Sunday, October 5, 2025







বাড়ি"ধারাবাহিক গল্প"প্রণয়াসক্ত পূর্ণিমাপ্রণয়াসক্ত পূর্ণিমা পর্ব-২৩+২৪

প্রণয়াসক্ত পূর্ণিমা পর্ব-২৩+২৪

#প্রণয়াসক্ত_পূর্ণিমা
#Writer_Mahfuza_Akter
পর্ব-২৩

ক্লান্ত অপরাহ্নের শেষ প্রহর! গুমোট আবহাওয়ায় জনসমাগমের গুনগুন কোলাহলে পরিবেশটা আমোদিত। আকাশের সিঁদুররাঙা মেঘের আনাগোনার ফাঁকে ফাঁকে উড়ে চলা পাখির ঝাঁক বার বার চোখে ঠেকছে তরীর। বটতলায় বসে বসে প্রকৃতিকে খুব কাছ থেকে পর্যবেক্ষণ করছে সে। সৌহার্দ্য ক্লান্তি নিয়ে হঠাৎ এসে তরীর পাশে বসলো, তরী টেরও পেল না। সৌহার্দ্য গালে হাত দিয়ে অতি মনযোগী হয়ে তরীর মুখের দিকে তাকালো। তার প্রসারিত ঠোঁটের প্রান্তভাগে লেগে থাকা হাসিটায় সৌহার্দ্যের দৃষ্টি নিবদ্ধ হয়ে রইলো কেবল। হাসিমুখে আশেপাশে চোখ ঘুরাতেই সৌহার্দ্যের মুগ্ধ দৃষ্টি চোখে পড়লো তরীর। হেসে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে বললো সে,

“এভাবে তাকিয়ে আছো কেন?”

সৌহার্দ্য একটুও নড়লো না। একইভাবে বসে থেকে বললো, “দেখছি! পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর মানুষটাকে। চোখ সরাতেই মন চাইছে না!”

“বলেছে তোমাকে? পৃথিবীতে আরো অনেক সুন্দর মানুষ আছে। আমার থেকেও বেশি সুন্দর! ”

সৌহার্দ্য মুখে হাসি বজায় রেখে বললো, “হোক। কিন্তু আমার চোখে তো তুমি-ই সবচেয়ে বেশি সুন্দর! তুমি দেখতে যদি অসুন্দর হতে, তবুও আমার চোখে সৌন্দর্য্যের সংজ্ঞা শুধু তুমিই! হাজারো সৌন্দর্যের ভীড়ে এই দুটো চোখ শুধু তোমাকেই খুঁজবে!”

“কেন?”

“কারণ ভালোবাসা মানেই সুন্দর! তুমি তো বুঝবে না আমার কথার মানে! আমি জানি।”

সৌহার্দ্য গম্ভীরভাবে কথাটা বলে সোজা হয়ে বসলো। তরী হাসলো। সৌহার্দ্যের কথার প্রেক্ষিতে কোনো কথা না বলে বললো,

“সব পেপারস জমা দেওয়া শেষ? আর কোনো কাজ নেই?”

সৌহার্দ্য কপালের ঘাম মুছতে মুছতে বললো, “নাহ্! ভাইবা তো দিলেই! ভর্তির সব ঝামেলা শেষ। সাথে সাথে আমার এনার্জিও!”

তরী সৌহার্দ্যের দিকে পূর্ণ দৃষ্টিতে তাকালো। প্রকৃতিতে এখন হালকা হালকা শীতের আমেজ। শির শির করে উত্তরে হাওয়া বইছে। কিন্তু এই পরিবেশ থেকেও সৌহার্দ্যের শরীর ঘেমে একাকার! শুভ্র-সুন্দর মুখটা লালচে আভায় র*ক্তি*ম। কপালের ওপর চুলগুলো লেপ্টে আছে। সাদা শার্টটাও ভিজে জবজবে হয়ে গেছে।

তরী সৌহার্দ্যের কাছ ঘেঁষে বসলো। ওড়নার প্রান্তদেশ হাতের মধ্যে নিয়ে সৌহার্দ্যের ঘর্মাক্ত কপাল ও গন্ডদেশ মুছতে মুছতে বললো, “সবে মাত্র অসুস্থতা থেকে রেহাই পেলে। কী দরকার ছিল ওভাবে লাইনে দাঁড়িয়ে কাগজপত্র জমা দেওয়ার? তুমি কিন্তু চাইলেই সহজে সবটা করতে পারতে। এতো কষ্ট করার কোনো মানে হয়?”

সৌহার্দ্য তরীর মুখের দিকে তাকিয়ে রইলো অপলক। চোখে মুখে মুগ্ধতা ছড়িয়ে বললো,

“তোমার জন্য করেছি!”

তরী অবাক চোখে তাকালো সৌহার্দ্যের দিকে। সৌহার্দ্য অমায়িক হাসলো। বললো, “তুমি সবে মাত্র বললে কেন? প্রায় একমাস হয়ে গেছে আমার এ*ক্সি*ডে*ন্টে*র। আজ সন্ধ্যার পর থেকে আমি হসপিটালেও জয়েন করছি। আচ্ছা, তুমি এখানে বসো। আমি একটু ঠান্ডা কিছু খেয়ে আসি। প্রচুর গরম লাগছে আমার!”

তরীকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে সৌহার্দ্য চলে গেল। তরী কিছু না বলে আশেপাশে তাকালো। এখানে-সেখানে অনেক মানুষের আনাগোনা। জাহাঙ্গীরনগরের ক্যাম্পাস যেন প্রাণে ভরা! অদূরে পরিচিত একটা মুখকে দেখে তরী চোখ ছোট ছোট করে ফেললো। ভালো মতো পরখ করে বুঝলো, ঐটা মধু। মেয়েটার সাথে যোগাযোগ হয় না অনেক দিন ধরেই! ওর ফোন নাম্বারে যোগাযোগ করা যায় না। আজ দেখা হওয়ায় ভালোই হয়েছে। এতো মানুষের ভীড়ে ডাকাডাকি করলে মধু শুনবে না। তাই এগিয়ে গেল মধুর দিকে।

মধু উল্টো দিকে ফিরে থাকায় তরী ওর কাছাকাছি গিয়ে ওর কাঁধে হাত রাখলো। মধু চকিত ভঙ্গিতে তরীর দিকে তাকিয়ে চোখ বড় বড় করে বললো,

“তুই? এখানে? কেন? কখন? কীভাবে?”

বলতে বলতেই তরীকে ঝাপটে ধরলো মধু, “আরে, ইয়ার! কত দিন দেখি না তোকে!!! আই মিসড ইউ সো মাচ, ইয়ার!”

“কত যে মিস করেছো, সেটা তো বুঝতেই পারছি!”

মধু চমকালো। তরীকে ছেড়ে দিয়ে আশেপাশে তাকাতে তাকাতে বললো, “কেউ কি আমার কথার উত্তর দিলো? নাকি আমিই ভুল শুনলাম?”

তরী বিরক্ত হয়ে বললো, “আমিই বলেছি। ভুল শোনোনি।”

বিস্ময়ে মধুর মুখ হা হয়ে গেল। গোল গোল চোখে তাকিয়ে বললো, “মানে? এটা… তুই… কথা… মানে কী হচ্ছে এসব? এম আই ড্রিমিং?”

“না, ঠিকই দেখেছো! আমি কথা বলেছি।”

“এটা কীভাবে সম্ভব? তুই তো কথা বলতে পারিস না! তাহলে আজ কীভাবে?”

তরী মলিন হাসলো। বললো, “এমনিতেই! সত্যটা আর গোপন করে রাখা সম্ভব হচ্ছিল না। তাই মুখ খুলতেই হলো।”

মধু সন্দিহান চোখে তাকিয়ে বললো, “তার মানে এতো দিন তুই নাটক করেছিস সবার সাথে! তুই এভাবে সবাইকে ঠকাতে….”

মধুকে থামিয়ে দিয়ে তরী বললো, “তুমি ভুল বুঝছো, মধু! কোনো নাটক ছিল না। জাস্ট আমার কথা বলার ইচ্ছেটা-ই ম*রে গিয়েছিল। সে অনেক কাহিনী! আমি সবকিছু শেয়ার করতে পারবো না। সেজন্য সরি!”

মধু তরীকে পাশ থেকে জড়িয়ে ধরে বললো, “ইট’স ওকে! আই আন্ডারস্ট্যান্ড। সবারই কিছু প্রাইভেট বিষয় থাকে। তোর সবকিছু শেয়ার করার দরকার নেই। তবে আমার খুব ভাল্লাগলো তোর মুখ থেকে কথা শুনে। এখন আমাকে এটা বল যে, তুই এখানে করছিসটা কী?”

“ভর্তি হতে এসেছি! তুমি কেন এসেছো?”

“আমিও তো! তুই এখানে চান্স পেয়েছিস? ও মাই গড!! কোন ডিপার্টমেন্টে?”

“ফার্মেসি!”

“ওয়াও! ডাক্তারি রিলেটেড বিষয়ই। আমি তো একটা পরীক্ষা-ই দিয়েছিলাম! ল এন্ড জাস্টিস ডিপার্টমেন্টেই চান্স হয়েছে।”

তরী খুশি হলো। বললো, “ভালো সাবজেক্ট তো! ভালোই হয়েছে আমরা সেইম ক্যাম্পাসে।”

“হুম! এখন থেকে সারাক্ষণ আমার সাথে থাকবি। বুঝলি? আচ্ছা, আমার টিউশন আছে। তুই যাবি? চল আমার সাথে।”

তরী মুখ ছোট করে বললো, “না! আমি একা আসিনি।”

“ওহ! তোর বর এসেছে। আচ্ছা, তাহলে আমি যাই।”

মধু ওর স্কুটারে উঠে ঝড়ের গতিতে স্থান ত্যাগ করলো। তার পাঁচ মিনিটের মাথায় সৌহার্দ্য তরীর কাছাকাছি এসে বললো, “তুমি এখানে কী করছো? কতক্ষণ ধরে খুঁজছি তোমায়!”

“ঐ তো! এক ফ্রেন্ডের সাথে দেখা হলো। তাই দেখা করতে এলাম!”

“ওহ! আচ্ছা, চলো তাহলে। যাওয়া যাক!”

বাড়ির গেইটের সামনে গাড়ি থামালো সৌহার্দ্য। তরীর দিকে তাকিয়ে বললো, “পৌঁছে গিয়েছি। ভেতর থেকে আমার এপ্রোন আর স্টেথোস্কোপটা এনে দাও।”

তরী অবাক হয়ে বললো, “তুমি ভেতরে আসবে না?”

“নাহ্! ডিউটি শেষে একেবারে আসবো।”

তরী মুখ কালো করে গাড়ি থেকে বেরিয়ে গেল। ভেতর থেকে সৌহার্দ্যের প্রয়োজনীয় জিনিসগুলো এনে দিতেই সৌহার্দ্য হাসিমুখে সেগুলো হাতে নিলো। বললো,

“একটু হাসো! এভাবে মুখ অন্ধকার করে রেখেছো কেন?”

“তাড়াতাড়ি এসো। তাহলেই আমার হাসিমুখ দেখতে পাবে।”

বলেই তরী সাথে সাথে বাড়ির ভেতরে চলে গেল। সৌহার্দ্য হাসলো। মনে মনে বললো, “এখন পালিয়ে গেলে! কালকে থেকে পালাতে দেবো না আর।”

তরী ঘরের ভেতরে ঢুকলো। ফ্রেশ হয়ে চুল আঁচড়াতে আঁচড়াতে টেবিলের কাছাকাছি যেতেই সৌহার্দ্যের ডায়েরিটা চোখে পড়লো। বইয়ের ওপরেই রাখা আছে ডায়েরিটা। তরী বুঝতে পারলো, সৌহার্দ্য সম্প্রতি ডায়েরিতে কিছু লিখেছে। তাই ডায়েরিটা হাতে নিল। সৌহার্দ্য জানতে পেরেছে যে, তরী-ই ওর চাঁদ! এটা তরী নিজেও জানে। কিন্তু ওর প্রশ্ন হলো, সৌহার্দ্য ঠিক কতটুকু জেনেছে ওর ব্যাপারে? সেটা জানার জন্যই তরী ডায়েরিটা খুললো। নতুন কোনো লেখা চোখে পড়লো না। কিন্তু কয়েকটা ফাঁকা পৃষ্ঠা উল্টোতেই দুদিন আগের তারিখ চোখে পড়লো তরীর। সাথে সৌহার্দ্যের গোটা গোটা অক্ষরে লেখা,

“আমার চাঁদ এখন থেকে শুধুই আমার। একান্তই আার নিজের! আমি জানি না, কেন আমার চাঁদের মনে এতো কষ্ট ! কিন্তু আমার চাদকে আর কষ্ট পেতে দেব না আমি।”

তরী স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো। যাক! সৌহার্দ্য তাহলে কিছুই জানে না।

৩৪.
প্রায় একমাস পর দেশে ফিরলো প্রহর। রিয়াদ ওকে রিসিভ করতে এসেছে। এয়ারপোর্ট থেকে বেরিয়ে গাড়িতে উঠতেই রিয়াদ বললো,

“কেমন আছে আপনার বোন এখন, স্যার?”

প্রহর বিরক্ত হয়ে বললো, “ও ভালোই আছে। শুধু শুধু জেদ ধরে আমাকে নিয়ে গেল ওর কাছে। একদম সুস্থ ও। আমাকে নাকি দেখতে ইচ্ছে করছিল ওর। তাই মিথ্যে বলে কানাডা নিয়ে গেল! ভাবা যায়!”

“আপনিও তো! এক মাস থেকে এলেন!”

“অর্থী আমার একমাত্র বোন। ও ছাড়া আপাতত এই দুনিয়ায় কেউ আছে আমার? ওর জন্য সব করতে পারি আমি। শুধু সমস্যা একটাই! আজাদ চাচার বাড়ি থেকে আনা কাগজ গুলো দেখার সুযোগ পেলাম না এখনো। একটু তাড়াতাড়ি বাসায় চলো তো!”

প্রহর বাড়িতে ঢুকেই ওর আলমারি থেকে কাগজের ব্যাগটা বের করলো। সেদিন তরী কথা বলার পর প্রহর আর এই ব্যাগটা ছোঁয়ারও সুযোগ পায়নি। অর্থী হসপিটালে এডমিটেড শুনে মাথা গুলিয়ে গিয়েছিল ওর! কিন্তু এখন আর দেরী করা যাবে না। কিন্তু ততক্ষণে দেরী হয়েই গিয়েছে। প্রহর কাগজগুলো হাতে নিয়ে সেগুলোতে কোনো লেখা পেল। সব কাগজই সাদা! প্রহর তন্নতন্ন করে কাগজ গুলো বের করলো। কিন্তু কোনো কাগজেই কোনো লেখা পেল না। প্রহর হতভম্ব হয়ে নিজেই নিজেকে বললো,

“আচ্ছা, ব্যাগটা কি বদলে দেওয়া হয়েছে? আসল সত্যিটা জানার আর কোনো উপায় অবশিষ্ট রইলো না তাহলে? কীভাবে উদঘাটন হবে তাহলে তরীর মধ্যকার রহস্যগুলো?”

-চলবে…

#প্রণয়াসক্ত_পূর্ণিমা
#Writer_Mahfuza_Akter
পর্ব-২৪

গোধূলির হলুদ আভা আকাশ থেকে মুছে যাবে আর কিছুক্ষণের মধ্যেই। উত্তরে হাওয়ায় শীতলতার প্রখরতা ক্রমশ বাড়ছে। তরী গায়ের চাদরটা ভালোমতো গায়ে মুড়িয়ে নিল। হাত দুটোর তালু বারংবার ঘষতে লাগলো উষ্ণতার অভাবে। অপেক্ষিত, উন্মুখ দৃষ্টি মেলে রেখেছে সে সামনের ভবনের দিকে। মধু ওকে দাঁড় করিয়ে ভেতরে গেছে প্রায় বিশ মিনিট হয়ে এলো। এখনো তার আসার কোনো নাম নেই!

“তুমি-ই কি অরিত্রী?”

পেছন থেকে পুরুষালি কন্ঠে এমন কথা শুনে তরী ঘাড় ঘুরিয়ে তাকালো। চোখের সামনে ছেলেটার অবয়ব দৃশ্যমান হলো। তার সুদর্শন মুখের অমায়িক হাসিটা দেখে কপালে সূক্ষ্ম ভাজ পড়লো তরীর। কিয়ৎক্ষণ ছেলেটাকে সূক্ষ্ম দৃষ্টিতে পর্যবেক্ষণ শেষে মুখ খুললো সে,

“জ্বী! আমিই অরিত্রী।”

ছেলেটা মুখে হাসি বজায় রেখেই বললো, “আমি দীপ্ত! তোমার ক্লাসমেট। আজকে ক্লাসে দেখেছিলাম তোমায়! তাই এখানে দেখে ভাবলাম, পরিচিত হওয়া যাক!”

তরী অপ্রস্তুত হলো। তবুও নির্বিকার ভঙ্গিতে তাকিয়ে বললো, “পরিচয় হয়ে ভালো লাগলো।”

দীপ্ত এর বেশি কিছু আশাও করেনি। তাই মাথা নাড়িয়ে বললো, “ধন্যবাদ। আচ্ছা, এই বইটা কি তোমার? তুমি যেই টেবিলে বসেছিলে, সেই টেবিলের ওপরই বইটা ছিল। বইয়ের ভেতরও তোমার নাম লেখা দেখলাম।”

তরী বইটা হাতে নিল। সে দেখেই চিনতে পেরেছে, তার প্রিয় উপন্যাসের বই এটা। হারিয়ে গেলে কষ্ট পেত খুব। তাই বইটা হাতে পেয়ে অজান্তেই মুখে হাসি ফুটে উঠলো ওর। দীপ্ত তরীর মুখের দিকে তাকিয়ে রইলো নির্নিমেষ। চোখে মুখে অফুরন্ত মুগ্ধতা তার। আনমনে বললো, “সবসময় এভাবে হাসলেও পারো! এই হাসির মাঝে পৃথিবীর সকল সৌন্দর্যকে দেখা যায়।”

তরী ভ্রু কুঁচকে তাকালো। কথার মানে বুঝার চেষ্টা করে বললো, “সরি! কী বললেন? ”

দীপ্ত থতমত খেয়ে গেল। মুখ ফসকে কথাটা বের হয়ে গেছে তার। তাই পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে বললো,

“তেমন কিছু না। ঐটা এমনি কথার কথা ছিল!”

এদিকে,
মধু অ*গ্নি দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে প্রহরের দিকে। প্রহর মিটমিট করে হাসছে। হেসেই ব্যাঙ্গ করে বললো,

“দেখেছো? তোমার ভাগ্যে এই অভীক শাহরিয়ার-ই লেখা আছে। এজন্যই ঘুরে ফিরে আমাদের দুজনের বারবার দেখা হয়! আর এখন তো একদম পার্মানেন্টলি এখানে সেট হয়ে গেছো। হা হা হা! ”

মধু ফোঁ*স ফোঁ*স করে উঠলো। প্রহরের দিকে আঙুল তাক করে দাঁত কটমট করতে করতে বললো, “লিসেন! তোকে….”

“আহ্! ভদ্রতা বজায় রাখতে শেখো, মিস ধানিলঙ্কা! ডোন্ট ফরগেট দ্যাট আ’ম ইয়র টিচার।”

মধু তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বললো, “ভদ্রতা? সবাই সবকিছু ডিজার্ভ করে না। আর লাস্টে যেই কথাটা বললি, সেটা যেন মাথায় থাকে! এখানে তুই আমার টিচার আর আমি তোর শিক্ষক। এর বাইরে আমাদের মধ্যে আর কোনো পরিচয় নেই। তবে আমার চোখে তুই আজীবন একটা ঠক আর প্রতারক-ই থেকে যাবি, যে কিনা মানুষকে স্বপ্ন দেখাতেও জানে আর সেটাকে সযত্নে ভেঙে তাকে ধ্বং*স-ও করতে জানে। তাই আমার কাছ থেকে অন্তত কোনো সম্মান এক্সপেক্ট করবি না।”

মধু র*ক্তি*ম দৃষ্টিতে প্রহরের দিকে তাকিয়ে কড়া গলায় কথা গুলো বললো। এতো দিন মধুর তিক্ত বাক্য শুনতে শুনতে অভ্যস্ত হয়ে গেলেও আজকের কথাগুলো প্রচন্ডভাবে আঘাত করলো তাকে। টলমলে দৃষ্টিতে তাকাতেই মধু নিজের চোখের পানি আড়াল করতে প্রহরের পাশ কাটিয়ে চলে গেল। প্রহর আজ আর ঘাড় ঘুরিয়ে তাকালো না। মধু চলে যাওয়ার দিকে অপলক চেয়ে রইলো না। বড় একটা শ্বাস নিয়ে মনঃস্থির করলো। করে নিল প্রতিজ্ঞা। কঠিন প্রতিজ্ঞা!

মধুকে আসতে দেখে তরী ওর দিকে তাকিয়ে হাসলো। দীপ্ত তরীর দৃষ্টি অনুসরণ করে তাকাতেই মধুকে এগিয়ে আসতে দেখলো। মধুকে দেখে নিজের অজান্তেই একটা ঢোক গিললো সে। মেয়েটাকে দেখলেই ভয় লাগে ওর। কেমন যেন তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকায় সবার দিকে! তাই দীপ্ত আর সময় ব্যয় না করে তড়িঘড়ি করে বললো,

“আমি আসছি, হ্যা? কাল আবার দেখা হবে। বাই!”

তরীর উত্তরের অপেক্ষা না করেই দীপ্ত স্থান ত্যাগ করলো। মধু এগিয়ে আসতেই তরী ওর মলিন মুখ দেখে বললো, “কী হয়েছে? এমন মনমরা হয়ে আছো কেন?”

“কিছু না। চল, যাওয়া যাক। সন্ধ্যা নেমে এসছে প্রায়ই!”

মধুর স্কুটারে করে মধুর হোস্টেলের কাছাকাছি আসতেই তরী নেমে গেল। মধু বললো, “চল, তোকে তোর বাসায় পৌঁছে দেই! ”

তরী বাঁধা দিয়ে বললো, “নাহ্! এখান থেকে দূর অনেক। তোমার এতো দূর যাওয়া-আসার দরকার নেই। আমি একটা রিকশা নিয়ে চলে যাবো।”

মধু আর তরীর কথার বিপরীতে কিছু বললো না। তরী রিকশায় উঠলো। তরীর রিকশাটা যতক্ষণ পর্যন্ত দেখা যাচ্ছিল, মধু ততক্ষণ-ই তাকিয়ে রইলো।

তরী রিকশায় উঠে হাতে থাকা উপন্যাসের বইটা খুললো। কয়েকটা পৃষ্ঠা উল্টেপাল্টে দেখতেই একটা হলুদ কাগজ চোখে পড়লো ওর। নিয়নের হলুদ আলোয় কাগজটার রঙ হলদেটে লাগলেও আসলে বুঝতে পারলো না, সেটার আসল রঙ কী! কাগজের লেখাগুলো পড়ার চেষ্টা করলো। কিন্তু অন্ধকারে অস্পষ্ট অক্ষরের লেখা গুলো বুঝতে সমস্যা হচ্ছে। ফোনের ফ্লাশলাইট অন করে লেখার ওপর ধরলো। দেখলো,

“প্রিয় অরিত্রী,
তুমি আসলেই একরাশ মায়ার অধিকারিণী! তোমার ঝলমলে হাসিটা আমার দৃষ্টিতে দেখা সেরা সৌন্দর্য। জানি না, তোমাকে কেন এতো ভালো লাগলো! নিজের অনুভূতি নিয়ে আমি সন্দিগ্ধ। তবে কথাগুলো তোমায় না জানিয়ে পারলাম না।

~দীপ্ত”

তরী প্রচন্ড বিরক্ত হলো লেখাটা পড়ে। এ নতুন কিছু না। মানুষের এসব মোহ, আবেগ দেখতে দেখতে অভ্যস্ত সে। যখন জানতে পারতো যে, তরী কথা বলতে পারে না, তখনই সব আবেগ মাটি চা*পা পড়ে যেত। কিন্তু এই ছেলে তো ওকে কথা বলতে দেখেছে-ই! একে পিছু ছাড়ানোর একটা ব্যবস্থা করতে হবে।

৩৫.
মিস্টার আফনাদ অফিস থেকে ফিরে নিজের ফর্মাল পোশাক বদলে পাঞ্জাবি পরলেন। মোহনা ওনাকে এতো পরিপাটি হতে দেখে ভ্রু কুঁচকে তাকালেন। বললেন,

“এই মাত্র-ই না বাড়ি ফিরলে? এখন আবার এতো সাজগোজ করেছে কই যাচ্ছো? কোনো দাওয়াত আছে নাকি?”

মিস্টার আফনাদ হাতে ঘড়ি পরতে পরতে বললেন, “তরীর সাথে দেখা করতে যাচ্ছি। হুট করে মেয়েটার কথা অনেক মনে পড়ছে। অনেক দিন দেখি না ওকে!”

মোহনা বিরক্তি ও রাগ নিয়ে বললেন, “গত সপ্তাহেও গিয়ে এলে। আজ আবারও যাচ্ছো! মেয়েটা মুখ খুলে কথা বলার পর থেকে ওর প্রতি তোমার দরদ একেবারে উথলে পড়ছে! কেন? কেন ওকে এতো মাথায় তুলছো তুমি? পরের বাড়ি পাঠিয়ে এতো কষ্টে ওকে ঘাড় থেকে নামালাম! মেয়েটা একটা অপয়া। ওর মুখ দেখতে ইচ্ছে করে না আমার!”

সবগুলো কথা শুনেও মিস্টার আফনাদ ভেতরের রাগ বাহিরে প্রকাশ করলেন না। তিনি সবসময়ই মাথা ঠান্ডা রাখেন। এজন্যই তরীকে এই সমাজে আজো টিকিয়ে রাখতে পেরেছেন তিনি। এবারেও তার ব্যতিক্রম ঘটালেন না। আজ মোহনার ব্যাপারটার একটা বিহিত করবেন তিনি। এজন্য শান্ত গলায় বললেন,

“তরীর প্রতি এতো ক্ষো*ভ কেন তোমার?”

মোহনা চোখে পানি জমে এলো। তিনি রাগী কন্ঠে বললেন, “কারণ ও তোমার প্রথম বউয়ের মেয়ে। ওকে দেখলেই আমার মনে পড়ে যে, তোমার জীবনের প্রথম নারী আমি নই। কোনো মেয়েই পারে না তার স্বামীর ভালোবাসার ভাগ অন্যকে দিতে। আমি অনেক চেষ্টা করেছি, ঐ মেয়েটাকে স্বাভাবিক ভাবে নিতে। কিন্তু আমার সহ্য হয় না। মনের ভেতরের কষ্টগুলো রাগ হয়ে বের হয় তখন।”

“যদি বলি, তরী আমার নিজের মেয়ে না। আমার কোনো প্রথম স্ত্রী নেই। আমার একমাত্র স্ত্রী সবসময় তুমিই ছিলে। তাহলে?”

মোহনা অবাক চোখে তাকালেন। চোখের পানি মুছে বললেন, “মানে?”

“মানেটা জানার জন্য তোমাকে অনেক কাহিনী শুনতে হবে। শোনো তাহলে!”

মিস্টার আফনাদ কীভাবে তরীকে সেই ভ*য়া*ব*হ রাতে বাচিয়ে এনেছিলেন সবটা বললেন। সবটা শুনে মোহনা নির্বাক হয়ে রইলো। অস্ফুটস্বরে বললো,

“এই মা-হারা, নিঃস্ব, অসহায় মেয়েটাকে আমি এতো কষ্ট দিয়েছি। ওর ওপর এতো অন্যায়, অত্যাচার করেছি! তুমি আমাকে আগে কেন বলোনি এসব? কেন বলোনি? আমি এমন জ*ঘ*ন্য কাজ কীভাবে করলাম? আমার নিজেকে ক্ষমা করবো কীভাবে?”

মিস্টার আফনাদ হাসলেন। বললেন,

“আমি জানতাম, তোমার আ*ক্রো*শের কারণ কী! কিন্তু আমারও কিছু করার ছিল না। আমি সত্যিটা কখনো প্রকাশ করতে চাইনি। তবুও সবটা প্রকাশ করতেই হলো। কিন্তু আমি চাই না, তরী এটা জানুক যে, তুমি সবকিছু জেনে গেছো। মেয়েটা কষ্ট পাবে তাহলে!”

মোহনা চোখের পানি মুছে বললেন, “ঠিক আছে, বলবো না। কিন্তু ওর সাথে আজকে আমি দেখা করতে যাবো।”

মিস্টার আফনাদ সন্তুষ্টির সাথে বললেন, “চলো। তবে এটা জেনে রেখো, যে বাড়িতে যাচ্ছো, সেটাই তরীর আসল বাড়ি। তরী ঐ বাড়ির ‘চাঁদ’! রায়হানের ভাই আরমানের ছোট মেয়ে ও। অরিত্রী সেহরীশ! সৌহার্দ্যের প্রাক্তন প্রেমিকা অরুণীর ছোট বোন।”

-চলবে….

গল্প পোকা
গল্প পোকাhttps://golpopoka.com
গল্পপোকা ডট কম -এ আপনাকে স্বাগতম......
RELATED ARTICLES

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

- Advertisment -

Most Popular

Recent Comments

Md masrur Hasan mahi على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
আমিনুল ইসলাম على প্রয়োজন পর্ব: ৩০ ( অন্তিম)
সাজিবুল ইসলাম على ধর্ষিতাবউ২ ৯ তথা শেষ পর্ব
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
Nita Sarkar على স্বপ্নীল ৬৮
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على রহস্য শেষ_পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على অলক্ষ্যে তুমি পর্ব-০৬ এবং শেষ পর্ব
Nazmun Nahar Akhi على Psycho_is_back? part_7
Nazmun Nahar Akhi على Dangerous_Villian_Lover part 2
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على জানালার ওপারে পর্ব-১৭ এবং শেষ পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على লীলা বোর্ডিং ১২১৫ পর্ব-১১ এবং শেষ পর্ব
মিজানুর রহমান রাহুল على সেই তুমি পর্ব-০১
@feelings على প্রহেলিকা
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Nusrat jahan على coffee & vanilla Part-10
Pallabi Roy على স্বপ্নীল ৬৮
M.D Mahabub على The_Villain_Lover Part_2
Labani sarkar على Dangerous_Villain_Lover part 23
MD Akas Apc على বিবেক
Tanisha Ahmed على Devil love part-18 
Aius Barmon shorob على নারীর দেহকে নয়
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Priya Banerjee على devil love married life last part
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Riya Biswas على তুমি রবে ৫২
Mohammad Adib على তুমি রবে ৬০
Avni Ayesha على তুমি রবে ২৮
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
সুমিত على তুমি রবে ২৮
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
Samiah Begum على তুমি রবে ৫১
biddut das rocky على নর নারী
গল্প পোকা على নষ্ট গলি শেষ পর্ব
Md Jobayer Hossain Shohag على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على দুই অলসের সংসার
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤৪২.
A.J.S Rakib على মন ফড়িং ❤৪২.
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
Samiya noor على গল্পঃ ভয়
Sadikul على গল্পঃ ভয়
Samia Islam على গল্পঃ ভয়
শূন্য মায়া على মন ফড়িং ❤ ৪০.
Sutapa biswas على মন ফড়িং ❤৩৯.
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৮.
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৭
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
Siyam على বিবেক
Sudipto Guchhait على My_Mafia_Boss পর্ব-৯
saptami karmakar على devil love married life last part
saptami karmakar على devil love married life last part
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ২৬.
Shreyashi Dutta على  বিয়ে part 1
Sandipan Biswas على  বিয়ে part 1
Paramita Bhattacharyya على অনুরাগ শেষ পর্ব
জামিয়া পারভীন তানি على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
মায়া على মন ফড়িং  ২২
সুরিয়া মিম على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على মন ফড়িং ২১
গল্প পোকা على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
Sahin ssb على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৮. 
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৭.
Jannatul Ferdous على খেলাঘর পর্ব-৩৫
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ফাল্গুনের_ফুল last_part_8
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ছাত্রী যখন বউ পাঠঃ ১
গল্প পোকা على বাজির প্রেম পাঠঃ ১
Foujia Khanom Parsha على মা… ?
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৮
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
Ibna Al Wadud Shovon على স্বার্থ