দেখে মুচকি হাসলো সে। মিষ্টির মাথায় হাত রেখে আদুরে গলায় ডাকলো, ‘ মিষ্টি মা, উঠে পড়ো সোনা। নাহলে যে স্কুলের জন্যে লেট হয়ে যাবে।’
অনন্যার গলার স্বর শুনে চট করে চোখ মিলে তাঁকালো মিষ্টি। অনন্যাকে দেখে হাই তুলে, ‘মাম্মা, গুড মর্নিং’ বলে অনন্যার গলা জডিয়ে ধরলো। অনন্যা হেসে বললো, ‘ গুড মর্নিং সোনা। এখন তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে, নীচে চলে আসো। ব্রেকফাস্ট করে, স্কুলে যেতে হবে তাইনা?’
মিষ্টি বাধ্য মেয়ের মতো মাথা নাড়িয়ে ফ্রেশ হতে চলে গেলো।অনন্যাও নীচে নেমে রান্নাঘরে এসে কফি বানাতে থাকে, করিমা অনন্যাকে দেখে এগিয়ে এসে বলে,
‘ আফা কাল রাইত আপনে কই আছিলেন? আপনারে দেখলাম না যে। ‘
‘ পরে সব খুলে বলবো করিমা আপু। আপাতত উনাকে কফি দিয়ে আসি, নাহলে উনি আবার হাক- ডাক শুরু করবে। ‘
বলেই কফি হাতে উপরে ফারিশের রুমে চলে গেলো। ফারিশের রুমে গিয়ে, অনন্যা ফারিশের বিছানার কাছে কফি রেখে বললো, ‘ কফি রেখে গেলাম কিন্তু, খেয়ে নিবেন….
অনন্যার কথা শেষ হওয়ার মাঝেই, নীচে টাওয়াল পেচিয়ে খালি গায়ে, চুল ঝাকাতে ঝাকাতে বেড়িয়ে আসে ফারিশ। ফারিশকে খালি গায়ে দেখে হুট করে
‘আ………’ বলে চেঁচিয়ে উঠে অনন্যা।
‘ ইউ স্টুপিড, ওয়াই ইউ আর সাউটিং লাইক দিজ?’
কথাটি বলেই, অনন্যাকে নিজের কাছে টেনে নিয়ে, অনন্যার মুখ চেপে ধরে ফারিশ।
_________
অপরদিকে অভি সকাল সকাল হসপিটালের উদ্দেশ্যে বেড়িয়ে পরেছে। উদ্দেশ্য শেফা বেগমের সাথে দেখা করা, তিনিই একমাত্র তাকে সঠিক তথ্য দিতে পারবে, কেন অনন্যা আজ ফারিশের বাড়িতে। তার পিছনের কারণ নিশ্চই হয়তো জানেন
শেফা বেগম।
চলবে কি?
#প্রণয়ের_রংধনু ✨
#পর্ব-১৫
#Jannatul_ferdosi_rimi (লেখিকা)
ফারিশ অনন্যাকে তার কাছে টেনে, মুখ চেপে ধরেছে। দুজনের মধ্যে সমান্যতম দূরত্ব। ফারিশের উত্তপ্ত নি:শ্বাস উপচে পরছে অনন্যার ঘাড়ে, যার ফলে ক্ষনে ক্ষনে খানিক্টা শিউড়ে উঠছে অনন্যা। ফারিশ রেগে প্রশ্ন করে, ‘ স্টুপিডের মতো চেঁচানোর কি হলো?’
অনন্যা আখিজোড়া নামিয়ে’ উম..উম’ করতে থাকে।
‘ উত্তর না দিয়ে, এমন উম উম করছেন কেন? আই জাস্ট ডোন্ট লাইক দিজ টাইপ অফ এক্টিভিটিস। স্ট্রিটলি আন্সার দিবেন। ‘
ফারিশের কথা শুনে আখিজোড়া মেলে, ইশারা দিয়ে ফের ‘ উম উম ‘ করে অনন্যা। যার অর্থ ‘ আরে হাদারাম লোক! আমার মুখ থেকে হাত তো সরান। নাহলে কীভাবে উত্তর দিবো?’
