পুরোনো_ভালবাসা
পার্ট:১৩
__সকাল বেলা রেহানা বেগমের চিৎকার চেঁচামেচিতে অনিক আর নিশু দৌড়ে এলো।
অনিক -মা! কি হয়েছে এইভাবে চেঁচামেচি করছো কেন?
রেহানা বেগম -তুই আমার ছেলে হয়ে এই কথা বলতে পারলি।চেঁচামেচি কি আমি সাধে করছি।তোর বোন ঘরে নাই।সকাল থেকে পুরো বাড়ী খুঁজেছি ও কথাও নাই।একটু পর আমাদের সবার গেস্ট চলে আসবে। তখন সবার কাছে কি বলবো।
অনিক -মা! তুমি চিন্তা করোনা হয়তো ওর কোনো বন্ধুকে আনতে গেছে।
রেহানা বেগম-আমি ওর সব ফ্রেন্ডকে ফোন দিয়ে জিজ্ঞাস করেছি।কারো বাসায় যায়নি।
__নিশুর আর বুজার বাকী রইলো না।আনিকা হয়তো রাফির ভাইয়া সাথে পালিয়ে গেছে।রাতে আনিকা তাহলে এই জন্যই কথা গুলো বলেছে।এখন আমি কিভাবে সাবাইকে বলবো আনিকা রাফি ভাইয়ার সাথে গেছে।
অনিক নিশুর দিকে তাকিয়ে বললো এইদিকে আসো তোমার সাথে কথা আছে।
নিশুর হাত ধরে টানতে টানতে রুমে নিয়ে এলো।
নিশু-অনিক তুমি এইরকম করছো কেন? আমি কি করলাম?
অনিক -সত্যি করে বলো আনিকা কোথায়?আমার মনে হয় তুমি সব কিছু জানো।নিশু প্লিজ আমাকে তুমি কিছু জানলে বলো।আমি সব সামলিয়ে নিব।
নিশু – অনিক! আমি জানি আনিকা কার সাথে গেছে।আমি তোমাদের আগেই বুজাতে চেয়েছিলাম তোমরা আমার কথা শুনো নাই।
অনিক -নিশু তুমি জানতে?
নিশু -আমি জানতাম ও একজন কে ভালোবাসে কিন্তু পালিয়ে যাবে তাতো জানতাম না।
অনিক -ছেলেটার নাম কি?
নিশু -,,,,,
অনিক -নিশু চুপ করে থেকো না।এখন চুপ হয়ে থাকার সময় নয়।প্লিজ নিশু বলো কে সেই ছেলে? মা যদি জানতে পারে তুমি সব জানো তাহলে তুমি বুজতে পারছো আমাদের কি হবে?তোমার কোনো আইডিয়া আছে?
নিশু-বিশ্বাস করো আমি জানতাম না সে পালিয়ে যাবে।নিশু কান্না করতে করতে কথা গুলো বলতে শুরু করলো।ও তো তোমাকে রাতে বলেছে ওর কোনো আপত্তি নাই।আমি ভাবলাম হয়তো সব ঠিক হয়ে গেছে।
এমন সময় রেহানা বেগম এসে বললো তার মানে তুমি জানো আমার মেয়ে কোথায় গেছে?
অনিক -মা! তুমি ভুল বুজতেছো নিশু কি করে জানবে আনিকা কোথায় গেছে।আনিকা কি ওর কাছে বলে গেছে নাকি।
রেহানা বেগম -আমার ভাবিতেও অবাক লাগে তোর বউ এতো বড় একটা অন্যায় করেছে।আর তুই তোর বউয়ের পক্ষনিয়ে কথা বলছিস।বোনের থেকে বউই তোর কাছে সব।তোর বউয়ের জন্য আজকে আমাদের মানসম্মান কিছু থাকবে?
নিশু -মা! আমি আপনাকে কিছু বলতে চাই,,,,,(কথাটা বলতে বলতে নিশু অজ্ঞান হয়ে পড়ে গেল।)
__অনিক তাড়াতাড়ি করে নিশুকে ধরে খাটে নিয়ে শোয়ালো।অনিক মায়ের দিকে তাকিয়ে বললো মা! আমরা এইসব নিয়ে পরে কথা বলবো। তুমি নিশুর পাশে বসো আমি পানি ডাক্তার কে ফোন দিচ্ছি।আর আমি ছেলে পক্ষকেও মানা করে দিচ্ছি আজকে না আসার জন্য।
রেহানা বেগম -এই মেয়ে আর কি কি নাটক করবে আল্লাই ভালো জানে।
__ডাক্তার এসে নিশুকে দেখে গেছে। সেই সকালে জ্ঞান হারিয়েছে, এখন তো রাত কম হলোনা।
অনিক -মা! ডাক্তার কে আরেকবার ফোন দিবো?
রেহানা বেগম -তোর মনে নাই ডাক্তার কি বলেছে,জ্ঞান ফেরতে দেরি হতে পারে।আমাকে তুই একটা কথা বলতো ও কি নিয়ে এতো চিন্তা করে?
রাত ১২ টায় নিশুর জ্ঞান ফিরলো।সবাই বসে আছে।অনিক তার পাশেই বসে আছে।নিশু অনিকের হাত ধরে উঠে বসলো।
নিশু-মা! আনিকা বাড়ি ফিরেছে?
অনিক -নিশু তুমি এখন এইগুলো বাধ দাও।তোমার শরীর এখন ভালো নাই।
রেহানা বেগম -আমি শুনতে চাই আমার মেয়ে কথায়।অনেক নাটক হইছে সকাল থেকে।এখন বলো আনিকা কথায়।
নিশু-আনিকা রাফি ভাইয়ার সাথে গেছে।ওরা একে উপরকে ভালোবাসে।আমি আনিকাকে বলেছিলাম আপনাদেরকে বলার জন্য।আনিকা আমাকেও নিষেধ করেছে আপনাদেরকে কিছু না বলার।
রেহানা বেগম-তুমি তো আমাদেরকে বলবেইনা কারণ তুমি এটাই চেয়েছিলে।আমার মেয়ে এই বাড়ি থেকে চলে যাক,তাহলে তোমার সুবিধা হবে। আমি এইটা কোনো দিন হতে দিবনা। অনিক! আমার মেয়ে যেই বাড়িতে থাকতে পারবেনা সেই বাড়িতে এই মেয়েও থাকতে পারবেনা।
অনিক-মা!! তুমি পাগল হয়ে গেছো এতে নিশুর কি দোষ? আর আমি কখনওই নিশুকে ছাড়তে পারবোনা।
বাবা তুমি মাকে বুজাও না।মা তুমি ঠাণ্ডা মাথায় একবার ভেবে দেখো এতে নিশুর কোনো দোষ নেই।
অনেকের বাবা -আমি কি বলবো বল।তোর মাকে আমি বুজাতে পারবোনা।
রেহানা বেগম -আমাকে কেউ বুজানো লাগবেনা।আজ যদি এই মেয়ে এই বাড়ি থেকে চিরজীবনের জন্য বিদায় না হয়। তাহলে মরা মুখ দেখবি।
অনিক -মা! নিশু এতো রাতে কোথায় যাবে?তুমি আমার মা,আর নিশু আমার স্ত্রী। আমি কাউকেই ছাড়তে পারবোনা।
রেহানা বেগম -আমি যা বলছি এটাই আমার শেষ কথা।
আমি এই মেয়ে যতক্ষণ এইবাড়িতে থাকেবে আমি এক গ্লাস পানিও খাবোনা।
নিশু -(কান্না করতে করতে)আপনি না খেয়ে থাকা লাগবেনা।আমি এখনি আমার বাবাকে ফোন দিচ্ছি আমাকে এসে নিয়ে যেতে।আজ থেকে আপনার ছেলে আপনারই রইলো।আমি কখনওই আমার অধিকার চাইতে আসবো না।অনেক তো চেষ্টা করলাম আপনার মেয়ে হয়ে থাকবো।আসলে কি জানেন? সাবার কপালে সব কিছু শয় না।
অনিক-নিশু তুমি এইসব কি বলছো? আমি তোমাকে ছাড়া থাকতে পারবোনা।আমার কথা না হয় বাদেই দিলাম তুমি কি ভাবে থাকবে?ঠিক আছে তোমাকে একা যেতে হবে না আমিও তোমার সাথে যাবো।যেখানে তোমার জায়গা হবেনা সেখানে আমিও থাকতে পারবোনা।
নিশু-আমি চাইনা তোমাদের মা ছেলের সম্পর্ক নষ্ট হক।
আমার জন্য তুমি অনেক কষ্টসহ্য করেছে এতোদিন।কথা গুলো বলেই নিশু তার বাবাকে ফোন দিয়েছে আসার জন্য।
__নিশুর ফোন পেয়ে নিশুর বাবা মা দুজনেই এসেছে।
নিশুর বাবা-আমার মেয়ে কি করেছে, অনিক?
অনিক -বাবা আপনি নিশুকে বুজান।আমার মায়ের এখন মাথা ঠিক নাই কি বলতে কি বলেছে এর জন্য ও বাড়ি ছেড়ে চলেযেতে চাইছে।
নিশুর বাবা-আমি তোমার মায়ের সাথে কথা বলতে চাই।
রেহানা বেগম -আমি আপনার সাথে কনো কথা বলতে চাই না।এসেছে এইবার মেয়েকে নিয়ে বিদায় হন।
নিশু-বাবা! আমি রেডি, আর কনো কথা বলার দরকার নাই।চলো!
অনিক -(নিশুকে জড়িয়ে)নিশু প্লিজ আমাকে ছেড়ে যেও না।আমি মরেই যাবো।
নিশু-(অনিককে ছাড়িয়ে)তুমি ভালো থেকো,নিজের জীবনটা সুন্দর করে সাজিয়ে নিও,মায়ের খেয়াল রেখো,আমার সাথে আর যোগাযোগ করোনা।
__তোমাকে আর খুশির সংবাদটা জানাতে পারলাম না।আমি জানি কথাটা জানলে কিছুতেই আমাকে যেতে দিবে না,কিন্তু আমি তো চাইনা রোজরোজ আমাকে নিয়ে অশান্তি হক।কথা গুলো ভাবতে ভাবতে নিশু তার বাবার হাত ধরে বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেলো।
এইদিকে অনিক কান্না জন্য নিশুকে ডাকতেও পারছেনা।নিশু তো যায়নি মনে হচ্ছে ওর সব কিছু শেষ হয়ে গেছে।অনিক তার মায়ের দিকে তাকিয়ে বললো মা! এইবার তুমি খুশি হয়েছোতো?
রেহানা বেগম কিছু না বলে রুমে চলে গেলো।
_ সকাল বেলা অনিক আলমারি থেকে সব জামাকাপড় নিতে গিয়ে অনিক নিশুর রিপটা পেলো।রিপটা খুলতে যাবে এমন সময় ভাবলো এইটা দেখে আর লাভকি।সেইতো আমাকে ছেড়ে চলে গেছে।ও যখন আমার কথা একবারের জন্য ভাবলো না আমি ভেবে লাভকি।রিপটা আলমারিতে রেখেই জামাকাপড় গুলো নিয়ে ব্যাগে গুছাচ্ছে।
রেহানা বেগম ব্যাগ গুছানো দেখে বললো তুই কোথায় যাচ্ছিস?
অনিক-এই বাসায় থাকলে আমার দম বন্ধ হয়ে আসে।এই কয়েক দিন আমার এক ফ্রেন্ডের বাসায় থাকবো।তারপর বাহিরে চলে যাবো।
রেহান বেগম-তোর যা ভালো লাগে কর।নিজের জীবনটা নতুন করে শুরু কর।যাওয়ার আগে একবার আনিকাকে গিয়ে দেখে আসবি?
অনিক-যার জন্য আমি নিশুকে হারালাম তাকে আমি দেখতে যেতে পারবোনা। আমি আজ থেকে মনে করি আমার কোনো বোন নাই,আমি একাই।বলে অনিক চলে গেল।
চলবে,,,,,,,