#পূর্ণতার মাঝেও অপূর্ণতার ছোয়া
#লেখিকাঃশুভ্রতা শুভ্রা
#পর্বঃ০৫
শুভ্রা পিছনে তাকিয়ে দেখলো অভ্র দাড়িয়ে আছে। সে চোখ ছোট ছোট করে অভ্রের দিকে দৃষ্টি দিল। কারণ অভ্র প্রয়োজন ছাড়া সহজে শুভ্রার রুমে আসে না। আর তার উপর হাতে চকলেটের বক্স।
শুভ্রার এমন তাকানিতে অভ্রের অসস্থি ফিল হচ্ছে। সে শুভ্রার পাশে বসে শুভ্রার দিকে না তাকিয়ে চকলেট গুলো শুভ্রাকে দিল। আর আমতা আমতা করে বলল,
-“কেমন আছিস” অভ্রের এমন প্রশ্ন শুনে শুভ্রার কপাল কুচকে গেল সে অভ্রের কপাল গলায় হাত দিল। কই শরীর তো ঠিক আছে তাহলে!শুভ্রা চিন্তিত কন্ঠে বলল,
-“ভাইয়া তোর কি কিছু হয়েছে? শরীর খারাপ! কিছু কি বলবি আমায়? ” অভ্র ফুস করে নিশ্বাস ছেড়ে বলল,
-“আজকে কি তুই তোর বান্ধুবীদের সঙ্গে কথা বলছিলি।” শুভ্রা ভ্রুযুগল দ্বিগুণ কুচকিয়ে বলল,
-“কোন বান্ধবীর কথা বলছিস রে তুই ভাইয়া, ঝেড়ে কাশ তো।” অভ্র ঘামতে শুরু করেছে সে জিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে আমতা আমতা করে বলল,
-“মানে আসলে নুসরাতের সঙ্গে ঝগড়া হয়েছে।” অভ্রের এমন নারভাস অবস্থা দেখে শুভ্রার খুব হাসি পাচ্ছে। কারণ সে অনেক আগেই বুঝতে পেরেছে তার এই ভাইয়া তার বেস্টিকে ভালোবেসে ফেলেছে।অভ্র মাথা নিচু করে মেঝের দিকে তাকিয়ে আছে মুখ গোমড়া করে।
হঠাৎ, শুভ্রার ফোন বেজে ওঠায় অভ্র শুভ্রার দিকে এক পলক তাকাল আর ফোনের দিকে এক পলক। নুসরাত ফোন দিয়েছে। অভ্র আকুল দৃষ্টিতে ফোনে দিকে তাকিয়ে আছে। শুভ্রার ইশারা পেয়ে শুভ্রার ফোন নিয়ে অভ্র শুভ্রার রুমে চলে গেল। শুভ্রা বারান্দায় বসেই চকলেট গুলো খেতে লাগল। আর বলতে লাগল,
-“এতো দিনে গরুটার সুমতি হয়েছে বোনকেও যে সময় সময় চকলেট দেওয়া লাগে এটা বুঝতে পারছে।” মিনিট পাঁচেক পর অভ্র এসে শুভ্রাকে ওর ফোন দিয়ে চলে গেল।
শুভ্রা প্রায় সবগুলো চকলেটই খেয়ে ফেলেছে। আর বাকি একটা চকলেট সে তার কভার খুলে খেতে নিবে তখনই তার ফোন বেজে উঠল। সে বিরক্তিকর দৃষ্টিতে ফোনের দিকে তাকিয়ে অনেক কষ্টে হাতের কুনুই দিয়ে ফোন রিসিভ করে লাউড স্পিকারে দিয়ে বলতে লাগল,-“কিরে পেত্নী সব ঠিক ঠাক হলো তোদের? আর ভালো কাজ করছিস ঝগড়া করে, তোরা ঝগড়া করলি বলেই তো আমি চকলেট পেলাম।
ওপাশ থেকে কোন শব্দ নেই। শুভ্রা আবার বলা শুরু করল,-“কিরে কথা বলছিস না কেন কিরে?”
শুভ্রা দেখল কল কেটে গিয়েছে। শুভ্রা কিছু টা অবাক হলো নুসরাত তো এরকম করার মেয়ে না। শুভ্রা এগুলোই ভাবছিল তখনই মেসেজ টুন বেজে উঠল। শুভ্রা দেখল মেসেজ আপরিচিত নাম্বার থেকে এসেছে লেখা আছে
“ঘুমিয়ে পড়ো আর এতো চকলেট খাওয়া স্বাস্থ্যর জন্য ক্ষতিকর। আর আমি কে সেটা নিয়ে গবেষণা করার প্রয়োজন নেই ঘুমিয়ে পড়ো আমি যেন আর জেগে থাকতে না দেখি তাহলে কিন্তু..!”
শুভ্রা মেসেজটা পড়ে চিন্তায় পড়ে গেল। কে দিতে পারে এই মেসেজ কেউ কি তাকে ফলো করছে। সে বসা থেকে দাড়িয়ে গেল আশেপাশে চোখ রাখল। কই কেউ নেই আশেপাশে তাহলে। সে আর ব্যাপারটা নিয়ে মাথা ঘামালো না কারণ তার ঘুমে চোখ টলুমলু করছে। সে গুটিগুটি পায়ে রুমে চলে আসল। বিছানায় শুতেই রাজ্যের ঘুম তার চোখে নেমে এলো।
————-
ভার্সিটির ক্যাম্পাসে বসে আছে শুভ্রা নুসরাত আর লুভা। শুভ্রা চকলেট খাচ্ছে আর পকপক করছে। লুভা বিরক্তকর ভঙ্গিতে বসে থেকে শুভ্রার কথা শুনছে আর মাঝে মাঝে একটু করে কথা বলার সুযোগ হয়ে উঠছে তার । ওরা কথা বলতে বলতে খেয়াল করল নুসরাত খুব চুপচাপ হয়ে আছে। গম্ভীরমুখে সে মাটির দিকে কি যেন ভাবছে। শুভ্রা নুসরাতকে ডাকলো কিন্তু নুসরাতের কর্ণকুহরে তা পৌছালো নাকি তা বোঝা গেল না। শুভ্রা আর থাকতে না পেরে নুসরাতে হাতে জোরে একটা চিমটি কাটলো। শুভ্রার চিমটি খেয়ে নুসরাত লাফিয়ে উঠল।
সে লুভা আর শুভ্রার দিকে তাকিয়ে রইল তারা মিটিমিটি হাসছে সে ব্যাপারটা বুঝতে পেরে রেগে বলে উঠলো,-“কি সমস্যা তোদের। এতো বাচ্চাদের মতো চিমটা চিমটি করছিস কেন যতোসব!”
নুসরাতের রাগ দেখে লুভা আর শুভ্রা কিছুটা দমে গেল। নুসরাত নিজের ব্যাগ নিয়ে হনহন করে চলে গেল। শুভ্রা আর লুভা একজন আরেকজনের দিকে তাকালো যে নুসরাতের এমন করার কারণ খোজার জন্য কিন্তু দুইজনের একি অবস্থা কেউ কিছু বুঝতে পারেনি। তারা দুইজনই রসগোল্লার মতো চোখ করে নুসরাতের যাওয়ার পথে চেয়ে রইল।
হঠাৎ, একটা ছেলে এসে শুভ্রা আর লুভার সামনে দাড়ালো। শুভ্রা ছেলেটিকে দেখেই জরিয়ে ধরল। অনিক তুই এতোদিন পর আমার কথা মনে পরল তোর। (অনিককে ছেড়ে দিয়ে মুখ ফুলিয়ে বলল শুভ্রা।) অনিক হাসি দিয়ে শুভ্রার গালটেনে বলল,-“তুই এখনো ছোটই রয়ে গেলি।” শুভ্রাও হেসে দিল। শুভ্রা অনিক আর লুভা আড্ডা দিচ্ছিল। লুভার কিছু কাজ পরে যাওয়ায় সে চলে গেল। অনিক আর শুভ্রা বেশ হেসে হেসেই কথা বলছিল।
ওদের কথা বলার মাঝখানেই কেউ এসে শুভ্রা হাত ধরে নিয়ে যেতে লাগল। শুভ্রা কিছুই বুঝতে পারলো না। শুভ্রা সেই ব্যক্তির দিকে তাকিয়ে দেখলো এতো আদিল ওর মিস্টার জামাই। কিন্তু এতোদিন পর এসে এইরকম করে ওকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছে? আর অনিক কি মনে করবে! ওকে অনন্ত পক্ষে বলে আসা দরকার ছিল।
আদিল শুভ্রাকে টেনে নিয়ে গাড়িতে বসালো। শুভ্রা শুধু হতবম্ভ হয়ে আদিলের কান্ড দেখছে। আদিল অনেক স্পিডে গাড়ি ড্রাইভ করছে। দেখেই বোঝা যাচ্ছে অনেক রেগে আছে।
আদিল গাড়ি থামিয়ে শুভ্রার হাত ধরে আবার নিয়ে যেতে লাগল। শুভ্রা খেয়াল করল এটা তো আদিলদের বাড়ি। আদিল সোজা ওর রুমে নিয়ে যেতে লাগল শুভ্রাকে। শুভ্রা মিনমিনে গলায় বলল,
-“হাতটা একটু আস্তে ধরুন প্লীজ আমার লাগছে।”
আদিল শুভ্রার দিকে তাকালো। আদিলের তাকানো দেখে শুভ্রা চুপসে গেল। কারণ, আদিলের চোখ অসম্ভব লাল হয়ে আছে।
আদিল রুমে এসেই শুভ্রাকে ধাক্কা দিয়ে বেডে ফেলে দিলো। আদিল হাতমুঠো করে জরে জরে শ্বাস নিচ্ছে। সে দুইহাত দিয়ে মাথার চুল আকাড়ে ধরে হাটু গেড়ে বসে পরলো। সে পেন্টের পকেট থেকে ফোন বের করে ফোন দিলো অনুভবকে আর বলতে লাগলো,
-“ও আবার নতুন প্লান শুরু করেছে। শুভ্রতার ভার্সিটিতে ও টিচার হিসেবে জয়েন হয়েছে। তুই সব ব্যবস্থা কর। বলতে বলতে আদিল ফোন নিয়ে বারান্দায় চলে গেল।
শুভ্রা হতবম্ভ হয়ে এখনো বেডেই বসে আছে। সবকিছু ওর মাথার উপর দিয়ে গেলো। আর আদিলকে এমন দেখাচ্ছে কেন। সেটাও সে বুঝতে পারছে না। আর সে অনুভব ভাইকে কি বলছে এগুলো?
শুভ্রা এগুলোই ভাবছিলো তখন হঠাৎ, করে আদিল এসে শুভ্রার মুখ চেপে ধরলো। শুভ্রা ব্যথায় কুকরে উঠলো। আদিল টান দিয়ে ওর মুখের মাক্স খুলে ফেলল। আর শুভ্রার মুখ ছেড়ে দিয়ে চুলের মুঠি আকাড়ে ধরে শুভ্রার ঠোঁট নিজের দখলে নিয়ে নিলো। শুভ্রা আদিলের এমন আকষ্মিক কাজে ঘাবড়ে গেল। যখন সে বিষয়টি বুঝতে পারলো তখন ছাড়ানোর চেষ্টা করতে লাগলো। শুভ্রা যখনি ছাড়ানোর চেষ্টা করছে তখনই আদিল ওকে আরো শক্ত করে ধরছে । শুভ্রা আদিলের সঙ্গে পেরে না উঠে চুপ করে রইলো। ফোন আসতেই আদিল শুভ্রা থেকে ছিটকে চলে গেলো। ফোন নিয়ে সে বারান্দায় চলে গেল। শুভ্রা একইরকম করেই শুয়ে রইল। কেন যেন আদিলকে তার চেনাচেনা লাগছে। কিন্তু কিভাবে কি? আদিলের স্পর্শ গুলো কেন জানি চেনা চেনা লাগছে। মনে হচ্ছে আগেও সে আর ভাবতে পারছে না!
আদিল প্রায় আধা ঘন্টা পর রুমে এসে দেখলো শুভ্রা বেডে চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছে। আদিল আস্তেধীরে গিয়ে শুভ্রার পাশে বসে আলতো করে শুভ্রার গালে হাত রাখলো। কিন্তু শুভ্রার কোনো হেলদোল নেই। আদিল ঘাবড়ে গেল সে শুভ্রাকে ডাকতে লাগলো,
-“শুভ্রতা এই শুভ্রতা উঠো প্লীজ। কি হয়েছে তোমার। রাগ করেছো তুমি আমার উপর।”
আদিল দেখলো শুভ্রার জ্ঞান নেই। সে অনেকটা উত্তেজিত হয়ে পরলো। সে জোরে জোরে ডাকতে লাগলো,
-“আম্মু ও আম্মু কোথায় তুমি তাড়াতাড়ি এসো। ও আম্মু তাড়াতাড়ি এসো প্লীজ।”
মিসেস মাহমুদ আদিলের গলা শুনে দৌড়ে ছেলের রুমে এলেন। রুমে শুভ্রাকে দেখে কিছুটা অবাক হলেন। আদিল এসে ওর মাকে জরিয়ে ধরল আর বলতে লাগলো আম্মু আমার জন্যই আজকে শুভ্রা জ্ঞান হারালো আমি একদম ভালো না। আমি এটা কি করলাম আম্মু।
মিসেস মাহমুদ আদিলকে ছাড়িয়ে ওর চোখ মুছে দিলো আর বলল,
-“ছেলে হয়ে তুই কান্না করছিস এটা কেমন কথা বাবা। আচ্ছা আমি দেখছি ওর কি হয়েছে। তুই যা অভ্রকে ফোন দে। ”
———————–
শুভ্রা পিটপিট করে চোখ খুললো। সে একটুও নড়তে পারছে না। কি যেন তাকে পেচিয়ে রেখেছে। সে মাথা উচু করে দেখলো আদিল। সে একটু নড়াচড়া করতেই আদিলের ঘুম ভেঙে গেল। সে লাফিয়ে উঠে দেখল শুভ্রা বিরক্তিকর দৃষ্টিতে ওর দিকে তাকিয়ে আছে। আদিল মুখে বিস্তৃত হাসি ফুটিয়ে কাপাকাপা হাতে শুভ্রা গালে হাত রাখলো আর বলল শুভ্রতা এখন কেমন লাগছে। আগের থেকে ভালো লাগছে এখন।
শুভ্রা মাথা নাড়িয়ে হঁ্যা বুঝালো। আদিল শুভ্রার কপালে ভালোবাসার পরশ এঁকে দিলো। শুভ্রা দেখলো আদিলের চোখে পানিতে ভরপুর। সুযোগ পেলেই অশ্রু কোণা চোখ থেকে গড়িয়ে পরবে। আদিল ভাঙাভাঙা গলায় বলল,
-“আমি অনেক খারাপ তাই না। আমি তোমাকে কষ্ট দেই । বিশ্বাস করো আমি ইচ্ছা করে এমনটা করি নি। দেখ যেই হাত দিয়ে তোমাকে ব্যথা দিয়েছিলাম সেটার কি অবস্থা করেছি। তুমি প্লীজ এবারের মতো আমাকে ক্ষমা করে দেও। আর কখনো এমন হবে না।”
শুভ্রা আদিলে হাতের দিকে তাকিয়ে হতভম্ব হয়ে গেল। আদিলের হাতের অনেক জায়গায় রক্ত শুকিয়ে আছে। শুভ্রা তাড়াতাড়ি করে আদিলের হাত ধরে বলল,
-“আপনি কি পাগল!”
আদিল মুচকি হাসি দিয়ে বলল,
-” হুম,আমি তোমার পাগল”
শুভ্রা রাগীকন্ঠে বলল, -” ব্যান্ডিজ করেন নি কেন আদিল হেসে জবাব দিল,-“মন চায় নি তাই।” শুভ্রা রুমের আশেপাশে তাকিয়ে দেখলো ড্রেসিংটেবিলের উপরে ব্যান্ডিজের বক্স রাখা। সে দৌড়ে গিয়ে সেটা আনতে গেল কিন্তু সে হাতে পাচ্ছে না। সে টুলের উপর উঠলো কিন্তু তাও নাগাল পাচ্ছে না। শুভ্রা পা ফসকে যেই পড়ে যেতে নিবে তখনই আদিল এসে শুভ্রাকে কোলে নিয়ে আবার বেডের উপর বসিয়ে দিল আর রাগীকন্ঠে বলল,-“এতো ছটফট করো কেন বললেই তো হতো এটা এনে দেওয়ার কথা আমি কি না করতাম।” শুভ্রা মুখ ছোট করে নিচের দিকে তাকিয়ে রইল।
আদিলে এসে বক্সটা শুভ্রার হাতে দিলো আর বলল,”নেও”
শুভ্রা হাসিমুখে বক্সটা নিয়ে আদিলকে মুখ ভেংচি দিয়ে আদিলের হাত টেনে ব্যান্ডিজ করে দিলো। শুভ্রা ওর চুল গুলো নিয়ে হাতখোপা করতে গেলো কিন্তু হাতে ব্যাথার কারনে কুকুয়ে উঠল। আদিল চোখ গরম করে রুমে থেকে বেরিয়ে গেলো। একটু পর আবার এলো হাতে একটা ব্যান্ড নিয়ে সে এক হাতে শুভ্রার চুল ঠিক করে দিচ্ছে এমন সময় নুসরাতের কন্ঠ শুনে দরজার দিকে তাকালো
(চলবে)