#পাশে_আছি (অনুগল্প)
স্বর্ণালী সন্ধ্যা
তুলি যখন চিপ্স খেতে খেতে টিভি দেখছিলো তখন কেউ একজন তার কান টেনে বলল
‘ডাক্তার এর বউ হয়ে পরীক্ষায় ফেল কর, লজ্জা করে না তোমার?’
‘আউচচ!কান ছাড়েন ব্যাথা পাচ্ছি উফফ!’
কান ছেড়ে দিয়ে সাহিল রাগী চেহারায় বলল
‘ফেল কেন করেছো? বলেছিলাম পড়াশোনা করতে ঠিকভাবে,সারাদিন শুধু মজামাস্তি নিয়ে থাকো। তোমাকে দিয়ে তো আমি কাজ করাই না, একটু সময় পড়াশোনা করলে কি হয়? এমন তো না যে তুমি শ্বশুর শাশুড়ী এর সেবাযত্ন কর কারন আমার মা-বাবা তো গ্রাম এ থাকে তাহলে এত গাফিলতি কেন’
তুলি ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছে সাহেল এর দিকে এবং বলল
‘আপনি রাগ দেখালেও আপনাকে এত সুন্দর লাগে কেন?’
সাহেল কপাল চাপড়ালো, কাকে কি বুঝাচ্ছে সে। ভার্সিটিতে পড়ে তুলি এবং সাহেল ডাক্তার। পড়াশোনায় একদম মন নাই তুলির কিন্তু সাহেল চায় তুলি নিজে প্রতিষ্ঠিত হক যাতে সে না থাকলেও তুলিকে যেন কারো কাছে নিচু না হতে হয়।
‘তুমি কি পড়াশোনা করবে না, চাকরি না করতে চাইলে নাই অন্তত পড়াশোনা টা শেষ করো। তোমাকে দিয়ে তো আমি কাজ করাবো না, পড়াশোনা শেষ করো তারপর তোমার যা ইচ্ছা কর তুমি।’
‘আরে পড়াশোনা করব না বলেই তো বিয়ে করেছি,আমার পড়তে ভালো লাগে না।আমি পড়ব না আর’
সাহেল গম্ভীরমুখে বলল
‘ঠিক আছে যা ইচ্ছা করো।আমি আর কিচ্ছু বলব না আমার কথা কেন শুনবে তুমি?থাকো নিজের মতো।’
বলেই সে চলে গেলো ফ্রেশ হতে মাত্রই বাসায় এসেছিল।ফ্রেশ হওয়ার পর তুলি যখন সাহেলকে খাবার খেতে ডাকে সাহেল তখন তাকে উপেক্ষা করে। এতে তুলি একটু মন খারাপ করে, পরে ভাবে যে রাগ কমলে কথা বলবে ঠিকই। দুজন দুজনের মত খেয়ে নেয়। রাতে ঘুমানোর সময় সাহেল আগেই শুয়ে পরে। আজ আর তুলিকে সে বুকে নিয়ে ঘুমায় নি। তুলি বিছানায় এসে দেখে সাহেল এর চোখ বন্ধ,মন খারাপ নিয়ে সে শুয়ে পরে তার পাশে। সাহেলকে না ধরলে তার ঘুম হয় না। খুব কষ্টেই ঘুমালো সে।
সকালে উঠেও সাহেলকে পাশে পায় নি সে। প্রতিদিন তাকে উঠিয়ে ভার্সিটি দিয়ে তারপর সাহেল হাসপাতাল যায়। আজ তাকে ছাড়াই চলে গেলো!
একগুচ্ছ অভিমান নিয়ে ফোন দিলো সাহেলকে
‘হ্যালো’
‘আপনি আমাকে ডাকেন নি কেন? কাল আপনি আমাকে কাছেও নেন নি'( অভিমানী কন্ঠে)
‘ডেকে কি হবে?আর আমি ফেল্টু মেয়েকে আদর করি না, তুমি তো আমার কথা রাখো না। রোগী দেখছি এখন রাখো।’
বলে নিজেই কেটে দিলো। তুলি এবার কান্না করে দিলো। সাহেল তার সাথে রাগ খুব কমই দেখায়, এমন রাগ আগে কখনো দেখায় নি।তাই তার খুব খারাপ লাগছে,তুলির কান্নার মাঝে কলিং বেল বেজে উঠলো। দরজা খুলে দেখলো সাহেল দাড়িয়ে আছে। সাহেল তাকিয়ে আছে চোখ মুখ ফুলো তুলির দিকে। সে ভিতরে ঢুকতেই তুলি তাকে ঝাপটে ধরলো। কান্না করতে করতে বলতে লাগলো
‘আপনি যা বলবেন আমি তাই করব,,প্লিজ রাগ করে থাকবেন না। আমি পপড়াশোনা করব,ফেল করব না প্রমিস’
সাহেল তুলির বাচ্চাদের মতো কান্না দেখে হেসে দিলো এবং সেও জড়িয়ে ধরে বলল,
‘এতটুকুতেই শেষ! এতোদিন ভালো করে বুঝালাম বুঝলে না। তোমারা মেয়েরা পারোও বটে(হাসতে হাসতে)।’
হাসি থামিয়ে এবার আদুরে ভাবে বললো
‘ কান্না কর না! শান্ত হও আমি কি তোমার খারাপ চাই বলো। তুমি পড়াশোনা করলে বা না করলে আমার কোন লাভ নেই। তুমি ফেল করলেও আমার বউ, পাস করলেও আমার বউ। কিন্তু আমি চাই না জীবনের কোন এক সময়ও তুমি যাতে আফসোস কর যে তুমি তোমার সংসার জীবনে মন দিতে গিয়ে পড়তে পার নি। আল্লাহ না করুক আমার কিছু হয়ে গেলে তখন? নিজেকে তো টিকিয়ে রাখতে হবে তাই না।এমন ও অনেক মেয়ে আছে যারা পড়তে চায় কিন্তু বিভিন্ন কারনে পরতে পারেনা ,অনেকের শশুরবাড়ি থেকে পড়াশোনা বন্ধ করে দেয়। আর এখানে আমি নিজে তোমাকে সাপোর্ট করছি।’
তুলি চুপ করে সাহেল এর কথা শুনছিলো। এবার সাহেল তুলিকে বুক থেকে সরিয়ে তার দু’কাধে হাত রেখে নরম সুরে বলল
‘ এখন বল পড়াশোনা করবে নাকি ছাড়বে? তোমার কাজ করতে মন না চাইলে করতে হবে না। আমার বউ কে খাওয়ানোর সামর্থ্য আমার আছে আলহামদুলিল্লাহ। আমি চাই তুমি শুধু পড়াশোনা টা কর।হুম?’
তুলি মাথা নিচু করে বলল,
‘করব, সরি আমি এভাবে ভেবে দেখিনি আগে।আপনি আর আমাকে ছেড়ে একা ঘুমাবেন না’
‘ঠিক আছে(হাসতে হাসতে)।এখন চল নাস্তা করি, কান্নাকাটি করে কি করছো যাও মুখ ধুয়ে আসো।’
যেতে গিয়ে হঠাৎ তুলির কিছু মনে পড়ায় বলল,
‘আপনি না হাস্পাতালে ছিলেন’
সাহেল ফিক করে হেসে দিয়ে বলল,
‘আজকে শুক্রবার পাগলী!’
———————————–
আজ তুলি একজন সফল ব্যবসায়ীদের মধ্যে। সকলে তাকে খুব সম্মান করে। সেদিন সাহেলের বুঝানোর পর তুলি খুব ভালভাবে পড়াশোনা চালিয়ে গিয়েছে,,সে পরে নিজে থেকেই প্রতিষ্ঠিত হওয়ার জন্য পরিশ্রম করে গেছে যেন সে নিজের সপ্ন বুঝতে পেরেছে।
রাতে বিছানায় বসে আগের দিনের কথা ভেবে হঠাৎ হেসে উঠলো তুলি
‘কি বেপার হাসছো কেন একা একা?’
‘আগের দিনের কথা মনে পরে গেলো(হাসতে হাসতে)’
‘ তো একা একা হাসছো কেন? বুকে আসো, আমাকেও বলো আমিও হাসি’
তুল এলো সাহেলে কাছে, খুব আবেগমিশ্রিএ কন্ঠে বলল,
‘আপনি পাশে না থাকলে জীবনটাকে উপভোগ করতে পারতাম না।’
সাহেল তুলির কপালে অধর ছুয়ে বলল
‘আমি সবসময় তোমার পাশে আছি। নিজের অস্তিত্ব কে তো পাশেই রাখতে হয় সবসময়’
সাহেলের বুকেই ঘুমিয়ে গেলো তুলি। সাহেল তাকিয়ে আছে তার বোকা বউটার দিকে যে এখনো নিজের ভালো টা বুঝতে পারে না,,আর যখন বুঝিয়ে দেয় তখন বাচ্চা বাচ্চা হাসি দিয়ে বলে, ” আপনি আছেন বলেই তো আমি টেনশন নেই না।”
চলবে।