পারফিউম পর্ব-০৫

0
230

#পারফিউম
#পর্ব-৫
এজাজ রহমান এর শত্রু সংখ্যা কম নয়। দিতিয়াকে যে অফিসে একটু বেশী সুবিধা দেয়া হয় সেটা অফিসে সবার জানা আছে। এই সুবিধা ঠিক কী কারণে দেয়া হয় সেটাও বুঝতে কারো বাকী থাকে না। অনেকের রোষের শিকার দিতিয়া ঠিক এই কারণে। কয়েক মাস আগে জাবেদ নামে একটা ছেলে ভালো কাজ করেও অফিসের বিগ বাজেটের প্রজেক্টের ইন চার্জ না হতে পেরে আক্রোশ দেখিয়েছিল। রিজাইন দিয়ে যাবার সময়ও বেশ সিনক্রিয়েট করলো। খুব খারাপ কিছু কথাবার্তাও বলেছিল দিতিয়াকে। দিতিয়া ব্যাপার টাকে পাত্তা দেয় নি। অফিসে এমন মানুষের সংখ্যা অনেক যারা ও’কে পছন্দ করে না। দরকারের খাতিরে আলগা সম্পর্ক রাখে। দিতিয়া এই ব্যাপার টা সহজ ভাবে নিয়েছে। যাকে দরকার সে ঠিকই দলে আছে, অন্যদের না হলেও চলবে। কিন্তু এখন ব্যাপার গুলো ওর জন্য অস্বস্তিকর হয়ে গেছে। এতকাল মনে হয়েছে যাদের সঙ্গে মিশছে তারা নিজেদের ইমেজ বাঁচাতে কখনো ও’কে ঝামেলায় ফেলবে না। কিন্তু বোকাসোকা নেহাল ও’কে বেশ বিপদে ফেলল।

পুলিশ অফিসার জিজ্ঞেস করলো,

“আপনি বলতে চাচ্ছেন নেহাল যেসব প্রমাণ দিচ্ছে সেগুলো মিথ্যে?”

“অফ কোর্স মিথ্যে। আমার রুচি এতোটা খারাপ নয় যে ওরকম আনস্মার্ট ছেলের সঙ্গে প্রেম করব। ”

“কিন্তু ম্যাডাম উনি তো প্রেমের ব্যাপারে কিছু বলে নি। উনি বলেছে আপনি টাকা হাতিয়েছেন?”

দিতিয়া শুকনো ঢোক গিলে বলল,

“সিরিয়াসলি! ওদের কী ই বা আছে যে আমি ফাঁসাব! তাছাড়া আমি ইনডিপেনডেন্ট, আমার কারও কাছে হাত পাততে হয় না। ”

পুলিশ অফিসার দিতিয়াকে ভালো করে দেখলেন। কী ধূর্ত মেয়েমানুষ! এমন অবলীলায় একের পর এক মিথ্যে বলছে যে চোখ দেখে বোঝার উপায় নেই।

“ম্যাডাম, নেহাল সাহেবের ফোনে আপনাদের ম্যাসেঞ্জার, হোয়াটসঅ্যাপের সব টেক্সট, চ্যাট আমরা দেখেছি। ”

“তো? ওগুলো ফেইক। ”

“না। আমাদের সাইবার টিম কনফার্ম করেছে যে ওগুলো সত্যি। আর আপনারা যে হোটেল ভিউ তে রেগুলার যেতেন সেটার সিসিটিভি ফুটেজ উদ্ধার করা হয়েছে। অনেক আগের হলেও আমরা এই অসাধ্য সাধন করেছি। ”

দিতিয়া স্থির চোখে তাকিয়ে আছে। পুলিশ অফিসার আবারও বলল,

“নেহাল সাহেব কে টিকটিকি ভাবলেও ওনার হাত অনেক লম্বা। আপনার নামে ওনারা মামলা করেছেন। আপনি ত্রিশ লাখ টাকা হাতিয়েছেন। আপনি হয়তো জানেন না যে নেহাল সাহেবের এক খালু ডিআইজি। উনিও হাত ধুয়ে আপনার পিছনে লেগেছেন। ”

“না, এটা মিথ্যে.. মিথ্যে সব। এতো টাকা আমি নেই নি। ”

দিতিয়াকে কেমন উদভ্রান্তের মতো লাগলো!

“ম্যাডাম আপনি একটু সাবধানে থাকবেন। মানুষের যখন সময় খারাপ যায় তখন সব দিক থেকেই খারাপ সময় যায়।”

দিতিয়া কিছু বলতে পারলো না। স্থির চোখে তাকিয়ে রইলো।

***
পুলুকে এসে আজ ওর বাবা নিয়ে গেছে। দিলারা শত চেষ্টা করেও রাখতে পারলো না। দিতিয়ার চরিত্র খারাপ, দিহানের চরিত্রও ভালো ছিলো না এসব বলে গেছে। দিলারা খানিকক্ষণ কান্নাকাটি করলেন। মেয়ের নামে যা শুনছেন সেগুলো কিছু বিশ্বাস করেন না। আহনাফ ছেলেটাও পিঠ দেখিয়ে দিয়েছে। দেখালে দেখাক, মেয়ের জন্য পাত্রের অভাব হবে না। কিন্তু এই বিপদ টা কাটুক। মেয়েটা সব ঝামেলা কাটিয়ে উঠুক।

***
এজাজ রহমান ধারণা করছেন তার মেয়ের ঘটনায় দিতিয়ার হাত আছে। দিতিয়া তাকে একটা টেক্সট করেছিল,

“আমাকে ইগ্নোর করছেন? এটার ফল কিন্তু খুব খারাপ হবে। দিতিয়া ইগ্নোর ব্যাপার নিতে পারে না। দেখুন, আপনার ই না আবার হা পা ধরে কাঁদতে হয়। ”

এজাজ রহমান খুব হেসেছেন। ওইটুকু একটা মেয়ে তাকে শাসাচ্ছে! ভাবা যায়! ওরকম দশটা মেয়ে পায়ের নিচে রাখার ক্ষমতা তার আছে।

এখন এজাজ রহমানের সন্দেহের লিস্টে দিতিয়াই আছে। মেয়ে তার অতি আদরের। দিতিয়াকে সে ছাড়বে না।

***
আহনাফের সাথে সম্পর্ক ভেঙেছে দিতিয়ার। ডায়মন্ড রিং সহ সবকিছুই ফেরত চেয়েছে আহনাফ। দিতিয়া আপত্তি করে নি। আহনাফ ও’কে খুব খারাপ কিছু কথা বলল। দিতিয়া গায়ে মাখলো না। সময় টা ওর খারাপ যাচ্ছে তবে মনোবল এখনো পুরোপুরি হারায় নি। ওর বিশ্বাস শেষ গুটিটা চেলে ও জিতে যাবে।

দিতিয়ার এমন জীবন আজ নতুন নয়। বাবা মধ্যবিত্ত চাকুরীজীবি। আরাম আয়েশ যেমন নিজে করতে পারে নি, তেমনি ওদেরও দিতে পারে নি। দিতিয়া বোকা না, ও বুঝে গেছিলো কিভাবে আরাম আয়েশের ব্যবস্থা করা যায়। পড়াশোনায় ভালো ছিলো, সুন্দরী ছিলো। সব মিলিয়ে ছেলে পটাতে সময় লাগে নি। একটা সময় বুঝলো চাকরি বাকরি করে পরিশ্রম করে গাড়ি, বাড়ি করতে গেলে ও বুড়ো হয়ে যাবে। তাই শর্টকাট অপশন খুঁজলো, পেয়েও গেল। ওপরে ওঠার সিড়ি বেয়ে টপ ফ্লোরে প্রায় উঠে গিয়েছিল। মাঝখানে এই ঝামেলা টা!

দিতিয়া একটা ব্যাপার মিলাতে পারছে না কিছুতেই। কে ওর পিছনে হাত ধুয়ে লেগেছে! সত্যিই নেহাল নাকি অন্যকেউ। সমস্ত সন্দেহ নেহালের দিকে গেলেও দিতিয়ার অবচেতন মন বলছে এটা নেহাল নয়। অন্যকেউ। আর সে খুব চালাক। এজাজ রহমান না তো! নাকি তার পরিবারের কেউ!

চলবে….

সাবিকুন নাহার নিপা

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে