#পারফিউম
#পর্ব-৪
দিতিয়া এজাজ রহমান কে তিন বার ফোন করলো। প্রত্যেকবার ই কল কেটে দিয়েছে। একটু পর টেক্সট পাঠালো,
“হলিডেতে আমি কারোর ফোন রিসিভ করি না। ”
দিতিয়ার ভীষণ রাগ হলো। এই ফ্যামিলি ম্যান বাইরে ঠিক কী কী করে বেড়ায় সেটা স্ত্রী সন্তান রা জানলে গলা টিপে মে*রে ফেলবে।
দিতিয়া বুঝতে পারলো ওর সময় টা খারাপ যাচ্ছে। আহনাফ ওর জন্য টেনশন করার বদলে রহস্য খুঁজে বেড়াচ্ছে। মেনীমুখো নেহাল ফনা তুলে ছোবল মারার চেষ্টা করছে। এজাজ সাহেব ফোন তুলছেন না।
দিতিয়া নিজের মন কে প্রবোধ দিচ্ছে। বিচলিত হলে চলবে না। রাস্তা খুঁজে বের করতে হবে। আহনাফ ছেলেটা উপর থেকেই হম্বিতম্বি। মাথায় তেমন কিছু নেই। আর নেহাল যতই পুলিশের ভয় দেখাক, নিজের মান সম্মান নিয়ে সে খুব ই সচেতন। ওটা দিতিয়াকে ভয় দেখানোর জন্যই বলা।
দিতিয়া নানান রকম যুক্তি খুঁজে নিজের মন কে শান্ত করার চেষ্টা করলো। এজাজ রহমান যত ব্যস্ততা দেখাক ছুটে আসতে হবে ওর কাছে। ঠিক আসবে, পায়ের কাছে এসে বসে থাকবে। দিতিয়া সেই ব্যবস্থা করবে।
***
“আপনি বলতে চাইছেন, আপনাকে প্রেমের ফাঁদে ফেলে দিতিয়া ম্যাডাম টাকা হাতিয়েছে?”
নেহাল মাথা নেড়ে হ্যাঁ বলল।
পুলিশ অফিসার বললেন,
“মুখে জবাব দিন। ”
নেহাল হ্যাঁ বলল।
“আপনি ফাঁদে পড়লেন কেন?”
নেহাল বুঝতে পারলো না কী জবাব দিবে। পুলিশ অফিসার আয়েশ করে চা খাচ্ছেন। তার মনে হচ্ছে না যে এই ছেলেটা মিথ্যে বলছে। কিছু মানুষ আছে যাদের বডি ল্যাঙ্গুয়েজ দেখে সহজে বোঝা যায় যে মানুষ টা কেমন। তবে কেউ কেউ আছে ভীষণ ধূর্ত, এদের সহজে পড়া যায় না।
অফিসার জিজ্ঞেস করলো,
“আপনাদের গল্পটা খতম কেন হলো? ”
“কারণ টাকা দেয়া বন্ধ করেছিলাম। ”
“আপনি বাপের টাকা চুরি করে দিচ্ছিলেন কেন? আপনি কী গবেট?”
নেহাল মাথানিচু করে জবাব দিলো,
“আমি ভেবেছিলাম টাকাটা ওর দরকার। ”
“আচ্ছা। এখন কী মনে করে পুলিশের কাছে আসছেন?”
“আমার মনে হলো পুলিশের কাছে ব্যাপার বলা দরকার। ”
“দিতিয়াকে কোনো গিফট পাঠিয়েছেন রিসেন্টলি?”
“না।”
“সঙ্গে সঙ্গে উত্তর দিলেন! ভালো করে হোমওয়ার্ক করে এসেছেন। ”
“পারফিউম এর ব্যাপার টা আমি জানি। বাবলু ভাইয়ের ওয়াইফ মারা গেছে। ”
পুলিশ অফিসার মাথা নাড়লো। আবারও জিজ্ঞেস করলো,
“সত্যিই পাঠান নি পারফিউম সেট আপনি? ”
“না। তবে….!”
“আমি এসিড সংগ্রহ করে রেখেছিলাম। ভেবেছিলাম সুযোগ বুঝে….
পুলিশ অফিসার নেহালের দিকে ভালো করে তাকালো। শান্ত গলায় কথা বলা সুদর্শন পুরুষ টা রীতিমতো তাকে অবাক করে দিয়েছেন। চোর, বাটপার, খু*নী যারা সামলায় তাদের সহজে চমকে দেয়া যায় না। কী অবলীলায় এসিডের কথা বলে ফেলল!
***
এজাজ রহমান ছুটিতে এসেছেন। মেয়ে ও লেভেলে ভালো রেজাল্ট করেছে তার সেলিব্রেশন চলছে। ছেলে, মেয়ে দুজন কেই এজাজ রহমান ভালোবাসেন। বাচ্চারা সুইমিংপুলে নেমে মায়ের সাথে আহ্লাদ করছে। দেখতে ভালো লাগছে। ফোন টা হাতে নিয়ে দেখলো দিতিয়ার টেক্সট। আহারে মেয়েটা আবার রেগে গেল! এই মেয়েটা অবুঝ না, কিন্তু এই মুহুর্তে অবুঝের মতো আচরণ করছে। এজাজ রহমানের দুটো জীবন। একটা হচ্ছে সুইমিংপুলের যে দৃশ্যটা দেখা যাচ্ছে সেটা। অন্য জীবনের একটা অংশ দিতিয়া। এই মেয়েটা চাকরিটা পেয়েছে নিজ গুনে। কোয়ালিফিকেশন যেমন টপ ক্লাস ছিলো তেমনি ছিলো সুন্দরী। উপরে ওঠার সহজ সিড়িটা উনি দেখিয়ে দিয়েছেন। মেয়েটা সেটা চুজ করে স্মার্ট, বুদ্ধিমতির পরিচয় দিয়েছেন।
এখন কীসব ঝামেলা চলছে। বড়বোন টা মরে গেছে নাকি। একটু বেশী কঠিন সময় যাচ্ছে। এটারও দরকার আছে। এজাজ রহমান চাইলেই সাহায্য করতে পারেন। কিন্তু তিনি তো সেটা করবেন না। কারণ দিতিয়াকে নাস্তানাবুদ অবস্থায় দেখে ভালো লাগছে। মেয়েটা এখন এসে কান্নাকাটি করে কাকুতি, মিনতি করলে সেটা আরও ভালো লাগবে।
***
“বিষয় টা অনেক জটিল হয়ে যাচ্ছে দিতিয়া। তুমি সম্ভবত অনেক কিছু লুকিয়েছ আমার থেকে। ”
দিতিয়ার শান্ত গলা। বলল,
“বিয়ে ক্যান্সেল করতে চাইছ?”
আহনাফ হ্যাঁ বলল না। অথচ ওর মনে এটাই চলছে। দিতিয়াকে সত্যি ধোয়া তুলসীপাতা না ভাবলেও ভালো মেয়ে ভেবেছে। যদিও নেহালের ব্যাপার টা দিতিয়া অস্বীকার করেছে। তবুও আহনাফের বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে।
“আহনাফ, আমার খারাপ সময়ে যেভাবে তোমার পাশে থাকা দরকার সেভাবে কিন্তু তুমি থাকছ না। উল্টো আমার দোষ খুঁজে বের করার চেষ্টা করছ।”
“দেখো দিতিয়া, আমার ফ্যামিলি একটা ঘরোয়া মেয়ে চেয়েছিল আমার জন্য….
“আহনাফ তুমি ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে কথা না বলে পয়েন্টে আসো। ”
আহনাফ কিছু বলছে না। দিতিয়া সহজ মেয়ে নয়। বিয়ে ভেঙে দেবার কথা শোনার পর ঠিকই অন্য গুটি সাজিয়ে ফেলবে। করতে হবে কৌশলে। আহনাফ হঠাৎই শান্ত গলায় বলল,
“টেক কেয়ার বেবি। সব ঠিক হয়ে যাবে। ”
দিতিয়া এতো নরম কথায় গলল না। ওর সন্দেহের তীর এখন সবার দিকেই। নেহাল ও’কে প্যাচে ফেলেছে। আহনাফও ও’কে নিশ্চয়ই প্যাচে ফেলতে চাইবে। অন্য চাল চালতে হবে।
***
পুলিশ অফিসার ফোন করেছে দিতিয়াকে। সামনাসামনি কথা বলতে চায়। দিহানের স্বামী এসে দিতিয়াকে শাসিয়ে গেছে। এজাজ রহমান তার সোশ্যাল মিডিয়া একাউন্টে শুধু হ্যাপি ফ্যামিলির ফটো আপলোড হচ্ছে।
দিতিয়া অন্য কাউকেও পাশে পাচ্ছে না। সব মিলিয়ে ওর সময়টা খুব খারাপ যাচ্ছে। খুব খারাপ।
এরমধ্যে আরেক ঘটনা ঘটলো। এজাজ রহমানের হ্যাপি ফ্যামিলি হঠাৎই আনহ্যাপি হয়ে গেল। এজাজ রহমানের মেয়ে এশার বেশ কিছু অন্তরঙ্গ ছবি ভাইরাল হলো সোশ্যাল মিডিয়ায়। তাও আবার নিজের বয়সী টিচারের সঙ্গে।
দিতিয়ার সঙ্গে সঙ্গে তার সময়টাও খারাপ যাচ্ছে।
চলবে….
সাবিকুন নাহার নিপা