প্রজাপতির রং পর্ব-৩৪+৩৫

0
1246

#প্রজাপতির_রং🦋
#Part_34
#Writer_NOVA

—- হ্যালো লিসেনার।কেমন আছেন সবাই?ফিরলাম বিজ্ঞাপনের পরপরি। আমি RJ নোভানাজ কিন্তু চলে এসেছি লাভ কমপ্লেন নিয়ে বহু আগে।আপনারা শুনছেন ঢাকা এফএম 90.04।এখন সময় ৫ টা বেজে ০৭ মিনিট।লাস্ট ঘন্টায় কিন্তু চলে এসেছি আমরা। যাওয়ার সময়ও ঘনিয়ে এসেছে। যারা এখনো আমার সাথে এড হোননি তারাও জলদী করে চলে আসেন।কি অবস্থা সবার? দিনকাল যাচ্ছে কেমন? আমি কিন্তু বিন্দাস আছি।আল্লাহর রহমতে আলহামদুলিল্লাহ চলছে সব।আপনারা জলদী জলদী করে টেক্সট,কমেন্ট করে ফেলুন।এখন আপনাদের পছন্দের সব গান বাজিয়ে দিবো।তাই যত দ্রুত সম্ভব আপনাদের প্রিয় গানের কথা আমাকে জানিয়ে দিন।আপনারা জানাতে থাকেন ততক্ষণে আমি কি করি, কি করি? হুম পেয়েছি। কতগুলো টেক্সট, কমেন্ট পড়তে পারি।পুরান ঢাকা থেকে তিশান জিজ্ঞেস করেছে, আপু কেমন আছো? আলহামদুলিল্লাহ ভালো তিশান।আপনি কেমন আছেন? মানিকগঞ্জ থেকে সুপ্তি জিজ্ঞেস করেছে, আপু আজকে তোমাকে আজ অনেক খুশি খুশি লাগছে ঘটনা কি? এই প্রশ্ন জিজ্ঞেস করেছি বলে প্লিজ কিছু মনে করো না।আমি এমনি জিজ্ঞেস করলাম।অন্য দিনের তুলনায় আজ তোমাকে বেশি খুশি লাগছে তো তাই।আরে সুপ্তি কিছু মনে করার নেই। আমি কিছুই মনে করিনি।আজকে আমি সত্যি অনেক খুশি।আমরা যখন আমাদের সবচেয়ে প্রিয় জিনিস কিংবা মানুষকে হারিয়ে ফেলি।যেটা বা যাকে কখনো আর ফিরে পাবো না।কিন্তু আল্লাহর রহমতে সেটা আবার আমাদের কাছে ফিরে আসে। তখন কতটা খুশি লাগে বল তো? সবকিছু একটা ঘোরের মতো লাগে।খুশিতে পাগল হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়।আমিও আমার হারিয়ে যাওয়া প্রিয় মানুষটাকে পেয়েছি। তাই এত খুশি।আমার তো ইচ্ছে করছে উড়াধুরা ডান্স করতে।হি হি হি 😁।মিরপুর থেকে পারভেজ জিজ্ঞেস করছে, আপু তুমি কি ম্যারিড? ভাই আমার একটা দুই বছরের বেবী আছে। তাহলে এবার বুঝে নিন বিয়ে হয়েছে কিনা।কমেন্ট পরবো এখন। নিশাত জাহান লিখেছে, আপু আমার কমেন্ট পড়ো না কেন? কে বলেছে আপু পড়ি না।এই তো পড়ে ফেললাম।কষ্টের নদী আইডি থেকে একজন কমেন্ট করছে আপু আমার জন্য হৃদয় খানের কোন গান প্লে করে দিও।ভাইয়া কোন গান প্লে করে দিবো একটু বলে দিলে ভালো হতো।আপনি গান ডেডিকেট করে দিন।আমি অবশ্যই বাজিয়ে দিবো।আরিফ হাসান কমেন্ট করে জানিয়েছে তার জন্য আরফিন রুমির মন রাখো পাঁজরে গানটা বাজিয়ে দিতে।খুব সুন্দর একটা গান।আমারও খুব পছন্দ। আচ্ছা আমি বাজিয়ে দিবো।কি ব্যাপারা হুম? দুদিন শো করতে আসিনি বলে আপনারা আমাকে ভুলে গেছেন হুম।এটা কিন্তু ঠিক নয়।কমেন্ট,টেক্সট এত কম কেন? আড়ি দিয়ে দিবো কিন্তু সবার সাথে।নুসরাত টেক্সট করেছে।আপু প্লিজ আমার জন্য ইমরান মাহমুদুলের “তুই তো দেখিস না” গানটা প্লে করে দিবে।প্লিজ আপি, প্লিজ, প্লিজ, প্লিজ।এতবার অনুরোধ। এতবার করে যেহেতু নুসরাত অনুরোধ করলো।আমি কি ফেলে দিতে পারি বলেন।চলুন শুনে আসি ইমরান মাহমুদুলের কন্ঠে তুই তো দেখিস না গানটি।গানের পরে পাঁচ মিনিটের বিজ্ঞাপন বিরতি নিবো।তাই কোথাও যাবেন না।আমার সাথেই থাকুন, ঢাকা এফএমর সাথে থাকুন।

♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪♥♥♥♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪

তুই ছাড়া একেকটা দিন, কি যে যন্ত্রণা
বুকের ভেতর অন্তহীন নীল নীল বেদনা(×২)
দুচোখ কি দহনে তুই তো দেখিস না
তুই ছাড়া একেকটা দিন, কি যে যন্ত্রণা
বুকের ভেতর অন্তহীন নীল নীল বেদনা(×২)

চোখের ভেতর বৃষ্টি হয় হৃদয়টা হয়ে যেন নদী
তোর না থাকার একেকটা খন ছুঁয়ে দেখতি যদি(×২)
আমায় ছেড়ে কখনো দূরে যেতি না
তুই ছাড়া একেকটা দিন, কি যে যন্ত্রণা
বুকের ভেতর অন্তহীন নীল নীল বেদনা(×২)

হাজার জনম চাই না তোরে একটা জনম শুধু চাবো
বুকপর ভেতর নিশ্বাস জুড়ে তোকেই শুধু পাবো।(×২)
এক জনমের প্রতিখনে আড়াল হবো না।
তুই ছাড়া একেকটা দিন, কি যে যন্ত্রণা
বুকের ভেতর অন্তহীন নীল নীল বেদনা(×২)

♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪♥♥♥♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪

গান প্লে করা শেষে বিজ্ঞাপন বিরতি দিলাম।বেশ কিছু সময় ধরে মোবাইলের ভাইব্রেশনে শব্দ পাচ্ছিলাম।যদিও কানে হেডফোন থাকায় পাওয়ার কথা নয়।কিন্তু মোবাইলটা সামনে থাকায় একবার হাত পরেছিলো তার ওপর।মোবাইল হাতে নিয়ে দেখতে পেলাম আননোন নাম্বার থেকে তিনটা মিসড কল এসেছে। কে কল করতে পারে তা ভাবতে ভাবতেই আরেকবার ঐ নাম্বার থেকেই কল চলে এলো।রিসিভ করে কানে দিতেই জোরে চিৎকারের শব্দ পেলাম।

——– ভাবী-ই-ই-ই-ই-ই-ই-ই-ই-ই-ই-ই!!!!

আমিঃ মুসকান??

মুসকানঃ হ্যাঁ, ভাবী আমি মুসকানই।কোথায় তুমি? তোমার নামে বিচার আছে।

আমিঃ আমি আবার কি করলাম?

মুসকানঃ তুমি কি করো নি তাই বলো? আমাদের একটা গুলুমুলু ভাতিজা আছে তার কথা আমাদেরকে কেন বলোনি? এর জন্য তোমাকে শাস্তি পেতে হবে।

আমিঃ তোমরা জিজ্ঞেস করোনি তাই আমি বলিনি।তোমরা যদি জিজ্ঞেস করতে তাহলে তো আমি বলতামই।

মুসকানঃ আমরা কি করে জানবো? তাজ ভাইয়া বলছে তার বেবী নাকি ছয় মাসে পেটে থাকতে মারা গেছে। তাই আমরাও সেটাই বিশ্বাস করে নিয়েছি।গতকাল রাতে এসে বলছে তোমাদের একটা দুই বছরের বাচ্চা আছে। ভাইয়া খুশিতে পাগল হয়ে যাচ্ছিলো।আমরা শুনে প্রথম ভেবেছি ভাইয়া বোধহয় তোমার শোকে পাগল হয়ে গেছে। পরে ভাইয়া তোমাদের তিনজনের ফ্যামেলী ফটো দেখালো।যেটা গতকাল তুলেছিলো।আম্মু তো পাগল হয়ে গেছে তোমাদের ছেলেকে বাস্তবে দেখতে।এখন তোমার শাস্তি হলো ছেলেকে নিয়ে সোজা আমাদের বাসায় চলে আসবে। কোন অযুহাত শুনবো না।

আমিঃ আজ তো আসা সম্ভব নয় মুসকান।আজ কোথাও যাবো না। শরীরটা ভালো লাগছে না।তাছাড়া সন্ধ্যা হয়ে এসেছে।

মুসকানঃ তাহলে আগামীকাল।

আমিঃ আগামীকাল তোমার ভাইয়ার অফিসে আজ বিদেশি ক্লায়েন্টদের সাথে মিটিং আছে। সব ফাইল আমার কাছে। আমি যদি না যাই তাহলে মিটিং হবে না।এতে কোম্পানির বিশাল লস হয়ে যাবে। অন্য একদিন যাবো।

মুসকানঃ আমার কাছে একটা আইডিয়া আছে।

আমিঃ কি???

মুসকানঃ তুমি এনানকে নিয়ে আগামীকাল অফিসে চলে আসো।আমিও ভাইয়াদের সাথে অফিসে চলে আসবো।তাহলেই তো সমস্যার সমাধান হয়ে যায়।

আমিঃ আমি তো শো করতে এসেছি। আগামীকালও শো করতে হবে।তখন এখান থেকে বাসায় গিয়ে নাভানকে আনতে অনেক দেরী হয়ে যাবে।

মুসকানঃ আগামীকাল মিটিং কয়টায়?

আমিঃ এগারোটার দিকে।

মুসকানঃ আগামীকাল দশটার দিকে বাসায় গিয়ে তুমি এনানকে বাসা থেকে নিয়ে আসবে।ওকে নিয়ে আসবে মানে নিয়ে আসবে।তুমি এগারোটার আগে চলে এসো।বাকি কিছু আমি সামলে নিবো।আর হ্যাঁ,আরেকটা কথা তোমাকে না ভাইয়া শো করতে মানা করেছে। তাহলে তুমি শো করতে আসছো কেন?

আমিঃ না মানে আসলে (ধূর কি বলি এখন? যেমন ভাই, তেমন বোন।কিছু তো একটা বলতে হবে।কি বলবো, কি বলবো? পেয়ে গেছি)বাসায় বোর হচ্ছিলাম তো তাই চলে আসছি।

মুসকানঃ তুমি যদি এনানকে না আনো তাহলে আমি বলে দিবো তুমি শো করতে এসেছো।কথাটা মনে রেখো।

আমিঃ ওরে পাঁজি মেয়ে।

মুসকানঃ হি হি জলদী চলে এসো কালকে।আমি রাখছি।

আমিঃ মুসকান একটা কথা ছিলো।

মুসকানঃ হ্যাঁ, ভাবী বলো।

আমিঃ আরিয়ান তো জানতো আমার ছেলে আছে। তাহলে তোমাদের বলেনি কেন?

মুসকানঃ এই ষাঁড় গরুর কথা আর বলো না ভাবী।আহাম্মক একটা। তোমাদের ছেলেকে দেখে মনে করছে এটা তোমার বান্ধবী হিমি নাকি এমি কি যেনো নাম। ওহ হ্যাঁ হিমি।হিমির ছেলে মনে করছে।গতকাল ভাইয়া ছবি দেখানোর পর আরিয়ান ভাইয়া বলছে, “আমি তো এই বাচ্চাকে আগেই দেখেছি। কিন্তু আমি ভাবছি হিমির ছেলে।যেহেতু ভাবীর বাচ্চা পেটে থাকতে মারা গেছে সেহেতু তার বাচ্চা আসবে কোথা থেকে? আর আমাদের ভাই তো এখানেই ছিলো।নতুন করে বেবী হওয়ার তো প্রশ্নই উঠে না😶।ভাই ছাড়া নতুন বেবী পেটে আসবে কি করে?” ও কথাগুলো এভাবে বলছে জানো?এর বদমাশ মার্কা কথা শুনে আমি হাসতে হাসতে শেষ।

আমিও হাসতে লাগলাম।আরিয়ান সত্যি অনেক ফাজিল ছেলে।ও ভাবছে নাভান হিমির ছেলে তাই সে কাউকে কিছু জানায়নি।আর ও জানতো আমার বাচ্চা পেটে থাকতে মারা গেছে। আর ওর ভাইতো গত আড়াই বছর ধরে ওদের কাছেই আছে। তাহলে আরেকটা বেবী হওয়ারো চান্স নেই। তাই সে ধরেই নিয়েছে নাভান হিমির ছেলে। আমি মুসকানের সাথে কথা শেষ করে কল কেটে দিলাম।বিজ্ঞাপন বিরতি শেষ হয়ে গেছে। আবার শো শেষ করতে হবে। এনাজ যদি জানে আমি শো করতে এসেছি তাহলে আমার খবর আছে। শো-টা বেশি দিন চালাতে পারবো বলে মনে হয় না।

🦋🦋🦋

সন্ধ্যা নেমেছে বহু আগে। পুরো পৃথিবী রাতের কালো আঁধারে ডুবে গেছে। এই আঁধারের সাথে সাথে আরেকজনের জীবনও আঁধারে ডুবে গেছে। সে আর কেউ নয়।রোশান দেওয়ান!!!বিষন্ন মনে একের পর এক সিগারেট ফুঁকছে রোশান।সারা রুম অগোছালো। মদের বোতলগুলো এদিক সেদিক পরে আছে।নেশায় বুদ হয়ে একপাশে পরে আছে রোশান।রোশানের চেহারার অবস্থা অনেক খারাপ।চুলগুলো অগোছালো, এলোমেলো। চোখ,মুখ লাল হয়ে আছে। পুরো বিধ্বস্ত লাগছে ওকে।কিছুটা দূরে দাঁড়িয়ে তমাল তার বসকে পর্যবেকক্ষণ করছে। কয়েকদিনের ব্যবধানে গোছালো ছেলেটা পুরো অগাছালো হয়ে গেছে। ওকে দেখলে এখন কেউ বিশ্বাস করতেই পারবে না এটা যে আগের রোশান।তমাল ধীর পায়ে এগিয়ে গিয়ে রোশানের সামনে দাঁড়ালো। ভয়ে ভয়ে মৃদুস্বরে ডাকলো।

তমালঃ বস!!!

রোশানঃ হুম বল।

রোশান মাথা না উঠিয়ে ঠান্ডা কন্ঠে বললো।এতে তমাল কথা বলার সাহস পেয়ে গেল।কোন ভনিতা ছাড়া বলে উঠলো।

তমালঃ এই পর্যন্ত আধা ঘণ্টার মধ্যে দুই প্যাকেট সিগারেট শেষ করে ফেলছেন।সারাদিনে মদ গেলাও হয়েছে কয়েক বোতল।আরো খেলে সমস্যা হবে। আপনার তো অভ্যাস নেই।

রোশান মাথা উঠিয়ে তাচ্ছিল্যের হাসি দিলো।সেই হাসিতে তমাল স্পষ্ট চাপা কষ্টের দেখা পেলো।

রোশানঃ কিছু হবে না তমাল।আমার জন্য চিন্তা করো না।আমি ঠিক হয়ে যাবো।তবে কিছু দিন যাক তারপর। এত তাড়াতাড়ি ওকে ভুলতে পারবো না আমি।আমার একটু সময় লাগে।এবার তো কিছুই না।সেবার যখন আমার পাখির বিয়ে হয়ে গেলো তখন সারারাত সিগারেট টানতাম।নয়তো বারে গিয়ে পরে থাকতাম।তখন আমাকে একটা মেয়ে সামলিয়ে ছিলো।মেয়েটার নাম ছিলো জারা।বাবার বন্ধুর মেয়ে। বাবা ওর সাথে আমার বিয়ে ঠিক করতে চেয়েছিলো।কিন্তু আমি মানা করে দেই।জারা আমায় খুব ভালোবাসতো জানো।কিন্তু আমি ওকে ঠকাতে চাইনি। ওর ভালোবাসাকে দূরে ঠেলে দিয়ে আবারো নোভার পেছনে ছুটেছিলাম।অনেক ভালোবাসি ওকে।ওর জায়গা আমি অন্য কাউকে দিতে চাই না।

তমালঃ ঐ জারা নামের মেয়েটা কোথায়?

রোশানঃ ইউরোপ কান্ট্রিতে আছে।

তমাল অবাক চোখে রোশানের দিকে তাকিয়ে রইলো। রোশান কখনো কাউকে নিজের কোন কথা বলে না।কতটা কষ্টে থাকলে কেউ এভাবে কথা বলে তা তমালের জানা নেই। এই মুহুর্তে তমাল মনে মনে আল্লাহর কাছে একটা দোয়া করছে।আর সেটা হলো সেই জারা মেয়েটা যেনো এখন ফিরে আসে। একমাত্র ঐ মেয়েটাই রোশানকে সামলাতে পারবে।তমাল মুখ খুলে কিছু বলতে চেয়েছিলো। কিন্তু তার আগে বাসার কোলিং বেল বেজে উঠলো। তমাল দ্রুত পায়ে সদর দরজার দিকে চলে গেল ।

তমাল দরজা খুলতেই অবাক হয়ে গেলো।দরজার অপরপাশে দাঁড়িয়ে আছে একটা মেয়ে। দেখতে,শুনতে সবদিক দিয়ে মাশাআল্লাহ। চেহারায় আছে লাবণ্যতা।পরনে নেভি ব্লু কালার হাটু অব্দি টপস,কালো কালার জিন্স, গলায় কালো রঙের ওড়না পেঁচানো। পায়ে নেভি ব্লু রঙের কেডস, হাতে ল্যাগেজ,চুলগুলো লাল রং করা।বয়স ২৪ না হলেও তার কাছাকাছি হবে।মেয়েটাকে আগে কখনো দেখেছে বলে মনে হচ্ছে না তমালের।

তমালঃ কাকে চাই?

— রোশান আছে?

পিচ্চি মেয়ের মুখে রোশানের নাম শুনে কিছুটা রেগে গেল তমাল।এতটুকু মেয়ে নিজের থেকে বড় ছেলেকে নাম ধরে ডাকছে বিষয়টা পছন্দ হলো না তমালের।চোখ মুখে বিরক্তি নিয়ে উত্তর দিলো।

তমালঃ হ্যাঁ,আছে।কিন্তু আপনি কে?

— আমি জারা রহমান।রোশানের বাবার বন্ধুর মেয়ে।

কথাটা শুনে চমকে তাকালো তমাল।নিমিষেই ওর মুখে থাকা বিরক্তি খুশিতে রূপান্তরিত হলো।আল্লাহ তাহলে তার দোয়া এত তাড়াতাড়ি কবুল করে নিয়েছে।এর জন্য বলে মন থেকে কিছু চাইলে আল্লাহ কখনো ফিরিয়ে দেয় না।তেমনি তমালের কথাও ফেলেনি আল্লাহ। মনে মনে আল্লাহর দরবারে কোটি কোটি শুকরিয়া জানালো তমাল।মুখে হাসি রেখেই খুশিতে গদগদ হয়ে বললো।

তমালঃ আরে ম্যাডাম আসুন।বাইরে দাঁড়িয়ে আছেন কেন? ভেতরে আসুন।

জারাঃ রোশান কোথায়?

তমালঃ আপনি কি বিদেশে থাকেন?

জারাঃ হুম।

তমালঃ আজ কি বিদেশ থেকে ফিরলেন?

জারাঃ হ্যাঁ, রোশানের বাবা গত পরশু কল করে আমাকে ওর বিষয় সবকিছু খুলে বললো।গতকালই চলে আসতাম।কিন্তু টিকিট পেতে দেরী হয়ে গেলো।রোশান কোন রুমে?

তমাল হা করে তাকিয়ে রইলো।একটা লোক তার ছেলের কথা বলতেই মেয়েটা সুদূর থেকে ছুটে চলে এলো।তাহলে নিশ্চয়ই মেয়েটা রোশানকে অনেক ভালোবাসে।না চাইতেও তমালের মুখে হাসি ফুটে উঠলো। জারা তমালের চোখের সামনে তুড়ি বাজালো।

জারাঃ ও হ্যালো, কোথায় হারিয়ে গেলেন?রোশান কোন রুমে? আমায় নিয়ে চলেন।

তমালঃ হ্যাঁ, ম্যাম চলেন।

সিঁড়ি বেয়ে দুজনেই ওপরে গেলো গেল।জারাকে রুম দেখিয়ে তমাল চলে গেল। ওদের দুজনকে একটু স্পেস দেওয়া উচিত।জারা দরজা ঠেলে ভেতরে ঢুকতেই মদের বিশ্রী গন্ধ নাকে এসে লাগলো।জারা নাকে হাত দিয়ে সামনে এগিয়ে গেলো।পুরো রুমটা আবছা অন্ধকার করে রাখায় জারা কিছু দেখছেও না।পায়ের সাথে বারি খেয়ে মদের বোতলটা ঝনঝন শব্দ করে উঠলো।তাতে রোশান কথা বললো।

রোশানঃ তমাল,আমাকে একটু একা থাকতে দেও।

জারা কোন উত্তর দিলো না। সে অন্ধকারে হাতড়ে লাইটের সুইচ খুঁজতে লাগলো। একসময় পেয়েও গেল।লাইট অন করতেই সাথে সাথে রোশান চোখ বন্ধ করে চোখের ওপর হাত দিয়ে চেচিয়ে উঠলো।

রোশানঃ তমাল লাইট বন্ধ করো।আমার চোখে লাগছে।

অপর দিক থেকে কোন উত্তর না আসায় রোশান পিটপিট করে চোখ খুললো।সামনে তাকিয়ে কিছুটা চমকে উঠলো। চোখ দুটো ভালো করে ডলে আবার তাকালো।না সে ভুল দেখছে না।তার চোখের সামনে হাত গুঁজে জারা দাঁড়িয়ে আছে।

রোশানঃ আজ এত তাড়াতাড়ি নেশা হয়ে গেলো। আমি চোখের সামনে জারাকে দেখতে পাচ্ছি।

জারাঃ তুমি ভুল নয় ঠিকই দেখতে পাচ্ছো।

জারার শব্দ পেয়ে রোশান অবিশ্বাস্য চোখে ওর দিকে তাকালো। তারপর বসা থেকে উঠে দৌড়ে এসে জারাকে জড়িয়ে ধরলো। এতে জারা একটুও অবাক হলো না। ওর জানা ছিলো রোশান এমনকিছুই করবে।বেশ কিছু সময় পর রোশানের ফোঁপানোর আওয়াজ পেলো জারা।তার মানে রোশান কাঁদছে।

জারাঃ কাঁদো রোশান, বেশি করে কাঁদো। এটাই হবে তোমার শেষ কান্না। আমি তোমাকে আর কাঁদতে দিবো না।এখন থেকে তুমি শুধু হাসবে।অনেক কষ্ট পেয়েছো একতরফা ভালোবেসে।নিজেও পেয়েছো আমাকেও দিয়েছো।কিন্তু আর নয়।এবার তোমাকে নিজের করে সব কষ্ট ভুলেও যাবো,তোমাকেও ভুলিয়ে দিবো।সব ঠিক করে ফেলবো আমি।সব ঠিক করে ফেলবো।
(মনে মনে)

মনে মনে কথাগুলো বলে একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো জারা।তবে তার চোখ দুটো চকচক করছে। নতুন আশায় যে সে দেশে ফিরেছে।এবার সে আশা পূরণ করবেই করবে।আর সেই আশাটা হলো রোশানের বউ হওয়া।রোশান এখনো জারাকে ধরে কান্না করেই যাচ্ছে। জারা চোখ বন্ধ করে আলতো করে ওর দুই হাত রোশানের পিঠে রাখলো।

#চলবে

#প্রজাপতির_রং🦋
#Part_35
#Writer_NOVA

পরের দিন…….

শো দশ মিনিট আগে শেষ করে আবার উল্টো বাসায় গেলাম।সেখান থেকে নাভানকে নিয়ে ফিরে এলাম অফিসে। কল করে হিমি ও এরিনকে আগেই বলে দিয়েছিলাম নাভানকে তৈরি করে বাসার গেইটের সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে।ওরা নাভানকে তৈরি করে রাখায় বেশি দেরী হয়নি।রিকশা নিয়ে গেইটেের সামনে থেকে নাভানকে নিয়ে চলে এসেছি।সাড়ে দশটার বেশি বেজে গেছে। তাড়াহুড়ো করে নাভানকে সাথে নিয়ে লিফটে ঢুকে পরলাম।

সেদিন রাতে অনেক সময় অব্দি এনাজ আমাদের সাথে ছিলো।নাভানও ওর বাবাকে ছাড়বে না।এনাজও নাভানকে ছাড়বে না।অবশেষে নাভান ঘুমানোর পর এনাজ চলে যায়। তখন রাত তিনটে বাজে।এদের বাপ-বেটার জন্য আমাকে রাত তিনটে অব্দি গেইটের সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়েছে। এনাজ যাওয়ার আগে বলেছে নতুন ফ্ল্যাট কিনে তবেই আমাদের দুজনকে এখান থেকে নিয়ে যাবে।এখন অন্যের বাসায় থাকছে সে।এখন যদি ঐ বাসায় আমাকে নিয়ে যায় তাহলে বিষয়টা কিরকম বাজে দেখায়।যদিও তারা কিছু মনে করবে না।কিন্তু এনাজের তো একটা আত্মসম্মান আছে। এরিন ও আরিয়ানের বিয়েও সামনে।এমতাবস্থায় এনাজ ঠিকানাবিহীন বাড়ি ছাড়লেও তো বিষয়টা খারাপ দেখায়।আমরা সবাই চলে গেলে হিমিও বা যাবে কোথায়? ওর ও তো একটা ব্যবস্থা করতে হবে।এসব ডিসকাসড করেছি আমরা।সবশেষে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি আমরা।এরিন ও আরিয়ানের বিয়ের পর আমরা আলাদা ফ্ল্যাটে উঠবো।হিমির ও একটা ব্যবস্থা করে দিবো।ততদিন আমি আমার বাসায় ও এনাজ ঠিকানাবিহীন বাড়িতে থাকবে।বউ, ছেলে ছেড়ে থাকতে হবে বলে এনাজের মুখ কালো হয়ে ছিলো।কিন্তু আপাতত কিছু করার নেই।

গতকালের কথা ভাবছিলাম।তখুনি টুং শব্দে লিফটের দরজা খুলে গেল।আমরা ভেতরে প্রবেশ করতেই পার্টি স্প্রে দিয়ে পুরো ভূত হয়ে গেলাম।সামনে তাকিয়ে দেখি আরিয়াব,মুসকান,আদর আরো কতগুলো কলিগ দাঁড়িয়ে আছে পার্টি স্প্রে হাতে নিয়ে। সবার হাতে কতগুলো করে বেলুন।আমি চোখ মুছতে মুছতে নাভানকে নিয়ে কাড়াকাড়ি লেগে গেছে। আদর,আরিয়ান,মুসকান কার আগে কে কোলে তুলে নিবো তা নিয়ে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ লেগে গেছে। ফাঁকের মধ্যে মুসকান নাভানকে কোলে নিয়ে এনাজের কেবিনের দিকে দৌড় দিলো।মুসকানের পেছন পেছন আদর দৌড় দিলো।আরিয়ান ও আমি দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে হাসতে লাগলাম।বাকি কলিগরা আমাকে কংগ্রেস জানিয়ে যার যার কাজে চলে গেল।

আরিয়ানঃ আমি তো এটাকে হিমির ছেলে ভেবেছিলাম। গত পরশু রাতে জানতে পারলাম হিমির বিয়েই হয়নি।আর এটা আপনার ও ভাইয়ার ডাউনলোডকৃত ছেলে।

আমি মুখ টিপে হেসে আরিয়ানকে শাসনের সুরে বললাম।

আমিঃ আরিয়ান!!! মুখে লাগাম দেও।

আরিয়ানঃ আপনি আমার বড় ভাবী সাহেবা। আপনার সাথে বলবো না তো কার সাথে বলবো।বিশ্বাস করেন ভাবী, আমার মাথায় এটাই ছিলো যে আপনাদের বেবী পেটে থাকতে মারা গেছে। আর গত আড়াই বছর ধরে ভাইয়া আমাদের সাথে। আপনাকে খুঁজেই পাইনি।যদি খুঁজে পেতো তাহলে আরেকটা চান্স থাকতো।আমি ভাবতাম নতুন করে উপরওয়ালার থেকে চেয়ে ছেলে ডাউনলোড করেছে। কিন্তু তাও তো নয়।আমার ভাই আমাদের সাথে থাকলে বেবী পেটে আসবে কোথা থেকে বলুন তো? আমি শুধু এই কথাটা বলেছিলাম গতকাল।তারপর ভাইয়া আমাকে সারা বাড়ি চক্কর দিয়ে এনেছে।ধরতে পারেনি।ধরতে পারলে ভর্তা করতো।

এর কথা শুনে আমি লজ্জায় শেষ। এর মুখে কিছু আটকায় না।

আরিয়ানঃ লজ্জা পেয়েন না ভাবী সাহেবা। আমাদের কিন্তু আরেকটা মেয়ে বাবু লাগবে।তাই আগের থেকে প্রসেসিং শুরু করে দিন।আমার বিয়েটা হোক।তারপর জলদী করে একটা বেবী নিয়ে ফেলবো।যদি মেয়ে হয় তাহলে আপনার ছেলেকে আগে থাকতে বুকিং করে রাখলাম।আপনার ছেলের সাথে আমাদের মেয়ের বিয়ে দিবো।তবে আমাদের কিন্তু আরেকটা মেয়ে বেবী চাই চাই।কোন কথা শুনবো না। তাই এখন থেকে প্রস্তুতি নিয়ে নিন😉।

আরিয়ানের কথা শুনে আমি রিয়েকশন দিতেও ভুলে গেলাম।চোখ দুটো বড় বড় করে তাকিয়ে রইলাম।আরিয়ান এক চোখ মেরে হাসতে হাসতে চলে গেল।আমি এখনো সেভাবেই দাঁড়িয়ে আছি।

মুসকানঃ ভাবী,আদর তোমাকে ডাকছে।

আমিঃ নাভান কোথায়?

মুসকানঃ আদরের কাছে।

আমি নিজের ডেস্ক থেকে ফাইলগুলো গুছিয়ে আদরের কাছে গেলাম।আদর ফাইলে কিছু করছে।আর নাভান টেবিলের ওপর বসে পা দুলিয়ে জুস খাচ্ছে। ওর সামনে খাবারের ভুর পরে আছে। আমি দরজায় মৃদু টোকা দিলাম।

আমিঃ আসবো?

আদরঃ আরে আসেন ভাবী।আপনার কি অনুমতি নিতে হয়।

আমিঃ নাভান কি করছো? চাচ্চুর সাথে দুষ্টুমী করো নি তো?

নাভানকে প্রশ্ন করতে করতে ভেতরে ঢুকলাম। নাভান হাত নাড়িয়ে আধো আধো কণ্ঠে বললো।

নাভানঃ না। নাভান গুড বয়।

আমিঃ গুড বয় থাকলেই ভালো।আদর ভাইয়া আমার ফাইলগুলো একটু দেখে দিন।

আদরঃ আচ্ছা।

আমিঃ আপনাদের স্যার কি ছেলেকে দেখেছে?

আদরঃ স্যার একটু ব্যস্ত আছে। তাই ঐদিকে নিয়ে যাইনি।আগামীকাল সন্ধ্যায় আমাদের কোম্পানির শেয়ার পাস হওয়ায় একটা পার্টির আয়োজন করা হয়েছে। স্যার সেই বিষয়ে সবার সাথে কথা বলছে।

আমিঃ ওহ আচ্ছা।

নাভানঃ বাবা যাবো।আম্মু, বাবা যাবো।তুমি বলতো
(বলছো) বাবা নিয়া যাবা।বাবা কই?

আমিঃ হ্যাঁ,একটু পর আমরা বাবার কাছে যাবো।একটু অপেক্ষা করো।

নাভানঃ আত্তা(আচ্ছা)।

আদরঃ ভাবী, সবকিছু ঠিক আছে। আপনি ফাইল ও ভাতিজাকে নিয়ে স্যারের রুমে যান।আপনাকে যেতে বলেছে।

আমিঃ কিন্তু সে তো কথা বলছে।

আদরঃ কোন সমস্যা হবে না। আপনাকে তো যেতে বলছে।আরেকটা কথা ভাবী।সবাই ভাবী বলছে বলে আমিও ভাবী বলছি।এতে আপনি কিছু মনে করেননি তো?

আমিঃ আরে না মনে করার কি আছে? আমি আসছি।

আদরঃ আচ্ছা। আপনি নাভানকে নিয়ে যান।আর এই খাবারগুলো আমি আপনার রুমে রেখে আসি।

আমি নাভানকে কোলে নিয়ে এনাজের কেবিনের সামনে চলে এলাম।দরজার কতগুলো টোকা দিলাম।কিন্তু কোন সাড়াশব্দ নেই। আমি দরজাটা খুলে নাভানকে ভেতরে ঢুকিয়ে দিলাম।আর আমি দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে রইলাম।

আমিঃ ভেতরে তোমার বাবা আছে। বাবাকে জোরে ডাক দিও না।আস্তে করে গিয়ে বাবার সামনে দাঁড়িয়ে থাকবে।কোন দুষ্টুমী করবে না।

কিন্তু আমার কথা নাভান বুঝলো না। ভেতরে ঢুকে জোরে চেচিয়ে ডেকে উঠলো।

নাভানঃ বাবা।বাবা, ও বাবা। বাবা গো।

নাভান ডাকতেই সবাই উৎসুক চোখে ওর দিকে তাকালো।এনাজ দ্রুত পায়ে এসে নাভানকে কোলে তুলে নিলো।নাভানের মুখে অসংখ্য চুমু খেলো।

এনাজঃ কার সাথে এসেছো বাবা?

নাভানঃ আম্মুর সাথে।

এনাজঃ তোমার আম্মু কোথায়?

নাভানঃ বাইরে চুপিচুপি দাঁড়ায় আছে।

নাভানের কথা শুনে আমার লজ্জায় মাটির সাথে মিশে যেতে মন চাইছে। বাপের মতো শয়তান হয়েছে ছেলেটা।সবার সামনে কি লজ্জা দিলো।প্রথমে আরিয়ান এখন নাভান।সবগুলা একরকম।দ্রুত ঘুরে চলে যেতে নিলে এনাজের ডাকে থমকে দাঁড়ালাম।

এনাজঃ বাটারফ্লাই ভেতরে এসো।

🦋🦋🦋

আমি ফাইল দিয়ে মুখ ঢেকে দরজা দিয়ে ঢুকলাম।ফাইলের থেকে চোখ দুটো একটু বের করে দেখলাম নাভান শয়তানি হাসি দিচ্ছে। আমি চোখ রাঙালাম।তাতে সে দাঁতগুলো সব বের করে বাপের গলা জড়িয়ে ধরলো। সবাই মিটমিট করে হাসছে।এমনকি এনাজও।

আমিঃ দাঁড়া ব্যাটা।আজ তোকে পাই।বাবাকে পেয়ে আমার সাথে যড়যন্ত্র শুরু করছিস।তোর খবর আছে।
(মনে মনে)

এনাজঃ সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দেই। আমার ওয়াইফ মিসেস নোভা। আর আমাদের ছেলে এনান আহমেদ নাভান। আজকের মতো কথাবার্তা এখানেই শেষ। আপনারা আসতে পারেন।যেভাবে কাজ করতে বললাম সেভাবে করতে থাকুন।কালকে পুরো পার্টি নিখুঁতভাবে হওয়া চাই।

সবাই একে একে কেবিন থেকে বেরিয়ে গেলো।আমি যেখানে ছিলাম সেখানে দাঁড়িয়ে রইলাম।

এনাজঃ এদিকে এসো।

আমি গেলাম না।ঠায় দাঁড়িয়ে রইলাম।মনোযোগ সহকারে ফাইল দেখতে লাগলাম।এনাজ নাভানকে তার চেয়ারে বসিয়ে দিলো।হঠাৎ করে গলায় কিছুর স্পর্শ পেয়ে চমকে উঠলাম। তাকিয়ে দেখি গলায় একটা স্বর্ণের চেইন।যেটায় ছোট একটা লকেট আছে।তার মধ্যে N+A=NAলেখা।মানে হলো নোভা+এনাজ সমান নাভান, এনান।চেইনটা পেছন থেকে এনাজ পরিয়ে দিয়েছে।আমি মাথা উঁচিয়ে অবাক চোখে এনাজের দিকে তাকিয়ে রইলাম।

এনাজঃ এটা তোমার গিফট।আমাকে একটা ছেলে উপহার দেওয়ার জন্য। নতুন বেবী হলে বেবী দেখে তো কিছু একটা গিফট করতে হয়।নাভান হওয়ার সময় তো আমি ছিলাম না।তাই কিছু গিফট করতে পারি নি।তাই এখন তোমাকে গিফট করলাম।ছেলেকে অন্য কিছু গিফট করে দিবো।ছেলেদের অলংকার পরতে নেই। এতে গুনাহ হয়।নয়তো ওকেও একটা চেইন গিফট করতাম।তবে আমার মনে হলো ছেলের থেকে আমার বউকে দেওয়া বেশি জরুরি। কারণ সে এত কষ্ট করে আমাকে পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দরতম অনুভূতির সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়েছে। আমাকে বাবা ডাক শুনতে সাহায্য করেছে।

কথাগুলো বলতে বলতে পেছন থেকে আমাকে জড়িয়ে ধরে মাথায় চুমু খেলো।আমি মাথা উঁচু করে তার দিকে তাকিয়ে মিষ্টি করে একটা হাসি উপহার দিলাম।সব ছেলে যদি এমন করে মেয়েদের বুঝতো।তাহলে নারী নির্যাতন বলে কোন শব্দ থাকতো না।

এনাজঃ বাটারফ্লাই, ও বাটারফ্লাই। (মধুর সুরে)

আমিঃ হুম বলেন।

এনাজঃ আমার একটা মেয়ে বেবী লাগবে।দিবে না??

ছোট বাচ্চাদের মতো করে আবদারটা করলো এনাজ।আমি বিস্ফোরিত চোখে কিছু সময় তার দিকে তাকিয়ে রইলাম।তারপর ঝাঁঝালো কণ্ঠে বললাম।

আমিঃ এর জন্য এত মধুর সুরে বাটারফ্লাই বলে ডাকা হলো? বলি দুই ভাই পেয়েছেন টা কি? মেয়ে বেবীর জন্য পাগল হয়ে যাচ্ছেন।আমি কিছু পারবো না। যান ভাগেন।ছাড়েন আমাকে।

এনাজঃ প্লিজ লক্ষ্মী বউ।একটা মেয়ে বেবীই তো চেয়েছি।প্লিজ,প্লিজ।

আমিঃ সরেন আমার সামনে থেকে। ছাড়েন বলছি, ছাড়েন।বাপ-বেটার জ্বালায় আমি শেষ। আবার আরেকটা।আমার তো খেয়ে-দেয়ে কোন কাজ নেই।

এনাজঃ কোন কাজ নেই বলেই তো বলছি।

আমিঃ এটা অফিস।এখানে সংসার করতে আসিনি।

আমি ঝাড়া মেরে এনাজকে নিজের থেকে ছাড়িয়ে নিলাম।কতগুলো ফাইল টেবিলে রেখে বাকিগুলো নিয়ে চলে আসতে নিলাম।এনাজ আমার থেকে সরে নাভানকে কোলে তুলে নিয়ে আমাকে শুনিয়ে শুনিয়ে বললো।

এনাজঃ নাভান বাবা।তোমার কি একটা পুতুল বেবী লাগবে?

নাভানঃ না, আমার পুতুল বেবী লাগবে না।

এনাজঃ চুপ বেডা।বল লাগবো।(হালকা ধমক দিয়ে)

নাভানঃ লাগবো না।

আমিঃ একদম ঠিক হয়েছে 🤣।

এনাজঃ খবরদার হাসবে না।চুপ করে থাকো।(রেগে)

আমিঃ 🤭

এনাজঃ ছোট বেবীটা তোমাকে ভাইয়া বলে ডাকবে। তোমার সাথে খেলবে।তোমার কথা শুনবে।বলো একটা পুতুল বেবী লাগবে।তুমি যদি বলো তাহলে বাবাই তোমাকে অনেকগুলো খেলনা কিনে দিবে।তোমাকে নিয়ে খেলতে যাবে।

নাভানঃ আচ্ছা। আগে খেলনা দাও।

এনাজঃ দিবো তো।তার আগে বলো তোমার আম্মুকে পুতুল বেবী লাগবে।

নাভানঃ আম্মু, পুতুল বেবী লাগবে।এটটা(একটা) বাবু এনে দিও বাবাইকে।আমার লাগবো না।

এনাজঃ আবার বলে তার লাগবে না।বলো তোমার লাগবে। একটা পুতুল বেবী লাগবে।

নাভানঃ আত্তা(আচ্ছা)। আম্মু আমার পুতুল বেবী লাগবে। এনে দিও প্লিত(প্লিজ)।

আমিঃ বেবী আনলে কিন্তু তোমাকে আদর করবো না।ঐ ছোট বেবীটাকেই আদর করবো।তখন তোমাকে অনেক মারবো।তুমি যদি রাজী থাকো তাহলে নিয়ে আসবো।

নাভানঃ না না তাহলে লাগবো না।

এনাজঃ বউ ভালো হচ্ছে না কিন্তু। নেগেটিভ কথাবার্তা বলো কেন?

আমি উত্তর না দিয়ে হাসতে লাগলাম।পেট ফেটে হাসি আসছে আমার।এনাজ আমাকে হাসতে দেখে লুচির মতো ফুলছে।বেচারা!!! এনাজ নাভানকে কোলে নিয়ে আমার পাশাপাশি এসে দাঁড়ালো। তারপর ফুসুরফাসুর করে নাভানকে কি যানি বললো।

আমিঃ তোমরা বাপ-বেটা থাকো এখানে। আমি গেলাম।

নাভানঃ দাঁড়াও আম্মু।

পেছন থেকে আমার বাহু নাভান ওর ছোট ছোট দুই হাতে টেনে ধরলো।

নাভানঃ একটা পুতুল বেবী লাগবো আমার।

আমার ভীষণ রাগ হচ্ছে। নিশ্চয়ই আনাইজ্জা কলা তখন ছেলেটাকে এসব বলেছে। আমি কিছু বললাম না।নাভানের হাত ছাড়িয়ে রেগে দ্রুত পায়ে কেবিন থেকে বের হয়ে গেলাম।বের হওয়ার আগে বাবা-ছেলের হি হি শব্দের হাসি শুনতে পেলাম।এখন কিছু বলবো না।দুটোকেই টাইট দিবো।বাবা-ছেলে আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে নেমেছে। এদের ষড়যন্ত্রে যদি আমি পানি না ফেলি তাহলে আমার নামও নোভা নয়।

#চলবে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে