#পারফিউম
#পর্ব-৩
নেহাল ভীতু টাইপের মানুষ। সুদর্শন, ভদ্র ছেলে। কোনো মেয়ের দিকে বাজে নজরে তাকায় না। দিতিয়াকে প্রথম দেখেছে বাবলু ভাইয়ের বিয়েতে। জানতে পারলো দিতিয়া বাবলু ভাইয়ের শালি। প্রথম দর্শনে ভালো লাগার ব্যাপার টা যদি লাভ এট ফার্স্ট সাইট হয় তবে ওটা তেমন ছিলো। নেহাল অনেকদিন ব্যাপার টা শুধু নিজের মধ্যে রেখেছে। হঠাৎ ফ্যামিলি গেট টুগেদারে দিতিয়াকে দেখলে ভালো লাগতো। ব্রাইট স্টুডেন্ট সেই সঙ্গে সুন্দরী স্টাইলিশ দিতিয়া নজর কাড়বার মতোই।
কিন্তু স্বপ্ন ভেঙে গেল তখন যখন শুনলো দিতিয়ার বয়ফ্রেন্ড আছে। দীর্ঘ সময় ধরে ওরা সম্পর্কে আছে। অন্তত সোশ্যাল মিডিয়ার ঘনিষ্ঠ ছবিগুলো সেটাই প্রমাণ করে। হৃদয় ভাঙার কষ্ট টা নেহাল প্রায় সামলে উঠলেও দিতিয়াকে চোখের সামনে দেখলে কেমন পাগল পাগল লাগতো। মাতাল করা পারফিউমের ঘ্রাণ। ইচ্ছে করতো শক্ত করে জড়িয়ে ধরে রাখতে।
একবার একটা ব্যাপার ঘটলো। দিতিয়ার একটা কাজের জন্য ওদের বাসায় এসে কয়েকদিন থাকলো। তখন ওদের বাসা ছিলো পুরান ঢাকার দিকে। উত্তরাতে আসা যাওয়া সম্ভব নয় বলে ভাবী ফোন করে নেহালের মা’কে বলল।
নেহাল দিতিয়াকে দেখে খুশি হলো। পাওয়ার আশা ছেড়ে দিয়েছে ঠিকই তবুও দেখতে ভালো লাগতো। দিতিয়ার নজর এড়ালো না বিষয় টা। খানিকটা উস্কানিমূলক আচরণ নিজেও করলো। একদিন ছাদে একা পেয়ে জিজ্ঞেস করলো,
“তুমি আমাকে কিছু বলতে চাও নাকি?”
নেহাল কোনোকিছু না ভেবে বলল,
“তুমি কী তোমার ওই বয়ফ্রেন্ড কে বিয়ে করবে?”
দিতিয়া হেসে ফেলল। কাছে এসে নেহালের চোখের দিকে তাকালো। বলল,
“তুমি কী চাও?”
নেহাল তাকিয়ে রইলো। সেদিন বোধহয় ওর উপর শয়তান ভর করেছিল। কোনোকিছু না ভেবে দিতিয়ার ঠোঁটে চুমু খেয়েছে। কয়েক সেকেন্ডের ব্যাপার ছিলো মাত্র। যখন সেন্স হলো তখন বুঝতে পারলো যে এটা ঠিক ছিলো না। খুব খারাপ হয়েছে। দিতিয়াকে বলল,
“সরি সরি। আমি আসলে… আই এম সরি। ”
দিতিয়া শব্দ করে হাসলো। এগিয়ে এসে নেহাল কে নিজের দিকে ফিরিয়ে বলল,
“অফকোর্স তোমার সরি ফিল করা উচিত। কারণ তুমি আমাকে ইনসাল্ট করেছ। এখন তুমি তোমার কাজ টা ঠিক করে করবে। কিস মি রাইট নাউ। ”
সেদিন থেকে শুরু। সেই শুরুটাকে নেহাল ভালোবাসা ভেবে ভুল করেছে। আর দিতিয়া জাস্ট ইউজ করেছে। এরপর ঘটে গেছে কতকিছু। হোটেলের বন্ধ রুমে একান্ত সময় কাটানো থেকে শুরু করে নেহালের বাবার ব্যাংক একাউন্ট থেকে টাকা সরানো সব কিছুই হয়েছে দিতিয়ার ইচ্ছেতে। এক সময় দিতিয়া অন্য সিড়ি পেয়ে নেহাল কে রাস্তায় ছুড়ে ফেলল রীতিমতো। ততদিনে নেহালের চোখের রঙিন চশমাটাও সরে গেল। বাবার একাউন্ট থেকে নয়লাখ টাকা সরানো হয়েছে। বাবা, মা সবাই কে সন্দেহ করলেও নেহাল কে করে না। নেহাল বন্ধ দরজার আড়ালে কাঁদে। আয়নায় নিজেকে দেখতেও লজ্জা হয়। এক পর্যায়ে গিয়ে মনে হলো ওর এবার কঠিন হওয়া প্রয়োজন।
“আমার টাকাগুলো আমাকে বুঝিয়ে দাও। ”
নেহালের গলার স্বর শান্ত তবে দৃঢ়। দিতিয়া সানগ্লাস টা খুলে ফেলল। কঠিন গলায় বলল,
“তুমি কী আমাকে পারফিউম সেট টা পাঠিয়েছিলে?”
“কিসের পারফিউম সেট? ”
“ইনোসেন্ট হবার নাটক আমার সঙ্গে করবে না?”
“শয়তানের সঙ্গে ইনোসেন্ট হবার মতন বোকা আমি নই। ”
অন্য সময় হলে দিতিয়া এই ডায়লগ শুনে খুব হাসতো। কিন্তু এখন পরিস্থিতি অন্যরকম। ঠান্ডা গলায় বলল,
“সত্যিই তুমি পারফিউম সেট টা পাঠাও নি?”
“না। তোমার এই পারফিউমের গল্প বন্ধ করো। আমার টাকাগুলো ফেরত দাও। ”
দিতিয়া স্বাভাবিক গলায় বলল,
“কিসের টাকা? ”
“নয় লাখ টাকা ক্যাশ। দামী গিফট সহ অন্যান্য সবকিছু বাদ দিলাম। ”
“তুমি যে হোটেলে গিয়ে আমার সঙ্গে শুয়েছ? সেটা কী এমনি এমনি?”
নেহাল একটা ধাক্কা খেল। আশেপাশে তাকালো। ব্যস্ত রেস্টুরেন্টে কেউ কারো দিকে খেয়াল করছে না। নেহালের ইচ্ছে করলো মাটির নিচে ঢুকে যেতে। রুপের মোহে অন্ধ হয়ে এই বাজারের মেয়েটার জন্য সময় নষ্ট করেছে!
দিতিয়া শ্লেষের সুরে বলল,
“তোর কী এমন যোগ্যতা যে আমাকে ফ্রী ফ্রী পেয়ে যাবি? ”
নেহাল শান্ত অথচ ভয়ংকর চোখে তাকিয়ে আছে। দিতিয়া দাঁতে দাঁত চেপে বলল,
“এরপর যদি কোনো নাটক দেখি তাহলে আমার কাছে যা আছে সেগুলো সবাই দেখবে। ”
নেহাল জানে দিতিয়া ফাঁকা আওয়াজ দিচ্ছে না। তবুও বলল,
“আচ্ছা। যা হয় হোক। আমিও পুলিশের কাছে সব সত্যি বলব। ”
দিতিয়ার মুখের রঙ পাল্টালো এবার। নেহাল উঠে গেল দিতিয়াকে কিছু না বলার সুযোগ দিয়ে।
***
“পারফিউম গুলো ভালো করে দেখেন নি?”
দিতিয়া মাথা নেড়ে না বলল।
পুলিশ অফিসার পারফিউমের বোতল গুলো দেখিয়ে বলল,
“কোনো ব্র্যান্ড লোগো নেই।”
দিতিয়া বোকার মতো তাকিয়ে রইলো। এতো বড় বোকামি কিভাবে হলো।
পুলিশ অফিসার বলল,
“আইডিয়া করতে পারছেন কে পাঠাইছে?”
“না। আসলে আমাকে প্রায়ই অনেকে সারপ্রাইজ গিফট পাঠায়।”
“অনেকে?”
“জি। ”
“এই অনেকের মধ্যে কারা কারা আছে। ”
“কলিগ, ফ্রেন্ডস রিলেটিভস। ”
“সবার নাম লিখে দিন তো একটা কাগজে। ”
“এতো মানুষের নাম লেখা সম্ভব? ”
পুলিশ অফিসার সন্দেহের চোখে তাকালেন। বললেন,
“সম্ভব না?”
দিতিয়া জবাব দিলো না। পুলিশ অফিসার বললেন,
“আপনাকে একজন মারতে চায়। আনফরচুনেটলি তার প্ল্যান ফেইল করেছে। সে কী এখনো চুপচাপ বসে আছে বলে মনে করেন? নিশ্চয়ই অন্য কোনো প্ল্যান শুরু করেছে এতক্ষনে। ”
“আমার এরকম কোনো শত্রু নেই। ”
“তাহলে? ”
“মানে?”
“তাহলে এই পারফিউম কেন পাঠাল?”
“ভুলে আসতে পারে। ”
“ভুলে আসা পার্সেল রিসিভ করেছেন?”
দিতিয়া জবাব দিতে পারলো না। পুলিশ অফিসার বলল,
“ব্যাপার টা হালকা ভাবে নেয়ার চেষ্টা করছেন তার মানে ভেতরে অন্য কাহিনী আছে। আপনি ওই লোকগুলোর নাম লিখে রাখবেন। ”
“কোন লোকগুলো? ”
“যারা আপনাকে সারপ্রাইজ গিফট পাঠায় তাদের। ”
দিতিয়া কিছু বলল না। পুলিশি ঝামেলা ভালো লাগছে না। কে জানে কখন কেঁচো খুঁড়তে কেউটে বেরিয়ে আসে।
চলবে….
সাবিকুন নাহার নিপা