#প্রজাপতির_রং🦋
#Part_33
#Writer_NOVA
এক দিন পর…….
পড়ন্ত বিকেলের মিষ্টি আলোয় আলোকিত এই ব্যস্ত শহর ঢাকা।দুপুরের দিকটা একটু নিরিবিলি থাকলে বিকেল নামলেই শুরু হয় মানুষের আনাগোনা।রিকশা, ভ্যানের টুংটাং আওয়াজে নীরব পরিবেশটা ভারী হয়ে যায়।শুরু হয় কর্মমুখর মানুষের ঘরে ফেরার পালা।সন্ধ্যার আগেই নিজ নিজ নীড়ে ফেরার জন্য চলে এক অদম্য উচ্ছাস। সারাদিনের ব্যস্ততা শেষে একটু স্বস্তির জন্য পাল্লা ধরে চলে মানুষ। কে আগে ফিরতে পারবে নিজে নিজ স্বস্তির জায়গায়।সবকিছু নিয়ম মাফিক চলে।বারান্দায় দাঁড়িয়ে সেই ব্যস্তমুখর শহরটাকে দেখতে ব্যস্ত আমি।কিছু সময় পর সামনের ছোট রোড দিয়ে চলাচল করছে রিকশা,ভ্যান কিংবা মোটরসাইকেল। তাদের যান্ত্রিক শব্দে বিরক্ত আমি।এখন খুব করে কাছে টানছে শহর থেকে দূরে কোন নিরিবিলি পরিবেশ উপভোগ করতে।যেখানে থাকবে না কোন যানবাহনের শব্দ কিংবা এই ব্যস্ত নগরী।সেখানে থাকবে সবুজ গাছ-গাছালিতে পরিপূর্ণ। গাছে গাছে দোয়েল তার লেজ উঁচিয়ে মিষ্টি সুরে গান গাইবে।এক ডালে বসে দুটো শালিক ঝগড়া বাঁধিয়ে দিবে।দূর থেকে ভেসে আসবে ফিঙে পাখির ডাক।কিন্তু এগুলো এখন কল্পনায় মানাবে। সেটা ভেবে বিশাল বড় একটা দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে আকাশের দিকে তাকালাম।নিজেকে আজ বড্ড বেশি একা লাগছে।
আজ অফিস কিংবা রেডিও স্টেশন কোথাও যাইনি।মনটা ভীষণ খারাপ।সেদিন এনাজ এতগুলো কথা শোনানোর পর থেকে নিজের ওপর একটু বেশি অপরাধবোধ কাজ করছে।মোবাইল হাতে নিয়ে কতবার যে এনাজের নাম্বারে ডায়াল করতে চেয়েছি।কিন্তু জড়তার কারণে পারিনি।কোথায় যেনো একটা বাঁধা পাই।হয়তো এতদিন পর হওয়ায় অনেক বেশি জড়তা কাজ করছে।এনাজও আমায় কল করেনি।হয়তো আমার ওপর অভিমান কাজ করছে ওর। নাভান,হিমি ও এরিনের সাথে আছে। মনের আকাশটা আজ বিষন্ন। কিন্তু বাইরের আকাশটা কি চকচকে!
কাঁধে কারো হাতের স্পর্শে ঘোর কাটে।তাকিয়ে দেখি এরিন দাঁড়িয়ে আছে।
এরিনঃ কি হয়েছে তোর? গত পরশু বাসায় ফেরার পর থেকে তোকে অনেক মনমরা লাগছে।তোকে তো কখনো এতটা আপসেট থাকতে দেখিনি।
আমিঃ আমার আবার কি হবে?আমি ঠিক আছি।তোরা শুধু শুধু টেনশন করিস।
এরিনঃ আমার চোখের দিকে তাকা নোভা।মিথ্যে কেন বলছিস?
আমিঃ আরে ধূর।কিছু হয়নি বাদ দে তো।হিমি কোথায়?
এরিনঃ ওর বয়ফ্রেন্ড রাজের সাথে ঝগড়া করে।এদের দুইদিন পর কি হয় আল্লাহ জানে! দুটো দিন যেতে দেরী হয় কিন্তু ঝগড়া করতে দেরী হয় না।ওদের এই রিলেশনটাকে না আমার রিলেশনই মনে হয় না।মনে হয় ঝগড়া কমিটির হেড অফিস।
আমিঃ ওদের কথা ছাড়।তোর বিয়ের খবর কি তাই বল? বিয়ের জল কতদূর গড়ালো।
এরিনঃ সেটা নির্ভর করছে তোর আর এনাজ ভাইয়ের ওপর।(কিছু সময় থেমে চাপা স্বরে বললো)তুই সত্যি আমাদের ফ্রেন্ড মনে করিস না, নোভা।
আমিঃ এমন কথা কেন বলছিস? (চমকে)
এরিনঃ এতবড় বিষয়গুলো আমাদের থেকে লুকিয়েছিস।আমরা কেন আরিয়ানের থেকে জানলাম? তুই তো সবকিছু বলতে পারতি।তোকে কিডন্যাপ করে পর্যন্ত নিয়ে গেলো।তার একবিন্দু কোনকিছু জানি নাআমরা।একবার ভেবেছিস ঠিক সময় তায়াং ভাইয়া, এনাজ ভাইয়া না গিয়ে বাঁচিয়ে আনতো তাহলে তোর কি হতো তোর কোন আইডিয়া আছে তোর? একবার নাভানের কথাও ভাবলি না।
আমিঃ আমি মরে গেলে নাভানকে তোরা লালন-পালন করে বড় করতি।(মুচকি হেসে)
এরিনঃ একটা চড় মারবো ফাজিল মেয়ে। আবার দাঁত বের করিস।সবসময় সবকিছুকে মজা ভেবে উড়িয়ে দিস।
সেদিন বাসায় আসার পর এরিন, হিমি কোনকিছু জিজ্ঞেস না করায় আমি বেশ অবাক হলাম।পরে জানতে পারলাম একদম প্রথম থেকে সবকিছু ওদেরকে আরিয়ান খুলে বলেছে।এর জন্য অনেক টেনশনে ছিলো।এনাজের কথাও সব বলেছে।এনাজ কি করে বেঁচে গেলো,কোথায় ছিলো এতদিন সবই বলেছে।এতে হিমি,এরিন প্রথম প্রথম খুব রাগ করেছিলো।পুরো একটা দিন লেগেছে ওদের রাগ ভাঙাতে।আসার পর থেকে নাভান আমার থেকে সরেনি।কোলের মধ্যে ঘাপটি মেরে ছিলো।চোখও হারায়নি।ভেবেছে আবার যদি দূরে চলে যায়।
এরিনঃ নোভা!!!
আমিঃ হুম বল।
এরিনঃ একটা কথা বলবো।যদি তুই কিছু মনে না করিস।আসলে কথাটা সম্পূর্ণ তোর ব্যক্তিগত বিষয়ে।তাই অনুমতি চাইছি।
🦋🦋🦋
আমি চোখ দুটো ছোট ছোট করে এরিনের দিকে উৎসুক চোখে তাকালাম।কি এমন কথা বলবে এরিন?অবশ্যই সেদিনের ঘটনা সব বিস্তারিত আমি বলে দিয়েছি ওদের। এনাজের রাগারাগি করা, আমাকে থাপ্পড় মারা কোনকিছু লুকায়নি ওদের থেকে।কিন্তু এখন এরিনকে কুচোমুচো করতে দেখে আমি চিন্তায় পরে গেলাম।এরিন আসলে বলবেটা কি?
এরিনঃ আরে এত ভাবিস না।তেমন কিছু না।যদি তুই অনুমতি দিস তাহলেই বলবো।
আমিঃ হুম বল।
এরিনঃ দেখ, যত অভিমান সেটা শুধু তোর আর তাজ ভাইয়া আই মিন এনাজ ভাইয়ার মধ্যে। সেটা তোদের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখ।মাঝ থেকে বাচ্চা ছেলেটাকে কষ্ট দিচ্ছিস কেন বল তো? তোর কথা মতো আমি যা বুঝলাম। তা হলো, এনাজ ভাইয়া জানেই না নাভান কে? তার মানে সে এটাও জানে না যে তার একটা ছেলে আছে। তাহলে তুই কেন বলছিস না তাকে? নাভানের থেকে কেন ওর বাবাকে দূরে রেখেছিস।ওকে ওর বাবার অধিকার থেকে কেন বঞ্চিত করছিস? তোদের মনমালিন্যের প্রভাব কেন নাভানের ওপর পরছে? এই ছোট বাচ্চাটাও তো বাবার অভাবে অপূর্ণ থেকে যাচ্ছে। বাবা থাকতেও কেন ও শূন্যতায় ভুগবে? এতটুকু বয়সে ও কি বুঝে আমি জানি না। তবে আমি দেখেছি, কোন বাচ্চার বাবা ওর সামনে বাচ্চাকে আদর করলে করুন চোখে তা খেয়াল করে।তারপর ওর মুখটা মলিন হয়ে যায়।তোদের সম্পর্কের ভুক্তভোগী কেন এই ছোট বাচ্চাটা হবে আমাকে একটু বলবি? ওর কি দোষ বল? তোদের মধ্যে ওকে কেন টানছিস? কেন ওর কথা তুই এনাজ ভাইয়াকে বলছিস না।বলে দে না রে।আর কত অভিমান নিয়ে থাকবি?এত শক্ত হোস না যাতে নিজের আপন মানুষগুলো কে হারিয়ে ফেলিস।বাচ্চাটাকে আর কষ্ট দিস না।ওর মুখের দিকে তাকিয়ে এবার না হয় মাফ করে দে।এটাই শেষবার।বাচ্চা ছেলেটাকে তার বাবার স্নেহ থেকে দূরে রাখিস না।অনেক তো হলো।এবার না হয় থেমে যা।
আমি মলিন মুখে এরিনের দিকে তাকিয়ে রইলাম।কি উত্তর দিবো তা আমার জানা নেই। কারণ আমি নিজ চোখেও দেখেছি যে পাশের ফ্ল্যাটের বাচ্চা ছেলেটার বাবা যখন তার ছেলেটাকে আদর করে,তখন নাভান এক ধ্যানে সেদিকে তাকিয়ে থাকে।ওর প্রতি আমি সত্যি কি অন্যায় করে ফেলছি?? হিমি, নাভানকে কোলে নিয়ে আমার পেছনে দাঁড়িয়ে আছে। সম্ভবত ও এরিনের সব কথাই শুনেছে। নাভান আমার দিকে তার ছোট ছোট হাত দুটো বাড়িয়ে দিলো।আমি রোবটের মতো করে ওকে কোলে নিয়ে নিলাম।
হিমিঃ তোর জীবন, তোর ইচ্ছামতো চলবি।কিন্তু কখনও এমন কাজ করিস না যার জন্য পরবর্তীতে পস্তাতে হয়।ছেলেটার কথাও চিন্তা করিস। ওর মুখের দিকে তাকিয়ে কিছু কিছু জিনিস মেনে নিতে না চাইলেও মেনে নিস।ওর সাথে কোন অন্যায় করিস না।তোদের সম্পর্ক টানাপোড়েনের প্রভাব ওর ওপর পরতে দিস না।এতে ছেলেটা সুস্থ মন-মানসিকতা নিয়ে বেড়ে উঠতে পারবে না। ওর জন্য হলেও নতুন করে সব গুছিয়ে নে।আমার বিশ্বাস তোরা তিনজনই তাতে ভালো থাকবি।আমার বলার দরকার আমি বললাম।বাকিটা তোর ইচ্ছা।
এরিন,হিমি দুজন ওদের রুমে চলে গেল।আমি নাভানকে শক্ত করে আমার সাথে ধরে শূন্য দৃষ্টিতে নজর দিলাম।আমি বুঝে গেছি কি করতে হবে আমায়।আমি চাই না আমার বাচ্চাটা আর কষ্ট পাক।ওর জন্য হলেও আমার সবকিছু স্বাভাবিক করতে হবে।হ্যাঁ,আমাকে করতেই হবে।এসব কিছুর প্রভাব ওর ওপর আর পরতে দিবো না আমি।
🦋🦋🦋
সন্ধ্যা শেষে রাত নেমেছে বহু আগে।রাতের খাবার খেয়ে বারান্দায় দাঁড়িয়েছি।আজকাল বারান্দায় বেশি ভালো লাগে।নাভান আজ একটু তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে গেছে। বাইরে হালকা ঠান্ডা বাতাস বইছে। বেশ ভালোই লাগছে।দূরের টং দোকানটা এখনো খোলা। সেখনো অনেকগুলো লোক বসে আছে। হয়তো খোশগল্পে মেতে আছে। এদের বাড়ি ফেরার কোন তাড়া নেই। আকাশে আজ বিশাল থালার মতো চাঁদ উঠেছে। তার সাথে জ্বলছে মিটিমিটি তারা।সেদিকে তাকিয়ে আনমনে হেসে উঠলাম।তবে ভাবনার মধ্যে ব্যাঘাত ঘটলো মোবাইল রিংটোন। উঠে গিয়ে টেবিল থেকে মোবাইলটা আনতে ঢেঢ় আলসেমী লাগছে।রিং বাজতে বাজতে অফ হয়ে গেলো।তাই গিয়ে আর আনলাম না।আবার আকাশ দেখায় মনোযোগ দিতে চাইলাম।কিন্তু আবারো ব্যাঘাত ঘটালো অসহ্যকর মোবাইলটা।একঘেয়ে সুরে বেজে উঠলো। আগত্যা ইচ্ছে না থাকা সত্ত্বেও উঠতে হলো।মোবাইল হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছি। আননোন নাম্বারে কল দেখে রিসিভ করবো কি করবো না তাই নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দে ভুগছি।হুট করে রিসিভ করেই ফেললাম।ওপাশ থেকে কারো কোন শব্দ পাওয়া যাচ্ছে না।আমি হ্যালো বলতেই আপরপাশ থেকে শান্ত ভঙ্গিতে সে বলে উঠলো।
—-গেইটের কাছে গাড়ি নিয়ে অপেক্ষা করছি।জলদী চলে এসো।তোমার সাথে আমার কিছু কথা আছে। তোমার সময় মাত্র পাঁচ মিনিট। এর থেকে বেশি দেরী হলে আমি নিজে এসে কোলে করে নিয়ে যাবো।কথাটা মাথায় রেখো।ইউর টাইম ইজ স্টার্ট নাউ।
টুট টুট করে কলটা কেটে গেল।অপরপাশের লোকটা এনাজ ছাড়া অন্য কেউ নয়।এত রাতে আমাদের বাসার সামনে কি করছে?আর তার এটা কি হুমকি ছিলো নাকি স্বাভাবিক কথা ছিলো আমি জানি না।তবে একে দিয়ে বিশ্বাস নেই। যদি উপরে চলে আসে তাহলে সত্যি কোলে করে নিয়ে যাবে।এরিনদের রুমে উঁকি দিয়ে দেখলাম দুজনেই বাতি বন্ধ করে মোবাইল চালাচ্ছে। আমি পা টিপে টিপে দরজা খুলে বের হয়ে গেলাম।যাওয়ার আগে দরজার ছিটকিনিটা বাইরে থেকে লাগিয়ে দিলাম।দালানের সদর দরজায় এসে অবাক হলাম।অন্য সময় দরজা বন্ধ থাকে।কিন্তু আজ খোলা।বেশি কিছু না ভেবে বাইরে চলে এলাম। এসে দেখি এনাজ গাড়ির সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। তাকে দেখে কিছুটা আৎকে উঠলাম। মানুষটাকে পুরো বিধ্বস্ত দেখাচ্ছে। আমার দিকে করুন চোখে তাকালো।সেই চোখের দিকে তাকিয়ে আমার নিজেরই অপরাধী মনে হচ্ছিলো।
আমিঃ এত রাতে এখানে কি করছেন?
এনাজঃ তোমাকে আমার কিছু বলার ছিলো।
আমিঃ জলদী বলুন।আমি এখানে বেশি সময় দাঁড়াতে পারবো না।কেউ দেখে ফেললে তিলকে তাল করে আমার নামে কুৎসা রটাবে।
এনাজঃ ভয় পেয়ো না। তোমাদের বাড়িওয়ালা জানে আমি তোমার হাসবেন্ড। আমি তাকে সবকিছু খুলে বলেছি।কেউ তোমার নামে নালিশ করলেও খাটবে না।কারণ বাড়িওয়ালা সবকিছু জানে।
আমিঃ হু বুঝলাম। কি বলবেন জলদী বলুন।
এনাজ হুট করে এসে আমাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে কাঁধে মুখ গুঁজে দিলো।ঘটনার আকস্মিকতায় কিছুটা চমকে গেলেও নড়লাম না।মিনিট খানিক পর কাঁধে ঠান্ডা কিছুর পরশ পেতেই বুঝলাম সে কাঁদছে।কিন্তু কেন তা খুঁজে পেলাম না।
#চলবে
#প্রজাপতির_রং🦋
#Extra_Part
#Writer_NOVA
এনাজ হুট করে এসে আমাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে কাঁধে মুখ গুঁজে দিলো।ঘটনার আকস্মিকতায় কিছুটা চমকে গেলেও নড়লাম না।মিনিট খানিক পর কাঁধে ঠান্ডা কিছুর পরশ পেতেই বুঝলাম সে কাঁদছে। কিন্তু কেন তা খুঁজে পেলাম না।আমি স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম।তাকে থামানোর চেষ্টা করলাম না।কাঁদুক সে।তাহলে মন হালকা হবে।আমার চোখ বেয়েও নোনাজল গড়িয়ে পরছে।সেটাও মুছলাম না।আমাকে ছেড়ে কিছু দূর দাঁড়ালো। তারপরে চোখ মুছতে মুছতে বললো।
তাজঃ আজ আমি তোমাকে সব খুলে বলবো।আমার উচিত ছিলো আরো আগেই তোমাকে সবকিছু খুলে বলার।কিন্তু আমি আগে তোমার সাথে কিছুটা স্বাভাবিক হতে চেয়েছিলাম।কিন্তু আমি দেখছি এটাই আমার ভুল হয়েছে।তোমাকে সব খুলে বললে হয়তো পরিস্থিতি এমন হতো না।তুমি কি জানো এই দেড়টা বছর তোমাকে আমি ঠিক কোথায় কোথায় খুঁজেছি? আমি সাত মাস কোমায় ছিলাম।আগুনে আমার চেহারা নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। বাম গালের মাংস পুরে হা হয়ে গিয়েছিল। হাতের বাহু থেকে মাংস নিয়ে সেই শূন্যস্থান পূরণ করতে হয়েছিলো।সব মিলিয়ে আমার স্বাভাবিক জীবনে আসতে পুরো একটা বছর লেগেছিল। যখন স্বাভাবিক জীবনে ফিরলাম তখন আমি হন্যি হয়ে তোমার বাড়ি,আত্মীয়-স্বজনের বাড়ি চিরে ফেলেছিলাম।কিন্তু তোমাকে পাইনি।কেউ তোমার কোন খোঁজ দিতে পারেনি।এতে আমার মানসিক অবস্থা অনেক খারাপ হয়ে গিয়েছিলো।ঘুমের ঘোরে আমি তোমার নাম নিয়ে চিৎকার করে উঠতাম।আর যখন তোমার কথা মনে হতো তখন আমি পুরো পাগল হয়ে যেতাম।যার কারণে ইংলেন্ডে আমাকে ট্রিটমেন্ট করতে পাঠিয়ে দিয়েছিলো আমার পালিত বাবা।মানুষটা আমার জন্য অনেক করেছে,জানো।তারপর প্রায় পাঁচ মাসের মতো ট্রিটমেন্ট করে আমাকে আবার সুস্থ করেছে। বাকি দিনগুলো আমার ঐখানেই কাটতো।আমি ট্রমার মধ্যে চলে গিয়েছিলাম।কারো সাথে বেশি একটা কথা বলতাম না।তোমার হাসিখুশি এনাজ পুরো চুপচাপ হয়ে গিয়েছিল। ছয় মাস আগে বাবার বিজনেসে বসলাম।কাজের চাপে সারাদিন ভালোই কাটতো।কিন্তু রাতটা আমার কাছে কিরকম বিষাক্ত ছিলো তা আমি বুঝাতে পারবো না তোমায় বাটারফ্লাই ।কত রাত যে নির্ঘুম কাটিয়েছি মাথা ব্যাথায় ছটফট করতে করতে। তা গুণেও শেষ করতে পারবো না। তোমার কথা মনে হলে আমি নিজেকে ঠিক রাখতে পারতাম না।গত ছয় মাসও তোমাকে এদিক সেদিক খুঁজেছি।কিন্তু তুমি আমার চোখের সামনে ছিলে তাও খুঁজে পাইনি।কারণটা হলো যে হারিয়ে যায় তাকে খুজে পাওয়া যায়। কিন্তু যে নিজ থেকে হারিয়ে যায় তাকে তো খুঁজে পাওয়া যায় না।
লোকটার কথা শুনে আমি হা হয়ে গেলাম।এতটা কষ্ট সহ্য করেছে মানুষটা।আর আমি তাকে ভুল বুঝেই গেলাম।একবারও তার দিকটা বিবেচনা করলাম না।এতটা স্বার্থপর কবে হলাম আমি।নিজেকে মনে মনে ধিক্কার জানালাম।
এনাজঃ কিছু দিন আগে আমি ইংল্যান্ড গিয়েছিলাম মনে আছে তোমার?সবাইকে বলেছিলাম আমি ব্যবসায়ের কাজে গিয়েছি।কিন্তু আমি ডাক্তার দেখাতে গিয়েছিলাম।আমার ঘাড়ে যে বারিটা মেরেছিলো ওরা তার জন্য প্রায় আমি অসহ্যকর মাথা ব্যাথা ও ঘাড় ব্যাথায় ভুগতাম তার ট্রিটমেন্ট করতে গিয়েছিলাম।আল্লাহর রহমতে এখন ভালো আছি।
কথাগুলো বলে থামলো এনাজ।তারপর আমার দিকে একটা অদ্ভুত প্রশ্ন ছুঁড়ে দিলো।যা শুনে আমি হতভম্ব।
এনাজঃ আচ্ছা, বাটারফ্লাই। আমার বাচ্চাটাকে ছয় মাসের পেটে থাকতে কি সত্যি মারা গিয়েছিলো? এই প্রশ্নটা না আমার মাথায় ইদানীং অনেক বেশি ঘুরছে।
আমি চোখ দুটো রসগোল্লা করে এনাজের দিকে তাকিয়ে রইলাম।কি বলে এই ছেলে?আমার বাচ্চা পেটে থাকতে মারা গেলে নাভান এলো কোথা থেকে?
আমিঃ কি বলছেন এসব?
এনাজঃ হ্যাঁ আমি ঠিকই বলছি।এক বছর পর যখন আমি একটু সুস্থ হলাম তখন তোমাদের গ্রামে গিয়েছিলাম তোমার খোঁজে, আমার সন্তানের খোঁজে। তখন সেখানকার হাশেম চাচার বউ বললো আমাদের সন্তান নাকি ছয় মাসের পেটে থাকতে মারা গেছে।তুমি নাকি ওয়াসরুমে পিছোল খেয়ে পরে পেটে ব্যাথা পেয়েছিলো।তার জন্য নাকি ওকে বাঁচানো সম্ভব হয়নি। বিশ্বাস করো এই কথাটা যখন আমি শুনেছি আমার পুরো পৃথিবী থমকে গেছে। আমার চারপাশ ঘুরতে শুরু করেছিলো।আমি শুধু পারিনি চিৎকার করে কাঁদতে।নিশ্চয়ই তোমার এর থেকে বেশি কষ্ট হয়েছে তাই না?তুমি তো ওকে ছয় মাস পেটে ধরেছিলে। আমাদের সন্তানের কথা ভেবে কতরাত যে নির্ঘুমে কাটিয়েছি।ও থাকলে এতদিনে দুই বছর হয়ে যেতো ওর তাই না? আমি তোমকে কথাটা জিজ্ঞেস করবো করবো ভেবেও করিনি।যদি তুমি কষ্ট পাও তাই।প্লিজ তুমি পুরনো কথা মনে পরে ভেঙে পরো না।আমারা বরং আবার একটা বেবী নিবো।
শেষের কথাটা অনেক আশা ও উচ্ছাস নিয়ে বললো।যা শুনে আমার অনেক হাসি পাচ্ছে। কিন্তু আমি হাসলাম না।সিরিয়াস মুহুর্তে হাসা উচিত নয়।তবে
শুনো ছেলের কথা!!!আমি পিটপিট চোখে এনাজের দিকে তাকিয়ে রইলাম। তার চোখ, মুখ উপচে পরছে আকুলতা।তাহলে ঘটনা এই।আমার স্বামী মহাশয় জানে তার সন্তান ছয় মাসের পেটে থাকতে মারা গেছে। তাই কখনও আমাকে বাচ্চার কথা জিজ্ঞেস করেনি।যদি আমি কষ্ট পাই।নাহ,এই মানুষটাকে আর কষ্ট দেওয়া যাবে না।অনেক হয়েছে। এবার সব ঠিক করেই নিবো।করুন চোখে আকুল সুরে এনাজ আমাকে বললো।
এনাজঃ কি হলো বলো? আমি কি বাবা ডাকটা শুনতে পারবো না।দিবে না আমাকে একটা বেবী?
আমিঃ বাচ্চার কথা জিজ্ঞেস করার জন্য অন্য কোন মানুষ পাননি?ঐ হাশেম চাচার বউকেই জিজ্ঞেস করতে হলো? ঐ মহিলা তিলকে তাল বানিয়ে সারা গ্রামে ছড়ায়।আর আপনি গিয়ে তাকেই জিজ্ঞেস করেছেন😤?
এনাজঃ উনাকে জিজ্ঞেস করতেই সে এসব বললো।
হাশেম চাচার বউ হলো সারা গ্রামের লোকের বার্তাবাহক বলতে পারেন।তবে সেটা সঠিক নয়।সব আজগুবি আর ভুল খবর এর কাছে পাবেন।মহিলা একে ওপরের সাথে ঝগড়া লাগাতে বেশ পটু।এবাড়ির কথা ও বাড়ি লাগাবে।ও বাড়ির কথা এ বাড়ি।তাই সবাই তাকে এড়িয়েই চলে।এনাজের মারা যাওয়ার ঘটনার পর কিছুদিন আমি বাবার বাসায় ছিলাম।সেখানে একদিন ওয়াসরুমে সামান্য পিছল খেয়ে পরে গিয়ে পেটে ব্যাথা পেয়েছিলাম।সবাই একটু ভয় পেয়ে গিয়েছিল। ভেবেছে বাচ্চার ক্ষতি হয়ে গেছে। তাই জলদী করে ঢাকায় নিয়ে আসা হয় আমার।যতটা ভয় পেয়েছিলাম সবাই ততটা কিছুই হয়নি।ডাক্তার বলে ছিলো বাচ্চা ঠিক আছে।
তখন এই মহিলা সারা গ্রামে ছড়িয়েছিলো আমার বাচ্চা মারা গেছে। নাভান হওয়ার আগে আমি আর বাসায় যায়নি।আর ঐ মহিলা এদিকে বেশি একটা আসতো না বলে সে জানতো আমার বাচ্চা মৃতই ছিলো।এই ঘটনাকে আমি ততটা পাত্তাই দেইনি।কিন্তু এখন দেখছি সেই সামান্য কথা কতবড় আকার ধরা করেছে। আমার স্বামীর কান অব্দি পৌঁছে গেছে। এটা কোন কথা? কি থেকে কি হলো?আমি ভাবনায় হারিয়ে গেছি।এনাজ আমার চোখের সামনে তুড়ি বাজিয়ে বললো।
এনাজঃ এই কোথায় হারিয়ে গেলে?
আমিঃ কোথাও না।আপনার বেবী লাগবে তাই তো?
এনাজঃ হুম।একটা কিউট, গুলুমুলু বেবী।একদম তোমার মতো।
আমিঃ আপনি দাঁড়ান আমি এখুনি নিয়ে আসছি।
এনাজঃ আরে শোনো এখন কোথা থেকে আনবে? এই মেয়ে কি পাগল হলো নাকি?বাটারফ্লাই শোনো………
🦋🦋🦋
এনাজের কথা পুরোটা শোনার আগেই আমি সিঁড়ির দিকে ভো দৌড় দিলাম।সিঁড়ির সামনে এসে আমি হাঁপিয়ে গেলাম।এতটুকু দৌড়ে হাঁপিয়ে গেছি।এখন কি আর আগের বয়স আছে। এক বাচ্চার মা হয়ে গেছি তো।ধীরে সুস্থে সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠলাম।তারপর আস্তের ওপর দরজার ছিটকিনি খুলে ভেতরে ঢুকলাম। চোরের মতো পা টিপে টিপে রুমে ঢুকলাম।নাভানকে ঘুমন্ত অবস্থায় কোলে তুলে নিলাম।তারপর আবার পা টিপে টিপে বের হয়ে গেলাম।গাড়ির কাছে আসতেই এনাজ আমার দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো।
এনাজঃ এই বাচ্চা কার?
আমিঃ অনলাইন থেকে আপনার নামে অর্ডার করেছিলাম।বছর দুই আগে দিয়ে গেছে।
ব্যঙ্গ সুরে কথাটা বলে মিটমিট করে হাসতে লাগলাম।এনাজ বোকার মতো ফেস করে অবাক হয়ে বললো।
এনাজঃ অনলাইনে বাচ্চা অর্ডার করা যায়?
এনাজের কথা শুনে আমার ভীষণ হাসি পাচ্ছে। মুখ টিপে হেসে বললাম।
আমিঃ হ্যাঁ,যায় তো।আপনি জানেন না।
এনাজঃ কোথায় না তো।আমি তো এসব বিষয় কিছু জানি না।তা বাচ্চাটা তো এখনো ঘুমে।ওকে কেন নিয়ে এসেছো? কার না কার বাচ্চা।
আমিঃ অন্য কারো নয়।এটা আপনার বাচ্চা। যাকে আপনি ছয় মাসের পেটে রেখে গায়েব হয়েছিলেন।
আমার কথা শুনে বিস্মিত চোখে এনাজ আমার দিকে তাকালো।
এনাজঃ মমমমাননে???
আমিঃ মানে হলো এতদিন আপনি ভুল জানতেন।আপনার সন্তান ছয় মাসের পেটে থাকতে মারা যায়নি। এই যে আপনার সন্তান। আপনি এতদিন ভুল ইনফরমেশন জেনে এসেছেন। যদি বিশ্বাস না হয় তাহলে তায়াং ভাইয়াকে জিজ্ঞেস করতে পারেন।
এনাজ হা করে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। চারিপাশটা বাতির আলোয় আলোকিত থাকায় সেটা দেখতে আমার অসুবিধা হলো না।এনাজ হাত দুটো বাড়িয়ে দিলো।তবে ওর হাত থরথর করে কাঁপছে। চোখে পানি টলমল করছে।কাঁপা কাঁপা গলায় বললো।
এনাজঃ এটা আআআমার ছছেললে!!! তুমি ভুল বলছো না তো।আমার অংশ ও!!!
আমিঃ জ্বি না আমি ভুল বলছি না।এটা আপনার ছেলে নাভান।আর সেদিন জিজ্ঞেস করেছিলেন না নাভান কে? এই আপনার ছেলের নামই নাভান।অবশ্য রিয়েল নাম এনান আহমেদ। আমি চিন্তা করছি ওর নাম জন্ম নিবন্ধন কার্ডে এনান আহমেদ নাভান করে আনবো।
এনাজঃ ওকে একটু আমার কোলে দিবে?
আমিঃ দিতেই তো আনলাম।ওকে ঘুম থেকে উঠিয়ে দেই।
এনাজঃ না না ও ঘুমাচ্ছে ঘুমাক।আমি তো ওকে কোলে নিবো শুধু। ঘুম ভাঙালে কান্না করবে তো।
আমিঃ কেন ওর মুখে বাবা ডাক শুনবেন না?
এনাজ চমকে উঠলো। তবে সেটা খুশিতে।মাথাটা উপর নিচ ঝাঁকিয়ে বুঝালো সে শুনতে চায়।আমি নাভানের ঘুম ভাঙানোর জন্য ওকে ডাকতে লাগলাম।
আমিঃ নাভান, এই নাভান। দেখো কে আসছে? তুমি না জিজ্ঞেস করতে বাবা কবে আসবে? এই যে দেখো তোমার বাবা এসেছে। এখন যদি ঘুম থেকে না উঠো তাহলে বাবা কিন্তু চলে যাবো।
এনাজঃ ও কথা বলতে পারে।
আমিঃ হুম সবকিছু বলতে পারে।
নাভান দু হাতে চোখ কচলে আমার কাঁধ থেকে মাথা উঠালো।তারপর আধো আধো কণ্ঠে জিজ্ঞেস করলো।
নাভানঃ বাবা কো?
আমিঃ সামনে তাকাও। দেখো তোমার বাবা এসেছে তোমার সাথে দেখা করতে।
নাভান পিটপিট চোখে সামনে তাকালো।এনাজ দু হাত বাড়িয়ে রেখেছে। নাভান আমার দিকে তাকালো সম্মতির আশায়।আমি মাথা নাড়িয়ে আস্বস্ত করে নাভানকে বললাম।
আমিঃ যাও বাবার কোলে যাও।এটাই নাভানের বাবাই।
আমার সম্মতি পেয়ে নাভান ওর বাবার কোলে চলে গেল। এনাজ ওকে কোলে নিয়ে দিকপাশ না তাকিয়ে সারা মুখে চুমু খেতে লাগলো।সে এখন খুশিতে পাগলপ্রায়। কি থেকে কি করবে।তা সে নিজেই জানে না।ওর চোখ দিয়ে পানি পরছে। নাহ এটা কোন কষ্টের নয়।বরং পৃথিবীর সবচেয়ে বড় সুখের।তাকে অনেকদিন পর এত খুশি হতে দেখলাম।চোখ,মুখে আনন্দ উপচে পরছে। যা দেখে নিজের অজান্তেই হাসি ফুটে উঠলো আমার। হঠাৎ এনাজ নাভানের দিকে ভালো করে খেয়াল করে কিছুটা চমকে উঠে আমাকে বললো।
এনাজঃ ওকেই তো আমি পার্কে দেখেছিলাম।ওহ শীট,কি কপাল আমার।আমি নিজের ছেলেকেও চিনতে পারিনি।কখনও কল্পনাও করিনি এই ছেলে আমার রক্তের হতে পারে।
আমি অবাক চোখে তার দিকে তাকাতেই এনাজ আমাকে পার্কের সব ঘটনা বললো।আমি বিস্মিত চোখে তাদের দিকে তাকিয়ে রইলাম।আল্লাহ তাহলে বাপ-বেটাকে বহু আগেই মিলিয়ে দিয়েছিলো।নাভান শক্ত করে তার বাবার গলা জড়িয়ে ধরে আছে। এনাজও নাভানকে শক্ত করে নিজের সাথে মিশিয়ে রেখেছে।
আমিঃ নাভান।
নাভানঃ হুম।
আমিঃ বাবা কে বাবা বলে ডাক দাও।
নাভানঃ আচ্ছা।
আমিঃ বলো।
নাভানঃ বাবা,ও বাবা,বাবা।আমার বাবা।তুমি কই ছিলা বাবা?আমাদের ছেড়ে আর কোথাও যাইয়ো না।
নাভান বাবা বলে ডাক দিয়ে ওর বাবার গালে আলতো করে চুমু খেলো।এনাজ আবারো খুশিমনে ওকে জড়িয়ে ধরলো।
এনাজঃ আমি আর কখনো তোমাদের ছেড়ে কোথাও যাবো না।আবার বলো বাবা।আরেকবার বাবা বলে ডাক দেও আমাকে।
নাভানঃ বাবা।আমার বাবাই।
এনাজ আবারো বাচ্চাদের মতো চোখের পানি ফেলতে লাগলো।এই ছেলেটার বাচ্চামো দেখে আমি নিজেই অবাক।এক ছেলের বাবা হয়ে গেছে আর সে নিজেই বাচ্চামো করছে।কিছু সময় পরপর নাভানের কপালে,গালে,থুতনীতে চুমু খাচ্ছে।ও পুরো দিশেহারা হয়ে গেছে। এবার নাভানকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে কপালে চুমু খেয়ে কপালে কপাল ঠেকিয়ে রাখলো।নাভান তো ওর বাবার গলায় ছাড়ছে না।কিরকম চুপ করে আছে।হয়তো নাভান ওর বাবার আদর,স্পর্শ, স্নেহগুলো উপভোগ করছে। একেই তো বলে নিজের রক্তের টান।আমি নিরব দর্শকের মতো তাদের বাপ-বেটার কান্ড দেখতে লাগলাম।আজ অন্যরকম ভালো লাগা কাজ করছে আমার।অবশেষে বাবা-ছেলের দেখা হলো তাহলে।আল্লাহর কাছে লাখো কোটি শুকরিয়া। উনি আমার ছেলেকে তার বাবার কাছে ফিরিয়ে দিয়েছে। বাবা-ছেলের মিল দেখে নিজেকে আজ পরিপূর্ণ মনে হচ্ছে।আলগোছে চোখের পানিটা মুছে নিলাম।আর কান্না নয়। আল্লাহ যদি চায় তাহলে এবার বোধহয় আমার সুখের দিন শুরু হবে।
#চলবে