পারফিউম পর্ব-০১

0
206

#পারফিউম
#পর্ব-১
সাবিকুন নাহার নিপা

পারফিউম সেট টা এসেছে কুরিয়ারে। কে পাঠিয়েছে সেটা উল্লেখ করা নেই। দিতিয়া অতো মাথা ঘামালো না। ও’কে গিফট পাঠানোর লোকের অভাব নেই। শুভাকাঙ্ক্ষীরা প্রায় ই ও’কে সারপ্রাইজ দেবার জন্য এটাসেটা পাঠায়। তাদের মধ্যেই কেউ একজন হয়তো সারপ্রাইজ দিয়েছে। তবে পারফিউম সেট টা পছন্দ হলো ভীষণ। তিন সাইজের তিনটা পারফিউম। স্মেল টাও দারুন।

পারফিউম সেট সযত্নে রইলো ড্রেসিং টেবিলের ড্রয়ারে। দিতিয়ার আজ আবার তাড়া আছে। কক্সবাজার ট্রিপ আছে। অফিস থেকে প্রায় ই বাইরে যেতে হয়। এই চাকরি টা ওর জন্য লাকি। বেশ কয়েক জায়গা ঘোরা হয়ে গেছে অফিস খরচে। দুই মাস আগে ঘুরে এলো কালিম্পং থেকে। কাজের পাশাপাশি ঘোরাঘুরি করার সময়ও পেয়েছে বেশ। স্যালারির পাশাপাশি ভালো একটা এমাউন্টও আসে এসব ট্রিপ থেকে।

***
দিহান এসেছে পুলুকে নিয়ে মায়ের কাছে। দিতিয়ার বিয়ের শপিং করতে হবে। বেচারি তো সময় ই পায় না অফিস সামলে। বোন কে নিয়ে গর্ব হয় খুব। কতো অল্প বয়সে কতকিছু অর্জন করেছে। ফ্ল্যাট কেনার জন্য টাকা জমাচ্ছে। শ্বশুরবাড়িতে গর্ব করে বোনের গল্প বলে। খালাশাশুড়ির খুব ইচ্ছা ছিলো তার ছেলে নেহালের জন্য দিতিয়াকে নেবার। দিহান ই মুখের উপর বলে দিলো নেহালের যোগ্যতা সম্পর্কে। সবাই তো ক্ষেপে ব্যোম হয়ে আছে৷ থাকে থাকুক,

“এই টি সেট টা কবে কিনলে মা? বেশ সুন্দর তো। ”

“কিনিনি তো। দিতিয়াকে কে যেন পাঠালো ওর জন্মদিনে। ”

মায়ের গলায়ও উচ্ছ্বাস। ছোট মেয়ে সংসারের জন্য যা করছে অনেকের ছেলেও সেটা করতে পারে না। দিহান আহ্লাদী গলায় বলল,

“এই টি সেট টা আমি নিয়ে যাই মা। তুমি কিন্তু রাগ কোরো না। ”

“না রাগ করব কেন। নিয়ে যাস।”

এমন কতশত গিফট আসে। ওয়াশিং মেশিন, ফ্রিজ, প্রেশার কুকার সব ই আসে। মেয়ের বন্ধুভাগ্যও খারাপ না। কলেজের এক বন্ধু ইতালি থেকে ফোন পাঠালো। সেই ফোনের দাম দেশে নাকি দেড়লাখের উপরে। মেয়েটাও আবার ভীষণ পরোপকারী। কারোর দরকারে সবার আগে ঝাপিয়ে পড়ে। কাউকে ফিরায় না।

***
“এই দিতি টি সেট টা নিলাম। কালার, ডিজাইন অনেক পছন্দ হয়েছে। ”

দিতিয়া ফোন দেখতে দেখতে জবাব দিলো,

“আচ্ছা।”

“লিপস্টিকের শেড কত? দারুণ তো। ”

“ড্রেসিং টেবিলে এটার দুইটা আছে। একটা নিস। ”

দিহান খুশি হলো। ও নিজে একটু হিসেবি হলেও দিতিয়া ও’কে কোনো কিছু দিতে কার্পণ্য করে না। মনে আছে বিয়ের সময় মায়ের গয়নাগাটি নিয়ে খুব মান, অভিমান গেছে। মা দিতিয়ার জন্য তিনটা আংটি, হাতের দুটো চুড়ি, আর নেকলেস রেখে বাদবাকি সব গয়না ও’কে দিয়েছিল বলে ও সারারাত কেঁদেছিল।

***
দিতিয়ার মেজাজ টা খারাপ। নেহাল ও’কে হোয়াটসঅ্যাপে টেক্সট করেছে। ওর টাকা ফেরত চাই। নাহলে খুব খারাপ হয়ে যাবে।

নেহালের মতো টিকটিকি টাইপ ছেলে দিতিয়াকে থ্রেট দিচ্ছে! দিতিয়া লিখলো,

“কী খারাপ হবে? ”

নেহাল সেই টেক্সট সিন করে রাখলো। এবার দিতিয়ার হাসি পেল। এই ছেলে ওর কিছুই খারাপ করতে পারবে না, ওর কাছে কিছু নেই। কিন্তু দিতিয়ার কাছে অনেক কিছু আছে ওর ইমেজ খারাপ করার জন্য। দিতিয়া হোয়াটসঅ্যাপে একটা ছবি পাঠালো। নরমাল একটা ছবি। নেহাল খালি গায়ে দাঁড়িয়ে আছে। দেখতে বোকা বোকা লাগছে। সাথে লিখেছে,

“এটা জাস্ট ট্রেলার বেবস। পিকচার এখনো বাকী। ”

নেহাল সেটা সিন করে রেখে দিলো। দিতিয়ার ভীষণ হাসি পাচ্ছে। এই ছেলেটা নিশ্চয়ই এখন হাত, পা ছুড়ে কান্নাকাটি করছে। এরা আবার ইমেজের ব্যাপারে এতো সচেতন হয়!

মা ভাত নিয়ে এসেছে। ইলিশ মাছ ভাজা দিয়ে ভাত খাইয়ে দিচ্ছে মেয়েকে। দিতিয়াও নিশ্চিন্ত মনে খাচ্ছে। এইবারের কক্সবাজার ট্রিপ টা একটু স্পেশাল ওর কাছে। এই ট্রিপে ঠিকঠাক কাজ করতে পারলে প্রোমোশন টা পাক্কা। স্যালারির এমাউন্ট টা ছয় ডিজিট হয়ে যাবে।

***
ড্রেসিং টেবিলের কসমেটিকস গুলো দেখে দিহানের চোখ চকচক করে উঠলো। সব ব্র‍্যান্ডেড জিনিসপত্র। একটা লিপস্টিক নিতে এসে কয়েকটা পছন্দ হয়ে গেল। নেইলপলিশগুলো তো আরও সুন্দর। সানগ্লাসের কালেকশন গুলো দেখে মাথা খারাপ হয়ে যাবার উপক্রম। দিতিয়ার কপাল টা বেশ। যার সঙ্গে বিয়ে হচ্ছে সেও বিশাল বড়লোক। সেই সঙ্গে হাতখোলাও। এঙ্গেজমেন্টে ডায়মন্ড রিং পরিয়ে দিলো। ভাবা যায়!

দিহানের নিজের ভাগ্য দেখলে ইচ্ছে করে কপাল টা দেয়ালে ঠুকে দেয়। পুলুর বাবার পয়সাকড়ি ভালোই। কিন্তু লোকটা ভীষণ কঞ্জুস। আশুলিয়ায় কী এক ছাতার মাথা বাড়ি করবে বলে টাকা গচ্চা দিচ্ছে। এদিকে কোথাও ফ্ল্যাট বুকিং দিবে তা না। কিছু বলতে গেলে যোগ্যতা নিয়ে খোঁটা দেয়। দিহানের মন খারাপ হয়। দিতিয়ার মতো পড়াশোনা করে চাকরি বাকরি করলে ওরও এমন একটা জীবন হতো! যাকগে সেসব ভেবে লাভ নেই।

দিহান দিতিয়ার আলমারি থেকে মেরুন রঙের মসলিন শাড়িটা নিলো। এই শাড়িটা ওর পছন্দের। আহনাফের মায়ের দেয়া শাড়ি বলে চাইতে সংকোচ হচ্ছে। তবে পরতে তো দোষ নেই।

দিহান শাড়ি পরে মনমতো সাজলো। আজকের আসা পারফিউম সেট টা নজরে পড়লো তখনই। ইশ! এতো সুন্দর একটা জিনিস! দিতিয়া একটা নিজের ব্যাগে রেখে দিলো।

***
“খুব খারাপ হবে দিতিয়া। ”

দিতিয়া গাড়িতে বসে টেক্সট দেখে হেসে ফেলল। মনে মনে গাধার বাচ্চা বলে একটা গালিও দিলো। এই নেহাল টা ওর প্রেমে এতো মাতোয়ারা হয়েছে যে বিয়ের জন্য অস্থির হয়ে গেছিল। এমন ন্যাকা প্রেমিক টাইপ ছেলে দেখলে দিতিয়ার মেজাজ খারাপ হয়। আহনাফ কতো চমৎকার ছেলে। কী স্মার্ট, গোছানো ক্যারিয়ার। ছুটি কাটাতে অস্ট্রেলিয়া, থাইল্যান্ড যায়। সেই ছেলেকে রেখে এমন গাধাকে বিয়ে করবে!

দিতিয়ার মোবাইল ওই সময়ে আরেকটা টেক্সট এলো। এবারের টেক্সট টা একটু অন্যরকম। ওর কপালে ভাজ পড়লো।

***
“এতো সেজেগুজে কোথায় যাচ্ছিস?”

“বন্যার বাসায় মা। ওখানে রাখি, সুমি ওরাও আসবে। তুমি পুলুকে দেখো। আর পুলুর বাবা ফোন করলে বলবে যে আমার শরীর ভালো না তাই ঘুমিয়ে গেছি। ”

“আচ্ছা। ”

দিহানের মা দিলারা বড় জামাই কে তেমন পছন্দ করেন না। তার স্বামী মানে দিহানের বাবা দেখেশুনে বিয়ে দিয়েছেন মেয়ের। জামাই বড্ড বেশী বাপের বাড়ির টান টানে। তার উপর মুখে আদর্শের বুলি। মেয়েকে অবশ্য সে বলেছিলেন নাতিকে নিয়ে এখানে চলে আসতে। মেয়ে কেন যেন আসতে চায় না।

***
“কিরে ফিরে এলি যে?”

“হু। ”

“যাওয়া ক্যান্সেল হলো। ”

“এক গ্লাস ঠান্ডা পানি দাও তো। ”

দিলারা পানি এনে দিলেন। দিতিয়ার মুখ শুকনো লাগছে। আবারও জিজ্ঞেস করলেন,

“কোনো সমস্যা? ”

“হু। ”

“কী হয়েছে? ”

দিতিয়া এবার মেজাজ খারাপ করলো। বলল,

“এতো কথা কেন বলছ? কোন সমস্যার সমাধান আছে তোমার কাছে? ”

দিলারা চুপসে গেলেন। বললেন,

“আচ্ছা থাক রাগিস না। ”

ঘরে ঢোকার আগে দিতিয়া বলল,

“আমাকে ডাকবে না। যতক্ষন না দরজা খুলব ভুলেও ডাকবে না। কেউ মরে গেলেও না। ”

***
রাত সাড়ে নয়টার দিকে দিলারার ফোনে খবর এলো দিহানকে হসপিটালে নেয়া হচ্ছে। বলা নেই, কওয়া নেই হঠাৎ সেন্সলেস হয়ে গেল। দিলারা একাই পুলুকে হসপিটালে নিয়ে গেল। গিয়ে শুনলো দিহান মারা গেছে।

চলবে…..

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে