প্রজাপতির রং পর্ব-৩৮+৩৯

0
1311

#প্রজাপতির_রং🦋
#Part_38
#Writer_NOVA

সারা পার্টির পরিবেশটা একদম নিরব।সাধারণত পার্টির পরিবেশ যেরকম হৈ-হল্লোর থাকা উচিত। সেরকম নয়।একপাশে সফট মিউজিকে বাজছে।তার তালে তালে নাচছে কয়েকজন যুবক-যুবতী। তবে তারা সবাই বিদেশি। আরেকপাশে ড্রিংকসের ব্যবস্থা করা হয়েছে। সেগুলোও বিদেশি ক্লায়েন্টদের জন্য। নাভান ওর বাবার হাত ধরে এদিক সেদিক ঘুরছে।আজ আমরা ফুল ফ্যামেলী কালো পরেছি।এনাজ কালো ব্লেজার,কালো প্যান্ট। নাভান কালো শর্ট প্যান্ট, কালো শার্ট সাথে কালো কোটি।আমার পরনে কালো গাউন।চুলগুলো ছেড়ে পেছন দিকে রেখেছি।ওড়নাটা গলায় প্যাচানো।আমি অসহায়ের মতো এদিক সেদিক তাকাচ্ছি। এরিনকে সবার সাথে পরিচয় করে দিচ্ছে আরিয়ান।হিমি এসেছে ওর বয়ফ্রেন্ড রাজের সাথে। রাজ ও হিমিকে একটু আগে এদিকে দেখেছিলাম। কিন্তু এখন আর খুঁজে পাচ্ছি না। মুসকান কিসের জন্য যেনো রাগ করেছে। আদর সেই রাগ ভাঙাতে ব্যস্ত আছে।তায়াং ভাইয়া এখনো আসেনি।সে কল করে বললো আমার জন্য নাকি সারপ্রাইজ আছে। কে জানে কি সারপ্রাইজ।সবাই ব্যস্ত শুধু আমি ছাড়া। জুসের গ্লাস হাতে নিয়ে এদিক সেদিক তাকিয়ে সবার কান্ড দেখছি।নিজেকে সিঙ্গেল মানুষ মনে হচ্ছে। হুট করে আমার পিঠে একটা তাল পরলো।আমি চিৎকার করে উঠলাম।

আমিঃ ও আল্লাহ গো!!! আমার পিঠ।

—- চুপ কর ছেমড়ি।চিল্লাইলে আরেকটা খাবি।

কারো শাসানো গলা পেয়ে আমার কপালে চিন্তার ভাজ পরলো।এটা তো নূর আপির গলা।কিন্তু সে এখানে আসবে কি করে? আমি পেছনে ঘুরে অবাক হয়ে গেলাম।আরে সত্যিতো নূর আপি। আমি নূর আপিকে জড়িয়ে ধরলাম।

আমিঃ নূর আপি-ই-ই-ই-ই-ই-ই-ই-ই!!!!

নূরঃ আস্তে বোইন।আমর কান ধরে গেলো।

আমিঃ তুমি এখানে? কার সাথে আসছো?

নূরঃ সারপ্রাইজ!!! তায়াং-এর সাথে আসছি।

আমিঃ ওহ্ তায়াং ভাইয়া তাহলে আমার জন্য এই সারপ্রাইজের কথা বলছে।

আমি নূর আপিকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলাম।সেটা দেখে পেছন থেকে তায়াং ভাইয়া চেচিয়ে বললো।

তায়াংঃ শাঁকচুন্নিরে, আমারে কি তোর চোখে পরে না।

আমিঃ যা ভাগ।তোর সাথে কথা বলে কে?

তায়াংঃ ওহ্ বোনকে পাইয়া আমারে এখন ভুইল্লা গেছিস।আবার আসিস আমার কাছে।চুল টেনে ছিঁড়বো তোর।

আমিঃ নূর আপি দেখো তোমার সামনে আমাকে বকছে।কিছু বলো এই পাঠারে🥺।

নূরঃ তোমার সাহস তো কম বড় না।আমার বোনুটাকে বকতাছে।এতটুকু বকলে কি হয়? আরো বেশি করে বকো।তুমি বকবা আর আমি পিঠে তাল ফেলবো।এতদিন আমাদের সাথে যোগাযোগ না রাখার শাস্তি এটা।ও লাপাত্তা কেন হয়েছিলো? সেই শাস্তিতো এখনো বাকিই আছে।

আমিঃ তোমারা হবু জামাই-বউ এই প্ল্যান করে আসছো?কথা নেই তোমাদের সাথে যাও।নূর আপি তুমি আমার ভাইরে পাইয়া আমার সাথে এমন করলা।যাও কারো সাথে কথা কমু না।আড়ি তোমাদের সাথে।

নূরঃ সর, তোর সাথে কথা নেই আমার।আমাকে তো ভুলেই গেছিস। কে হই আমি তোর? আমি তোর আপন কেউ হলে তো আমার সাথে যোগাযোগ রাখতি।

আমিঃ নূর আপি, প্লিজ রাগ করো না। তুমি আমার একমাত্র খালাতো ভাইয়ের একমাত্র হবু বউ। তুমি যদি আমার সাথে রাগ করে থাকো তাহলে কি বিষয়টা ভালো দেখায়,তুমিই বলো।

তায়াংঃ ওর সাথে কোন কথা বলবে না নূর।এই শাঁকচুন্নি মোটেও ভালো না।চলো আমরা অন্যদিকে চলে যায়।ও কে? ওকে আমরা চিনিই না।

আমিঃ পাঠারে😤!!!!! মাইর না খাইতে চাইলে সামনে থিকা সর কইতাছি।আসছে আমার ও নূর আপির সাথে প্যাচ লাগাইতে।

তায়াংঃ অামার সাথে এমন করলি না।যা থাকমুই না তোর সাথে। এখুনি আমি আমার বউ নিয়া পার্টি থিকা চইলা যামু।

আমিঃ এ্যাহ আসছে।যা ভাগ।তোরে ধইরা রাখছে কে? তুই থাকলে আমাদের আরো ৫ জনের খাবার বেশি লাগবো।তুই তো আবার ৫ জনের খাবার একসাথে শেষ করিস।এর জন্যই তো এমন হইছিস পাঠা।দেহটা দেখছিস তোর? এবার তোরে হাটে উঠাইলে ভালো দামে বেচতে পারতাম।

তায়াংঃ খবরদার পাঠা বলবি না শাঁকচুন্নি। (রেগে)

আমিঃ তাহলে কি বলবো? মাননীয় ব্লাক বেঙ্গল ছাগল মহাদোয়। এবার ঠিক আছে না।

তায়াংঃ তোরে আমি………..😤।(রেগে)

আমিঃ কিচ্ছু করতে পারবি না।তার আগেই আমি কি করবো জানিস?

আমাদের দুই ভাই-বোনের কান্ড দেখে নূর আপি হাসতে হাসতে পেট ধরে বসে পরেছে।আমি দুই হাত কোমড়ে রেখে ঝগড়া করার ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে আছি। তায়াং ভাইয়া লুচির মতো ফুলছে।নূর আপির সামনে তাকে এতকিছু বলায় বেচারার আত্মসম্মানে লেগেছে বোধহয়। তাতে আমার কি,হুহ😏।তায়াং ভাইয়া সামনে এগিয়ে আসতে আসতে বললো।

তায়াংঃ কি করবি তুই?

