#প্রণয়ের_রংধনু🖤
#পর্ব- ১২
#Jannatul_ferdosi_rimi (লেখিকা)
‘ নিজের প্রাক্তনের সাথে আপনি এখনো যোগাযোগ রেখে চলেছেন মিস অনন্যা, এম আই রাইট?’
ফারিশের প্রশ্নে বিন্দুমাত্র অবাক হয়নি অনন্যা। সে ঠায় দাঁড়িয়ে থাকে। কোন জবাব দেয় না। ফারিশ ফের আরেকটি সিগারেট জ্বালাতে জ্বালাতে বলে,
‘নিরবতা সম্মতির লক্ষন, মিস। ‘
‘ আমি কিন্তু একবারও অস্বীকার করেনি। তাছাড়া আমি কার সাথে যোগাযোগ করবো কিংবা করবো না। তার জন্যে অন্তুত আপনার থেকে পারমিশন নিবো না মি: ফারিশ খান। ‘
অনন্যার অকপটে বলা কথাগুলো শুনে সিগারেট টা ফেলে দিয়ে, পায়ের নীচে পিষে ফেলে ফারিশ।
‘ আপনার কথা শেষ হয়ে থাকলে, আমি এখন আসছি।’
ফারিশ তৎক্ষনাৎ তড়িৎ গতিতে উঠে দাঁড়িয়ে বললো, ‘ ওয়েট মিস অনন্যা। এখনো কিন্তু আপনার শাস্তি বাকি রয়েছে। ‘
অনন্যা কাঠকাঠ গলায় বললো, ‘ আপনার ভাষ্যমতে আমি অন্যায় করেছি যখন, তখন আমি আপনার দেওয়া যেকোন শাস্তি মাথা পেতে নিবো। অনন্যা হাওলাদার কখনো শাস্তিকে ভয় পায় না। ‘
‘ ওহ আই সি আজ আমিও দেখবো, আপনার কতটা সাহস মিস অনন্যা। ‘ কথাটি বলেই ফারিশ এক পা দু পা করে অনন্যার দিকে এগিয়ে যায়। ফারিশকে এগোতে দেখে, অনন্যাও পিছিয়ে যেতে থাকে। ফারিশ এগোতে এগোতে অনন্যার অনেকটা কাছে চলে আসে। দুজনেই যেন দুজনের নি:শ্বাসের শব্দ শুনতে পারছিলো। ফারিশ আরেকটু এগোতেই, তৎক্ষনাৎ পিছিয়ে যেতে গিয়ে, সুইমিংপুলে পরে যায় অনন্যা। তা দেখে বাঁকা হাসে ফারিশ। অনন্যা হাতড়ে পানিতে কোনমতো সাঁতরে উঠার চেষ্টা করে, কিন্তু সে কিছুতেই ঠায় পাচ্ছে না। সুইমিংপুলটা বেশ গভীর! সে সাঁতার পারে না। নি:শ্বাসটুকু আটকে যাওয়ার অবস্হা তার। সে হাত উঁচিয়ে বার বার সাহায্য চাওয়ার চেষ্টা করছে কিন্তু ফারিশ এগিয়ে গেলো না। সে সিটি বাজিয়ে সুইমিংপুলের চারিপাশে অনবরত ঘুরতে লাগলো। বেশ আনন্দ লাগছে তার! প্রতিশোধের তীব্র নেশা ফারিশের মস্তিকে প্রবেশ করছে, যার ফল অতি ভয়ংকর হতে চলেছে।
_________________
মিসেস শেফা বেগম তার স্বামীর জন্যে খাবার নিয়ে হসপিটালে এসেছেন, তার স্বামীর অবস্হা শোচনীয় না হলেও, তেমন উন্নতি হয়নি। তিনি কেবিনে প্রবেশ করতেই দেখলেন, লতিফ হাওলাদারের মুখে মাস্ক খুলে, শেফা বেগমকে কাছে ডাকছেন। তিনি দ্রুত এগিয়ে গিয়ে বসে বললেন,
‘ তুমি মাস্ক খুলে ফেললে কেন? যদি কেন সমস্যা হয়। তাড়াতাড়ি লাগিয়ে ফেলো। ‘
লতিফ হাওলাদার জোড় জোড়ে নি:শ্বাস ছেড়ে বললেন, ‘ আগে তুমি বলো, আমার মেয়ে কোথায় শেফা? তুমি কি লুকাচ্ছো আমার থেকে? আমার মেয়ে, আমার এমন অবস্হাতেও কেন হাসপাতালে আসছে না। তার মানে কিছু তো একটা হয়েছে। উত্তর দাও, শেফা। ‘
লতিফ হাওলাদার কথাগুলো বলার সময় বুকে হাতে দিয়ে জোড়ে জোড়ে নি:শ্বাস ফেলছেন। শেফা ঘাবড়ে গিয়ে বললেন, ‘ ওগো! তুমি শান্ত হও। এইভাবে উত্তেজিত হয়ে পরলে, তুমি অসুস্হ হয়ে যাবে। ‘
লতিফ হাওলাদার স্ত্রীর কথা শুনলেন, তিনি ফের প্রশ্ন করলেন,’ আমাকে উত্তর দাও শেফা। আমার মেয়ে কোথায়? সে ঠিক আছে তো?’
শেফা বেগম দীর্ঘশ্বাস ফেলে, শুরু থেকে সকল কিছু খুলে বলতে থাকলেন।
_________________
অপরদিকে, অভি তার উকালতির বইগুলে নিয়ে স্টাডি রুমে বসে ছিলো। মনটা তার বড় আনচান করছে। অস্হির অস্হির লাগছে! একটু আগেও তো
অনন্যার সাথে কথা হয়েছিলো কিন্তু তবুও কেন যেন তার মন মানছে না। মনে হচ্ছে কোন কিছুই ঠিক নেই। অনন্যা ফারিশ খানের বাড়িতে আছে, বিষয়টি জানার পর থেকেই বেশ অদ্ভুদ লাগছে তার। অনন্যার জন্যেও দুশ্চিন্তা অনুভব হচ্ছে তার। অনন্যার সাথে কথা না বললে বোধহয় তার দুশ্চিন্তা দূর হবে না। অভি হাত বাড়িয়ে ফোনটা হাতে নিলো নিজের সমস্ত ইগোকে সরিয়ে, পুনরায় ফোন করলো অনন্যাকে। বেশ অনেকক্ষন রিং হলো কিন্তু কেউ ধরলো না। অভি ফোনটা রেখে, মাথায় হাত দিয়ে বিড়বিড়িয়ে বললো, ‘ আমার এতো অস্হির লাগছে কেন? অনন্যা ঠিক আছে তো?’
__________
অনন্যা হাত বাড়িয়ে কোণায় গিয়ে, ঠায় নেওয়ার শক্তিটুকুও পাচ্ছে না। সারা শরীর তার ঠান্ডায় যেন জমে বরফ হয়ে গিয়েছে। ঠোট নাড়িয়ে কি যেন বিড়বিড়িয়ে যাচ্ছে সে। অনন্যার মনে হচ্ছে সে অতলে ডুবে গিয়ে, হারিয়ে যাবে অচিনপুরে। যেখানে কেউ তাকে ভুল বুঝবে না। কেউ তাকে শাস্তি দিবে না। সে মুক্ত পাখির ন্যায়,নতুন করে বাঁচবে। অনন্যা ডুবে যাওয়ার পূর্বেই, ফারিশ সুইমিংপুল লাফ দিয়ে, সাঁতরে অনন্যার হাত ধরে, তাকে পাজকোলে তুলে, উপরে নিয়ে আসে। অনন্যার আখিজোড়া নিবদ্ধ! গোলাপী চিকন অধরজোড়া কেঁপে চলেছে অনবরত। ফারিশ অনন্যাকে নিয়ে তার ঘরের দিকে নিয়ে যেতে থাকে। তখন রাত ১২ টা। ক্লাব থেকে আজ বেশ তাড়াতাড়ি ফিরেছে আরশ। কি মনে করে যেন সে অনন্যার ঘরের দিকে পা বাড়াতে গিয়ে, থেমে যায়। অনন্যাকে কোলে নিয়ে, ফারিশ অনন্যার ঘরে প্রবেশ করছে। তা দেখে ভ্রু কুচকে তাঁকিয়ে, তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে আরশ বলে, ‘ ওহ আচ্ছা! তবে এই ব্যাপার! দিনের বেলা অনন্যা হয়ে যায় ফারিশ খানের পার্সোনাল সার্ভেন্ট এবং রাতের বেলা তার বেড পার্ট! ওয়াও ভেইরি ইন্টারেস্টিং। ‘
আরশ সেখানে না দাঁড়িয়ে, উপরে নিজের ঘরে চলে যায়।
ফারিশ অনন্যাকে বিছানায় শুয়িয়ে দিয়ে , তার দিকে তাঁকিয়ে, গম্ভীর গলায় শুধালো, ‘ সামান্য শাস্তিতেই এমন অবস্হা? এখনো তো সামনে অনেক বড় বড় শাস্তি, আপনার জন্যে অপেক্ষা করছে মিস অনন্যা! আজ বুঝলেন? মৃত্যুর দিকে ধাবিত হওয়ার সময় যন্ত্রনা টা ঠিক কতটা ভয়ংকর? সেই ভয়ংকর যন্ত্রনা আমি ছোট বেলা থেকে প্রতিটা মুহুর্তে অনুভব করেছি, এখনো করছি। ভুলতে পারি না সেই ভয়ংকর কালো অতীত। মনে হয় এই বুঝি ম/রে যাবো। ‘
কথাগুলো বলতে গিয়ে গলা ধরে আসে ফারিশের। অনন্যা অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিলো, তাই ফারিশের কথাগুলো শুনেনি। ফারিশও বুঝতে পারে, অনন্যার জ্ঞান নেই। সে ঘর থেকে বেড়িয়ে যেতে নিলে, আটকে পরে যায়। কারণ তার ঘড়ির সাথে, অনন্যার ওড়না আটকে গিয়েছে। ফারিশ এগিয়ে নিজের ঘড়ি থেকে অনন্যার ওডনাটি ছাড়িয়ে নিতে থাকে, কিন্তু তখনি কেঁপে উঠে অনন্যা। তার জ্ঞান ফিরছে কিন্তু সম্পূর্ণভাবে নয়। শরীর তার অনবরত ঠান্ডায় কেঁপে চলেছে। ফারিশ নিজের ঘড়ি ছাড়িয়ে, অনন্যাকে গুরুত্ব না দিয়ে, উঠে যেতে গিয়েও কী ভেবে যেন থেমে যায়। মেয়েটা ঠান্ডায় কাঁপছে। বেশ অনেক্ষন পানিতে ছিলো। ফারিশ পাশে থাকা কম্বলটি নিয়ে না চাইতেও, অনন্যার গাঁয়ে ভালোভাবে জড়িয়ে দেয়। যেন কাঁপুনি টা কমে যায়। অত:পর সে ঘর থেকে বেড়িতোই,দেখতে পায় করিমা দরজায় দাঁড়িয়ে আছে। ফারিশকে দেখেই, করিমা মাথা নিচু করে ফেলে। ফারিশ গম্ভীর সুরে বলে,
‘ উনার কাপড় চেঞ্জ করে দিও, নাহলে ভেজা কাপড়ে ঠান্ডা লেগে, জ্বর এসে যাবে। ‘
‘ জ্বে, আইচ্ছা স্যার। ‘ বলে মাথা নাড়ায় করিমা। ফারিশ উপরে চলে যায়। ফারিশ চলে যেতেই, মুখ বেকিয়ে করিমা বলে, ‘ কেমন বেডার ঘরে বেডা! নিজে শাস্তি দিয়া, আবার দরদ দেখাইয়া নিজেই কম্বল জড়াইয়া দিয়া দেয়। সত্যি বেডা মাইষ্যের মতগতি বুঝি না। ‘
ফারিশ তার ঘরে এসে রকিং চেয়ারে বসে পরে। আখিজোড়া নিবদ্ধ করলেই, সেই ঠান্ডায় কাঁপুনি দেওয়া, অনন্যার সেই অসহায় মুখস্রী খানা ভেঁসে উঠে। ফারিশ তৎক্ষনাৎ বিষয়টি মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে ভাবে, এই শাস্তি তো সামান্য! সামনে অনেক বড় কিছু অপেক্ষা করছে অনন্যার জন্যে। ফারিশ অধরের কোণে বাঁকা হাসি ফুটিয়ে বলে,
‘ আপনাকে দূর্বল হলে চলবে না মিস অনন্যা। ইউ নো ওয়াট? আই ডোন্ট লাইক দিজ টাইপ অফ ওইকনেস। ‘
চলবে।
#প্রণয়ের_রংধনু ✨
#পর্ব- ১৩
#Jannatul_ferdosi_rimi (লেখিকা)
গভীর রাতে বেশ জ্বর উঠে গেলো অনন্যার। ঘেমে একাকার হয়ে আছে সে তবুও মৃদ্যু মৃদ্যু কাঁপছে। অধরজোড়া নাড়াতে পারছে না। তবুও অস্পষ্ট কন্ঠে আওড়ে যাচ্ছে ‘ পানি, পানি! ‘ বেশ কিছুক্ষন ঠান্ডা পানিতে থাকার ফলে গা কাঁপিয়ে জ্বর উঠেছে তার। তার বিছানার পাশে একটা ভাঙ্গা জগ ছিলো। তাতে সামান্য পানি ছিলো, অনন্যা হাত বাড়াতেই নিলেই, জগটা তৎক্ষনাৎ নীচে পরে গিয়ে সম্পূর্ণ ফেটে যায়। অনন্যা হতাশার নি:শ্বাস ফেলে। তার মনে হচ্ছে সে পানিটুকু না পান করলে, বোধহয় আজই প্রাণ হারিয়ে ফেলবে, কিন্তু সে বাঁচতে চায়। নিজেকে সম্পূর্ণ রুপে নির্দোশ প্রমাণ করতে চায় সকলের সামনে। তার ফোনটাও অপরপাশে বেজে চলেছে, ফোনের অপাশে অভি রয়েছে, সে চিন্তিত হয়ে পরেছে, কেননা আধাঘন্টা যাবত সে অনন্যাকে ফোন করছে কিন্তু অনন্যা ধরছে না। এতো রাতে ব্যাস্ত হবার কথা নয়! এই সময়টা ঘুমানোর, কিন্তু রাতে কি এমন কাজে ব্যাস্ত রয়েছে অনন্যা? যার ফলে একটিবারের জন্যে হলেও ফোন রিসিভ করছে না সে। মনটা খচখচ করছে তার। না চাইতেও অনেক ধরনের নেতিবাচক ভাবনা মাথায় আসছে তার। তাছাড়াও ফারিশের সাথে অনন্যার সম্পর্কের ব্যাপারে কোন সংদেহ প্রকাশ করার অবকাস নেই, কারণ অনন্যা নিজেই নিজেকে ফারিশের রক্ষিতা হিসেবে পরিচয় দিয়েছে অভির কাছে। কিন্তু তবুও একটা কিন্তু থেকে যায়! অভি ঠিক করেছে সে সময় নষ্ট করবে না। সকালেই বেড়িযে পরবে হসপিটালের উদ্দেশ্য। সেখানে শেফা বেগমের সাথে তাকে কথা বলতে হবে।
অপরদিকে…অনন্যা জ্বর গায়ে উঠে দাঁড়িয়ে ঘর থেকে ঢুলতে ঢুলতে বেড়িয়ে যায়। গলা তার শুকিয়ে যায় যায় অবস্হা! পানি পান না করলে উপায় নেই। ফারিশ সিড়ির উপরে দাঁড়িয়ে ফোন স্ক্রল করছিলো, তার দৃষ্টি নীচের দিকে যেতেই, দেখতে পায় ক্লান্ত অসুস্হ শরীরে রান্নাঘরের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে অনন্যা। ফারিশ তেমন গুরুত্ব না দিয়ে, নিজের ঘরের দিকে পা বাড়াতে নিলে দেখতে পায়, আরশ ও নিজের রুম থেকে বেড়িয়ে নীচের দিকে যাচ্ছে। হাতে তার পানির জগ, হয়তো তার ঘরে থাকা জগের পানি ফুরিয়ে গিয়েছে, তাই নীচ থেকে পানি নিতে যাচ্ছে। সে হয়তো ফারিশকে খেয়াল করেনি। কি যেনো ভেবে থেমে যায় ফারিশ, নিজের ঘরের দিকে পা বাড়ায় না। সে নীচের দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাঁকিয়ে, সিড়ি থেকে নেমে যেতে থাকে। অনন্যা জগটা হাতে নিয়ে গ্লাসে পানে ঢেলে খেতে গিয়ে ও মাথা ঘুড়িয়ে যায় তার। আরশ এগিয়ে, অনন্যাকে ধরতে চাইলে, তাতে বাঁধ সাধে ফারিশ। আরশ ফারিশকে দেখে মিনমিনিয়ে গলায় বলে, ‘ ভাইয়া, তুমি? উনি তো পরে যাবে বোধহয়। ‘
‘ উনাকে নিজে থেকে উঠে দাঁড়াতে দাও। আমিও দেখতে চাই উনি ঠিক কতটা স্ট্রং!আদোও কারো সাহায্য ব্যাতীত, উনি ঘুড়ে দাঁড়াতেন পারে কি না। সেইটাই দেখার বিষয়। ‘
ফারিশের কথা শুনে ভ্রু কুচকে তাঁকায় আরশ। অনন্যা পরে যেতে গিয়েও নিজেকে সামলে নিয়ে,ঢগঢগ করে পানি খেয়ে ফেলে। অত:পর তার চোখ যায় সামনে দাঁড়িয়ে থাকা আরশ এবং ফারিশের দিকে। সে জ্বর নিয়েও যথাসম্ভব নিজেকে শক্ত রেখে, দাঁড়িয়ে থেকে প্রশ্ন করে, ‘ আপনাদের কি এখন কিছু লাগবে? ‘
ফারিশ এগিয়ে এসে বলে, ‘ আপনি আমার সাথে উপরে আসুন। ‘
বলেই উপরে চলে যায় ফারিশ। অনন্যাও গ্লাস টা রেখে, ক্লান্ত শরীরে সিড়ি বেয়ে উপরে চলে যেতে নিলে, পিছন থেকে আরশ কিছুটা নোংরা ভাবে বলে উঠে, ‘ মিস অনন্যা! যেই সুখের আশায় শত অসুস্হতা নিয়ে আপনি ফারিশ খানের কাছে যাচ্ছেন, তার থেকে কম সুখ আমি দিবো না। খান বাড়ির ছেলে আমি, এক রাতের জন্যে খুশি করতে পারলে, ভালো এমাউন্টই পাবেন আপনি। আজকে আপনি ব্যাস্ত বুঝতে পারছি, তবে কাল কিংবা যেকোন সময় যখন ফারিশ খানের সাথে আপনার সিডিউল থাকবে না, তখন আমাকে সময় দিলেই চলবে। ‘
অনন্যা থেমে যায়, সে শক্ত মুখে দাঁড়িয়ে থাকে। কোনরুপ জবাব দেয় না। আরশ নিজের চুল ঝাঁকিয়ে অনন্যার দিকে কুৎসিত দৃষ্টিতে তাঁকিয়ে ফের বলতে থাকে, ‘ আসলে অনেক মেয়ের সাথেই রাত কাটানো হয়েছে। আরশ খানের জন্যে মেয়ের অভাব হয়না, কিন্তু আপনার ফিগারটা….’
সম্পূর্ণ কথা শেষ করার পূর্বেই, সর্বশক্তি দিয়ে অসুস্হ অবস্হাতেই, আরশের গালে ঠাটিয়ে চর বসিয়ে দিলো অনন্যা। আরশ কিছুটা পিছে হটে গেলো! অনন্যা গলার স্বর কিছুটা উচুঁ করে বললো, ‘ আজকে শুধু হাত উঠেছে, কাল কিন্তু আমার জুতা আপনার গালে থাকবে, যদি আবারোও আপনি আমার প্রতি কোনপ্রকার কুমন্তব্য পোষণ করেন। আমি আবারোও বলছি, আমি অনন্যা হাওলাদার খেটে কাজ করবো কিন্তু নিজের আত্মসম্মানের সাথে কখনো আপস করবো না। মাইন্ড ইট মি: আরশ খান।’
গালে হাত রেখে থরথর করে রাগে কাঁপতে থাকে আরশ। অনন্যা উপরে উঠে চলে যায়। অপরদিকে ক্ষোভে একপ্রকার বিক্ষিপ্ত হয়ে যাচ্ছে আরশ। সে বিড়বিড়িয়ে বলতে থাকে, ‘ আরশ খানের গাঁয়ে হাত তোলার শাস্তি তোমাকে পেতেই হবে অনন্যা। একদিনের জন্যে হলেও তোমায় আমি আমার বিছানায় এনে ফেলবো। ‘
সিড়ি বেয়ে উপরে উঠে, ফারিশের রুমের সামনে দাঁড়িয়ে, অনন্যা মুখ চেপে কেঁদে ফেলে। ফারিশ খানের মতো জঘন্য লোকের ভাই আরশ, তার থেকে কি আর ভালো কিছু আশা করা যায়? সবসময় মেয়েদের সাথেই এমন হয় কেন? সমাজের লোকেরা কী আরশের মতো মুখোশরুপী ভদ্র মানুষদের আসল চেহারা দেখতে পায় না? রাস্তাঘাটেও মেয়েরা নিরাপদ নয়, সেখানেও তাদেরকে শকুনের মতো গিলে খাওয়ার জন্যে উৎ পেতে রয়েছে অনেকেই। দিনশেষে ফারিশ খানের মতো খারাপ মানুষেরা কত সহজেই, অনন্যার মতো মেয়েদের গাঁয়ে চরিত্রহীনার কলঙ্কের কালি লাগিয়ে দেয় এবং সেই কলঙ্ককে কত সহজেই যাচাই বাছাই না করে অকপটে স্বাকীর করে সমাজ! সেই সমাজকে আজ মন থেকে ধিক্কার জানায় অনন্যা। যেখানে শুধু মেয়েদের পায়ের নীচে পি/ষে ফেলা হয়। অনন্যার ভাবনার মাঝেই, ফারিশ হাক ছেড়ে ডাকে, ‘ মিস অনন্যা! সময় নষ্ট করা আমি একদমই পছন্দ করি না। আই জাস্ট ডোন্ট লাইক দিজ টাইপ অফ টাইম ওয়েস্টিং, সো কাম হেয়ার মাই রুম, ফাস্ট! ‘
অনন্যা নিজের আখিজোড়ার অশ্রুটুকু মুছে ফারিশের রুমে প্রবেশ করে, নীচের ঘটনাটি ঘটার পরে, তার মনে ফারিশকে নিয়েও ভয় ঢুকে গিয়েছে। এতো রাতে ফারিশ তাকে কেন তার রুমে ডেকেছে? কোন কু মতলবে নয় তো? ফারিশের মতো মানুষকে দিয়েও তো ভরসা নেই।
‘ হ্যা বেশ বড়সড় কু মতবলেই আপনাকে আমার রুমে ডেকে পাঠিয়েছি। ‘
ফারিশের কথা শুনে চমকে উঠে অনন্যা। সে ভাবে তার মনের কথা ফারিশ কী করে বুঝলো? ফারিশ গম্ভীর গলায় বলে উঠে, ‘ সোফায় গিয়ে বসে পড়ুন। ‘
‘ জ্বী? ‘
‘ সহজ একটা কথা বলেছি। আশা করি বুঝতে অসুবিধা হওয়ার কথা নয়। ‘
অনন্যায় সোফা গিয়ে বসে পরে। ফারিশ একটা ওষুধের ট্যাবলেট হাতে নিয়ে, অনন্যার দিকে এগিয়ে বলে, ‘ আপনার ভাষ্যমতে, আমি অতি জঘন্য, খারাপ লোক, হ্যা আমি অনেক খারাপ। তার প্রমাণ সামনে অনেক পাবেন, কিন্তু আমি রেপিস্ট নই। ওষুধ টা খেয়ে নিন। জ্বর সেরে যাবে। ‘
অনন্যা ওষুধ টা নিলো। তার কপালে চিন্তার ভাজ পরে আছে। ফারিশ এসির রিমোর্ট হাতে নিয়ে, এসি সামান্য মাত্রায় রেখে দিলো। অত:পর অনন্যাকে হাত দিয়ে ইশারা করে, বিছানার পাশে থাকা টেবিলের থাকা দুধের গ্লাস খানা দেখিয়ে বললো, ‘ ওষুধ টা খেয়ে, দুধ খেয়ে নিবেন। আশা করি, সকালের মধ্যে জ্বরটা কমে যাবে। কিছুটা দূর্বল লাগবে, তবে জ্বর সেরে যাবে। আপাতত স্টোর রুমে যেতে হবে না। আমার রুমের সোফা অনেক বড়, এখানে ঘুমিয়ে পড়ুন। আমি বাইরে বের হচ্ছি, আপনি লক করে ঘুমাবেন। আপনাকে আমার ঘরে থাকতে দেওয়ার কারণও আছে, এখন এই রাতে অন্য রুমে যেতে গেলে, অনেকেই আপনাকে দেখতে পেয়ে, হাজার টা প্রশ্নের ঝুলি খুলে বসবে। আমার রুমটা বাড়ির একদম কর্নারে, কেউ আসেও না এদিকে তেমন, আর হ্যা! ভুলেও আমার বিছানায় ঘুমাতে যাবেন না। আমার বিছানায় কোন মেয়ে ঘুমাক, আই জাস্ট ডোন্ট লাইক দিজ। আমার রুমেও কোন মেয়ে থাকুক, তা আমি পছন্দ করেনি কিন্তু এখন সিচুয়েশনে টা ভিন্ন, তাই এলাও করছি৷ ‘
কথাগুলো একনাগাড়ে বলে থামলো ফারিশ। অনন্যা সোফা থেকে উঠতে উঠতে বললো,
‘ আমার আপনার বিলাসবহুল ঘরে থাকার কোন শখ নেই। আমি স্টোর রুমে যাচ্ছি। সবকিছুতে মানিয়ে নিতে জানি আমি।
‘ আপনি এখন আমার সার্ভেন্ট। আমার আন্ডারে আছেন, তাই আমার অর্ডারই শেষ অর্ডার, মিস অনন্যা হাওলাদার। ‘
অনন্যা মুখ বেকিয়ে বিড়বিড়িয়ে বললো, ‘ বদ লোক একটা! নিজে এমন অবস্হা করে, আবার নিজেই দরদ দেখাচ্ছে। ‘
অনন্যা বিড়বিড় করে বললেও, তা স্পষ্ট শুনতে পেলো ফারিশ। সে কঠোর গলায় উত্তর দিলো,
‘ আমি কোনপ্রকার দরদ দেখাচ্ছি না মিস অনন্যা। কারো প্রতি দরদ দেখানোর কোনপ্রকার শখ বা ইন্টারেস্ট নেই আমার। অসুস্হতার মতো লেইম অজুহাত দিয়ে, আপনি যেন কোনভাবে কাজে ফাঁকি দিতে না পারেন,তাই এমন ব্যাবস্হা! ‘
বলেই শিষ বাজাতে বাজাতে ঘর থেকেবেড়িযে যায় ফারিশ। ফারিশের কথা শুনে রাগ হলোও, সেই রাগকে দমিয়ে রেখে ওষুধ টা খেয়ে ফেলে অনন্যা। আপাতত তাকে সুস্হ থাকতে হবে। নাহলে সে নিজের লড়াই চালিয়ে যেতে পারবে না। অনন্যা দরজা আটকে, দুধটাও খেয়ে নেয়। গরম দুধটা খাওয়ার পরে, তার শরীরটা কিছুটা ভালো লাগছে, সো সোফায় গা এলিয়ে দিতেই, তার চোখ যায় একটি ফ্রেমের দিকে।
চলবে কি?