#প্রকৃতির_বিচার
#পর্ব_০৫
#লেখিকা_Fabiha_bushra_nimu
দরজা খুলে উড়ানকে দেখে নয়না চমকে উঠল। তার মুখটা মুহুর্তের মধ্যে ফ্যাকাসে হয়ে গেল। উড়ান হাস্যোজ্জ্বল মুখশ্রী করে নয়নাকে জড়িয়ে ধরল। নয়নাও ভীত মুখ নিয়ে উড়ানকে জড়িয়ে ধরল। নয়নার মুখশ্রীতে হাসি দেখতে না পেয়ে উড়ান বলল, “তুমি আমাকে পেয়ে খুশি হওনি নয়না?
নয়না কৃত্রিম হেসে বলল, “তোমাকে দেখে খুশি হব না কেন? হঠাৎ করে তোমাকে দেখে সারপ্রাইজ হয়ে গিয়েছি। আমি অনুভূতি শূন্য হয়ে পড়েছি। আমি কী বলব কথা বলার ভাষা হারিয়ে ফেলছি। তুমি যে আমাকে এভাবে সারপ্রাইজ দিবে সেটা আমি ভাবতেই পারিনি। তুমি আসবে আমাকে আগে বলোনি কেন?”
“তোমাকে যদি আগে বলতাম আমি আসব। তাহলে কি তুমি সারপ্রাইজ হতে? আমি আমার কোম্পানির মালিকের থেকে অনেক কষ্টে পনেরো দিনের ছুটি নিয়ে এসেছি। তোমার জন্য মনটা খুব ছটফট করছিল। তুমি জানো আমি বাড়ি আসব বলে এই কয়দিন অনেক কাজ করেছি। আমার শরীরের হয়তো অনেক কষ্ট হয়েছে। কিন্তু এই যে বাড়িতে এসে তোমার মুখটা দেখলাম। আমার সব কষ্ট সুখে পরিণত হয়েছে গিয়েছে।”
“আমি সবাইকে ডেকে নিয়ে আসি। মা জানলে অনেক খুশি হবে।”
উড়ান নয়নার হাত ধরে বলল, “তোমাকে কোথাও যেতে হবে না৷ আমি সবাইকে ডাকছি। তুমি আমার চোখের সামনে বসে থাকো। তুমি আমার চোখের সামনে বসে থাকলেই শান্তি লাগে। আমি দীর্ঘদিন এই শান্তি থেকে বঞ্চিত ছিলাম। মাত্র কযটা দিনই তো আছি। আমি এতটুকু শান্তি পেতে চাই নয়না।”
উড়ানের কথায় নয়না হাসলো। তার ভেতরে ভয় কাজ করছে। তার ফোন থেকে জোহানের নাম্বার ডিলিট করতে হবে। সে জোহানের সাথে মেসেজে কথা বলেছে সেগুলো ডিলিট করতে হবে। জোহানকে সব জায়গা থেকে ব্লক করতে হবে। এসব চিন্তায় মগ্ন হয়ে গেল নয়না। নয়নার চিন্তিত মুখের দিকে তাকিয়ে আছে উড়ান। নয়না উড়ানকে তাকিয়ে থাকতে দেখে উড়ানের মাথায় হাত বুলিয়ে দিল। অদ্ভুত ভাবে উড়ানকে আর তার ভালো লাগছে না। অথচ এই মানুষটাকে সে দুই বছর ভালোবাসতো। মানুষটার ছোঁয়া ছাড়া অন্য কারো ছোঁয়া তার কাছে বিষাক্ত লাগতো। সময়ের সাথে মানুষ বদলায়। মানুষের পছন্দ বদলায়। নয়নাও বদলেছে। উড়ান মুগ্ধ নয়নে নয়নার দিকে তাকিয়ে আছে। উড়ান তার বাবা মাকে ডাকল। উড়ানকে দেখে হামিদা বেগম ছেলেকে জড়িয়ে ধরে কান্না করে দিল। উড়ান একহাতে তার বাবাকে কাছে ডাকল। উড়ানের বাবা উড়ানের পাশে বসে উড়ানকে জড়িয়ে ধরল। নয়না এই সুযোগে নিজের ঘরে চলে গেল। দ্রুত ফোন বের করে জোহানকে সব জায়গা থেকে ব্লক করে দিল। সব কিছু ডিলিট করে দিয়ে স্বস্তির নিঃশ্বাস ছাড়ল। নয়না ফোনের দিকে তাকিয়ে ছিল। এমন সময় উড়ান এসে নয়নার হাত থেকে ফোন কেঁড়ে নিল। নয়না চমকে উঠল। উড়ান রাগী কণ্ঠে বলল, “তোমার জামাই তোমার কাছে এসেছে। তুমি ফোনের মধ্যে তাকিয়ে কী করছো?”
“আমার মনে হলো আমার মা ফোন দিয়েছিল। তাই আমি দেখতে এসেছিলাম। কিন্তু এসে দেখলাম কল আসেনি। তুমি ফ্রেশ হয়ে নাও আমি তোমার জন্য খাবার বাড়ছি। আজকে আমি তোমার পছন্দের খাবার রান্না করে খাওয়াব।”
“আজ কিছু খাওয়াবেন না?”
“একদম অসভ্য কথা বলবে না।”
“বউয়ের সাথে একটু অসভ্য হওয়া যায়।”
“ভালো পুরুষেরা কখনো কারো সাথেই অসভ্য হয় না।”
“আমি তো ভালো পুরুষ না।”
“এতদূর থেকে এসেছ। তোমার ক্লান্ত লাগছে না?”
“আমার সব ক্লান্তি তোমার মুখ দেখে শেষ হয়ে গিয়েছে। এবার যেটা হবে সেটা ভালোবাসা।”
“তুমি ফ্রেশ হয়ে আসো। আমি খাবার তৈরি করছি।”
উড়ান নয়নাকে আর বিরক্ত করল না। সে ফ্রেশ হতে চলে গেল। নয়না খাবার টেবিলে উড়ানের জন্য খাবার বাড়ছে। নয়নার শাশুড়ী বলল, “আজকে উড়ান আসবে সেটা তুমি জানতে নয়না?”
“না মা উড়ান আমাকে কিছু বলেনি। আমাদের সারপ্রাইজ দেওয়ার জন্য মনে হয় চলে এসেছে।”
“আমি কখনো ভাবতে পারিনি আমার ছেলেকে এভাবে দেখতে পাব। আমার কী যে আনন্দ লাগছে আমি কাউকে বলে বোঝাতে পারব না। ছেলেটা আমাকে আগে জানালে আমি উড়ানের পছন্দের সব রকম খাবার রান্না করতাম।”
“আপনি আর আমি উড়ানের পছন্দের সব রকম খাবার রান্না করব। আমি ভাবছি কী আজকে আমরা পিঠাও বানাব।”
তাদের কথার মাঝে উড়ান এসে সেখানে উপস্থিত হয়। নয়না উড়ানকে খেতে দেয়। উড়ানের ক্ষুদা লেগেছিল তাই সে চুপচাপ খেতে লাগল। হামিদা বেগম মন ভরে ছেলেকে দেখছেন। তার ছেলেটা আগের থেকে সুন্দর হয়ে গিয়েছে। হামিদা বেগম নিজের মনকে নিজেই শাসন করে দিল। মা হয়ে ছেলেকে নজর দিচ্ছে!
“তোমরা আমাকে আসার কথা বলেছিলে। তখন থেকে ঠিক করে নিয়েছিলাম। দশ দিনের জন্য হলেও আমি দেশে যাব। আমি ছয়মাস ধরে মালিকের কাছে ছুটির অনুমতি চাইছিলাম। কিন্তু পরের কাজ করি তো ছুটি পাওয়া এত সহজ না। বেশি বেশি কাজ করে মালিকের মন গলিয়েছি। তারপর সে দয়া করে আমাকে ছুটি দিয়েছে। আমি কিন্তু বেশিদিন থাকতে পারব না।”
উড়ানের মা বলল, “তোকে যে এত তাড়াতাড়ি দেখতে পাব। এটা আমি আশা করিনি। তোকে এই পনেরো দিন নিজের মন মতো রান্না করে খাওয়াব। তুই বউমাকে নিয়ে মাঝেমধ্যে ঘুরতে যাবি। মেয়েটা বাসায় একা একা থাকে ওর বান্ধবী রিয়া আসলে একটু বাহিরে যায়। তা না হলে একটুও বাহিরে যায় না। বলে আমার স্বামী নেই আমি বাহিরে গিয়ে কী করব? তুই ভাব কতটা ভালো মেয়ে আমার।”
উড়ান নয়নার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসি দিল। নয়না লজ্জায় মাথা নিচু করে নিল।
রাত দু’টো। উড়ানের বুকে মাথা রেখে ঘুমিয়ে আছে নয়না। এমন সময় মুঠোফোনটা বেজে উঠল। নয়না আস্তে করে ফোনটা হাতে নিয়ে দেখল অচেনা নাম্বার। তাই সে রেখে আবার ঘুমানোর চেষ্টা করল। কিন্তু ফোনটা আবার বেজে উঠল। নয়না ফোনটা কানে ধরতেই জাহান রাগান্বিত হয়ে বলল, “তুমি আমাকে সব জায়গা থেকে ব্লক করেছ কেন নয়না? তুমি কি কেনো ভাবে আমার সাথে বেইমানি করার চেষ্টা করছো?”
নয়না তড়িঘড়ি করে উঠে বসল। সে বিলম্ব না করে বেলকনিতে চলে গেল। নয়না অস্থির হয়ে বলল, “তুমি এসব কী বলছো। তুমি আমাকে কয়টা দিন কল দিও না। আজকে আমার স্বামী হঠাৎ করেই বাড়ি চলে এসেছে। ও যে এভাবে বাড়ি চলে আসবে। সেটা আমরা কেউ জানতাম না। আমাদের না জানিয়ে ও চলে এসেছে। তাই আমি ভয়ে তোমাকে ব্লক দিয়েছি। উড়ান মাত্র পনেরো দিন থেকে চলে যাবে। তখন আমরা নিয়মিত যোগাযোগ করব।”
“তোমার স্বামী দেশে আসছে মানে না কী? আমাকে বোকা পেয়েছ? তুমি সবকিছু জানতে তাই না? তুমি উড়ানের সাথে ঘুমামে না। উড়ানকে স্পর্শ করতে দিবে না। উড়ান যদি তোমাকে স্পর্শ করে তাহলে খারাপ হয়ে যাবে কিন্তু।”
“তুমি এমন আচরণ করছো কেন? উড়ান আমার স্বামী হয়। উড়ানের সাথে না ঘুমালে উড়ান আমাকে সন্দেহ করবে। তখন আমি উড়ানকে কী জবাব দিব?”
“সেটা আমি জানিনা। তুমি উড়ানের কাছে গেলে আমি উড়ানকে সবকিছু বলে দিব। আমি উড়ানের সাথে তোমাকে কিছুতেই সহ্য করব না।”
“তোমার মাথা খারাপ হয়ে গিয়েছে। উড়ান আমার স্বামী। তুমি আর আমাকে ফোন দিবে না। আমি তোমাকে পরে ফোন দিব।”
“তুমি কল কাটলে আমি এখনই তোমাদের বাসায় চলে আসব।”
“এমন পাগলামি করছো কেন জোহান?”
“তোমার জন্য।”
“আমার ভালো চাইলে যোগাযোগ বন্ধ রাখো কয়টা দিন।”
“তোমার সাথে একদিন দেখা না হলে পাগল পাগল লাগে।”
“আমি বুঝতে পারছি। তুমি এই কয়টা দিন সহ্য করতে পারবে না।”
“নয়না।”
“বলো।”
“আমি একটু তোমার বাসার নিচে আসি?”
“না।”
“একটু দেখেই চলে যাব।”
“পাগলামি করো না।”
“আচ্ছা আসব না। তাহলে আমাকে বিশ হাজার টাকা দাও।”
“এত টাকা দিয়ে তুমি কী করবে?”
“তুমি কয়টা দিন জামাই নিয়ে ব্যস্ত থাকবে। আমার বুকে আগুন জ্বলবে তাই নেভানোর জন্য ঘুরতে যাব। আমার কাছে টাকা নেই।”
“আমি তোমাকে টাকা পাঠিয়ে দিচ্ছি। আল্লাহর দোহাই লাগে আমাকে কল দিও না।”
কথাগুলো বলেই নয়না কল কেটে দিল। বিকাশ থেকে জোহানের নাম্বারে বিশ হাজার টাকা পাঠিয়ে দিল। সে বিলম্ব না করে ঘরে এলো। উড়ান ক্লান্ত থাকায় গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন হয়ে গিয়েছে। নয়নাও উড়ানের পাশে শুয়ে পড়ল।
চলবে…..