প্রকৃতির বিচার পর্ব-০৬

0
6

#প্রকৃতির_বিচার
#পর্ব_০৬
#লেখিকা_Fabiha_bushra_nimu

“তোমাকে আমি কালকেই টাকা দিলাম। আর তুমি আজকেই আমার পিছু নিয়েছ! তোমার থেকে এটা একদমই আশা করিনি। তুমি জানো আমার স্বামী এখন আমার সাথে আছে। তবুও তুমি পাগলামি করছো কেন? আমি কি হারিয়ে যাচ্ছে? নাকি তোমাকে রেখে পালিয়ে যাচ্ছি বলো তো? আমার স্বামী আইসক্রিম নিয়ে আসতে গিয়েছে। তুমি এখানে থেকে চলে যাও। আমার স্বামী চলে যাওয়ার পর আমি তোমার কাছে চলে যাব প্রমিস।”

“তুমি আমাকে যে টাকা দিয়েছ। সেই টাকায় কিছু হয় না। তুমি আমাকে পাঁচ লক্ষ টাকা দাও। তুমি যদি আমাকে পাঁচ লক্ষ টাকা না দাও। তাহলে আমি তোমার স্বামীকে আমাদের সম্পর্কের ব্যাপারে সবকিছু বলে দিব। তখন দেখব তোমার এত বড়ো বড়ো কথা কোথায় যায়। তুমি আমাকে টাকা দিতে না পারলে তোমার সংসার করার সাধ আমি মিটিয়ে দিব।”

নয়না অবাক হয়ে বলল, “তুমি এত টাকা নিয়ে কী করো জোহান? আমার এখন মনে হচ্ছে আমি তোমাকে ভালোবেসে ভুল করেছি। আমার একাকিত্বের সুযোগ নিয়ে তুমি আমার পাশে ছিলে। তুমি আমাকে মানসিক ভাবে ভরসা দিয়েছ। তোমার জীবনের কিছুটা সময় আমাকে দিয়েছ। তাই বলে তুমি দিনের পর দিন আমার থেকে এভাবে টাকা চাইবে? আমি তোমাকে কত টাকা দিয়েছি তার কোনো হিসাব আছে? আমি ভাবতাম তুমি আমাকে ভালোবাসো। কিন্তু আমার ধারণা ভুল ছিল। তুমি যদি আমার সাথে খারাপ কিছু করার চেষ্টা করো। তাহলে আমি তোমাকে পুলিশ দিয়ে দিব।”

জোহান তাচ্ছিল্য হেসে বলল, “আমি তোমার সাথে মজা করছিলাম নয়না। আমি তোমাকে ছাড়া থাকতে পারছিলাম না। তাই ডাকাত সেজে তোমার সাথে দেখা করতে এসেছি। কিন্তু তুমি তো আমাকে বিশ্বাস করো না। আমারই ভুল জানো তো আমি যে কেন তোমাকে পাগলের মতো ভালোবাসতে গেলাম। আজ যদি তোমাকে আমি ভালো না বাসতাম তাহলে আমার নিজেকে পাগল পাগল লাগতো না। আমি চলে যাচ্ছি আর কখনো তোমার সামনে আসব না। তুমি ভালো থেকো তোমাদের সুখের সংসারে আমি আর বাঁধা হয়ে দাঁড়াব না।”

নয়না মলিন কণ্ঠে বলল, “তুমি আমাকে মাফ করে দাও জোহান৷ আমি তোমাকে আঘাত দিয়ে কথা বলতে চাইনি। আমি উড়ানের চোখে কিছুতেই খারাপ হতে চাইছি না। উড়ান আমাকে অনেক ভালোবাসে। এত ভালোবাসা রেখে কী কোথাও যাওয়া যায় বলো? আমি তোমাকেও ভালোবাসি আমি উড়ানকেও ভালোবাসি। তোমাদের দু’জনের কাউকেই আমি ছাড়তে পারব না। উড়ান যখন দেশে আসবে তখন আমি উড়ানের আর উড়ান যখন বিদেশে যাবে তখন আমি তোমার। তুমি যদি এভাবে আমাকে মেনে নিতে পারো। তাহলে আমার সাথে সম্পর্ক রাখবে। আর না হলে তুমি অন্য কাউকে বিয়ে করতে নিতে পারো।”

জোহানের মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ল। সে মানছে সে নেশার জন্য নয়নার থেকে টাকা নিয়েছে। কিন্তু সে নয়নাকে সত্যি অনেক ভালোবেসে ফেলছে। সে ভেবেছিল নয়নার সাথে কয়েকদিন রিলেশন করে ছেড়ে দিবে। কিন্তু ভালোবাসার অভিনয় করতে গিয়ে কখন যে সে নয়নাকে মন দিয়ে বসেছে সেটা জানা নেই জোহানের। নয়না উড়ানকে ভালোবাসে এটা জোহান কিছুতেই মেনে নিতে পারছে না। তার দম বন্ধ হয়ে আসছে। সে নয়নাকে ছাড়া থাকতে পারছে না। জোহান নয়নার হাত ধরে বলল, “তুমি আমাকে আর কষ্ট দিও না নয়না। আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি। তুমি খালি হাত পায়ে উড়ানের কাছ থেকে চলে আসো। আমি একটা কাজ করে তোমাকে ঠিক ভালো রাখতে পারব। তুমি অন্যের হয়ে আমাকে এভাবে স্বপ্ন কেন দেখালে? আমি তো তোমাকে ভালোবাসতে চাইনি। তবে তোমার সাথে আমার দেখা কেন হলো? আমি মানছি আমি নেশা করার জন্য তোমার থেকে অনেক টাকা নিয়েছি। কিন্তু বিশ্বাস করো আমি তুমি ছাড়া অন্য কোনো মেয়ের দিকে মনের ভুলেও তাকাইনি। আমি তোমাকে ছাড়া মরে যাব নয়না। তুমি আমার সাথে চলো আমি তোমাকে ছাড়া থাকতে পারব না। আমি তোমাকে পেলে সব খারাপ কাজ ছেড়ে দিব।”
নয়না দাঁতে দাঁত চেপে বলল, “আমার হাতটা ছাড়ো জোহান। আমার স্বামী আসছে। তোমার জন্য যদি আমি উড়ানের কাছে খারাপ হয়ে যাই। তাহলে তুমি আমাকে কোনোদিন পাবে না। যদিও আজকের পর আর কোনোদিন তোমার সাথে যোগাযোগ রাখব না।”
জোহাদ কাঁদতে কাঁদতে বলল, “দু’দিন আগেও আমার জন্য পাগল ছিলে তুমি! আজ তোমার স্বামী আসার সাথে সাথেই আমাকে ভুলে গেলে? আমার হতে পারবে না তবে কেন মিথ্যা স্বপ্ন দেখালে বলো?”
“তোমাকে আমি মিথ্যা স্বপ্ন দেখায়নি। আমি তোমাদের দু’জনের হয়ে থাকতে চাই।”
“বেশ তোমার কথা আমি মেনে নিলাম।”
“উড়ান আসছে। তুমি আমার হাতটা ছাড়ো। আমি উড়ানকে বলব তুমি আমার কলেজের বন্ধু। তুমি আমার কথার সাথে তাল মিলাবে মনে থাকবে তো?”
“হুম মনে থাকবে।”

উড়ান আইসক্রিম হাতে নয়নার সামনে আসলো। নয়নার পাশে অন্য পুরুষকে দেখে উড়ানের ভ্রু কুঁচকে গেল। নয়না হেসে বলল, “ওর নাম জোহান। আমরা একসাথে কলেজে পড়াশোনা করেছি। আজকে হঠাৎ দেখা হয়ে গেল। তাই দু’জন গল্প করছিলাম।”
উড়ান স্বস্তির নিঃশ্বাস ছেড়ে বলল, “তাই তো ভাবছি আমার বউটা কার সাথে কথা বলছে।”
জোহান রাগে হাত মষ্টিবদ্ধ করে ফেলল। তার দু’চোখ রক্তিম বর্ণ ধারণ করেছে। তবুও সে উড়ানের দিকে হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলল, “আমি জোহান নয়নার সাথে পড়াশোনা করেছি।”
উড়ান হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলল, “আমি উড়ান নয়নার স্বামী।”
জোহান বলল, “চলুন তিনজন মিলে বসে চা খাই।”
“আজকে চা খাব না। আকাশের অবস্থা ভালো না। আপনাকে আমাদের বাসায় দাওয়াত রইল। আপনি সময় করে একদিন আমাদের বাড়িতে আসবেন। আজকে আসছি।”

উড়ান নয়নাকে নিয়ে চলে গেল। জোহান হিংস্র চোখে তাদের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছে। নয়না তার না হলে সে নয়নাকে কারো হতে দিবে না। সে নয়নাকে নিয়ে ভাবতে ভাবতে উল্টো পথে হাঁটা শুরু করল।

রাত বারোটা। নয়না এবং উড়ান দু’জন পাশাপাশি শুয়ে আছে। হঠাৎ করে নয়না বলে উঠল, “আমার না খুব বিরিয়ানি খেতে ইচ্ছে করছে।”
“এত রাতে তো দোকান সব বন্ধ। তুমি যদি দিনের বেলায় আমাকে বলতে তাহলে কিনে এনে রেখে দিতাম।”
“আমার এখন খেতে ইচ্ছে করছে। আমি দিনের বেলায় বলে কী করব বলো? এসব বাদ দাও তুমি বিদেশে কী কী করছো গল্প করো।”
“আমার বউয়ের বিরিয়ানি খেতে ইচ্ছে করছে আর আমি বাদ দিব। দরকার পড়লে নিজে বানিয়ে খাওয়াব। তুমি আমাকে একটু সময় দাও। আমি এখনই বিরিয়ানি বানিয়ে নিয়ে আসছি।”
“তোমার মাথা খারাপ হয়ে গিয়েছে। এত রাতে রান্না ঘরে গেলে সবাই কী বলবে?”
“আমি কারো পরোয়া করি না। আমার বউয়ের ইচ্ছের মূল্য আমার কাছে অনেক বেশি। তুমি শুয়ে থাকো আমি রান্না করে নিয়ে আসি।”

উড়ান চলে গেল। নয়না ভাবল জোহানকে ফোন দিয়ে জোহানের সাথে কথা বলবে। কিন্তু কী মনে করে যেন ফোন দিল না। নয়না বিছানা ছেড়ে উঠে দাঁড়াল। চুলগুলো বেঁধে ঘরের বাহিরে চলে গেল। উড়ান রান্না ঘরে মনযোগ দিয়ে রান্না করছে। নয়না গিয়ে উড়ানকে পেছনে থেকে জড়িয়ে ধরল। নয়নাকে দেখে উড়ান মিষ্টি হাসি উপহার দিল। নয়না উড়ানকে জড়িয়ে ধরে বলল, “তুমি তো দেখছি খুব সুন্দর করে রান্না করতে পারো।”
“কী করব বলো? আমার এখানে মা আছে বউ আছে। কিন্তু বিদেশে কেউ নেই। তাই নিজের রান্না নিজেকেই করতে হয়।”
“তুমি আর বিদেশে যেও না। তোমাকে ছাড়া থাকতে আমার ভালো লাগে না।”
“কিছু পেতে হলে কিছু ত্যাগ করতে হয় বউ।”

উড়ানের কথায় নয়না কিছু বলল না। সে চুপচাপ উড়ানকে ধরে রাখল। উড়ানও কিছু বলল না। সে জানে নয়নার মন খারাপ হয়ে গিয়েছে। সে নয়নার মন খারাপ বাড়িয়ে দিতে চায় না বলেই নীরব হয়ে গিয়েছে।

চলবে…..

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে