#পূর্ণতার মাঝেও অপূর্ণতার ছোয়া
#লেখিকাঃশুভ্রতা শুভ্রা
#পর্বঃ০২ও০৩
আলিয়া বেগম শুভ্রাকে সাজিয়ে দিয়ে চলে গেলেন, আর শুভ্রা ভাবতে লাগল। ব্যাপারটা কি তাকে এরকম করে সাজানো হলো কেন? আর নুসরাত আর লুভা দুইজন ই কল কেন রিসিভ করছে না!
ওগুলোই ভাবছিল তখন তার বাবা ডাক দিল। সে তার ভাবায় ইতি টেনে রুম থেকে বের হয়ে নিচে চলে গেল। নিচে গিয়ে গাড়িতে উঠে পরল সে।
ড্রাইভিং সিটে অভ্র আর তার পাশের সিটে শুভ্রার বাবা আর পিছনে শুভ্রা আর আলিয়া বেগম বসলেন। শুভ্রা অভ্রকে বলল…..
-“ভাইয়া তুই কখন আসলি!তুই না কি কাজে লন্ডনে গেছেলি। আর তোর না আরও তিনদিন পর ফেরার কথা!”
অভ্র গম্ভীর গলায় বলল..-“এখন কিছু জিঙ্গেস করিস না পরে সময় হলে সব বলব। ”
শুভ্রা কপাল কুচকে ভাবার্থক কন্ঠে বলল -“কি এমন কারণ যেটা এখন বলা যাবে না। ”
অভ্রা স্বাভাবিক ভাবে বলল…-” প্লীজ চুপ থাক পরে সব জানতে পারবি।”
শুভ্রা কিছু বলতে নিবে তার আগেই আরিফুল চৌধুরী শুভ্রাকে থামিয়ে দিয়ে বলতে লাগলেন….
-“মা আমরা তোর বাবা মা। আমরা কখনো চাইবো না তোর খারাপ। তোর খারাপ হবে তা কি আমরা চাইবো তুই বল মা!”
শুভ্রা কিনচিত কপাল কুচকালো তারপর গম্ভীর কন্ঠে বলল,-“না বাবা তোমরা যা সিদ্ধান্ত নেবে অবশ্যই আমার ভালো হবে সেই ভেবেই নিবে।”
আরিফুল সাহেব বললেন,-“তাহলে মা এখন আর কিছু জিঙ্গাসা করিস না যা হচ্ছে তা হতে দে। আর আমার জন্য একটা কাজ করতে পারবি!”
শুভ্রা পিছন থেকে আরিফুল সাহেবের গলা জরিয়ে বলল,-” তুমি যা বলবে আমি তাই করব বাবা এতে এতো করে বলতে হবে না বল বাবা কি করতে হবে!”
আরিফুল সাহেব কিছু বলতে নিবেন তার আগেই অভ্র বলল,
-“বাবা আমরা পৌঁছে গেছি।”
আরিফুল সাহেব আর কিছু বললেন না গাড়ি থেকে নেমে গেলেন। আলিয়া বেগম শুভ্রা আর অভ্র ও নামল। একটা বাড়ির সামনে দাড়িয়ে আছে ওরা। একটা মধ্যবয়স্ক লোক এসে ওদের ভিতরে নিয়ে গেলেন। লোকটিকে দেখে বোঝা যাচ্ছে এই বাড়িতে হয় তো কাজ করে।
যাইহোক,শুভ্রা ভিতরে গিয়ে অবাক কারন এখানে কোনো পার্টি হচ্ছে না। আর ভিতরে একবয়স্ক লোক আর একজন মধ্যবয়স্কা মহিলা আর দুটো ছেলে নুসরাত লুভা আর রাজিব। দুইটা ছেলের মুখেই মাক্স! দেখেই বোঝা যাচ্ছে তারা তাদের ফেস আরাল করার জন্য এই কাজটি করেছে। অভ্র গিয়ে দুটো ছেলের মধ্যে একটিকে জরিয়ে ধরল। শুভ্রা খেয়াল ছেলেটির পরনে তার মতো সেম ব্লু রঙের বেলেজার আর সাদা শার্ট।
হঠাৎ, পিছন থেকে কেউ বলে উঠল আমি এসে পরেছি। শুভ্রা পিছনে তাকিয়ে দেখল একটা হুজুর টাইপের লোক। আরিফুল সাহেব শুভ্রার কাছে গিয়ে ওর হাত ধরে সাইডে নিয়ে গেলেন আর বলতে শুরু করলেন,
আমি এখন যা বলব তা মেনে নিতে হয় তো তোর অনেক কষ্ট হবে। কিন্তু আমার হাতে কিছু নেই। প্লীজ আমাকে ভুল বুঝিস না। আর মা তোর জীবনে প্রতি পদক্ষেপে বিপদ লুকিয়ে আছে। আর এই বিপদগুলো মারাত্মক বিপদ। এইগুলো ফেস করতে হলে তোর একজনের খুব প্রয়োজন। আর সেটা হচ্ছে আদিল মাহমুদ। এখনই তুই ওর সম্পর্কে কিছু জানতে চাস না মা!আর আদিল খুব ভালো ছেলে। তোর জন্য একদম পারফেক্ট। এখন শুধু কাবিন করে রাখা হবে। পরে তোর যখন ইচ্ছা তখন না শশুর বাড়ি এসে সংসার করিস। কিন্তু এখন বিয়ে করতে রাজি হয়ে যা প্লীজ। আর তুই পড়াশোনা করবি কোনো সমস্যা হবে না। ভেবে নে না এটাই তোর বাবার শেষ ইচ্ছা। এরপর আর কিছু চাইবো না।
কথা গুলো শুনে শুভ্রার মাথা ঘুরছে। কি বলছে তার বাবা এইরকম করে বিয়ে দেওয়া মানে কি?আর তাকেই বা আগে কিছু কেন বলা হয় নি। নিজেকে কেমন যেন অবস অবস মনে হচ্ছে। আর কিসের বিপদ। যেই বিপদ ফেস করার জন্য আমাকে অন্য কাউকে দরকার। কিচ্ছু মাথায় ঢুকছে না ওর। মাথা ওর বনবন করেছে। সে তো চেয়েছিল পড়াশোনা করে আগে নিজে প্রতিষ্ঠিত হবে তারপর,কিন্তু!
আরিফুল সাহেবের ডাকে তার ধেন ভাঙ্গল। সে ছলছল নয়নে তার বাবা দিকে তাকাল।
তার বাবা আকুল ও অপরাধী দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে, ওর উত্তরের অপেক্ষায়।
শুভ্রা দাঁত দিয়ে ঠোঁট চেপে রেখে মাথা নারিয়ে হ্যাঁ বোধক জবাব দিল। কারণ,এমন কোনো সময় যায় নি যে সে তার বাবার কথার অবাদ্ব হয়েছে। সে একটু দুষ্টু চঞ্চল হতে পারে কিন্তু বাবা মার অবাদ্ধ না।
আরিফুল সাহেবের মুখে হাসি ফুটে উঠলে। ওনি শুভ্রাকে সবার কাছে নিয়ে এসে হাসি মুখে বললেন,
-“সবাই কাজ শুরু করুন।”
বলে, শুভ্রাকে সোফায় বসিয়ে দিলেন পাশেই আদিল বসে আছে তার দৃষ্টি শুভ্রার দিকে। শুভ্রার চোখে পানি দেখে আদিলের বুকে মোচড় দিয়ে উঠল। ও সাথেসাথে চোখ সরিয়ে নিল। কাজী সাহেব বিয়ে পরানো শুরু করলেন। শুভ্রাকে কবুল বলতে বলা হলো।
শুভ্রার যেন সব কান্না দলাপাকিয়ে বের হয়ে আসতে চাচ্ছে। কি হচ্ছে তার সঙ্গে এসব। যাকে সে চেনে না জানেনা, এখনো পযর্ন্ত যাকে দেখেনি পযর্ন্ত তাকে তার বাবার কথা রাখতে স্বামী হিসেবে গ্রহণ করতে হবে। শুভ্রা খুব কষ্টে কবুল বলে দিল। তার মাথা ঘুরছে।
হঠাৎ,করে সে আদিলের গায়ে পরে গেল। আদিল শুভ্রার দিকে তাকাতেই দেখল ও সেন্সলেস হয়ে গেছে। আদিল শুভ্রার গালে হাত দিয়ে নম্র শুরে ডাকতে লাগল। শুভ্রার কোনো হুশ নেয়।
অভ্র এগিয়ে এসে সোফায় বসে শুভ্রাকে চেক করতে লাগল। সবার মুখে চিন্তার ছাপ। অভ্র চেক করে বলল,-” তেমন কিছু না অতিরিক্ত টেন্স ছিল তাই সেন্সলেস হয়ে গেছে। ওর একটু ঘুমের প্রয়োজন।”
শুভ্রার মা আলিয়া বেগম এসে মেয়েকে তার বুকে টেনে নিলেন। অতিরিক্ত চাপ তো তারাই দিয়েছে তাকে। মিথ্যা বলে নিয়ে এসে বিয়ে দিয়েছে তারা। হুট করে তাদের সিদ্ধান্ত মেনে নিতে গিয়ে মেয়েটা আজ এই অবস্থা।
আদিল আরিফুল সাহেব কে উদ্দেশ্য করে বলল,
-“বাবা শুভ্রতা তাহলে আজকে আমাদের বাসায় থাকুক। কাল সকালে আমি না হয় ওকে আপনাদের বাড়িতে দিয়ে আসব।”
ছেলের কথায় শায় দিয়ে ইমরান মাহমুদ ও আরিফুল চৌধুরীকে বললেন শুভ্রাকে তাদের বাসায় রেখে যেতে।
আরিফুল চৌধুরী ও আর আপত্তি করলেন না। আরিফুল চৌধুরী অনুমতি পেয়ে আদিল শুভ্রাকে কোলে তুলে নিল। আর হনহন করে সিড়ি বেয়ে তার রুমের দিকে যেতে লাগল।
আদিলের হঠাৎ এই কাজে সবাই একটু ভরকে গেল ও পরমূহর্তে হেসে দেন।
আদিল শুভ্রাকে আলত করে তার বেডে শুয়ে দিয়ে ব্লাককেট টা তার গায়ে টেনে দেয় বসন্তের শুরু দিক তাই হালকা শীত এখনো রয়ে গিয়েছে। আদিল শুভ্রাকে রেখে বারান্দায় চলে গেল। মৃদু বাতাস বইছে চারিদিকে। চারিদিকে একটা শান্তিপূর্ণ পরিবেশ। আদিলে মুখে মুচকি হাসি। সে আবার পিছু ফির তার শুভ্র পরির দিকে তাকাল। তাকিয়ে দেখল তার শুভ্র পরি ঘুমের রাজ্যে ডুবে আছে। সে তার মাক্সটা খুলে বারান্দার ছোট টেবিলে রাখল।
———————–
রাত সাড়ে দশটা সবাই খেয়ে নিজেদের বাসায় যাওয়ার জন্য রওনা হয়েছে। রাজিব লুভাকে ড্রপ করে দিবে তাই ওরা গিয়ে গাড়িতে বসল। লুভার একদম ইচ্ছা নেই। তাও যেতে হবে কারণ রাত হয়ে গেছে। আর আরিফুল চৌধুরী আলিয়া চৌধুরী আর অভ্র ওদের বাসায় চলে গেল।
আর নুসরাত আদিলের বোন।
( তাহলে আপনাদের মনে প্রশ্ন জাগতেই পারে তাহলে শুভ্রা নুসরাতের পরিবারকে চিনে না কেন?নুসরাত তার খালার বাসায় থাকত আর তার পরিবার কিছু কারণ বসত লন্ডন থাকতেন তিনবছর যাবত। আর শুভ্রা যাদের নুসরাতের বাবা মা জানে আসলে তারা নুসরাতের খালাখালু )
আর আদিলের বেস্টফ্রেন্ড অনুভব আহমেদ ও ওর বাসায় চলে গেল। অনুভব আদিল ছোট বেলা থেকেই বেস্ট ফ্রেন্ড।
আদিল নিজের মুখের মাক্স ঠিক করে খাবারের প্লেট হাতে নিয়ে রুমে ঢুকল। শুভ্রা এখন ও ঘুমাচ্ছে। আদিল মুচকি হেসে খাবার প্লেটটা টি টেবিলে রেখে শুভ্রার কাছে গেল। ওর কানের কাছে গিয়ে বলতে লাগল,
-“ঘুম কুমারি এখন যে তোমার উঠতে হবে। ”
শুভ্রা কিছুটা কেপে উঠল। আদিল আবার বলল,
-“এবার না উঠলে কিন্তু…”বলেই শুভ্রার কানের লতিতে হালকা করে কামুড় দিল।
শুভ্রা ধরপরিয়ে উঠে বসল। ও চারিদিকে তাকিয়ে বোঝার চেষ্টা করল সে কোথায় আছে। সে বুঝতে পারল এটা তার চেনা জায়গা না। সে পাশে তাকাতে দেখল একটা সুদর্শন যুবক বসে আছে তার পাশ। মুখে মাক্স। পরনে কালো রঙের টিশার্ট আর টাওজার। বডি দেখে বোঝা যাচ্ছে জিম করা বডি। শুভ্রা আদিলের চোখে দিকে তাকাল চিকন ফ্রেমের একটা চশমা। ছেলেদের চোখ যে এতো মায়াভরা হয় সেটা আজ জানল শুভ্রা। আদিল কিছুটা কাশি দিল।
হঠাৎ,কাশি দেওয়ায় শুভ্রার ধেন ভাঙ্গল। সে চোখ নামিয়ে নিল। আদিল মনে মনে হাসল। আর মনে মনে বলল,-“জান তুমি তো আমার চোখের মায়ায় পরবেই। পরতে তো তোমাকে হবেই। ”
শুভ্রার মাথায় তার বিয়ের কথা আসতেই সে কুকরে গেল। তাহলে এটাই তার বর কিন্তু মুখে মাক্স পরা কেন? আর তার বাবা মা তাকে এই লোকের কাছে রেখে গেল কেন তার অনুমতি ছাড়া। তার মা বাবা যখন তাকে এখানে রেখেই গেছে তাহলে সে আর ওই বাড়িতে যাবে না। শুভ্রার অজান্তেই ওর চোখ বেয়ে নোনা জল গরিয়ে পরল।
হঠাৎ ,ওর গালে কারো হাতের স্পর্শ পেয়ে সে কেপে উঠল। সে তাকিয়ে দেখল আদিল। সে কিছুটা ভয় নিয়ে দূরে সরে গেল। আদিল ব্যাপারটা বুঝতে পেরে শুভ্রা থেকে একটু দূরে বসে শান্ত গলায় বলতে শুরু করল,
-“তোমার মনে কি চলছে তা আমি জানি।তোমার মনে যে প্রশ্ন গুলো ঘুরছে তার উত্তর গুলো তোমাকে আমি দিব তার আগে। ”
শুভ্রা চোখ তুলে আদিলের দিকে তাকিয়ে সে কি বলবে সেটা শোনার জন্য আকুল হয়ে বসে আছে। আদিল মিহি কন্ঠে বলল,
-“আগে তোমাকে কিছু খেয়ে নিতে হবে বলেই। বেড থেকে উঠে পাশের টেবিল থেকে খাবার প্লেট নিয়ে এলো। ”
শুভ্রা খাবে না বলে জেদ ধরল। আদিল একটা ধমক দিয়ে বলল,
এতোক্ষন কিছু না খেয়ে থাকলে তুমি অসুস্থ হয়ে পরবে। তখন তোমাকে কে সামলাবে আর চুপচাপ বলছি খেয়ে নেও। তাছাড়া ওই যে দেখল বারান্দা। (বারান্দার দিকে ইশারা করে) ওখান দিয়ে তোমায় ফেলে দিয়ে আসব।
শুভ্রা কিছুক্ষণ আদিলের দিকে তাকিয়ে ভে ভে করে কান্না করে দিল। আদিল প্লেট থেকে খাবার তুলে শুভ্রার মুখের সামনে ধরল।
শুভ্রা আর কথা না বাড়িয়ে খেয়ে নিল। আদিল অনেক যত্ন সহকারে শুভ্রাকে খাইয়ে দিল। খাওয়ানো শেষে সে প্লেট নিয়ে রুম থেকে চলে গেল।
আদিল যেতেই…
(চলবে)
#পূর্ণতার_মাঝেও_অপূর্ণতার_ছোয়া
#লেখিকাঃশুভ্রতা_শুভ্রা
#পর্বঃ০৩
আদিল যেতেই শুভ্রা বলা শুরু করল,
– “বেটা আমার জীবন টা তেজপাতাই করে ছাড়াবে। বিয়ের একদিন না হতেই কি ধমক দিল। এর আগে বাবা মাও আমাকে এতো জোরে ধমক দেয় নি।”
আদিল রুমে প্রবেশ করতে করতে বলল,
-“কে কি দেয় নি তোমাকে?”
শুভ্রা আদিলের কন্ঠ শুনে কিছু টা ভরকে গেল, সে নিজেকে স্বাভাবিক করে বলল,
-“কিছু না।”
আদিল নম্র কন্ঠে বলল -“আচ্ছা বাদ দেও এসব এখন যাও ওয়াশরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে এসো।” (ওয়াশরুমের দিকে ইশারা করে )
শুভ্রা বলল “আমি আসলে ড্রেস টা চেন্স করতে চেয়েছিলাম আর কি!”
আদিল বলল,-“কার্বাডে ড্রেস আছে। যেটা পছন্দ হয় পরে নেও।” বলতে বলতে আদিল গিয়ে সোফায় তার ল্যাপটপ নিয়ে বসল।
শুভ্রা গুটিগুটি পায়ে কার্বাডের কাছে গিয়ে অবাক হয়ে গেল কারণ এখানে অনেক গুলো মেয়েদের জামা। আবার সব গুলো ওর মাপের। শুভ্রা চোখ ছোট ছোট করে আদিলের দিকে তাকাল। তারপর বলল,
-“আচ্ছা আপনি আগেও কি বিয়ে করেছিলেন? আর, যদি করেই থাকেন তাহলে আমার সতীন কোথায় এখনো তো দেখতে পেলাম না!
আদিল শুভ্রার কথা শুনে চোখ বড়বড় করে শুভ্রার দিকে তাকাল। শুভ্রাও প্রশ্নবিদ্ধ চোখে ওর দিকেই তাকাল। আদিল গলা খাকারি দিয়ে ধমকের শুরে বলল,
-“সবকিছুতেই ফাজলামি কর কেন? আর সবসময় কি মাথায় কি উল্টাপাল্টা চিন্তায় ঘুরে। যাও একটা জামা নিয়ে ওয়াশরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে এসো।
শুভ্রা আদিলের কথা শুনে আদিলকে মুখ ভেংচানি দিয়ে একটা সুতি সাদা রঙের থ্রি পিজ নিয়ে ওয়াশরুমে গিয়ে জোরে ওয়াশরুমের দরজা লাগিয়ে দিল।
শুভ্রার কাজে আদিল মৃদু হাসল। হঠাৎ,ফোন মেসেজ টুন বেজে উঠতেই সে ফোনের স্কিনি তাকাল। সে দেখল অপরিচিত নাম্বার থেকে মেসেজ। মেসেজ দেখেই আদিলের চোখমুখ কেমন যেন হয়ে গেল। আদিলের চোখ হঠাৎ করেই লালবর্ণ ধারন করল। সে তার ফোন নিয়ে কাউকে কল দিল। দুইবার রিং হতেই কল রিসিভ হলো।
আদিল অপরপাশের ব্যাক্তিকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে বলল,
-” আমি একটা নাম্বার এসএমএস করছি। ওই নাম্বার ট্রেস করে সব ডিটেলস আমাকে দিবি একদিনের মধ্যে।”
বলেই অপরপাশের ব্যাক্তিকে কিছু না বলতে দিয়েই কল কেটে দিল।
ওয়াশরুমের দরজা খোলার আওয়াজ পেয়ে আদিল নিজেকে কিছুটা স্বাভাবিক হয়ে চোখ তুলে তাকাল। চোখ শুভ্রার উপর পরতেই তার চোখ সেখানে আটকে গেল। সাদা জামায় তার শুভ্রতা পরীকে অনেকটা সিগ্ধ লাগছে। সদ্য গোসল করায় শুভ্রা মুখে কিছু চুলে এসে লেপটে রয়েছে। শুভ্রার ঘনো কেশদিয়ে টুপটাপ পানি পরছে। আদিল নিজের অজান্তেই শুভ্রার একদম কাছে চলে গেল। শুভ্রা আদিলকে তার এতো কাছে দেখে ভরকে গেল। আপনাআপনিই চোখ বড়বড় হয়ে গেল তার।
আদিল আরো একটু শুভ্রার কাছে আসতেই হঠাৎ, আদিলের কিছু কথা মাথায় আসতেই সে একটু সরে এসে শুভ্রার হাতের টাওয়ালটা নিজের হাতে নিল। শুভ্রা শুধু ভেবলার মতো আদিলের দিকে তাকিয়ে আছে। আদিল কি করতে চাচ্ছে কিছুই তার মাথা ঢুকছে না! আদিল শুভ্রার বাহু ধরে তাকে উল্টো ঘুরিয়ে গিয়ে টাওয়াল দিয়ে আলত করে চুল মুছতে লাগল আর বলতে লাগল,
-“এতো বড় হয়ে গেছ এখনো নিজের চুল মুছতে পারো না।”
শুভ্রা আদিলের কথা শুনে মুখ বাকালো আর বলল, -“না পারি না আমার সব কিছু সবসময় আমার আম্মু করে দেয়।”
আদিল শুভ্রার চুল মুছিয়ে দিয়ে নিজের দিকে ঘুরালো শুভ্রাকে আর ওর নাক টেনে দিয়ে বলল কচি খুকি আমার।
আচ্ছা, চল তাহলে বারান্দায় বসি। ওখানে গিয়ে কথা বলি।
শুভ্রাও হ্যাঁবোধক মাথা নাড়িয়ে বারান্দায় গিয়ে বসল। বারান্দাটা শুভ্রার মনে ধরেছে। বারান্দায় একসাইটে দোলনা রাখা যেখানে দুইজন বসার মতো জায়গা রয়েছে। পাশে একটা টেবিল, আর অন্য সাইটে বেলি ফুলের আর গোলাপ ফুলের দুটো গাছ, চারপাশে মৃদু বাতাস বইছে। আদিলে কন্ঠ পেয়ে শুভ্রা আদিলের দিকে তাকাল। আদিল বলতে লাগল ,
-“একটা কথা সবসময় মনে রাখবে বাবা মা কখনো সন্তানের ক্ষতি হক এটা চাবেন না। তারা অত্যন্ত ভেবেই সিদ্ধান্ত নেয় সন্তানের প্রতিটি বিষয়ে । আর হুট করে বিয়ে কথা সেটা পিছনে ও কারণ আছে!
শুভ্রা প্রশ্নবোধক দৃষ্টিতে আদিলের দিকে তাকিয়ে বলল,-“সেই কারণটাই তো জানতে চাচ্ছি।”
আদিল একটা দীর্ঘশ্বাস নিয়ে শুভ্রার থেকে দৃষ্টি সরিয়ে বাহিরের দিকে তাকিয়ে বলল,
-“কিছু জিনিস না জানায় মঙ্গল। আর যা হচ্ছে হতে দেও আর একটা কথা কি জানো আল্লাহ না চান ভালোর জন্যই চান। আর বাবা মা আর অভ্রর উপর রাগ করো না। তারা তোমাকে অনেক ভালোবাসে। আর নিচে যে অপরিচিত তিনজন কে দেখলে তারা আমার বাবা মা আর আমার বেস্ট ফ্রেন্ড।
শুভ্রা কিছু বলতে নিবে তার আগেই আদিল বলল,
-” আমার পরিচয় জানতে চাও তো.!”
শুভ্রা মাথা নাড়িয়ে “হুম” বোঝাল,
আদিল বলল, -“আমি বিজনেস ম্যান। মানে বাবা বিজনেসে হাত দিয়েছি বছর দুয়েক হলো। এখনকার জন্য এইটুকু পরিচয় জানলেই হবে। বাকিটা সময় আসলে জানতে পারবে।” বলেই বসা থেকে উঠে দাড়ালো আদিল।
শুভ্রার প্রশ্ন রয়েই গেল। কেমন যেন রহস্যময় লোক। শুভ্রা বলল
-“মানে”
আদিল সামনের দিকে তাকিয়ে অগ্রসর হতে হতে বলল -“মানে বুঝে কাজ নেই সকালে তোমার বাসায় রেখে আসব। ঘুমিয়ে পড়ো এখন।”
শুভ্রা বলল -“আর আপনি?”
আদিল বলল, -“আমাকে নিয়ে চিন্তা করতে হবে না তুমি ঘুমাও।” বলেই আদিল বারান্দায় পেরিয়ে রুম থেকে চলে গেল।
শুভ্রার মাথা ঘুরছে এ সে কি রকম পরিস্থিতিতে পরল। কিছু মাথায় আসছে না তার। মাথা ব্যাথা করছে তার সে কিছু না ভেবে রুমে এসে বেডে শুয়ে পরল। ঘুমের প্রয়োজন তার এই মাথা ব্যাথা থেকে বাচার জন্য।
———————–
নিস্তব্ধতা জানান দিচ্ছে রাত কতটা গভীর। চারিদিকের মানুষ হয় তো সারাদিনের কান্তি দূর করতে শান্তির ঘুম দিচ্ছে। কেউ হয় তো তার প্রিয় মানুষটিকে সময় দিচ্ছে। আবার কেউ হয় তো অতীত ভেবে র্নিঘুম রাত্রি যাপন করছে।
এই নিস্তব্ধ রাতে ছাদের এক কোণায় দাড়িয়ে আছে এক ব্যাক্তি বলতে গেলে শেষের স্তরের মধ্যে রয়েছে সেই ব্যাক্তি। চোখের কোণা তার অশ্রুসিক্ত। সে আকাশে দিকে তাকাল আকাশে চাঁদের সঙ্গে মেঘরা খেলা করছে। চাঁদ সে তো তার মিষ্টি আলো নিয়ে সারা পৃথিবী আলোকিত করতে ব্যস্ত। সেই ব্যাক্তিটি বিরবির করে বলতে লাগল,
-“আমাকেই কেন এতো কষ্ট দিলে আল্লাহ। আমি তো তোমার কাছে বেশি কিছু না শুধু সুখে শান্তিতে ভালোবাসার মানুষটার সঙ্গে জীবন অতিবাহিত করতে চেয়েছিল। আমার আর সহ্য হচ্ছে না এই কষ্ট হৃদয়ের রক্তক্ষরণটা যে দিন দিন বেরেই চলছে। সে আর দাড়িয়ে থাকতে পারল না হাটু মুড়ে বসে পরল। আমি কেন ওই চাঁদে মতোই নিসঙ্গ কেন কেন!”
————————
দরজায় কারো নক করার শব্দে শুভ্রার ঘুম ভেঙে গেল। সে পিটপিট করে তাকাল বাহির থেকে এক পরিচিত গলা ভেসে আসছে। সে চারিদিকে আদিল আছে নাকি সেটা দেখল শুভ্রা। কিন্তু, না তাহলে কি আদিল রাতে আর ঘরে ফেরে নি। দরজার ওপাশের মানুষটা ইতিমধ্যে বিরক্ত হয়ে গেছে।
শুভ্রা উঠে দরজা খুলে দিল আর চোখ ছোট ছোট করে সামনের ব্যাক্তির দিকে তাকিয়ে রইল। সে বলল,
-“নুসরাত তুই এতো সকালে এখানে কেমনে আসলি আর তোর ভাই ভাবি কোথায় পাইলি।”
নুসরাত আমতা আমতা করে শুভ্রাকে এরিয়ে বারান্দায় চলে গেল। বারান্দায় দাড়িয়ে বাহিরের দিকে আছে আদিল। নুসরাত ওর কানের কাছে গিয়ে চিলিয়ে বলল,
-“ভাইয়া ওই ভাইয়ারেএ”
আদিল কপাল কুচকিয়ে নুসরাতের দিকে তাকিয়ে রাগী গলায় বলল,
-“কি হয়েছে কি তোর কানের সামনে এসে চিলাচ্ছিস কেন তোর কি মনে হয় আমি কানে শুনি না!”
নুসরাত কোমরে হাত দিয়ে চোখ ছোট ছোট করে বলল,
-“সিরিয়াসলি ভাইয়া তুই কানে শুনতে পাস। আমি তো ভুলেই গেছিলাম। সেই একঘণ্টা যাবৎ আমি তোদের ডেকে চলছি। শুভ্রা ওর কথা বাদ দিলাম আর তুই!”
আদিল বলল, -” হয়েছে আর কিছু বলতে হবে তুই কি বলতে আসছি সেটা বলে ভাগ এখান থেকে।”
শুভ্রা শুধু চোখ বড় বড় করে ওদের কান্ড দেখছে। শুভ্রার জানা মতে নুসরাতের তো এমন কোনো ভাই নেই। আর কালকেই তো আদিলের সঙ্গে ওর বিয়ে হলো। কিছু মাথা ঢুকছে না ওর। নুসরাতের কথা শুনে শুভ্রা ভাবনার জগত থেকে বাস্তবে আসল।
নুসরাত আদিল আর শুভ্রাকে উদ্দেশ্য করে বলল,
-“নিচে আয় তোদের আম্মু ডাকছে।”
(চলবে)