ফারিশের হয়তো অনন্যার আখিজোড়ার ইশারা বুঝলো কিছুটা তা সে হাত সরানোর পূর্বে বলে উঠলো, ‘ ওকে ওকে আমি সরাচ্ছি, বাট ডোন্ট সাউন্টিং।’
ফারিশ অনন্যার হাত থেকে মুখ সরাতেই, জোড়ে জোড়ে নি:শ্বাস নিতে নিতে বললো, ‘ আপনি কী পাগল? এইভাবে কেউ মুখ চেপে ধরে, আমার যদি নি:শ্বাস আটকে যেতো, তখন? ‘
ফারিশ ফের চুল ঝাঁকাতে ঝাঁকাতে উত্তর দিলো,
‘ ফারিশ খান, কাউকে কৈফিয়ত দিতে পছন্দ করে না, আই জাস্ট ডোন্ট লাইক দিজ, কিন্তু আপনি বলুন তো, আপনি চিল্লাচ্ছিলেন কেন? কি এমন দেখে ফেলেছেন?’
ফারিশের কথায় হুশ ফেরে অনন্যায়। সে লজ্জায় মাথা নিচু করে বলে, ‘ আপনি নিজের দিকে ভালো করে তাঁকান! এইভাবে অন্য মেয়ের সামনে শার্টলেস ভাবে ঘুড়ে বেড়াচ্ছেন, আপনি কি লজ্জা শরম নেই?’
অনন্যার কথা শুনে ফারিশ নিজের দিকে তাঁকিয়ে গম্ভীর গলায় জবাব দেয়, ‘ ওহো! আই সি, কিন্তু মিস অনন্যা, আমার তো মনে হয়, আপনি লজ্জাতে নয়, বরং আমার মতো হট, চকলেট বয়কে এমন শার্টলেস দেখে এক্সাইটেডমেন্টে চেঁচিয়ে ফেলেছেন, যদিও ব্যাপারটা আমার জন্যে স্বাভাবিক! কিন্তু এইভাবে চিল্লাবেন না, আই জাস্ট ডোন্ট লাইক দিজ। এখন আপনি আসুন। ‘
ফারিশের কথা শুনে লজ্জায় কান দিয়ে যেন ধোঁয়া বের হচ্ছে অনন্যার। লোকটা কী বললো তাকে? সে এইসব দেখে এক্সাইটেডমেন্টে চিৎকার করেছে? নিজেকে কী ভাবে কি লোকটা? হ্যা লোকটা তামিল হিরোদের মতো হ্যান্ডসাম বলে অনন্যার ধারণা, কিন্তু তার মন অত্যান্ত কুৎসিত! ফারিশকে অনেকগুলো কথা শুনাতে ইচ্ছে হলেও, রাগে -দু:খে মুখ বেকিয়ে বেডিয়ে গেলো অনন্যা। অনন্যা বেডিয়ে হাল্কা বাঁকা হেসে, কফির কাপে চুমুক দিয়ে, মাথা নাড়িয়ে ফারিশ বলে, ‘ না! কফি টা ভালোই করেন উনি। ভালো না করলে, আজ উনাকে আবারো শাস্তি দিতাম।’
________________
অভি হসপিটালের করিডোরে পাইচারি করছে। কেবিনে যাবে কী যাবে না ভেবে দিদ্বায় ভোগছেন। তবে ওয়ার্ডের একজন ছেলেকে দিয়ে ভিতরে শেফা বেগমকে খবর পাঠিয়েছেন, তিনি অনুমতি দিলে সে ভিতরে ঢুকবে অন্যথায় ঢুকবে না। ওয়ার্ড বয় কেবিন থেকে বেড়িয়ে এলো। সে হ্যা সূচক মাথা নাড়িয়ে অভিকে উদ্দেশ্য করে বললো, ‘ আপনে ভিতরে যান।’
অনুমতি পেয়ে অভি ভিতরে প্রবেশ করলো। সেখানে শেফা বেগম বসে ছিলেন। লতিফ হাওলাদারের মুখে মাস্ক, তিনি এক দৃষ্টিতে অভির দিকে তাঁকিয়ে আছে। অভি হাতে থাকা ফলের ব্যাগগুলো পাশের টেবিলে রাখলো। শেফা বেগম থমথমে গলায় বললেন,
‘ চেয়ারটা নিয়ে বসো, অভি। ‘
অভি চেয়ার টেনে বসলো।
‘ তা কী খবর? এতোদিন পর আসলে যে? হঠাৎ কি মনে করে? ‘
স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন করলেন শেফা বেগম, অভি কিছু বলতে চাইলে তাতে বাঁধ সেধে শেফা বেগম বললেন, ‘ নিশ্চই তোমার আংকেল কে দেখতে আসো নি। তাইনা? যদি তাকে দেখতে আসার হতো, তাহলে অনেক আগেই আসতে। যখন অনেক ফিনালশিয়াল ক্রাইসিসে ছিলাম, তখন এগিয়ে আসতে। ‘
‘ আসলে…….’
‘ কোন জরুরী কাজে এসেছো, বুঝতে পেরেছ।একটা কথা মনে রেখো, আজ তোমার আংকেলের এমন করুন অবস্হার পিছনে তুমিও কম দায়ী নও।
সেদিন আমার মেয়েটাকে বিয়ের আসরে ফেলে চলে গেলে, সেই দু:খেই মানুষটার আজ এই অবস্হা। ‘
অভি নিচু গলাতেই জবাব দেয়, ‘ আমি জানি, তবে আমি কিছু কথা আজ জানতে এসেছি, কিছু সত্যি মিথ্যার বেড়াজালে আমি আটকে পরেছি, ভিডিও টাকেও অস্বীকার করা যায় না। আপনিও তো দেখেছিলেন, কিন্তু আমি আপাতত জানতে এসেছে, যদি ফারিশ খানের সাথে অনন্যার কোন সম্পর্ক না থেকে থাকে, তবে অনন্যা কেন এখন ফারিশ খানের বাড়িতে?’
অভির এমন প্রশ্নে লতিফ হাওলাদার তৎক্ষনাৎ মুখ থেকে মাস্ক খুলে উত্তেজিত কন্ঠে আওড়াতে থাকে,
‘ আমার মেয়েকে তোমরা কেউ ভুল বুঝো না। আমার মেয়ের কোন দোষ নেই। আসল দোষী তো আমি….’
‘ ওগো! তুমি এইভাবে মাস্ক খুলে ফেললে কেন? তুমি এইভাবে উত্তেজিত হইয়ো না। অভি তুমি এখন দয়া করে যাও। উনার অবস্হা ভালো না।’
কথাটি বলেই, স্বামীর দিকে এগিয়ে গেলেন শেফা বেগম। অভি স্তব্ধ হয়ে গেলো কিছুক্ষনের জন্যে। লতিফ হাওলাদারের শেষের কথাগুলো তার খুব কানে বাজতে লাগলো, ‘ আমার মেয়ের কোন দোষ নেই, সব দোষ আমার….’
_______________________
অনন্যা ফারিশের রুম থেকে বেড়িয়ে রান্নাঘরে চলে এসে, ফারিশের বলা ব্রেকফাস্ট বানাতে শুরু করলো, তখনি এমা এবং আরশ নীচে নেমে, ড্রাইনিং টেবিলে এসে বসলো। এমা ফোন চালাতে চালাতে কফি খেতে লাগলো অনন্যা সার্ভেন্টরা এসে, ব্রেকফাস্ট গুলো টেবিলে পরিবেশন করলো, এমা নিজের মতো খেতে থাকলেও, আরশের আখিজোড়া অনন্যার দিকে। গতকালের অপমান এখনো ভুলতে পারছে না সে। তার একমাত্র লক্ষ্য অনন্যাকে উচিৎ শিক্ষা দেওয়া, শুধুমাত্র একটা সুযোগ পাওয়ার অপেক্ষা! আরশের বিচ্ছিরি দৃষ্টিতে বেশ অস্বস্হিতে ভুগছিলো অনন্যা তবুও কিছু বলে না এতো মানুষের মধ্যে। ছোট্ট মিষ্টি নীচে নেমে কি যেনো ভেবে আরশের কাছে গিয়ে বললো, ‘ কাকাই! তুমি এইভাবে মিষ্টির মায়ের দিকে রাক্ষসের মতো তাঁকিয়ে আছো কেন? মনে হচ্ছে রাক্ষসের মতো গিলে ফেলবে। ‘
মিষ্টির কথা শুনে করিমা এবং অনন্যা ফিক করে হেসে ফেলে। আরশ বিরক্ত হয়ে বিড়বিড় করে বললো, ‘ পাঁকা মেয়ে একটা! বেশি কথা বলে। ‘
আরশ হয়তো মিষ্টিকে ধমক দিতে চেয়েছিলো কিন্তু ফারিশকে আসতে দেখে, থেমে যায়। মিষ্টি ফারিশকে দেখে ‘ বাপি ‘ বলে দৌড়ে যায়। ফারিশও মিষ্টিকে কোলে নিয়ে কপালে চুমু খেয়ে বলে, ‘ গুড মর্নিং প্রিন্সেস! আর ইউ ফাইন?’
‘ ইয়েস বাপি! আম টোটালি ফাইন। ‘
‘ তাহলে চলো মা! তাড়তাড়ি ব্রেকফাস্ট করে নেই, তারপর তো তোমাকে স্কুলেও ড্রপ করে দিতে হবে তাইনা?’
মিষ্টি মুচকি হেসে, ফারিশের কোলে ড্রাইনিং টেবিলে বসে থাকে। ফারিশ এবং মিষ্টি দেখে মনে মনে অনন্যা
ভাবে, ‘ লোকটা মানুষ হিসেবে খারাপ হলেও, বাবা হিসেবে একদম ভিন্ন, আলাদা। ‘
অনন্যা ফারিশের ব্রেকফাস্ট নিয়ে, টেবিলে পরিবেশন করে। ফারিশ মিষ্টিকে কোলে নিয়ে ব্রেকফাস্ট করছিলো এবং অনন্যা নিজে ব্রেডে জেল লাগিয়ে, মিষ্টিকে খায়িয়ে দিচ্ছিলো। ফারিশ চাইলেও কিছু বলতে পারে না, কারণ মিষ্টি এখন অনন্যা বলতে অজ্ঞান!
উপর থেকে এমন দৃশ্য দেখে মুচকি হাসে রুমা খান। তার মনে হচ্ছে নীচে থাকা ড্রাইনিং টেবিলে একটা ছোট্ট পরিবারের চিত্র ফুটে উঠেছে। মা তাড়াহুড়ো করে মেয়েকে খায়িয়ে স্কুলের জন্যে রেডি করছে অত:পর বাবাও মেয়েকে নিয়ে স্কুলের জন্যে বেড়িয়ে পরেছে । কি সুন্দর দৃশ্য!
_________________
ফারিশ মিষ্টিকে স্কুলে নামিয়ে দিয়ে, অফিসের উদ্দেশ্য রওনা দিতেই, একটা ম্যাসেজ পেয়ে থেমে যায়। ম্যাসেজটি ছিলো জুঁইয়ের। যেখানে লেখা,
‘ আমি তোমার সাথে দেখা করতে চাই ফারিশ। ‘
চলবে কী?