পুরোনো_ভালবাসা
পার্ট: ১৬
__শিহাব -নিশু! এই কথা গুলো তোমার মনে আছে? বলোনা নিশু মনে আছে?
নিশু-শিহাব আমার সব মনে আছে।কিন্তু তোমার আজ কি হয়েছে? এই রকম করছো কেন?
শিহাব -সেই দিন আমি আর আমার ফ্রেন্ড পুরো রাত hospital ই ছিলাম।জানো যখন আবিরকে সিস্টার নিয়ে আসলো তখন আমাকে সিস্টার বাবা ভেবে আমার কোলে দিয়েছিলো।আমি তখন আবিরকে কোলে নিয়ে মনের ভেতর কিযে ভালো লাগা কাজ করছিলো সেই দিন কাউকে বুজাতে পারিনাই।তারপর থেকে তোমাদের বাসায় আসা যাওয়া,আস্তে আস্তে তোমাকেও ভালোবেসে ফেললাম। তোমাকে আর আবিরকে এক নজর দেখার জন্য বার বার ছুটে যেতাম তোমাদের বাসায়।একটা সময় আসলো আবির আমাকেই বাবা ডাকতে শুরু করলো।তখন আমি ভাবলাম সত্যি সত্যি যদি আমি আবিরের বাবা হই!তাহলে তোমাদের আর হারানোর ভয় থাকবে না।আমার মা কে পাঠালাম তোমাদের বাসায়। তুমি তো বিয়ের কথা শুনেই রেগে আগুন হয়ে গেলে।হয়তো তোমার বাবার আর মায়ের কারনেই বিয়েটা করতে রাজি হয়েছিলে।বিয়ের পর আমাকে তোমার অসহ্য লাগতো।আস্তে আস্তে সেটা জয় করে নিলাম আমার ভালোবাসা দিয়ে।আজ যখন সব কিছু ঠিক ভাবে চলছে তখন আমি আমার সব কিছু হারিয়ে যেতে দিতে পারি না।তোমাকে পেতে আমার অনেক কষ্ট করতে হয়েছে।
নিশু-আমি জানি শিহাব তুমি কথা গুলো কেন বলছো।তুমি আমার আর অনিকের ব্যাপারটা জেনে গেছো।বিশ্বাস করো আমি শুধু তোমাকেই ভালোবাসি। অনিকের প্রতি আমার কোনো পিছুটান নাই।তুমিই আবিরের বাবা আর সারাজীবন আবিরের বাবাই থাকবে।
কথা গুলো বলেই শিহাবের বুকে মাথা রেখে শুয়ে পড়লো নিশু।জানো শিহাব তোমার বুকে মাথা রাখলে মনে হয় আমি সবচেয়ে নিরাপদ জায়গা আছি
পৃথিবীর সব শান্তি বুকেই আছে।
শিহাব -কথা গুলো বলে কি আমাকে বুজাচ্ছো।নাকি শান্তনা দিচ্ছো?তবে একটা কথা মনে রেখো অনিকের সাথে আমার সম্পর্কটা শেষ হয়ে যাবে।আর সেটা কালকে শেষ করবো।
নিশু -তুমি যা ইচ্ছা করো। কিন্তু আমি সারাজীবন তোমার বুকে মাথা রেখে ঘুমাতে চাই।শিহাব কে আর কোনো কথা সুযোগ না দিয়ে শিহাবের ঠোটে ঠোট ঢুবালো নিশু।
_শিহাব উঠো তোমার কলেজের দেরি হয়ে যাচ্ছে।প্রতিদিন লেট করে কলেজে যাও।একটা দিনতো একটু তাড়াতাড়ি যেতে পারো।এতো দেরিতে যাও ক্লাস কারাও কখন?উঠোনা শিহাব!!
শিহাব -জান “”আরেকটু ঘুমাতে দাওনা প্লিজ।
নিশু-আর একটু না উঠো বলছি।ঠিক আছে উঠতে হবেনা,আমি পানি আনতে যাচ্ছি।
শিহাব -এই না! না! এইতো উঠে গেছি।আচ্ছা আরেকটু ঘুমাতে দিলে কি হতো?
নিশু -একটা দিনতো তাড়াতাড়ি কলেজে যেতে পারো।আচ্ছা এতো দেরিতে গেলে ক্লাস করাও কখন?
শিহাব -ঘরে সুন্দরি বউ রেখে কলেজে যেতে একটুও ইচ্ছে করে তুমিই বলো?
নিশু -তোমার অনেক গুলো মেয়ে স্টুডেন্ট তো আমার থেকেও বেশি সুন্দরী।তাদের দেখলেইতো পারো।
শিহাব-আমার বুউয়ের থেকে আর কেউ সুন্দরী হতেই পারেনা।আমার চোখে আমার বউই পৃথিবীর সেরা সুন্দরী। বলেই নিশুকে জড়িয়ে ধরলো
নিশু -কি করছো বলোতো?ছাড়ো! টেবিলে নাস্তা দিয়েছি ফ্রেশ হয়ে খেয়ে কলেজে যাও।
শিহাব-ঠিক আছে,কি আর করার,মহারাণী কথাতো আমায় মানতেই হবে বলে শিহাব ওয়াশরুমে গেল।
নিশুও আবিরকে উঠিয়ে নাস্তা করার জন্য নিয়ে গেছে।শিহাব ফ্রেশ হয়ে এসে নাস্তা করে কলেজে চলে গেলো।
কলেজে যাওয়ার পথে অনিককে ফোন দিলো।
শিহাব-অনিক আজকে একটু দেখা করতে পারবি?
জরুরী কিছু কথা ছিলো।প্লিজ না করিস না।
অনিক -না করবো কেন? আমিও ভাবছিলাম তোকে ফোন দিবো দেখা করার জন্য।আমার তোর সাথে অনেক কথা বলার আছে।
শিহাব-ঠিক আছে। দুপুরে রেস্টুরেন্টে আয়।ওইখানেই কথা হবে।
__শিহাব ২ টা ক্লাস করিয়ে রেস্টুরেন্টে চলে গেলো।অনেকক্ষণ অপেক্ষার পর অনিক এলো।দুইজনেই চুপ করে বসে আছে।কি বলে শুরু করবে শিহাব বুজতে পারছেনা।তারপর অনিক নিরাবতা ভেঙ্গে বললো
অনিক-তোর নাকি কিছু কথা ছিলো এখন বল,চুপ করে আছিস কেন?
শিহাব-আসলে কিভাবে কথা গুলো শুরু করবো বুজতে পারছিনা।অনিক! তোর আর নিশুর ব্যাপারটা আমি জেনেছি কাল রাতে।আমি তোকে বলতে চাই,তুই নিশুকে ভুলে যা।আমার কাছথেকে নিশু আর আবিরকে কেড়ে নিস না।দেখ আমি যতটুকো জানি তোর ফ্যামিলিতে নিশুকে মেনে নেয়নি বা নিবেও না।নিশুকে আজ এই জায়গা আনতে আমার অনেক কষ্ট করতে হইছে।তুই বিয়ে করে আবার নতুন করে জীবন শুরু কর।কেউ তোকে বাধা দিতে যাবেনা।তোর কাছে শুধু আমার একটাই রিকুয়েস্ট আমার ছেলেকে আমার কাছেই থাকতিদে।
অনিক- এতোক্ষন অনেক কথা বলেছিস, এইবার আমিও একটু বলি! আবির তোর ছেলে মানে কি?আবির আমার ছেলে,শুধু আমার ছেলে।আর নিশু! ওই মেয়েকে কাল রাত থেকেই ভালোবাসি না।ওকে আমি শুধু ঘৃণা করি।এখন আমি শুধু আমার ছেলেটাকে চাই।ওকে নিয়ে আমি দেশের বাহিরে চলে যাবো।তোরা ভালো থাক এতে আমার কিছু যায় আসে না।আর আমার মনে হয়না নিশু কখনো ভালো থাকতে পারবে।ও তোর সাথে সংসার করে ঠিক কিন্তু মন পড়ে আছে আমার কাছে।ও আমার সাথে কাটানো একটা রাতও মন থেকে মুছতে পারবেনা।কারণ সারাজীবন ও আমাকেই ভালোবাসবে।আমার শরীরে ওর দেওয়া নোখের দাগ এখনো আছে। এই গুলো আমাদের ভালোবাসার সাক্ষী হয়ে থেকে গেছে।
__শিহাব কথা গুলো আর সহ্য করতে না পেরে অনিকের গালে একটা থাপ্পড় লাগিয়ে দিলো।
শিহাব-যথেষ্ট বলেছিস তুই।ওর নামে আর একটা কথাও শুনতে চাইনা আমি তোর মুখ থেকে।তোর আমার লড়াই আজ থেকে শুরু হয়ে গেছে।তবে সেটা আমার বউকে নিয়ে নয়।সেটা আমার আবিরকে নিয়ে।
কথাটা বলেই শিহাব রেস্টুরেন্ট থেকে বাহিরে চলে গেলো।
_নিশুর মন ভালোলাছেনা।শিহাব কে অনেক বার ফোন দিয়েছে কিন্তু শিহাবের ফোন বন্ধ।
কথাটা ভাবতে ভাবতেই কলিং বেল বেজে উঠলো।নিশু দৌড়ে গিয়ে দরজা খুলে দেখে শিহাব।
নিশু-তোমার ফোন অফ কেন? কতো বার ফোন কেরেছি।
শিহাব কিছু না বলে সোজা রুমে গিয়ে দরজা আটকিয়ে দিলো।নিশু দরজার সামনে দাঁড়িয়ে বললো
নিশু-শিহাব তোমার কি হয়েছে? কোনো কিছু নিয়ে কি তোমার মন খারাপ?শিহাব আমাকে বলবেনা তোমার কি হয়েছে?নিশু কান্না করছে আর কথা গুলো বলছে।
একটু পর শিহাব দরজা খুলে নিশু কান্না করছে দেখে
শিহাব-আরে তুমি কান্না করছো কেন?আমি ফ্রেশ হচ্ছিলাম তাই দরজা খুলতে দেরি হলো।আবির কই ওকে দেখছি না কেন?
নিশু -বাবা আসছে তুমি যাওয়া পরে,একটু আগে আবিরকে নিয়ে বাহিরে গেছে।আমি খাবার দিতেছি তুমি খেতে আসো।
শিহাব খাচ্ছে নিশু পাশে বসে আছে।শিহাব নিশুর দিকে তাকিয়ে একটা হাসি দিয়ে বললো,এইভাবে তাকিয়ে আছো কেন?
নিশু -তোমাকে দেখছি।তোমার মতো মানুষকে স্বামী হিসাবে পাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার।
শিহাব-same too you..and I love you jan।বলেই শিহাব নিশুর হাত ধরে বললো।জীবনে যতো ঝড় আসুক না কেন আমরা একসাথেই থাকতে চাই।
_আজ Friday শিহাবকে বার বার ডাকার পরেও এখনো ঘুম থেকে উঠে নাই।আবির ও শিহাবের সাথে ঘুমাচ্ছে।বাবা ছেলে দুইজনেই এক সাথে উঠবে।ইয়াসমিন বেগম আর নিশু নাস্তা বানাচ্ছে। এমন সময় কলিং বেল বেজে উঠলো।নিশুর বাবা উঠে গিয়ে দরজা খুলে দিলো।দরজা খুলে অবাক হয়ে বললো তুমি”””””
অনিক- হ্যা আমি।শিহাব কে একটু ডেকেদিন ওর সাথে আমার কথা আছে।
নিশু শিহাবকে ডাকতে গেলো,,,,,,,,
নিশুর বাবা-তোমার সাহস কি করে হয় আমার বাসায় আসার?আর শিহাবের কাছে তোমার কি কাজ?
অনিক -আমার ছেলেকে ফেরত চাই।আর কিছুই না।
এমন সময় শিহাব এসে বললো তোর সাথেই আমার এই ব্যাপারে কালকেই কথা হয়ে গেছে আজ নতুন করে কিছু বলার নাই।
অনিক-শুন! এখন আমি কথা বলবো না আর তুইও না।এখন যা করবে কোর্ট বলবে। এই নে নোটিশ! তোর সাথে আমার কোর্টেই দেখা হচ্ছে।
__কথাটা শুনে সবাই অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে অনিকের দিকে।শিহাব জানে সেই কোর্টে গেলে আবিরকে আর পাবেনা।
অনিক চলে যাওয়ার পরে নিশুর বাবা বললো এতো কিছু হয়ে গেলো আমাকে কেউ জানানোর প্রয়োজন মনে করলে না?
শিহাব স্তব্ধ হয়ে বসে রইলো
সত্যি কি আবিরকে আর পাবেনা।
চলেবে,,,,,,,,,,,,