আমিঃ পেছনের দিকে দৌড় লাগামু।ভাগ নোভা ভাগ।নয়তো তোরে মাননীয় ব্লাক বেঙ্গল ছাগল মহাদোয় গুঁতা মারবে।

আমার কথাটা বলতে দেরী কিন্তু দৌড় দিতে দেরী নয়।আমি উল্টো দিকে দৌড়ে অন্য দিকে চলে এলাম।হাঁটুর ওপর ভর দিয়ে হাঁপাতে লাগলাম।আরেকটু সময় থাকলে আমি নির্ঘাত তায়াং ভাইয়ার হাতে মার খেতাম।বেচারাকে বেশ রাগানো হয়েছে।আরেকটু সময় থাকলে ওর মান-সম্মান ফালুদা বানিয়ে ফেলতাম।কিন্তু তা আর হলো না।আফসোস!!! ভালো করে তায়াং ভাইয়াকে পচাতে পারিনি বলে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে আফসোস করছিলাম।তখুনি হুট করে কেউ একজন হাত ধরে টেনে বাইরের দিকে নিয়ে যেতে লাগলো।ঘটনার আকস্মিকতায় আমি হতবাক।

আমিঃ আরে কে আপনি? আমার হাত ধরেছেন কেন? কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন আমাকে? ছাড়ুন বলছি। জলদী ছাড়ুন।নয়তো কামড় দিবো বলে দিলাম।

আমি গাত ছাড়ানোর জন্য মোচড়ামুচড়ি করতে লাগলাম।কিন্তু সে এসবে তোয়াক্কা না করে আমার হাত ধরে টেনে বাইরে নিয়ে যেতে লাগলো।পরনে তার হালকা পেঁয়াজ কালার ব্লেজার, সেই রঙের প্যান্ট।সারা পার্টিতে আবছা আলো জ্বলছে। সেই আলোতে এতটুকুই দেখতে পেরেছি।বাইরের ছোট বাগানের এনে সে আমাকে নিয়ে দাঁড়ালো। আমি ঝাড়া মেরে তার হাত সরিয়ে ফেললাম।

🦋🦋🦋

—– কেমন আছো পাখি?

আমি হাত ঝাড়া মেরে সরাতেই সে কথাটা বলে উঠলো।আমি চোখ, মুখ কুঞ্চিত করে তার দিকে তাকালাম।একি!!! এ তো দেখছি রোশান।ও এখানে কি করছে? ওফস সরি। আমি তো ভুলেই গিয়েছিলাম।আজ এনাজের সকল বিজনেস ডিলারকে এই পার্টিতে আমন্ত্রণ করা হয়েছে। শেয়ার ব্যবসার সুবাদে রোশান তো এখানে থাকবেই। রোশান আলতো করে তার হাতটা আমার গালে রাখলো।আমি তার হাত সরিয়ে দুই কদম পিছিয়ে গেলাম।

আমিঃ দেখুন রোশান, আমি একজনের স্ত্রী। তাই হুটহাট আমার হাত,গাল ধরা আমি নিশ্চয়ই টলারেট করবো না। আমার দুই হাত দূরে থাকুন।কাছে আসার একদম চেষ্টা করবেন না।

থেমে থেমে কথাগুলো বলে আমি ওড়নার কোণা মোচড়াতে লাগলাম।আমার অনেক অস্বস্তিকর লাগছে।কেউ আমাদের একসাথে দেখলে খারাপ ভাবতে পারে।এনাজ দেখলে তো আমার সাথে তুলকালাম কান্ড বাঁধিয়ে ফেলবে।রোশান নিষ্পলক চোখে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আমি কিছুটা দম ছেড়ে আবার বলা শুরু করলাম।

আমিঃ আমার স্বামী, সন্তান আছে। আপনিও বিয়ে করে নিন।তাহলে সব ভুলে যাবেন।আমি চাই না আপনার কারণে আমাদের সংসার নষ্ট হোক।
আর আমার কারণে আপনি কষ্ট পান।আপনি হয়তো মানুষ হিসেবে কখনো চাইবেন না আপনার কারণে আমার সংসারে অশান্তি হোক।আমার সন্তানটা দুই বছর পর ওর বাবাকে পেয়েছে। প্লিজ ওর কাছ থেকে ওর বাবাকে দূরে সরিয়ে দিয়েন না।কাউকে বিয়ে করে নতুন সংসার গড়ুন।

রোশানঃ বিয়ে করলে তোমাকেই করবো।তুমি না করলে তোমার ছোট বোনকে করবো।

আমিঃ মানে?

কথাটা বলে আমাকে এক চোখ মারলো রোশান।তারপর পাগলের মতো হাসতে লাগলো।আমি এর কান্ডে হতবাক হয়ে তাকিয়ে রইলাম।একি আমার শোকে পাগল হয়ে গেলে নাকি?

রোশানঃ মানে বোঝো নাই।আচ্ছা বুঝিয়ে বলছি।আসলে আমি মজা করছিলাম।তুমি সিরায়াসলি নিয়ো না।হয়েছে কি………

—- রোশান, তুমি এখানে।আর আমি তোমাকে সারা পার্টিতে খুঁজে খুঁজে মরছি।এখানে কি করছো তুমি?

পেঁয়াজ কালার নেটের শাড়ি পরা একটা মেয়ে এসে রোশানকে উদ্দেশ্য করে কথাগুলো বললো।মেয়েটাকে আমি আগে কখনও দেখিনি।আমি চোখ দুটো ছোট ছোট করে তার দিকে তাকালাম।রোশান ওর কোমড় ধরে নিজের সাথে মিশিয়ে নিয়ে তাকে বললো।

রোশানঃ ওহ জারা সুইটহার্ট। তুমি আমায় খুঁজছিলে বুঝি? আমি তো তোমায় মনে মনে মিস করছিলাম।তোমার সাথে একজনের পরিচয় করিয়ে দেই।(আমাকে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে)এই হচ্ছে মিসেস এনাজ আহমেদ।

জারাঃ মিসেস এনাজ আহমেদ???

রোশানঃ চিনতে পারোনি তো।ওর নাম নোভা।

জারা চমকে আমার দিকে ভালো করে তাকালো।তবে ওর চাহনিতে আমি বিরক্ত দেখতে পেলাম।কিন্তু ও আমাকে দেখে বিরক্ত কেন হচ্ছে তা খুঁজে পেলাম না।অস্পষ্ট সুরে বলে উঠলো।

জারাঃ ওহ্ নোভা।

জারা এমন করে আমার নাম নিলো যেনো আমাকে কত আগের থেকে চিনে।কি হচ্ছে আমি কিছুই বুঝতে পারছি না। রোশান আমাকে উদ্দেশ্য করে বললো।

রোশানঃ পাখি, ওর নাম জারা।আমার বাবার বন্ধুর মেয়ে। আমার হবু বউ।

আমিঃ হবু বউ!!!!

আমি কপাল কুঁচকে হবু বউ শব্দটা উচ্চারণ করলাম।রোশান মুচকি হেসে উত্তর দিলো।

রোশানঃ হ্যাঁ, আমার হবু বউ। আমরা খুব শীঘ্রই বিয়ের পিঁড়িতে বসবো।

আমিঃ কথাটা শুনে খুশি হলাম।

হঠাৎ জারার মোবাইলে একটা কল এলো।জারা কথা বলতে অন্য দিকে চলে গেল।আমি মনে মনে বেশ খুশি হয়েছি।যাক, এমপি সাহেবের অবশেষে সুমতি হলো।আমি হাত বাড়িয়ে বললাম।

আমিঃ কংগ্রাচুলেশনস।

রোশানঃ Thank You।

রোশান হাত মিলিয়ে নিলো।তারপর একটা অদ্ভুত কান্ড করে বসলো।হাতের উল্টোপিঠে শব্দ করে একটা চুমু খেলো। আমি তড়িৎ গতিতে হাত সরিয়ে নিলাম।হাত মুছতে লাগলাম।আমি যদি জানতাম রোশান এমন কিছু করবে তাহলে কখনো হাত মেলাতে দিতাম না।এখন নিজের ওপর রাগ হচ্ছে। কেন যে এর সাথে হাত মেলাতে গিয়েছিলাম।আমার কান্ড দেখে রোশান মিটমিট করে হাসছে।

এনাজঃ এখানে কি করছো বাটারফ্লাই?

পেছন থেকে রাগী স্বরে কথাটা বলে উঠলো এনাজ।আমি ভয় পেয়ে গেলাম।এনাজ আবার সবকিছু দেখে ফেলেনি তো।তাহলে তো আরেক ঝামেলা।নিজের চুল নিজেরই ছিঁড়তে ইচ্ছে করছে। এই ব্যাটার সাথে কেন যে আগ বাড়িয়ে হাত মিলাতে গেলাম।

রোশানঃ কিছুই হচ্ছে না।কথা বলছিলাম আমরা দুজন।এখন আপনিও চলে এসেছেন।আপনি চাইলেও যোগ দিতে পারেন।

এনাজঃ ওহ আচ্ছা। শুধু কথাই হচ্ছিলো নাকি অন্য কিছুও।

এনাজ রাগী চোখে আমার দিকে তাকিয়ে৷ দাঁতে দাঁত চেপে কথাগুলো বললো।আমি তো ভয়ে শেষ। এনাজ কাঠ কাঠ গলায় আমাকে বললো।

এনাজঃ ভেতরে চলো।বলেছিলাম না আমার আশেপাশে থাকতে।তুমি কার অনুমতি নিয়ে বাইরে এসেছো।তোমাকে আমি বলেছি বাইরে আসতে? কিংবা তুমি কি আমাকে বলে এসেছো?

আমিঃ না।(মাথা নিচু করে)

এনাজঃ তাহলে কেন এসেছো?( ধমকের সুরে)

রোশানঃ আপনি ওকে শুধু শুধু বকছেন।আমি ওকে নিয়ে এসেছি।

এনাজঃ আপনি চুপ থাকুন।আমি আমার ওয়াইফকে জিজ্ঞেস করছি আপনাকে নয়।

রোশানঃ আপনি ওকে জিজ্ঞেস করছেন।কিন্তু এভাবে জিজ্ঞেস করতে পারেন না।

এনাজ রেগে আমার দিক থেকে রোশনের দিকে ঘুরে কঠিন গলায় জবাব দিলো।

এনাজঃ এখন আমার বউকে আমি কিভাবে জিজ্ঞেস করবো তাও কি আপনাকে বলে করতে হবে আমাকে? আমাদের স্বামী-স্ত্রীর কথার মাঝখানে আপনি কথা বলার কে?

রোশানঃ আমি কেউ না।তবে একটা কথা ভালো করে শুনে রাখুন।আপনি ওকে কখনো কষ্ট দিতে পারবেন না।ওর কথা ভেবে আমি এবারের মতো ছাড় দিলাম।কিন্তু পরেরবার দিবো না।বাই চান্স যদি আপনার কারণে আমার পাখি একটু কষ্টও পায় তাহলে আমি কিন্তু আপনাকে ছেড়ে দিবো না।জোর করে হলেও ওকে আপনার কাছ থেকে ছিনিয়ে নিবো।একটু ভুলের কারণে নিজের স্ত্রী, সন্তানকে হারিয়েন না।আমি যদি কোনভাবে খবর পাই আমার পাখিকে আপনি কষ্ট দিয়েছেন। তাহলে সত্যি আমি ওকে আপনার কাছ থেকে কেড়ে নিতে দ্বিতীয় বার ভাববো না।সো বি কেয়ারফুল মিস্টার এনাজ।নিজের জিনিস নিজের কাছে যত্ন করতে শিখুন। নয়তো হারিয়ে গেলে আফসোস করবেন।একববার ফিরে পেয়েছেন বলে যে ২য় বার পাবেন এমনটা কিন্তু কোথাও লিখা নেই। আর হ্যাঁ একবার ওকে আমি কেড়ে নিলে ওর কোন খোঁজ আপনি পাবেন না।কথাগুলো ভালো করে মাথায় ঢুকিয়ে নিন।

🦋🦋🦋

ইতিমধ্যে জারাও চলে এসেছে। সে মেবি রোশানের কথাগুলো শুনেছে। যার কারণে ওর মুখ কালো হয়ে আছে।এনাজ রাগে ফোঁস ফোঁস করতে লাগলো।আমি ভয় পাচ্ছি। আমার কারণে না ওরা দুজন আবার মারামারি শুরু করে দেয়।কিন্তু আমার ধারণা ভুল করে দিয়ে এনাজ রাগে গটগট করে ভেতরের দিকে যেতে লাগলো।আমিও ওর পিছু পিছু নিলাম।তবে যাওয়ার আগে জারা ও রোশানের কিছু কথা শুনে মনটা ভালো হয়ে গেলো।

জারাঃ তুমি এসব কি বললে? তুমি কি আমাকে বিয়ে করবে না।

রোশানঃ আমি তোমাকেই বিয়ে করবো।

জারাঃ তাহলে এনাজকে এসব কথা বললে কেন?

রোশানঃ তুমি কি করে বুঝলে এটা এনাজ?

জারাঃ নোভাকে নিয়ে এতটা কেয়ারিং তো তোমার ও এনাজেরই আছে। তুমিই তো গত পরশু বললে।তাই ছেলেটার মুখের রিয়েকশন দেখে আমি সিউর হয়ে গেলাম এটা এনাজ ছাড়া অন্য কেউ নয়।

রোশানঃ ওহ আচ্ছা।আমার বউ দেখছি ভেরী ইন্টেলিজেন্ট।

জারাঃ হয়েছে আর প্রশংসা করতে হবে না। এখন বলো এসব কথা কেন বললে?

রোশানঃ আসলে ওকে একটু ভয় দেখালাম। আমি কখনো ওর কাছ থেকে নোভাকে কেড়ে নিবো না। নোভাকে ছাড়া ও পুরো নিঃস্ব। আমার তো বাবা-মা, তুমি আছো।কিন্তু ওর তো নোভা ছাড়া কেউ নেই। নোভাও ওকে ছাড়া ভালো থাকবে না। কিন্তু এখন এই ভয়টা দেখানো দরকার ছিলো।এনাজ এখন থেকে ভেবেচিন্তে নোভার সাথে রাগ দেখাবে।ওর মাথায় সবসময় এটাই ঘুরবে।যদি সে নোভার সাথে খারাপ বিহেভ করে আর তাতে নোভা কষ্ট পায় তাহলে আমি নোভাকে নিয়ে যাবো।এই ভয় পেয়ে ওকে কখনো কষ্ট দিবে না। যদিও এমনিও এই ভয় দেখানোর কোন দরকার ছিলো না। তারপরেও আমি দেখালাম। যাতে সে তার প্রেয়সীকে হারানোর ভয়ে আরো বেশি ভালোবাসে।

জারাঃ এতো বুদ্ধি রাখো কোথায় তুমি?

রোশানঃ এমপি তো আর এমনি এমনি হয়নি ম্যাডাম।বুদ্ধি না থাকলে এই পদে টিকতে পারতাম না। এসব কথা বাদ।সামনের মাসে আমরা বিয়েটা করছি।অনেক কষ্ট দিয়েছি তোমাকে এবার ভালোবাসা দিয়ে সেসব পুষিয়ে দিবো।

রোশানের কথা শুনে জারা লজ্জায় লাল টমেটো হয়ে গেলো।আমি মুচকি হেসে সেখান থেকে প্রস্থান হলাম। ওরা ওদের মতো কথা বলুক।আমি বরং আমার স্বামী মহাদোয়ের রাগ ভাঙাতে যাই।

In Party………..

একটা পিচ্চি ছেলেকে নাভান ভেবে কোলে নিতে গিয়েছিলাম।পরে দেখি একটা বিদেশি ছেলে।পরনে নাভানের মতো কালো ড্রেস। পেছন থেকে পুরো নাভানের মতো লাগে।

আমিঃ ওফস সরি বাবু।

—-ইট’স ওকে আন্টি।

আমিঃ হোয়াট ইজ ইউর নেম?

—- মাই নেম ইজ লিয়ন জ্যামস।

আমিঃ নাইস নেম।

লিয়নঃ Thanks.

আমিঃ হোয়ার আর ইউ ফোরাম?

লিয়নঃ ইংলেন্ড।

আমিঃ ইউ আর সো কিউট।

আমি ওর গাল টেনে দিয়ে কথাটা বলতেই দেখি আমার পুত্র মহাশয় অগ্নি চোখে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। যার মানে হলো তুমি ঐ বাচ্চাকে আদর কেন করলে।আদরের হাত ধরে সে আমার পাশেই দাঁড়িয়ে ছিলো।বাচ্চাটা নাভানকে দেখে এগিয়ে গেলো।তারপর ওর গালে নিজের হাত দুটো রেখে সামনের একটা লোককে উদ্দেশ্য করে বললো।

লিয়নঃ ওয়াও সো কিউট বেবী।থ্যান্কুও ডেডি।হি লুকস সো কিউট।

বাচ্চার কথা শুনে আমি অবাক।বলে কি পিচ্চি ছেলে। নিজের বয়স বড়জোর ৩ বছরের একটু বেশি হবে।সেখানে নাভানকে বেবী বলে।নাভান বাচ্চাটাকে দেখে আমার পেছনে এসে লুকালো।ওয়েস্টার্ন ড্রেস পরা এক মহিলা হাত নাড়িয়ে ডাক দিতেই ওর বাবা লিয়নকে কোলে করে সে দিকে চলে গেল।

আদরঃ ভাবী,স্যার আপনাকে ডাকছে।

আমিঃ তোমার স্যার কোথায়?

আদরঃ উত্তর দিকে গেলেই পাবেন।আপনি যান। নাভানকে নিয়ে আমি একটু পর আসছি।

আদর নাভানকে নিয়ে অন্য দিকে চলে গেলো। আমি উত্তর দিকে যেতেই দেখলাম এনাজ দাঁড়িয়ে কারো সাথে হাসিমুখে কথা বলছে।আমাকে দেখেই তার মুখের হাসি ফুস।রোশান তো আমার ভালো করলো না।উল্টো আমাকে আরেক ফ্যাসাদে ফেলে দিলো।এই মহাশয়ের রাগ ভাঙাতে না জানি কত কাঠ-খড় পোড়াতে হয় আমার।এত রাগ যে আমার জামাই কোথা থেকে আমদানি করে আল্লাহ জানে।এনাজ লোকটাকে বিদায় দিয়ে আমার হাত ধরে ওয়াসরুমের বেসিনের কাছে নিয়ে গেল।তারপর রোশান যেই হাতে ঠোঁট ছুঁয়েছিলো সেই হাত ইচ্ছে মতো হ্যান্ড ওয়াশ দিয়ে ধুতে লাগলো।এই রে কাজ সেরেছে!! সে তাহলে দেখে ফেলেছে রোশান যে আমার হাতে ঠোঁট লাগিয়েছে।এমনভাবে হাত ডলছে মনে হচ্ছে আমার হাতের চামড়া উঠিয়ে ফেলবে।আমি মুখটাকে ইনোসেন্ট করে ভয়ে ভয়ে বললাম।

আমিঃ আরে আস্তে।আমি ব্যাথা পাচ্ছি তো।

এনাজঃ আমার জিনিসে অন্য কারো স্পর্শ আমি কিছুতেই সহ্য করবো না।আগেও করিনি,এখন করবো না। এমনকি ভবিষ্যতেও করবো না।কথাটা ভালো করে মাথায় ঢুকিয়ে নেও। যতখন পর্যন্ত আমার মনে না হবে ঐ রোশানের ঠোঁটের স্পর্শ তোমার হাত থেকে চলে গেছে ততক্ষণ পর্যন্ত তোমার হাত ধুতেই থাকবো।

এনাজের মুখটা রাগে লাল হয়ে গেছে। আমি আর কিছু বললাম না।এমনি আইটেম বোম হয়ে আছে। তারপর আবার কিছু বললে সে বোম ফেটেই যাবে।চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইলাম।পাক্কা দশ মিনিট আমার হাতটাকে ডলে, মুছে,ধুয়ে তারপর শান্ত হলো।আমার হাতটা লাল হয়ে গেছে। সেদিকে তাকিয়ে আমার কান্না পাচ্ছে। টিস্যু দিয়ে হাত মুছিয়ে দিলো।তারপর হাত ধরে টেনে পার্টির জায়গায় নিয়ে গেলো।সেখানকার একটা চেয়ারে বসিয়ে দিলো।

এনাজঃ এখান থেকে এক পাও নড়বা না।যদি আমি এসে তোমাকে না পাই তাহলে কিন্তু অনেক খারাপ হয়ে যাবে। আর ঐ রোশানকে যেনো তোমার আশেপাশে না দেখি।যদি দেখি তাহলে এখানে কিন্তু রক্তারক্তি হয়ে যাবে।

আমাকে বেশ কিছু সময় শাসালো।তারপর অন্য দিকে চলে গেল। আমি মুখটাকে বাংলার পাঁচ বানিয়ে চেয়ারে বসে রইলাম।কিছু সময় পর নাভানকে কোলে নিয়ে ফিরে এলো।সাথে একজন ক্যামেরাম্যান।নাভানকে আমার কোলে বসিয়ে নিজে চেয়ার ধরে দাঁড়ালো। কি হচ্ছে তা বোঝার জন্য আমি একবার এনাজের দিকে তাকিয়ে সামনে ক্যামেরাম্যানের দিকে তাকাতেই সে ফট করে ছবি তুলে ফেললো।বেশ কয়েকটা ছবি তোলার পর ক্যামেরাম্যান চলে গেল। হঠাৎ হলরুমের দরজায় দাঁড়িয়ে একজন বলে উঠলো।

—- মে আই কাম ইন??

#চলবে

#প্রজাপতির_রং🦋
#Part_39
#Writer_NOVA

—- মে আই কাম ইন?

পরিচিত গলার স্বর পেয়ে চট করে সেদিকে তাকালাম। আবছা আলো থাকায় ভালো করে মানুষটার চেহারা বোঝা যাচ্ছে না।তবে এনাজের মুখের দিকে তাকিয়ে দেখলাম তার মুখে একটা প্রশান্তির হাসি।বহুদিন পর হারিয়ে যাওয়া জিনিস খুঁজে পেলে আমরা যেমন খুশি হই তেমনটা।সে ভেতরে ঢুকতেই সারা হলরুমে সাদা উজ্জ্বল আলো জ্বলে উঠলো। তার ওপর ফুলের পাপড়ি পরতে লাগলো উপর থেকে।আমি মানুষটাকে দেখে চমকে উঠলাম।

আমিঃ এনাম!!!!

এনাজ কোন কথা না বলে আমাকে পাশ কাটিয়ে এনামের দিকে ছুটে গেল।তারপর সবার সামনে জড়িয়ে ধরলো। বেশ কিছু সময় হয়ে যাওয়ার পরেও তারা কেউ কাউকে ছাড়ছে না বলে সবাই কানাঘুষা করতে লাগলে।ছেলেটা আসলে কে? তাজরানের কি হয়? আমি কিন্তু ঠিক বুঝে গেছি। তারা দুজন একে অপরকে জড়িয়ে ধরে কাঁদছে। দুজন দুজনকে ছেড়ে দিলো।তারপর এনামের হাত ধরে এনাজ আমার কাছে নিয়ে এলো।

এনাজঃ দেখ তো চিনিস কিনা?

এনামঃ কি যে বলো না ভাইয়া!!! ভাবীকে আমি চিনবো না তো কে চিনবে?

এনাজঃ এই বাচ্চাটা কে তা বলতো?

এনামঃ এটা আমার একমাত্র ভাইয়ের একমাত্র ছেলে এনান আহমেদ। আমি কি ভুল বলেছি ভাইয়া?

এনাজঃ মোবাইলে বলেছি তাতেই চিনে গেছিস।এই না হলে আমার ভাই।

এনামঃ আসসালামু আলাইকুম ভাবী।কেমন আছেন?

আমিঃ আলহামদুলিল্লাহ ভালো। আপনি?

এনামঃ আমিও ভালো আছি।ভালো না থাকলে কি আজ বিকালের ফ্লাইটে দেশে আসতে পারতাম।

এনাম আমার কোলের থেকে নাভানকে নিজের কোলে নিলো।তারপর ওর গালে, কপালে আলতো করে চুমু খেয়ে ওকে আদর করতে লাগলো।হঠাৎ আমার চোখ গেলো এনামের পেছনে একটা মেয়ের দিকে।মাস দুয়েকের একটা বাচ্চা নিয়ে গুটিসুটি মেরে দাঁড়িয়ে আছে। এতক্ষণের ঘটনায় মেয়েটার দিকে ভালো করে খেয়াল করিনি।পরনে শেওলা রঙের জর্জেট শাড়ি।বেচারী সাধারণত শাড়ি পরতে বোধহয় অভ্যস্ত নয়।শাড়ি,বাচ্চা সামলাতে সে অনেকটা হাঁপিয়ে পরেছে।আমি মেয়েটাকে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে এনামকে উদ্দেশ্য করে জিজ্ঞেস করলাম।

আমিঃ ও কে এনাম? ওকে তো কখনও দেখিনি।

এনাম একহাতে মাথা চুলকে মুখ নিচু করে ইতস্ততভাবে বললো।

এনামঃ আসলে ভাবী ও আমার ওয়াইফ নীতুয়া।আর আমাদের ছেলে এনায়েত আহমেদ।

আমি বিস্মিত চোখে এনামের দিকে তাকিয়ে রইলাম।দেবরজী আমার একা আসেনি, সাথে বউ,বাচ্চা নিয়ে এসেছে। এনাজ এগিয়ে গিয়ে নীতুর থেকে এনায়েতকে কোলে তুলে নিলো।এনামের হাতের ইশারায় নীতু আমার সামনে এসে নিচুস্বরে সালাম দিলো।

নীতুঃ আসসালামু আলাইকুম ভাবী।

আমিঃ ওয়ালাইকুমুস সালাম।মাশাআল্লাহ!! আমার দেবরজীর পছন্দ আছে বলতে হবে।একদম পরীর মতো একটা মেয়ে পছন্দ করেছে। তা দেবরজী,
লুকিয়ে লুকিয়ে বিয়ে করে বউ,বাচ্চা নিয়ে ফিরলে।এটা কি ঠিক হলো।আমি তো ভেবেছিলাম দেবরজী আসলে মেয়ে দেখা শুরু করবো।কব্জি ডুবিয়ে দেবরের বিয়ের পোলাও,মাংস খাবো।তা কতদিন হলো বিয়ের?

এনামঃ দেড় বছর। কারো সাথে যোগাযোগ ছিলো না বলে জানাতে পারিনি।তাছাড়া নীতুর বাবা ওর বিয়ে প্রায় ঠিক করে ফেলছিলো।তাই একপ্রকার তাড়াহুরো করেই বিয়েটা হয়ে গেছে। বিয়ের দুই মাস পর ভাইয়ার সাথে যোগাযোগ হয়।তখন ভাইয়াকে জানাই।

তায়াং ভাইয়া ও নূর আপিও এনামের আসার খবর শুনে অন্য দিক থেকে এদিকে চলে আসলো।তায়াং ভাইয়া এসে এনামকে জড়িয়ে ধরলো।

তায়াংঃ কি অবস্থা এনাম? আছিস কেমন? তুই তো ভাই বাজিমাত করে দিলি।বউ,বাচ্চাসহ এসে আমাদের তাক লাগিয়ে দিলি।তোর ভাই বিয়ে হয়ে একটা ছেলেও হয়ে গেলো।আর আমরা এখনো বিয়েও করতে পারলাম না।একেই বলে কপাল।

আমিঃ ভাইয়া তুই জানতি এনামের বিয়ে হয়েছে?

তায়াংঃ আমাকে এনাজ সেদিন বললো।তোকে বলেনি এই কারণে যে তোকে একটা সারপ্রাইজ দিবে তাই।

আমিঃ সত্যি অনেক বড় সারপ্রাইজ পেয়ে গেলাম।

নূরঃ কেমন আছেন এনাম ভাইয়া?

এনামঃ আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি আপু।আপনি কেমন আছেন?

নূরঃ আলহামদুলিল্লাহ ভালো। ভাইয়া আমরা কিন্তু দুটো ট্রিট পাই আপনার কাছে। একটা বিয়ের জন্য। আরেকটা বাচ্চার জন্য। ট্রিটের কথা ভুলেন না কেমন? ভুললে কিন্তু খারাপ হয়ে যাবে।

এনামঃ ইনশাআল্লাহ, দুটো ট্রিটই পাবেন।

আমিঃ এই যে নাভানের আব্বু।দেখি আমার ছোট ছেলেকে আমার কাছে একটু দেন।আপনি কি একা নিবেন নাকি?

🦋🦋🦋

এনাজ এগিয়ে এসে এনায়েতকে আমার কোলে তুলে দিলো।মাশাআল্লাহ, বাবুটা দেখতে অনেক কিউট।একটু গুলুমুলু দেখতে।অনেকটা ওর মায়ের মতো হলেও অনেক কিছু এনামের পেয়েছে। এনাজ, এনামকে সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দিতে অপরপাশে নিয়ে গেলো।নূর আপি আমার কাছ থেকে এনায়েতকে নিয়ে কোলে নিলো।আমি নীতুর সামনে গিয়ে বললাম।

আমিঃ তুমি কি আনইজি ফিল করছো নীতু? লজ্জা পেয়ো না। আমাকে বড় জা মনে না করে বড় বোন ভেবে সব বলে দিবে।

নীতুঃ আসলে ভাবী কখনও শাড়ি পরিনি তো।তাই কিরকম জানি লাগছে।মনে হচ্ছে এদিক দিয়ে খুলে যাচ্ছে, ঐদিক দিয়ে আঁচল সরে যাচ্ছে। ছোট থেকে অস্ট্রেলিয়ায় বড় হওয়ায় টপস,প্যান্ট,কুর্তি এসবে অভস্ত্য হয়ে গেছি।শাড়ি শুধু বিয়ের দিন পরেছিলাম।

আমিঃ অসুবিধা যখন হবে তাহলে পরলে কেন? যেই পোশাকে কম্ফোর্ট ফিল করবে সেটা পরবে।দেখো না আমি তাই গাউন পরে এসেছি।

নীতুঃ আসলে বাংলাদেশে এসেছি কে কি ভাবে ঐসব পরা দেখলে।তাই শাড়ি পরে এসেছি।ফ্লাইট থেকে নেমে সোজা এখানে চলে এসেছি। যার কারণে চেঞ্জ করার সময়ও পাইনি।

আমিঃ তুমি যদি চাও আমি ড্রেসের ব্যবস্থা করে দেই।

নীতুঃ না না ভাবী।তার কোন দরকার নেই। এখন থেকে কোথাও গেলে শাড়িই পরবো।তাই আগের থেকে অভ্যাস করে নেই।

আমি,নীতু ও নূর আপি একপাশে দাঁড়িয়ে রইলাম।এনাজ এসে নাভানকে আমার কাছে দিয়ে গেলো।এনায়েতকে দেখে নাভান এগিয়ে গিয়ে পুটুর পুটুর করে নিচুস্বরে কথা বলতে লাগলো।তখুনি জুলেখা আন্টি ও মুরাদ আঙ্কেল পার্টিতে এসে উপস্থিত হলো।কোন দিকে না তাকিয়ে আমার কাছে চলে এলো।কুশলাদি জিজ্ঞেস করে নাভানকে কোলে তুলে নিলো।দুজন তো পাগল হয়ে গেছে নাভানকে দেখে। উনারা যেমন করে আদর করছিলো নাভানকে ঠিক যেনো নাভানের আপন দাদা-দাদি। আমি তাদের সাথে নূর আপি ও নীতুর পরিচয় করিয়ে দিলাম।

তায়াংঃ এনাজ আঙ্কেল-আন্টি তো চলে আসছে।এবার পার্টি শুরু কর।

এনাজঃ হ্যাঁ করছি।আরিয়ান কোথায়?

আরিয়ানঃ এই তো ভাইয়া আমি এখানে।

এনাজঃ এনাউন্সমেন্টের স্পিকার কোথায়?

তায়াংঃ আমি সব ব্যবস্থা করেছি।তুই স্টেজে ওঠ।

এনাজ সামনের ছোট স্টেজে উঠে গেল।হাতে মাইক তুলে নিয়ে চেক করলো।ছোট স্টেজের পুরোটা হার্ট সেইপের লাল বেলুন দিয়ে সাজানো।নিচের ফ্লোরেও বেলুন ছড়ানো-ছিটানো।হুট করে এনাজের পায়ের সাথে বেজে একটা বেলুন ফেটে গেল।এনাজ ভয় পেয়ে চমকে উঠলো। যেটা দেখে আমি হো হো করে হেসে উঠলাম।পুরো পার্টি শান্ত দেখে আমি সবার দিকে তাকিয়ে দেখতে পেলাম সবাই আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আমি পেলাম লজ্জা। নূর আপির পেছনে গিয়ে লুকালাম।আড়াল থেকে দেখলাম এনাজ মুখ টিপে হাসছে।তায়াং ভাইয়াও মাইক হাতে স্টেজে উঠে গেল। মাইকে কয়েকবার হাত দিয়ে বারি দিয়ে এনাজ সাউন্ড ঠিক করে নিলো।তারপর বলতে শুরু করলো।

এনাজঃ গুড ইভিনিং এভরিওয়ান।আজ আপনাদের সাথে আমি অনেকগুলো আনন্দ শেয়ার করার জন্য এই পার্টির আয়োজন করেছি।গত পরশু আমরা বিশাল বড় একটা ডিল পাস করেছি। তাছাড়া কিছুদিন আগে আমাদের শেয়ার পাস হলো।মূলত এই দুটো কারণে আমরা পার্টির আয়োজন করিনি।আরো কিছু আছে। সেটা হলো আগামী মাসের ৭ তারিখে আমাদের কোম্পানির আরেক ওনার আরিয়ান আজওয়ারের বিয়ের ডেট ফিক্স করা হয়েছে। সাথে কিন্তু আরেকটা জুটির বিয়ে হবে।

আরেক জুটির কথা শুনে আমরা একে অপরের দিকে তাকাতে লাগলাম।কেউ বুঝতে পারছি না আরেক জুটি কে হতে পারে?

আমিঃ আন্টি, আরেক জুটির বিয়ে মানে? কার কথা বলছে আপনাদের ছেলে?

জুলেখাঃ আমিও তো বুঝতে পারছি না।

মুরাদঃ ধৈর্য্য ধরো বউমা।এখুনি তাদের নাম এনাউন্সমেন্ট ঘোষণা করা হবে।

জুলেখাঃ এই তোমরা বাপ-বেটা মিলে আবার কি ফন্দি করেছো বলো তো? আমাদের তো কোনকিছু জানানোর প্রয়োজনই মনে করো না।

মুরাদঃ মাথা ঠান্ডা করো জুলেখা। দেখো তোমার ছেলে কার নাম ঘোষণা করে।

এনাজঃ সবাই একটু শান্ত হোন।আমাকে তাদের নামটা বলতে দিন।আগামী ৭ তারিখে আরিয়ান ও এরিন ছাড়া যাদের বিয়ে হবে তারা হলো……..

