#প্রকৃতির_বিচার
#পর্ব_০৭
#লেখিকা_Fabiha_bushra_nimu
“তুমি এত রাতে এখানে কী করছো? তোমাকে না বলেছি তুমি এই কয়টা দিন আমার সাথে দেখা করতে আসবে না। তবুও আমার কথা শুনছো না কেন বলো তো?”
নয়নার কথায় জোহান রেগে গিয়ে বলল, “আমার তোমাকে দেখতে ইচ্ছে করছিল। তাই চলে আসলাম। তোমার স্বামী কোথায়? নয়না তুমি চাইলে আজকেই আমরা পালিয়ে যেতে পারি। চলো না আমরা এখন পালিয়ে যাই।”
নয়না দাঁতে দাঁত চেপে বলল, “আমি তোমাকে কতবার বলব আমি তোমার সাথে কোথাও যাব না। তবুও তুমি আমার কথা শুনছো না কেন? আমি তোমাদের দু’জনের সাথে সারাজীবন সম্পর্ক রাখতে চাই। তাই আমাকে পেতে হলে তোমাকে মানিয়ে নিয়ে চলতে হবে। তুমি যদি মানিয়ে নিয়ে চলতে না পারো তাহলে আমাকে ভুলে যাও। আমি এত সুখের সংসার ছেড়ে তোমার মতো বেকারের সাথে পালিয়ে যাব না।”
“তুমি যে এতবড়ো প্রতারক সেটা আমি আগে জানতাম না। আমি আজ বেকার আছি। তোমাকে পেয়ে গেলে কালকে ঠিক কাজ করব।”
উড়ান বসারঘর থেকে চেঁচিয়ে বলল, “এতরাতে কে এসেছে নয়না?
“আমি চিনি না ভুল করে আমাদের বাড়িতে চলে এসেছে। তুমি ঘরে যাও আমি কথা বলে বিদায় দিয়ে আসছি।”
উড়ান নয়নার ঘরে চলে গেল। নয়না জোহানের মুখের ওপরে দরজা লাগিয়ে দিল। জোহান রাগান্বিত হয়ে নয়নার ফোনে মেসেজ পাঠাল।
“আজ রাতে যদি আমার ফোন না ধরো। তাহলে তোমার আর আমার সব ভিডিও এবং ছবি তোমার স্বামীর কাছে পাঠিয়ে দিব। আমি তোমাকে ভালোবেসেছি। আমার ভালোবাসা কীভাবে ছিনিয়ে নিতে হয়। সেটা আমি জোহান আমার ভালো করেই জানা আছে।”
মেসেজ শেষে জোহান কয়টা ছবি এবং দুটো ভিডিও পাঠাল। উড়ানের হাত থেকে ফোনটা পড়ে গেল। তার বুকের মধ্যে জ্বালা পোড়া করতে লাগল। সে অবিশ্বাস্য নয়নে নয়নার ফোনের দিকে তাকিয়ে আছে। আঁখিযুগল রক্তিম বর্ণ ধারণ করেছে। চোখের কার্ণিশে অশ্রু এসে জমা হয়েছে। নয়না ঘরে এসে উড়ানকে কাঁদতে দেখে অস্থির হয়ে বলল, “কী হয়েছে তোমার? তুমি কাঁদছ কেন?”
উড়ান হেসে বলল, “কই কাঁদছি না তো। আমার চোখের মধ্যে একটা পোকা ঢুকে গিয়েছে। সেজন্য চোখ ডলেছি তাই চোখ লাল হয়ে গিয়েছে। অনেকে রাত হয়ে গিয়েছে ঘুমাবে না নয়না?”
“তোমার মন খারাপ হয়ে গেল কেন উড়ান। তুমি কী আমার উপরে কোনো কারণে রাগ করেছ?”
“আমার শরীরটা ভালো লাগছে না। আমি ঘুমিয়ে পড়লাম। তুমি কিছু মনে করো না। তুমি খেয়ে শুয়ে পড়বে কেমন।”
কথাগুলো বলেই উড়ান চোখ বন্ধ করল। তার ভেতরে তোলপাড় সৃষ্টি হয়ে গিয়েছে। তার বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে নয়না এমন কিছু করতে পারে। তার নয়না তো এমন ছিল না তবে নয়না এমন হয়ে গেল কেন? যে নয়নাকে সে বিয়ে করেছিল এটা তো সেই নয়না নয়। উড়ান কাঁদছে। তার বুক ভারি হয়ে আসছে। তার বিশ্বাস নয়না ভেঙে টুকরো টুকরো করে দিয়েছে। উড়ানের রাতে ঘুম আসলো না। সে ভেতর থেকে দুমড়েমুচড়ে যাচ্ছে। ঘড়ির কাঁটায় রাত তিনটা বাজে নয়নার ফোন বেজে উঠল। নয়না উঠে বেলকনিতে চলে গেল। উড়ানও নয়নার পেছনে পেছনে গেল। নয়না রাগান্বিত হয়ে বলল, “আমি তোমাকে কতবার বলেছি। তুমি আমাকে যখনতখন ফোন দিবে না। আমাকে বেশি বিরক্ত করলে আমি তোমাকে পুলিশে ধরিয়ে দিব।”
জোহান শব্দ করে হেসে বলল, “তুমি যদি আমার ফোন না ধরতে তাহলে আমি তোমার স্বামীকে সবকিছু দেখিয়ে দিতাম।”
“তুমি আমাকে ভয় দেখাচ্ছো?”
“হ্যাঁ দেখাচ্ছি।”
“আমার স্বামী তোমাকে বিশ্বাস করবে না। আমার স্বামী আমাকে অনেক ভালোবাসে। তুমি চাইলেও আমাদের মধ্যে ফাটল ধরাতে পারবে না।”
“তুমি আমার সাথে আসবে না তাই তো?”
“হ্যাঁ যাব না।”
“আমি যদি তোমাকে না পাই তাহলে উড়ানকেও পেতে দিব না।”
“তোমার এমন অবস্থা করব তুমি ভাবতেও পারবে না। তোমাকে মেরে তোমার লা’শ গুম করে দিব। তোমার দেহখানা কুকুর দিয়ে খাওয়াব আমি।”
“তোকে কিন্তু খু’ন করে ফেলব নয়না।”
“তুই আমার কিছু করতে পারবি না। তার আগেই তোর উপরের টিকিট কেটে ফেলব আমি।”
“আমি তোকে বাঁচতে দিব না। আমি উড়ানকে সব সত্যি কথা বলে দিব।”
“পারলে আমার বা*ল ফেলিয়ে নিস।”
নয়না রেগে কল কেটে দিল। সে জোরে জোরে শ্বাস নিচ্ছে। উড়ান মলিন কণ্ঠে বলল, “এত রাতে কার সাথে কথা বলছিলে নয়না?”
“তুমি ঘুমাওনি?”
“তোমার চেঁচামেচিতে ঘুম ভেঙে গিয়েছে।”
“আমি রিয়ার সাথে কথা বলছিলাম।”
“রিয়াকে একটু কল দাও। আমি রিয়ার সাথে কথা বলব।”
“রিয়া এতক্ষণে ঘুমিয়ে গিয়েছে।”
“মাত্রই তো কথা বলল!”
“তুমি কি আমাকে সন্দেহ করছো?”
“তুমি যে জোহানের সাথে কথা বললে সেটা কেন বলছো না।”
“এই ছেলেটা একদম ভালো না। তুমি আর ওর নাম আমার সামনে নিবে না।”
“যখন ওই ছেলেটার সাথে শুয়েছ তখন অনেক ভালো লেগেছে বুঝি।”
“উড়ান এসব তুমি কী বলছো? তোমার মাথা খারাপ হয়ে গিয়েছে! তোমার মন মানসিকতা এতটা নিচু সেটা আমি জানতাম না।”
“তোমার শরীরে এত তেজ সেটাও আমি আগে জানতাম না। বয়ফ্রেন্ডের সাথে রুম ডেট করেছ। সেটা আবার ভিডিও করেছ। বয়ফ্রেন্ডের সাথে লিপকিস করেছ সেটার ছবি তুলেছ। এত তেজ কোথায় থেকে পাও? আমি মাসে মাসে যে টাকা পাঠাই সেই টাকায় খেয়ে অন্যের বিছানায় গিয়ে সুখ দাও।”
“আমার নামে মিথ্যা বদনাম দিবে না। তুমি এসব কথা বলছো তার কী প্রমাণ আছে তোমার কাছে?”
উড়ান নিজের ফোন বের করে দু’টো ভিডিও এবং দশটা ছবি দেখাল। নয়নার মাথা নিচু হয়ে গেল। নয়না কাঁদতে কাঁদতে উড়ানের পা জড়িয়ে ধরে বলল, “আমার ভুল হয়ে গিয়েছে। আমাকে তুমি মাফ করে দাও। আমি কীভাবে কী করে ফেললাম নিজেও বুঝতে পারিনি। আমি আর জীবনে এমন ভুল করব না। জোহান আমাকে হু’ম’কি দিচ্ছে তুমি আমাকে জোহানের হাত থেকে বাঁচাও। আমি শুধু তোমাকে ভালোবাসি আর তোমার সাথেই থাকতে চাই। তুমি আমাকে একটাবার সুযোগ দাও। আমি পৃথিবীর সবচেয়ে ভালো স্ত্রী হয়ে দেখাব।”
“মানুষের জীবনের চাওয়ার শেষ নেই জানো নয়না। প্রেম, ভালোবাসা বলতে যদি শরীর বোঝানো হয়। তাহলে পতিতারা শ্রেষ্ঠ প্রেমিকা হয়। সেখানে আমার সুযোগ থাকা সত্বেও আমি তোমার হক নষ্ট করিনি। সেখানে তুমি দিনের পর দিন কীভাবে আমাকে ঠকালে? একজনের বউ হয়ে আরেকটা পরপুরুষের বিছানায় শুতে তোমার বুক কাঁপল না। তোমার মনে হলো না তোমার স্বামী অনেক আশা নিয়ে তোমায় বিশ্বাস করে। তার বিশ্বাস ভেঙে গেলে সে কী নিয়ে বাঁচবে? দিনে দশ-বারো ঘন্টা কাজ করেছি, নিজের রান্না নিজে করেছি, অসুস্থ হয়ে নিজের সেবা নিজে করেছি। তবুও তোমাদের কখনো চিন্তায় ফেলে দেইনি। তোমরা ভালো থাকবে বলে প্রয়োজনের চেয়ে বেশি কাজ করেছি। আমার বাবা-মায়ের থেকে তোমাকে বেশি টাকা পাঠিয়েছি আর তুমি কি-না সেই টাকায় পরপুরুষ নিয়ে ফুর্তি করেছ। আমাকে নীলা বলেছিল তুমি সকাল সকাল গোসল করো। মাঝেমধ্যে বাড়ি থেকে একা বের হয়ে যাও। আমি তখন নীলাকে ধমক দিয়ে চুপ করিয়ে দিয়েছিলাম। তাকে বলেছিলাম তুই যাকে খারাপ বলছিস। সে আমার বউ হয় প্রতিটি স্বামীর উচিত তার স্ত্রীর উপর বিশ্বাস করা আর প্রতিটি স্ত্রীর উচিত তার স্বামীর বিশ্বাসের মর্যাদা দেওয়া। আজকের পর আমি আর কোনো নারীকে বিশ্বাস করতে পারব না। আমি তো ভালোবাসতেই চাইনি। তবুও বিধাতা আমাকে তোমার সাথে দেখা করিয়ে দিল। আমি তোমাকে অন্ধের মতো বিশ্বাস করলাম আর তুমি আমাকে অন্ধ প্রমাণ করে দিলে। তোমার কাছে অনুরোধ করেছিলাম তোমার পা ধরাটা বাকি ছিল আমার। তোমার শরীরে যদি মরণব্যাধি রোগও হতো। তবুও আমি তোমাকে ছাড়তাম না। যে মেয়ে স্বামী থাকার পরেও অন্য পুরুষের কাছে যায়। সেই নারীর ক্ষমা কখনো হয় না। আমার ভেতরটা জ্বলে পুড়ে যাচ্ছে। তুমি আমার সাথে এমনটা কেনো করলে নয়না? আমি শ্বাস নিতে পারছি না আমার দম বন্ধ হয়ে আসছে। আমি যে কেন বিয়ে করতে গেলাম। আমি এভাবে ঠকে যাব ভাবতেও পারিনি। আমার বুকের মধ্যে অসহনীয় যন্ত্রণা করছে। সেটা কি তুমি অনুভব করতে পারছো নয়না?”
চলবে…..