#প্রজাপতির_রং🦋
#Part_36
#Writer_NOVA
বর্তমানে আমি, এনাজ, নাভান এই তিনজন একটা কফি হাউসে বসে আছি।সাথে আদর,মুসকানও আছে। ওরা অন্য ফ্লোরে আছে। এনাজ ওদেরকে কল করে এখানে চলে আসতে বলেছে। আগামীকাল পার্টির জন্য শপিংয়ে এসেছি। আমি আসতে চাইনি এনাজ জোর করে নিয়ে এসেছে। নাভান ওর বাবার কোলে চুপটি করে বসে আছে। ঘন্টাখানিক শপিংমলে ঘুরে সবাই হাঁপিয়ে উঠেছি।আমার কোন সমস্যা হয়নি।সব শপিং ব্যাগ ও ছেলেকে এনাজ সামলিয়েছে।এটা তার শাস্তি। আমাকে জোর করে কেন এনেছে। এবার বুঝুক মজা।
এনাজঃ খাচ্ছো না কেন?
আমিঃ ওরা আসছে না কেন?
এনাজঃ ওরা এখুনি চলে আসবে।
আমিঃ ওদের দুজনকে আপনি একা ছাড়লেন কেন? আমার কিন্তু কিছু একটা গোলমাল মনে হচ্ছে।আমার থেকে কি আপনি কিছু লুকাচ্ছেন?
এনাজঃ কোথায়? না তো।তোমার থেকে কি লুকাবো?
আমি এনাজের দিকে চোখ দুটো ছোট ছোট করে তাকালাম।তবে কিছু বললাম না।আমার কাছে আদর ও মুসকানকে একটু সন্দেহ হচ্ছে। মনে হচ্ছে ওদের মাঝে রিলেশন আছে। কিন্তু আন্দাজে তো ঢিল মারা যায় না।তাই আমি চুপ হয়ে গেলাম।
আমিঃ কি হয়েছে আমার নাভান বাবার? চুপ করে আছো যে? শরীর খারাপ লাগছে।
নাভান আমার কথার কোন উত্তর দিলো না। চুপ করে ওর বাবার বুকে মাথা রাখলো।আমার কিছুটা খোটকা লাগলো।ব্যস্ত হয়ে ওর কপালে হাত রাখলাম।
এনাজঃ কি হয়েছে?
আমিঃ ওর শরীরটা তো জ্বর জ্বর মনে হচ্ছে। কপালটা হালকা গরম।
এনাজঃ ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাবো?
আমিঃ ডাক্তারের কাছে নিতে হবে না। বাসায় জ্বরের ঔষধ আছে। বাসায় গিয়ে খাইয়ে দিবো।এর জন্য আমার মানিক চুপ করে আছে। শরীর তো ভালো লাগছে না। সেটা তো আমাকে বলবে।
এনাজঃ ঔষধের নাম বলো।আমি নিচের ফার্মেসী থেকে নিয়ে আসি।বাসায় যেতে দেরী আছে।
আমিঃ এখন আনবেন? না মানে আপনি আবার কষ্ট করে নিচে যাবেন।
এনাজঃ এখন আনবো না মানে।তুমি পাগল হয়ে গেছো।বাসায় যেতে সে কত দেরী।এতক্ষণ আমার ছেলে অসুস্থ থাকবে।আমার কষ্টের থেকে আমার ছেলের কষ্ট আমার কাছে বেশি। তুমি আমাকে নাম বলো আমি নিয়ে আসি।
আমি আর কিছু বললাম না।চুপচাপ ঔষধের নাম বলে দিলাম।এনাজ নাভানকে কোলে নিয়ে নিচের ফ্লোরে যেতে লাগলো।আমি ততক্ষণে কফির মগে চুমুক দিলাম।একা বসে থাকতে থাকতে বোর হচ্ছিলাম।কফি শেষ করে মগটা রেখে উঠে গেলাম।
মুসকান রেগে দ্রুত পায়ে হাঁটছে। তার পেছন পেছন একগাদা শপিং ব্যাগ হাতে নিয়ে দৌড়ে দৌড়ে আসছে আদর।মুসকানের সামনে এসে দুই হাত মেলে মুখটাকে ইনোসেন্ট বানিয়ে আদর বললো।
আদরঃ প্লিজ মুসু আমাকে একটু সময় দেও।আমি এখন সবাইকে আমাদের কথা কি করে বলি? আমাকে তো তোমার উপযুক্ত বানাতে হবে।তারপর তোমাদের বাসায় প্রস্তাব দিবো।
মুসকানঃ আমি কোন কথা শুনছি না। তুমি এখন যেই অবস্থায় আছো সেই অবস্থায় তোমাকে মানতে আমার কোন সমস্যা নেই। তাহলে তোমার এতো কিসের সমস্যা?
আদরঃ তুমি বিষয়টা বুঝতেই চাইছো না।আমি মিডেল ক্লাশ ফ্যামেলীর ছেলে।আমি যদি তোমার উপযুক্ত না হয় তাহলে তোমার ফ্যামেলী আমাদের বিয়ে কেন দিবে?
মুসকানঃ আমি তোমাকে ভালোবাসি। তুমি আমাকে ভালোবাসো।এর থেকে বড় আর কি হতে পারে?
আমিঃ কি হচ্ছে এখানে?
আমার কন্ঠ শুনে আদর,মুসকান দুজনেই ঘাবড়ে গেল।মুসকান ঢোক গিলে আমতাআমতা করে বললো।
মুসকানঃ আরে ভাবী কখন এলে?
আমিঃ এসেছি অনেক আগে।তাকিয়ে তাকিয়ে তোমাদের কাহিনি দেখছিলাম।এখন আমাকে কি বলবে হচ্ছেটা কি?
আমার গম্ভীর কণ্ঠের কথা শুনে দুজন চমকে উঠলো। উপর দিয়ে গম্ভীর থাকলেও ভেতরে আমার পেট ফেটে হাসি আসছে।এতক্ষণ দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ওদের দেখছিলাম।এবার আমার সন্দেহ পুরো সত্যি হলো।আমি ওদের সব কথা শুনেছি। এরা একে অপরকে ভীষণ ভালোবাসে।আদর ভয়ে ভয়ে বললো।
আদরঃ তেমন কিছু না ভাবী।
আমিঃ কেমন কিছু তাহলে? তোমরা এতো ঘামছো কেন? মানুষ তো তখুনী ঘামে যখন সে মিথ্যে বলে নয়তো কিছু লুকাতে চায়।
মুসকানঃ গরম লাগছে তো ভাবী তাই।
আমিঃ ওহ আচ্ছা। তোমরা কি সোজাসাপ্টাভাবে আমাকে বলবে। নাকি অন্য ব্যবস্থা নিবো।আমাকে ভালোয় ভালোয় বলে দিলে তোমাদের সাহায্যও করতে পারি।নয়তো প্যাচ লাগিয়ে দিবো।
🦋🦋🦋
আমার কথা শুনে আদর,মুসকান দুজনে একসাথে চমকে উঠলো। আমি এবার হাসি আটকে রাখতে পারলাম না।ফিক করে হেসে উঠলাম।এতে ওরা দুজন আমার দিকে একদফা অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো।
আমিঃ আরে ভয় পেয়ো না। আমি বাঘ বা ভাল্লুক কেউ নই।আমি মজা করছিলাম।
মুসকান বুকে ফুঁ দিয়ে আমার দিকে তাকালো। তারপর হালকা হেসে শাসিয়ে বললো।
মুসকানঃ ভাবী!!! তুমি তো ভয় পাইয়ে দিয়েছিলে।
আদরঃ আমার তো মনে হচ্ছিলো কেউ আমার বুকের হৃৎপিণ্ডটার বরাবরি ছুড়ি চালিয়ে দিয়েছে।এখন জান ফিরে আসলো।
আমিঃ ঘটনা কি? কবের থেকে চলে এসব🤨?(ভ্রু নাচিয়ে)
মুসকানঃ আসলে ভাবী আমরা একে অপরকে অনেক ভালোবাসি। কিন্তু বাসায় ভয়ে বলতে পারছি না। এদিকে বাবা-মা আমার বিয়ের চিন্তা ভাবনা করছে।আমাদের রিলেশন এক বছর ধরে। আদর যখন প্রথম জয়েন করছে তখন থেকে।কিন্তু এখন ভয় করছে। যদি বাবা-মা, ভাইয়ারা আমাদের সম্পর্ক মেনে না নেয় তাহলে আমরা শেষ।
আমিঃ ওহ,এই ব্যাপার।আমিও এটাই সন্দেহ করেছিলাম।
হঠাৎ মুসকান আমার দুই হাত ওর দুই হাতের মুঠোয় নিয়ে আমাকে অনুরোধের সুরে বললো।
মুসকানঃ ভাবী, তুমিই পারবে আমাকে সাহায্য করতে।তুমি বড় ভাইয়াকে প্লিজ আমাদের জন্য রাজী করাও।তুমি ছাড়া অন্য কেউ বড় ভাইয়াকে রাজী করাতে পারবে না। আর বড় ভাইয়া বললে বাবা ঠিক রাজী হয়ে যাবে।ভাইয়ার কথা বাবা কখনোই ফেলে না।আর বাবা রাজী মানে সবাই রাজী।
আমিঃ আচ্ছা আমি চেষ্টা করবো।তোমরা ভয় পেয়ো না। দেখছি কি করা যায়।
আদরঃ Thanks ভাবী।
মুসকান হাত ছাড়িয়ে আমাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো।
মুসকানঃ এত্তগুলা Thanks। এর জন্য তো তুমি আমার কিউট ভাবী।
আমিঃ হয়েছে আর পটাতে হবে না। ঐদিকে চলো।তোমার ভাই আমাদের খুঁজবে।
আমরা তিনজন হাঁটতে লাগলাম। ওরা দুজন একসাথে হাঁটতে হাঁটতে সামনে এগিয়ে গেছে। আমি কিছুটা পিছিয়ে গেলাম। হঠাৎ মনে হলো আমাকে কেউ ফোলো করছে।সাথে একটা হালকা পারফিউমের ঘ্রাণ পেলাম।ওড়নাটা নাকের সামনে ধরতেই পারফিউমের ঘ্রাণটা তীব্র হলো।এনাজ আজ এই পারফিউম দিয়ে এসেছে। সে যখন আমাকে জড়িয়ে ধরেছিলো তখন হয়তো গায়ে লেগে গেছে। আমি জানি আমাকে কেউ ফোলো করছে না।মাঝে মাঝে আমার হ্যালুসিয়েশন হয়😵।যেমন হয়েছিল সেদিন রাতে(পর্ব-০৯)। সেদিন আমার সাথে কেউ ছিলো না।কিন্তু তারপরও মনে হচ্ছিলো কেউ আমাকে ওপর থেকে তীক্ষ্ম দৃষ্টিতে পর্যবেক্ষণ করে দেখছিলো।আর তার গায়ের ঘ্রাণ আমার বড্ড চেনা মনে হচ্ছিলো। আসলে সেখানে কেউ ছিলো না।মাঝে মাঝে আমার এরকম হ্যালুসিয়েশন হয়।
(কেউ বিশ্বাস করবেন কি না জানি না। মাঝে মাঝে আমারও এমন হ্যালুসিয়েশন হয়।আমার সাথে কেউ নেই কিন্তু তারপরও মনে হয় কেউ আছে,কেউ আমাকে ফোলো করছে। যার গায়ের ঘ্রাণ আমি পাচ্ছি। সেই বিষয়টা আমি গল্পে উল্লেখ করছি।সত্যি সেদিন গল্পের নোভার আশেপাশে কেউ ছিলো না। এটা আমার আরো আগে বুঝিয়ে দেওয়া উচিত ছিলো।কিন্তু আমি ভুলে গেছি। তার জন্য এক্সট্রিমলি সরি। এর জন্য সত্যি ক্ষমাপার্থী আমি।)
পিছনে পরে গিয়েছিলাম বলে দ্রুত পায়ে মুসকানের পাশে এসে দাড়ালাম। কফি হাউসে এসে বসে রইলাম।শপিংমলের থার্ড ফ্লোরের পূর্ব পাশের জায়গা জুড়ে বিশাল কফি হাউস। সেখানে যেতেই দেখতে পেলাম এনাজ নাভানকে নিজ হাতে ঔষধ খাইয়ে দিচ্ছে। এই দৃশ্যটা দেখে আমার চোখটা ছলছল করে উঠলো।ছোটবেলায় যখন ঔষধ খেতে না চাইতাম তখন আব্বুও আমাকে এভাবে খাইয়ে দিতো।আব্বুর কথা মনে হতেই চোখ দুটো থেকে আপনাআপনি পানি পরে গেলো।
আমি দ্রুত পানি মুছে নিলাম।
মুসকানঃ কি হয়েছে ভাবী? কাঁদছো কেন?
আমিঃ কোথায় না তো।চলো ভেতরে যাই।
ধীর পায়ে এনাজ যে টেবিলে বসেছে সেই টেবিলে বসে পরলাম।এনাজ আমাদের দিকে না তাকিয়ে বোতল খুলে পানি ঢেলে নিলো একটা খালি মগে।সেটা সাবধানে নাভানকে খাইয়ে দিলো।তারপর টিস্যু দিয়ে মুখ মুছিয়ে দিলো।আমি এক ধ্যানে তাকে দেখতে লাগলাম।মনে মনে বললাম।
আমিঃ এভাবে বাচ্চা সামলানো ও কেয়ার করার জন্য হলেও তোমাকে আমার চাই😌।(মনে মনে)
আদরঃ কোথায় গিয়েছিলেন স্যার?
এনাজঃ তোমরা কোথায় গিয়েছিলে তাই বলো? তোমাদের খুঁজতে খুজতে হয়রান হয়ে গেছি আমি।
মুসকানঃ আমরা এদিকটাই ছিলাম ভাইয়া।
এনাজঃ বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা নামতে চললো।এখনো শপিং শেষ হলো না।মেয়েদের নিয়ে এলে এই একটা জ্বালা।এদের শপিং শেষ হওয়ার নামও নেয় না।
আমিঃ আমরা কি আসতে চেয়েছিলাম।আপনিই তো জোর করে নিয়ে এলেন।এখন নিয়ে এসে খোঁটা দেওয়া হচ্ছে। করবো না শপিং। মুসকান চলো তো।(রাগ দেখিয়ে)
মুসকানঃ হুম চলো ভাবী।
আমি উঠতে নিলেই এনাজ হাত চেপে ধরে কিছুটা রাগী কন্ঠে বললো।
এনাজঃ সাহস থাকলে এখান থেকে এক পা নড়ে দেখো।তারপর দেখো আমি কি করি? চুপচাপ এখানে বসে থাকো।এসেছো আমার ইচ্ছায় যাবেও আমার ইচ্ছায়।এই মুসকান বস।তোকে কি আলাদা করে কিছু বলতে হবে।
মুসকানঃ না ভাইয়া।আমি বসে রইলাম।(ভয় পেয়ে)
মুসকানের কথা শুনে আদর মিটমিট করে হাসতে লাগলো।এতে মুসকান চোখ রাঙানি দিলো।তাতে আদর ভদ্র ছেলের মতো ঠোঁটে আঙুল দিয়ে বসে রইলো।বেশ কিছু সময় পর আমরা সেখান থেকে উঠে লেডিস ফ্যাশনে ঢুকে পরলাম।আমি ও মুসকান ড্রেস নেড়েচেড়ে দেখছি।আদর,এনাজ চুপ করে পাশের দুটো সিটে বসে আছে। নাভান এনাজের কোলে ঘুমিয়ে পরছে।
🦋🦋🦋
—- এই পিচ্চি মেয়ে। একটু এদিকে আসো তো।
এক ভদ্রমহিলার ডাক শুনে আমি ও মুসকান দুজনেই পেছনে ঘুরলাম।একটা মহিলা এই লেডিস ফ্যাশনে আসার পর থেকে আমাদেরকে ফোলো করছিলো।তার ডাক শুনে মুসকান জিজ্ঞেস করলো।
মুসকানঃ আমাদের কিছু বলছেন আন্টি।
—- তোমাকে নয়।তোমার পাশের ব্লু ড্রেস পরা পিচ্চি মেয়েকে বলছি।
আমি আহাম্মকের মতো মুসকানের দিকে তাকালাম।আমাকে কোন এঙ্গেলে পিচ্চি মেয়ে মনে হয়। বিয়ের আগেই আমাকে বিবাহিত মনে হতো।এখন তো একটা ছেলে আছে। ছেলে হওয়ার পর একটু গুলুমুলু হয়ে গেছি।আর উনি আমাকে পিচ্চি বলছে।আমার পরিচিত কেউ বললে এতক্ষণে সারা শপিংমল মাথায় তুলে ফেলতাম।কিন্তু অপরিচিত মানুষকে তো কিছু বলা যায় না। তাই চুপচাপ তার সামনে এসে দাঁড়ালাম।
আমিঃ কিছু বলবেন আন্টি?
—- আসলে আমার মেয়েটা তোমার মতোই।তাই তোমার মাপে কিছু ড্রেস কিনতাম।তুমি একটু দাঁড়াও আমি মাপ নিচ্ছি।
আমি হাসিমুখে তার সাথে দাঁড়িয়ে রইলাম।মিনিট দশ হয়ে গেলো সে ড্রেসই পছন্দ করতে পারছে না।বরং আমাকে এটা সেটা জিজ্ঞেস করছো।আমার পার্সোনাল প্রশ্ন করছে।আমার বাসা কোথায়?বাবা-মা কোথায় থাকে?আমরা কয় ভাই-বোন ইত্যাদি ইত্যাদি। আমি মনে মনে বেশ বিরক্ত হলেও হাসি মুখে কমবেশি উত্তর দিতে লাগলাম।আমাকে এভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে এনাজ এগিয়ে গেলো।
এনাজঃ কোন সমস্যা বাটারফ্লাই?
আমিঃ না। উনি উনার মেয়ের জন্য ড্রেস কিনবে।কিন্তু তার মেয়েকে সাথে আনেনি।আমার মতোই নাকি তার মেয়ের বডির সাইজ।তাই মাপ নিচ্ছেন।
—- এটা কে হয় তোমার?
আমিঃ আমার হাসবেন্ড।
—- তুমি বিবাহিত!!!! (অবাক চোখে)
আমিঃ জ্বি আন্টি।শুধু বিবাহিত নই।আমার একটা ছেলেও আছে। এই যে এটা আমার ছেলে।
আমার কথা শুনে বিস্মিত চোখে মহিলা তাকিয়ে রইলেন। তারপর যা বললেন তাতে আমি অবাক হয়ে গেলাম।
—- আসলে মা আমি মনে করেছি তুমি অবিবাহিত। তোমাকে দেখতে পিচ্চি মনে হচ্ছিলো।আমার বড় ছেলেকে বিয়ে করাবো।ওর জন্য অনেক দিন ধরে মেয়ে খুজছি।তোমাকে দেখেই আমার ছেলের জন্য ভীষণ পছন্দ হয়েছিলো।তাই তোমার সাথে কথা বলার জন্য মেয়ের ড্রেসের কথা বলছি।এখন তো দেখছি তুমি বিবাহিত। সাথে বাচ্চাও আছে। আমাকে মাফ করে দিও।আমি আসলে বুঝতে পারিনি।(এনাজের দিকে তাকিয়ে) সরি বাবা।
এনাজ আমার দিকে তাকিয়ে রাগে দাঁতে দাঁত চেপে মহিলাকে বললো।
এনাজঃ ইট’স ওকে আন্টি।
মহিলা অন্য দিকে চলে গেল। তার ছেলের জন্য তো পছন্দ করেনি।আমাকে বিশাল বাঁশ খাইয়ে দিয়ে গেল।আমার স্বামী মহাদোয় তো হেব্বি চটে গেছে। কিন্তু আমার কি দোষ? আমি কি মহিলাকে সেধে গিয়ে বলেছিলাম আমাকে আপনার ছেলের জন্য পছন্দ করুন।
এনাজঃ বোরখা কোথায় তোমার?
আমিঃ বাসায়।
এনাজঃ বোরখা কি আলমারিতে সাজিয়ে রাখার জন্য কিনছো।এখুনি চলো।তোমাকে আমি আরেকটা কিনে দিবো।যেটা তুমি এখুনি পরবে।আর কখনো বোরখা ছাড়া বাসা থেকে বের হলে পা ভেঙে হসপিটালে ভর্তি করে রাখবো।
আমিঃ আজব তো!!!
এনাজ সামনে এসে আরেকদফা রাগ ঝাড়ালো।এক হাত দিয়ে আমার ডান হাত ধরে রেগে বললো।
এনাজঃ হাতের চুড়ি,নাকের নাকফুল কোথায়? তোমার স্বামী কি এখনো মৃতই আছে।
আমিঃ হুট করে যদি চুড়ি,নাকফুল পরি তাহলে লোকে সন্দেহ করবে।তখন আবার আমার চরিত্রে দাগ লাগাতে উঠেপড়ে ব্যস্ত হয়ে যাবে। তাই পরিনি।
এনাজঃ লোকের কথার গুষ্টি কিলাই।আমাকে পুরো উদ্ধার করে ফেলছো। কে কি বললো তাতে কানে দিবে না।চলো আমার সাথে।
এনাজ রেগে আমার হাত ধরে টেনে নিয়ে যেতে লাগলো।পেছনে তাকিয়ে দেখি মুসকান মুখে হাত দিয়ে মিটমিট করে হাসছে।আর আদর অবাক চোখে আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে। হাত ধরে একটা বোরখার স্টোরে এনে সেখান থেকে কালো রঙের বোরখা কিনে দিলো।তারপর ধমকি-ধামকি দিয়ে সেটা পরালো।তারপর গোল্ড জুয়েলারির শপ থেকে চিকন দুগাছি চুড়ি কিনে নিজ হাতে আমায় পরিয়ে দিলো।তার পছন্দ মতো গোল্ড ও ডায়মন্ড পাথরের মিশ্রিত একটা নাকফুল কিনলো।সেটাও নিজ হাতে নাকে পরিয়ে দিলো।
আমি ইনোসেন্ট ফেস করে রেখেছি।সারা শপিংয়ে আমি আর এনাজের সাথে কোন কথা বলিনি।শপিং শেষ হলো মগরিবের আজানের পরপর।আমাকে ও নাভানকে বাসার সামনে নামিয়ে দিয়ে এনাজ চলে গেল। আমি পেছনে না তাকিয়ে নাভানকে কোলে নিয়ে গটগট করে ভেতরে ঢুকে পরলাম।কথা নেই এই বেডার সাথে হুহ😏!!!
#চলবে
#প্রজাপতির_রং🦋
#Part_37
#Writer_NOVA
পূর্ব দিগন্তে সূর্য মামা উঁকি দিয়েছে বহু আগে । উঠবে উঠবে করে শেষ পর্যন্ত সূর্য উঠে তার কিরণে সারা পৃথিবীকে আলোকিত করে ফেলেছে ।বারান্দায় দাঁড়িয়ে বাপ-বেটার জন্য অপেক্ষা করছি আমি। ঘন্টাখানিক হলো তারা একসাথে জগিং করতে বের হয়েছে। তায়াং ভাইয়ার সাথে মিনিট খানিক আগে কথা হলো।তারা নাকি তাদের গ্রামের বাড়ি যাচ্ছে। আজ তায়াং ভাইয়ার দাদীর প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী।তার জন্য তায়াং ভাইয়ার বাবা-চাচা ও ফুপিরা মিলে গ্রামের বাসায় মিলাদের আয়োজন করছে।তায়াং ভাইয়া অবশ্য বিকালে চলে আসবে।আজ সন্ধ্যায় এনাজ যে পার্টির আয়োজন করছে সেখানে তায়াং ভাইয়া না থাকলে তো এনাজ পুরো তুলকালাম কান্ড বাঁধিয়ে ফেলবে।তায়াং ভাইয়ার দাদীর কথা মনে হতেই চোখ দুটো টলমল করে উঠলো। উনি মানুষ হিসেবে অনেক ভালো ছিলেন।আমি যখন তায়াং ভাইয়াদের বাসায় থেকে পড়াশোনা করতাম তখন প্রায় তিনি গ্রাম থেকে ঢাকায় আসতেন।আমায় ও তন্বীকে কখনও আলাদা চোখে দেখেননি।তন্বী হলো তায়াং ভাইয়ার ছোট বোন।আমার থেকে এক বছরের ছোট তন্বী।আমার একটা মাত্র খালামণির একটা ছেলে ও একটা মেয়ে। তানভীর রহমান ওরফে তায়াং ও তন্বী রহমান।তন্বীর বিয়ে হয়ে গেছে বছর দুই আগে।ওর হাজবেন্ড বেসরকারি এক ব্যাংকের কর্মকর্তা।ওর এক বছরের একটা মেয়েও আছে। দাদীর কথা মনে হতেই আমার স্মৃতির পাতায় ঝলমল করে উঠলো একটা দিন।
ফ্লাশব্যাক………….❣️
আজ সারা বাড়ি একটা গোছানো পরিবেশ।হবেই তো। আজ যে তায়াং ভাইয়ার দাদী আসেছে গ্রাম থেকে।উনি বেশিরভাগ সময় গ্রামেই থাকেন তার ছোট ছেলের সাথে। ডাক্তার দেখাতে কিংবা বেড়াতে মাঝে মাঝে আসেন।উনি মানুষটা খুব ভালো।অন্য দশজনের মতো খিটখিটে মেজাজের নয়।খালামণিকে অনেক ভালোবাসেন।তায়াং ভাইয়া আর তন্বী তো দাদী বলতেই অজ্ঞান।আমাকেও অনেক আদর করেন তিনি।তন্বী কলেজে গেছে।আমার আজ যেতে ইচ্ছে করেনি।তাই বাড়িতে।দাদী সোফায় বসে পান সাজাচ্ছেন। আমি খালামণির সাথে টুকটাক কাজে সাহায্য করছি।তখুনি কলিংবেল বেজে উঠলো।এখন নিশ্চয়ই তায়াং বজ্জাত ছেমরায় আসছে।ও ছাড়া আর কে হবে।দাদী সোফা থেকে হাঁক ছারলো।
দাদীঃ বড় বউমা,দেখো কে এসেছে? নিশ্চয়ই আমার দাদুভাই হবে।কতক্ষণ ছেলেটা দরজার সামনে দাঁড়িয়ে থাকবে।জলদী খুলে দেও।আমি তো একা উঠতে পারবো না। জানোই তো বাতের ব্যাথা।উঠলে বসতে পারি না। বসলে উঠতে পারি না।
খালামণিঃ দিচ্ছি মা।আমার হাতে রক্ত লেগে আছে।মুরগী কাটছি।(আমার দিকে তাকিয়ে) নোভা,যা তো গিয়ে দরজাটা খুলে দিয়ে আয়।
আমিঃ যাচ্ছি খালামণি।
হাতের থেকে আলুর ঝুড়িটা রেখে ওড়নায় হাত মুছতে মুছতে দরজার সামনে গেলাম।সিটকিনি খুলে দিতেই দেখলাম,দরজার অপাশে তায়াং ভাইয়া হাতের আঙুলের ডোগায় বাইকের চাবি ঘুরাচ্ছে।এমন একটা ভাব যেনো কোন নবাবী কাজ সেরে নবাব পুত্তর এসেছে। সাথে মিস্টার আনাইজ্জা কলার দেখা পেলাম।এ লোকটা এখানে কি করছে?নিশ্চয়ই তায়াং ভাইয়ার মুখে শুনেছে বাসায় আজ ভালো-মন্দ রান্না হবে।ওমনি ছোচার মতো খেতে চলে এসেছে। একে নিয়ে আর পারি না বাপু।আসছে তো ভালো কথা।এখন তো বাটারফ্লাই, বাটারফ্লাই বলে কানের পর্দা ফাটিয়ে ফেলবে।মাঝে মাঝে এদের ওপর ভিষণ রাগ হয় আমার।কিন্তু রেগেও লাভ নেই। এই দুটো হলো তিতা বেহায়া।
তায়াংঃ কি রে দরজা থেকে সরবি?নাকি এভাবেই দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে শো অফ করবি?আমরা তোকে দেখতে ইচ্ছুক নয়।সামনে থেকে সর।ভেতরে ঢুকতে দে।মুখটাকে এমন পেচার মতো করে রেখেছিস কেন?
আমিঃ চোখের মাথা কি খেয়েছিস?আমি কখন মুখ পেচার মতো করে রাখলাম?তোরা ভেতরে ঢুকে যা।মানা করছে কে?
তায়াংঃ তোর মতো একটা হাতি পুরো দরজা দখল করে রাখলে ঢুকবো কোথা দিয়ে?
আমিঃ নিজেদের দিকে একটু তাকা।তাহলে দেখতে পারবি কে হাতি?
তায়াংঃ বকবক না করে সর তো।আমার ডার্লিংয়ের সাথে দেখা করতে দে।তোর জন্য ৩ মিনিট ২৭ সেকেন্ড দেরী হয়ে গেলো।আমার ডার্লিং কোথায়?
আমিঃ এ্যহ আইছে।সারা সকাল খবর ছিলো না। আর এখন আসছে ডার্লিং। দাদীকে তোর সাথে কথা বলতে মানা করবো।
তায়াংঃ যা করার কর।আমার ডার্লিং আমার সাথে কথা না বলে থাকতেই পারবে না।
কথাগুলো বলে হাতের কনুই দিয়ে আমার কাঁধে ধাক্কা দিয়ে ভেতরে ঢুকে গেল তায়াং ভাইয়া।আমি হালকা একটু ব্যাথা পেয়েছি। সেদিকে ঐ বেডার খেয়াল নেই। সে নিজের মতো ভেতরে ঢুকে গেল। আমি হাত দিয়ে ব্যাথার স্থানে ডলতে ডলতে সামনে তাকালাম। এতক্ষণ আমাদের দুই ভাই-বোনের মাঝে এনাজ একটা কথাও বলেনি।চুপচাপ শুনছে আর মিটমিট করে হাসছে।সেও তায়াং ভাইয়ার পিছু পিছু চলে গেল।এতে আমি বেশ অবাক হলাম।সূর্য আজ কোনদিক দিয়ে উঠছে।মিস্টার আনাইজ্জা কলা আমাকে কিছুই বললো না। অন্যদিন হলে তো এই পাঁচ মিনিটে দশবার তার মুখে বাটারফ্লাই শব্দটা শুনে ফেলতাম।ধূর,যা খুশি তা করুক। আমার কি?মুখ ভেংচি মেরে রেগে দরজা আটকিয়ে ওদের সামনে গেলাম।সোফার কাছে যেতেই তায়াং ভাইয়া জোরে চিৎকার করে বললো।
তায়াংঃ ও সুন্দরী, কখন এলে?নতুন কোন প্রেমিক পাইছো নাকি সুন্দরী? এসে আমার খোঁজও নেও না।
কথাগুলো বলতে বলতে দাদীকে জড়িয়ে ধরলো।দাদী তায়াং ভাইয়ার কান টেনে বললো।
দাদীঃ আমি নতুন প্রেমিক পাইছি নাকি তুই নতুন প্রেমিকা পাইছিস দাদাুভাই?সেজন্য তো এই বুড়ির খবর নেওয়ার প্রয়োজনও মনে করিস না।
তায়াংঃ আহ ছাড়ো।লাগছে তো।
দাদী ভাইয়ার কান ছেড়ে দিলো।কান ছেড়ে দিতেই ভাইয়া দাদীর কপালে একটা চুমু খেয়ে বললো।
তায়াংঃ নাগো ডার্লিং।তোমার মতো আজও কাউকে পেলাম না।তাই তো প্রেম করতে পারিনি।সুন্দরী তুমি কি যে বলো না।
আমিঃ ভাইয়া তুই কি বললি? আবার বল, আবার বল।তুই আজও কাউকে পাসনি🤨?
তায়াংঃ তুই এখানে কি করিস?যা কাজে যা।তুই হলি কুটনি বুড়ি। নির্ঘাত এখন আমার সাথে আমার সুন্দরীর ব্রেকআপ করার ধান্দায় আছিস।যা ভাগ।
আমিঃ সব শোধ তুলে রাখলাম।সময় হলে সুদসহ ফেরত দিবো।মনে রাখিস😏।
তায়াংঃ যা যা ভাগ।
🦋🦋🦋
এনাজ বহু বছর থেকেই এই বাসায় আসা-যাওয়া করে।তায়াং ভাইয়ার জানে জিগার দোস্ত বলে কথা।সেই সুবাদে বহু আগের থেকেই দাদী এনাজকে চিনে।তাছাড়া দাদীর সাথে এনাজের বেশ ভাবও আছে।আমি এগুলো সকালে খালামণির থেকে জেনেছি। কাজ করতে করতে এটা ওটা প্রশ্ন করতে করতে এনাজের কথা উঠেছিলো।তখন খালামণি বলেছে।
এনাজঃ আসসালামু আলাইকুম। কেমন আছো ডার্লিং?এক নাতি পেয়ে আমাকে দেখছি ভুলেই
গেছো😒? হুম ভালো ভালো।(মুখ গোমড়া করে)
দাদীঃ আরে আমার এনাজ ডার্লিং যে।তা কবে ফিরলে বিদেশ থেকে? তোমাকে কি আমি ভুলে যেতে পারি?আমার কত হ্যান্ডস্যাম বয়ফ্রেন্ডটা,একে ভুলে গিয়ে নিজে ঠকবো নাকি।
এনাজঃ হয়েছে হয়েছে আর বলতে হবে না।
আমিঃ দাদী তুমি ভালোই পাম মারতে পারো।জিও দাদী জিও।তোমার পাম মারার তারিফ করতে হয়।তবে চোখ দুটো আবার নষ্ট করো না। জঙ্গলের আনাইজ্জা কলাকে তুমি হ্যান্ডসাম বলছো।কি পরিমাণ তেল যে তুমি মাখতে পারো তা তুমি নিজেও জানো না। (মনে মনে)
মনে মনে কথা বলে নিজেই মুখ টিপে হাসতে লাগলাম।এনাজ সামনে গিয়ে দাদীকে জড়িয়ে ধরলো। তায়াং ভাইয়া তো সে কখন টুপ করে দাদীর কোলে মাথা রেখে লম্বা হয়ে সোফায় শুয়ে পরেছে।দাদী ওর মাথায় খুব যত্ন সহকারে বিলি কেটে দিচ্ছে।আমাকে হাসতে দেখে তায়াং ভাইয়া হুংকার ছারলো
তায়াংঃ তুই এখনো সরিস নি।দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কি করছিস?তোকে না এখান থেকে যেতে বলছি।নিশ্চয়ই আমাদের এভাবে দেখে হিংসে হচ্ছে। তাই মনে মনে শয়তানি বুদ্ধি খিচুড়ি পাকাচ্ছিস।
আমিঃ হু হু আমার তো বয়েই গেছে। সবাইকে নিজের মতো ভাবিস না।তোর হিংসে হয় বলে যে আমার হবে এমন কোন কথা নেই। তাছাড়া তোর আগে আমি দাদীর আদর নিয়েছি।(দাদীর দিকে তাকিয়ে) দাদী, ওর চুলে বিলি না কেটে কয়েক গোছা চুল ছিঁড়ো তো।সবসময় আমার সাথে লেগে থাকে।মাথার চুল ছিঁড়লে যদি ঐ গোবর মাথায় একটু বুদ্ধি খুলে।আর সবাইকে নিজের মতো ভাবা বন্ধ করে।
দাদীঃ তোরা এখনো সেই ছোটবেলার মতো লেগে থাকিস?একটুও বদলাসনি।
তায়াংঃ এই শাঁকচুন্নি জীবনে বদলাবেও না।
আমিঃ একদম শাঁকচুন্নি বলবি না ভাইয়া।ভালো হবে না কিন্তু। (রেগে)
তায়াংঃ যা ভাগ চোখের সামনে থেকে। এখন তো তুই আরো দূর্বল হয়ে গেলি নোভা।আমাদের দলের আরো একজন সদস্য বেড়ে গেলো।আব তেরা কেয়া হোগা কালিয়া।(শয়তানি হাসি দিয়ে)
আমিঃ যা যা মুড়ি চাবা তুই। এই নোভা একাই একশো।কাউকে দরকার নেই আমার।আর দাদী কিন্তু বলে নি তোর দলে।তাই এতো খুশি হইস না।
তায়াংঃ আমার সুন্দরী আমার দলেই থাকবে।তা আর কষ্ট করে বলতে হবে না।তাই এখন তুই গিয়ে মনের দুঃখে মুড়ি চাবা।(শয়তানি হাসি দিয়ে)
আমিঃ হু হু😏।আসছে দল নিয়া।চল ফট এখান থেকে।
তায়াংঃ তুই ফট।
দাদীঃ থামবি তোরা।দুদিন পর বিয়ে হলে বাচ্চার বাবা-মা হয়ে যাবি।আর এখন নিজেরাই ঝগড়া করিস।
এনাজঃ কি শুরু করলা তোমরা?বাটারফ্লাই, যাও এক গ্লাস ঠান্ডা পানি নিয়ে এসো তো।
আমিঃ ঠান্ডা পানি দিয়ে কি করবেন আপনি?
এনাজঃ দুটোর মাথায় ঢালবো।কি বাচ্চাদের মতো বিহেভ করছো তোমরা দুজন।
আমিঃ ওরে আল্লাহ রে! কত ভালো মানুষ। দাদীর সামনে ন্যাকা সাজা হচ্ছে। কিছুই বুঝে না।উনি এমন একটা ভাব করছে, এই প্রথম আমাকে আর তায়াং ভাইয়াকে এভাবে লেগে থাকতে দেখলো।দুটোর একটাকেও আমি ছারবো না বলে দিলাম।সুযোগ আমারও আসবে।এখন শুধু দাদী আছে বলে আমিও ভালো মেয়ে সেজে আছি।(মনে মনে)
এনাজঃ কি বললাম, দাঁড়িয়ে আছো কেন যাও।তোমাদের মাথায় ঢালার জন্য না আনো।আমার খাওয়ার জন্য তো এক গ্লাস পানি আনো।বড্ড তেষ্টা পেয়েছে।
তায়াংঃ কাকে কি বলছিস?ও নিজে এক গ্লাস পানি ঢেলে খায় নাকি তার সন্দেহ। আর তুই ওকে পানি আনতে বলছিস।ওর আশায় থাকলে, তুই তেষ্টায় বুকের ছাতি ফেটে মরবি।
আমি কটমট করে তায়াং ভাইয়ার তাকিয়ে কিচেনে চলে গেলাম।সেখান থেকে দুই গ্লাস লেবু শরবত বানিয়ে নিয়ে এলাম।টি-টেবিলের ওপর ট্রে রেখে তার পাশে দাঁড়ালাম।
তায়াংঃ আমি কি সঠিক দেখছি😮?তুই আমাদের জন্য শরবত করে এনেছিস।আল্লাহ আমার বিশ্বাস হচ্ছে না। এনাজ আমাকে একটা চিমটি কাট তো।তবে আমি সিউর, নিশ্চয়ই তুই এর মধ্যে কিছু মিশিয়েছিস।নয়তো এনাজ একবার বলতেই ছুটে গিয়ে নিয়ে আসতি না।
আমিঃ দেখছো দাদী, দেখছো।এর জন্য বলে কারো ভালো করতে নেই। আমি ভালো বলে ওদের জন্য শরবত করে আনলাম।আর কুত্তাটা আমাকে সন্দেহ করছে।এসব কি সহ্য করা যায় তুমিই বলো।
দাদী কোন উত্তর দিলেন না।মিটমিট করে হাসতে লাগলেন।এনাজ ইতিমধ্যে গ্লাস খালি করে ফেলছে।গ্লাসের শরবত টুকু শেষ করে একটা ঢেকুর তুলে আমার দিকে তাকিয়ে একটা ভুবন ভুলানো হাসি দিয়ে বললেন।
এনাজঃ তোমার হাতের লেবুর শরবত আর চায়ের কোন জুড়ি নেই। আমি সারাদিন খেয়ে থাকতে পারবো।তোমার হাতে সত্যি জাদু আছে বাটারফ্লাই।
তায়াংঃ হইছে এত সুনাম করিস না।অলরেডি ফুলে ঢোল হয়ে গেছে। আরো ফুলালে ফেটে যাবে।এরকম শরবত না আমি চুটকি তেই বানাতে পারি।শরবত বানানো আহামরি কোন কাজ নয়।
আমার ইচ্ছে করছে তায়াং বজ্জাতটার মাথা ফাটাতে।ও নিজেই আমার হাতের বানানো জিনিস পছন্দ করে।কিন্তু জীবনে স্বীকার করে না।আর এনাজ তো আমার বানানো চা ও শরবত দুটোর পাগল।দুপুরে এলে মাস্ট ওর আমার হাতের শরবত,আর বিকেলে এলে আমার হাতের চা লাগবেই। যেই পর্যন্ত আমি না বানিয়ে খাওয়াবো।ততক্ষণ এই বাসা থেকে এনাজ যাবে না।
মনে মনে তায়াং ভাইয়াকে কতগুলো কথা শোনানোর প্রস্তুতি নিলাম।কিন্তু তার আগেই কিচেন থেকে খালামণির ডাক আসতেই আমি মুখ ঝামটা মেরে সেদিক চলে গেলাম।এই ছেমরা আমার মুডটাই নষ্ট করে দিছে।আমি চলে যেতেই তিনজন হো হো করে হেসে উঠলো। যার কারণটা আমি খুঁজে পেলাম না।হঠাৎ এদের কি হলো, আর কিসের জন্য হাসলো তা আমার জানা নেই। আমি জানতে চাইছিও না।মাথা থেকে সবকিছু ঝেড়ে ফেলে কিচেনের কাজে মনোযোগ দিলাম।
ফ্লাশব্যাক এন্ড………..❣️
চোখের কোণ বেয়ে টুপ করে দু ফোঁটা পানি গড়িয়ে পরলো।মানুষটার স্মৃতি আছে কিন্তু মানুষ নেই। চোখ দুটো ঝাপসা হয়ে আসছে।ওড়না দিয়ে চোখ মুছে নিলাম।এরিন,হিমি এখনো উঠেনি।সকাল সকাল এনাজ এসে বলে সে নাকি ছেলেকে নিয়ে হাঁটতে বের হবো।আমিও মানা করলাম না।বাবা-ছেলের এখন একসাথে থাকা উচিত। রাস্তার পাশে চোখ পরতেই দেখি দুজন জগিং করতে করতে এদিকেই আসছে।বাবা-ছেলের পরনে একিরকম জগিং স্যুট, একি রকম জুতো।নাভানের জিনিসপত্র এনাজ আসার সময় নিয়ে এসেছে। আমার কাছে দুজনকে মনে একজন সিনিয়র এনাজ আরেকজন জুনিয়র এনাজ।পাশাপাশি আসছে দুজন।দৃশ্যটা দেখে মুহুর্তে মনটা ভালো হয়ে গেলো। এক ধ্যানে তাদের দিকে তাকিয়ে রইলাম। দুজনকে একসাথে দেখতে ভীষণ ভালো লাগছে ।
#চলবে