প্রকৃতির বিচার পর্ব-০১

0
66

#প্রকৃতির_বিচার
#পর্ব_০১
#লেখিকা_Fabiha_bushra_nimu

প্রেমিকের বুকে মাথা রেখে প্রবাসী স্বামীর সাথে কথা বলছে নয়না। নয়নার স্বামী উড়ান দুই বছর ধরে প্রবাসে আছে। বাবা-মায়ের পছন্দে নয়নাকে বিয়ে করেছিল উড়ান। ছয়মাস নয়নার সাথে সংসার জীবন কাটিয়ে। পরিবারকে ভালো রাখার তাগিদে তাকে বিয়ে ছয়মাস পর সূদুর প্রবাসে পাড়ি জমাতে হয়েছে। ছয়মাসে নয়নাকে ভিষণ ভালোবেসে ফেলছে সে। তার অস্তিত্ব জুড়ে শুধুই নয়না। এই মেয়েটার হাসি মুখ উড়ানের সকল ক্লান্তি দূর করে দেয়। এই মেয়েটার জন্য তার দেশ তাকে খুব করে কাছে টানে। তার মাঝে মাঝে মন চায় সবকিছু ছেড়ে নয়নার কাছে ফিরে যেতে। কিন্তু সে মধ্যবিত্ত পরিবারের সাধারণ একটা ছেলে। অনার্স শেষ করেও যখন চাকরির দেখা মিলছিল না। তখন বাধ্য হয়েই প্রবাসে আসার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল সে। ছেলের যেন ঘরে ফেরার টান থাকে সেজন্যই উড়ানকে বিয়ে করে বিদেশ পাঠিয়ে ছিল তার বাবা-মা। সেই থেকে গড়ে উঠেছে দু’জনের প্রণয়নে সম্পর্ক। নয়না কর্ণে ফোন ধরে বলল,

–তুমি খেয়েছ, জান? তুমি জানো না তুমি না খেলে আমি খেতে পারি না। তুমি খেতে বসলে অবশ্যই আমাকে ভিডিও কল দিবে। তুমি আর আমি দু’জন একসাথে খেতে বসব।

–তুমি এতটা ভালো কেন বলো তো, বউ? আমি অনেক ভাগ্যবান আমি তোমার মতো বউ পেয়েছি। আমাকে কখনো ছেড়ে যেও না। তুমি যদি আমাকে ছেড়ে চলে যাও তাহলে আমি একা হয়ে যাব। তোমাকে ছাড়া আমার নিজেকে নিঃস্ব নিঃস্ব লাগে। আমি আমার বাবা-মায়ের কাছে সারাজীবন কৃতজ্ঞ থাকব। তারা তোমাকে আমার জীবনে নিয়ে এসে দিয়েছে। আমি তো বিয়ে করতেই চেয়েছিলাম না ভাগ্যিস বিয়েটা করেছিলাম। তা না হলে তোমার মতো পরীকে হাতছাড়া করে ফেলতাম।

–তোমার ভাগ্যে আল্লাহ আমাকে রেখেছে। তুমি আমি না চাইলেও আমাদের মিলন হবেই। তাই আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করো। তোমার কাজ শেষ হতে কত সময় লাগবে?

–আমি এখন কাজ করছি। আমার কাজ শেষ হতে দুই ঘন্টা সময় লাগবে। আমার লক্ষী বউটা রাগ করে না। কাজ শেষ না করলে মালিকের হাতে বকা খাব। তুমি কি চাও তোমার বরটা মালিকের হাতে বকা খাক?

–আমি থাকতে আমার স্বামীকে বকা দিবে কার এত সাহস? আমি গিয়ে তোমার মালিকের চুল একটা একটা করে ছিড়ব এটা মাথায় রেখো।

নয়নার কথা শুনে উড়ান মনোমুগ্ধকর হাসি হাসলো। অধর জুড়ে যেন সুখেরা রাজত্ব করছে। যে মেয়েটা তার মানসিক শান্তির কারণ। সেই মেয়েটাই তার বেঁচে থাকার কারণ। উড়ান নয়নার জন্য বিধাতার কাছে দোয়া প্রার্থনা করল। বিধাতার কাছে লাখ লাখ শুকরিয়া আদায় করল। হৃদয়ের গহীনে আনন্দরা ছন্দ তুলে আনন্দ উল্লাস করছে। উড়ান নরম কণ্ঠে বলল,

–আমি তোমাকে দুই ঘন্টা পরে ফোন দিব। তুমি নিজের খেয়াল রেখো। আমার বাবা-মায়ের খেয়াল রেখো তাদের কখনো কষ্ট দিও না। তোমার কাছে এর থেকে বেশি কিছু চাওয়ার নেই আমার। তুমি আমার বিশ্বাসের মূল্য দিও। কখনো আমার হক নষ্ট করো না। আমি তোমাকে কথা দিয়েছিলাম তোমার হক কখনো নষ্ট করব না। আমাকে দেখো না আমি কিন্তু আমার কথায় অনড় আছি। আমার সহযোগীরা কতকিছু করে। আমাকে ডাকে আমিও যেন তাদের সাথে যাই। কিন্তু আমি তাদের সোজা না বলে দেই। আমার ঘরে আল্লাহর রহমত আছে। আমি কীভাবে পাপের মধ্যে জড়িয়ে যাব। আমার অনেক কষ্ট হয় জানো তবুও আমি পাপের পথে হাঁটি না।

–তোমার ব্যবহার, কথা সবকিছু আমাকে মুগ্ধ করে। তুমি মানুষটাই মুগ্ধতা দিয়ে জড়ানো। তোমাকে যত ভালোবাসব ততই কম হয়ে যাবে। তুমি এভাবেই সারাজীবন আমার হয়ে থেকো আমিও সারাজীবন তোমার হয়েই থাকব কথা দিলাম।

–তোমার কথা আমাকে মানসিক শান্তি দিল, নয়না। আমি এবার শান্তিতে কাজ করতে পারব। তুমি আব্বু আম্মুর সাথে গিয়ে গল্প করো। আমি রাখছি। আল্লাহ হাফেজ।

নয়না ফোন কেটে দিতেই জোহান নয়নার হাত থেকে ফোন কেঁড়ে নিয়ে নয়নার উপরে শুয়ে পড়ল। নয়নার ললাটের চুল গুলো নাড়তে নাড়তে বলল,

–তোমার স্বামী আমার থেকেও তোমাকে বেশি ভালোবাসে?

–এসব তুমি কী বলছো?

–তুমি যখন তোমার স্বামী সাথে ভালোবাসা দিয়ে কথা বলো তখন আমার সহ্য হয় না। আমার ভেতরটা জ্বলে পুড়ে যায়। তোমাকে আমি অন্য কারো পাশে সহ্য করতে পারি না, নয়না। তুমি কেন বুঝো না তোমাকে আমি কতটা ভালোবাসি। তুমি তাড়াতাড়ি উড়ানকে ডিভোর্স দিয়ে দাও। তোমাকে ছাড়া আমি আর থাকতে পারব না।

–তোমাকে ছাড়া থাকতে আমারও ভালো লাগে না। তুমি একটু অপেক্ষা করো। উড়ান অনেক ভালো ছেলে ওকে ডিভোর্স দেওয়ার মতো কোনো কারণ আমি খুঁজে পাচ্ছি না। কোনো কারণ ছাড়া একটা মানুষকে ডিভোর্স দেওয়া যায় না। উড়ান দেশে আসুক সে দেশে আসলে আমি একটা ব্যবস্থা করে ফেলব। আমার উড়ানের বাবা-মায়ের চোখে খারাপ হতে হবে। উড়ানের বাবা-মা এত ভালো যে আমি চাইলেও তাদের সাথে খারাপ ব্যবহার করতে পারি না। উড়ান তার বাবা-মায়ের একমাত্র ছেলে। তাদের কোনো মেয়ে নেই। তারা আমাকে একটা কাজ করতে দেয় না। আমার কষ্ট হবে বলে বাসায় কাজের লোক রেখেছে। আমাকে তারা রাজরাণীর মতো করে রেখেছে। এত ভালো মানুষের সাথে খারাপ ব্যবহার করা যায় বলো?

–ওরাই তোমার কাছে সব? আমি তোমার কেউ না? আমার মূল্য তোমার জীবনে নেই? একটা পুরুষ তোমাকে প্রতিনিয়ত ভালোবাসি বলছে। তোমাকে নিয়মিত বউ বলে ডাকছে। তোমাকে কাছে পাওয়ার কত ব্যাকুলতা তার মনে। দেশে আসলে সে তোমাকে ছুঁয়ে ছুঁয়ে দেখবে। তুমিও তার সাথে শুয়ে রাত কাটাবে। আমি এটা কিছুতেই সহ্য করতে পারব না। তুমি উড়ানকে ডিভোর্স দিবে কি না বলো?

–তুমি যদি আমাকে না বুঝো তাহলে কে বুঝবে শুনি? তুমি কোনো কামাই করো না। উড়ান বেশ মোটা অংকের টাকা আমাকে পাঠায়। সেখানে থেকে আমি উড়ানের বাবা-মাকে কিছু টাকা দেই সংসার চালানোর জন্য আর বাকিটা নিজের কাছে রেখে দেই। আমি ভাবছিলাম টাকাটার পরিমাণ আরেকটু বড়ো হোক। তুমি আমি পালিয়ে যাবার পর সেই টাকা দিয়ে একটা ব্যবসা করতে পারি। খালি ভালোবাসা দিয়ে তো আমাদের পেট চলবে না।

জোহান নয়নার গালে চুমু খেয়ে বলল,

–এত বুদ্ধি নিয়ে তুমি রাতে ঘুমাও কীভাবে বলো তো? আমি তো তোমাকে পাওয়ার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছি। আমি কখনো এটা ভেবে দেখিনি সংসার করতে গেলে অনেক কিছুর প্রয়োজন হয়। তোমার মতো মেয়ে লাখে একটা হয় তোমাকে আমি কিছুতেই হারাতে পারব না। তুমি টাকা জমাও সেই টাকা দিয়ে আমি ব্যবসা করব। আমাদের ব্যবসা যদি একবার সফল হয়ে যায়। তাহলে আমাদের বড়োলোক হওয়া থেকে কেউ আটকাতে পারবে না। তুমি এক কাজ করো আমাকে দশ হাজার টাকা দাও। আমার মা খুব অসুস্থ বুঝেছ। আমি এই মাসে মাকে টাকা পাঠাতে পারিনি এই মাসের টাকাটা তুমি দিয়ে দাও। আমি তোমাকে পরের মাসে তোমার টাকা পরিশোধ করে দিব।

–আমার টাকা মানে তোমার টাকা। তোমার মা তো আমারও মা। আমি কি আমার মাকে টাকা দিতে পারি না। আমাকে টাকা ফেরত দেওয়ার কথা বলে আর কখনো ছোটো করবে না।

–ওকে জান।

কথাগুলো বলেই জোহান শার্টের বোতাম খুলতে লাগল। জোহানকে শার্টের বোতাম খুলতে দেখে নয়না লজ্জায় লাল হয়ে যেতে লাগল। প্রায় তো সে জোহানের কাছে আসে তবুও যে কেন তার লজ্জা ভাঙে না। নয়নার পাঁচ আঙুলের ভাজে নিজের হাত ঢুকিয়ে দিয়ে নয়নাতে মত্ত হয়ে উঠল জোহান। নয়নাও প্রেমিক পুরুষের ডাকে সাড়া দিয়ে ভালোবাসার সমুদ্র ডুবে যেতে লাগল। দু’জন প্রেমিক হৃদয় ভালোবাসার জোয়ারে ভাসল। কিন্তু ভাসল না কেবল প্রকৃতি তার বোধহয় ভিষণ মন খারাপ। নীল অম্বরটা কালো মেঘে আচ্ছন্ন হয়ে আছে। বিশাল আকাশটা গর্জন করে বলছে প্রকৃতির বিচার তুমি খুব শীঘ্রই পাবে।

চলবে…..

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে