প্রকৃতির বিচার পর্ব-০৩

0
7

#প্রকৃতির_বিচার
#পর্ব_০৩
#লেখিকা_Fabiha_bushra_nimu

বাহিরে ঝুম বৃষ্টি শুরু হয়েছে। গাছের ডালপালা গুলো হেলেদুলে পড়ছে। নয়না বেলকনিতে দাঁড়িয়ে বৃষ্টির ফোঁটা গুলো নিজের হাতের মুঠোয় পুরে নেওয়ার চেষ্টা করছে। শ্রাবণের ধারা সময়ের সাথে বৃদ্ধি পাচ্ছে। নয়না আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারল না। সে গা ঝেড়ে নিজের ঘরে এলো। নয়না ঘরে আসতেই নয়নার মুঠোফোনটা শব্দ করে বেজে উঠল। নয়না ফোনের কাছে এসে ফোনটা হাতে তুল নিল। জোহান ফোন করেছে। জোহানের নাম্বারটা দেখতেই নয়নার মুখে হাসি ফুটে উঠল। নয়না স্নিগ্ধ হেসে ফোনটা কর্ণে ধরল।

“এই বর্ষণের ধারায় যদি তোমার মন কাঁদে,
তবে তুমি চলো এসো, চলো এসো আমার
মনের ঘরে। আমি রইব তোমার অপেক্ষায়
বৃষ্টি থামার আগে।”

জোহানের কথায় নয়নার অধরযুগলে একরাশ মুগ্ধতা ছড়িয়ে দিয়েছে। রৌদ্রের সোনালী আলোর মতো নয়নার হাসি ঝলমল করছে। নয়না জোহানের সাথে তাল মিলিয়ে বলল,

“এই মন কাঁদে তোমাকে কাছে পাওয়ার জন্য,
তোমাকে পেয়ে আমার জীবনও ধন্য। আমি তো
চেয়েছি তোমাকে। বিবাহের সমীকরণে বাঁধা পড়েছি
আমি। তাই তো তোমার কাছে যেতে পারিনি।”

জোহান আদুরে কণ্ঠে বলল,

–এই মেঘলা আবহাওয়া বৃষ্টির রাতে তোমাকে খুব মিস করছি, জান। আজ যদি তুমি আমার বাড়িতে থাকতে তাহলে তোমাকে অনেক আদর করতাম। তোমাকে ভিষণ আদর করতে ইচ্ছে করছে। এই বৃষ্টির রাতে তুমি আমি একই কম্বলের নিচে দু’জন দু’জনকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে থাকতাম। আমার উষ্ণতা তোমাকে দিতাম। তোমার উষ্ণতা আমাকে দিতে কতই না ভালো হতো তাই না বলো?

–আমার যে তোমাকে কাছে পেতে ইচ্ছে করছে না৷ এমন টা না। আমারও তোমাকে কাছে পেতে ভিষণ ইচ্ছে করছে। কিন্তু আমি পরের সংসার করি। এখন যদি আমি রাত করে তোমার কাছে যাই। তাহলে আমাকে অনেক প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হবে। আমি কাউকে কৈফিয়ত দিতে চাই না বলেই যেতে পারব না। আমি তোমার সাথে পরে একদিন দেখা করে দিব।

–তোমার শ্বশুর-শাশুড়ী কী করছে?

–তারা ঘুমিয়ে গিয়েছে।

–তোমাদের বাড়ির কাজের মেয়েটা কোথায়?

–সে তো তার বাড়ি চলে গিয়েছে।

–একটা কথা বলব, জান?

–বলো, অনুমতি নেওয়ার কী আছে!

–আমি এখন তোমার বাড়িতে আসি। তোমাকে খুব দেখতে ইচ্ছে করছে। তোমাকে ছাড়া আমার দম বন্ধ লাগছে। এত সুন্দর বউ রেখে দূরে থাকা যায় বলো? আমি তোমার কাছে আসি না, জান। এখন বৃষ্টি হচ্ছে সবাই নিজ নিজ বাড়িতে শুয়ে আছে। আমাদের দেখার মতো কেউ নেই। তুমি খালি একবার হ্যাঁ বলো। আমি দশ মিনিটের মধ্যে চলে আসব।

–তোমার মাথা খারাপ হয়ে গিয়েছে? আমার শ্বশুর-শাশুড়ী কোনো ভাবে জানতে পারলে আমাকে শেষ করে ফেলবে। আমার খুব ভয় করছে। তুমি আজকে আসবে না, জোহান। আমি কালকে তোমাকে সময় দিব, কথা দিলাম।

–আমার তোকে এখন কাছে পেতে ইচ্ছে করছে। আমি কালকে তোমাকে পেয়ে কী করব বলো? ছোটো একটা জীবন সময়ের ইচ্ছেকে যদি সময়ে প্রাধান্য না দেই। তাহলে সেই অনুভূতি পরে আর কাজ করবে না। আমার অনুভূতিকে তুমি কষ্ট দিতে পারবে, নয়না? তোমার কী লাগবে সেটা বলো আমি তোমার জন্য সবকিছু করতে পারব। তুমি যদি বলো আমাকে এখনই ম’রে যেতে হবে। তাহলে আমি এখনই ম’রে যাব। তবুও তুমি আমাকে ফিরিয়ে দিও না।

–তুমি আমার জন্য এতটা পাগলামি করো কেন বলো তো? আমার বিয়েটা তোমার সাথেই হওয়া উচিত ছিল। আমার আব্বু আম্মু কেন যে প্রবাসী ছেলের সাথে বিয়ে দিয়ে দিল। আমাকে একটুও সময় দেয় না। সে সারাদিন কাজ নিয়ে বসে থাকে। আমি মন খুলে তার সাথে কথা বলতে পারি না। কোনো কিছু লাগলে টাকা দিয়ে দেয়। তুমিই বলো স্বামী যদি আমাকে সময় না দেয়। আমি যদি স্বামী হাত ধরে পছন্দের জিনিস কিনতে না পারি। তাহলে কি মন থেকে শান্তি পাব? আমার স্বামী আমার চাওয়া-পাওয়া গুলো বুঝল না। সে সারাদিন টাকা ছাড়া কিছুই বুঝে না। তোমার মতো একটা ছেলেকে স্বামী হিসেবে আমি চেয়েছিলাম। যে আমাকে সময় দিবে। আমাকে অনেক ভালোবাসবে। আমার ভালো লাগা, খারাপ লাগা সবকিছুকে প্রাধান্য দিবে। এই যে বৃষ্টি হচ্ছে আমার এই মুহুর্তে একটু সঙ্গের প্রয়োজন। আমি আমার স্বামীকে ফোন দিলাম সে কেটে দিল। অথচ তুমি কত সুন্দর আমার মনের কথা বুঝে গেলে। আমাকে সঙ্গ দেওয়ার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছ৷ তুমি আমাকে এতটা ভালোবাসো কেন বলো তো?

–মনের টান থাকলে সবকিছু হয়, নয়না। আমি তো তোমাকে মন থেকে ভালোবেসেছি। তোমার সাথে আমার এখনো বিয়ে হয়নি। তবুও আমি তোমাকে বউ বলে ডাকি। তোমাকে ছাড়া অন্য কাউকে বউ হিসেবে আমি মানতেই পারি না। তোমার স্বামী আসার পর যদি তুমি আমাকে ভুলে যাও। তবুও আমি তোমার জন্য সারাজীবন অপেক্ষা করব। তুমি ছাড়া অন্য কোনো মেয়ে আমার জীবনে আসবে না। আমি বিয়ে করলে তোমাকেই করব। আমাকে কখনো ছেড়ে যেও না, নয়না। আমি তোমাকে তোমার স্বামীর মতো কখনো অবহেলা করব না। আমার ভেতরে যতটুকু ভালোবাসা আছে সবটুকু উজাড় করে তোমাকে ভালোবাসব।

–আই লাভ ইউ সো মাচ, জান।

–আই লাভ ইউ টু, জানপাখি। আমি আসছি তোমাকে ভালোবাসা দিতে। তুমি দরজা খুলে রেখো। আজকে এত আদর দিব যে তুমি সারাজীবনেও ভুলতে পারবে না।

জোহানের কথায় লজ্জা পেয়ে গেল নয়না। জোহান ফোন কেটে দিয়ে গাড়ি নিয়ে বেড়িয়ে পড়ল। সময়ের সাথে ঝড়বৃষ্টি বৃদ্ধি পেতে লাগল। পুরো শহর গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন হয়ে আছে। ঘুম নেই শুধু নয়নার চোখে। জোহানকে পাওয়ার আকুলতা তাকে মাতাল করে তুলেছে। সে অধীর আগ্রহে জোহানের জন্য অপেক্ষা করছে। নয়নার ভেতরে ভেতরে ভয়ও কাজ করছে। তার শ্বশুর-শাশুড়ী যদি জেগে যায় তখন সে কী করবে? এখনো অনেক টাকার মালিক হয়নি নয়না। এত তাড়াতাড়ি ধরা পড়লে চলবে না। তার ভবিষ্যতের সবকিছু জোগাড় করে নিতে হবে। নয়নার ভাবনার মাঝেই এক জোড়া শীতল হাত নয়নাকে আষ্ঠেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরল। নয়নার সর্বাঙ্গ কেঁপে উঠল। নয়না চিৎকার দিতে যাবে। তার আগেই জোহান নয়নার অধরে নিজের অধর এক করে দিল। পরিচিত পুরুষের ঘ্রাণ পেয়ে নয়নাও মুহুর্তটা এনজয় করতে লাগল। নয়না জোহানের হাত ধরে নিজের ঘরে নিয়ে গেল। জোহান বৃষ্টিতে ভিজে গিয়েছে। নয়না জোহানের মাথা মুছিয়ে দিচ্ছে। জোহান নয়নাকে কোলে বসিয়ে নিয়ে নয়নার গালে, কপালে, ঠোঁটে আদুরে ভাবে চুমু খাচ্ছে। নয়না লজ্জায় মিইয়ে যাচ্ছে। জোহান নয়নার হাত থেকে তোয়ালে ফেল দিল। নয়নার নাকের সাথে নাক ঘষে নয়নাকে কোলে তুলে নিল। নয়না কোনো আওয়াজ করছে না। তার শ্বশুর-শাশুড়ী জেগে গেলে সর্বনাশ হয়ে যাবে।

জোহান নয়নার কানের কাছে ফিসফিস করে বলল,

–আজকে রাতে তোমাকে অনেক আদর দিব, জান। আমি একটা মুহুর্ত নষ্ট করতে চাই না। তাহলে চলো শুরু করা যাক, জান।

কথাগুলো বলেই জোহান নয়নাকে বিছানায় শুইয়ে দিল। নয়না চোখ বন্ধ করে জোহানকে অনুভব করতে লাগল। জোহান নয়নার চোখের পাতায় চুমু খেয়ে নয়নার গলায় মুখ ডুবিয়ে দিল। নয়নার হাতের ভাজে জোহানের হাত মিলিত হয়েছে। দু’জনের মাঝে মাতাল করা অনুভূতি কাজ করছে। দু’জন যখন একে অন্যকে উষ্ণ করতে ব্যস্ত তখনই নয়নার ফোনটা বেজে উঠল। এমন মধুর মিলেনর সময়টা ফোনের শব্দটা দু’জনের কাছে বিষাক্ত ঠেকল। নয়না ফোন ধরতে চাইলে জোহান নয়নার ফোনটা দূরে সরিয়ে দিল। তারপর নয়নাকে সম্পূর্ণ রুপে নিজের দখলে করে নিল।

নয়না ঘুমিয়েছে ভেবে উড়ান আর ফোন দিল না। ফোন থেকে নয়নার ছবি বের করে নয়নার সাথে কথা বলতে লাগল। নয়নার ছবিতে একটা চুমু দিয়ে ছবিটা বুকে জড়িয়ে ধরল। এই মেয়েটার জন্য উড়ানের অদ্ভুত এক মায়া কাজ করে। তার জীবন প্রথম ভালোবাসার নারী নয়না। এই নারীর কারণে যে দীর্ঘদিন বাঁচতে চায়। এই নারীর সাথে পুরো শহর ঘুরতে চায়। এই নারীর সাথে বৃদ্ধ হয়ে চায় উড়ান। দেশে গিয়ে নয়নার সাথে আদুরে মুহুর্ত কাটাবে। সেই স্বপ্ন চোখে নিয়ে নিদ্রা দেশে তলিয়ে গেল। বেচারা উড়ান জানতেও পারল না যাকে নিয়ে সে স্বপ্ন বুনছে। সেই নারী অন্য কাউকে সুখ দিতে মত্ত হয়ে গিয়েছে।

চলবে…..

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে