#প্রণয়াসক্ত_পূর্ণিমা
#Writer_Mahfuza_Akter
পর্ব-৫৭
“তরী ফিরে এসেছে, মধু! ওকে আবার ফিরিয়ে নিয়ে আসতে পেরেছি আমি।”
অর্থীর ফিসফিসে কন্ঠে বলা কথাটা শুনে মধু চমকে উঠলো। নড়েচড়ে উঠে বিস্ফোরিত চোখে তাকালো অর্থীর দিকে। অর্থী আশ্বাসের ভঙ্গিতে মাথা নাড়ালো।
ঘরটায় আধো আধো আলো জ্বলছে। হলদেটে টিমটিমে আলোয় মধুর অবয়ব অর্থীর চোখে অনেকটাই স্পষ্ট। অর্থী যতবারই দেশে আসে, প্রহরের সাথে একবারের জন্য হলেও মধুর কাছে আসে। মেয়েটাকে দেখলে নিজের মধ্যে অদ্ভুত একটা অনুভূতি জেগে ওঠে অর্থীর। কতটা স্বার্থহীন হলে একটা মানুষ কাছের মানুষগুলোর সুখের জন্য এমন মৃত্যুতুল্য জীবন আলিঙ্গন করে নিতে পারে, সেটা মধুকে না দেখলে জানতেই পারতো না সে। তার মনপ্রাণ জুড়ে এখনও নিজের জন্য কোনো প্রত্যাশা নেই। শুধু সৌহার্দ্যের জীবনে তরী ফিরে আসুক আর প্রহর তাকে ভুলে যাক- এই দুটো প্রার্থনা সর্বক্ষণ করে সে। প্রথম চাওয়া পূরণ হওয়ার সম্ভাবনা কিছুটা থাকলেও দ্বিতীয় চাওয়াটা কোনোদিনও বাস্তবায়িত হবে না, এটা মধু জেনেও গেছে, বুঝেও গেছে।
মধুর একচোখ উন্মুক্ত, আরেক চোখ মাথায় ঘোমটা দেওয়া ওড়নার সাহায্যে ঢেকে রাখা। সেই দৃশ্যমান চোখটা জলে টইটুম্বুর হয়ে চিকচিক করছে। অর্থী কাঁপা কাঁপা হাতে মধুর চোখের পানি মুছে দিয়ে বললো,
“তরীকে দেখবে না তুমি?”
মধুর অবিশ্বাস্য দৃষ্টি! ক্রমাগত ঠোঁট দু’টো কাঁপছে তার। কম্পিত গলায় কোনোমতে বললো,
“তুমি সত্যি বলছো? তরী ফিরে এসেছে? ও কোথায় এখন? ভাইয়ার কাছে ফিরে গেছে ও?”
মধুর উত্তেজিত কন্ঠস্বরোে খানিকটা ভড়কে গেল অর্থী। নড়েচড়ে আশেপাশে তড়িৎ গতিতে একবার নজর বুলালো। নাহ্, প্রহর কোথাও নেই। ওদের কথা বলার সময় প্রহর এখানে কখনো থাকেও না। স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো অর্থী। পূর্ণ দৃষ্টিতে মধুর দিকে তাকিয়ে বললো,
“তরীর ব্যাপারে এখনো কেউ কিছু জানে না, মধু। ভাইয়াও না, সৌহার্দ্য ভাইয়ারা কেউ কিছুই জানে না। তরী নিজেও কিছু জানে না ওর এখানের এতো বড় যোগসূত্রের ব্যাপারে। পরিস্থিতি কেমন যেন ঘোলাটে বর এলোমেলো হয়ে গেছে! ওকে এখানে আনা পর্যন্ত কাজটা বেশ ভালো করে সেরে ফেললেও এখন কী করা উচিত কিছু বুঝে উঠতে পারছি না আমি।”
মধু অর্থীর কথার আগামাথা কিছু বুঝতে পারলো না। অবুঝ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো,
“তরী কিছু জানে না মানে? কী বলতে চাইছো তুমি, আপু?”
অর্থী দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো,
“খুলে বলছি সব! কিন্তু ভাইয়া যেন এ ব্যাপারে কিছু না জানতে পারে। বেশ ভেবেচিন্তে পরবর্তী স্টেপ নিতে হবে আমাদের।”
৫২.
পুরো এক সপ্তাহ একটানা ডিউটি দিয়ে অভ্যস্ত হলেও টানা চব্বিশ ঘণ্টা ডিউটি করার মতো অভিজ্ঞতা এই প্রথম বার হলো অরিত্রীর। বেশ ক্লান্ত ও পরিশ্রান্ত দেহ নিয়ে নিজের চেম্বারে এসে বসলো সে। এই হসপিটালে আজকে তার শেষ দিন বলে প্রেশারটা একটু বেশিই পড়ে গেছে। কাল আবার আরেকটা হসপিটালে ডিউটি দিতে হবে ভেবে দীর্ঘশ্বাস ফেললো অরিত্রী। হাতের গ্লাভস খুলে ওয়াশরুম থেকে একটু ফ্রেশ হয়ে বের হয়ে এলো। কিন্তু সামনে বসে থাকা মানুষটাকে দেখে অতিমাত্রায় চমকে উঠলো সে।
ভেজা মুখ থেকে টপটপ করে পানি পড়ছে অরিত্রীর। মুখ মুছতে ভুলে গেল সে। হাত গলিয়ে তোয়ালেটা ফ্লোরে পড়ে গেল। বিস্ফোরিত চোখে তাকালো সামনের ব্যক্তিটার দিকে। মুখ থেকে অস্ফুটে বেরিয়ে এলো, “অর্ণব ভাই! তুমি?”
অর্ণব বসা থেকে উঠে এগিয়ে এলো অরিত্রীর দিকে। চোখে মুখে ধূর্ত হাসি খেলা করছে তার। ফ্লোরের তোয়ালেটার দিকে একবার তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেললো সে। পকেট থেকে টিস্যু বের করে অরিত্রীর ভেজা মুখে স্পর্শ করাতেই বাঁধা দিলো অরিত্রী। সামনে থেকে সরে গিয়ে নিজের চেয়ারে বসতে বসতে বললো,
“তুমি আমায় কখনো স্পর্শ কোরো না, অর্ণব ভাই। ব্যাপারটা আমার পছন্দ না।”
অর্ণব ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে বললো,
“কেন? আজ তো নতুন না! এতো গুলো বছর তো…. ”
“তখন আমি নিজের জীবন নিয়ে সচেতন ছিলাম না, অর্ণব ভাই। অবুঝ ছিলাম আমি! কিন্তু এখন আমি বুঝতে শিখেছি, আমার জীবনে কার প্রভাব ঠিক কতটুকু থাকা উচিত! আর সেই বোধশক্তি আমাকে শিখিয়ে দিয়েছে, আমার জীবনে সবচেয়ে বেশি অধিকার আমার নিজের। আমার নিজের কাছে নিজের ইচ্ছের মূল্য না থাকলে পৃথিবীর কারো কাছেই থাকবে না।”
অর্ণব আঙুল দিয়ে নাক ঘষে বললো, “এসব বলে ঠিক কী বুঝাতে চাইছিস তুই?”
অরিত্রী পূর্ণ দৃষ্টি মেলে তাকালো। অকপটে বললো,
“এক মাসের আগে এ দেশ ছেড়ে আমি যাচ্ছি না। তুমি বা মা, কেউই আমাকে এখান থেকে নিয়ে যেতে পারবে না।”
“যদি জোর করি?”
অরিত্রী কঠিন দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো,
“আমার ওপর জোর খাটানোর কোনো অধিকার তোমার নেই। তুমি আমার কাজিন। আর সেই হিসেবে তোমার ক্ষমতা শুধু আমাকে উপদেশ কিংবা সাজেশান দেওয়া পর্যন্ত-ই। অর্ডার দিতে পারোনা না তুমি আমায়!”
অর্ণব হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে রইলো কিছুক্ষণ। অরিত্রী সেটা দেখেও না দেখার ভান করে নিজের ব্যাগটা হাতে নিয়ে বললো,
“প্রচুর ক্লান্ত আমি আজ। আসছি। ভালো থেকো।”
অরিত্রী তড়িৎ গতিতে চেম্বার থেকে বেরিয়ে গেল। অর্ণব বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো। বিমর্ষ ভঙ্গিতে হাসলো আপন মনেই। বুক চিরে বেরিয়ে এলো তপ্ত দীর্ঘশ্বাস। বিরবির করে বললো,
“তোমার সম্পূর্ণ অস্তিত্ব জুড়ে যে সত্তার বাস, তার স্থান নেওয়াটা একেবারেই অসম্ভব!”
৫৩.
সৌহার্দ্য চিন্তিত ভঙ্গিতে প্রণয়ের হাতের দিকে তাকিয়ে আছে। কনুইয়ের ক্ষততে বেশ কয়েকদিন ধরেই ব্যথা অনুভব করেছে প্রণয়। কিন্তু কাউকে সেটা মুখ ফুটে বলেনি। এতো দিনে যেকোনো ক্ষত-ই সেরে যাওয়ার কথা! কিন্তু প্রণয়ের হাত এখনো ঠিক না হওয়ায় সন্দেহ জাগে সৌহার্দ্যের মনে। তাই প্রহরকে বলেছে, স্কুল ছুটির পর প্রণয়-প্রণয়ীকে যেন নিজে গিয়ে নিয়ে আসে আর যাওয়ার পথে হসপিটালে একবার নিয়ে আসে।
“ইনফেকশন হয়ে গেছে। নিশ্চয়ই পানি লাগার পর ভালোমতো শুকিয়ে নাওনি কখনো? অনেকক্ষণ ভেজা ছিল বলেই এই অবস্থা হয়েছে।”
প্রণয় পাংশুটে মুখে তাকালো সৌহার্দ্যের কথা শুনে। প্রণয়ী নিষ্প্রভ কন্ঠে বললো,
“ভাই তো ঠিক মতো ওষুধও লাগাতো না, জানো পাপা?”
প্রণয় বিস্ফোরিত চোখে তাকালো প্রণয়ীর দিকে। দাঁত কিড়মিড় করে কিছু বলার আগেই প্রণয়ী ছুটে পালিয়ে গেল প্রণয়ের চোখের সামনে থেকে। সৌহার্দ্য দীর্ঘশ্বাস ফেলে প্রণয়ের হাত ড্রেসিং করতে লাগলো।
প্রহর এতক্ষণ চুপচাপ ওদের তিনজনের কাহিনী দেখছিল। হঠাৎ কিছু একটা মনে পড়তেই ফোনে মনোনিবেশ করে বললো,
“অর্থীর সাথে দেখা হয়েছে তোর? ওর আজ থেকে এই হসপিটালে ডিউটি শুরু হবে বলছিলো।”
সৌহার্দ্য প্যাড থেকে তুলো ছিঁড়তে ছিঁড়তে বললো,
“এখনো দেখিনি! ওর কাজ তো প্যাথলজি ডিপার্টমেন্টে। আমার চেম্বারে এসে একবার দেখা করে যেতে বলিস!”
প্রহর হতাশ ভঙ্গিতে বললো, “এখানে যে কাজের প্রেশারে আছে ওরা! কথা বলার সুযোগ-ই পাচ্ছে না আমার সাথে।”
সৌহার্দ্য নিঃশব্দে হেসে বললো,
“কাজ শিখতে এসেছে। প্রেশার তো একটু হবেই! এই সুযোগ কি আর বারবার আসবে?”
“এজন্যই হয়তো! আচ্ছা, আমি একটু অর্থীর সাথে দেখা করে আসি।”
সৌহার্দ্য প্রহরের দিকে না তাকিয়েই মাথা হেলিয়ে সম্মতি জানালো। প্রহর অর্থীর নাম্বারে ডায়াল করতে করতে বেরিয়ে গেল চেম্বার থেকে।
প্রণয়ী হসপিটালের করিডোর দিয়ে হাঁটছিল। এই হসপিটালের প্রতিটা অলিগলি ওর যেমন চেনা, তেমনি ওকেও এখানকার প্রতিটা ডক্টর এবং নার্সেরা চেনে। আনমনে হাঁটতে হাঁটতে হঠাৎ কারো সাথে ধাক্কা লাগতেই খানিকটা চমকে উঠলো প্রণয়ী। মাথা তুলে সামনের মানুষটার মুখের দিকে তাকালো। মুহুর্তেই আনন্দে চোখ দুটো চকচক করে উঠলো প্রণয়ীর। উচ্ছ্বসিত কন্ঠে বললো,
“সুন্দরী আন্টি! তুমি?”
অরিত্রী চোখ ছোট ছোট করে তাকালো প্রণয়ীর দিকে। ভ্রু নাচিয়ে বললো,
“কে সুন্দরী আন্টি?”
“কে আবার? তুমি। কিন্তু তুমি এই হসপিটালে কেন?”
অরিত্রী হেসে বললো, “ডক্টররা তো হসপিটালেই থাকবে, তাই না?”
প্রণয়ী চিন্তিত ভঙ্গিতে বললো,
“কিন্তু এটা তো আমার পাপার হসপিটাল! তার মানে তুমি এখন থেকে এখানেই আমার পাপার সাথে কাজ করবে?”
মুহুর্তেই অরিত্রীর মুখের হাসি মিলিয়ে গেল। মনে মনে কিছুক্ষণ নীরবে ভাবলো। প্রণয়ী উৎসাহ নিয়ে ওর দিকে তাকিয়ে আছে। অরিত্রী ওর মাথায় হাত রেখে বললো,
“তুমি এখানে তোমার পাপার সাথে দেখা করতে এসেছো?”
“নাহ্! প্রণয়ের জন্য আসতে হলো। ওর হাতে ইনফেকশন হয়ে গেছে, জানো? তাই পাপা ড্রেসিং করিয়ে দিচ্ছে।”
অরিত্রী চিন্তিত ভঙ্গিতে বললো, “আচ্ছা? তোমার পাপার চেম্বার কোনটা?”
প্রণয়ী আহ্লাদী হয়ে অরিত্রীর হাত ধরে বললো, “চলো তোমাকে নিয়ে যাই!”
দু’জনে কয়েক পা এগিয়ে যেতেই হঠাৎ একজন নার্স অরিত্রীর সামনে এসে দাঁড়ালো। তাড়াহুড়ো করে বললো,
“ম্যাম, ওটি রেডি করা হয়েছে। এখনই অপারেশন স্টার্ট হবে। আপনারও সেখানে থাকতে হবে।”
অরিত্রী প্রণয়ীর দিকে হতাশ চোখে তাকালো। প্রণয়ী আলতো হেসে বললো,
“তুমি যাও, আন্টি। আমার পাপা বলে, ডক্টরদের জন্য তাদের প্রফেশনটা সবার আগে। আমাদের আবার দেখা হবে।”
অরিত্রী নিচু হয়ে প্রণয়ীর কপালে একটা চুমু দিলো। মেয়েটার প্রতি কেমন যেন অদ্ভুত টান অনুভব করে সে! এটা কি শুধুই কাকতালীয় হতে পারে? ভাবনায় মগ্ন হতে গিয়েও নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করলো সে। দ্রুত পায়ে নিজের চেম্বারের দিকে চলে গেল অপারেশনের জন্য রেডি হতে।
অপারেশন থিয়েটারে বেশ দক্ষ হাতে সার্জারী করছে সৌহার্দ্য। সবুজ মাস্ক দিয়ে মুখটা ঢাকা থাকলেও ওর নিঃশ্বাসের শব্দ সবার কানেই পৌঁছাচ্ছে। চশমার আড়ালে থাকা চোখ দুটো নিজের হাতের কার্যপদ্ধতির সূক্ষ্মতা বজায় রাখাতে ব্যস্ত। কিন্তু একা একা একটা সার্জারী করাটা বেশ দুঃসাধ্য। তাই কাজে মনযোগ রেখেই নার্সকে বললো,
“কানাডা থেকে কি সত্যি সত্যিই কার্ডিওলজিস্ট এসেছে?”
“ইয়েস, স্যার! ওনাকে জানিয়ে এসেছি।”
“ফরেইন ডক্টররা তো সবসময় টাইমলি কাজ করে! উনি না আসতে পারলে জুনিয়র কোনো ডক্টরকে নিয়ে আসুন ফাস্ট।”
“ওকে, স্যার।”
নার্স যাওয়ার উদ্যোগ নিতেই অরিত্রী অনেকটা ছুটে এসে সৌহার্দ্যের বিপরীতে দাঁড়ালো। জোরে শ্বাস ফেলে বললো,
“সরি ফর বিয়িং লেইট।”
গলার স্বর শুনে চমকে উঠলো সৌহার্দ্য। হাত থেকে সিজারটাও পড়ে গেল। চোখ তুলে তাকালো সামনে দাঁড়ানো মানবীটির দিকে। তার মাথা, মুখ, হাত সবকিছু আবৃত থাকলেও লো পাওয়ারের চশমার আড়ালে থাকা চোখ দুটো দৃশ্যমান। সেই টানা টানা মৃগাক্ষী দুটো সৌহার্দ্য কি কোনো দিন ভুলতে পারে? অসম্ভব!
সৌহার্দ্যের দৃশ্যমান চোখ দুটো দেখে অরিত্রী ভ্রু কুঁচকালো। মানুষটা কেমন একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ওর দিকে! এভাবে একজন মানুষের চোখের দিকে তাকিয়ে থাকাটা অদ্ভুত লাগলেও অরিত্রী ব্যাপারটা নিয়ে মাথা ঘামালো না। কয়েক সেকেন্ড তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে সৌহার্দ্যের দিকে তাকিয়ে চোখ সরিয়ে নিলো।
চশমার আড়ালে থাকলেও সৌহার্দ্যের টলমলে রক্তিম চোখ দুটো উপস্থিত অনেকেই খেয়াল করলো। যান্ত্রিক ভঙ্গিতে অরিত্রীর এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো সৌহার্দ্য। সার্জারীর বাকি কাজগুলো অরিত্রী বেশ দক্ষ ও মনযোগী ভঙ্গিতে সম্পন্ন করলো। সৌহার্দ্য কিছু বলতে চেয়েও সব কথা, অনুভূতি, আনন্দ, কান্না, সবকিছু গলায় আঁটকে গেল। সৌহার্দ্য জানতো, তার চাঁদ একদিন ঠিকই তার কাছে ফিরে আসবে। কিন্তু এভাবে ডক্টর হয়ে তার সমপর্যায়ে এসে দাঁড়াবে, তার কল্পজগতেও আসেনি। আকস্মিকতায় নিজেকে পাথর মনে হচ্ছে সৌহার্দ্যের যে নড়তেও জানে না, কিছু বলতেও জানে না।
অপারেশনটা সাকসেসফুল হয়েছে। অরিত্রী নিজের হাত ধুয়ে চেম্বারে প্রবেশ করলো। একটা টিস্যু নিয়ে হাতটা মুছতে মুছতেই হঠাৎ পেছন থেকে দরজা খোলার শব্দ কানে ভেসে এলো। অরিত্রী চকিত দৃষ্টিতে পেছন ঘুরে তাকালো।
সৌহার্দ্য নিজের মুখের মাস্ক খুলে অরিত্রীর দিকে শীতল দৃষ্টিতে তাকালো। অরিত্রীর মুখ এখনো ঢাকা, চোখের দৃষ্টি তীক্ষ্ণ। সৌহার্দ্য এগিয়ে আসতে আসতে বললো,
“আর পালিয়ে লাভ নেই, তরী। তুমি আবার আমার কাছে বাঁধা পড়ে গেছো!”
এমনসময়ই অর্থী অরিত্রীর চেম্বারে প্রবেশ করলো। সৌহার্দ্যকে দেখে চমকে উঠলো সে। হতভম্ব হয়ে বললো,
“সৌহার্দ্য ভাইয়া, তুমি এখানে?”
সৌহার্দ্য শুনেও শুনলো না যেন! একটানে অরিত্রীর মুখের ওপর থেকে মাস্কটা খুলে ফেললো। অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো কিছুক্ষণ নিজের প্রিয়দর্শিনীর দিকে। অরিত্রী নিশ্চুপ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে শুধু। অর্থী অবাক হলো। অরিত্রী এমন যান্ত্রিক ভাবে দাঁড়িয়ে আছে কেন? ওর তো সৌহার্দ্যের সাথে ওর বিয়ের কথা কিছুই মনে নেই। সৌহার্দ্যের এমন অদ্ভুত কান্ড দেখে একটু তো রিয়েক্ট করার কথা অরিত্রীর!
অকস্মাৎ সৌহার্দ্য অরিত্রীকে ঝাপটে ধরলো। এতোক্ষণ চেপে থাকা আবেগগুলো ভেতর থেকে বেরিয়ে এলো যেন! চোখ থেকে ঝরঝর করে পানি ঝরতে লাগলো। অরিত্রী অনুভব করলো, সৌহার্দ্য কাঁদছে।
“তুমি আমার সাথে কথা বলছো না কেন, চাঁদ? এতো নিষ্ঠুর কীভাবে হলে?”
অরিত্রী ঢোক গিললো। সৌহার্দ্যের বাহুবন্ধন থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিলো। নির্বিকার কণ্ঠে বললো,
“বলার মতো তো কিছু বাকি নেই! আমাদের মধ্যে যা ছিল, সবটা তুমিই শেষ করে দিয়েছিলে। সেদিন কীভাবে তুমি আমাকে ফিরিয়ে দিয়েছিলে, আমি ভুলে যাইনি।”
অর্থী অরিত্রীর কাটকাট জবাবে বিস্ফোরিত চোখে তাকিয়ে রইলো। বিস্ময়ে মুখ হা হয়ে গেল ওর।
-চলবে…..
#প্রণয়াসক্ত_পূর্ণিমা
#Writer_Mahfuza_Akter
পর্ব – ৫৮
“তোর সবকিছু মনে ছিল, তরী? এতো দিন তুই অভিনয় করে গিয়েছিস আমাদের সাথে!!”
তরী নির্বিকার চোখে তাকালো। ওর এমন ভাবলেশহীন দৃষ্টি দেখে অর্থী গুরুতর ভঙ্গিতে বললো,
“সৌহার্দ্যের কথা না শুনে, না বুঝে এভাবে চলে আসার মানে কী, অরিত্রী? তুই……”
“তরী! আমাকে তরী বলে ডাকবে এখন থেকে। আমি কাগজে-কলমে অরিত্রী হলেও বাস্তবে অরিত্রী সেদিনই মরে গেছে, যেদিন ওকে মাটিচাপা দিয়ে ফেলা হয়েছিল। তরী নামটা আমাকে নতুন জীবন দিয়েছে। সেদিনের পর থেকে আমি তরী ছিলাম, আর বাকি জীবনটাও থাকবো।”
অর্থীর অবাকতা সীমা পেরোলো। হতবাক কন্ঠে বললো,
“তো…তোর সবকিছু কখন মনে পড়লো?”
“আমি কোনো কিছু ভুলে গেলেই না নতুন করে মনে পড়ার প্রশ্ন আসবে!” তরীর ঠোঁটের কোণে তাচ্ছিল্যের হাসি।
অর্থী কিছু বুঝতে না পেরে ভ্রু কুঁচকালো। তরী মলিন মুখে বললো,
“ভুলিনি আমি কিছুই! হ্যাঁ, এটা ঠিক যে কোমা থেকে উঠার পর অনেক কিছুই মনে করতে পারছিলাম না আমি। কিন্তু মাসখানেকের মধ্যেই ধীরে ধীরে সবটা মনে পড়ে গেছে আমার।”
অর্থী নির্বাক চোখে তাকিয়ে রইলো কিছুক্ষণ। এতোগুলো বছর একসাথে থেকেও সে বুঝতে পারেনি, তরীর সবকিছু মনে ছিল! হতভম্ব কন্ঠেই প্রশ্ন করলো সে, “এতো বছর চুপ করে কেন ছিলি তাহলে? এসব নাটকের কারণ কী?”
“শান্তি খুজছিলাম আমি।”
অর্থী অবাক চোখে তাকিয়ে বললো, “শান্তি?”
“হ্যাঁ, মানসিক শান্তি। আমার অতীত জুড়ে শান্তির ছিটেফোঁটাও তো ছিল না! প্রতিটা মুহুর্তের বিষাক্ততা ভুলে বাঁচতে চেয়েছিলাম আমি। সৌহার্দ্য তো আমায় ফিরিয়ে দিয়েছিলো! ওর করা সেই অপমানের ঘা শুকাতেও বহুবছর লেগেছে আমার। এই দেশে কার কাছে আসতাম আমি? কার জন্য আসতাম? কেউ তো আমার নিজের মানুষ ছিল না! তাই ভেবেছিলাম, কানাডাতেই নিজের জীবনের মানে খুঁজি। ডাক্তার হয়ে গেলে অন্তত বেঁচে থাকার একটা কারণ তো থাকবে আমার!”
তরীর টলমলে চোখ দুটো অর্থীর নজরে বেশ ভালো করে ধরা খেল। কিন্তু ওর কথাগুলো পুরোপুরি ধরতে পারছে না সে। তাই বললো,
“তুই এভাবে কেন বলছিস বল তো? এ দেশে আসার একটা কারণই তো তোর জন্য যথেষ্ট! তুই তো একা নস। তোর…….”
হুট করে দরজা খুলে অর্ণব, মোহনা আর মিস্টার আফনাদ প্রবেশ করায় অর্থী কথা বন্ধ করে চমকে তাকালো তাদের দিকে। মোহনা এগিয়ে এসে তরীকে জড়িয়ে ধরলেন। আবেগপ্রবণ সুরে বললেন,
“এখানে কেন এসেছিস তুই? এখানে কেউ তোর ভালো চায় না! কেউ তোকে সুখে থাকতে দেবে না।”
মিস্টার আফনাদ বিরক্ত হলেন। চোখে মুখে বিরক্তি ফুটিয়ে বললেন,
“আহ্! মোহনা! ও এখানে প্রফেশনাল কারণে এসেছে। কে কী ক্ষতি করবে ওর? শুধু শুধু এসব বলছো কেন?”
তরী ওনাদের দিকে একবার তাকালো শুধু। কিন্তু তাদের সাথে কোনো কথা বললো না। সরাসরি অর্ণবের মুখোমুখি গিয়ে দাঁড়ালো। তরীর দৃষ্টি স্বাভাবিক। অর্ণব ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে রইলো। তরী হঠাৎ মুখ খুললো,
“আমাকে পাওয়ার কোনো ইচ্ছে কি আজও তোমার মনে আছে, অর্ণব ভাই?”
অর্ণবের চোখ জুড়ে বিস্ময় খেলে গেল। কিন্তু তা বেশিক্ষণ স্থায়ী হলো না। মুহুর্তেই মলিনতা এসে ভর করলো দৃষ্টি জুড়ে। কন্ঠে অতিমাত্রায় বিষাদ নিয়ে সে বললো,
“পাওয়ার ইচ্ছে আছে কি না, জানি না! কিন্তু না পাওয়ার আক্ষেপ অন্তত আছে।”
“আমি তোমাকে আগেই বলেছিলাম, আমাকে নিয়ে ভাবা বন্ধ করো। আমার জীবন তো জন্মের পরপরই সৌহার্দ্যের সাথে জুড়ে গিয়েছিল! তোমার জীবনে পথচলার সঙ্গী আমি হতে পারবো না কোনোদিন।”
সৌহার্দ্যের নামটা শুনে মোহনা তরীর দিকে বিস্ফোরিত চোখে তাকালো। তার মানে তরীর সবকিছু মনে পড়ে গেছে! অর্ণব ততোটা অবাক হলো না। এমনটাই তো হওয়ার ছিল! তাই স্বাভাবিক কন্ঠেই বললো,
“আমি সৌহার্দ্যকে বলেছিলাম, যদি তোর চোখের একফোঁটা জলের কারণ ও হয়, তবে তোকে ওর থেকে অনেক দূরে সরিয়ে দেবো আমি। এতোটাই দূরত্ব সৃষ্টি হবে তোদের মাঝে যেন দুঃখের ছিটেফোঁটাও তোকে স্পর্শ করতে না পারে। আর আমি সেটাই করেছি!”
তরী দীর্ঘশ্বাস ফেললো অর্ণবের কথায়। অর্থী হা করে তাকিয়ে আছে অর্ণবের দিকে। এই ছেলে তরীকে এতোটা ভালোবাসে ও বুঝতেও পারেনি কখনো। একতরফা ভালোবাসার তীব্রতা হয়তো বরাবরই বেশি হয়!
“তোমরা এখন আমাকে একটু একা ছড়ে দাও। আজকের দিনটা অন্তত আমাকে কেউ ডিস্টার্ব কোরো না।”
তরী কথাটা বলে একমুহূর্তও দাড়ালো না। বারান্দায় দেয়ালে হেলান দিয়ে বসে আকাশের দিকে তাকিয়ে রইলো অপলক। সবাই কথা বলার আর কোনো সুযোগ না পেয়ে নিজেরাও চলে গেল। অর্থী কিছুক্ষণ হাসফাস করলো তরীর সাথে কথা বলার জন্য। কিন্তু ব্যর্থ মনে ফিরে এলো সেও।
৫৪.
আকাশে আজ বেশ বড়সড় চাঁদ দেখা যাচ্ছে। বারান্দার রকিং চেয়ারটায় বসে সেদিকেই তাকিয়ে আছে সৌহার্দ্য। প্রহর ওর পাশে দাঁড়িয়েই সিগারেটে একের পর এক টান দিচ্ছে। এতোক্ষণে সৌহার্দ্যের বলা কাহিনী শুনে বেশ গভীর ভবে ভাবছে সে।
“তরী এভাবে তোকে বলেছে? অবাক হচ্ছি আমি!”
প্রহরের কথায় সৌহার্দ্য দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো,
“অন্তত প্রণয়-প্রণয়ীর কথা একবারও কি ভাবে না ও?”
প্রহর ফিচেল হাসি দিয়ে বললো, “সন্তানের দোহাই দিচ্ছিস? একদিন তরীর ভালোবাসাকেও সন্তানের দোহাই বলে ফিরিয়ে দিয়েছিলি, মনে আছে?”
সৌহার্দ্য চোখ মুখ শক্ত করে বললো,
“ভালেবাসার কাছে ভালেবাসার চেয়ে বড় দোহাই আর কিছু নেই।”
“তাহলে তোর ঐ ভালোবাসার টানেই ফিরে আসবে তরী। নিশ্চিন্ত থাক!”
সৌহার্দ্য ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে বললো, “তাহলে এখন হাত-পা গুটিয়ে বসে থাকবো আমি?”
“তোর ইচ্ছে! চাইলে হাত-পা মেলেও বসে থাকতে পারিস।”
সৌহার্দ্য বিরক্ত হলো। বিরস কন্ঠে বললো,
“মজা করিস না তো! আমাকে এটা বল যে, এতো বছর অর্থী তরীর ব্যাপারে সবটা জানতো! তবুও আমাদের কিছু জানায়নি কেন?”
“তরীর মা মিসেস মোহনা সব ঝামেলার কেন্দ্রবিন্দু। ওসব ছাড়! আমি এখন ঘুমাবো। কাল সকালে এমনিতেই ঢাকার বাইরে যেতে হবে।”
সৌহার্দ্য সন্দিগ্ধ চোখে তাকালো। বললো,
“দুই দিন পর পর শহরের বাইরে কী কাজ তোর? ঢাকার ভেতরে কাজকর্ম রাখলেই তো পারিস!”
প্রহর মলিন হাসলো। বললো,
“ব্যস্ততা বাড়লেই ভালো লাগে আমার। কাজের চাপে মনের অশান্তি একটু হলেও তো কমে!”
সৌহার্দ্য হতাশার নিঃশ্বাস ফেললো। প্রহরের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে কিছুটা স্বস্তি পেল মনে। ছেলেটা এতো বছর পর একটু স্বাভাবিক আচরণ করলো ওর সাথে। মধুর অনুপস্থিতি তো ওকে পাথরে পরিণত করেছিল!
৫৫.
মাঝরাতে কাউকে কিছু না জানিয়ে তরী গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে গেল। শহরের শেষ প্রান্তের একটা গ্রামে থাকেন আজাদের স্ত্রী। আপাতত তার সাথেই দেখা করতে যাবে সে। ভবিষ্যতে আবার কবে দেখা হবে জানা নেই।
ভোরের আলো ফুঠতে শুরু করেছে, এমন সময় সেই গ্রামে পৌঁছালো তরী। রাস্তায় হাঁটছিল কয়েকজন লোক। তাদের থেকে ঠিকানা জেনে গাড়ি নিয়ে এগিয়ে গেল সে। একটা ছোট কুঠুরির মতো বাড়ির সামনে গাড়ি থামালো। দরজার সামনে গিয়ে কড়া নাড়তেই বেশ সময় পর দরজা খুললো এক বৃদ্ধা। তরীর দিকে চোখ পিটপিট করে তাকিয়ে বললো,
“তুমি কে গো? কাকে চাও?”
তরীর চোখ ছলছল করছে। সে ভাঙা কন্ঠে বললো,
“আমাকে চিনতে পারোনি, চাচী?”
তিনি চোখ ছোট ছোট করে ভালোভাবে দেখার চেষ্টা করলো। হয়তো চোখের দৃষ্টিশক্তি কমে গেছে। তাই বললো,
“কে তুমি? এমন বিদেশীদের মতো দেখতে কাউকে তো আমি চিনি না!”
“আমি তরী। সেই তরী, যার জন্য আজাদ চাচা অকালে প্রাণ হারিয়েছিল।”
আজাদ চাচার স্ত্রী আবেগান্বিত চোখে তাকিয়ে রইলো তরীর দিকে। তরীর সারা মুখে হাত বুলিয়ে দিলো। বললো,
“তরী? তুই এতোবছর পর? আমাকে এতো বছরে মনে পড়লো তোর!”
“যোগাযোগ করেছিলাম তো একবার! তারপর থেকে তো তুমি আমার ফোনই ধরোনি আর! তোমার নাম্বার অফ বলছিল বারবার।”
“আমার ফোনটা নষ্ট হয়ে গেছিলো রে! পরে আর কেনার সুযোগ হয়নি। তুইও তো শুধু নিজে বাচ্চাদের খবর নিয়েছিলি আমার থেকে। সৌহার্দ্য আমাকে বলেছিল তোর বাচ্চা দু’টো নাকি মরে গেছে! আমি ভেবেছি, তুই এই খবর শুনে বেশ কষ্ট পেয়েঢ়িস। তাই আর যোগাযোগ করবি না আমার সাথে।”
তরী মলিন হাসলো। বলল,
“যোগাযোগ কেন বন্ধ করবো, চাচী? আমার জীবন থেকে তো সবই হারিয়ে গেছে! যা অবশিষ্ট আছে, তা তো আর হারিয়ে ফেলতে চাই না আমি। আজই কানাডা ফিরে যাবো আমি। ভাবলাম, তোমার সাথে একবার দেখা করে যাই।”
বেশ কিছুক্ষণ কথাবার্তা বলে তরী বিদায় নিলো। এখন সে হোটেলে যাবে। আর আজ সন্ধ্যার ফ্লাইটেই সে চলে যাবে এদেশ ছেড়ে।
দুপুরের দিকে হোটেলের কাছাকাছি পৌঁছে গেছে তরী৷ মোড় ঘুরাতেই সামনে কারো উপস্থিত দেখে চোখ খিঁচে সজোরে ব্রেক কষলো সে। গাড়ি থামানোর কিছু মুহুর্ত পর চোখ মেলে তাকালো সে। তাড়াহুড়ো করে গাড়ি থেকে বের হয়ে দেখলো, প্রণয় ওর গাড়ির সামনে বসে আছে। ওর হাঁটু থেকে অনবরত রক্ত ঝরছে।
তরীর বুকের ভেতর ধ্বক করে উঠলো। সে এগিয়ে গিয়ে প্রণয়ের কাছে হাঁটু গেড়ে বসে বললো,
“আজকে আবারও আমার গাড়ির সামনে পড়ে গেছ তুমি? কতটুকু ছিঁলে গেছে দেখেছো?”
প্রণয় রাগী দৃষ্টিতে তরীর দিকে তাকিয়ে বললো,
“তোমার দোষ! তুমিই বারবার আমাকে নিজের গাড়ি দিয়ে ধাক্কা দেওয়ার চেষ্টা করো।”
প্রণয়ের কথা শুনে তরী হা করে তাকিয়ে রইলো ওর দিকে। হঠাৎই সৌহার্দ্য আর প্রণয়ী ছুটে এলো প্রণয়ের কাছে। প্রণয়ের কাছে বসে সৌহার্দ্য ওর হাঁটুর ক্ষত পরখ করতে করতে বললো,
“তোমাকে বলেছিলাম না, রাস্তায় না বের হতে? গাড়িতে থেকে নামতে নিষেধ করেছিলাম। বারবার অবাধ্য হও কেন তুমি আমার? এখন দে…….”
তরীর দিকে চোখ পড়ার সাথে সাথে সৌহার্দ্যের মুখ বন্ধ হয়ে গেল। তরী একদৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো সৌহার্দ্য আর প্রণয়-প্রণয়ীর দিকে। এই বাচ্চা দু’টোর সাথে সৌহার্দ্যের কি সম্পর্ক?
-চলবে…..