পুরোনো_ভালোবাসা
পার্ট:১১
_নিশু আর অনিকের সংসার ভালোই চলছে। কিন্তু অনিকের মা এখনো নিশুকে মেনে নেয়নি। ওদের বিয়ের ৮ মাস চলছে। অনিক পড়ালেখার পাশাপাশি ছোটো একটা জব করে।নিশুর তাতে কোনো আপসোস নাই কারন অনিক নিশুকে তার নিজের থেকেও বেশি ভালোবাসে।
__ভাবী! ভাবী! কই তুমি? কথা গুলো আনিকা নিশুকে ডাকতে ডাকতে রান্না ঘরে এলো।তুমি আবার রান্না করতে আসছো? মা আসলে তোমাকে বকা দিবেতো।
নিশু – আমি জানি মা আসলে আমাকে বকা দিবে।কিন্তু মা এখন বাসায় নাই।তাই আমি রান্না ঘরে আসছি।।
আনিকা – ভাবী! মা কোথায় গেছে?
নিশু-আমাকে তো আর বলে যায়নি।কিন্তু তোমার ভাইয়া কাল রাতে বলেছে মা তোমার জন্য ছেলে দেখতে যাবে।হয়তো সেইখানে গেছে।
আনিকা – আমি তোমাকে একটা কথা বলবো কিন্তু তুমি কাউওকে বলতে পারবেনা।
নিশু -কি এমন কথা যা আমি কাউকে বলতে পারবোনা। আর এই বাড়িতে আমি কাকেই বা বলবো তোমার ভাইয়া ছাড়া।
আনিকা – ভাইয়াকেও বলো না প্লিজ।আসলে আমি একজনকে ভালোবাসি।
__নিশু আনিকার কথা শুনে হাসি দেয়ে বললো কে সে লোক?
আনিকা – রাফি!
নিশু – অনিকের বন্ধু রাফি ভাইয়া! হা হা হা তুমি রাফি ভাইয়া কে ভালোবাসো?
আনিকা – তুমি আসছো কেন ভাবী? আমি কি হাসার মতো কিছু বলছি?
নিশু – না এমনি।রাফি ভাইয়া হলে খারাপ হবে না।
এখন দেখো সবাই রাজি হয় কিনা।
আনিকা -রাজি না হলে আমার কিছু যায় আসে না।আমরা পালিয়ে বিয়ে করবো।আমি কি তোমার মতো নাকি সব কিছুতেই ভয় পাবো?রাফি ওর মা বাবাকে বলেছে ওরা রাজি। ওদের ছেলের ভালোর জন্য সব করবে।আর আমার মাকে দেখো সারাক্ষন তোমার পিছনে লেগে থাকে।
নিশু – আনিকা মাকে এই ভাবে বলতে নাই।মা সবার ভালো চায়। হয়তো ওনার জায়গা ওনি ঠিক করছেন।
তোমার ভাইয়া এখনো পড়ালেখা শেষ করে নাই। তার উপর আমিও চলে আসলাম।এতে মার রাগ হতেই পারে।মারা কখনওই সন্তানদের খারাপ চায় না।
আনিকা -বুজলাম চলে আসছো। কিন্তু এখন তাও মেনে নিতে পারে।যেই ভাবে সারাদিন ভাইয়াকে বলে তোমাকে বাড়ির থেকে বাহির করে দিতে তোমার খারাপ লাগে না।
__নিশু -না আমার খারাপ লাগেনা।কারণ অনিকের ভালোবাসার কাছে এইগুলো কিছুই না।অনিক যদি আমার পাশে থাকে সারাজীবন আমি এইগুলো সইতে পারবো।
_পিছনদিক থেকে অনিক বলে উঠলো দুজন মিলে কি এতো কথা বলছিস?
আনিকা -তুই দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কথা শুনছিলি?
অনিক -আরে না আমিতো এইমাত্র আসলাম।নিশু রুমে আসো তোমার সাথে কথা আছে।
আনিকা – যাও যাও তোমার ভালোবাসার ডাক পড়েছে এখন তো আর এই ননদের কথা মনেই থাকবে না।
নিশু -আচ্ছা আমি কথাটা শুনেই চলে আসছি।
না হলে অনিক রাগ করবে।
_নিশু রুমে যাওয়া সাথে সাথে অনিক দরজাটা আটকে দিলো।
নিশু – দরজা আটকালে কেন?
অনিক -(নিশু কে পিছন ধিক জড়িয়ে ধরে) বউয়ে সাথে কথা বলতে গেলে দরজা আটকাতে হয় তুমি জানোনা?
নিশু – না জানিনা।এখন ছাড়োতো কেন ডাকছো সেটা বলো।
অনিক -তুমি আসলেই একটা আনরোমান্টিক।ভাবলাম খুসির সংবাদটা দেওয়ার আগে আমার জানটাকে একটু আদর করি তা না উল্টা জাড়ি দিচ্ছো।
নিশু – এতো পাগলামি না করে কথাটা আগে বলো।
অনিক -আমার থেকে তোমার কথায় বড় হয়ে গেলো? তাহলে শুনো আনিকার বিয়ে।আমি আর মা ছেলে পক্ষকে কথা দিয়ে আসছি।আনিকার বিয়ে ওখানেই দিবো। আমাদের সব কিছু পছন্দ হয়েছে।আর ছেলেও দেখতে শুনতে ভালো।
__নিশু অনিকের দিকে তাকিয়ে মুচকি একটা হাসি দিয়ে অনিককে জড়িয়ে ধরে বলো একটা কথা বলি?
অনিক -ছাড়ো আমাকে! তোমার তো আবার এইসব ভালো লাগেনা।
নিশু -রাগ করো কেন? শুনোনা কথাটা আরেক বার ভাবলে হতো না?
অনিক – কোন কথা নিয়ে ভাববো,বুজিয়ে বলো?
নিশু -আনিকার বিয়ের কথা নিয়ে।ওকে একবার জিজ্ঞাস করেলে ভালো হতো না?সারাজীবন যার সাথে কাটাবে তাকে তো ওর ভালো লাগতে হবে তাই না?
অনিক -ও কি তোমাকে কিছু বলছে নাকি ওর পছন্দের ব্যাপারে?
নিশু -কই না তো। এমনি বললাম।
(তোমাকে মিথ্যা বলার জন্য আমাকে মাপ করে দিও কথাটা মনে মনে বলতে নিশু চোখে পানি চলে আসলো।এই প্রথম সেই অনিকের কাছে মিথ্যা বলেছে।) তুমি বসো আমি তোমার জন্য চা নিয়ে আসছি বলেই নিশু বাহিরে চলে গেলো।
__রেহানা বেগম বাহিরে থেকে এসেছে দেখে নিশু কাছে গিয়ে বললো মা! আপনাকে চা দিবো?রেহানা বেগম কিছু বলতে যাবে এমন সময় অনিককে রুম থেকে বের হতে দেখে কিছু না বলে হাসি দিয়ে বললো আনো।
__নিশু নিছু না বলে রান্নাঘরে গিয়ে বিড়বিড় করছে যার মুখে তিতো ছাড়া মিষ্ট কথা বের হয় না সেটা একদিনেই পাল্টে গেলো কি করে।
__এইদিকে রেহানা বেগম মনে মনে ভাবতেছে মেয়েটা সত্যি অনেক ভালো। এতো কিছু বললাম সব কিছু মুখ বুঝে সহ্য করে নিয়েছে।আজ থেকে ওকে আর কিছু বলবো না।
নিশু-মা! আপনার চা।
রেহানা বেগম-হুম, নিশু তুমি কি রান্না করেছো? আর আজ থেকে তুমিই রান্না করবে।
__অনিক অবাক হয়ে তার মায়ের দিকে তাকিয়ে আছে।মা! ঠিক আছোতো।আরে নিশু কান্না করছো কেন? দেখছো মা তোমাকে ভালোবেসে ফেলছে।
রেহানা বেগম -হ্যা আমি ঠিক আছি।(নিশুর দিকে তাকিয়ে)পাগলি মেয়ে তুমি কান্না করছো কেন?মা তো ভুল করতেই পারে তাই না?
__কথা গুলো বলেই নিশুকে জড়িয়ে ধরল রেহানা বেগম।আনিকা এসে বললো ভাইয়া দেখছিস! মা এখন আমাদের দুজন কে ভুলেই গেছে।অনিক হেসে বললো তোকে আদর করে এখন আর লাভ কি তুই কয়েক দিন পরে তো আরেক জনের ঘরে চলে যাবি।তাদের কে বলে দিবো তোকে বেশি করে আদর করতে।
আনিকা কিছু না বলেই তার রুমে চলে গেলো।
রেহানা বেগম -বেচারি লজ্জা পাইছে মনে হয়।আর শুন দুইদিন পর ছেলেরা ওকে দেখতে আসবে।সব কিছু যেন ঠিকঠাক ভাবে হয়।
অনিক -মা! তুমি চিন্তা করোনাতো। সবকিছু ঠিকভাবেই হবে।
__নিশু কিছু না বলেই আনিকার রুমে গিয়ে দেখে আনিকা কান্ন করছে।
নিশু-আনিকা তুমি কান্না করছো কেনো? এখন তো তুমি সবাইকে বলতে পারতে।এখনি সবাইকে বলে দাও। দুইদিন পর তোমাকে দেখতে আসছে। পরে আর বললেও কেউ মেনে নিবে না।
আনিকা -রাফি কে আগে বলে দেখি ও কি বলে। তারপর না হয় বলবো।
নিশু – তুমি যা ভালো মনে করো।
বলেই নিশু তার রুমে চলে আসলো।আসতে না আসতে মাথাটা কেমন ঘুরছে।আজ কয়েক দিন থেকেই মাথা ঘুরছে।অনিককেও বলতে পারছিনা।কিছু বললেই ওর চিন্তার শেষ থাকবেনা।কথা গুলো ভাবতে ভাবতেই নিশু শুয়ে পড়লো।
একটু পর অনিক এসে দেখে নিশু শুয়ে আছে।
অনিক-নিশু কি হয়েছে তোমার অসময় শুয়ে আছো?
নিশু -এমনি।ভালো লাগছে না তাই।
অনিক-তোমার মুখ দেখে তো তা মনে হচ্ছে না।সত্যি করে বলো কি হইছে তোমার।আজকে কথায় তুমি আনন্দে থাকবে তা তুমি মন খারাপ করে শুয়ে আছো।
প্লিজ নিশু বলোনা কি হইছে?
নিশু -আসলে আমার মাথাটা কয়েক দিন থেকেই ঘুরছে।কিছু ভালো লাগছে না।
অনিক-আমাকে এতো দিন বলো নাই কেন?ঠিক আছে কাল আনিকাকে নিয়ে ডাক্তারের কাছে যাবে।আমিই তোমার সাথে যেতাম।আজকেও অফিসে যাই নাই।কাল যাতেই হবে।তুমি আনিকাকে নিয়ে যেতে পারবেতো?
নিশু -পারবো। তুমি চিন্তা করো না তো।
অনিক-আজব! আমি চিন্তা করবো নাতো কে করবে শুনি?তোমার কিছু হলে আমি মরেই যাবো।আর ডাক্তার কাছে গেলে কি বলে আমাকে ফোন করে সব জানাবে।
নিশু-কি পাগল একটা। বাসায় আসলেইতো জানতে পারবে।আবার ফোন করা লাগবে?
অনিক-আমি এতো অপেক্ষা করতে পারবোনা।
চলবে,,,,,,,,,