Monday, October 6, 2025







বাড়ি"ধারাবাহিক গল্প"প্রণয়াসক্ত পূর্ণিমাপ্রণয়াসক্ত পূর্ণিমা পর্ব-৭+৮

প্রণয়াসক্ত পূর্ণিমা পর্ব-৭+৮

#প্রণয়াসক্ত_পূর্ণিমা
#Writer_Mahfuza_Akter
পর্ব-০৭

অবসন্নতা ঘেরা সন্ধ্যা। তরী জানালার গ্রিলে কপাল ঠেকিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। বাইরের দিকে তাকিয়ে একদৃষ্টিতে দেখছে ঝাঁকে ঝাঁকে পাখিদের নীড়ে ফেরার দৃশ্য। মাঝে মাঝে তার নিজেরই পাখি হতে ইচ্ছে করে। তাহলে তো আজকে তাকে এখানে দাঁড়িয়ে থাকতে হতো না! জীবনে এতো শূন্যতা অনুভব করতে হতো না। নিজের মধ্যে এক বুক কষ্ট থাকলেও সেটা মুক্ত আকাশে ছড়িয়ে দিতে পারতো সে। উড়ে যেত, হারিয়ে যেত বহুদূর! যেখানে কোনো কষ্ট-ই তাকে ছুঁতে পারবে না। সেখানে চলে যেত, যেখনা প্রিয়রা হারিয়ে গেছে ওর জীবন থেকে।

হর্ণের শব্দে চমকে ভাবনার রাজ্য থেকে বের হয়ে এলো তরী। গেইট দিয়ে সৌহার্দ্যের গাড়ি ঢুকতে দেখে কিছুটা অবাক হলো সে। আজ হঠাৎ এতো দেরি করে এসেছে কেন সৌহার্দ্য? মিস্টার রায়হানের অসুস্থতার একমাস প্রতিদিন সৌহার্দ্যকে বিকেলের দিকে বাড়ি ফিরে আসতে দেখেছে। ঘুমাতে যাওয়ার আগপর্যন্ত বাবার পাশে বসে থাকতো সে। চোখের পানি ফেলতে ফেলতে ঘর থেকে প্রায়ই বের হতে দেখে সে সৌহার্দ্যকে। বাবা-মায়ের প্রতি এতো ভালোবাসা ও শ্রদ্ধাবোধ আগে কখনো কারো মধ্যে দেখেনি তরী।

জ্ঞান ফেরার পর মিস্টার রায়হান কথা বলতে পেরেছিলেন প্রায় দু সপ্তাহ পর! যেদিন তিনি প্রথম কথা বলেছিলেন, সেদিন সৌহার্দ্যের হাত আঁকড়ে ধরে অস্পষ্ট স্বরে বলেছিলেন,

-“বাবাকে এতো ভালোবাসিস! এতো শ্রদ্ধা করিস! অথচ এতোটুকু ভরসা রাখতে পারিসনি আমার ওপর? তোর জন্য আমি সঠিক সিদ্ধান্তটা-ই নিয়েছি, সৌহার্দ্য! তরীর সব যোগ্যতা আছে তোর পাশে দাঁড়ানোর।”

তরী চোখ বড় বড় করে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিল মিস্টার রায়হানের দিকে সেদিন। সৌহার্দ্য একবার তরীর দিকে একপলক তাকিয়ে আবার বাবার দিকে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলেছিল শুধু। তরীর ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় ওকে এটাই বলে যে, সৌহার্দ্য ওকে কখনোই স্ত্রীর মর্যাদা দিবে না। ওর সাথে সংসার করা তো দূরের কথা!

সৌহার্দ্য বাড়িতে প্রবেশ করলো তার দাদীকে নিয়ে। বৃদ্ধ বয়সে অহেতুক চিন্তা করবেন বলে তাকে মিস্টার রায়হানের অসুস্থতার খবর জানানো হয়নি। কিন্তু গতরাতে সুজাতা হঠাৎ মুখ ফসকে কথাটা বলে ফেলেছে ফোনে কথা বলার সময়। সেই থেকে দাদী গোঁ ধরে বসে আছেন ছেলেকে দেখার। কান্নাকাটির ঝামেলায় বিরক্ত হয়ে সৌহার্দ্য আজ গ্রামে গিয়ে নিয়ে এসেছে দাদীকে।

সৌহার্দ্যের দাদী বাড়িতে প্রবেশ করেই ছেলেকে এক পলক দেখে এলেন। এরপর সুজাতার ওপর চিৎকার-চেঁচামেচি শুরু করে দিয়েছেন,

-“কী গো, বউমা! তোমার থেইকা এইটা আশা করি নাই আমি। আমার ছেলের অসুখ, শয্যাশায়ী অবস্থা, এইটা তুমি আমারে জানানোর প্রয়োজন মনে করলা না? তোমার সংসারে কখনো নাক গলাইতে আসি নাই আমি। তাই বইলা আমার ছেলের ভালোমন্দের খবরও আমারে দিবা না?”

সুজাতা বরাবরই স্পষ্টভাষী। সে ঠান্ডা গলায় উত্তর দিলো,

-“আপনি অযথা চিন্তা করবেন ভেবেই দেইনি। এমনিতেই শরীরের অবস্থা ভালো না আপনার। আর আমার সংসারে নাক গলানোর কথা বলছেন? আমি তো সবসময়ই আপনাকে বলি গ্রামছেড়ে আমার বাড়িতে চলে আসতে। আপনিই তো শহরে থাকতে পারেন না।”

দাদী খুড়িয়ে খুড়িয়ে এগিয়ে এলেন। সোফায় বসে ক্লান্ত ভঙ্গিতে বললেন,

-“নাহ্! এখন থেইকা এই খানেই থাকবো। আমি বুইঝা গেছি, তুমি আমারে কোনো কথাই কইতে চাও না। আমার ছেলেটা ম*রে গেলেও দেখা যাইবো আমারে কিছু জানাও নাই। সেইটা হইতে দেওন যাইবো না। আসলে সত্যি কথা কী জানো? পর সবসময় পর-ই থাকে। পরের বাড়ি থেকে বউ হয়ে আসা মেয়েমানুষ তো পর-ই হইবো।”

সুজাতা চোখ বন্ধ করে কথাটা হজম করে নিলেন। এসব কথা অনেক শুনেছেন তিনি নিজের জীবনে। তাই অনেকটা সয়ে গেছে। কিন্তু আজ খুব করে উত্তর দিতে ইচ্ছে করছে,

-“আপনিও তো পরের বাড়ি থেকেই বউ হয়ে এসেছেন। আপনি তাহলে আপন হলেন কী করে?”

কিন্তু কথায় কথা বাড়ে। এখন তর্কাতর্কি করার মানসিকতা নেই সুজাতার। মাথা ঠান্ডা করে সৌহার্দ্যকে বললেন,

-“তরী তোর বাবাকে বিকেলের ওষুধ খাওয়াতে দিলো না। আজকে চেকআপ করিয়ে নতুন ওষুধ দিবি বলে মেডিসিন অফ রেখেছে আজ।”

সৌহার্দ্যের দাদী ভ্রু কুঁচকালো। জহুরি নজরে তাকিয়ে বললো,

-“তরী? এইটা কে রে?”

সুজাতা আর সৌহার্দ্য দুজনেই থতমত খেয়ে গেল। সৌহার্দ্য নিজের মায়ের দিকে রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে বিরবির করে বললো,

-“সব কথা মুখ ফসকে বের হয়ে যেতে হবে তোমার? একটা কথাও কি পেটে রাখা যায় না? এবার কী হবে ভাবতেই হাত-পা ঠান্ডা হয়ে আসছে!”

সুজাতা ভীত মুখশ্রী বানিয়ে চিন্তিত ভঙ্গিতে তাকিয়ে আছেন। তরীর কথা জেনে গেলে ইনি ভ*য়ং*ক*র কোনো ঘটনা না ঘটালেই হয়!

-“কী রে? চুপ করে আছিস কেন তোরা? বল! তরী কে? কাজের লোক?”

‘কাজের লোক’ কথাটা সৌহার্দ্যের পছন্দ হলো না কেন যেন! তাই সব ভাবনাচিন্তা বাদ দিয়ে সত্যটা-ই বলে দিলো,

-“তরী তোমার নাত-বৌ, দাদী!”

-“কীহ্?”

বসা থেকে ঝড়ের বেগে উঠে দাঁড়ালেন সৌহার্দ্যের দাদী। গর্জে উঠে বললেন,

-“কী বললি? তুই বিয়ে করছোস? তই আমারে না জানাইয়া বিয়ে করছোস? তুই-ও তোর মায়ের মতো আমারে পর কইরা দিলি রে! তোর মা তোদের বাপ-ছেলেরে কী জাদু করছে, আমি বুঝতে পারছি না। একটা বিয়ে হয়ে গেল, আর আমারে কেউ জানানোর প্রয়োজন মনে করলি না?”