এতটুকু বলে আবার থামলো এনাজ। সবাই উৎসুক চোখে ওর দিকে তাকিয়ে আছে।সেটা দেখে তার মনে নিশ্চয়ই দুষ্টু বুদ্ধি খুলে গেছে। তাই সে নাম দুটো বলতে এত সময় নিচ্ছে। মুসকান আমার পাশে দাঁড়িয়ে আমার হাতটা শক্ত করে ধরে মিনমিন সুরে বললো।

মুসকানঃ ও বড় ভাবী, বাবা আর ভাইয়রা কি আবার আমার বিয়ে ঠিক করে ফেললো নাকি।তাদের হাব-ভাব তো আমার ভালো ঠেকছে না।যদি অন্য কারো সাথে আমার বিয়ে ঠিক করে তাহলে কিন্তু আমি পিংক কালারের বিষ খেয়ে নিজেকে তিলে তিলে শেষ করে দিবো।

আমিঃ আরে টেনশন নিও না।তেমন কিছুই হবে না। আমি আছি তো তোমার সাথে। সবকিছু সামলে নিবো।

এনাজঃ আরেকজন হলো আমাদের আদরের ছোট বোন মুসকান।আগামী ৭ তারিখে আমার দুই ভাই-বোনের বিয়ে একসাথে ফিক্সড করা হয়েছে।

🦋🦋🦋

এনাজের কথা শুনে মুসকান কান্না করেই দিলো।আমি মুসকানকে সান্ত্বনা দিতে লাগলাম।আদরের দিকে তাকিয়ে দেখলাম ওর চোখ টলমল করছে।চোখ মুছে আদর অন্য দিকে চলে যেতে নিলেই এনাজের বাকি কথা শুনে আদরসহ সবাই টাসকি খেয়ে গেলো।

এনাজঃ আরে আরে অনেকে এত আপসেট হচ্ছো কেন? আমার বোনের হবু বরের নামটা শুনবে না।আমার বোনের হবু বরের নাম হলো আদর।

আদরের নাম শুনে সবাই আরেকদফা অবাক।মুসকান খুশিতে আমাকে জড়িয়ে ধরলো।আদর অবিশ্বাস্য চোখে এনাজের দিকে তাকালো। এনাজ চোখ দিয়ে ওকে আস্বস্ত করতেই আদর দৌড়ে স্টেজে উঠে এনাজকে জড়িয়ে ধরলো।

মুসকানঃ ধন্যবাদ ভাবী।অনেক অনেক ধন্যবাদ। আজকে আমি অনেক খুশি।তুমি নিশ্চয়ই ভাইয়াকে রাজী করিয়েছো।তার জন্য এত্তগুলা ভালোবাসা।

আমিঃ আমি কিছু বলিনি মুসকান।আমার মনে হয় তোমার ভাই আগের থেকেই জানতো।সেই তোমার বাবাকে ও আরিয়ানকে রাজী করিয়েছে। তারা তিনজন প্ল্যান করে এতকিছু করলো।

মুরাদঃ একদম ঠিক ধরেছো বউমা।এমনটাই হয়েছে।

জুলেখাঃ আমাকে তো একটু বলতে পারতে।

মুরাদঃ তোমাকে বললে তো তুমি আবার মেয়েকে বলে দিতে।তাহলে কি আর মুসকান এতবড় সারপ্রাইজ পেতো।

জুলেখা আন্টি মুখ ঝামটা দিলো।মুসকান আমাকে ছেড়ে ওর বাবা-মাকে জড়িয়ে ধরলো।

তায়াংঃ আমি– আরিয়ান,এরিন, মুসকান, আদরকে স্টেজে আসার জন্য অনুরোধ জানাচ্ছি। ওহ্ আদর তো এখানেই আছে। বাকি তিনজন চলে আসুন।আপনাদের আংটি বদল হবে এখন।ভয় পাবেন না। যারা ভাবছেন আপনাদের ফ্যামেলীর কেউ নেই। তারা ভালো করে একটু খেয়াল করুন।ফ্যামেলীর লোক খুজে পেয়ে যাবেন।

আমি আশেপাশে তাকিয়ে এরিনের বাবা-মা কে পেয়ে গেলাম।জুলেখা আন্টি ও মুরাদ আঙ্কেল এর মধ্য একজন বয়স্ক মহিলাকে দেখে সামনে এগিয়ে গেলেন।পরে জানলাম উনি আদরের মা।একটু অসুস্থ। জুলেখা আন্টি তাকে ধরে চেয়ারে বসিয়ে দিলেন।একে একে সবাই স্টেজে উঠে পরলেন।যেই মুহুর্তে দুই কাপল আংটি বদল করবে সেই সময় এনাজ সবাইকে থামিয়ে দিলো।

এনাজঃ এক মিনিট। সবাই অপেক্ষা করুন।আমি স্টেজে আরো দুটো কাপল ডাকবো।তারাও চলে আসুন।

তায়াংঃ আর কে বাকি আছে এনাজ?

এনাজঃ বাকি তো অবশ্যই আছে। নূর আপি চলে আসো।সাথে রোশান দেওয়ান আপনার হবু বউকে নিয়ে স্টেজে চলে আসুন।

রোশানের কথা শুনে আমি এদিক সেদিক তাকালাম।এতক্ষণের ভেজালে আমার মাথা থেকে রোশান ও জারার কথাটা একদম মাথা থেকে বের হয়ে গিয়েছিলো।তায়াং ভাইয়া স্টেজ থেকে নেমে এসে নূর আপির দিকে হাতটা বাড়িয়ে দিলো।নূর আপি লাজুক মুখে হাতটা ধরলো।আরেক হাতে গাউন ধরে স্টেজে উঠে গেল। রোশান আমার সামনে এগিয়ে এলো।আমি ভয়ে কিছুটা দূরে সরে গেলাম।এনাজ আংটি আনতে ভেতরের দিকে গেছে। রোশান আমার সামনে এসে লো ভয়েজে বলল।

রোশানঃ আবার যদি তোমাকে তুলে নিয়ে বিয়ে করতে চাই তাহলে কি করবে পাখি?

আমিঃ মানে, আপনি কি বুঝাতে চাইছেন?

রোশানঃ সেবার তো ছেলে নিয়ে পালিয়েছিলে বলে অল্পর জন্য আমার বউ হতে পারলে না।এবার যদি এমনটা হয়।তাহলে কি করবে?(ভ্রু নাচিয়ে)

আমিঃ তার মানে আপনি ছিলেন সেই লোকটা।যে আমাকে তুলে নিয়ে গিয়েছিলো বিয়ে করার জন্য।
(অবাক হয়ে)

রোশানঃ ইয়েস পাখি।আমি ছাড়া কি অন্য কারো সাহস আছে নাকি।

আমিঃ এই খবর যদি এনাজ জানে তাহলে আপনার অবস্থা কি হবে জানেন তো?

রোশানঃ ঐগুলো পাস্ট ছিলো।তা নিয়ে মাতামাতি করার কিছু নেই। সেগুলো ভুলে গেলে তোমারও মঙ্গল সাথে আমারও।তবে তুমি যদি এনাজকে এই বিষয়ে বলো তাহলে আমি সত্যি তোমাকে আবার তুলে নিয়ে যাবো।(শয়তানি হাসি দিয়ে)

রোশানের কথা শুনে আমি ভয় পেয়ে গেলাম।আমার ভয়ার্ত মুখটা দেখে রোশান ফিক করে হেসে উঠলো।

রোশানঃ আমি মজা করছি।তুমি সবকিছু এতো সিরায়াসলি নেও কেন? আমি জারাকে সত্যি বিয়ে করবো।আর তোমার জীবন থেকে সরে যাবো।তাই ভয় পেয়ো না। তুমি এত ভয় পাও বলে তোমাকে ভয় দেখাতে আমার এতো ভালো লাগে।

আমাদের কথার মধ্যে জারা চলে এলো।ততক্ষণে এনাজও স্টেজে চলে এসেছে। জারা রোশানকে জিজ্ঞেস করলো।

জারাঃ কি ফুসুরফাসুর করছো তুমি?

রোশানঃ কিছু না বেবি। চলো।

🦋🦋🦋

রোশান নিজের হাতটা এগিয়ে দিতেই জারা রোশানের
বাহু ধরে স্টেজে উঠলো।সবাই যখন আংটি বদল করবে তখন তায়াং ভাইয়া আবার থামিয়ে দিলো।

তায়াংঃ একটু ওয়েট করো সবাই। আমরা চার কাপল না হয় সামনে বিয়ে করবো তার জন্য আংটি বদল করছি।কিন্তু বিবাহিত দুই কাপল কেন বাদ যাবে।এনাম,নিতু,নোভা চলে আয় তোরাও।

এনাজঃ আমাদেরটা আবার কেন? আমাদের তো বিয়ে হয়েই গেছে। দুই ভাইয়ের দুই ছেলেও আছে।

তায়াংঃ চুপ কর তুই। আজ ছয় কাপল নতুন করে ভালোবাসার শপথ নিবো।সবাই চলে এসো।

এনাম এসে নীতুর হাত ধরে স্টেজে নিয়ে গেলো।নীতুর ছেলেকে জুলেখা আন্টি কোলে তুলে নিলেন।আর নাভানের হাত ধরে পাশের চেয়ারে বসিয়ে দিলো।এনাজ ধীর পায়ে স্টেজ থেকে নেমে আমার সামনে হাঁটু গেড়ে বসে এক হাত বাড়িয়ে দিলো।

এনাজঃ আমার হাতটা আবার নতুন করে ধরবে বাটারফ্লাই। কথা দিচ্ছি এবার কিছুতেই ছাড়বো না। যত বাঁধা আসুক, যত ঝড় আসুক শক্ত করে তোমার হাতটা ধরে রাখবো।তোমার হাত ছেড়ে দিলে একটা পুতুল বেবী পাবো কোথা থেকে? একটা পুতুল বেবীর জন্য হলেও তোমার হাতটা সারাজীবন ধরে রাখবো।

আমি এনাজকে চোখ রাঙিয়ে লজ্জায় মুখ ঢেকে নিলাম।তারপর ওর হাতের ওপর হাত রাখলাম।এনাজ এক ঝাটকায় সবার সামনে আমায় কোলে তুলে নিলো।সাথে সাথে করতালি ও সিটি বাজানো শুরু করলো সবাই। আমি লজ্জায় এনাজের বুকের সাথে মিশে রইলাম।স্টেজের ওপর উঠে আমাকে নামিয়ে দিলো।তারপর সবাই একসাথে আংটি বদল করে নিলাম।এনাজ হাঁটু মুড়ে বসে আমার বাম হাতের অনামিকায় আংটি পরিয়ে দিলো।তারপর সেই হাতে আলতো করে ঠোঁট ছোঁয়ালো। তখুনি পেছন থেকে রোশান বলে উঠলো।

রোশানঃ এনাজ সাহেব আপনি তো চুমু দিলেন।এবার কি আমি একটা দিবো?

বক্সে মৃদু শব্দে গান বাজছে বলে রোশানের কথাটা শুধু আমরাই শুনতে পেরেছি। যেহেতু আমাদের পরেই রোশান,জারা দাঁড়িয়ে আছে,তাই কথাটা আমরা বাদে অন্য কেউ শুনেনি। এনাজ চোখ দুটো ছোট ছোট করে রোশানের দিকে রাগী লুকে তাকালো।রোশান ভয় পাওয়ার ভঙ্গি করে বললো।

রোশানঃ আরে রাগছেন কেন? যাস্ট কিডিং।

জারাঃ রোশান এসব কি?

রোশানঃ কিছু না বেবী।তুমি আমাকে আংটি পরিয়ে দেও।এত দেরী কেন করছো?

ছেলেরা সবাই যার যার হবু বউকে আংটি পরিয়ে দিলো।এবার মেয়েদের পালা।আমাদের সবাইকে একটা মেয়ে এসে আংটির বক্স দিয়ে গেলো।সেটা খুলে আংটি বের করে আমরা মেয়েরাও যার যার ভালোবাসার মানুষটাকে পরিয়ে দিলাম।পুরো ঘটনাটাই ক্যামেরাবন্দি করা হলো।এখন ছবি তোলার পালা।এনাজ আমার কানের কাছে মুখ এনে বললো।

এনাজঃ এই যে মিসেস এনাজ আহমেদ। অনেক তো আপনি করে বলেছেন। এখন থেকে কিন্তু তুমি করে বলতে হবে।

আমিঃ বয়েই গেছে আমার😏।আপনাকে আপনি করে বলতেই আমার ভালো লাগে।

এনাজঃ ভালো লাগলে হবে না। এখন থেকে অভ্যাস করতে হবে। আপনি শব্দটা আমার কাছে পর পর লাগে।প্লিজ বাটারফ্লাই এখন থেকে তুমি করে বলো।আমার নাভানের আম্মু, প্লিজ এই কথাটা রেখো।

আমিঃ ওকে নাভানের আব্বু চেষ্টা করবো।

এনাজঃ চেষ্টা নয় পারতেই হবে।

আমিঃ ওকে এনাজ সাহেব।আপনি যা বলবেন তাই হবে।

এনাজঃ আবার আপনি😤।

আমিঃ ওহ সরি।তুমি যা বলবে তাই হবে।

এনাজঃ এই তো আমার বউটা।

সবাই একেক পোজ নিয়ে ছবি তুলছে।আমাদের ছবি তুলতে ক্যামেরা ম্যান আমাদের দিকে আসতেই এনাজ দ্রুত পায়ে স্টেজ থেকে নেমে গেল।তারপর নাভানকে কোলে তুলে স্টেজে চলে এলো।

এনাজঃ আমাদের একমাত্র ছেলেকে ছাড়া আমরা কি ছবি তুলতে পারি বলো? ও তো আমাদেরই ভালোবাসার অংশ।

আমি মুচকি হাসলাম।এনাজ নাভানের দুই গালে চুমু খেলো।তা দেখে নাভান তার বাবার গলা ধরে মাথা সামনে এনে গালে চুমু খেলো।

এনাজঃ এবার তোমার আম্মুকে দেও।

নাভানঃ আত্তা(আচ্ছা)।

আমি নাভানের দুই গালে হাত রেখে কপালে গাঢ় করে একটা চুমু দিলাম।তারপর এনাজের পাশেই দাঁড়িয়ে রইলাম।এনাজের কথা শুনে নাভান ওর বাবার কোল থেকে আমার গলা জড়িয়ে ধরে আমার গালটাকে সামনে এনে গালে টাইট করে একটা চুমু দিলো।এই সুন্দর মুহুর্তটাকে ক্যামেরাবন্দি করতে ভুললো না ক্যামেরাম্যান।

#চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে