#পারফিউম
#পর্ব-২
বন্যা, রাখী, সুমী তিনজন ই দিহানের ক্লাসমেট। বন্ধুত্বের চেয়ে লোক দেখানো সম্পর্ক বেশী। ব্যক্তিজীবনে কে কতটা সুখী, কার হাজবেন্ড কত কী করছে সেসব নিয়ে গসিপ চলে।
আজকের গেট টুগেদার ছিলো বন্যার কারণে। খুব শিগগিরই ও হাজবেন্ড, বাচ্চাসহ আমেরিকা সেটল্ড হচ্ছে। সেই সুখবর টা শোনার পর বন্ধুদের মুখ কেমন হয় সেটা দেখার জন্য মূলত তিনজন কে ডাকে।
দিহান এসেছিল সেজেগুজে। ওর সাজগোজ এমনিতে খানিকটা ব্যাকডেটেড টাইপ। ফ্যাশন সেন্স খানিকটা কম। তবে আজকে ওর শাড়ি, জুয়েলারি, সাজ সবকিছুই চমৎকার ছিলো। সুমি তো বলেই ফেলেছিল প্রায়, যাক দিতিয়াকে দেখে অন্তত কিছু শিখলি শেষ পর্যন্ত৷ কিন্তু আলগা প্রশংসা ছাড়া আর কিছু বলে নি।
বন্যা খাবার এনেছিল দামী রেস্টুরেন্ট থেকে। খাওয়া দাওয়ার ব্যাপারে ওর হাত খোলা। এদিক থেকে দিহান বেশী হাতখোলা হতে পারে না। নিজের বানানো মোরগ পোলাও, খিচুড়ি, বিরিয়ানি ছাড়া তেমন কিছু পারে না।
আড্ডা শুরু হলো চা আর গরম শিঙারা দিয়ে। চা খেতে শুরু করার খানিকক্ষণ পর ই দিহান বলল,
“বন্যা চায়ে কী দিছিস? ”
“এলাচিগুঁড়া দিছি। কেন খারাপ লাগছে? এলাচি স্বাস্থ্যের জন্য তো ভালো। ”
“উঁহু। কেমন যেন লাগছে। ”
বন্যা পাত্তা দিলো না। স্বপ্নের দেশ নিয়ে গল্প করতে ব্যস্ত হয়ে পড়লো। বাকী বন্ধুরা উচ্ছ্বাস দেখালেও দিহানকে তেমন উচ্ছ্বসিত মনে হয় নি। তাছাড়া অন্যান্য সময়ের চেয়ে খানিকটা অস্থিরও মনে হলো। খাওয়া দাওয়ার আগেই বাসায় চলে যেতে চাইলো। বাকীরা জোর করে রেখে দিলো। চাউমিনের খানিকটা খেয়েই বলল,
“বন্যা আমার খারাপ লাগছে? তোর গেস্ট রুমে গিয়ে একটু রেস্ট নেই। ”
বন্যা জিজ্ঞেস করেছিল,
“কী হয়েছে?”
জবাব দেবার আগেই চেয়ারসহ পড়ে গেল।
***
“ডাক্তার বলেছে মৃত্যু স্বাভাবিক নয়। পোস্টমর্টেম করতে হবে? ”
দিহানের স্বামীর বেশ স্বাভাবিক গলা। এতোটা স্বাভাবিক কী সত্যিই থাকা যায়। দিলারা কিছু বলছে না। দিতিয়াকে এখনও কিছু জানাতে পারে নি। ফোনে পাওয়া যাচ্ছে না। ফোন টা অফ করে বোধহয় ঘুমাচ্ছে।
দিলারা কিছুই বুঝতে পারছে না। দিহানের তো তেমন অসুখ, বিসুখ নেই। আজকে যাবার সময় তো অসুস্থ মনে হলো না। তার উপর এখন শুনছেন মৃত্যু স্বাভাবিক না। ওর কেন অস্বাভাবিক মৃত্যু হবে। বোকাসোকা এই মেয়েটারও শত্রু আছে!
***
দিতিয়া কড়া ওষুধ খেয়ে ঘুমিয়েছিল। তবুও ঘুম টা ভেঙে গেল হঠাৎ ই। বুক ধড়ফড় করছে। ফোন হাতে নিয়ে দেখলো সাতচল্লিশ টা মিসড কল। মায়ের মেসেজ ও আছে। মেসেজে লিখেছে, দিহান আর নেই দিতি।
দিতিয়া এই কথার অর্থ ধরতে পারলো না। নেই মানে কী!
দিতিয়া ফোন করলো। দিলারা ফোন ধরে বাচ্চাদের মতো কাঁদতে লাগলো।
***
পোস্টমর্টেম রিপোর্ট আসার পর জানালো ডাক্তারের আশঙ্কা সত্যি। দিহানের শরীরে বিষ পাওয়া গেছে। তবে স্টমাকে বিষ ছিলো না।
যা ঘটেছে সব ভাবনার উর্ধ্বে। সন্দেহের তালিকায় প্রাথমিক ভাবে দিহানের বন্ধুদের রাখা হলেও তাদের বিরুদ্ধে কোনো প্রমাণ পাওয়া যায় নি।
দিলারা শোকে কাতর হলেও একটা ব্যাপার খেয়াল করছেন। পুলুর বাবাকে অতো বেশী দু:খী মনে হচ্ছে না। দিহানের মৃতদেহ দেখে দুই, চার ফোঁটা চোখের জল ফেলেছে। এরপর তো স্বাভাবিক ই মনে হলো।
***
সপ্তাহ খানেকের মধ্যে ফরেনসিক রিপোর্ট এলো। পারফিউমে বিষাক্ত কিছু ছিলো। শরীরে ছড়িয়ে পড়ায় দিহান কে মৃত্যুর মুখ থেকে ফেরানো গেল না।
দিতিয়ার মাথা ফাঁকা হয়ে গেছে। পারফিউম! সেই সুন্দর সেট টা! ওর নামে পার্সেল এসেছিল।
***
পার্সেল টা দিয়ে গিয়েছিল এক লোক। দিলারা ভালো করে চেহারার বর্ননা দিতে পারলো না। প্যাকেট টাও ফেলে দেয়া হয়েছে। কিছুই জানা গেল না এখনো পর্যন্ত পার্সেল সম্পর্কে।
দিতিয়া অফিস থেকে ছুটি নিয়েছে। বাইরেও কোথাও বেরোচ্ছে না। পারফিউমগুলো ওর জন্য ছিলো। ভাগ্য খারাপ বলে দিহান কে মরতে হলো। এই পারফিউম গুলো কে পাঠালো! এই মুহুর্তে ওর জীবনে নেহাল ছাড়া আর কেউ ই ঝামেলা করার মতো নেই। কিন্তু নেহালের মতো ছেলে কী সত্যিই এতো ভয়ংকর হতে পারে!
“দিতি! আহনাফ এসেছে।”
দিতিয়া উঠে দাঁড়ালো। আজ আর পরিপাটি হবার তাড়া নেই। আয়নায় নিজেকে দেখারও ইচ্ছে হলো না।
আহনাফ বসে আছে বিরক্তমুখে। দিতিয়াকে দেখে বলল,
“তুমি ঠিক আছ?”
দিতিয়া দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,
“এইতো….
“তোমার এমন ভয়ংকর শত্রু কে হতে পারে যে প্রাণে মারতে চায়?”
দিতিয়া একটু চমকে উঠলো। বলল,
“কে.. কেউ না তো!”
“কেউ তো আছেই। যে তোমাকে ভীষণ অপছন্দ করে। ”
“এমন কেউ নেই।”
আহনাফ সন্দিহান চোখে তাকালো। বলল,
“এতো শিওর কী করে হচ্ছো! হতেই তো পারে অফিসে কেউ তোমাকে অপছন্দ করে। তোমার সাকসেস টা ঠিক মেনে নিতে পারছে না। ”
দিতিয়া চুপ করে আছে। কিছু বলার নেই আহনাফ কে।
***
আহনাফ বিরক্ত হলো এই উটকো ঝামেলায়। নাহলে এতো দিনে বিয়েটা হয়ে যেত। সবকিছু ঠিকঠাক হবার পর এই ঝামেলা। সোসাইটি, রিলেটিভস দের প্রশ্নের উত্তর দিতে দিতে অস্থির হতে হচ্ছে! তারচেয়েও বড় কথা হলো দিতিয়া নিশ্চয়ই কিছু লুকিয়েছে। ওর ফ্যামিলিতে এমন কিছু ঘটনা হয়তো আছে। কিংবা ওর কোনো বয়ফ্রেন্ড! বয়ফ্রেন্ড! শব্দটা দ্বিতীয়বার মনে মনে আওড়ালো। দিতিয়া ও’কে ঠকাচ্ছে না তো!
***
দিতিয়া নেহাল কে টেক্সট করলো।
“টাকা ফেরত দেব তোমার। দেখা করো আমার সঙ্গে। ”
নেহাল সঙ্গে সঙ্গে জবাব দিলো,
“এখন আর দরকার নেই। ”
টেক্সট টা দেখে দিতিয়ার মনে হলো যা কিছু ঘটেছে তাতে নেহাল খুশিই। হঠাৎ ই মনে হলো এই নেহাল ছেলেটাকে পিপীলিকা ভেবে ছেড়ে দেবার কোনো মানে হয় না।
দিতিয়া ফোন টা হাতে নিয়ে আসল জায়গায় ফোন করলো। যে ও’কে এই বিপদ থেকে মুক্তি দিতে পারবে।
চলবে…..
সাবিকুন নাহার নিপা