-“দাদী, তুমি যেমন ভাবছো, তেমন কিছু না। তরীর সাথে তো বিয়েটা হ…..”

সৌহার্দ্যকে বর্ণনা করার কোনো সুযোগ-ই দিলেন না ওর দাদী। হুকুমের সুরে বললেন,

-“এখনি তোর বউরে আমার সামনে আন। এখনি আন। আজ সবকিছুর একটা বিহিত না করলেই নয়!”

সুজাতা ঢোক গিললেন। এই ভয়টাই পাচ্ছিলেন তিনি। তার শাশুড়ীকে তিনি ভালো করে চেনেন। এতো বছরে অনেক ক্ষো*ভ জমেছে তার মনে। আজ তরীর ওপর সেগুলো না ঢাললেই নয়!

চিৎকার-চেঁচামেচির শব্দে তরী ঘর থেকে বেরিয়ে এলো। সৌহার্দ্যের দাদী তরীকে এখনো খেয়াল করেননি। তিনি আবারও চেচিয়ে উঠে বললেন,

-“আমার কথা কানে যায় না তোদের? নাকি আমার কথার কোনো দাম….”

বলতে বলতে ঘুরে তাকাতেই কথা আটকে গেল তার! তরীর মুখের ওপর দৃষ্টি আঁটকে গেছে। অবাক চোখে তাকিয়ে রইলেন তরীর মুখের দিকে।

সৌহার্দ্য আর সুজাতার কপালে চিন্তার ভাজ। দাদী এমন শান্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন কেন? তার তো এখনি তেড়ে যাওয়ার কথা তরীর দিকে? নাকি ঝড়ের আগে যেই শান্ত পরিবেশ বিরাজ করে, তারই একটা লক্ষন এটা?

সৌহার্দ্যের দাদী তরীর দিকে ধীর গতিতে এগিয়ে গেলেন। নুয়ে যাওয়া দেহটাকে সোজা করার চেষ্টা করে মুখটা উপরে তুলে তরীর কাছাকাছি দাঁড়ালেন। তরী স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছে তার চোখভর্তি পানিগুলো! একি! ইনি কাঁদছেন কেন? তরী বিস্ময়কে আরো একধাপ বাড়িয়ে দিয়ে সৌহার্দ্যের দাদী তরীর সারা মুখে হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বললেন,

-“এই চেহারার আদল যে আমার বড্ড চেনা! সেই চেনা চোখ, চেনা মুখ, চেনা চাহনি। এটা কী করে সম্ভব? আমি যে নিজের চোখকেও বিশ্বাস করতে পারছি না! ”

এমন লথা শুনে তরী, সুজাতা আর সৌহার্দ্য হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে রইলো সৌহার্দ্যের দাদীর দিকে।

১৫.
মধ্যদুপুরের গরমে ত্যা’ক্ত-বিরক্ত রাস্তা-ঘাটের মানুষজন। মধু চিন্তিত ভঙ্গিতে রাস্তা দিয়ে হাঁটছে আর কালকের ব্যাপারটা মনে করছে। ছেলেটার নাম অভীক শাহরিয়ার কীভাবে হয়? আর সে তরীকে নিয়ে ওর কাছে কেন জানতে চাইলো? সবচেয়ে বড় কথা, সে মধুকে কীভাবে চেনে?

গতরাতে….

-“আপনাকে আমি কোথায় দেখেছি বলুন তো!”

প্রহর মুখ চওড়া করে হাসলো। বললো,

-“দেখেছিলে, সেদিন সন্ধ্যায়! তোমার এ’ক্সি’ডে’ন্ট হলো যে! আর…”

-“ওহ্! কালো চশমা? হ্যাঁ, হ্যাঁ! মনে পড়েছে। কিন্তু আপনার মতলব কী বলুন তো? আমার সাথে দেখা করতে কেন এসেছেন?”

-“তোমায় আমার সাথে একটা এগ্রিমেন্টে যেতে হবে।”

-“এগ্রিমেন্ট? কীসের?”

-“তোমার পরিচিত একটা মেয়ে। নাম হলো তরী। ওর সাথে রিলেটেড ব্যাপারটা। আর তোমাকে কাজটা করতেই হবে!”

কথাগুলো এখনো কানে বাজছে ওর। কাল সারা রাত ঘুমাতে পারেনি মধু। প্রহরের কথা অনুযায়ী কাজ করতেই হবে। এর বাইরে আর কোনো উপায় নেই। কিন্তু মধু তো একটা অসহায় মেয়ে। ওর সাথে এরকম বিশ্বাসঘাতকতা করাটা কি ঠিক হবে?

-চলবে…..

#প্রণয়াসক্ত_পূর্ণিমা
#Writer_Mahfuza_Akter
পর্ব-০৮

তরী বারান্দায় বসে দাদীর মাথায় তেল লাগিয়ে দিচ্ছে। ওনার নাকি মাথা ধরেছে। দাদী এক দৃষ্টিতে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছেন। ওনার আচরণ তরীকে বেশ ভাবাচ্ছে।

-“নাতবৌ! আমার না ক্যান জানি বিশ্বাস হইতেছে না।”

তরী ভ্রু কুঁচকালো। ইনি এতো ভাবছে কেন বিষয়টা নিয়ে? কী নিয়ে সন্দেহ করছেন কে জানে! আর অবিশ্বাস করার মতো ঘটেছে-ই বা কী? তরী বিভ্রান্তিকর একটা পরিস্থিতিতে পড়েছে। ফোঁস করে দীর্ঘশ্বাস ফেললো সে। দাদী ওর হাত টেনে বললেন,

–“সামনে আয় না, বৌ! তোর মুখখানা দেইখা একটু চোখ জুড়াই আমার।”

তরীকে নিজের সামনে টেনে এনে বসিয়ে দিলো দাদী। ওর মুখে হাত বুলিয়ে টলমলে দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো। তরীর মনে হচ্ছে, দাদী বারবার ছুঁয়ে ছুঁয়ে বোঝার চেষ্টা করছে। বিশ্বাস করতে চাইছে যে, সামনে বসা মেয়েটা তার কোনো ভ্রম না। তার সামনে থাকা সবকিছু সত্যি এবং বাস্তব। দাদী তার শুভ্র-মলিন শাড়ির আঁচল টেনে চোখ মুছলেন। নাক টেনে বললেন,

-“জানিস, আমার মনে আমি অনেক কষ্ট চেপে রাখছি। অনেক অভিযোগ, হাহাকার আমি নিজের মধ্যে দমাইয়া রাখছি। তোর মুখ দেখলেই ক্যান জানি প্রচুর বুকের ভেতরটা ঠান্ডা হইয়া যায়। মনে হয়, এক যুগ ধইরা জ্ব*লা আ*গুন নিভলো হঠাৎ করে।”

তরী চোখ ছোট ছোট করে হাতের ইশারায় জিজ্ঞেস করলো, “কেন?”

দাদী হাসলো। তরীর গালে হাত রেখে আকাশের দিকে ইশারা করে বললো,

-“ঐ যে আকাশটা দেখেছিস? দেখ, কি সুন্দর চাঁদ উঠেছে আজকে! একদম ভরা পূর্ণিমা। তোর মুখটাও চাঁদের মতো সুন্দর। রবীন্দ্রনাথ ‘সোনার তরী’ লিখেছিলেন। জানি না, তিনি সোনার তরী দেখেছিলেন কি না! তবে তোকে দেখলে তোকে নিয়ে ‘রূপের তরী’ লিখতেন নিশ্চিত।”

তরী চোখ বড় বড় করে তাকালো। দাদীর মুখে এতো সুন্দর গোছানো কথা শুনে অবাক হওয়ার পাশাপাশি নিজের প্রশংসা শুনে লজ্জা পেল খানিকটা। ঠোঁট এলিয়ে হাসতেই দাদী বললেন,

-“সবসময় এমন কইরা-ই হাসিস! তোর হাসি আর নীরবতা দুইটা-ই অন্য রকম সুন্দর!”

আড়াল থেকে সৌহার্দ্য আর সুজাতা ওদের বলা সব কথাই শুনলো। সুজাতা অবাক হলেও কোনো ঝামেলা হয়নি এটা ভেবে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললেন।

-“খেতে চল! অনেক রাত হয়েছে।”

সুজাতা কথাটা বলে চলে গেলেও সৌহার্দ্য গেল না। তরীর দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে পর্যবেক্ষণ করলো কিছুক্ষণ। কী আছে এই মেয়ের মধ্যে? কী দেখে তার দাদী এভাবে গলে গেল? শুধু-ই সৌন্দর্য দেখে? হতেই পারে না! দাদীকে সে ভালো করে চেনে। শুধু রূপ দিয়ে তার মন গলানো কখনোই সম্ভব নয়। তাহলে এর পেছনে কারণটা কী?

রাতের খাওয়া-দাওয়ার আরেক ঝামেলার সূচনা হলো। তরী বর সৌহার্দ্য আলাদা ঘরে ঘুমায়, এটা শুনতেই সৌহার্দ্যের দাদী আবার চেঁচামেচি শুরু করে দিয়েছে। তিনি বিস্মিত চোখে সৌহার্দ্যের দিকে তাকিয়ে বললেন,

-“মানে কী? তুই আর নাতবৌ আলাদা ঘরে ঘুমাস? কালকে রাতে তো ব্যাপারটা খেয়াল করি নাই! তোদের না বিয়ে হইছে? বিয়ের পর জামাই-বউ আলাদা ঘরে ঘুমায় কোনোদিন?”

সৌহার্দ্য মহা বিপদে পড়ে গেল। এখন কী বলে বুঝাবে দাদীকে? ইনিয়ে-বিনিয়ে বললো,

-আসলে… দাদী… হয়েছে কী… মানে তরীর তো পড়াশোনা আছে! ও রাত জেগে পড়ে। আর আমি সারাদিন পর হসপিটাল থেকে ক্লান্ত হয়ে বাসায় আসি। আমারও ঘুমের দরকার। তাই দুজনের সুবিধার জন্য….. ”

সৌহার্দ্যের কথায় ঘোর আপত্তি জানিয়ে দাদী বললেন,

-“না, এটা কোনো কথা হইলো? কি অলক্ষুণে কাজ-কারবার শুরু করছোস তোরা?”

সুজাতার দিকে তাকিয়ে বললেন,

-“আর বউমা, তুমিও কেমন কইরা এসব ব্যাপারে সায় দিতেছো? ওরা আলাদা ক্যান থাকবো? বলি, তোমার মাথায় কি ভালো বুদ্ধি-সুদ্ধি কিছু নাই? এমন কইরা চললে কেমনে হইবো বলো তো! তোমার কি নাতি-নাতনির মুখ দেখার ইচ্ছা নাই?”

আবার সৌহার্দ্যের মুখের দিকে তাকিয়ে বললেন,

-“কীরে, নাতি! তোর কি মনে চায় না তোর বাপ-মাকে নাতি-নাতনির মুখ থেকে দাদা-দাদী ডাক শুনানোর?”

সৌহার্দ্য হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে আছে। দাদী যে এমন সব কথা বলবে, সৌহার্দ্য সেটা ভাবতেও পারেনি। তরী গোল গোল চোখে একবার দাদীর দিকে, আরেকবার সৌহার্দ্যের দিকে তাকাচ্ছে।

দাদী আবার বলা শুরু করতে নিবেন, এমন সময় সৌহার্দ্য ওনাকে থামিয়ে দিয়ে বললো,

-“থামো। তোমার মুখে আর আজেবাজে কথা শোনার ইচ্ছে আমার নেই। বয়স তো কম হলো না! তবুও মুখে লাগাম টানার কোনো চেষ্টা-ই করো না তুমি। ও এখন থেকে আমার ঘরেই থাকবে।”

দাদী ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে বললো,

-“ও? এই ও-টা কে? সবসময় খালি মেয়েটারে ‘ও’ বলওস ক্যান? ওর কি কোনো নাম নেই?”

সৌহার্দ্য বিরক্ত হয়ে বললো,

-“আচ্ছা, ঠিক আছে। তরী। এখন থেকে তরী বলেই ডাকবো। এবার খুশি?”

-“না। ওকে নিজের সাথে কইরা তোর ঘরে নিয়া যা। একসাথে যাবি তোরা। আর বউমা, তরীর সব জিনিসপত্র সৌহার্দ্যের ঘরে পাঠানের ব্যবস্থা করো। আজকের পর থেইকা ওদের দুইজনরে দুই ঘরে যেন আমি না দেখি!”

সৌহার্দ্য নির্বিকার ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে রইলেও তরী চিন্তায় পড়ে গেল। এই গম্ভীর মানুষটার সাথে এক ঘরে থাকবে কী করে ও? কাঁদো কাঁদো চোখে সুজাতার দিকে তাকাতেই দেখলো, উনি মিটমিটিয়ে হাসছেন। তরী হতাশ হলো। সৌহার্দ্যের পেছনে পেছনে হেঁটে চলে গেল ওর ঘরে।

-“এই দুইজনের মধ্যে ঝামেলা আছে এইটা তুমি আমারে আগে কইবা না, বউমা? এইবার দেখো, আমি ওদের কেমনে এক করি!”

সুজাতা কথাটা শুনে তেমন কোনো প্রতিক্রিয়া দেখালেন না। তার ছেলেকে তিনি বেশ ভালো করেই চেনেন। তবুও তার মনে হয়, কিছু একটা ঘটবে যা সৌহার্দ্যকে একদম বদলে দেবে।

তরী সৌহার্দ্যের ঘরে ঢোকার পাঁচ মিনিটের মধ্যে সার্ভেন্টরা ওর ঘর থেকে সব ব্যবহার্য জিনিসপত্র ও বইখাতা সৌহার্দ্যের ঘরে রেখে গেল। সৌহার্দ্য দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো,

-“আলমারির এক সাইড খালি-ই আছে। সৈখানে তোমার কাপড়গুলো রাখো। আর এই টেবিলটা এখন থেকে তোমারও।”

সৌহার্দ্য বারান্দায় চলে গেল। তরী নিজের জিনিসপত্র গুছিয়ে রাখলো। বারান্দা থেকে ধোয়া আসছে। এর আগে অনেকবার সৌহার্দ্যকে সিগারেট টানতে দেখেছে তরী। মনে মনে বললো,

-“কী অদ্ভুত! ডাক্তাররা কখনো সিগারেট খায় নাকি? আজব মানুষ তো! গোমড়ামুখো!”

তরী সকল চিন্তা মাথা থেকে ফেলে পড়তে বসলো। এ কয়দিনে পড়াশোনায় অনেক গ্যাপ পড়েছে। পুরোনো পড়াগুলো টানতে হবে আজকে রাতে।

সৌহার্দ্য ঘরে এলো রাত দুটোয়। বারান্দার বাতাস ভালো লাগলেও এখন একটু ঘুমানো দরকার। কালকে দুটো সার্জারী আছে। এসবের জন্য হলেও একটু ঘুমিয়ে নিজের মাথা ঠান্ডা রাখা জরুরি। কিন্তু ঘরে ঢুকতেই ভ্রু-জোড়া আপনাআপনি কুঁচকে গেল সৌহার্দ্য। তরী পড়ার টেবিলে বসেই ঘুমিয়ে পড়েছে। কী আশ্চর্য? এই মেয়ে এভাবে ঘুমাচ্ছে কেন?

সৌহার্দ্য এগিয়ে গিয়ে তরীকে ডাকতে গিয়েও ডাকলো না। মেয়েটার ঘুম ভাঙানো ঠিক হবে না। ফ্লোরে গড়িয়ে থাকা শাড়ির আঁচলটা তুলে কোলে রাখলো সৌহার্দ্য। মাঝরাতের দিকে হালকা শীতল বাতাস বইছে। হয়তো বৃষ্টি হবে! ওর নিজেরই ঠান্ডা-ঠান্ডা লাগছে। তাই তরীর গায়ে একটা পাতলা চাদর দিয়ে দিলো।

বাতি নিভিয়ে টেবিল ল্যাম্পটা জ্বা*লিয়ে দিলো সৌহার্দ্য। বিছানার একপাশে শুতেই তরীর মুখের দিকে চোখ পড়লো ওর। মেয়েটা মায়াবী! দাদী ঠিকই বলেছে। একেবারে চাঁদের মতো। কিন্তু তবুও এই মেয়েটার প্রতি সৌহার্দ্যের এখনো কোনো অনুভূতি সৃষ্টি হয়নি। আদৌ কখনো হবে কি না জানা নেই।

১৬.
তরী ভোরেই কোনো রকম নাস্তা করে ক্লাস করতে চলে গেছে। সৌহার্দ্য একেবারে রেডি হয়ে খেতে এলো। ব্রেকফাস্ট কমপ্লিট করতেই দাদী আড়চোখে সৌহার্দ্যের দিকে তাকিয়ে বললো,

-“কাল রাতে তো ভালোই বৃষ্টি হইলো। আমি আরো ভাবলাম আমার নাতি নতুন বিয়ে করছে! রাতের বেলা বৃষ্টিতে ভিজবো, প্রেম করবো। তা করছো নাকি কিছু?”

সৌহার্দ্য বিরক্ত হলো। ভাগ্যিস এখানে তরী নেই। নয়তো কী একটা বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়তে হতো সৌহার্দ্যকে!

-“বয়স তো কম হয়নি! মাথায় তো ভালো কিছু ঘোরে না। এখন একটু ধর্মকর্মে মন দাও, বুঝলে?”

বলেই সৌহার্দ্য তাড়াহুড়ো করে বেরিয়ে যাওয়ার জন্য পা বাড়ালো। মেইনডোরের কাছাকাছি যেতেই প্রহরকে বাড়িতে প্রবেশ করতে দেখলো সে। অবাক হলো সৌহার্দ্য। প্রহর? এতো বছর পর! হঠাৎ এখানে? কিন্তু কেন?

-চলবে…..

গল্প পোকা
গল্প পোকাhttps://golpopoka.com
গল্পপোকা ডট কম -এ আপনাকে স্বাগতম......
RELATED ARTICLES

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

- Advertisment -

Most Popular

Recent Comments

Md masrur Hasan mahi على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
আমিনুল ইসলাম على প্রয়োজন পর্ব: ৩০ ( অন্তিম)
সাজিবুল ইসলাম على ধর্ষিতাবউ২ ৯ তথা শেষ পর্ব
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
Nita Sarkar على স্বপ্নীল ৬৮
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على রহস্য শেষ_পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على অলক্ষ্যে তুমি পর্ব-০৬ এবং শেষ পর্ব
Nazmun Nahar Akhi على Psycho_is_back? part_7
Nazmun Nahar Akhi على Dangerous_Villian_Lover part 2
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على জানালার ওপারে পর্ব-১৭ এবং শেষ পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على লীলা বোর্ডিং ১২১৫ পর্ব-১১ এবং শেষ পর্ব
মিজানুর রহমান রাহুল على সেই তুমি পর্ব-০১
@feelings على প্রহেলিকা
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Nusrat jahan على coffee & vanilla Part-10
Pallabi Roy على স্বপ্নীল ৬৮
M.D Mahabub على The_Villain_Lover Part_2
Labani sarkar على Dangerous_Villain_Lover part 23
MD Akas Apc على বিবেক
Tanisha Ahmed على Devil love part-18 
Aius Barmon shorob على নারীর দেহকে নয়
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Priya Banerjee على devil love married life last part
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Riya Biswas على তুমি রবে ৫২
Mohammad Adib على তুমি রবে ৬০
Avni Ayesha على তুমি রবে ২৮
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
সুমিত على তুমি রবে ২৮
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
Samiah Begum على তুমি রবে ৫১
biddut das rocky على নর নারী
গল্প পোকা على নষ্ট গলি শেষ পর্ব
Md Jobayer Hossain Shohag على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على দুই অলসের সংসার
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤৪২.
A.J.S Rakib على মন ফড়িং ❤৪২.
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
Samiya noor على গল্পঃ ভয়
Sadikul على গল্পঃ ভয়
Samia Islam على গল্পঃ ভয়
শূন্য মায়া على মন ফড়িং ❤ ৪০.
Sutapa biswas على মন ফড়িং ❤৩৯.
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৮.
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৭
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
Siyam على বিবেক
Sudipto Guchhait على My_Mafia_Boss পর্ব-৯
saptami karmakar على devil love married life last part
saptami karmakar على devil love married life last part
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ২৬.
Shreyashi Dutta على  বিয়ে part 1
Sandipan Biswas على  বিয়ে part 1
Paramita Bhattacharyya على অনুরাগ শেষ পর্ব
জামিয়া পারভীন তানি على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
মায়া على মন ফড়িং  ২২
সুরিয়া মিম على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على মন ফড়িং ২১
গল্প পোকা على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
Sahin ssb على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৮. 
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৭.
Jannatul Ferdous على খেলাঘর পর্ব-৩৫
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ফাল্গুনের_ফুল last_part_8
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ছাত্রী যখন বউ পাঠঃ ১
গল্প পোকা على বাজির প্রেম পাঠঃ ১
Foujia Khanom Parsha على মা… ?
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৮
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
Ibna Al Wadud Shovon على স্বার্থ