পুরোনো_ভালোবাসা
পার্ট: ৮
__নিশিতা মামার আজ গায়ে হলুদ। দুই দিন হয়ে গেল সে এই বাড়ীতে আসছে।ব্যস্ত থাকার কারনে অনিকের সাথে তেমন ফোনে কথা হয় না।তাই নিশিতা মন খারাপ হয়ে বসে আছে।ইয়াসমিন বেগম মেয়ের এই ভাবে বসে থাকতে দেখে বলল! কিরে এইভাবে মনমরা হয়ে বসে আছিস কেন? সবাই রেডি হয়ে গেছে তুই কখন রেডি হবি?
__মা আমার ভালো লাগছে না,তুমি যাও আমি পরে আসবো।
__নিশিতার বাবা ঘরে ঢুকে মা আর মেয়ের কথা শুনে বলল তোর কি কোনো কারণে মন খারাপ?
নিশিতা-না বাবা আমি ঠিক আছি।আচ্ছা আমি রেডি হয়ে আসছি।
যাওয়ার সময় নিশু ভুলে ফোনটা রেখে চলে গেলো। নিশুর বাবা আর মা দুজনেই বসে কথা বলছে।এমন সময় নিশুর ফোন বেজে উঠলো।নিশু বাবা তার মাকে বললো ফোনটা আমাকে দাও আমি কথা বলি।নিশুর বাবা ফোন রিসিভ করার সাথে সাথে অনিক বলা শুরু করলো। তোমার সমস্যা কি নিশু? তোমাকে কতো বার বলছি তোমার সাথে কথা না বলে আমি থাকতে পারিনা। যাওয়ার সময় এতো করে বললাম ফোন ঠিক মতো দিও।আর তুমি কি করলে ফোনটাই অফ করে রাখো।
__নিশুর বাবা কথা গুলো শুনে নিশুর মায়ের দিকে তাকিয়ে আছে।
এইদিকে অনিককে থামিয়ে নিশুর বাবা বললো। আমি নিশুর বাবা বলছি।আমি তোমার সাথে এখন এই ব্যাপারে কোনো কথা বলতে চাই না।আমি তোমার সাথে দেখা করতে চাই দুইদিন পর। আমি এখন ব্যস্ত আছি পরে দেখা করে কথা বলবো।
ফোন রেখে নিশুর বাবা নিশুর মাকে বললো তোমার মেয়ের যে রিলেশন আছে কই কখনো তো আমাকে
বলো নাই।
ইয়াসমিন বেগম -কি আবোল তাবোল কথা বলছো। আমি এইসব ব্যাপারে কিছুই জানিনা।
__তুমি কেমন মা যে নিজের মেয়ে এতো বড় একটা কাজ করেছে তুমি জানোনা।ঠিক আছে এইসব ব্যাপারে নিশুকে কিছু বলার দরকার নাই।মেয়েকে একটু চোখে চোখে রাখো।
এমন সময় নিশু এসে বললো, বাবা আমাকে কেমন লাগছে।
নিশুর বাবা নিশুকে জড়িয়ে ধরে বললো আমার মেয়েকে একদম পরীর মতো লাগছে।পরী টা যে কখন বড় হয়ে গেলো আমি বুজতেই পারি নাই।
ইয়াসমিন তুমি বলোতো পরী সাথে এখন পরীর মনের মতো একটা বর জোগাড় করতে হবে তাই না?
ইয়াসমিন বেগম-হুম, তুমি একদম ঠিক বলেছো। এখন চলো সবাই আমাদের জন্য বসে আছে।
_অনিক নিশুর বাবার বলা কথা গুলো বার বার মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে। পড়াতে মন বসতে চাইছে না।কাল তো পরিক্ষা শেষ। মা বাবাকে নিশুর কথা বলবো।যদি তারাও রাজি না হয়।যদি নিশুর বাবা ও আমাকে না করে দেয়।নিশুকে আমি আমার থেকেও বেশী ভালোবাসি এইটা ওনাকে বুজাতে হবে।
__ভাইয়া! ভাইয়া! কিরে তোকে মা খেতে ডাকছে তুই শুনছিস না? অনিক কে চুপ থাকতে দেখে আনিকা বললো, তোর কি নিশুর সাথে ঝগড়া হইছে?অনিক আনিকার দিকে তাকিয়ে বললো আমি নিশুকে ছাড়া থাকতে পারবোনা। ওর বাবার সাথে আজ আমার কথা হইছে,ওনি বলেছে দুইদিন পর ওনার সাথে দেখা করতে।
আনিকা -তাহলে তুই চিন্তা করছিস কেনো?
অনিক-ওনি যদি বলে আমি নিশুকে ছেড়ে দিতে।তখন আমি কি করবো?
আনিকা-তুই ওনাকে বুজিয়ে বলবি।ওনি যদি রাজি না হয় তারপর না হয় একটা কিছু ভাবিস।এখন চল দেরি হলে এখন মায়ের বকা খাবি।
_আজ নিশুর মামার বিয়ে শেষ হলো। সবাই বউ নিয়ে একটু আগে বাসায় এসেছে। সবাই কতো খুশি।যেই যার কাজ নিয়ে ব্যস্ত। নিশুও অনেক খুশি তার নতুন মামী এসেছে।এর মাঝেই তার মামা নিশুকে নিয়ে নতুন মামীর সামনে এসে বসলো।মীম! (নতুন মামী)দেখো ও আমার একমাত্র ভাগ্নি।ও আমাদের সবার ভালোবাসার মনি। আজ থেকে তুমিও ওকে আমাদের মতো করে ভালোবাসবে।নিশুও নতুন মামীর সাথে ভালোই ভাব করে নিলো।দুইজন এখন ভালো ফ্রেন্ড।
__নিশুরা আজ বাড়ী চলে এসেছে। কিন্তু ছোটোমামী কে ছেড়ে আসতে মন চাইছে না।কিন্তু অনিককেও দেখার জন্য মন পাগল হয়ে আছে।অনিক কে একটা ফোন করে দেখি অনিক কোথায় আছে।বিয়ের ঝামেলার কারনে এই কয় দিন কথায় হয় নাই।জানি ও রাগ করে আছে।দেখা না হওয়া র্পযন্ত হয়তো রাগ থামবেনা।অনিককে অনেক বার ফোন দেওয়ার পরও অনিক ফোন রিসিভ করেলো না।কাল দেখা করে সবকিছু বুজিয়ে বললে অনিকে ওর রাগ কমে যাবে।এইকথা ভেবে নিশু তার মাকে রান্নার কাজে হেল্প করছে।
_নিশুর বাবা অনিককে ফোন করে একটা রেস্টুরেন্টে সন্ধ্যায় আসতে বললো।অনিক কথা মতো সেখানে চলে গেলো।দুইজন চুপচাপ বসে কফি খাচ্ছে কেউ কিছু বলছে না।অনিক মাথা নিচু করে বসে আছে আর ভাবছে কি দিয়ে শুরু করবে কথা।
নিশুর বাবাই আগে নিরবতা ভেঙ্গে বললো নিশু আমার একমাত্র মেয়ে নিশ্চয়ই তুমি জানো?
অনিক —আমি জানি।
নিশুর বাবা-কি করো তুমি?
অনিক-আমি মেডিকেলে পড়ি।
নিশুর বাবা-হুম!আসলে তোমাকে এইখানে ডেকে এনেছি কিছু কথা বলবো বলে।তুমি নিশুকে ভুলে যাও।আমি ওর বিয়ে ঠীক করে করে রেখছি আমার বন্ধুর ছেলের সাথে।আমি ওদের কথা দিয়ে ফেলেছি।আমি তোমার ব্যাপারে সব খবর নিয়েছি।তুমি অনেক ভালো ছেলে। জীবনে আরো অনেক মেয়ে পাবে। কিন্তু নিশুকে ভুলে যাও।
অনিক-আংকেল আমি নিশুকে ছাড়া বাঁচতে পারবোনা।নিশুও আমাকে ভালোবাসে।আমি ওর জন্য সব করতে পারবো কিন্তু ওকে ছাড়তে পারবোনা।
নিশুর বাবা-ঠীক আছে তুমি যা ইচ্ছা করো। কিন্তু একটা কথা মনে রেখো আমি নিশুকে আমার বন্ধুর ছেলের সাথেই বিয়ে দিবো। আমি কথার খেলাপ কখনওই করতে পারবোনা।
__অনিক কথা না বাড়িয়ে উঠে চলে আসলো।বাসায় এসে নিশুকে ফোন দিলো।
নিশু-আমি জানি তুমি আমার উপর রাগ করে থাকতেই পারোনা। অনিক তুমি কথা বলছো না কেন?
অনিক-নিশু! তুমি কি আমায় সত্যি ভালোবাসো?
নিশু-অনিক! তুমি আমায় বিশ্বাস করো না?ভালোবাসি বলেই তো তুমি যা বলো আমি সব সহজই মেনে নেই।
অনিক-তাহলে আজকেও আমার একটা কথা রাখো।
নিশু! চলো না আমরা কাল বিয়ে করে ফেলি।
__অনিকের কথা শুনে নিশু অবাক হয়ে বললো। তুমি ঠিক আছো? অনিক! হঠাৎ করে বিয়ে আমি কিছু বুজতেছি না।তোমার কি হয়েছে আমাকে বলবে?
অনিক-নিশু! আমি তোমাকে হারাতে চাই না।আমি কিছুই বুজতে চাই না কাল আমরা বিয়ে করছি এইটাই আমার শেষ কথা।যদি তুমি না আসো হয়তো আমাকে সারা জীবনের জন্য হারাবে।
নিশু-অনিক! অনিক!আমার কথাটা শুনো।ধুত ফোন রেখে দিলো!
কি হলো আজ এমন পাগলামো কেন করছে কিছুইতো বুজতে পারছি না।
_ইয়াসমিন! তোমার মেয়ে কি ঘুম থেকে উঠেছে?
নিশুর বাবা কথাটা বলতে বলতে পেপার পড়ছে।
আমাদের বাসায় যে আজ গেস্ট আসছে নিশুকে বলেছো?
ইয়াসমিন বেগম -না এখনো কিছু বলি নাই।
__নিশু রুম থেকে আসতে আসতে বললো মা তুমি কাকে কি বলো নাই?
নিশুর বাবা-তুই কি কোথাও যাচ্ছিস?
নিশু-হুম।কলেজে যাচ্ছি।
নিশুর বাবা-আজকে কোথাও যাওয়ার দকার নাই।আজকে বাসায় গেস্ট আসছে। তোমার মায়ের সাথে থাকো।
নিশু-বাবা, আমি তাড়াতাড়ি চলে আসবো।প্লিজ বাবা যাই।তুমি না করোনা।
নিশুর বাবা-ঠীক আছে। তাহলে তাড়াতাড়ি চলে এসো।
_নিশু তার বাবাকে জড়িয়ে ধরে মনে মনে বললো, আমাকে ক্ষমা করে দিও বাবা তোমাকে মিথ্যা বলার জন্য।
__নিশুর বাবা ইয়াসমিন বেগমকে বললো দেখো তোমার মেয়ে এখনো ছোটোই আছে।
নিশু আর কিছু না বলে বাহিরে চলে গেলো।
ইয়াসমিন বেগম -মেয়েটাকে না জানিয়ে কাজটা কি তুমি ঠিক করছো।যদি দেখে তুমি তাকে না জানিয়ে তার engaged এর জন্য এতো আয়োজন করছো তখন একটা কিছু করে ফেলে তখন কি করবা?গেস্টের সামনে তখন কি আমাদের মানসম্মান থাকবে?
নিশুর বাবা-আমি ওকে আসলে সব বুজিয়ে বলবো।তুমি চিন্তা করোনা।
চলবে,,,,,,,,