#প্রজাপতির_রং🦋
#Part_31
#Writer_NOVA
—-হাত উপরে উঠা।নয়তো গুলি করে উপরে পাঠিয়ে দিবো।কি বললাম শুনতে পাসনি?হাত জলদী উঠা।
ধমক শুনে সাইমন ও মোরশেদ দুজনেই হাত উপরে তুলে ফেলে।মোরশেদ ওয়াসিম তাচ্ছিল্যের সুরে বলে।
মোরশেদঃ তানভীর রহমান তায়াং যে।তা গোয়েন্দা সাহেব একা এসেছেন নাকি জানে জিগার বন্ধু প্লাস বোনের জামাইকে সাথে নিয়ে এসেছেন?
তায়াংঃ কথা কম বল।নোভা কোথায়?
সাইমনঃ খুঁজে নে।আমরা কেন বলবো?
সাইমনের ত্যাড়া উত্তর দিতে দেরী কিন্তু ওর নাকের মধ্যে ঘুষি পরতে দেরী হলো না। সাইমন নাক ধরে দেখলো রক্ত পরছে।মোরশেদ ওয়াসিম তেলেবেগুনে জ্বলে উঠলো।
মোরশেদঃ তায়াং কাজটা ভালো করলি না।
সাথে সাথে মোরশেদ সাহেবের মুখেও একটা পাঞ্চ মারলো তায়াং।একের পর এক ডিসুম ডাসুম করে মেরেই চলছে ।মনের আশ মিটিয়ে মারছে তায়াং।খবর পাওয়ার সাথে সাথে এখানে চলে এসেছে সে।সাথে এনাজও এসেছে। বাইরের ঝামেলা এনাজকে সামলাতে দিয়ে সে পেছনের দেয়াল বেয়ে ভেতরে ঢুকে গিয়েছে। ধুমছে মারামারি হচ্ছে। মারামারির এক পর্যায় তায়াং-এর হাত থেকে রিভেলভারটা পরে যায়।সাইমন ফাঁকের মধ্যে সেটা তুলে নিয়ে তায়াং-এর মাথায় ঠেকিয়ে ধরে।
সাইমনঃ হাত উঁচু করে সারেন্ডার কর।নয়তো মাথার খুলি উড়ে যাবে।
তায়াং হাত দুটো উঁচু করে ফেলে।মোরশেদ সাহেব ততক্ষণে ফ্লোরের থেকে উঠে শরীর ময়লা ঝাড়তে ঝাড়তে বলে।
মোরশেদঃ এটা কে নিয়ে ওর বোনের রুমে আটকে রাখ।এমনভাবে আটকাস যাতে ছুটতে না পারে।
সাইমনঃ অনুমতি দেও তো একে এখানেই শেষ করে দেই।
তায়াংঃ এত সাহস আছে নাকি তোর?
সাইমন খুব জোরে তায়াং-এর মুখে দুটো পাঞ্চ মেরে বলে।
সাইমনঃ আমার সাহস নিয়ে কথা বলিস না।তাহলে অনেক খারাপ হয়ে যাবে।
তায়াং উচ্চস্বরে হেসে উঠলো। মনে হচ্ছে সাইমন বড় কোন জোকস বলেছে। এর মধ্যে সাইমনদের লোকেরা এনাজকে ধরে নিয়ে এসেছে। এনাজকে দেখে মোরশেদ সাহেব একটা শয়তানি হাসি দিলো।এনাজ সেই হাসির তোয়াক্কা না করে ওকে ধরে রাখা ছেলেগুলোকে ধমক দিয়ে শাসিয়ে বললো।
এনাজঃ আরে ব্যাটারা ছাড় তো।এত শক্ত করে কেউ ধরে।আমার হাড্ডিগুলো তো গুঁড়া গুঁড়া করে ফেললি।
ছাড় আমাকে।আমি এখন পালাবো না।
ঝাড়া মেরে নিজের দুই হাত ছাড়িয়ে নিলো এনাজ।লোকগুলো আবার ধরতে নিলেই মোরশেদ হাত দেখিয়ে থামিয়ে দিলো।এনাজ পকেট থেকে দুটো চুইংগাম বের করে দুটোর প্যাকেট ছিড়লো।তারপর একটা তায়াং-এর দিকে ছুঁড়ে মারলো।তায়াং সেটা ক্যাচ ধরে মুখে পুরে দিলো।এনাজ বাকি চুইংগামটা মুখে নিয়ে ছাগলের মতো চাবাতে চাবাতে মোরশেদের সামনে গিয়ে দাঁড়ালো। মোরশেদ কালো সানগ্লাস পরা আছে। এনাজ সামনে এগিয়ে মোরশেদের সানগ্লাসে তাকিয়ে নিজের চুল ঠিক করতে লাগলো। এনাজের এমন কান্ডে তায়াং,মোরশেদ ছাড়া বাকি সবাই অবাক হলো।তবে তখন যদি মোরশেদ সাহেব ভালো করে খেয়াল করতো।তাহলে দেখতো এনাজ পকেট থেকে কিছু একটা নিয়ে তার চুলের আড়ালে লুকিয়ে ফেলেছে।চুল ঠিক করতে করতে এনাজ মোরশেদের লোকগুলোকে উদ্দেশ্য করে বললো।
এনাজঃ যাঃ পোলাপাইন। আমার স্টাইল করা চুলগুলি সব এলোমেলো করে দিলি।তোদের কি আমি কিছু করছিলাম রে ভাই? শুধু একটু আমার পিছু পিছু দৌড়িয়ে তোদেরকে এক্সারসাইজ করছি।আর তোরা আমার সাধের চুলের স্টাইলটা নষ্ট করে দিলি।দিস ইজ নট ফেয়ার। এখন আমার বউ কি আমার দিকে তাকাবে? এমনি আমার ওপর যা রেগে আছে। যার জন্য এত সুন্দর করে সাজগোজ করে ইমপ্রেস করতে এসেছিলাম।আর তোরা সব নষ্ট করে দিলি।
এনাজের কান্ড দেখে সবাই আহাম্মক হয়ে গেলো। কোথায় ভেবেছিলো এনাজ সবার সাথে ফাইট করবে।তা না করে সে যত্ন সহকারে নিজের চুল ঠিক করছে।শুধু মোরশেদ ও তায়াং চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে। কারণ তারা দুজন জানে এনাজ কারণ ছাড়া কোন ফালতু কাজে মনোনিবেশ করে না।এনাজ চুলগুলো ঠিক করে মোরশেদের সামনে থেকে সরে এলো।তারপর কালো দেখতে মোটা একটা ছেলেকে উদ্দেশ্য করে বললো।
এনাজঃ ঐ কালু,দেখ তো আমার চুলের স্টাইলটা কি এখন ঠিক আছে নাকি?
ছেলেটা অনেকটা বোকা টাইপের। মাথায় বুদ্ধি-সুদ্ধি অনেক কম।সে ঠোঁট ফুলিয়ে মুখটাকে কাঁদো কাঁদো করে বললো।
—- বস,আমার নাম শিপন।কালু না।
এনাজঃ ওহ আচ্ছা। তা শিপন ভাই আমার।আমার চুলের স্টাইলটাকি ঠিক আছে?
—- না বস,বাম দিকটা আরেকটু ঠিক করতে হইবো।
🦋🦋🦋
এদের কথা শুনে সবাই বিরক্ত হচ্ছে।এখন কি এসব করার সময়।সাইমন, শিপন নামের ছেলেটাকে জোরে একটা ধমক দিলো।
সাইমনঃ শালা,তোদের কি আমরা এসব করতে রাখছি? ওর চুলের স্টাইল ঠিক করতে কি তোদের এতগুলো টাকা দিয়ে ভাড়া করছি।হারামজাদা, ওদের হয়ে যদি আরেকটা কথা বলছিস ঘাড় থিকা মাথা ফেলে দিবো।(মোরশেদের দিকে তাকিয়ে)বড় ভাইয়া,তুমিও কি দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে এই পাগলের কান্ড দেখছো?ওকে ধরে আটকাও না কেন?
মোরশেদ কোন উত্তর দিলো না। সে তো এনাজকে ভালো করে লক্ষ্য করছে।এনাজ তার মুখের চুইংগামটা শব্দ করে মোরশেদের শরীরে ফেলে দিলো।
এতে মোরশেদ কোন প্রতিউত্তর করলো না। কিংবা দূরেও সরলো না।
এনাজঃ ওয়াক থু, চুইংগাম কোম্পানি আজকাল দুই নাম্বারি শুরু করছে। একটু চাবাইলে তিতা হয়ে যায়।
সাইমন তার ভাইয়ের চুপ থাকাটা মেনে নিতে পারছে না।তাই হুংকার ছেড়ে এনাজকে শাসিয়ে বললো।
সাইমনঃ তুই একটু বেশি করছিস কিন্তু। এসব ফালতু কাজে টাইম নষ্ট করার মতো টাইম আমাদের হাতে নেই। তাই চুপচাপ আমাদের সাথে চল।
এনাজ ওর কথার উত্তর না দিয়ে মোরশেদের কানের কাছে ফিসফিস করে বললো।
এনাজঃ কি মোরশেদ সাহেব? আছেন কেমন? মৃত এনাজ তোর চোখের সামনে আসছে আর তোদের কোন ভাবান্তর নেই। ওফস সরি। আমি তো ভুলেই গেছিলাম।তুই তো আবার সব আগের থেকে জানিস।অবশ্য তোর চোখে আমি একটু ভয় দেখেছি। নিশ্চয়ই ভাবছিস আমি এতকিছু জানছি কি করে? তায়াং আমাকে সবকিছু খুলে বলেছে।ও তো আমার কেস পুনরায় ওপেন করেছিলো।তখন তোদের দুই ভাইয়ের পুরো কুকীর্তি সব জেনে গেছে। আমার না এখন খুব আফসোস হচ্ছে। জানিস কেন? সেদিন যদি তোর মেজু ভাইয়ের সাথে সাথে তোদের দুই ভাইকে শেষ করে দিতাম।তাহলে হয়তো আমার জীবন থেকে আড়াই বছর হারিয়ে যেতো না। কিংবা আজ এই দিন দেখতে হতো না।যে অন্যায় করে আর যে প্রশ্রয় দেয়,দুজনই তো সমান অপরাধী। সেই হিসেবে তোদের দুজনকে মারলে আমার কোন ভুল হতো না।বরং পৃথিবী থেকে দুটো নরকীট কমে যেতো। তবে সেদিন তোদেরকে ছেড়ে ভুল করলেও আজ করতে চাই না।দুজনকে মেরেই এখান থেকে বের হবো।
সাইমনঃ কি ফুসুরফাসুর করছিস?
তায়াংঃ তুই বাচ্চা ছেলে। তোকে কি বলবে বল তো?
সাইমনঃ চুপ, বেশি কথা বলবি না।
এনাজের কথা শুনে মোরশেদ হো হো করে হাসতে লাগলো।তা দেখে এনাজ মেটেও বিচলিত হলো না।ও জানতো মোরশেদের রিয়েকশন এমনি হবে।
মোরশেদঃ কে কাকে মারে তা একটু পর দেখবি এনাজ।আরেকজন এসে নেক।তাকেও তো আমার পাওয়ার দেখাতে হবে।
তায়াংঃ কে আসবে?
মোরশেদঃ তোর বোনের দিওয়ানা রোশান দেওয়ান।
এনাজঃ রোশান কেন এসবে?(রেগে)
সাইমনঃ আসলেই দেখতে পাবি।
মোরশেদঃ সবাইকে নিয়ে রুমে চল।
ভাড়া করা লোকগুলো এনাজকে ধরে ফেললো।তায়াং-কে রিভেলবার তাক করে পেছনে পেছনে সাইমন চলতে লাগলো।
এনাজঃ আরে ছাড়।আমি কি কোরবানির গরু নাকি যে আমাকে ধরে বেঁধে নিয়ে যেতে হবে।আমি একাই যেতে পারি।
সবাইকে নিয়ে নোভা যে রুমে আছে সেই রুমে নেওয়া হলো।তায়াং,এনাজকে না বেঁধে লোকগুলো দিয়ে ঘেরা দিয়ে বন্দুক তাক করে রাখা হলো।মোরশেদ এগিয়ে গিয়ে ছোট টেবিলের ড্রয়ার থেকে ছোট সাইজের একটা গান বের করলো।সাইমন দুজনের দিকে রিভেলবার তাক করে আছে। কিন্তু ওদের দুজনের ভয়ের কোন রিয়েকশন নেই। বরং দুজন দুজনের দিকে তাকিয়ে মিটমিট করে হাসছে।
মোরশেদঃ সাইমন, নোভার জ্ঞান ফিরা।এত সুন্দর মোমেন্টটাকে ও কেন মিস করবে।নিজের ভাই ও স্বামীর মৃত্যুটা তো ওর নিজের চোখে দেখতে হবে। যেমন আমি দেখেছি।
সাইমন ভাইয়ের আদেশ পেয়ে রিভেলবার টেবিলে রেখে সেখান থেকে পানির বোতল হাতে নিলো।বোতলের খাপ খুলতে খুলতে নোভার সামনে এসে দাঁড়ালো। পানির বোতলটা উঁচু করে নোভার মুখের ওপর ঢালতে লাগলো।এরকম করে ঢালছে যে নাকে, কানেও পানি ঢুকে যাচ্ছে।তাছাড়া ওর নিশ্বাসেরও সমস্যা হতে পারে। যেটা দেখে এনাজের রাগ হলো।রেগে সামনে এগিয়ে আসতে নিলে তায়াং ওর হাত ধরে মাথা নাড়িয়ে না জানালো।
🦋🦋🦋
মুখে পানির স্রোত বইতেই আমার জ্ঞান ফিরলো।কিন্তু পানির তোড়জোড়ের কারণে চোখ খুলতে পারছি না।কয়েক সেকেন্ড পর চোখ খুলে দেখলাম সাইমন বোতল হাতে দাঁড়িয়ে আছে। আমাকে চোখ খুলতে দেখে একটা শয়তানি হাসি দিলো।ওর হাসি দেখে আমার শরীর জ্বলছে। হাতের বোতলটা ছুঁড়ে ফেলে দিলো।আমি চেচিয়ে বলে উঠলাম।
আমিঃ তোকে যে এত অপমান করি, তোর কি শিক্ষা হয় না রে? আবার তোর ঐ বাঁদর মুখখানা দেখাতে চলে এসেছিস।আসলে কি জানিস, কুকুরের লেজ হাজার টানলেও তা বাঁকাই থাকবে।তোরা দুই ভাইও তেমন।কুকুরের জাত।
সাইমন প্রথমপ কোন উত্তর দিলো না। তবে রাগে ওর মুখটা লাল,নীল সিগনাল দিচ্ছে। কিছু সময় পর চেচিয়ে বলে উঠলো।
সাইমনঃ গলার সাউন্ড কমিয়ে কথা বল।একটু সামনে তাকিয়ে তো দেখ।
আমি কপাল কুঞ্চিত করে সামনে তাকাতেই তায়াং ভাইয়া ও এনাজকে দেখতে পেলাম।সাইমনদের বডিগার্ডরা ওদের দুজনের দিকে বন্দুক তাক করে রাখছে।আমি তাকাতেই এনাজ হাত নাড়িয়ে বললো।
এনাজঃ হাই বাটারফ্লাই 😘!!!
হাই বলেই ফালিং কিস ছুঁড়ে দিলো।আমি ভেংচি কেটে তায়াং ভাইয়ার দিকে তাকালাম।
তায়াংঃ ঠিক আছিস তো তুই?
আমিঃ আমি ভালো আছি। তোরা কখন এলি?
এনাজঃ বেশি সময় হয়নি বাটারফ্লাই।
আমিঃ আমি আমার ভাইকে জিজ্ঞেস করেছি।অন্য কাউকে নয়।তাকে তো আমি এখানে আসতে বলিনি।
সে কেন এসেছে? দরদ দেখাতে?
এনাজঃ ঢং😏😏!!!
এনাজের ভেংচি কেটে ঢং বলতে দেখে আমার রাগ উঠে গেলো।আমি তায়াং ভাইয়াকে চেচিয়ে বললাম।
আমিঃ ভাইয়া এই আনাইজ্জারে চুপ করতে কো।আমার এটারে সহ্য হইতাছে না।
তায়াংঃ কি শুরু করলি তোরা ভাই?এখন কি এসব করার সময়?
আমাদের কথা বলার মাঝে এনাজ একটা অদ্ভুত কাজ করলো।ওর সামনে থাকা লোকগুলোকে ধাক্কা মেরে দৌড়ে আমার কাছে চলে এলো।তারপর কিছুটা উবু হয়ে শক্ত করে আমাকে জড়িয়ে ধরলো। আমি ওর কান্ডে হতবাক।
সাইমনঃ আরে তোরা তাকিয়ে দেখছিস কি?নিয়ে আয় ওকে।
সাইমন ওদের লোকদের উদ্দেশ্য করে কথাগুলো বললো।ততক্ষণে এনাজ আমাকে ছেড়ে দিয়েছে।ওর চোখ দুটো টলমল করছিলো। আমার কপালে আলতো করে ঠোঁট ছুঁয়ে দিলো।তারপর লোকেরা ওকে ধরার আগেই চোখের পানি আড়ালে মুছে নিজের জায়গায় ফিরে গেল।এনাজের এমন কান্ডে আমি স্তব্ধ হয়ে গেছি।
মোরশেদঃ অনেক অভিনয় হইছে। এবার খেলা শুরু হয়ে যাক।
মোরশেদ ওয়াসিম টেবিলের ওপর এক পায়ে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলো।কথাগুলো বলে গুটি গুটি পায়ে এনাজ ও তায়াং-এর দিকে এগুতে লাগলো।ওদের সামনে গিয়ে আমাকে উদ্দেশ্য করে বললো।
মোরশেদঃ তা ভাবীজী,কাকে প্রথমে মারবো? আপনার প্রাণপ্রিয় ভাইকে নাকি স্বামীকে?
সাইমনঃ ওকে জিজ্ঞেস করার কি আছে? তোমার যাকে ইচ্ছে হয় মেরে দেও।মারাটাই বড় কথা।তাছাড়া ও বা কত বড় গুরুত্বপূর্ণ মানুষ যে ওর কাছ থেকে জেনে নিতে হবে?
মোরশেদঃ তুই শুধুই রাগছিস সাইমন।তার প্রিয়জন যেহেতু তাকেই তো জিজ্ঞেস করবো।
এতক্ষণ সাহস দেখালেও আমার এখন ভীষণ ভয় করছে।মোরশেদ এগিয়ে গিয়ে এনাজের কপাল বরাবর গান ঠেকালো।কিন্তু এনাজের চোখ, মুখে কোন ভয় নেই। সে জোরে চেচিয়ে বলে উঠলো।
—–আরে রোশান দেওয়ান যে!!!!
#চলবে
#প্রজাপতির_রং🦋
#Bonous_Part
#Writer_NOVA
—আরে রোশান দেওয়ান যে!!!!
রোশানের কথা শুনে সবাই দ্রুত গতিতে দরজার দিকে তাকালো।তাকিয়ে দেখলো সেখানে কেউ নেই। এনাজ ওদের বোকা বানিয়েছে।সেই ফাঁকে এনাজ মোরশেদের হাত থেকে গান কেড়ে নিয়ে পেছন থেকে একহাতে ওর গলা জড়িয়ে ধরে আরেক হাতে মাথায় গান তাক করে ধরলো।
এনাজঃ কেউ কাছে আসার চেষ্টা করলে সোজা ওপরে পাঠিয়ে দিবো।
সবাই ভয় পেয়ে গিয়েছিল। কিন্তু এবার রোশান সত্যি সত্যি এসে পুরো প্লানটাই চৌপট করে দিলো।বাইরে থেকে দৌড়ে এসে দরজা দিয়ে ঢুকতে ঢুকতে বললো।
রোশানঃ আমার নোভা কোথায়? তোমরা ওর কোন ক্ষতি করো না প্লিজ।
দরজা দিয়ে দ্রুত গতিতে ঢুকতে ঢুকতে রোশান কথাগুলো বললো।সবার নজর এখন রোশানের দিকে।সেই সুযোগে মোরশেদ ওয়াসিম সেম এনাজের মতো করে নিজেকে ছাড়িয়ে গান হাতে নিয়ে নিলো।তারপর এনাজের মাথায় ঠেকালো।সাইমন দৌড়ে গিয়ে রিভেলবার হাতে রোশানের মাথায় ঠেকালো।রোশান আগাগোড়া কিছু না বুঝে বোকার মতো তাকিয়ে রইলো।
এনাজঃ রোশান বাবু,আরেকটু পর এলে কি হতো?(রেগে)
তায়াংঃ দিলেন তো আমাদের সব প্ল্যানে জল ঢেলে।
রোশানঃ আমি কি করলাম? আর তোমরাই বা কে? ওহ্ তোমাকে তো চিনতে পেরেছি। মুরাদ সাহেবের বড় ছেলে তাজরান।কিন্তু তোমার সাথেরটা কে?
এনাজঃ আমি এনাজ।নোভার স্বামী। আর ও আমার বন্ধু প্লাস নোভার খালাতো ভাই তায়াং😊।
এনাজের নাম শুনে রোশানের চোখ দুটো বড় বড় হয়ে গেলো।অবিশ্বাস্য চোখে বললো।
রোশানঃ এনাজ তো মারা গেছে। তুমি মিথ্যে কেন বলছো?তুমি তো তাজ!!!
তায়াংঃ সত্য-মিথ্যের বিচার পরে হবে। আগে এদের সাথে লড়াই করেন।
কথাগুলো বলে তায়াং ভাইয়া ওর সামনে থাকা লোকটার পেটে একটা লাথি মারলো।এনাজ দুই হাত নাড়িয়ে অনেকটা কুংফু স্টাইলে মোরশেদের হাত থেকে গানটা ফেলে দিলো।রোশান কিছু সময় এদিক সেদিক তাকিয়ে বোকার মতো সাইমনের দিকে তাকালো। তারপর এক ঘুষিতে সাইমনকে দূরে পাঠিয়ে দিলো।সাইমনের নাকের তেরটা তো তায়াং আগেই বাজিয়ে ছিলো।নতুন করে রোশান বাজালো।সাইমন ভেবেছিলো রোশান ফাইট করতে পারে না।অথচ সাইমন তো জানে না রোশান ছোটবেলা থেকে এসবে দক্ষ।আমি চেয়ারে বসে বসে ওদের ফাইট দেখছি।এখন পপকর্ণ হলে খারাপ হতো না।বসে থাকতে থাকতে আমার কোমড়ের হাড্ডি বাঁকা হয়ে গেলো।হাত দুটো রশি দিয়ে বেঁধে রাখার কারণে অবশ হয়ে আসছে।কিন্তু আমাকে এখান থেকে ছুটানোর প্রয়োজন কেউ মনে করছে না।কিন্তু এর মধ্যে ঘটলো এক বিপত্তি। সাইমন সুযোগ বুঝে আবারো রিভেলবার তুলে এনাজের দিকে তাক করে বললো।
সাইমনঃ সবাই থেমে যাও।নয়তো একে শেষ করে দিবো।আমি বলছি থেমে যাও।
রোশান থেমে গিয়ে হাত দুটো ওপরের দিকে তুলে ফেললো।কিন্তু তায়াং ভাইয়া এখনো থামছে না।মোরশেদকে মেরেই যাচ্ছে। সেটা দেখে সাইমন আবারো হুংকার দিলো।
সাইমনঃ তায়াং থাম বলছি।নয়তো একে মেরে ফেলবো।
তায়াংঃ মারবি যখন মার।এত বারবার বলার কি আছে?
তায়াং ভাইয়ার এমন হেয়ালি মার্কা কথাবার্তা শুনে আমার ভয় করছে।যদি সত্যি এনাজকে মেরে ফেলে।
তাহলে এবার সত্যি সত্যি বিধবা হয়ে যাবো।আমার ছেলেটা পুরোপুরি বাবার আদর থেকে বঞ্চিত হবে।আল্লাহ জানে নাভান কেমন আছে?আমার ছেলেটা ভালো থাকলেই চলবে।নাভান ভালো থাকলে আমি আজ এখান থেকে বেচে না ফিরলেও আমার কোন দুঃখ নেই।
সাইমন সিরিয়াস ভঙ্গিতে রিভেলবারের ট্রিগার চেপে ধরলো।আমি চোখ বন্ধ করে দরুদ পড়ছি আর আল্লাহ কে ডাকছি।গুলির শব্দ না পেয়ে পিটপিট করে তাকাতে দেখতে পেলাম সাইমন ট্রিগার চেপে গুলি করার চেষ্টা করছে কিন্তু হচ্ছে না। সেটা দেখে এনাজ, তায়াং দুজনেই হাসছে।
তায়াংঃ সো স্যাড সাইমন বাবু।রিভেলবারে একটা বুলেটও নেই। সব বুলেট আমার পকেটে।
সাইমন পুরো আহাম্মক। রিভেলবারে একটা বুলেটও নেই আর সে এটা এতক্ষণেও টের পেলো না। আর তায়াং তখন থেকে এই রিভেলবার নিয়ে ওদের এরকম বোকা বানালো।এনাজ সাইমনের হাত থেকে রিভেলবার ফেলে এলোপাতাড়ি ওকে মারতে লাগলো।রোশানও ওদের লোকদের মারছে।এখন তায়াং ভাইয়া মোরশেদের হাতে মার খাচ্ছে। হঠাৎ সাইমন চিৎকার করে উঠলো।
সাইমনঃ ভাইয়াআআআআআআআ!!!
🦋🦋🦋
ওর চিৎকারে সবাই ওর দিকে তাকালো। আমার চোখ কপালে।সাইমনের গলা বেয়ে ফিনকি দিয়ে রক্ত পরছে। আমি এনাজের দিকে তাকাতেই দেখতে পেলাম ওর হাতে রক্তাক্ত ছোট একটা ধারালো ব্লেড।যেটা ও কিছু সময় আগে চুল থেকে বের করেছে।সাইমন ধপ করে নিচে পরে গেল।মোরশেদ দৌড়ে সাইমনের কাছে ছুটে এলো।সাইমনের মাথাটা নিজের কোলে নিয়ে ব্যস্ত ভঙ্গিতে পাগালোর মতো বলতে লাগলো।
মোরশেদঃ ভাই তোর কি হয়েছে? ভাই, কথা বল তুই। তোর কিছু হতে দিবো না আমি।তোর কিছু হবে না।
মোরশেদ সাহেব সাইমনের নাকের সামনে দুই আঙুল রেখে সাইমন বলে চিৎকার করে উঠলো।এনাজ ওর সামনে এক হাঁটু মুরে বসলো।
এনাজঃ তোর ভাই আর নেই রে।অনেক ভালো ছেলে ছিলো।আমার খুব কষ্ট হচ্ছে ওর জন্য।মন খারাপ করিস না।পৃথিবীতে কেউ চিরদিন বেঁচে থাকে না।কষ্ট পাস না।একটু পর তুইও ওর সাথে চলে যাবি।দুজন একসাথে দেখা করতে পারবি।তোর ভাই আগে গিয়েছে। তুই না হয় একটু পরে যা।
এনাজের এসব গা জ্বালানো কথা শুনে মোরশেদ রেগে কাঁদতে কাঁদতে চেচিয়ে বললো।
মোরশেদঃ তোকে জিন্দা ছাড়বো না আমি।
এনাজঃ আমি ওকে বেশি কিছু করিনি তো।যাস্ট একটা গলা বরাবরি ব্লেডটা দিয়ে পোঁচ দিয়েছি।সাথে সাথে পরপারে।তোর সানগ্লাসে চুল ঠিক করতে করতে যে চুলের মধ্যে ব্লেডটা লুকালাম তাও দেখতে পাসনি? এতো কাঁচা খেলোয়াড় হয়ে খেলতে কেন নেমেছিস?আমরা দুই বন্ধু তো তোদের দুই ভাইকে কিভাবে মারবো তার প্ল্যান করেই এসেছি।
মোরশেদঃ আমি তোকে ছাড়বো না এনাজ।(চিৎকার করে)
এনাজঃ কেন রে খুব কষ্ট হচ্ছে? খুব বেশি কষ্ট হচ্ছে? আমারো হয়েছিল। যখন তুই আমার ছোট ভাইকে মেরে ফেলতে চেয়েছিলি।সেদিন তায়াং না থাকলে তো মেরেই ফেলতি।তাই তো ওকে অস্ট্রেলিয়া পাঠিয়ে দিয়েছি আমি।নিজের ফ্ল্যাটটাও বিক্রি করে দিয়েছি।যাতে ওর কোন খোঁজ না পাস।আমার ভাই আড়াই বছর ধরে আমার চোখের আড়ালে।আমার স্ত্রীর থেকেও দূরে রেখেছিস।মরতে মরতে বেঁচে গেছি আমি।জিন্দা লাশ হয়ে ছিলাম।আমার ভেতরের অস্তিত্ব বিলীন হয়ে গিয়েছিলো।
এনামকে একবার কিছু লোক মেরে গুরতর আহত করে রাস্তায় ফেলে গিয়েছিলো। ভাগ্যক্রমে তায়াং ভাইয়া সেদিন ঐ রাস্তা দিয়ে ফিরছিলো।দূর থেকে কিছু ছেলেকে কাউকে মারতে দেখে দৌড়ে যায়।তায়াং ভাইয়াকে দেখে ওরা পালিয়ে যায়। তায়াং ভাইয়া গিয়ে দেখে সেটা এনাম।দ্রুত ওকে হসপিটালে ভর্তি করে।সেই মাসেই এনাম অস্ট্রেলিয়া চলে যায়।এসব কথা আমি আগে জানতাম না।কয়েক দিন আগে তায়াং ভাইয়া বলেছিলো।
সাইমনের গলার কাছ দিয়ে সরু রক্তের ধারা বইছে।আমার মাথা ঘুরাচ্ছে তা দেখে।নিজের চোখের সামনে এরকম মৃত্যু দেখলাম।তাও আবার আমার স্বামীর হাতে হয়েছে।সাইমন যতই খারাপ হোক।আমি ওর মৃত্যু এভাবে চাইনি।মোরশেদ সাহেব সাইমনকে ছেড়ে এনাজের সাথে ফাইট করা শুরু করলো।আমার এসব দেখতে আর ভালো লাগছে না। তাই আমি অন্য দিকে চেয়ে রইলাম।হঠাৎ একটা গুলির শব্দে সব নিশ্চুপ হয়ে গেলো।আমি ভয় পেয়ে চট করে সেদিকে তাকালাম।মোরশেদ ওয়াসিম মুখ থুবড়ে নিচে পরে গেলো।রোশানের হাতে থাকা গানের থেকে ধোঁয়া বের হচ্ছে। আমি বিস্ফোরিত চোখে ওর দিকে তাকিয়ে রইলাম।তায়াং ভাইয়া,এনাজও অবাক।মোরশেদের সাঙ্গপাঙ্গরা দৌড়ে পালাতে নিলে সবকটা কে ধরে আচ্ছা পিটুনি দিলো। রোশান গানটা মোরশেদ ওয়াসিমের সামনে ফেলে দৌড়ে আমার কাছে এসে হাতের বাঁধন খুলতে লাগলো।
রোশানঃ তুমি ঠিক আছো তো? তোমার কোথাও লাগেনি তো? আমি পুরো পাগল হয়ে গেছিলাম।
তায়াংঃ কি করলেন আপনি এটা?
রোশানঃ আপনাদের যা করার দরকার ছিলো তা আমি করে দিলাম।
এনাজঃ আপনি মারলেন কেন? ওর সাথে শত্রুতা আমাদের,আপনার নয়।
রোশানঃ ও আমার পাখিকে এখানে আটকে রেখে কষ্ট দিয়েছে। তাই মেরে ফেলছি।আপনারা কোন টেনশন করো না। আমার আইনমন্ত্রীর সাথে ভালো সম্পর্ক আছে। আমি সব সামলে নিবো।
তায়াংঃ তার কোন দরকার নেই। আমিই ইনফর্ম করে দিচ্ছি দুই পক্ষ পাল্টা গোলাগুলিতে মোরশেদ নিহত হয়েছে।
🦋🦋🦋
তায়াং ভাইয়া সামনে থেকে সরে গিয়ে পকেট থেকে মোবাইল বের করলো।তারপর তার আন্ডারে থাকা কর্মীদের কল করে এখানে চলে আসতে বললো।মোরশেদের বাকি সাঙ্গপাঙ্গরা একেকজন আহত হয়ে এদিক সেদিক পরে আছে। রোশান আমার বাঁধন খুলে হাত ধরে দাঁড় করালো।এনাজ এসে এক ঝাটকায় রোশানের হাত থেকে আমার হাত ছাড়িয়ে নিজে ধরে নিলো।
এনাজঃ আমাদের সাহায্য করার জন্য ধন্যবাদ। তবে আমার বউয়ের দিকে নজর না দিলেই খুশি হই।ওকে সামলানোর জন্য আমি আছি।
রোশানঃ নোভা,ও কি তোমার এনাজ?
দুজনের মুখেই রাগ স্পষ্ট। আমি একবার এনাজের দিকে তাকাই আরেকবার রোশানের দিকে।
রোশানঃ কি হলো বলো?
আমি উপর নিচ করে মাথা ঝাঁকালাম। রোশান তীক্ষ্ম চোখে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। এনাজের মুখে বিজয়ের হাসি।
রোশানঃ সত্যি এটা তোমার এনাজ?
আমিঃ হুম।
রোশানঃ তাহলে এতদিন আমায় কেন বলোনি?
আমিঃ আমি নিজেই জানতাম না আপনাকে কি বলবো?(বিরবির করে)
রোশানঃ কি বিরবির করছো? স্পষ্ট করে বলো।(রেগে+ চিৎকার করে)
এনাজঃ আস্তে কথা বলুন।আমাদের সাহায্য করেছেন বলে যে আপনি আমার বাটারফ্লাইয়ের সাথে যা খুশি তা ব্যবহার করবেন তা কিন্তু আমি টলারেট করবো না।
রোশানঃ আপনি চুপ করুন।আমি আপনার সাথে কথা বলছি না।
এনাজঃ এ পাগল হয়ে গেছে। চলো তো বাটারফ্লাই।
এনাজ আমার এক হাত ধরে টেনে নিয়ে যেতে লাগলো।তখুনি আমার আরেক হাতে টান পরলো।আমি পেছন তাকিয়ে দেখি রোশান অন্য দিকে ঘুরে শক্ত করে আমার হাত ধরে আছে। আমি থেমে যাওয়ায় এনাজ চেচিয়ে উঠলো।
এনাজঃ কি হলো থামলে কেন?
আমিঃ আমার হাত।( মুখ কুচোমুচো করে)
এনাজঃ রোশান ওর হাতটা ছাড়ুন।
রোশানঃ আমি ছাড়বো না। দেখি আপনি ওকে আমার কাছ থেকে কি করে নিয়ে যান?
এনাজঃ আমি ওর হাসবেন্ড। আমার পুরো অধিকার আছে ওর ওপর।
রোশানঃ গত আড়াই বছর এই অধিকারবোধটা কোথায় ছিলো আপনার, মিস্টার এনাজ?
এনাজঃ সেই কৈফিয়ত আমি আপনাকে দিবো না। ওর হাত ছেড়ে দিন।
রোশানঃ আমি ছাড়বো না।
দুজন আমার হাত ধরে তর্ক শুরু করে দিয়েছে।আমি অসহায়ের মতো কিছুখন এনাজের দিকে কিছুখন রোশানের দিকে তাকাচ্ছি। বিশ্বাস করেন রাসেল ভাই,আমার এখন “ফুল নেবো নাকি অশ্রু নেবো” মুভির ঐ গানটা অনেক মনে পরছে।”বিধি তুমি বলে দাও আমি কার?” মুহূর্তে কল্পনার জগতে চলে গেলাম।আমি এই গানটা গাইছি।
আমিঃ বিধি তুমি বলে দেও আমি কার? দুটি মানুষ একটি মনের দাবিদার।
রোশানঃ আমি পৃথিবীর এই বুকে আগুন জ্বালিয়ে দিবো, তুমি যদি আমারি না হও।
এনাজঃ তুমি বিশ্বাসঘাতকতা করো না প্রিয়া।আমি ছাড়া তুমি কারো নও।
হঠাৎ একটা গুলির শব্দে আমার কল্পানার জগৎ হাওয়ায় মিলিয়ে গেলো।আমার তো কোনদিকে হুশ ছিলো না। হুট করে তায়াং ভাইয়ার কথা মনে পরলো।তায়াং ভাইয়া তো এখানেই ছিলো।সে কোথায় গেল?গুলির শব্দে তিনজন চমকে উঠলাম।আমি এদিক সেদিক তাকিয়ে আৎকে উঠলাম।এনাজ, রোশানের থেকে হাত ঝাড়া মেরে ছাড়িয়ে চোখ বন্ধ করে জোরে চিৎকার করে বলে উঠলাম।
আমিঃ তায়াং ভাইয়া!!!!
#চলবে