#প্রকৃতির_বিচার
#পর্ব_০৪
#লেখিকা_Fabiha_bushra_nimu
রাত প্রায় শেষের দিকে চলে আসছে। নয়না নামাজ পড়ে দেখে মাঝেমধ্যে তার ঘুম ভেঙে যায়। নয়নার ঘুম ভেঙে দেখল চারটা বাজতে যাচ্ছে। নয়নার চোখ কপালে উঠে গেল। নয়না জোহানকে ডাকতে লাগল। জোহান বিরক্তি নিয়ে নয়নার দিকে তাকাল। জোহানের পরক্ষনেই মনে পড়ল সে নয়নাদের বাড়ি আছে। তাই সে উঠে বসল। নয়নার কপালে চুমু খেয়ে নয়নার থেকে বিদায় নিয়ে চলে গেল। নয়না ডাটা অন করে ফেসবুক ঢুকল। উড়ানকে একটিভ দেখে একটুও অবাক হলো। নয়না উড়ানকে মেসেজ দিল,
–আসসালামু আলাইকুম, জান। শুভ সকাল।
উড়ান সাথে সাথে রিপ্লাই দিল,
–আমার মহারাণীর ঘুম ভেঙেছে? আমি কখন থেকে তোমার জন্য অপেক্ষা করছিলাম, জান। তুমি রাতে ঘুমিয়েছিলে তাই তোমাকে বিরক্ত করিনি। আমি জানতাম তোমার ঘুম ভাঙলে তুমি সবার আগে আমার কাছে আসবে।
–তোমার জন্য অপেক্ষা করতে করতে কখন যে ঘুমিয়ে গিয়েছি। সেটা আমি নিজেও জানি না। তোমার জন্য অপেক্ষা করে করে যখন তুমি আসো না। তখন আমার খুব মন খারাপ হয়। তোমার সাথে কথা বলতে ইচ্ছে করে না। আমি কতবার ভেবেছি তোমার সাথে আর কখনো কথা বলব না। কিন্তু তুমি যখনই বউ বলে ডাক দাও। তখন আমার সব রাগ হারিয়ে যায়।
–আমি তো এখানে বসে থাকি না বলো। এখানে কাজ করে খেতে হয়। কাজ না করলে টাকা নেই। তুমি যত পরিশ্রম করবে তত টাকা পাবে। আমি যদি টাকা ইনকাম না করি তোমরা কি ভালোভাবে চলতে পারবে বলো? তাই প্রিয়জনদের মন খারাপ করিয়ে হলেও আমাদের কাজে মন দিতে হয়।
–তুমি আমার কথায় মন খারাপ করো না। আমি মাঝেমধ্যে নিজের মনকে মানাতে পারি না। তাই তোমাকে কথা শুনিয়ে ফেলি।
–তুমি আমার বউ। তোমার সব কথা শোনার জন্য এই অধম প্রস্তুত।
নয়না হেসে জবাব দিল,
–আমাকে নামাজ পড়তে হবে। আমি তোমার সাথে পরে কথা বলব। আরেকটু ঘুমিয়ে নেই, জান।
–তুমি নিজের খেয়াল রাখবে। তোমার কোনো কিছুর প্রয়োজনীয় হলে আমাকে বলবে। আমি তোমার সব আবদার পূরণ করে দিব। এবার ঘুমিয়ে যাও। আমাকে কাজে যেতে হবে। আমি রান্না করছি খেয়ে কাজে যাব।
দু’জন কথা বলে ফোনটা রেখে দিল। নয়না জোহানের কথা ভাবতে ভাবতে ঘুমের দেশে তলিয়ে গেল। আজকে সে উঠে নামাজও পড়ল না। সকালে উঠে গোসল করে বাহিরে বের হলো। নীলা রান্না করে কাজ করছিল। নয়নাকে ভেজা চুলে দেখে অবাক হয়ে গেল। নয়না তো কোনো দিন এত সকাল সকাল গোসল করে না। নীলার মনে সন্দেহের সৃষ্টি হলো। নীল উৎসুক কণ্ঠে বলল,
–আপনি এত সকাল সকাল গোসল দিছেন কেন, ভাবি?
–আমার খুব গরম লাগছিল তাই গোসল দিয়েছি।
–এই ভোরে কি কারো গরম লাগে! ভোরের শীতল বাতাস শরীরকে শীতল করে তুলে। আমার মনে হয় আপনি মিথ্যা কথা বলছেন। সত্যি করে বলেন আপনি কিসের জন্য গোসল দিয়েছেন।
–আমি তোকে বলতে চেয়েছিলাম না। তবুও তোকে বলছি। মেয়েদের তো প্রতি মাসে মাসে যে সমস্যা হয় জানিস। আমার সেই সমস্যা হয়েছিল রাতে। তাই আমি বাধ্য হয়ে সকালে গোসল করেছি৷ এবার তোর বিশ্বাস হয়েছে নাকি আরো গভীর ভাবে বুঝিয়ে বলতে হবে?
–এই ব্যাপার আপনে আগে কইবেন না। আমার সমস্যা হলে আমিও মাঝেমধ্যেই সকালে গোসল করি। এটা অবিশ্বাস করার কোনো কারণ আমি দেখছি না। আপনি আমাকে সত্যি কথা বলে দিলেই পারতেন। প্রথেম মিথ্যা কথা বলার কী দরকার ছিল?
–তুই সব ব্যাপারে এত মাথা ঘামাস আমার খুব বিরক্ত লাগে। তুই কাজের মেয়ে কাজের মেয়ের মতো থাকবি। একদম আমার ব্যাপারে মাথা ঘামাতে আসবি না।
–আপনি আমার সাথে এভাবে কথা বলতে পারলেন। আমি আর কখনো আপনার সাথে কথা বলতে আসুম না।
নীলা চা নিয়ে হামিদা বেগমের ঘরে এলো। নীলাকে মুখ কালো করে থাকতে দেখে হামিদা বেগম বললেন,
–তুই মুখটা কালো করে রেখেছিস কেন?
–আমি কাজ করে খাই বলে কী আমি মানুষ না?
–কী হয়েছে সেটা বলবি তো!
–আপনার পোলার বউ সকাল সকাল গোসল দিয়া ঘর থেকে বের হয়েছে। আমি কইলাম সকাল সকাল গোসল দিছেন কেন? আমারে কইলো গরম লাগছে। আমি কইলাম ভোরে তো শীত লাগে গরম লাগে না। হেতে কইলো তার সমস্যা হয়েছে তাই গোসল দিয়েছে। আমি কইলাম মিথ্যা কতা কইলেন কেন? হেতে আমারে কয় কাজের মাইয়া কাজের মাইয়ার মতন থাকবে।
–একটা মানুষের সমস্যা হতেই পারে। তুই পুলিশের মতো সব বিষয়ে জেরা করতে গিয়েছিস কেন? মন মানসিকতা সব সময় ভালো রাখতে শিখ। অন্যকে খারাপ ভাবার আগে ভাববি আমি নিজে কেমন। তাহলে দেখবি অধিকাংশ মানুষের চিন্তা ধারা বদলে গিয়েছে।
–পরের মাইয়াকে এত অন্ধবিশ্বাস করা ঠিক না। এই মাইয়া আপমাগো কাল হইয়া দাঁড়াইব। এই মাইয়ারে যত আলাভোলা লাগে এই মাইয়া খুব ধুরন্ধর। এই মাইয়ারে আমিও মেলা ভালোবাসছিলাম। কিন্তু এই মাইয়া রাত দিন যেভাবে চলাফেরা করে আমার পছন্দ হয় না। আপনারা এই মাইয়ার উপরে নজর রাখেন।
হামিদা বেগম রাগ দেখিয়ে বলল,
–তুই অনেক কথা বলতে শিখে গিয়েছিস তাই না? আমার ছেলের বউকে নিয়ে বাজে কথা বলার সাহস কোথায় পাস? আমি আমার ছেলের বউকে নিজের মেয়ে মনে করি। তাই সে নিজের বাড়ি মনে করে নিজের মন মতো চলাফেরা করে। এখানে আমি খারাপের কিছু দেখতে পাচ্ছি না।
নীলা কিছু বলতে যাবে তার আগেই নয়না এবং রিয়া হামিদার ঘরে প্রবেশ করল। রিয়া নয়নার বেস্ট ফ্রেন্ড। রিয়াকে হামিদা বেগম চিনেন। রিয়া হামিদা বেগমকে সালাম দিয়ে ভালোমন্দ কথা জানতে চাইল। হামিদা বেগম রিয়ার সাথে হাসিমুখে কথা বলছে। রিয়া আহ্লাদ করে বলল,
–আজকে আমার জন্মদিন আন্টি। তাই আমি নয়নাকে নিয়ে আজ সারাদিন ঘুরতে চাই। নয়না আপনাদের অনুমতি ছাড়া এক পাও এ বাড়ি থেকে নড়বে না। তাই আমি আপনার কাছে অনুমতি নিতে আসলাম।
–তুমি নয়নাকে নিয়ে যেতে পারো মা। তবে বিকালের মধ্যে নয়নাকে বাসায় দিয়ে যেতে হবে। আমার ঘরের মেয়ে রাত করে বাহিরে থাকবে এটা আমি মেনে নিতে পারব না। তুমি যদি বিকালের মধ্যে দিয়ে যেতে পারো। তবেই আমি তোমার সাথে নয়নাকে যেতে দিব।
রিয়া হেসে বলল,
–আপনি কোনো চিন্তা করবেন না। আপনি আমাকে ভরসা করে নয়নাকে আমার সাথে পাঠাচ্ছেন। আমি আপনার ভরসার মূল্য ঠিকিই দিব। আমি বিকালের আগেই নয়নাকে বাড়িতে পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করব। আমি কি নয়নাকে নিয়ে যেতে পারি?
–হ্যাঁ, নিয়ে যাও।
নয়না মাথা নিচু করে বলল,
–আমি কি রিয়ার সাথে যাব মা?
–হ্যাঁ, মা যাও। দেখেশুনে থাকবে। নিজের খেয়াল রাখবে। আর তাড়াতাড়ি বাড়িতে চলে আসবে।
নয়না খুশি হয়ে রিয়ার সাথে চলে গেল। নীলা নয়নার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে মুখ বাঁকাল। মনে মনে বলল এই মেয়েটাই এদের সর্বনাশ করে ছাড়বে।
জোহান পার্কে নয়নার জন্য অপেক্ষা করছিল। নয়না জোহানকে পেছনে থেকে জড়িয়ে ধরল। নয়নার স্পর্শ চিনতে অসুবিধা হলো না জোহানের। সে আমার বউ বলে নয়নাকে খুশি করে দিল। নয়না খুশি হয়ে জোহানের পাশে বসল।
জোহান মলিন মুখ করে বলল,
–তুমি আসতে এত দেরি করলে কেন?
–আমার শাশুড়ীর থেকে অনুমতি নিতে নিতে দেরি হয়ে গেল।
–তোমার থেকে একটা জিনিস চাইব দেবে?
–কী চাই তোমার?
–আমি একটা বাইক দেখেছি। চার লক্ষ টাকা জোগাড় করেছি। কিন্তু বাইকের দাম ছয় লক্ষ টাকা। তুমি আমাকে দুই লক্ষ টাকা দিবে নয়না?
–তুমি এটা নিয়ে চিন্তা করছো? আমি থাকতে তোমার কোনো চিন্তা নেই। আমি কালকেই তোমাকে টাকা দিব।
–কিন্তু তুমি এত টাকা কোথায় পাবে?
–আমি বিয়ের সময় অনেক গয়না পেয়েছি। সেখানে থেকে কিছু গয়না বিক্রি করে দেব। তাহলে আমার শ্বশুর শাশুড়ী বুঝতে পারবে না।
–আমার জন্য তুমি গয়না বিক্রি করবে। এটা আমি মেনে নিতে পারব না। আমি বাইক কিনব না,নয়না।
–আমি থাকতে তুমি তোমার শখ পূরণ করতে পারবে না। এটা তো হতে দেওয়া যায় না। আমি চাইলে অনেক গয়না বানিয়ে নিতে পারব। তুমি না করো না আমি কিন্তু রাগ করব।
–তুমি আমাকে এত ভালোবাসো কেন বলো তো?
–তুমি আমার খারাপ সময়ে আমার পাশে ছিলে তাই।
–আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি, নয়না।
–আমিও তোমাকে অনেক ভালোবাসি, জোহান।
দুজন দু’জনের দিকে তাকিয়ে হেসে দিল। জোহান নয়নার হাত ধরে গল্প করতে লাগল। নয়না মন দিয়ে জোহানের কথা গুলো শুনতে লাগল।
চলবে…..