#পূর্ণতার মাঝেও অপূর্ণতার ছোয়া
#লেখিকাঃশুভ্রতা শুভ্রা
#পর্বঃ০৭
আদিল অনিকের কলার ধরে বলা শুরু করলো, -“এখন একটু শান্তি দে আমাকে। অনেক তো হলো এবার রাখ না। ও আমার জান ওকে আমার কাছেই থাকতে দে না।
অনিক আদিলকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে সে বলতে লাগল,
-“এতো সহজে কি সবকিছু ঠিক করা যায় বন্ধু। ঠিক করার হলে তো আগেই করতাম। এখন দেখ আগে আগে কি হয়। বলেই হাসতে লাগল। যা দেখ শুভ্রার কাছে তো তুই খারাপ হয়ে গেলি। সামান্য টিচারের সঙ্গে কথা বলায় এতো রাগ। বলে আরো বেশি হাসতে লাগল।”
আদিল আর কিছু না বলে দৌড়ে ওর কেবিনের দিকে গেলো। ওর এখন ভয় হচ্ছে শুভ্রার কাছে কি সে দিন দিন খারাপ হয়ে যাচ্ছে। এরকম হতে থাকলে যদি শুভ্রা ওকে ছেড়ে চলে যেতে চায়। আদিল আবার নিজেই নিজেকে বলছে এতো সহজ নাকি ছেড়ে যাবে বললেই হচ্ছে নাকি সে তাকে কখনো ছেড়ে যেতে দিবে না। আদিল ওর কেবেনি গিয়ে দেখলো শুভ্রা ওর চেয়ারে বসে পা তুলে টিস্যু বক্স কাছে নিয়ে কান্না করছে আর বলছে,
” আমি আর কখনো ওনার সঙ্গে কথা বলব না। আজকেই বাবাকে বলে দিবো। সেই প্রথম থেকে আমাকে বকেই চলছে। শুভ্রতা এটা কেন করো? ওটা কেন করো? সে জানেনা যে আমি বকা সহ্য করতে পারিনা।”
আদিল দেখলো অলরেডি অনেকগুলো টিস্যুর দফারফা করে ফেলেছে শুভ্রা। তার মাথায় কি যেন খেলতেই সে কেবিনের দরজা রেখে দৌড়ে কোথাও চলে গেলো।
মিনিট দশেক পর দরজার শব্দ হতেই শুভ্রা চোখ তুলে দরজার দিকে তাকালো। এ কি দরজায় টেডি আর চকলেট হাতে নিয়ে কেউ দাড়িয়ে আছে। শুভ্রা খেয়াল করে দেখলো এতো আদিল। টেডির গায়ে সরি লেখা। শুভ্রা হেসে দিলো। কারণ আদিল এতো বড় টেডি নিয়ে এসেছে আর চকলেট নিয়ে এসেছে যে তাকে দেখাই যাচ্ছে না। শুভ্রার হাসির শব্দ শুনে আদিল টেডির পিছন থেকে একটু মাথা বের করে ঠোঁট উল্টিয়ে বলল,
-“সরি তোমাকে বকা দেওয়ার জন্য। আসলে তখন মাথা গরম হয়ে গেছিলো।”
শুভ্রা মুখ বাকালো। আদিল গুটিগুটি শুভ্রা সামনে গিয়ে দাড়ালো। টেডি আর চকলেট গুলো পাশের চেয়ারে রেখে। হাত থাকা ব্যাগটা শুভ্রার হাতে দিয়ে বলল – “আজকে আমরা বিকালে ঘুরতে যাবো ঠিক আছে।( আদিল শুভ্রার গাল টেনে বলল।) এবার শুভ্রতা হাসো দেখি।”
শুভ্রা নাক টেনে হালকা হেসে বলল, -” ঠিক আছে।”
আদিল বলল, -“আচ্ছা চলো এখন বাসায় যাই।”
শুভ্রা মাথা নাড়িয়ে “হ্যাঁ বলল।”
——————–
সূর্য অস্ত যাবে যাবে এমন অবস্থা। চারিদিকে পাখিদের বাড়ি ফেরার তাড়া পরে গিয়েছে। নদীর উপর সূর্য অস্ত যাওয়ার সুন্দর দৃশ্য ফুটে উঠেছে। এই পরিবেশে শুভ্রা আদিলের কাধে মাথা রেখে বসে আছে। শুভ্রা প্রথম রাখতে না চাইলেও আদিলের জোরাজরিতে আদিল কাধে মাথা রেখেছে। প্রথমের দিকে শুভ্রার কেমন কেমন লাগলেও এখন বেশ ভালোই লাগছে এইভাবে পরিবেশটা উপভোগ করতে। আদিল বলল,
-“শুভ্রা বাদাম খাবে।”
শুভ্রার নদীর পানির দিকে তাকিয়েই বলল,
-” হুম ”
আদিল সযত্নে বাদাম ছিলিয়ে শুভ্রাকে দিছে আর শুভ্রা খাচ্ছে। সন্ধ্যা নেমে এসেছে। চারিপাশে অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে আসছে। শুভ্রা আর আদিল হাটছে ব্যস্ত রাস্তার ফুটপাত দিয়ে। আদিল আজ গাড়ি আনেনি। রিক্সায় করে এসেছিলো তারা আদিলের ইচ্ছায়। এখন আবার হেটেও চলছে আদিলের ইচ্ছায়। শুভ্রা না করে নি তারও ভালোই লাগছে। ফুটপাতে পাশের ফুচকার দোকানের সামনে দাড়িয়ে পরলো শুভ্রা আর তাকালো আদিলের দিকে। আদিলও এক গাল হেসে দোকানদকে বলল,
“মামা দেন ফুচকা ”
দোকানদার হাসিমুখে বলল,
-” আদিল বাবা আর শুভ্রা মা যে কতোদিন পর তোমাদের আবার দেখলাম বলো তো। তা শুভ্রা মা কি আবার কিছু নিয়ে রাগ করেছিলো নাকি। আর প্রতিসময়ের মতো আজকেও কিন্তু তোমাদের একদম ঠিকঠাক লাগছে। মনে হচ্ছে একজন আরেকজনের জন্যই তৈরি। এই নেও তোমাদের ফুচকা।”
শুভ্রা চোখ ছোট ছোট করে দোকানদারের দিকে তাকিয়ে আছে। কি বলছে এই লোক! ওকেই বা কিভাবে চিনলো? আর ও রাগ করেছিলো বলে আদিল তাকে এখানে নিয়ে এসেছে সেটাই বা কিভাবে জানলো? আর এই লোককে সে আগে দেখছে বলে তো মনে পরছে না।
আদিলের কন্ঠে শুভ্রার ভাবনায় ছেদ পরলো। সে প্রশ্নবোধক দৃষ্টিতে আদিলের দিকে তাকালো। আদিল বিষয়টি বুঝতে পেরে বলল,
-” মামা হয় তো অন্যকারো সঙ্গে আমাদের গুলিয়ে ফেলেছেন বাদ দেও তো।” শুভ্রা বলল-
“কিন্তু”
আদিল শুভ্রাকে থামিয়ে দিয়ে বলল, -“এখন খাও তো। কোনো কিন্তু না।”
শুভ্রার মনের মধ্যে প্রশ্ন রয়েই গেল। যদি অন্য কারো সঙ্গে গুলিয়েই ফেলেন। তাহলে নাম। শুভ্রা আদিলের দিকে তাকালো। দেখলো আদিল খাচ্ছে আর ইশারায় শুভ্রাকেও খেতে বলছে। শুভ্রা আর ওই বিষয় নিয়ে ভাবলো না। সে খেতে লাগল। খাওয়া শেষে বিল মিটিয়ে আদিল শুভ্রার হাত ধরে আবার হাটা শুরু করলো। আদিল একটা রিক্সা ডাকলো। শুভ্রাকে সেখানে বসিয়ে নিজেও তার পাশে বসে বাসার পথে রওনা দিলো। আদিল শুভ্রাকে বলল,
“কেমন গেলো ঘুরাঘুরি ভালো লেগেছে?”
শুভ্রা হাসি মুখে জবাব দিলো,
-” হুম অনেক ভালো লেগেছে।”
————–
আদিল শুভ্রাকে বাসায় রেখে অনুভব রাজিব আর অভ্রের সঙ্গে দেখা করার জন্য একটা কফি সপে গেলো।
আদিল বসতেই অনুভব বলল, -“কিরে শুভ্রাকে তুই নাকি তোর চেহারা দেখিয়ে দিয়েছিস।”
আদিল বলল, -“আরে বাবা কেবল আসলাম একটু বসতে তো দিবি। তা না পেচাল শুরু করছিস। যাইহোক বলছি অভ্র শুভ্রা অবস্থা কি বুঝছিস! আমার মনে হয় ওকে সবকিছু বলা দরকার। কারণ যেহেতু ও মাঝখানে দিনগুলো ভুলে গেছে সেহেতু অনিকের সঙ্গে ওর বিয়ের কথা ছিলো কিন্তু কি কারণে হয় নি বা কেন হয় নি এটা মেবি ওর মাথায় আরো চাপ সৃষ্টি করছে। আজকে ওই ফুচকার দোকানদার মামা আমাদের অনেক দিন পর দেখে কথা বলা শুরু করছিলেন । যা বুঝলাম শুভ্রতা এটা নিয়ে অনেক ভাবনাচিন্তা করছে। আর অনিক ও বুঝে গেছে যে আমরা আবার বিয়ে করছি। ওর বাম হাতকে তো ও নিজের হাতে মেরে ফেলছে। এখন ওর ডান হাতকে তোদের খুজে বের করতে হবে। কারণ, আমি যে খবর পেয়েছি সে অনুযায়ী রনি অনিককে খবর দিতে পারেনি বলেই খুন করেছে। আর বিয়ের কথা অন্যকেউ খবর দিয়েছে। আর তখন ও অনিক জানতো না যে কার সঙ্গে বিয়ে হয়েছে। কারণ যেই নাম্বার থেকে মেসেজ আসছে সেটা অনিকের কোনো নাম্বার না আর সম্ভব ও না কারণ তখন অনিক ক্লাবে ছিলো। আর সেখানে আমি নজর রাখছিলাম ও ফোন ধরার মতো পরিস্থিতিতেও ছিলো না। তাই আমার মনে হচ্ছে আরো কেউ আছে। ওর মাথা হিসেবে কাজ করছে। আমার কেন যেন মনে হচ্ছে ওই দিন এক্সিডেন্টে ওর ফুফু লামিয়া সেন মারা যায় নি। ওনি এখনো জীবিত।”
রাজিব বলল, -“হুম ওখান থেকে তো ওনার লাশ ও উদ্ধার করা যায় নি।”
অভ্র বলল, -“আদিল শোন আমার মনে হয় খেলা ঘুরে যাওয়ার আগেই তুই শুভ্রাকে বিষয়গুলো বল। আর আমার মনে হয় না এতে ওর কোনো ক্ষতি হবে। ওর আরো বেশি ইমপ্রুভ হবে।”
অনুভব বলল, -“কিন্তু আদিল তুই তো শুভ্রাকে প্রথমে দেখা দিতে চাস নি তাহলে এখন!”
আদিল বলল, -“হুম কারণ তখন মনে করেছিলাম শুভ্রতা হয় তো আমাকে দেখে অতিরিক্ত হাইপার হয়ে পরবে হয় তো আমাকে ঠিক মতো মনে না করতে পেরে অস্থির হয়ে পরবে। আর ওটা যে আমার বাসা সেটা কারো জানার কথা না । কারণ আমি বাসাটা বিয়ের আগেরদিনই কিনেছি। আর আমি বুঝতে পেরেছিলাম যে অনিকের লোক আমাদের নজরে রেখেছে। তাই আমি মাক্স পরে ছিলাম। যাতে অনিক মনে করে আমি শুভ্রতাকে বিয়ে করিনি, অন্যকেউ করেছে। আমার প্লান কাজেও আসে। আমি শুভ্রাকে ওর বাসায় নামিয়ে দেওয়ার কিছুক্ষণ পরেই আমার ফোনে মেসেজ আসে যে তুই তো
” শুভ্রাকে নিজের করতে পারলিনা। কি করলি এতো কিছু করে।”
কিন্তু দুইদিন আগে হঠাৎ করে মেসেজ আসে যে,
“তুই আমার সঙ্গে খেললি তো এখন আমার পালা। শুভ্রাকে তুই বিয়ে করছিস না আবার। আগেরবারের মতো দেখ এবার ও আমি তোদের কি অবস্থা করি। কিন্তু এবারের খেলার পর তোরা আর কোনোদিন এক হতে পারবি না আগের শুধু একটুমাএ ভুলের জন্য আজ শুভ্রা আমার হয় নি।”
ওটা দেখার পর আমি দৌড়ে ভার্সিটি যাই তখন দেখি শুভ্রতা আর অনিক বসে আছে। তখন আমার প্রচণ্ড রাগ হয়। এইরকম করে দুইদিন আমি শুভ্রতার সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করে বসি।
অনুভব বলল, -“তাহলে এখন কি করবি ভাবছিস।”
( চলবে)