পুরোনো_ভালোবাসা  ১৭ শেষ পার্ট

1
2866

পুরোনো_ভালোবাসা
১৭ শেষ পার্ট

Rabeya Sultana Nipa

_আজ দুইদিন হয়ে গেলো শিহাব খাওয়া দাওয়া ছেড়ে দয়েছে।এখন আর আগের মতো কারো সাথে কথা বলে না।কলেজেও যায় না।সারাক্ষণ আবিরকে নিয়ে বসে থাকে।আবিরেই যেন তার জীবনের সব।নিশুর এইসব দেখে আর সহ্য হচ্ছেনা।

নিশু -মা আমি বাহিরে থেকে আসছি,দেখো শিহাব কে কিছু খাওয়াতে পারোকিনা।

ইয়াসমিন বেগম -তাড়াতাড়ি ফিরে আসিস। আর শুন সেই দিন ডাক্তার দেখিয়ে তো রিপট গুলো আনিস নাই আজ আসার সময় নিয়ে আসিস।

__ ঠিক আছে বলে নিশু বাসা থেকে বেরিয়ে এলো।আজ অনিকের বাসায় গিয়ে অনিকের সাথে আমার কথা বলতেই হবে।এইভাবে চললে শিহাব অসুস্থ হয়ে যাবে।
অনিকের বাসার কলিং বেল বাজিয়ে নিশু দাঁড়িয়ে আছে দরজা খোলার অপেক্ষায়।একটু পর অনিকের মা এসে দরজা খুলে নিশুকে দেখে সবাইকে ডাকতে শুরু করলো।

রেহানা বেগম -এই মেয়ে তুমি এই বাসায় কেন আসছো?

নিশু -আমি আপনার বাসায় থাকতে আসি নাই।আপনার ছেলে কোথায় ওকে ডাকুন। আমি ওর সাথে কথা বলেই চলে যাবো।

অনিক -ডাকতে হবে না।আমি নিজেই এসে গেছি।আমি জানতাম তুমি আমার বাসায় আসবে।কারণ পাগলের ঘরতো করা যায় না।

নিশু -অনিক! আজ আমি তোমার সাথে কোনো কথা বাড়াতে চাই না।তুমি একদিন হলেও আমাকে ভালোবেসে ছিলে।আজ আমি সেই অধিকার নিয়ে বলছি তুমি আবিরকে শিহাবকে দিয়ে দাও।ও আবির কে না পেলে হয়তো পাগল হয়ে যাবে।তুমি যাই করতে বলবে আমি রাজি আছি।তুমি সেই দিন নোটিশ দিয়ে আসার পর থেকে শিহাব কেমন জানি হয়ে গেছে।

অনিক- অনিক চিৎকার দিয়ে জোরে হাসি দিয়ে বললো,মা দেখেছো স্বামীর জন্য কতো চিন্তা।নিশু”সেই দিন তোমার এই চিন্তা গুলো কই ছিলো?আর আজ শিহাবের জন্য আমার কাছে এসেছো।অনেক ভালোবাসো শিহাবকে তাইনা?ঠিক আছে তোমার কাছে আমার কিছু পাওয়ার নাই।শিহাব কে বলো আবিরকে আমি দিয়ে দিলাম তোমাদের।

নিশু -আমি জানতাম তুমি আমার কথা ফেলতে পারবে না।আর তোমাকে thanks বলেও ছোটো করবো না।তবে তুমি অনেক ভালো থাকো।নতুন করে জীবন শুরু করো।আমি আসছি!বলে নিশু দরজার সামনে চলে আসলো।
অনিক –নিশু!! প্লিজ দাড়াও”

অনিকের কথা শুনে নিশু দাঁড়িয়ে গেল।

নিশু – কিছু বলবে?

অনিক কিছু না বলেই নিশুকে জড়িয়ে ধরলো।নিশু স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।কি বলবে বুজতে পারছেনা।একটু পর নিশুকে ছেড়ে দিয়ে

অনিক -সরি”এইবার তুমি যাও।

নিশুও আর কথা না বাড়িয়ে চলে গেলো।আসার সময় ডাক্তার কাছ থেকে রিপট গুলো নিয়ে বাসায় আসলো।
__শিহাব! শিহাব! এখন থেকে আবির আমাদের কাছেই থাকবে।অনিক নিজে বলেছে।কথাটা শুনেই নিশুর হাত ধরে
শিহাব -তুমি সত্যি বলছো?

নিশু -হ্যা আমি সত্যি বলছি।তুমি আর চুপ হয়ে থাকবে না।এখন চলো খেয়ে নিবে। এই কয়দিন না খেয়ে নিজেকে কি বানিয়েছো, একবার আয়নায় দেখেছো।

শিহাব -ওহ যাচ্ছি।কিন্তু তোমার হাতে এইটা কি?

নিশু- এইটা ডাক্তারের রিপট।এখন চলো।

শিহাব -আচ্ছা এইটা আগে দেখি তারপর যাবো কথাটা বলে নিশুর হাত থেকে রিপট টা নিয়ে দেখে নিশুর দিকে তাকিয়ে আছে।
নিশু -এইভাবে তাকিয়ে আছো কেন? কি হয়েছে?

শিহাব -(গম্ভীর হয়ে)এই রিপট আগে তুমি দেখেছো?

নিশু -না এখনো দেখি নাই।এইমাত্র এইটা আনলাম।

শিহাব – (নিশুকে জড়িয়ে ধরে)নিশু আমি আবার বাবা হতে যাচ্ছি?
__নিশু লজ্জা পেয়ে কিছু না বলে রুমথেকে চলে গেলো। শিহাবও রুমথেকে বের হয়ে ইয়াসমিন বেগম কে বললো মা জানেন? আমাদের ঘরে নতুন অথিতী আসছে।আর তাতেই নিশু লজ্জা পাচ্ছে।এইটা কি ঠিক বলেন তো।
ইয়াসমিন বেগম -নিশু!! শিহাব কি সত্যি বলছে? তাহলে তো ভালোই হলো আবিরের খেলার সাথী আসতেছে।
এমিন সময় শিহাবের ফোন বেজে উঠলো।ফোন টা অনিক করেছে।তাই ইয়াসমিন বেগমকে ইশারায় চুপ থাকতে বললো শিহাব।

অনিক -কেমন আছিস?

শিহাব -ভালোই,ফোন করেছিস কেন?

অনিক -আমি দেশের বাহিরে চলে যাচ্ছি,তাই ভাবছি তোর সাথে দেখা করবো। যদি তুই চাস।

শিহাব – ঠিক আছে!! কাল সকালেই দেখা করবো বলে ফোনটা রেখে দিলো।
সকাল বেলা শিহাব উঠেই রেডি হচ্ছে।
নিশু -এতো সকাল যাওয়ার কি আছে নাস্তাটা করে যেতে পারতে।

শিহাব – সমস্যা নাই বাহিরে খেয়ে নিবো।আবিরের দিকে খেয়াল রেখো।আর নিজেরও খেয়াল রেখো।

__শিহাব অনিকের সাথে দেখা করেই অনিককে জড়িয়ে ধরলো।অনিক তোর ঋণ আমি কখনওই শোধ করতে পারবোনা।
অনিক -আরে কি করছিস।আমি বুজেছি আবির তোদের কাছেই ভালো থাকবে।শুন আমি এখন চলে যাচ্ছি তোর সাথে এটাই আমার শেষ দেখা।

শিহাব – চল তোকে এয়ারপোর্ট পৌঁছে দিয়ে আসি।কথা বলতে বলতে দুজনেই গাড়িতে উঠলো।অনেকটা পথ যাওয়ার পরে গাড়িটা একটা ট্রাকের সাথে ধাক্কা লেগে এক্সিডেন্ট হয়ে যায়।

__নিশু! ফোন বাজছে তোর।ফোনটা গিয়ে ধর। নিশুর মা কথাটা বলতে বলতে নিশুর রুমে এগিয়ে আসছে।
নিশু শিহাবের নাম্বার দেখে ফোনটা রিসিভ করে

নিশু -শিহাব একটু আগেই তো বাসা থেকে গেলে।এখন বার ফোন করেছো?

__ম্যাডাম আপনি এই ফোনের মালিকের কি হন আমরা জানি না।আমি hostile থেকে বলছি।এইখানে দুইজন লোক এক্সিডেন্ট করেছে।দুজনের কাগজ পএ দেখে বুজা যাচ্ছে একজন অনিক আর একজন শিহাব।

নিশু – নিজেকে সামলে নিয়ে আপনি কি বলছেন এই সব।দুইজনে ঠিক আছেতো?

__দুজনের একজন মারা গেছে।কিন্তু কোন জন তা আমরা বলতে পারছিনা।
নিশু কথা টা শুনেই জ্ঞান হারিয়ে পেললো।

( ২০ বছর পর)
আজ আবির পড়ালেখা শেষ করে ডাক্তার হয়ে দেশে আসছে।সেই সাথে দুই দিন পর অয়নির বিয়ে।তাই বাড়িটা সুন্দর করে সাজিয়েছে।ওহ আপনাদের তো বলাই হয় নাই।অয়নি হচ্ছে নিশুর মেয়ে।বাসা থেকে আবিরকে তার নানা আনতে গেছে এয়ারপোর্টে।তার বাবাও যেতো। কাজের জন্য যেতে পারে নাই।

ইয়াসমিন বেগম -নিশু কই তুই নিছে গাড়ির শব্দ শুনা যাচ্ছে হয়তো আবির এসে গেছে।

আবির দৌড়ে মা! মা! বলে নিশুর কাছে এসে জড়িয়ে ধরলো।
আবির -মা! বাবা কই?আমাকে আনতেও গেলো না আর এখন দেখাও পাচ্ছিনা।

নিশু -তুই এতো বছর পর দেশে আসছিস।তাই তোর বাবার ঘুম নাই সব কাজ নিজের হাতে করছে।কি যেন নষ্ট হয়ে গেছে এখন ছাদে গেছে ঠিক করার জন্য

আবির -ঠিক আছে আমিও যাই।কথাটা বলেই আবির ছাদে চলে গেলো।
এই যে মিস্টার শিহাব আপনার ছেলে যে দেশে ফেরেছে সেই কথা কি ভুলে গেলেন?

(সেই দিন এক্সিডেন্টের পরে শিহাবই বেঁচে ছিল আর অনিক পৃথিবী ছেড়ে চলে গিয়েছিলো)
শিহাব -(আবিরকে বুকে জড়িয়ে)আমার ছেলে আসছে আমি কি ভুলতে পারি? এইদিক টাও তো সামলাতে হয়।
কথা বলতে বলতে দুজনেই ছাদ থেকে নেমে এলো

অয়নি -বাহ এখন ছেলেকে পেয়ে বাবা আমার কথা ভুলেই গেলো।

আবির -বাবা! দেখেছো আমি আসতে না আসতেই আমার পিছনে পড়ে গেলো। ওকে সমস্যা নাই দুইদিন পর এমনেতেই বিদায় হবি।
আবিরের কথা শুনে সবাই হাসতে শুরু করল।।।

( সমাপ্ত। )

ভুল হলে ক্ষমা করে দিবেন।

1 মন্তব্য

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে