প্রকৃতির বিচার পর্ব-০৪ এবং শেষ পর্ব

0
3697

#প্রকৃতির_বিচার
#পর্ব_৪/শেষ
#কে_এ_শিমলা

কিন্তু কী বলুন তো চাইলেই সব হয়না।”
আমি আপনাকে সম্পূর্ণ আমার করে চাইলেও আপনি চাননি। হয়তো কখনো আমায় ভালোই বাসেননি। হাতে গোনা এই দুই-তিনেক বছর আমার সাথে শুধু অভিনয়’ই করেছিলেন। কেন যেন বারবার মনে হয় আপনার বলা ভালোবাসি’ কথাটা মিথ্যা ছিল। আমার জন্য আপনার মনে কখনোই ভালোবাসা ছিল না। আমি হৃদয়ে কখনো নিজের জন্য একটা একান্ত জায়গা তৈরি করতে পারিনি। যা ছিল তা হয়তো ভালোলাগা আর মোহ। আর ভালোলাগা তো পরিবর্তন হয়। কিছু সময়ের পর মোহও কেটে যায়। যেমন ভালোলাগার আমি পরিবর্তন হলাম। আপনার মোহ কেটে গেলো।’

আপনাকে যখন ভালোবেসেছিলাম, আপনাকে নিজের করতে যাচ্ছিলাম তখন অনেকেই বলেছিল- তুমি তো তাঁর দ্বিতীয় ভালোবাসা’। সে পারবে তাঁর প্রথম ভালোবাসা ভুলে গিয়ে তোমাকে নতুন করে ভালোবাসতে।”
~তখন খুব বড় মুখ করে বলেছিলাম- “একজন পুরুষের প্রথম ভালোবাসা হতে পারাটা হয়তো একজন মেয়ের ভাগ্য। কিন্তু সেই মানুষের শেষ ভালোবাসা হতে পারাটা তাঁর জন্য সৌভাগ্য।”
জানেন শেষ কেন বলেছিলাম? ভেবেছিলাম আপনি আমি ছাড়া আর কাউকে আপনার হৃদয়ে জায়গা দিবেননা। আমি আপনার দ্বিতীয় ভালোবাসা হলেও শেষ ভালোবাসা হবো। সৌভাগ্যবান হবো।”

~~আমার সব চাওয়ার মধ্যে একটা চাওয়া ছিল!
~আমার আপনি শুধু আমাতেই সীমাবদ্ধ থাকবেন।” আমি ছাড়া আর কাউকে আপনার প্রয়োজন পড়বে না। আমি ছাড়া আপনি আর কাউকে প্রিয়জন বলবেন না। আমিই আপনার প্রয়োজন! আমিই আপনার প্রিয়জন। কিন্তু আমার ভাবনা গুলো শুধু ভাবনাই ছিল।”
আপনি ভালোবাসেননি আমায়। আপনি আপনার প্রথম ভালোবাসা ভুলতে পারেননি। আর না পেরেছিলেন সেই বিশ্বাসঘাতক মানুষটা কে ভুলতে।”

আমি মেনে নিয়েছিলাম। কিন্তু আমি জানতাম না আপনি তাকেই আবার নিজের জীবনে ফিরিয়ে আনবেন! আমার ভালোবাসা দূরে ঠেলে।”
আচ্ছা আপনার ভালোবাসার মানুষটা তাঁর ভুল বুঝতে পেরে ফিরে এসেছে তাই না। কেউ ভুল করেছে এটা বুঝতে তার পাঁচ বছর লেগে যায়? আপনাকে সে সত্যি ভালোবাসে,আপনাকে ছেড়ে গিয়ে সে ভুল করেছে! এটা কী সে একমাসেও বুঝতে সক্ষম হয়নি? তাঁর চলে যাওয়ার পর আপনি কতটা মানসিক অশান্তিতে ভুগছিলেন এটা কী সে দুই মাসেও বুঝতে পারেনি?’ আপনাকে ছাড়া সে ভালো নেই! আপনি তাকে ছাড়া ভালো নেই এটা কী সে তিন মাসেও বুঝতে পারেনি?’

~যদি তাঁর আপনার কাছে আবার ফিরে আসার’ই ছিল তবে কেন আমি আপনার জীবনে আসার পূর্বে ফিরে সে আসলো না?’
আপনার যদি তাকে, আপনার জীবনে আবার ফিরিয়ে আনার’ই ছিল? তবে কেন আমায় আপনার জীবনে ডাকলেন? কেন আমার জীবনটা নিয়ে খেলেছিলেন?”

~আমি তো একজন ভেঙ্গে যাওয়া মানুষকে ভালোবেসে ছিলাম। যে কখনো আমায় ছেড়ে গিয়ে ভেঙ্গে পড়তে দিবে না।
আমি তো একজন বিচ্ছেদের যন্ত্রণা পাওয়া মানুষকে ভালোবেসে ছিলাম। আমি তো জানতাম সে জানে বিচ্ছেদের শোক কেমন! তা কতটা যন্ত্রণাদায়ক। সে নিশ্চয় তাকে যে ভালোবাসে, তাকে এই বিচ্ছেদের বি’ষা’ক্ত যন্ত্রণা পেতে দিবেনা।
কিন্তু কী হলো সেই আপনিও আমায় বিচ্ছেদের মতো এক নিদারুণ যন্ত্রণা উপহার দিলেন। আপনিও আমায় ছেড়ে গেলেন। বিচ্ছেদ তো নিজ মুখে না বললে কেউ দেখে না শুনে না।
কিন্তু আমার মধ্যে যে ডিভোর্সী তকমা লাগলো চৌধুরী সাহেব। এটা যে পাড়া-পড়শী,স্বজনরাও জানতে পারলো।
চৌধুরী সাহেব আমি চাইলে সেদিন কঠোর প্রতিবাদ করতে পারতাম। আমার জীবন নষ্ট করার হিসেব চাইতে পারতাম। আমার সাথে করা এমন প্রতারণার, এক ভয়ঙ্কর প্রতিশোধ আমিও নিতে পারতাম। তবে আপনি ভালোবাসা ছিলেন তো, হয়তো কোথাও কিছু একটা আটকে দিয়েছিল আমায়। সেদিন পরিস্থিতি নিশ্চুপ করে দিয়েছিল আমাকে কঠিন ভাবে। তবে আমার নিরবতা বলেছিল আমায়! ‘প্রকৃতির বিচার’ বলেও কিছু আছে। হয়তো বুঝেও ছিলাম আজ হোক বা দশ বছর পর আমার সাথে করা অন্যায়ের বিচার আপনি ঠিকই পাবেন।”

~~চৌধুরী সাহেব আপনি জানেন কী! আপনার ভালোবাসার মানুষটা যার হাত ধরে আপনাকে ছেড়ে গিয়েছিল। সে আপনারই বোনের ভালোবাসার মানুষ। আপনার আদরের ছোট্টবোন কী যন্ত্রণায় রাত্রিযাপন করতো তাও আপনার দেখা। তারপরেও সে আপনার ভালোবাসার মানুষ। ভালোবাসা থাকুক আপনার হৃদয়ে তাঁর জন্য জীবনভর।
ভালোবাসবেন তাকে ততটাই, যতটা ভালোবাসলে তার করা অন্যায়, তাঁর করা ভুলো গুলো আপনার চোখে ভাসবেনা।”

~আপনার বাড়িতে আমি শেষ বছরটা কীভাবে কাটিয়েছিলাম তা শুধু আমিই জানি চৌধুরী সাহেব। কী অসহ্যকর যন্ত্রণাটাই না আপনি আমায় উপহার দিয়েছিলেন ভালোবাসার নাম করে। আর আপনার পরিবারের মানুষ গুলোই না কেমন ব্যবহার করেছিল আমার সাথে ।
আমি আপনাকে মুখ ফুটে বলেছিলাম আমি মাতৃত্বের স্বাদ একবার গ্ৰহন করতে চাই। কিন্তু আপনি রাজি ছিলেন না।’
“আমার জীবনে আপনি প্রথম পুরুষ ছিলেন যাকে আমি ভালোবেসে ছিলাম। আর এই কথা বলা প্রথম পুরুষটাও আপনিই ছিলেন, যে বলেছিল- আমি এতো তাড়াতাড়ি সন্তান চাই না।
আপনারটা আপনার মা দেখেননি। আপনার পরিবার দেখেনি। তারা শুনেনি আপনার কথা। কখনো জানার চেষ্টাও করেনি। কিন্তু কিছু না জেনে না বুঝে তারা শুধু আমাকেই দোষারোপ করে গেলো।’
মানুষ চিনতে আমি সত্যিই ভুল করেছিলাম। আমার প্রথম ভালোবাসার মানুষটাও ভুল ছিল।”

আপনি আমাকে ডিভোর্সের পরেও আপনার বাড়িতে থাকতে বলেছিলেন। কেন থাকতে বলেছিলেন?’ আমাকে এটা দেখানোর জন্য নাকি যে, আপনি আপনার প্রিয় মানুষকে কতটা ভালোবাসেন?”
আপনার সাথে সম্পর্কের মাধ্যমে আপনার বাড়িতে আমি গিয়েছিলাম। কিন্তু যখন আপনার সাথেই আমার সম্পর্ক নেই। সেখানে আমি কীভাবে আপনার বাড়িতে থাকতাম! কোন পরিচয়ে থাকতাম?”

জানিনা চৌধুরী সাহেব আমি কখনো এসব ভুলতে পারবো কী না। তবে এটা বলতে পারি, আমি আপনাকে কখনো ভালোবেসেছিলাম এটা ভুলে যাবে। হয়তো এখন ভুলেই গিয়েছি। আপনার জন্য যে মায়াটা আমার মনে ছিল তা আর নেই। আপনার জন্য যে অনুভূতি আমার মনে ছিল তাও হয়তো আর নেই। আর কেন’ই বা মায়া রাখবো?’ কেন’ই বা অনূভুতি থাকবে?”
আপনি একটা সময় আমার পরিচিত ছিলেন এটা হয়তো আমার মনে থাকবে। আপনার সাথে আমার একটা সম্পর্ক তৈরি হয়েছিল যার শেষটায় ছিল তিক্ততায় ভরপুর। এটাও হয়তো ধুয়াশা হয়ে মনে থেকে যাবে। কিন্তু আমি ভুলে যাবো আপনি আমার প্রথম ভালোবাসার মানুষ ছিলেন।’

~~আজ আমার জীবনেও দ্বিতীয় ভালোবাসা এসেছে। একটা মানুষ আমায় তাঁর অজান্তে’ই আমার মতো করে ভালোবাসে। আমার মন রাখার জন্য তাঁর সে কী চেষ্টা। সে হয়তো জানেই না আমি এমন ভালোবাসা আর এমন একটা মানুষকেই চেয়েছিলাম। আমি যেমন একজন মানুষের দ্বিতীয় ভালোবাসা হয়ে। তাকে এক আকাশ সমান ভালোবাসা দিয়েছিলাম। সেও আমায় সেই ভাবেই ভালোবাসে। আমার বিশ্বাস সে আমায় ভালোবেসে ভালোরাখবে।”

~ তবে আফসোস সে আমার জীবনে আমার প্রথম ভালোবাসা হয়ে আসলো না। তাঁর সাথে পথ চলতে চলতে একদিন ঠিক তাঁর জন্য আমার হৃদয়ে ভালোবাসা উদয় হবে। কিন্তু আমি আপনার মতো আমার দ্বিতীয় ভালোবাসার মানুষকে ঠকাবোনা।
আমার প্রথম ভালোবাসার মানুষ আমার পায়ের কাছে এসে পড়ে থাকলেও তাঁর পানে ফিরে আমি তাকাবো না। সে আমায় ছেড়ে গিয়েছিল। একবার যখন ছেড়ে যেতে পারে এতো শক্ত বন্ধন ছিন্ন করে, আবারো যাবে নিশ্চিত। একবার ছেড়ে যেতে পারলে সে বারবার যেতে পারে।”

কথা গুলো বলে, একটা দীর্ঘশ্বাস নেয় মাহদিয়া। ইশান তাঁর সামনে মাথা নত করে দাঁড়িয়ে আছে। কোনো কথা নেই তাঁর মুখে। কী’ই বা আছে তাঁর বলার।
মাহদিয়া ইশানের দিকে তাকিয়ে খানিকটা হাসলো। তাঁর পর বলে, ভালো থাকবেন চৌধুরী সাহেব। ভালোবাসার মানুষকে ভালোবাসবেন।”
তারপর ব্যাগ থেকে একটা কার্ড বের করে ইশানের দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বলে, আমার বিয়ের কার্ড! পারলে আসবেন। আল্লাহ হাফেজ। ইশান কে পাশ কাটিয়ে চলে যায় মাহদিয়া।”

ইশান তাকায় তাঁর হাতে থাকা কার্ডটার দিকে। হঠাৎ হাসলো সে! সত্যিই মেয়েটা তাকে এক আকাশ সমান ভালোবাসা দিয়েছিল কিন্তু তা সে বুঝতে পারেনি। সত্যিই মাহদিয়া বলেছে, “একবার যে ছেড়ে যেতে পারে সে বারবার ছেড়ে যেতে পারে।”
সত্যিই দিনা প্রথমবার যেভাবে তাঁর বিশ্বাস ভেঙ্গে চলেগিয়েছিল, দ্বিতীয় বারও সে গিয়েছে। প্রথমবার সে ইশানের হৃদয় আর বিশ্বাস ভেঙ্গে গেলেও, দ্বিতীয় বার দিনা তাঁর সর্বস্ব কেড়ে নিয়ে গিয়েছে।
সত্যিই ইশান সত্যিকারের ভালোবাসা বুঝতে পারেনি। বুঝতে অক্ষম ছিল ইশান! “মাহদিয়ার হৃদয় নিংড়ানো ভালোবাসা।’
সত্যিই হয়তো সে তাঁর অজান্তে মেয়েটার জীবন নষ্ট করে দিয়েছিল। একবুক যন্ত্রণা সে তাকে দিয়েছিল। সত্যিই সে অন্যায় করেছে মেয়েটার সাথে।”
ইশান চোখ তুলে তাকায় মাহদিয়ার চলে যাওয়ার দিকে। মেয়েটা সত্যিই সেদিন নিশ্চুপ ছিল। তাঁর নিরবতা সেদিন ইশানকেও ভাবিয়ে তুলেছিল। তাঁর বলা কথাটা সত্যিই, প্রকৃতি তাঁর বিচার করেছে। সবকিছু কেড়ে নিয়ে তাকে নিঃস্ব করে দিয়েছে। সর্বস্ব কেড়ে সর্ব শান্ত করে দিয়েছে। ‘প্রকৃতির_বিচার’ বুঝি এতোই কঠিন।”‘

~সমাপ্ত!

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে