#পূর্ণতার মাঝেও অপূর্ণতার ছোয়া
#লেখিকাঃশুভ্রতা শুভ্রা
#পর্বঃ০৮
আদিল বলল, -“আমি ভাবছি শুভ্রতাকে অন্য কোনো জায়গা ঘুরতে নিয়ে গিয়ে সব বলব।”
রাজিব বলল, -“আমার মতে তা ঠিক হবে না। কারণ এখন তুই শুভ্রাকে অন্য কোথাও নিয়ে গেলে অনিক সন্দেহ করবে। আর ওকে কোনো ক্লুউ দেওয়া যাবে না।”
অনুভব বলল, -” আমার ও তাই মনে হয়। তুই আজকেই না হয় বাসায় গিয়ে ওকে সব সাজিয়ে বল।”
অভ্র বলল, -“হুম আজকেই বলল আর আঙ্কেল আন্টিও নেই বাসায় এখনি সুযোগ। যদি শুভ্রা কোনো রিএক্ট ও করে সেটা দেখে আঙ্কেল আন্টির মন খারাপ হওয়ার কোনো কারণ নেই।”
আদিল বলল, -“হুম তোরা ঠিক বলেছিস। বাসায় বলায় পারফেক্ট হবে।” আদিলের কথার মাঝখানেই অভ্রের ফোন বেজে উঠলো। সে দেখলো তার পিএ কল করেছে। অভ্র ওদের দিকে তাকিয়ে বলল,
-“আমার এখন যেতে হবে দোস্ত।”
আদিল বলল, -“যা তাহলে।আর, কাল না হয় তুই একবার আমাদের বাসায় যাস।”
অভ্র বলল ” আচ্ছা এখন তাহলে উঠি।” অভ্র চলে গেল। আদিল বলতে লাগলো-“রাজিব অনিকের ফুফুকে যে করেই হক খুজে বের করতে হবে আমাদের যে কোনো মূল্যে।”
অনুভব বলল, -” হুম ওই মহিলাই তো আসল কালপিট।” অনুভবের কথার মাঝেই রাজিবের ফোন বেজে উঠলো। ও দেখলো ওর আম্মু। ও কেটে দিলো। এরকম দুই তিনবার করার পর আদিল বলল, -” ধর আন্টি হয় তো কোনো দরকারে কল দিচ্ছে। এভাবে কেটে দেওয়া ঠিক হচ্ছে না।” আবার ফোন বেজে উঠতেই রাজিব কল রিসিভ করল। ওই পাশ থেকে ফোপানোর শব্দ ভেসে আসছে। রাজিব বসা থেকে দাড়িয়ে পরলো ওই পাশ থেকে ওর মা ফুপিয়ে ফুপিয়ে বলতে লাগলো,
-“বাবা তোর আব্বুর অবস্থা ভালো না। বাবা তুই এখনি হাসপাতালে চলে আয়। আমি কি করবো কিছুই বুঝতে পারছি না! হঠাৎ,করে কিভাবে যে বুকের ব্যথাটা বেড়ে গেলো।” রাজিবের হাত থেকে ফোন পরে গেলো ও ঠাস করে বসে পরলো। আদিল অনুভব জিঙ্গাসা করতে লাগল কি হয়েছে? কিন্তু রাজিব যেন পাথর হয়ে গিয়েছে। ওর কোনো হেলদোল নেয়। অনুভব খেয়াল করলো কল এখনো কাটেনি। সে কল ধরে সব শুনে তাড়াতাড়ি করে আদিলকে বিষয়টি জানালো। ওরা রাজিবকে নিয়ে তাড়াতাড়ি করে হাসপাতালে গেলো।
হাসপাতালে যেতেই রাজিবের মা দৌড়ে এসে রাজিবকে ধরে কান্না করতে লাগলো। রাজিব সেই আগের মতোই পাথর হয়ে দাড়িয়ে আছে। আদিল অনুভবকে বলল, -“আমাদেরকেই যা করার করতে হবে। ও এখন এগুলো করার পরিস্থিতিতে নেই। তুই যা শুনে আয় কি কি করতে হবে আমি ডাক্তারের সঙ্গে কথা বলে আসি।” ওরা দুইজন ওদের কাজে চলে গেলো।
কিছুক্ষণের মধ্যে ওপারেশন শুরু হলো। ওরা সবাই বসে আছে ওপারেশন থিয়েটারের বাহিরে। অনুভব অনেক কিছু বলে রাজিবকে সান্ত্বনা দিচ্ছে। কিন্তু ওর যেন কোনো হুশ নেই তখন থেকে ওই একি জায়গায় একি রকম করে বসে আছে সে। রাজিবের মাও অনেক চেষ্টা করলেন কিন্তু ছেলেকে স্বাভাবিক করতে পারলেন। অতিরিক্ত আতঙ্কিত হয়ে পরেছে সে। তাই হয় তো সে পাথর হয়ে গিয়েছে।
ডাক্তার বেড়িয়ে এলেন। আদিল অনুভব আর রাজিবের মা দৌড়ে গেলেন যে কি অবস্থা সেটা শুনতে।
ডাক্তার মুখে কিছুটা হাসি ফুটিয়ে বললেন, -“এখন উনি ঠিক আছে। জ্ঞান ফিরতে সময় লাগবে। আর ওনাকে কোনো রকম চাপে রাখবেন না। যথাসম্ভব হাসিখুশি রাখার চেষ্টা করবেন।”
ডাক্তারের কথা শুনে সবাই একটা সস্থির নিশ্বাস ফেলল। আদিল বলল, -“আন্টি আঙ্কেল কি কিছু নিয়ে সবসময় চিন্তায় থাকেন। আপনি কি কিছু জানেন!”
রাজিবের মা ফুস করে নিশ্বাস ছেড়ে বললেন, -“বাবা দেখো আমাদের বয়স হচ্ছে। কতোদিন বাঁচি না বাঁচি তার কোনো ঠিক নেই। এই নিয়ে কতো মেয়ের ছবি দেখিলাম রাজিবকে কিন্তু ও একটাকেও পছন্দ করে নি,ও নাকি কাকে পছন্দ করে তাকে বিয়ে করবে। কিন্তু সেই মেয়ে নাকি রাজি না। আমার ছেলেটা দিনদিন যেন কেমন হয়ে যাচ্ছে। এখন আর ঠিকমতো অফিসেও বসে না প্রথম প্রথম ঠিকি বসতো। দিন যাচ্ছে সব কিছুকে অবহেলায় ফেলে দিচ্ছে। এরকম করতে থাকলে আমাদের কেমন লাগবে বলো।” বলেই ফুপিয়ে উঠলেন রাজিবের মা। আদিল বলল, -“আন্টি চিন্তা করবেন না আমি সব ঠিক করে দিবো।”
আদিল নুসরাতকে কল দিয়ে কিছু কথা বলল। নুসরাত আর শুভ্রা মিলে লুভার বাড়ির সামনে গিয়ে দাড়ালো। নুসরাত বলল, -“দোস্ত আমার ভয় করছে। আমরা যদি কিছু উল্টাপাল্টা করে ফেলি।”
শুভ্রা বলল, -“ধুরু তোর ভাই তো আঙ্কেল আন্টিকে মানিয়ে নিয়েছে। এখন খালি ওই মাইয়ারে তুলে নিয়ে যাওয়া। এই কল দে তো ওকে।” নুসরাত কল দিলো কিন্তু রিসিভ হচ্ছে না। নুসরাত বলল, -“দোস্ত ও তো কল রিসিভ করছে না। হয় তো ঘুমিয়ে গেছে। আর আঙ্কেল আন্টি তো জানে না যে আজকেই বিয়ে দিবো আমরা।”
শুভ্রা রাগান্বিত কন্ঠে বলল, -” ওই মাইয়া এতো ভয় করিস কেন আর এখন কয়টা বাজে রে!”
নুসরাত বলল, “রাত বারোটা ছুঁই ছুঁই।”
শুভ্রা বলল “যা তো একটা পাথর খুজে আন।”
নুসরাত বলল “কেন রে পাথর দিয়ে কি করবি” আর, কিছু বলতে পারলো না শুভ্রার তাকানি দেখে। তাড়াতাড়ি করে পাথর নিয়ে আসলো।
শুভ্রা পাথর নিয়ে জানালায় ছুড়ে দিলো।
কেবলি চোখ লেগে এসেছিলো লুভার। কাঁচা ঘুম ভেঙে যাওয়ায় লুভা বিরক্তিভাব প্রকাশ করলো। সে দেখলো ঘড়িতে বারোটা বাজে প্রায়। সে ভেবে পাচ্ছে না এতো রাতে কে এমন ফাজলামি করবে। সে বিরক্তিভরা মুখে জানালার সামনে গিয়ে দাড়ালো। নিচে তাকাতেই সে দেখতে পেলো নুসরাত আর শুভ্রা দাড়িয়ে আছে। সে অবাকের চরম পর্যায়ে পৌঁছে গেলো। এতো রাতে এই হারামি দুটো এখানে কি করছে। শুভ্রা কল রিসিভ করতে ইশারা করলো। লুভা গিয়ে ফোন নিয়ে দেখে বিশটা মিস কল উঠে আছে। সে তাড়াতাড়ি কল রিসিভ করলো। সে কিছু বলবে তার আগেই শুভ্রা বলল “তাড়াতাড়ি বারান্দায় শাড়ি বেঁধে নিচে নেমে আয়।”
লুভা বলল “কি বলছিস এগুলো তোর মাথা ঠিক আছে তো!”
শুভ্রা বলল “আমার মাথা ঠিক আছে। তুই আসবি না আমরা যাবো।”
লুভা বলল “আচ্ছা বাবা আসছি কিন্তু কেন কি করবো গিয়ে!”
শুভ্রা রাগান্বিত কন্ঠে বলল “কেন নাচবি”, আয় বলছি তাড়াতাড়ি বলেই কট করে কল কেটে দিলো শুভ্রা।
লুভা আর কোনো উপায় না পেয়ে শুভ্রার কথা মতো নিচে নেমে এলো। লুভা নিচে নেমে কিছু বলতে নিবে তার আগেই অভ্র গাড়ি নিয়ে ওদের সামনে রেখে বলল “তাড়াতাড়ি উঠে আয়।”
শুভ্রা লুভার হাত ধরে গাড়িতে নিয়ে বসালো। লুভা কিছু বলবে তার আগেই শুভ্রা বলল, “এখন কথা বললেই মার খাবি চুপ করে থাক।” লুভা আর কিছু বলল না। চুপ করেই রইলো।
কিছুক্ষণ পর ওরা হাসপাতালে এসে পৌঁছালো। দেখলো অনুভব দাড়িয়ে আছে। অভ্র নেমে অনুভবের কাছে গেলো। ওরাও অভ্রের পিছে পিছে গেলো।
লুভা নুসরাতকে বলল “ওই আমরা হাসপাতালে কি করতে আসছি!”
নুসরাত বলল “আমরা আসছি বিয়ে দিতে।”
লুভা বলল “কি বলিস। কার বিয়ে আর হাসপাতালে বিয়ে কেন?কেমনে কি!”
নুসরাত ইশারায় লুভাকে সামনে তাকাতে বলল লুভা দেখলো রাজিব আর ওর মা বসে আছে। রাজিবকে কেমন যেন অদ্ভুত লাগছে। ওর মায়ের চোখ মুখও ফুলে আছে।
আদিল ওদের আসতে দেখেই অনুভবকে বলল “কিরে কাজী কোথায়?”
অনুভব বলল “কাজী ঘুমিয়ে পরছিলো ওকে বাসা থেকে তুলে নিয়ে আসছি। এই তো কাজী।”
আদিল লুভাকে নিয়ে একটু সাইডে গিয়ে কিছুক্ষণ কথা বলল। ওর বাবার সঙ্গে আদিলের যা কথা হয়েছে তাও আদিল রেকর্ড করে রাখছিলো। সেটাও শুনালো। আর বলল “আর না করো না প্লীজ।”
লুভা কিছু বলল না চুপ করে রইলো। কারণ যেখানে ওর বাবা মার আপত্তি নেই। সেখানে আর রাজিব সত্যি তাকে ভালোবাসে।
আদিল কাজী সাহেব কে বললেন “নিন বিয়ে শুরু করুন।”
শুভ্রা মনেমনে বলল (কি জামাই আমার কতো সহজে সবাইকে মানিয়ে নিলো। )
বিয়ে শেষে আদিল অভ্রকে বলল “তুই এখানে থাক।” আর অনুভব “তুই আন্টি লুভা আর রাজিবকে রাজিবদের বাসায় রেখে আয়। কাল সকালে লুভার বাসায় অনুভব আর অভ্র গিয়ে বুঝিয়ে বলবি সব। আর আঙ্কেলের জ্ঞান ফিরলেই লুভা আর রাজিবকে হাসপাতালে নিয়ে আসবি।” আদিল রাজিবের মাকে উদ্দেশ্য করে বলল, -“আন্টি আপনি বাসায় গিয়ে রেস্ট নেন। ওরা এখানে থাকবে।”
আদিল ওদের সবাইকে গাড়িতে দিয়ে এসে শুভ্রা আর নুসরাতকে বাসায় নিয়ে যাওয়ার জন্য হাসপাতালের ভিতরে আসলো। নুসরাত আর অভ্র কথা বলছিলো। আদিল আশেপাশে চোখ রাখলো কিন্তু……..
( চলবে )